

সালোনি মেওয়া কা খিচড়ি বানাতে লাগে বাসমতী চাল, ঘি, অল্প এলাচ আর লবঙ্গ। চিনি জলের সিরাপ আর জাফরান। এই খাবার বানানো হয়েছে শ্রেষ্ঠী মানিকচাঁদের পাকশালে। রুপোর রেকাবিতে এই মিঠে ভাত, জাফরান আর ঘি, মৃদু মশলার সুগন্ধি মেখে দেওয়ান মুরশিদকুলির মুখের মধ্যে যখন বসন্তবাহারের হিল্লোল তুলেছে সেইসময় শেঠ মানিকচাঁদ ধীরে ধীরে বললেন, আর দেরি করবেন না, ঢাকা থেকে মুখসুদাবাদ যাই চলুন।
ঢাকা থেকে বিলক্ষণ ভালো, ঢের ভালো।
—কী করে বুঝলে মানিকচাঁদ, দেওয়ান মুরশিদকুলি প্রশ্ন করেন।
—আজ্ঞে আমরা ভাগ্যান্বেষী। গন্ধ শুঁকেই বুঝতে পারি।
—আমিও তো ভাগ্যান্বেষী। কত ঘাটে ঘাটে ঘুরেই বেড়াচ্ছি।
—আপনার ভাগ্য মসনদ আর তলোয়ারের ঝনঝনানি। আমাদের হল তিজোরি আর টঙ্কার ঠনঠনানি।
সেই যে মানিকচাঁদ মুরশিদাবাদে এলেন, তারপর অঘটনঘটনপটীয়সী মায়া বা গ্রিক নেমেসিসের মতো বাংলার ভাগ্যকে পেঁচিয়ে ধরলেন। মসনদের পিছনের খেল বা কিসসা কুর্সি কা তো তাদেরই হাতে লেখা হত। ইতিহাসের পারদ ওঠে নামে অর্থনীতির মই দিয়ে, সেটাই আসল রাজনীতি। মুরশিদকুলি বানালেন তাঁর আদরের চেহলসুতুন। তার খুব কাছেই মহিমাপুরে উঠল শেঠের হাভেলি। নবাবের খাস লোক। তার ওপর পোদ্দারি আর তহবিলদারি, টাকা লেনদেন, টাকা বিনিয়োগ।
শেঠদের গল্প কিছু কম আকর্ষণীয় নয়। মিঠি বোলি আর ঠান্ডা দিমাগ। গুটিপোকার মতো গোপনে লুকিয়ে বেড়ে ওঠে, তারপর প্রজাপতি হয়ে খেলা দেখায়। শেঠেদের পূর্বপুরুষ হীরানন্দের গল্পটি বড়ো রহস্যময়। বলে নাকি তিনি এক পুরোনো ভাঙাবাড়িতে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছিলেন! ব্যাবসা বাড়ানোর জন্য তাঁর ছেলেরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁরা রাজস্থানের নাগোরের আদি বাসিন্দা। তাঁরা জৈন সম্প্রদায়। অহিংস।
মুরশিদকুলির সঙ্গে যখন বণিক মহাজন মানিকচাঁদ মুর্শিদাবাদে চলে আসেন ততদিনে বিদেশি বণিকদের আনাগোনা রীতিমতো শুরু হয়ে গেছে। মানিকচাঁদের উত্তরাধিকারী ফতেচাঁদ মোঘল বাদশা ফারুখসিয়ারের কাছ থেকে শেঠ উপাধি পেয়েছিলেন। নগরশেঠ, Banker of the city। তারপর মোঘল বাদশা মহম্মদ শাহ তাঁর মাথায় বসিয়ে দিলেন জগতশেঠের মুকুট। মানিকচাঁদ ফতেচাঁদ মহতাবচাঁদ বংশের সবাই একটি নামেই পরিচিত, ‘জগতশেঠ’, দ্য হাউস অফ জগতশেঠ। জগতশেঠ মানে Banker of the World । কত সম্পদ থাকলে খোদ দিল্লির মোঘল বাদশার সুনজরে পড়া যায়? বাংলার সুবেদার বা নবাব তো তাদের কাছে তুশ্চু! বিপুল পরিমাণ ধনভাণ্ডার মানে লক্ষ্মীকে তারা আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখে দিয়েছিলেন। চোখ বুজে কল্পনা করুন, মুরশিদাবাদ কী পরিমাণ বড়োলোক শহর ছিল এককালে! কলকাতা তখন কাদা প্যাচপেচে, দুর্গন্ধ নালা, মশা ম্যালেরিয়ার গণ্ডগ্রাম!
মহাজনি ব্যাবসা তেজারতি সুদ। তিজোরি তখনই বেশ ভারী হয়ে গেছে। আর সেই জন্যই ডাক পেলেন ফতেচাঁদ, খোদ মোঘল বাদশাহের কাছ থেকে। কেন? লুটেরা নাদির শাহ দুর্বল মোঘল সম্রাটদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফর্দাফাই করে সব কিছু লন্ডভন্ড করে চলে গেল। ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ আর কপর্দকশূন্য হয়ে সম্রাট সাহায্য চাইলেন জগতশেঠ ফতেচাঁদের কাছ থেকে। ভাবুন একবার! কতটা ক্ষমতা ধরতেন তাঁরা এতেই বোঝা যায়! শুরু হল ব্যাবসা, চালাও ঢালাও হুন্ডি। জগতশেঠের বাড়িতে ছিল গুপ্তকুঠুরি, সুড়ঙ্গ। এত টাকার কারবারি এবং মসনদের নেপথ্যশক্তিদের বাসগৃহে এরকম গা ছমছমে ব্যাপার স্যাপার তো থাকবেই। প্রাণের ভয় ছিল না?
জিয়াগঞ্জ ভগবানগোলা এলাকায় ছিল বিরাট শস্যের বাজার। রেশম, হাতির দাঁতের কাজ, তুলো চিনি গম চাল, সোরা, তেজারতি ব্যাবসা, বাট্টা, সুদের কারবার, হুন্ডি সব মিলিয়ে সে এক বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। শেঠেরা তখন ধনকুবের। নবাবের টিকি থুড়ি দাড়ি বাঁধা ছিল শেঠদের হাতে। শুধু নবাব কেন ব্যাবসাদার জমিদার সবার টিকি, দাড়ি শেঠদের কাছে বাঁধা। এ এক অদ্ভুত ধার কর্জের গোলোকধাঁধাঁর খেলা। আবার শেঠরাই বিদেশি কুঠিয়ালদের প্রচুর টাকা ধার দিত। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে জগতশেঠের টাঁকশালে টাকা, মোহর, চাঁদির টাকা আধুলি সিকি হুহু করে ছাপা হত। টাঁকশাল থেকে ব্যাপক আয় হত। সুদ থেকে তো বটেই।
আলিবর্দি খানের সময় মারাঠা বর্গি তাণ্ডব বাংলার পেটে লাথি মেরে চলে গেল। বর্গি এল দেশে/ খাজনা দেব কীসে? খাজনা দেব কীসে? অতএব ধার করো। হাত পাতো। এই বিপর্যয়ে জগতশেঠ ছিলেন একমাত্র পরিত্রাতা। সেসময় বাংলার কলিজা শেঠদের হাতে। তাঁরা বাজারদর, টাকার বিনিময়মূল্য, সুদের হার সব কিছু ঠিক করে দিত। নবাব নিজেই তাদের ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। রাশি রাশি সোনারুপো হিরে জহরত। সুভানাল্লা!
জগতশেঠদের সঙ্গে তখন ইংরেজদের খুব মাখোমাখো ভাব। রতনে রতন চেনে। শুধু ইংরেজ নয় ডাচরাও হুন্ডিতে টাকা পাঠাত দেশে। সেই সময় ভারতের সবচেয়ে বড়ো ব্যাংকিং হাউস জগতশেঠ। বলা যায় ব্র্যান্ডনেম। শুধু তাই নয় জগতশেঠের ব্যাবসাকে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করা হত। এ কী কম কথা! সেইসময় সমস্ত উত্তর ভারত জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে জগতশেঠরা। হিন্দোস্থানে তাদের জুড়ি ছিল না।
তবে নবাবদের সঙ্গে সম্পর্কের উষ্ণতা ওঠানামা করত। হাজার হোক তারা নবাব। পরের ধনে নয়, নিজেদের ধনে যারা পোদ্দারি করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের ওপর নবাবদের রাগ হিংসে হতেই পারে। সিরাজদৌল্লার আগে সরফরাজ খানের সঙ্গে শেঠদের ঝামেলা হয়েছিল। মুরশিদকুলি নাকি সাতকোটি টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। সরফরাজ সেই টাকা ফেরত চাইলে মনকষাকষি শুরু হয়। সাতকোটি টাকা জগতশেঠের হাতের ময়লা, কিন্তু ওই যে মনকষাকষি শুরু হল।এমনকি পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে পরে মিরকাশিমের সঙ্গেও শেঠদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। শেঠদের দুই ভাইকে মুঙ্গেরে বস্তায় পুরে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
শেঠদের তিজোরি বা সিন্দুকের ঠনঠনানি আর ইংরেজদের কামানের গর্জন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের জানাজা বানিয়েদিয়েছিল। ১৭৭৩ সালে কোশাগার মুরশিদাবাদ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসার আগে পর্যন্ত কোম্পানিকে টাকা জোগান দিয়ে এসেছে শেঠরাই। এইসময় থেকেই শেঠদের পতন শুরু। নিজামত আর দেওয়ানি দুইই চলে গেল কলকাতায়। লাভের গুড় পিঁপড়েয় খায়। জগতশেঠ হাতে হাত মিলিয়ে কী পেলেন কোম্পানির কাছ থেকে? কোম্পানি শেঠদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে আর শোধ দিল না। কোম্পানির বণিকের মানদণ্ড পলাশীর যুদ্ধের পরে রাজদণ্ড হল এদেশের বণিকের মানদণ্ডকে ভেঙে দিয়ে। তখন টনক নড়ল জগতশেঠদের। হায় হায় শেষে কোম্পানির মনে এই ছিল! এ যে একেবারে বিসমিল্লায় গলদ! তখন ধারের টাকা শোধ নেবার জন্য কোম্পানির দরজায় ধর্না দিয়ে জগতশেঠরা পড়ে থাকতেন। বছরের পর বছর গড়িয়ে যেত কিন্তু কিছুই সুরাহা হত না। ভাগীরথী গিলে খেয়েছে জগতশেঠদের মূল বাড়ি। ভয়ানক ভূমিকম্পও ছাড় দেয়নি। অবিশ্যি ইংরেজদের এব্যাপারে খুব হাতযশ। যাদেরই সাহায্য তারা নিয়েছে তাদের একেবারে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। আরমানিরা এবিষয়ে ভালো বলতে পারবে! অথচ আরমানিদের সাহায্য না পেলে ইংরেজরা হালে পানি পেত না।
পলাশীর আমবাগানে শেষ হল বাংলার নবাবের স্বাধীন ইতিহাস। “নবাবী আমল শীতকালের সূর্যের মত অস্ত গ্যালো। বড় বড় বাঁশঝাড় সমূলে উচ্ছন্ন হলো… জগতশেঠ প্রভৃতি বড় বড় ঘর উৎসন্ন যেতে লাগলো।”
মুরশিদাবাদ আমের জন্য বিখ্যাত। মুরশিদাবাদের নবাবেরা খুব শৌখিন আমভক্ত ছিলেন। কতরকমের আমগাছ লাগানো হয়েছিল। নবাবকে যে আম কেটে কেটে খাওয়াতো তাকে বলা হত আমতারস। চম্পা আম, নবাবপসন্দ, কোহিতুর। তুলোয় মুড়ে রেখে ঘণ্টায় ঘণ্টায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তারপর তাকে নিপুণ ভাবে কাটা হত।
আমের কথাই যখন উঠল তখন শেহেরওয়ালিদের কথা না বললেই নয়!
এখানেই মালুম হয় ফলের চেয়ে আঁটির কদর বেশি করা উচিত। মানিকচাঁদ এক আঁটি পুঁতেছিলেন সে যা একখানা গাছ হয়েছে, তা না জানলে মুরশিদাবাদ জানা হবে না। মানিকচাঁদের সঙ্গে সঙ্গে রাজস্থানের রুক্ষ খটখটে মরুভূমি থেকে ওসোয়ালের জৈনরা দলে দলে বাংলার ভিজে হাওয়া আর নরম জমিতে ক্রমশ ডুবে যেতে থাকে। জিয়াজঞ্জ আজিমগঞ্জ এলাকায় তাদের চকমিলানো প্রাসাদের মতো হাভেলি, মন্দির, আর গদ্দি। কোঠারি, নওলাখা, দুগার, দুধোরিয়া, নাহার সিঙ্ঘি।
কাহাঁ সে আর হে হ্যাঁয়?
ওঁরা বলতেন, শহর সে। কারণ ব্যাবসার কাজে এক শহর থেকে আর-এক শহরে ঘুরে বেড়াতেন তাঁরা। পশ্চিমের শহর থেকে এসেছিলেন শেহেরওয়ালির দল। শেহেরওয়ালি? শেহেরওয়ালা নয় কেন?
ওঁরা বলেন, জানি না, হয়তো কানে শুনতে ভালোলাগে তাই শেহেরওয়ালি।
আজ তো নয়, তিনশো বছর আগে এই আসা আর বসবাসের সূচনা। তাহলে প্রথম শেহেরওয়ালি কে ছিলেন? অবশ্যই মানিকচাঁদ। তারপর বাকি চাঁদের হাটের শুরু। এদের হাতে প্রচুর পয়সা। নবাব তো নবাব। এরাও কিছু কম যান না। এদিকে নবাবি জ্যোৎস্না তো ফিকে হতে শুরু করল। একসময় ম্লান থেকে ম্লানতর হল। কিন্তু শেহেরওয়ালিরা ততদিনে জাঁকিয়ে বসেছে। নবাবদের সাধের আমবাগানের আরও বৈচিত্র্য এল শেহেরয়ালিদের হাতে। কথায় আছে জেত্তা রুপিয়া তেত্তা জিগদারি।
বাকিংহাম প্যালেসে রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে বছরে নজরানা যেত এই আম। সেখান থেকে আবার প্রশংসা করে চিঠি আসত শেহেরওয়ালি কোনো কোনো পরিবারের হাতে। এই মুরশিদাবাদি আম হয়ে উঠল শেহেরওয়ালি জীবনযাপনের একটা মধুর অংশ। তাদের মিঠি বোলি আরও মধুর করল বাংলার আম। আমাবেগে ভেসে গেল মরুবানিয়ার দল। আম কাটার ছুরির ভারী তরিবৎ। সে ছুরি হবে খুউব পাতলা। ফলের গায়ে কাটার কোনো দাগ থাকবে না, এমন মিহিন ছুরি হতে হবে। সেই ফল কাটা হবে অতি নয়নশোভন ভাবে। আম কাটা তাদের হাতে যেন এক শিল্প।
তাদের রান্নাঘরেও আম ঢুকে পড়ল। কাচ্চে আমকা ক্ষীর তার মধ্যে একটি। আমের মরশুমে সকাল সন্ধে রাত সবসময় আম খেতে কোনো আপত্তি নেই তাদের। শেহেরয়ালি রন্ধন খুবই জমকালো। নিরামিষ। শুদ্ধ শাকাহারী। বৈচিত্র্যে ভরপুর। জাফরান, গোলাপজল, বাদাম পেস্তার দরাজ ব্যবহার। গোলাপজলের মিঠে সুবাস জড়িয়ে থাকবে প্রায় সব খাবারেই। আর হ্যাঁ, ওদের রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছিল বাংলার পাঁচফোড়ন। আর পিঠা। বাংলার পিঠে। পেটে খেলে পিঠে সয়! ওদের পেটে সয়ে গিয়েছিল মোচা আর কদবেলও।
শেহেরওয়ালিরা রাজস্থানি উর্দু হিন্দি ভাঙা বাংলা মিশিয়ে কথা বলত। জল বই গাছ তরকারি এইসব বাংলা শব্দ ওদের কথায় পাওয়া যাবে। রুপিয়ার মাহাত্ম্যে দানধ্যান, মন্দির ধর্মশালা হাসপাতাল বিদ্যালয়। এসব কাজে তারা ব্যয় করত হাত খুলে। নিজস্বতা ছাড়েননি অথচ বঙ্গসমাজে বেশ মিশে গেছিলেন।
পলাশী পূর্ব মুরশিদাবাদে কসমোপলিটান হাওয়ার জোয়ার ছিল খুব। দেশের বাইরে থেকে ইংরেজ ফরাসি ডাচ আরমানি পোর্তুগিজ। এদিকে দক্ষিণভারত তুর্ক ইরান ইরাকের আরব বংশোদ্ভূত নবাবদের বংশ। ওদিকে রাজস্থান থেকে জমিয়ে বসা শ্রেষ্ঠীসমাজ। এই সংস্কৃতিবৈচিত্র্যের জন্য শেহেরওয়ালিদের বিলাসবহুল অট্টালিকাগুলোতে সুন্দর সুন্দর পাশ্চাত্যশৈলীও চোখে পড়ে। যেমন দুগারদের কাঠগোলা প্যালেস। মুরশিদাবাদ থেকে রাজধানী কলকাতায় নিয়ে যাবার ফলে মুরশিদাবাদের সেই গৌরব আর রইল না। ফলে এইসব পরিবারগুলোও বিশাল বিশাল বাড়ি ছেড়ে কলকাতা বা অন্যত্র চলে গিয়ে, বাড়িগুলোকে মিউজিউয়াম ইত্যাদি বানিয়ে সেখান থেকেও আয়ের একটা পথ ও সেইসঙ্গে ঐতিহ্যের নিদর্শনকেও বাঁচিয়ে রেখেছেন।
শেহেরওয়ালিদের বাগানের খুব শখ ছিল। বড়োলোকদের যেমন হয় আর কী! কাঠগোলা প্যালেসে নাকি এককালে গোলাপের চাষ হত। এইসব সুরম্য অট্টালিকার সামনে সাজানো বাগানে ইয়োরোপীয় বণিক, নবাবের খাস লোক বা হয়তো নবাব নিজেই আসর জমাতেন মাঝে মাঝে।
যতই ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা এবং এদেশের বাণিজ্যে নিজেদের কবজা পাকা করেছে ততই শেঠপরিবারগুলোর বৈভব ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে।
জগতশেঠের বাড়ি একটা মহল্লার মধ্যে। রাস্তার পাশে। বাংলার এবং সমস্ত হিন্দোস্তানের এককালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ শ্রেষ্ঠী মহাজনের বাড়িটি দেখলে এখন আর সেই ভাবটি জেগে ওঠে না তার একটা বড়ো কারণ পেশকশ বা সঠিক পরিবেশনের অভাব। নেহাত ইতিহাসের আতর কানে গুঁজে বেরিয়েছি তাই জোর করে গন্ধ শোঁকার চেষ্টা করি।পরিবারের ব্যক্তিগত সংগ্রহ অনেক। অনেক লুকোনো গুপ্তধন! কত মুখে মুখে ফেরা গল্প!
উপচে পড়া সওয়ারি নিয়ে হাড় জিরজিরে ঘোড়ায় টানা টাঙা দেখে নাসিরি, আফসার, বা নাজাফি নবাবদের কথা ভাবতে খুব চেষ্টা করলুম! কেমন ছিল সেই পুরোনো মুরশিদাবাদ!
কাঠগোলায় গিয়ে দেখি সেখানে যেন মোচ্ছব লেগেছে! এত ভিড়! তারমধ্যে এক টিংটিঙে গাইড একটি মস্ত বড়ো দলকে প্রাণপণে বুঝিয়ে যাচ্ছে, এই যে গাছটা দেখছেন এই গাছটা ফুলে ফুলে ভরে যায়, সেই কবে থেকে। কাঠগোলাপ।
সেই গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছি এখুনি শেহেরওয়ালিরা মন্দিরে বেরুবেন। তাঁদের গাছে গাছে প্রচুর আমের মুকুল এসেছে এবার। কিছুদিন পরেই বিমলি, চম্পা, রানি, ভবানীরা আসবে। না, মেয়ে না। ওরা সব আম। আমের নাম!
এখুনি বেরুবে ছেলেদের তাঞ্জাম। মেয়েদের পালকি। মিনাকারী গয়না। পাটে পাটে ভাঁজ-করা নিপুণ একটি পান মুখে গুঁজে। নকশা-করা লাঠি হাতে পাহারাদার। শ্রেষ্ঠী পরিবার যাবে আজিমগঞ্জের জৈনমন্দিরে। রুপোর থালায় নারিয়েল কা কাটলি। নারকেলের সন্দেশ। তবক দেওয়া।
যেতে যেতে হয়তো দেখা হয়ে যাবে বেগমসাহিবার ছোটোমেয়ে ছোটি চুন্নুর সঙ্গে। তার মেহেন্দিরাঙা হাত ডোলির পর্দার ফাঁকে একটু নড়ে উঠবে। এককুচি হাসির ঝিলিক। মোতি বসানো ওড়না। সেবারে বেড়া উৎসবে দেখা হয়েছিল না? শেহেরওয়ালি গিন্নি মনে মনে ঠিক করে ফেলেছেন আজ বেগমের কাছে পাঠাব পানিফল কা সামোসা আর খিরা কা পকোড়ি। ওদের রকাবদার, বাবুর্চিরা জানেই না কী করে এসব বানাতে হয়! হুম!

সাগ্রহে পড়ছি
সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় | 2402:3a80:a21:cda3:0:4a:658c:***:*** | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১৮:১৬104602দারুণ। বড্ড দারুণ।
দেবাশিস তেওয়ারী | 2402:3a80:116a:c904:9d60:34a0:daa5:***:*** | ১৩ এপ্রিল ২০২১ ২১:৪৯104735দারুণ লেগেছে আমার।
Anandamay De | 45.64.***.*** | ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৯:১৫104976খুব ভালো
santoshbanerjee | 43.25.***.*** | ২৪ এপ্রিল ২০২১ ২০:১০105120অপূর্ব !! অদ্ভুত !!
খাসা হচ্ছে।
শ্রাবণী ঘোষ | 2409:4064:220e:35cb:c120:8516:d571:***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ১৯:৪৯105171খুব ভালো লাগলো। মশগুল হয়ে পড়ছিলাম । ইতিহাস প্রেমীদের জন্য এক অনবদ্য উপহার
মৌসুমী দত্ত | 2401:4900:1045:4d5e:6091:7482:f149:***:*** | ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৩০105204ভালো লাগলো
আরিফ আহমেদ | 157.43.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৪৫105205ভালো লাগলো।