গ্রিক বা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের আমল থেকে মোটামুটি ১৮০০ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্রে নির্বাচনী প্রচারের পদ্ধতি একেবারেই বদলায়নি। গ্রিক বা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পরে অবশ্য রাজতন্ত্রেরই রমরমা ছিল পৃথিবীতে। কিন্তু যেখানে যেটুকু সীমিত গণতন্ত্র ছিল, তার নির্বাচনী প্রচারের পদ্ধতি খুবই সরল ছিল। যেকোনো প্রচারের মতই, নির্বাচনী প্রচারও ছিল, স্রেফ বক্তা থেকে শ্রোতার সোজা যোগাযোগ। খুব সোজা করে বললে বক্তা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতেন। শ্রোতারা শুনতেন। বক্তব্য রাখার জায়গায় চিঠি পাঠানোও হতে পারে, দাঁড়িয়ে বলার জায়গায় বসা, কিন্তু পদ্ধতিটা একই।
আধুনিক গণতন্ত্র ভ্রূণাবস্থায় থাকাকালীনই এই পদ্ধতির সমস্যাগুলো ধরা পড়ে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল অনেক মানুষের কাছে একসঙ্গে পৌঁছনো। খবরের কাগজ চালু হবার পর সেই সমস্যা কিছুটা মেটে।
কাছাকাছি সময়েই তৈরি হয় রাজনৈতিক দল। তৈরি হবার অনেক কারণ ছিল। কিন্তু এখানে স্রেফ প্রচারের কথাই বলা হচ্ছে। পার্টি তৈরি করে উপর-তলা, নিচের তলার এক জটিল সংগঠন। প্রচারের দিক থেকে যার কাজ হল, আরও সংঘবদ্ধ ভাবে অনেক অনেক মানুষের কাছে পৌঁছনো। পদ্ধতিটা জটিল হয়ে দাঁড়ায়। তৈরি হয় অনেক বক্তা, অনেক ছোটো-বড়ো নেতা-কর্মীর কাঠামো। কিন্তু মূল ব্যাপারটা একই থেকে যায়। অর্থাৎ বক্তা বলছেন এবং শ্রোতারা শুনছেন।
বৈদ্যুতিন মাধ্যম আসে আরও পরে। ভারতবর্ষের মতো দেশে হাল আমলের আগে প্রচারে টিভির কোনো ভূমিকা ছিলনা। পশ্চিমী দেশে অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই টিভির প্রভাব ছিল। কিন্তু সেখানেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত মূল পদ্ধতিটা বিশেষ বদলায়নি। খবরের কাগজ, টিভি, সংগঠন, সব মিলিয়ে প্রচারে অর্থের ভূমিকা অবশ্য বাড়তেই থাকে। কিন্তু প্রচার সেই সরাসরি বক্তা থেকে শ্রোতা, এইভাবেই চলতে থাকে।
সরাসরি বক্তা-থেকে-জনতা -- এই পদ্ধতির একটা বিরাট সমস্যা ছিল। সমস্যাটা হল প্রচারের পদ্ধতিতে কুশলতার অভাব। জনতার সমস্ত অংশ থেকে শ্রোতা ধরে আনলে সবাইকে নিজের বক্তব্য শোনানো যায় বটে, কিন্তু তার বেশিরভাগ অংশটাই পন্ডশ্রম। একটা জনসমষ্টিতে, যে কোনো মতের বিরুদ্ধে একদল শক্তপোক্ত বিরোধী থাকেন, যাদের কাছে প্রচার করার কোনো মানে নেই। প্রচারের লক্ষ্য হওয়া উচিত কেবলমাত্র তাঁরাই, যাঁরা মত বদলাতে পারেন। কিন্তু বক্তা-থেকে-জনতা পদ্ধতিতে এই অংশের কাছে পৌঁছনোর কোনো উপায় নেই। চেনারই কোনো উপায় নেই। ফলে অকারণে বহু মানুষের কাছে একই ভাবে প্রচার করে চলতে হয়, যার একটা বড় অংশ না করলেও হয়।
এটা অবশ্য শুধু সম্পদের সমস্যা। যথেষ্ট অর্থ ঢালতে পারলে প্রচারে এটুকু বাজে খরচা করাই যায়। কিন্তু বৃহত্তর সমস্যা যেটা, সেটা হল এই নানারকম জনসমষ্টিকে আলাদা করে বার্তা দেবার উপায় নেই। নির্বাচনী প্রচারের পদ্ধতি যথেষ্ট কুশলী হলে, জনসমষ্টির যে অংশ বক্তাকে বাহবা দিচ্ছেন, তাঁদেরকে জোগানো উচিত উদ্দীপনা। যাঁরা দোলাচলে, তাঁদের নিজের পক্ষে টেনে আনার বা বিপক্ষকে অপছন্দ করার বার্তা দেওয়া উচিত। যাঁরা অসহ্য ভাবছেন, তাঁদের কোনো বার্তা দেবারই কোনো মানে নেই। নির্বাচনী কৌশল অনুযায়ী বার্তাগুলো বদলাতে পারে কিন্তু বার্তাগুলো যে আলাদা হওয়া প্রয়োজন, সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নইলে রাজনৈতিক প্রচার যথেষ্ট কুশলী তো হবেই না, বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন দোদুল্যমান লোককে বারবার উজ্জীবিত চেষ্টা করার চেষ্টা করলে, সে হয়তো বিপক্ষেই চলে গেল। অথবা কর্মীকে উদ্দীপনা না দেবার ফলে সে বসে গেল। এগুলো খুবই গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। এই সমস্যাকে আমরা কুশলতার সমস্যা বলতে পারি।
টিভি এবং খবরের কাগজের জমানায় এই সমস্যার একটা সমাধান পশ্চিমী জগতে করার চেষ্টা করা হয়েছিল বিজ্ঞাপনী পদ্ধতি ব্যবহার করে। কোন চ্যানেল সমাজের কোন অংশের মানুষ দেখেন বা দেখছেন, বিজ্ঞাপনী কারণে তার বিশ্লেষণ বহু আগেই করা শুরু হয়েছিল। এই বিশ্লেষণ ব্যবহার করে পশ্চিমে নানা চ্যানেলে নির্বাচনী প্রচারের বিজ্ঞাপন দেওয়া বা না দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু হয়। গোদা ভাষায় বললে, অমুক চ্যানেলের অমুক অনুষ্ঠান সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলারা দেখেন, কাজেই সেখানে মহিলাদের ইসু নিয়ে বার্তা দেওয়া দরকার -- এই জাতীয় ব্যাপার। বলাবাহুল্য, এতে করে জনসমষ্টির নানারকম বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে (পুং-মহিলা, গরীব-বড়লোক ইত্যাদি) নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে নির্দিষ্ট বার্তা দেওয়া গেলেও, সে খুবই মোটা দাগের ব্যাপার। রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী (আমার পক্ষে, আমার বিপক্ষে বা দোদুল্যমান) বিভাজন এখানে করা যায়না। ফলে প্রকৃত অর্থে কুশলতার সমস্যাটা এভাবে সমাধান করা যায়না।
রাজনৈতিক বিভাজনের হিসেব রাখার আরেকটা পদ্ধতিও তৈরি হয়েছিল কর্মীবাহিনীর উপর নির্ভর করে। আমরা যারা আশি বা নব্বইয়ের দশকের সিপিএম জমানা দেখেছি, তাদের কাছে পদ্ধতিটা খুব স্পষ্ট। এই পদ্ধতিতে যেকোনো এলাকার স্থানীয় কর্মীবাহিনী, নিজের অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করে গোটা জনসমষ্টির তালিকা বানিয়ে, জনতাকে তিন ভাগে ভাগ করতেন -- সমর্থক, বিরোধী এবং দোদুল্যমান। প্রত্যেকটা অংশের জন্য নেওয়া হত আলাদা আলাদা পদ্ধতি। পক্ষের জনতাকে নিয়ে করা হত ছোটো সভা, যেখানে উদ্দীপনা জুগিয়ে সমর্থকদের কর্মীতে পরিণত করা হত। এই কর্মীরা তারপর যেতেন দোদুল্যমান অংশের জনতার কাছে। নিজের বার্তা পৌঁছে দোদুল্যমানদের পক্ষে টেনে আনার জন্য। আর বিপক্ষের জনতাকে কার্যত ছেড়ে দেওয়া হত। এই পদ্ধতি, বস্তুত প্রচারের কুশলতার সমস্যার সমাধান হিসেবে ছিল অত্যন্ত দক্ষ। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের দীর্ঘদিনের একাধিপত্য, প্রচারের দিক থেকে (অন্য দিকে নিশ্চয়ই অন্যান্য কারণ ছিল) এই ব্যবস্থারই ফসল।
এই পদ্ধতির সমস্যা ফলাফলে নয়। পদ্ধতিটা নিজেই সমস্যা। এই পদ্ধতিকে চালু রাখতে গেলে তেল দেওয়া মেশিনের মতো বহুস্তরে বিস্তৃত এক বিরাটা মানবিক সংগঠনের প্রয়োজন, যার প্রতিটি খুঁটিই এককটি মানুষ। এর প্রতিটা স্তরে দীর্ঘদিন উদ্দীপনা স্রেফ শৃঙ্খলা দিয়ে বজায় রাখা যায়না। ফলে কুশলতার সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদে এই পদ্ধতি দিয়েও সমাধান করা যায়নি।
নির্বাচনী প্রচারে হইহই করে ফেসবুক, গুগল, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যম ঢুকে পড়ার পর, এই কুশলতার সমস্যাটার একটা সমাধান হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কিনা বলার সময় এখনও আসেনি, কিন্তু পদ্ধতিটা আন্তর্জাতিক এবং বৈপ্লবিকও, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ২০০০ বছরে যে সমস্যার সমাধান হয়নি, নতুন প্রযুক্তি এবং তার প্রয়োগ, তাকেই আপাতত সম্ভব করে তুলেছে। এই মাধ্যমগুলোকে, নির্বাচনী প্রচারের জন্য মোটা দাগে তিনটে ধাপে কাজে লাগানো হয়।
১। তথ্য সংগ্রহ। শুধু, নাম-ঠিকানা-বয়স-লিঙ্গ নয়, যে কোনো সামাজিক মাধ্যমে মানুষ যা যা করে তার প্রতিটারই হিসেবই জমা থাকে মাধ্যমের ডেটাবেসে। বস্তুত গোয়েন্দা দপ্তরের মতো প্রতিটা মানুষেরই থাকে নিজস্ব ফাইল। তফাত এই, যে, কোনো গোয়েন্দা দপ্তরই আজ পর্যন্ত এই পরিমান তথ্য কোনো মানুষের জন্য জমা করে রাখতে পারেনি।
২। বিশ্লেষণ। এর পুরো পদ্ধতি জানা যায়না, কারণ পুরোটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত। কিন্তু মূলত ব্যাপারটা এরকমঃ
৩। নির্বাচনী বিজ্ঞাপন। শুধু রাম নয়, এই বিপুল তথ্য সংগ্রহ করা হয় প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে। এবং অর্থের বিনিময়ে তথ্য এবং বিশ্লেষণকে ভাড়া দেওয়া হয় রাজনৈতিক দলকে। তার ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল এবার জনসমষ্টিকে নানা ভাগে ভেঙে ফেলে। তার উপর দাঁড়িয়ে প্রচারের কৌশল তৈরি হয়। বিজেপির মতো দল হলে, তার কৌশল এরকম হতে পারেঃ
ব্যক্তির স্তরে এর প্রভাব কীরকম পড়ে? রাম একজন দোদুল্যমান ব্যক্তি। বিজেপির প্রচার শুরু হবার পরে, তিনি ক্রমাগত যে বার্তাগুলো পেতে থাকবেন, আন্দাজ করা যায় সেগুলো এরকম হবেঃ
এগুলো মিথ্যে খবর হতে হবে এমন নয় একেবারেই। কোথাও না কোথাও কোনো হিন্দু মন্দির নিশ্চয়ই কেউ ভাঙছে। কোথাও স্থানীয় উত্তেজনা নিশ্চয়ই হচ্ছে। পদ্ধতিটা হল, সেগুলোকে নিখুঁত প্যাকেজ করে সঠিক জায়গায় পরিবেশন করা। মিথ্যে খবর এর উপরে ছড়ালে তো সোনায় সোহাগা। এবং এখানেই শেষ নয়। রামের বান্ধবী শ্রেয়সী যদি উদ্দীপনা জোগানোর তালিকার মধ্যে পড়েন, তো, রাম কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর থেকেও একই মর্মের ব্যক্তিগত বার্তা পেতে থাকবেন, যার প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি।
মজাটা হচ্ছে, এই পুরো পদ্ধতিতে কোথাও কোনো শোরগোল তৈরি হবেনা। বস্তুত বিরোধীরা টেরই পাবেননা, কোনো প্রচার হচ্ছে। কারণ বিরোধীপক্ষ প্রচারের তালিকা থেকে একদম বাদ। তাঁরা নিজেদের পৃথিবী নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। হঠাৎ আবিষ্কার করবেন, অন্যদের প্রচার একেবারে কমে গেছে। আসলে প্রচার কিন্তু কমেনি। তিনি তীব্রভাবে নিজেকে বিজেপি-বিরোধী প্রমাণ করে ফেলে প্রচারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছেন, এই টুকুই।
এই পুরো পদ্ধতিতে কুশলতার সমস্যাটার সমাধান করে ফেলা হয়, কেবল টাকা দিয়ে। টাকা = তথ্যের অধিকার। টাকা = বিশ্লেষণ ও নীতি নির্ধারণের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। টাকা = প্রচারের সুযোগ। স্রেফ টাকার জোরেই যার কাছে যে বার্তা দেওয়া প্রয়োজন দিয়ে দেওয়া যায় প্রায় নিখুঁতভাবে। টাকার বিনিময়ে এখানে ভাড়া খাটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিশ্লেষণ ও প্রচারে কর্মীবাহিনীর কুশলতার উপর নির্ভর করার একেবারেই প্রয়োজন নেই। মানুষকে তথ্য জোগানোর জন্যও জোর করার একেবারেই প্রয়োজন নেই। তারা নিজেরাই উদ্দীপিত হয়ে সমস্ত তথ্য সামাজিক মাধ্যমের হাতে তুলে দেয়। এই উদ্দীপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বস্তুটাই সামাজিক মাধ্যমের বৈশিষ্ট্য। কর্মীদেরও একই কারণে আলাদা করে উদ্দীপিত করার প্রয়োজন পড়েনা।
এই ব্যাপারটা সম্ভব হয় কীকরে? প্রযুক্তি ছাড়াও, এখানে আরও একটা ব্যাপার আছে, যা মনস্তত্ত্বের গভীর থেকে খুঁড়ে আনা হয়। মানুষকে সামাজিক মাধ্যম এমন কিছু করার সুযোগ দেয়, যা তাকে উদ্দীপনা জোগায়। কোনো কিছুতে সক্ষম করে তোলে। সোজা কথায় মানুষের ক্ষমতায়ন হয় এবং সেই কারণেই মানুষ উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। আপনি নিজের গলার আওয়াজ গোটা দুনিয়াকে জানাতে পারেন। অজস্র মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন। এগুলো নিঃসন্দেহে ক্ষমতায়ন এবং উদ্দীপনা। এবং এই উদ্দীপনার কারণে, আপনি জেনেবুঝেও সমস্ত তথ্য স্বেচ্ছায় তুলে দেন এই বিপুল ব্যবস্থার হাতে।
কিন্তু আসলে কী হয়? যতবার আপনি নিজের ধারণার পক্ষে আওয়াজ তোলেন, ততবারই আসলে আপনি তথ্য সরবরাহ করেন বিপক্ষের প্রচারের হাতে। আপনি নিজেকে চিনিয়ে দেন। বিপক্ষ আপনাকে প্রচারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। আপনি নিজের জগত তৈরি করে তাতে বসবাস করতে থাকেন, বিদ্রোহ, বিপ্লব করতে থাকেন। আপনার বন্ধুবৃত্তের ছোট্টো বৃত্ত তাতে আপনাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। বিপক্ষ এসবে হস্তক্ষেপ অবধি করেনা। বরং তাদের প্রচার আরও নিখুঁত হয়ে ওঠে। আপনি আপনার বৃত্তে বন্দী হয়ে থাকেন, আপনার এলাকার সম্পূর্ন বাইরে বিপক্ষের প্রচার চলতে থাকে, চুপচাপ। আপনি জানতেও পারেননা। এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য একমাত্র আপনার। কারণ আপনি জেনেবুঝেই সমস্ত তথ্য তুলে দিয়েছেন ওই সর্বগ্রাসী ব্যবস্থার হাতে।
এই ব্যবস্থার হাতের পুতুল আর হয়ে থাকবেন কিনা, নাকি এমন কোনো মাধ্যম ব্যবহার করবেন, যারা ঘোষিত ভাবেই কোনো তথ্য সংগ্রহ করে রাখেনা, নৈতিক সামাজিক মাধ্যম, না মুনাফাচালিত বহুজাতিক দানবের সামাজিক মাধ্যম, কোনটা ব্যবহার করবেন, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।
কালই 'সোশাল ডিলেমা' দেখলাম। আমাদের ভাবা দরকার গুরুকে কীভাবে একটা 'এথিকাল', 'রেসপন্সিবল' এবং সত্ত্বার দিক থেকে 'লোকাল' সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ডেভেলপ করানো যায়। টেকনোলজিকাল এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পলিসিগত মার্কারগুলো এখন থেকে চিহ্নিত করতে করতে এগোনো দরকার। এই বিকল্পের রাজনীতিকে শুরু থেকে আলোচনায় রাখা দরকার। দরকার সবার এই আলোচনায় পার্টিসিপেশন।
"এই ব্যবস্থার হাতের পুতুল আর হয়ে থাকবেন কিনা নাকি এমন কোনো মাধ্যম ব্যবহার করবেন, যারা ঘোষিত ভাবেই কোনো তথ্য সংগ্রহ করে রাখেনা, নৈতিক সামাজিক মাধ্যম, না মুনাফাচালিত বহুজাতিক দানবের সামাজিক মাধ্যম"
এটা ফলস চয়েজ। তার কারন আমি যদি ফোন থেকে গুরুচন্ডালি ব্রাউজ করি, তাহলে ওএস নিজেই যা ডেটা সংগ্রহ করার করে নেবে, গুরুর জন্য বসে থাকবে না। গুরু যদি ডেটা নাও বেচে, তো গুগল, আইওএস, ফেসবুক ইত্যাদিরা আমার ডেটা বেচবে। ফোন ইউস করলে ওদের অ্যাভয়েড করা অসম্ভব, সমস্ত ইউসার সেটিং ব্যবহার করেও অসম্ভব। কম্পুতে গুরু করলেও তাই, সুপারকুকি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই পেজেরই ওপরে দেখুন পরপর বোতাম আছে, ফেবুতে শেয়ার করুন, টুইটারে শেয়ার করুন, হোয়াতে শেয়ার করুন। গুরু চাক বা না চাক, ওরা ওদের ডেটা ঠিক পেয়ে যাচ্ছে।
ডেটা প্রাইভেসি বলে কিছু আজকে আর নেই।
ঘোড়ার মুখ থেকে শুনুন, ফেবু বোতাম কি কি করে :d
https://www.facebook.com/help/186325668085084
What information does Facebook get when I visit a site with the Like button?
If you’re logged into Facebook and visit a website with the Like button, your browser sends us information about your visit. Since the Like button is a little piece of Facebook embedded on another website, the browser is sending info about the request to load Facebook content on that page.
We record some of this info to help show you a personalized experience on that site and to improve our products. For example, when you go to a website with a Like button, we need to know who you are in order to show you what your Facebook friends have liked on that site. The data we receive includes your user ID, the website you're visiting, the date and time and other browser-related info.
If you’re logged out or don’t have a Facebook account and visit a website with the Like button or another social plugin, your browser sends us a more limited set of info. For example, because you’re not logged into Facebook, you’ll have fewer cookies than someone who's logged in. Like other sites on the Internet, we receive info about the web page you're visiting, the date and time and other browser-related info. We record this info to help us improve our products.
As our Data Policy indicates, we use cookies to show you ads on and off Facebook. We may also use the info we receive when you visit a site with social plugins to help us show you more interesting and useful ads.
আর এটা হলো গিয়ে ঘোড়া নিজে যেটুকু বলেছে আর কি। ঘোড়া কিন্তু সব কিছু আগে থাকতে বলে না, ধরা পড়লে তখন বলে। কাজেই এখনো কি কি বলে নি ভেবে দেখুন :p
ফেবু বোতাম নিয়ে ইইউ একটা ইন্টারেস্টিং রুলিং দিয়েছে, তবে এখনো কোন ওয়েবসাইটে এটা ইম্প্লিমেন্ট করেছে বলে দেখিনি। হতে পারে আমি মিস করে গেছি। (বোন্ড আমি করেছি)ঃ
https://www.engadget.com/2019-07-29-facebook-like-button-data-liability-websites-eu.html
The highest court in the EU has issued a ruling that affects websites using Facebook's Like button plugin. It determined sites should obtain the consent of visitors before the plugin captures and sends their data to Facebook, whether or not you click the Like button. Alternatively, sites will have to prove there's a legitimate reason for collecting data and transmitting it to Facebook.
না, না, ফোন তো কিছু করে না। ফোন তো কম্পুটারের মতন। ফোনে কত কি করা যায় - যেমন, ফোনে কথা বলা যায়, ক্যামেরায় ছবি তোলা যায়, গান শোনা যায়, ভিডিও দেখা যায়, বই পড়া যায়, তেমন দামড়া সাইজের ফোন হলে ছুঁড়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া যায়, এবং, সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত দেওয়া যায়, অংশগ্রহণ করা যায়। মূলত, এই লাস্ট পার্টটা নিয়ে এই লেখা, যেখানে স্বেচ্ছায় গ্রাহক নিজের মতামত দিচ্ছেন, না চাইলেও প্লেটে করে সাজিয়ে দিচ্ছেন।
এলসিএমদা ফোনের আসল কাজটাই তো বাদ দিলেন! ফোনে মিসড কল দেওয়া যায়।
ইন দ্য লং রান ফেবু বাটন কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। কালই পারা যাবে না হয়ত। কিন্তু ভবিষ্যতে ভাবাই যায়। ফেবু নির্ভরতা কমানোই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। এসবই আমার মত অবশ্য।
ফেবু নির্ভরতা কমানোর একটা উপায়, আমার মতে, ফেবু না ব্যবহার করা। আমার একটা ফেবু এ্যাকাউন্ট আছে বটে, তবে সেটা স্রেফ ডিল ফিলের জন্য, পোস্ট একেবারেই করি না, কাউকে ফলোও করি না। ফোনেও ফেবু ইনস্টল করা নেই। এসব করে ফেবুকে আটকাতে পারবো না, মানে আমার ডেটা ওরা ঠিকই পাবে, তবে আমি অন্তত পিসফুল থাকি, এটুকুই। এমনিতেই কাজের যা চাপ, তার ওপর ফেবু এসে চেপে বসে না।
"এই ব্যবস্থার হাতের পুতুল আর হয়ে থাকবেন কিনা, নাকি এমন কোনো মাধ্যম ব্যবহার করবেন, যারা ঘোষিত ভাবেই কোনো তথ্য সংগ্রহ করে রাখেনা, নৈতিক সামাজিক মাধ্যম, না মুনাফাচালিত বহুজাতিক দানবের সামাজিক মাধ্যম, কোনটা ব্যবহার করবেন, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।"
@সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনার সঙ্গে সহমত, ঠিক বলেছেন!
বহুজাতিক দানবের সামাজিক মাধ্যমের হাত থেকে উদ্ধার পাবার অবশ্য বহু উপায় আছে, তার কয়েকটার কথা লিখছি। তবে সতর্ক না থাকলে ও না জানলে সম্ভব নয়, কারণ নানান জায়গায় কমপ্রোমাইজ করতে মানুষ বাধ্য হয় | যেমন ধরুন স্যামসুঙের স্মার্ট টিভি আপনার ঘরে আড়ি পাতে আপনার সম্মতি নিয়েই, আপনাকে জানিয়েই :
OVERVIEW OF PERSONAL INFORMATION
We collect personal information that you provide directly, information about how you use our Products and Services and information from third party sources. We use this information to provide you with Products and Services, understand the way you use our Products and Services so we can improve and personalize your experience and to develop the most relevant apps, technologies, and content for our customers. We also use personal information to provide customized advertising tailored to your interests.
SHARING YOUR PERSONAL INFORMATION
We may share your personal information with affiliate companies of Samsung Electronics, as well as with companies that provide services on behalf of Samsung Electronics. We may also share your personal information with trusted partner companies, such as mobile service providers or insurance companies, that provide you with products and services
that you request and information about products and services you may be interested in. We share personal information with law enforcement agencies when it’s required by law or to protect Samsung Electronics and its users.
(https://www.samsung.com/sg/info/privacy/)
এখন সে ফিচার আপনি নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারেন, কিন্তু না জানলে তার উপায় নেই |
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিলে ফেসবুকের হাত থেকে মুক্তি পাবেন, কিন্তু গুগলের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া অপেক্ষাকৃত শক্ত। এরা সকলেই আপনার ডাটা নিয়ে ব্যবসা করে, এবং আপনার ওপর নজরদারী চালায়, আপনার তথ্য চুরি করে, আপনাকে না জানিয়ে আপনার অনুমতি না নিয়ে ব্যবহার করে |
নজরদারী এড়াতে চাইলে ফেডারেটেড সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে দেখতে পারেন, ক্রোমের জায়গায় ব্রেভ বা ফায়ারফক্স ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে| ফেসবুক বা টুইটার ডিলিট করে Mastodon বা প্লেরোমার ইনস্টান্স নিজের সার্ভারে রেখে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে গল্প করা যেতে পারে | গুগলের জায়গায় ডাকডাকগো, কিউওয়ান্ট, searx ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। এন্ড্রয়েড এর জায়গায় /e/, বা Lineage OS ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে।
কাজেই উপায় বিবিধ, অবলম্বন করার প্রয়োজনও আছে।
গুরুচণ্ডালীতে গুগল আর ফেসবুকের লগ-ইন না ব্যবহার দিয়ে শুরু করা যায় কি?
লেখকের প্রায় সম্পূর্ণ লেখাটার সঙ্গে আমি একমত, শেষ প্যারাগ্রাফটা বাদে। যে রিসার্চের কথা তিনি বলছেন, সে রিসার্চ দুই পক্ষের তরফে থেকেই হবে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কল্যাণে দেখতে পেয়েছি যে দক্ষিণপন্থী শক্তিরা বেশি মাত্রায় বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সুযোগ নিয়েছে, but the other side have wised up as too!
তাই মনে হয়, ultimately, পুরো ক্যাম্পেনের ব্যাপারটাই পালটে যাবে। আফটার অল, 'রামের' তো শুধুমাত্র শ্রেয়সীই একমাত্র বন্ধু নয়, সে তো আঁতলামি করার জন্যে কখনো "গরম হাওয়া " ছবিটিও দেখে থাকতে পারে! বা চ্যাপলিনের গ্রেট ডিক্টেটার!
"ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিলে ফেসবুকের হাত থেকে মুক্তি পাবেন"
না অরিন। ফেবু অ্যাকাউন্ট না থাকলেও, বা লগইন না করে থাকলেও, আপনি যদি গুরুর এই পাতায় আসেন, তাহলেই ফেবু ডেটা কালেক্ট করতে পারবে। আপনাকে ওপরের লাইক বোতাম টিপতেও হবে না, ফেবু ঠিকই ডেটা পেয়ে যাবে। স্মার্টফোনেও তাই। ফেব্য অ্যাপ ইনস্টল না করা থাকলেও ফেবু আপনার ডেটা পাবে। কারন অন্যান্য অ্যাপ ফেবুকে ডেটা পাঠায় (ফেব্য এসডিকে তে সেই ব্যবস্থা আছে), যেসব অ্যাপ সরাসরি ফেবুর সাথে যুক্ত না (যেমন হোয়া), তারাও পাঠায়।
হ্যাঁ, ফেবু ডেটা পেল। তারপর? ফেবু আমাকে প্রভাবিত করবে কোন চ্যানেল মারফৎ, আমি যদি ফেবু ব্যবহার না করি?
গুগল, ফেসবুক এরা কেউই আসল ডেটা কালেক্টর নয় বিজেপির জন্য। ওসব বিদেশী লিবারল কোম্পানিতে ভরসা রাখা যায় না। তাইতো মালিক আম্বানীর কোম্পানি সবাইকে ফিরিতে ইন্টারনেট দিচ্ছে।
লেখাটির সঙ্গে একমত। কিন্তু রামের কি এখানে কোন দায়িত্ব নেই ? নানা রকম মাধ্যম রামের "পছন্দের" ভিত্তিতে নানা রকম মেসেজ পাঠাবে কিন্তু সেই মেসেজ বাছাই করে ঠিক না ভুল সেটা দেখার দায়িত্ব রামের থেকেই যায়। তাই এই সব মেসেজের রিসিভিং এন্ডে যারা - তাদের এই বাছাইয়ের পদ্ধতি শিখতে হবে। সাধারণভাবে কোন কিছু পড়ার সময় তাকে প্রশ্ন করা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা - কোন একসময় এই ট্রেনিং এর দরকার। ছাপা অক্ষরে কিছু দেখলাম মানেই তা ধ্রুবসত্য - এইটা যে নয় তা স্কুল লেভেল থেকে শেখানো যায়।
রাজর্ষি যেটা বললেন সেটা মুষ্টিমেয় লোকের জন্য ভ্যালিড। আপনি বুদ্ধিমান হলে এই অ্যালগোগুলোর চরিত্র বুঝে সচেতনভাবেই তাদের একটা দূর অব্দি বোকা বানাতে পারেন। কিন্তু সমস্যাটা স্কেলের। দুই বিলিয়ন ফেবু ইউজারের কত শতাংশ ফুলড হচ্ছে বা হবে এবং কত শতাংশ সচেতনভাবে ঐ ট্র্যাপটা এড়িয়ে চলবে বা 'সচেতন ব্যবহারকারী' হবে বলে আপনার মনে হয়? যদি সেটা হত তাহলে কি আর এই সো কলড 'লিবারাল বাবল' কথাটার উদ্ভব হত?
হ্যাঁ, ফেবু ডেটা পেল। তারপর? ফেবু আমাকে প্রভাবিত করবে কোন চ্যানেল মারফৎ, আমি যদি ফেবু ব্যবহার না করি?
ফেসবুক আমাকে ডেটা দিল। আমি দেখলাম যে পিনাকীদা এমনিতে খুব ভালো লোক, কিন্তু ইজরায়েল বা চীন বা কাশ্মীর বা স্বচ্ছ ভারত ইস্যুতে একদিলে হেলে আছে। মানে আপনি কনভার্টিবল। তখন আপনার ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশাল মিডিয়া জুড়ে (এটা অনেকসময় পিনকোড ধরে করানো যায়) আমি শুধু এইসংক্রান্ত খবর (যেগুলো আমার জন্য পজিটিভ) ফীড করে যাবো। এর উল্টো ওপিনিয়নের খবরগুলো হাইড হয়ে যাবে। আর অন্যান্য খবরগুলোকে হাইড করবো বা আপনি দেখলেও (যেগুলো আমার জন্য সুবিধার নয়) ডিসক্রেডিট করার জন্য উল্টো ওপিনিয়নের খবরগুলো রেকমেন্ড করে যাবো।
"আপনি যদি গুরুর এই পাতায় আসেন, তাহলেই ফেবু ডেটা কালেক্ট করতে পারবে। আপনাকে ওপরের লাইক বোতাম টিপতেও হবে না, ফেবু ঠিকই ডেটা পেয়ে যাবে।"
তা ঠিক! তবে ওই আর কি, VPN/টর ব্রাউজার, এইসব দিয়ে যতটা দূরে থাকা যায়।
@অণির্বান বসুর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত । "ছাপা অক্ষরে কিছু দেখলাম মানেই তা ধ্রুবসত্য - এইটা যে নয় তা স্কুল লেভেল থেকে শেখানো যায়।", এইটা বিশেষ করে প্রয়োজন |
"কিন্তু রামের কি এখানে কোন দায়িত্ব নেই ?"
বেশিরভাগ লোকজন এতটা সফিস্টিকেটেড নয়। স্মার্ট ফোনটা অনেকটা বাঁদরের হাতে মশাল দিয়ে দেওয়ার সমান হয়েছে। আর একটু গালিবল হতে হবে। সবারই কোথাও না কোথাও সফ্ট কর্ণার থাকে। সেটা ব্যবহার করা হয়।
বেশিরভাগ লোকজন জানে যে ছাপার অক্ষরে কিছু লেখা আছে মানেই সত্যি। ইনফ্যাক্ট ইস্কুলেই এটা শেখানো হয়। দেখবেন আমরা এখানেও কোনও সামান্য জিনিস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দশটা বই-প্রবন্ধের নাম করি। মানে দেখো ছাপার অক্ষরে লেখা আছে মানেই সত্যি। এই বইটা পড়েছো? অমুক প্রবন্ধটা পড়ে দেখুন? কেউ প্রশ্ন করেনা কেন পড়বো? আমি কি কম বুঝি লেখকের থেকে? প্রাইমারি ডেটা দাও, আমি নিজেই অ্যানালিসিস করে দেখে নেবো। আসলে রেডিমেড নলেজ অ্যাকোয়ার করতে গেলে এই সমস্যা হবেই। আপনি লেখকের পলিটিকাল বায়াসের ফাঁদে পড়ছেন।
অনির্বাণ বসু এটা অবশ্যই ছোট থেকে শেখানো উচিৎ। এখানে আমার মেয়ের ক্লাসে 'সোর্স ক্রিটিকাল' হওয়া একটা টপিক হিসেবে ক্লাস সিক্স থেকে ইন্ট্রোডিউস করে এবং প্রতি বছর রিপীট করে। কিন্তু আমার মনে হয় শুধু সেটাই যথেষ্ট নয়। কারণ সমস্যাটা শুধু 'তথ্য'তে সীমাবদ্ধ নয়। 'ওপিনিয়ন'এর বেলাতেও আমরা যদি ক্রমাগত একই ধরণের ওপিনিয়ন দ্বারা বম্বার্ডেড হতে থাকি, দুদিন বাদে বিপরীত মতামতটার প্রতি তাচ্ছিল্য ছাড়া অন্য কোনোরকমের গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বোধ হারিয়ে ফেলব, নিজের মতামত বা অনুসারী মতামতগুলোকে এতটাই অবভিয়াস এবং আনকোয়েশ্চেনেবল মনে হতে থাকবে। 'সোশাল ডিলেমা'তে দেখালো ক্লাইমেট চেঞ্জ দিয়ে সার্চ করতে গেলে যে অটো ফিল আসে গুগলে - সেটা লোকেশন ডিপেন্ডেন্ট। এবার যে লোকটা 'সোর্স ক্রিটিকাল' হওয়ার জন্য সার্চ করতে বসবে সে যদি একটা কনজার্ভেটিভ এলাকা থেকে সার্চ করে এবং তাকে প্রথম দশটা সার্চ রেজাল্টের মধ্যে আটটা 'ক্লাইমেট চেঞ্জ ইজ আ হোক্স' দেখানো হয়, তাহলে অবজেক্টিভ মতামত তৈরীর সুযোগটাও কিন্তু থাকছে না।
ফেবু ডেটা পাওয়ার পর কি হয় - এটা S একটা দিক বলেছেন, পলিটিকালি ইনফ্লুয়েন্স করা। আরেকদিক হলো প্রেডিকটিভ মডেলিং, মানে আমাকে প্রভাবিত করবে এরকম সব প্রোডাক্ট হাইলাইট করা। যেমন ধরুন আমি অ্যামাজন ওয়েবসাইটে গিয়ে বা চেন্নাইতে অ্যাপল স্টোরে গিয়ে একটা আপেল নাড়াচাড়া করলাম, তার এক ঘন্টা পর ফোনের নিউজফিডে এলো ওএস ১৪ এর উপকারিতা কি কি বা অ্যামাজনে কবে আপেলের ওপর ডিসকাউন্ট দেওয়া হবে। মোট কথা ইউজার ডেটা প্রতিদিন কয়েকশো এ্যাক্সেস পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ হয়ে চলেছে। গুরু এই পুরো ইকোসিস্টেমের একটা ক্ষুদ্রর থেকেও ক্ষুদ্রতর অংশ। সরি টু সে, কিন্তু গুরুচন্ডালির পক্ষে সম্ভবই না এই সিস্টেমের বাইরে যাওয়া।
ডিসক্লেমারঃ গুরুচন্ডালির (কোর) টিমকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করি, আশা করি পার্সোনালি নেবেন না।
dcর সঙ্গে একমত। গুরু নিজে ডেটা না বিক্রি করলেও মাঝখানের অনেক চটি আছে যারা ডেটা ফাঁস করে দেবে। এক্ষেত্রে দুটো সরাসরি সমাধান
১) সামাজিক ই-মাধ্যমে না থাকা। ইন ফ্যাক্ট অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় যেমন ডেটার কার্বন ফুটপ্রিন্ট, কম্পিউটার/মোবাইল ব্যবহারের শারীরিক-মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, সামাজিক মাধ্যমের সমাজবিরোধী শক্তি ইত্যাদি হিসেবে রাখলে অনেকেই চাইবেন এর বাইরে থাকতে। খুব কম লোকের কাছে রুজি রুটির জন্য এইগুলি দরকারি। এবং এর থেকে ভালো ভাবে নিজের জীবন উপভোগ করার অনেক সুযোগ আছে।
২) সামাজিক মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করেও, তার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। অনেকে এই নিয়ে লিখলেন। আমার কাছে সে প্রায় সুখেষুবিগতস্পৃহ-দুঃখেষুঅনুদ্বিগ্ন টাইপের কঠিন ব্যাপার। তার উপর আপনি এত এত ইনফরমেশনের সঙ্গে বাস করবেন (যার অধিকাংশই ফালতু) সবকিছুর সোর্স যাচাই করে উঠতে পারবেন না। আর পছন্দের খবর সোর্স যাই হোক বিশ্বাস করার ইচ্ছে আপনার হতেই থাকবে। মানুষ অ্যালগোরিদম নয়। তবু এটা ভালো চেষ্টা।
তবে নেহাৎই যদি সোশাল মিডিয়ায় যা মনে আসে লেখো আর যা হোক একটা কিছু পড়ি-র মায়া না কাটাতে পারি, ফেসবুক ছেড়ে গুরু করা আমার কাছে অতি উত্তম প্রস্তাব। স্পেন্সার যাওয়ার থেকে কার্তিকের মুদির দোকান যাওয়া যেমন ভালো, সেরকম।
সমস্যাটা বহুস্তরীয় , এইরে সাইটে লগিন করতে গিয়ে দুইখানা অপশন আসছে ফেসবুক দিয়ে লগইন করুন অথবা গুগল আইডি ব্যবহার করুন। আমি যেহেতু ফেসবুক থেকে আপাতত বিদায় নিয়েছি , তাই গুগল আইডিই ভরসা। এইযে গুগল বা ফেসবুক সবজায়গাতেই আমাদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে, একটা ভার্চুয়াল আমাকে নিজেদের ব্রাউজারে বানিয়ে রেখেছে , সেটাকে ভাঙব কীভাবে?
আর কমেন্টে ছবি অ্যাটাচ করার উপায় কী?
হোঅ্যাতে এক বন্ধু পাঠালো এই লিঙ্কটা। তার মতে কিম কার্দাশিয়ান ও নাকি আমার মতামতে প্রভাবিত হয়েছে ।
আর হ্যাঁ, প্রেজেন্ট ফরম্যাটে গুরুর পাতায় শ্রেয়সীর ছবিতে ভালোবাসা জানানোর উপায় নেই
অবিলম্বে হবে।
লেখাটা তো গুরুত্ত পূর্ণ । এবং যথারীতি সুলিখিত। রেসপন্স গুলো ও ভালো লাগলো।
কিন্তু লগিন, শেয়ারিং , মায় বাটন দিয়ে এ ওদের কনটেন্ট দেব কেন, বা গুড ডিজাইন বলতে ওটাই বোঝা হবে কেন এটা আমি ক্লিয়ার না। আমার লেখা ফেসভুকে কটা শেয়ার হল, সেটা কি করে আমার লেখার মেজার হয়। মানে লোকে তো টিনেজার দের মত কম্পেয়ার করবে, অ্যাই তোর তিরিশটা আমার তিন হাজার লাইক। রেলিভান্ট থাকতে থাকতে রেলিভান্স হারানোর বিশাল সম্ভাবনা।
আরেকটা কথা ফেবু , আমাজন, গুগল তো বড় রকম কেস, গুডরিডস যেন কাদের তারা তো একেবারেই আজে বাজে, লোকে বিসাল টাইম খচ্চা করে দিয়ে ওখানে বাংলা বই এর রিভিউ লিখে আসছে আর ভাবছে ভীষণ ইন্ডিপেন্ডেন্স হল। আবাপর সম্পাদকের কাছে যেতে হল না। এর থেকে তো আবাপ তে লেখা বেটার। মানে যাতা।
আগে ইশানের প্রায়-খল-কিন্তু-মূলত-ঢল নায়িকা ছিল, স্লিভলেস সুজাতা সান্যাল , এখন হয়েছে শ্রেয়সী, যে প্রায় সুরূপা চিত্রাঙ্গদা, ভ্রু- ভঙ্গে অর্জুনের সইব্য অসইব্য সব ডেটা হাতায় :-))
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
"... ধরুন আমি অ্যামাজন ওয়েবসাইটে গিয়ে বা চেন্নাইতে অ্যাপল স্টোরে গিয়ে একটা আপেল নাড়াচাড়া করলাম, তার এক ঘন্টা পর ফোনের নিউজফিডে এলো ওএস ১৪ এর উপকারিতা ..."
ঐ জন্যেই তো বলি গুরুতে আসুন। এখানে ওসব ব্যাপারই নেই। ধরুন আপনি তিনদিন ধরে - রাজা বাজে না প্রজা বাজে, ভোটার ঠগ না ক্যান্ডিডেট ঠগ - তা নিয়ে তেড়ে তক্কো করলেন - তারপর দেখবেন ফিড আসবে - কে বেশি মাতাল, কার বাংলা বেশি জড়িয়ে যায় - প্যান্ট-শার্ট পরা তারাপদ রায়, না কি , ধুতি-চাদর গায়ে রামপ্রসাদ সেন।
"তবে নেহাৎই যদি সোশাল মিডিয়ায় যা মনে আসে লেখো আর যা হোক একটা কিছু পড়ি-র মায়া না কাটাতে পারি, ফেসবুক ছেড়ে গুরু করা আমার কাছে অতি উত্তম প্রস্তাব।"
একদম। গুরুচণ্ডালী ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে যে ফেসবুক বা গুগল ব্যবহার করতেই হবে তার কোন মানে নেই। না চাইলে করবেন না। এসব দিক থেকে গুরুচণ্ডালী খুবই সেফ।
কেন্দ্রীভূত সোস্যালিডিয়া ব্যবহার করেন কেন, করলে আপনার ডাটা নিয়ে ব্যবসা হবেই। ফেডারেটেড মিডিয়া ব্যবহার করুন না যেমন Mastodon, Diaspora, pleroma, এরকম তো প্রচুর আছে, তাতেও পছন্দ না হলে P2P সিস্টেম ব্যবহার করুন, scuttlebutt protocol ব্যবহার করুন। কেউ ডাটা কাউকে ফাঁস করবে না। চ্যাটের জন্য ম্যাট্রিক্স প্রোটোকল ব্যবহার করুন। কোন অসুবিধে হবে না।
'...বিপক্ষ আপনাকে প্রচারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। আপনি নিজের জগত তৈরি করে তাতে বসবাস করতে থাকেন, বিদ্রোহ, বিপ্লব করতে থাকেন। আপনার বন্ধুবৃত্তের ছোট্টো বৃত্ত তাতে আপনাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। বিপক্ষ এসবে হস্তক্ষেপ অবধি করেনা। বরং তাদের প্রচার আরও নিখুঁত হয়ে ওঠে। আপনি আপনার বৃত্তে বন্দী হয়ে থাকেন...' - এইটা একটা বিরাট সমস্যা। তারপর আছে সামাজিক বৃত্তে বিপক্ষ মতের মানুষ না থাকাজনিত বুদ্বুদ, এবং তার ফলে বাইরের সমাজ সম্পর্কে চরম ধারনা (ভালো বা মন্দ)।
অরিনদার শেষ অনুচ্ছেদটা টেকি, প্রিভিলেজডদের জন্যে সম্ভব। আমাদের দেশে যাঁদের ফ্রি ওয়াইফাইয়ের জন্যে রেল স্টেশনে ভিড় করতে হয়, তাঁরা কী করবেন?
প্রযুক্তির দিকটা থেকে মুক্তি মনে হয় না আর আছে, যদ্দূর চেপেচুপে থাকা যায় আরকি। সোশাল মিডিয়া না হয় ব্যবহার করলাম না, জিপিএস আছে, ইমেল আছে (এখনো, বা জানামত ওরা ডেটা বেচে কিনা জানি না; সেই যে সোনির টিভি ক্যামেরা দিয়ে দেখে নিচ্ছিল?), অনলাইন কেনাকাটা, ওয়ালেট কত কিছুতে ছ্যাঁদা। গুরু বা আরো কতশত ওয়েবসাইট যেসব যে সার্ভারে চলছে, সেখানে যেসব তথ্য আসা যাওয়া করছে, তাদের কী গতি হবে ভবিষ্যতে তাই বা কে জানে।