এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ইস্কুলের গল্প 

    JD লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ এপ্রিল ২০১৯ | ৪৩৫৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • (ভূমিকাঃ এইটা অনেকদিন আগের লেখা - আসলে লেখা নয়, এসব বন্ধুদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য বানানো একটা মিউজিয়াম, বছর কুড়ি-পঁচিশ আগের উত্তর কলকাতার একটা ইস্কুলের গল্প - গুরু-তে দেবো ভাবিনি, কিন্তু কাল রাত্তিরে কী করে যেন অনেক পুরোনো একটা টই চোখে পড়লো, সে-ও এই এক-ই স্কুলের আরো পুরোনো গল্প, তবে সেসব আখ্যান ভয়ের, লজ্জার, এবং ভয়ানক কষ্টের - পড়ে মনে হলো এই অন্ধকার ক্লাসরুমে দু-একটা ঘুলঘুলি হলে মন্দ হয় না, তাই ... )

    বরানগরের আসল নাম কি এবং কোত্থেকে এসেছে এই নিয়ে তর্কের শ্যাষ নাই, মাঝে মাঝে ফেসবুকে দেখি বিভিন্ন সেপিয়া কালারের ছবির সাথে কিছু আজগুবি আর্গুমেন্ট, তবে সত্যি বলতে আমার ধারণা ওই জায়গাটার নাম চিরকাল-ই বরানগর ছিলো, নির্ঘাৎ মিশন স্কুলের সেকশান-ডি এর কোনো এক বাঁদর এবং ব্রিলিয়ান্ট ছেলে টাইম ট্রাভেল করে পেছনে গিয়ে কয়েকগাছা সরকারী দলিলে ইচ্ছে করে একটা ‘হ’ ঢুকিয়ে এসেছে, এখন কোথাও একটা হাওয়া খেতে খেতে মজা দেখছে ... তো যাই হোক, সেই স্কুলের কয়েকটা ছেলে-ছোকরা একটা গ্রুপ খুলেছে ফেসবুকে, তাতে সব পুরোনো গল্প-গাছা হচ্ছে, কিছু খুব সাংঘাতিক – সেসব সামনে এলে সমূহ বিপদ, আর বাদবাকি পড়ছি, আর মাঝে মাঝে ফিচিক-ফিচিক করে হাসি পাচ্ছে ... বর্ষাকাল এলেই বাড়ির সামনের সরু গলিতে যেমন জল ঢোকে, তেমনি আজকে দেখছি গ্রহান্তরের এই নির্জন গুহায় বসে হুহু করে অনেক-অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ... জল নেমে গেলেই নিয়ম করে একদিন যেমন ছাদে বা বারান্দায় শুকোতে দিতাম পুরোনো খাতা-বই আর দু-একটা কিসের স্ট্যাম্প মারা কাগজ, সেইরকম কয়েকটা স্যাঁতসেঁতে স্মৃতি চলকে উঠছিলো, পাশাপাশি রেখে দিলাম এই পড়ন্ত বিকেলের রোদে ... এদের কতোটা সত্যি, কতোটা আমার গেঁজেল মেমোরি তা জানিনা ..

    ইস্কুলে আমাদের প্রধান কর্তব্য ছিলো টিফিনে ফুটবল খেলা, তাই টিফিন-টাইমের আগেই লুকিয়ে লুকিয়ে সাবাড় করতাম টিফিন ... প্রথমে নিজেরটা, তারপর আস্তে আস্তে পাশের, তারপর তারপাশের ... আস্তে আস্তে গোটা ক্লাসের টিফিন গোটা ক্লাস বেশ সুন্দর সমবন্টণ করে খেয়ে ফেলতো, ওদিকে বোর্ডে হয়তো মাইটোসিস-মিয়োসিস চলছে, কিংবা দৈর্ঘ্য x প্রস্থ = ক্ষেত্রফল ... খেলাটা হতো হয় মাঠে, নয় দোতলার ছাতে, আমরা সবাই একদিকে, বাকিরা আরেকদিকে .. আর সেই ছাতের ঠিক পাশেই ছিলো বি-আই কোম্পানির পাঁচিল, টিফিনে খেলার সময় থেকে থেকেই বল চলে যেতো, একবার ওরা কমপ্লেন করেছে, নাম না বললে বল দেবে না ... আমাদের সৌ-বাবু ছিলো সর্দার গোছের, দিব্যি নাম-টাম লিখে দিয়ে এসেছে, আমরাও বল পেয়ে গেছি ... আমি সেই বছর বোধহয় মনিটর ছিলাম, পরের দিন হেডু ডেকে পাঠিয়ে বললো কিছু বদমাইশের নাম পেয়েছি, নজর রাখবে ... আমি বুঝলাম হারামি বি-আই কোম্পানি কাঠি করেছে ... হেডুর কাছ থেকে লিস্ট-টা নিয়ে দেখি উপরে জ্বলজ্বল করছে কালপ্রিটদের নাম ... ১) সত্যজিত রায়, ২) অমর্ত্য সেন, ৩) সৌরভ গাঙ্গুলী ...

    ইস্কুলে মাঝেমাঝেই অসামাজিক কাজকর্ম হতো, এই যেমন একবার এই সৌ-বাবু খৈনী খেতে গিয়ে হেডুর কাছে ধরা পড়লো, আমি তো ভাবলাম এই বুঝি রাস্টিকেট করে দিলো ... তারপর দেখলাম না, গুরু পাপে লঘু দন্ড গার্জেন কল ... তা-ও কাউকে একটা নিয়ে যেতে হবে, তা সৌ-এর বুদ্ধি অনেক, চুপচাপ বাইরে থেকে একজন রিকশা-ওয়ালাকে নিয়ে চলে গেছে, বলেছে এই আমার মামা হয় ... হেডুও তাকে অনেক জ্ঞান-ট্যান দিচ্ছে, 'ছেলেকে তো শাসন-টাসন করেন না', ফেক মামা-ও শুনতে শুনতে হঠাৎ সৌ-কে এক ঠাঁটিয়ে চাঁটি কষিয়েছে ... বলাই বাহুল্য চাঁটি খেয়ে হজম করা ছাড়া গত্যন্তর নেই ...পরে বেরিয়ে চোটপাট করায় নতুন মামার বক্তব্য সে মন দিয়ে অ্যাক্টিং করছিলো ... চাঁটি-টা না মারলে ঠিক ক্যারেক্টারে ঢোকা যাচ্ছিলো না !

    তবে ছাত্ররাই শুধু বেয়াদব আর টিচার-রা মহানুভবতার গাছ ছিলেন এমন ঢপ মেরে নরকে যাওয়ার কোনো শখ আমার নেই ... এক-একজন টিচার ছিলেন যারা যে কোনো গুণ্ডাবাহিনীতে জয়েন করলে তরতর করে সোজা উপরে উঠে লোকসভায় সীট বাগিয়ে ফেলতে পারতেন, করেন-নি সে আমাদের সৌভাগ্য !

    এর’ম একজন ছিলো এস-কে-জি-টু। বলাই বাহুল্য, টু মানে ওয়ান-ও আছে, কিন্তু সিক্যুয়েলের দাপটে প্রিকোয়েল-কে আর কেউ মনে রাখে না ! তো সে এক আগমার্কা স্যাম্পেল ছিলো ... লোক-টা নিজের কোচিং এর সবাই কে গাদা গাদা নম্বর দিতো আর বাকি সবাই-কে ফেল করাতো ... এক্কেবারে হাড়-হারামি লোক মাইরি ... ভুগোলে ম্যাপ পয়েন্টিং দিয়েছিলো জুয়ারি নদী, শালা এর থেকে বেদিয়াপাড়ার নর্দমা বললে বেশী লোকে পারতো ... একবার ক্লাসে এসে বললেন, ‘হ্রদ কাকে বলে?’ – কেউ বলছে এই তো বাড়ির পেছনে যেটায় বিকেলে ছিপ ফেলি, কেউ আবার ফার্স্ট বয়, সে বলছে হ্রদ মানে তো ইদিকে বৈকাল, উদিকে ইরি-অন্টারিও ইত্যাদি, এস-কে-জি-টু সংজ্ঞা শুরু করলেন, ‘হ্রদ এমন জিনিষ যাতে মিষ্টি জল থাকতেও পারে, আবার না-ও পারে, স্থল দিয়ে ঘেরা হতেও পারে আবার নাও পারে, ঢেউ অথবা বিশাল মনস্টার তাতে দেখা যেতেও পারে, আবার না গেলেও কমপ্লেন করার কিছু নেই ...”, একটা এক পাতা লম্বা ডেফিনিশান যেদিন শেষ হলো, আমরা সমবেত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুঝলাম এই বছরেও কপালে গাড্ডু নাচছে ...

    তো একদিন দেখি টিফিন টাইমে সবাই হই-হই করে নাচছে ! জিগ্যেস করে জানা গেলো এস-কে-জি-টু পটল তুলেছে, তাই ছাত্রদের আনন্দের সীমা নেই (বলাই বাহুল্য পোলিটিক্যাল কারেক্টনেস সিঁথির মোড়ের ট্রাফিক সিগনালে হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকে, রাস্তা ক্রস করে বরানগরে ঢুকবে এমন সাহস তার আজ ওব্দি হয়নি) ... তা যা হোক, আমিও একটু ভয়ে-ভয়ে নাচলাম, তারপর শুনলাম না টু নয়, ওয়ান, মানে এস-কে-জি-ওয়ান! একজন বয়স্ক, সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাই ... দেখি গোটা ক্লাসে শোকের ছায়া নেমে এলো ... এতোদিন পরে অবশ্য তেমন রাগ নেই, বেঁচে থাকুন আর আরো অনেক প্রজন্ম-কে ভুগোল ভুলিয়ে ছাড়ুন ... তবে অকারণে শ্রদ্ধা করার-ও কারণ দেখিনা ...

    ভুগোলে ভয়ের কারণ অবশ্য একা এস্কেজি-টু ছিলেন না, ছিলেন অসিত-দা ! পরীক্ষার হলে চোতা ধরে থোঁতা করার গিনেস বুক থাকলে অসিত-দার নামে প্রথম দশখানা তাক-ই খালি রাখতে হবে ... তা এমন টিচার যে ছাত্রকূলের শ্রেণীশত্রু হয়ে দেখা দেবেন সে আর আশ্চর্যের কি আছে ! অক্ষমের প্রতিশোধস্পৃহা বড়ো বিচিত্র - একদিন মনে আছে টিফিনের সময় সিঁড়ির তলায় অসিত-দার সাইকেলের হাওয়া খোলা হচ্ছে, হঠাৎ দেখি সিঁড়ি দিয়ে এস কে পাল নেমে আসছেন (যাঁর নাকি বল-পেনের ব্যাবসা ছিলো) ... এস কে পাল সাইকেলটা দেখে আর্তনাদ করে বললেন 'ওরে ওটা আমার সাইকেল, অসিত-দার টা খুঁজছিস তো? ওটা ওইখানে"!! (এই এস কে পাল অবশ্য ভালো লোক ছিলেন, রাইট সাইড প্লাস ওয়ান, লেফট সাইড মাইনাস ওয়ান করে আর কুইজ খেলেে যে একটা গোটা ক্লাস চালিয়ে দেওয়া যায়, এটা ওনাকে না দেখলে Zআন্তি পারতাম না ...)

    আর একজন ছিলেন, প্রাইমারির তারক-দা ! পড়া না পারলে ভয় দেখাতেন পেন্টুল খুলে নিয়ে সামনে-পিছনে দুটো গাছের পাতা লাগিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেবেন ... সেসব ভয়ঙ্কর ব্যাপারের কথা কল্পনা করলে ক্লাসের অতি দুর্ধর্ষ ছেলেও ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলতো! আর মারামারির কথা না বলাই ভালো – অল্প চড়-চাপড় তো ধর্তব্যের মধ্যেই পড়তো না, আসল আসল শাস্তির কথা বলতে গেলে এখনো ভয় করে ! সতি বলতে কি এখনো ভাবি রাস্তায় সেই (অ)ভদ্রলোক-টিকে পেলে বাটাম দেবো ... আর আমি নিজে এখন শিক্ষক বলে হলফ করে বলতে পারি যে একবার-ও ছাত্রদের ভয় না দেখিয়ে, বাপ-মা উদ্ধার না করে বা মারধোর না করে, বরং তাদের সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করে তাদের অনেক বেশী ভালো শেখানো যায়... সেই একটা জোক্ পড়েছিলাম, একজন লোক-কে কেউ জিগ্যেস করছে, দাদা আপনি ভালো ব্যবহার কোত্থেকে শিখলেন? সে বলছে, ওই তো অভদ্র ছোটলোকদের দেখে, ওরা যা যা করে আমি সেগুলো করি না, ব্যাস !

    এবং এটাও মনে করি যে আপনি অভাব-স্বভাব যাই দেখিয়ে জাস্টিফাই করতে ইচ্ছে হয় করুন, , একজন বয়স্ক লোক যে মূহুর্তে একজন শিশুর গায়ে হাত তোলে সেটা তার খুব ইচ্ছে করে বলেই তোলেন ... জাস্ট হাতের সুখ, আর কিস্যু না ! আমার এক ছাত্র একটা আফ্রিকান দেশ থেকে এখানে এসে পড়ছে বৃত্তি নিয়ে, সে দেশের ২৫% লোক এখনো দাসত্ব করে, কি ভয়ানক অভাব আমরা কল্পনা করতে পারবো না, তাকে জিগ্যেস করেছিলাম তোমাদের ইস্কুলে পেটায়? সে অবাক হয়ে বলেছিল টিচার-রা আবার পেটাবে কেনো?

    যা হোক, সেসব রাগের কথা বলতে গেলে রাত কাত হয়ে যাবে ... বরং ভালো লাগার গল্প করি বাকি সময় টুকু ... ভালো লাগতো কাকে?

    খুব শান্ত, নির্বিরোধ মানুষ ছিলেন সতীশ টুডু। টুডু-দা ছিলেন আমাদের স্কুলের সর্বঘটে কাঁঠালী কলা, উনি যে ঠিক কিসের টিচার ছিলেন কেউ জানতো না, তবে যে কোনো ক্লাসেই স্যার না এলে টুডুদা চলে আসতেন, কখনো আমরা বায়না করতাম ক্যুইজ-ক্যুইজ খেলা হবে, ডানদিক-বাঁদিকের মধ্যে চলতো চোখা-চোখা প্রশ্নবাণ, টুডু-দা চুপচাপ দেখতেন! তা একদিন এসে বললেন নাঃ আর ক্যুইজ নয়, আজ লেখাপড়া হবে, যাই ক্লাস হোক না কেনো, ব্যকরণ কিংবা বায়োলজি, টুডু-দা-ই পড়িয়েই ছাড়বেন ... জিগ্যেস করে জানা গেলো ক্লাস-টা লাইফ সায়েন্সের, আজকের বিষয় উদ্ভিদ ! টুডুদার মুখ অলৌকিক হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো, বললেন, ‘অ, গাছ? তা গাছ দুরকম ! একরকম গাছ গাছে হয়, আরেকরকম গাছ জলে হয় ... নে এবার ক্যুইজ-ক্যুইজ খ্যাল” ... আবার সেই টুডু-দাকেই দেখেছি, ফুটবল খেলতে গিয়ে কেটে যাওয়ায় নিজে দৌড়ে গিয়ে ফার্স্ট-এইড বক্স হাতে করে ক্ষত ঢেকে দিচ্ছেন স্নেহ করে ... বছর কয়েক আগে শুনলাম, টুডু-দা আর নেই, খুব অল্প বয়সে হঠাৎ ছেড়ে চলে গেলেন, কে জানে হয়তো সেই অন্য জগতেও টিচার আসেননি আর একদিন-ও কামাই না করা টুডু-স্যার চলে গেছেন সেখানে আরেকদল দামাল ছেলেকে সামলাতে ...

    পার্ট-ওয়ানে সুভাষ-দার কথা লিখেছিলাম, ইংরেজী পড়াতেন – দেখতে ছিলো মাইকেল মধুসূদনের মতো (অন্ততঃ আমার তাই মনে হয়) ... আর এখানে তাই লিখলাম না, কিন্তু এটা ভেবে দেখলাম যে আমার যে কজন লোক-কে দারুণ লাগতো, তাদের মধ্যে অন্ততঃ চারজন – সুভাষ-দা, সুদীপ্ত নন্দী, সুদীপ্ত চক্রবর্তী আর প্রাইমারির নিশীথ-দা – ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন ! কেন যে ভাষাটা আরেকটু মন দিয়ে পড়লাম না, এই আক্ষেপ এ জীবনে আর ঘোচার নয় !

    আর একজনের কথা না বললে এই গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তার নাম বটুক-দা ! পানের কষে মুখ-ঠোঁট লাল করে ক্লাসে আসতেন, প্রথমে পড়াতেন সংস্কৃত, পরের দিকে দেবভাষার দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর বাংলা ... যদিও সত্যি বলতে, বটুক-দার বাংলা আর সংস্কৃতের মধ্যে খুব বেশী তফাৎ ছিলো না, হুট করে ঘুম থেকে উঠে মনে হতো হয়তো অভাগীর স্বর্গ পড়াতে পড়াতে গিয়ার শিফট করে চলে যাবেন সুভাষিতানিতে বা পাশ-ফেল গল্পে কে ফেল করেছে নোট লেখাতে গিয়ে লিখে দেবেন পুস্তকস্থা তু যা বিদ্যা ... তবে হ্যাঁ, বটুক-দা জীবনে একটি উপকার করেছিলেন, ক্লাস সেভেনে নিয়ম করে রোজ হাতের লেখা দেখাতে হতো ... সেই বছর রুল-টানা খাতায় লিখে লিখে আমার হাতের লেখা শুধরে গেলো, ভাবা যায়?

    যাহোক যা বলছিলাম, বিদ্যা দদাতি বিনয়ম, মানে বিদ্যে পেটে পড়লে কমঃ বিনয় কোঙারের মতন মুখের ভাষা হয় ... তা ইস্কুলে সবাইকে বাপ তুলে খিস্তি করার রেওয়াজ ছিলো বলে আমি প্রচুর লোকের বাবার নাম জানি এবং জানতাম, যেটা বোধহয় আর কোথাও কোনোদিন হয়নি ... ইলেভেন-টুয়েল্ভে না, কলেজে তো নয়-ই ...তা এই বুড়ো বয়সেও অনেকের টা দিব্যি মনে পড়ছে, যেমন... যেমন সেই সৌ-বাবুর বাবার নাম ছিলো বরুণ (বৃষ্টি পড়লেই কাকুকে হিসি করতে বারণ করা হতো), আরেক বন্ধু, যে রাশিয়ান কবিতা লিখতে পারতো, তার বাবার নাম ওম (প্রকাশ না পুরী সে নিয়ে ঐতিহাসিক-রা একমত নন)। একজনের ডাকনাম-ই ছিলো পুলিশের ব্যাটা ... বলাই বাহুল্য তার বাপ দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ অফিসার ছিলেন, ছেলের সাথে ফুটবল খেলতে গেলে টের পাওয়া যেতো... ও হ্যাঁ, আর নীলাঞ্জনের বাবা ছিলেন নিরঞ্জন, সন্ধ্যের দিকে বর্ষার জল ঢোকা ল্যান্ডলাইনে ফোন করলে কে ধরছেন বোঝা লোকনাথ বাবার সাধ্যি নয় ...

    এইসব জ্ঞানার্জনের পথ কিন্তু আদৌ কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না ... বরং রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম বলা চলে, এই যেমন সেকশান এ-তে নীলাঞ্জন নামে আরেকজন ছিলো, সে আমাদের সাথে একটা কোচিং-এ পড়তো (ইন্দ্র-দা, অঙ্ক) আর আমরা ওর পাড়া দিয়ে গেলে ওকে ডেকে নিয়ে যেতাম ... তো আমাকে কোনো এক পুচ্ছ-পক্ক ছেলে বলে দিয়েছে, আরে ওর তো ডাকনাম পিন্টু, বাড়িতে কড়া নেড়ে আওয়াজ পাবি না, ওরা দোতলায় থাকে, নীচে দাঁড়িয়ে “পিন্টু পিন্টু” বলে ডাকিস বেরিয়ে আসবে ... আমিও গিয়ে দোতলার দিকে মুখ করে তারস্বরে "পিন্টু বেরিয়ে আয়, পিন্টু ঘুমোচ্ছিস নাকি" এইসব বলে খুব চিল্লাচ্ছি ... একসময় দেখি সদর দরজা খুলে গেলো আর একজন গম্ভীর লোক বেরিয়ে এসে বললেন, "আমার নাম পিন্টু পাইক, তুমি কাকে চাও?"

    সেইদিন আমি উসেইন বোল্টের থেকেও জোরে দৌড়েছিলাম ...

    আমার বাবা-ও কম বিখ্যাত ছিলেন না, বাবার নাম ছিলো জগন্নাথ ... এখনো মনে আছে শুদ্ধসত্ত্ব-দা শ্রী কৃষ্ণের লীলা পড়াতে গিয়ে জগন্নাথ কোথায় কি পানু-কাজ করেছেন তার সচিত্র বর্ণনা করে চলেছেন, আর গোটা ক্লাস আমার দিকে তাকিয়ে খ্যা-খ্যা করে হাসছে ...(ভদ্রলোক এখন তান্ত্রিক হয়ে গেছেন, আনন্দবাজারে বশীকরণ-টরণে অ্যাড-ও বেরোয় নাকি!)

    সেই জগন্নাথ-বাবু আর নেই, অনেক দিন ইহলোকের মায়া কাটিয়ে অন্য জগতে চলে গেছেন ... এক বন্ধুর কাছ থেকে আরো অনেকের খবর শুনলাম, মন-টা ভারী হয়ে গেলো, এই তো সেদিন দেখলাম ফোয়ারার মোড়ে বাজার করে ফিরছেন, এর মধ্যেই নেই মানে কি??? আরও কত খবর এমনি-ই রোজ উড়ে আসছে, কেউ না কেউ কোথাও পিতৃহারা হচ্ছে ... সেই বয়সে কেউ যদি বলতো, বড়ো হওয়া মানেই যদি রোজ রোজ এই দুঃসংবাদ নিতে শেখা, তাহলে অনেকদিন আগেই খেলবো না বলে বল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতাম ...

    নীল গেইম্যান এক জায়গায় বলেছিলেন, “... the real problem with stories -- if you keep them going long enough, they always end in death.” ... মাঝে মাঝে মনে হয় এর থেকে সত্যি কথা আর বোধহয় কিছুই নেই, এই দেখুন ... শুরু করেছিলাম ইস্কুলের গল্প বলতে ... কোথায় কোথায় অলি-গলি-ঘুঁজি ঘুরে সেই পোঁছে গেলো চেনা ঠিকানায় !

    অনেক গল্প তা-ও বলা বাকি রয়ে গেলো জানি ... বাকি রয়ে গেলেন কতো প্রিয় শিক্ষক, কতো বন্ধুদের গল্প ... যোগেশ-দার কোচিঙ-এর গল্প বলা হলো না, বলা হলো না দিব্যদা-বাবলুদা-সুকোমল-দার গল্প ... আর, আর ... আমাদের ইস্কুলের দুই পা দূরে সেই রাজকুমারী ইস্কু্লের গল্প, যেখানে বচ্ছরকার দিন সরস্বতী পুজোয় একবার করে যাওয়াই ছিলো সেই টিনেজ বয়সের সবথেকে বড়ো কীর্তি !

    আসলে কি, আমাদের মতন বয়সে গল্পের ঝোঁক আসে, মনে হয় বিকেলে দাওয়ায় পা ছড়িয়ে বসি মেজপিসির মতো, যাঁর কাছে শুনতাম পাঁচালীর গল্প, পুরাণের গল্প আর ফুরিয়ে যাওয়া দুপুরের গল্প। দেখতাম শাপদগ্ধ যযাতি আর তার পুত্র যদু-কে। যদু পিতার জরা নিতে ভয় পাচ্ছেন আর যযাতির অভিশাপ তার সন্তান-সন্ততি অধিকার হারাচ্ছে রাজসিংহাসনের ! আমি-ই সেই যদুবাবু, আমার বয়েস অনেক। তা-ও বুড়িয়ে যেতে ভয় পাই, আর তাই ফুরিয়ে যাওয়া দুপুরের গল্পের মধ্যে দিয়ে শুধুই পৌঁছতে চেষ্টা করে চলেছি আমার কৈশোরে আর শৈশবে ... আর সে বিকেল-মাখা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিজেকে নিজেই বলছি, ‘দশটা বছরের গল্প কি আর দশ মিনিটে হয়?’
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ এপ্রিল ২০১৯ | ৪৩৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • শঙ্খ | ***:*** | ০১ মে ২০১৯ ০১:৪৭47862
  • বেশ
  • dd | ***:*** | ০১ মে ২০১৯ ০৩:২০47861
  • ভালো লাগলো। আরো হোক।
  • জ্যোতিষ্ক | ***:*** | ০১ মে ২০১৯ ০৪:৪৮47863
  • শঙ্খ, ডিডি অনেক ধন্যবাদ ! অবশ্যই আরও লিখবো !
    আসলে আমার বেশীর ভাগ লেখাই এইরকম, ইস্কুলের গল্প, কলেজের গল্প, কামাইয়ের গল্প, টুকলির গল্প, ট্রেনের গল্প, তারপর তবলার মাস্টারমশাই-এর গল্প, নাটকের রিহার্সালের গল্প - আর দু-একটা বানিয়ে বানিয়ে ভূতের গল্প - এখানকার বাকী লেখার পাশে সেসব দিতে বড্ডো সংকোচ হয় !
  • Titir | ***:*** | ০২ মে ২০১৯ ০৪:০৮47864
  • বাহ জ্যোতিষ্ক ! এখানে দেখে খুব ভালো লাগছে। অভিজ্ঞতার ঝাঁপিটা এবার উপুড় করে দাও।
    আমারে তুমি চেন। তবে অন্যনামে।
  • dd | ***:*** | ০২ মে ২০১৯ ০৪:৩৮47865
  • ইস্কুলের গল্প, কলেজের গল্প, কামাইয়ের গল্প, টুকলির গল্প, ট্রেনের গল্প, তবলা ও ভুতের গল্পো এমন কি সংকোচের গল্পোও হোক।
  • জ্যোতিষ্ক | ***:*** | ০৩ মে ২০১৯ ০১:৪০47866
  • থ্যাংকু ! হ্যাঁ সব গপ্পোই করবো একে একে !

    তিতির, ধন্যবাদ, আমার ঝুলি নয়, আসলে ফুটো একটা পকেট, কিন্তু যা আছে নুড়ি-পাথর- হাফ ছেঁড়া সিনেমার টিকিট সব-ই আস্তে আস্তে বের করে রাখবো - তোমাকে/আপনাকে চিনি শুনে ভালো লাগলো যদিও কেউ আমাকে চেনে বললে আমার উইথ প্রোবাবিলিটি হাফ খুব ফুর্তি হয়, আর উইথ দি আদার হাফ প্রোবাবিলিটি ভয় হয় যে প্রাচীন-কালের বন্ধু নিশ্চয় কিছু ধারবাকি আছে বলে খুঁজছে !
  • একক | ***:*** | ০৩ মে ২০১৯ ০২:৩৩47867
  • এস্কেজি ওয়ান বড় শোক পেয়েছিলেন আমি ভূগোলে এগারো পাওয়ায়।
  • জ্যোতিষ্ক | ***:*** | ০৪ মে ২০১৯ ০৭:৫২47868
  • একক, আপনিও বরাকৃমি? দারুণ ব্যাপার তো !

    এস কে জি ওয়ান খুব ভালো লোক ছিলেন, একবার আমার খাতা দেখে বলেছিলেন এই যে তুমি সব জায়গায় "তাইজন্য" লিখেছো সেটা ভুল - হয় "তাই" নাহলে "সেজন্য" ... সেরকম তৃষ্ণার্ততা বলে কোনো কথা হয় না, কথাটা তৃষ্ণা ! তারপর বলেছিলেন যে এই যে তুমি না ভেবে লিখছো এতে ভাষার দৈন্য প্রকাশ পায়, আর কিছু না ... অথচ উনি সেবার বাংলা পড়াচ্ছিলেন-ও না ... আমার সবথেকে প্রিয় অবশ্য সুভাষ-দা, ওনার জন্য গোটা একটা আলাদা গল্প আছে, পরে পোস্টাবো ...
  • Aritra Banerjee | ***:*** | ০৫ মে ২০১৯ ০৭:১১47869
  • আমি মিশনের 2002 ব্যাচ এর ছাত্র| লেখাটা পরে খুব ভালো লাগলো আবার মন তা খারাপ ও হয়ে গেলো | অনেক পুরোনো স্মৃতি মনে পরে গেলো; ক্লাস র বেঞ্চ বাজানোর গল্প , টিফিন কেড়ে খাবার গল্প, স্যার দেড় ধুতিতে নিপ পেনের কালি দেয়ার গল্প, বাবলু দা, সুকোমল দা, সঃ পাল, দীনেশ দা, দিব্য দা, জানলা ভাঙার গল্প, বাথরুম এ লুকিয়ে থাকার গল্প মার্ খাবার ভয় র কত ki।।
    আর ওই ফুরিয়ে যাওয়া মায়া মাখানো বিকেল গুলো যেখানে রোদ্রের আলো কমে আসতো র আমাদের স্কুল ছুটির ঘন্টা পড়ার সাথে সাথে দৌড়ে বেরিয়ে আসতাম মাঠে খেলার জায়গা নিতে হবে বলে। সত্যি ১০ বছরের গল্প কি র ১০ মিনিট এ হয়।
  • একক | ***:*** | ০৫ মে ২০১৯ ০৮:৩৯47870
  • বাবলুদার সঙ্গে বহুকাল সাক্ষাৎ নাই । বাড়ি গেলে চন্দ্রনাথদা কে দেখি , বাজার করছেন । কত যত্ন নিয়ে বাবলুদা "মাসির জীবনচক্র" পড়াতেন , মাসিদের সম্বন্ধে অত আন্তরিক খবর মায়েদের কাছেও থাকেনা ।
  • জ্যোতিষ্ক | ***:*** | ০৬ মে ২০১৯ ০২:১৮47871
  • "মাসির জীবনচক্র" !! হা হা হা হা হা, বাবলু দা ভারী ভালো লোক ছিলেন ... হ্যাঁ চন্দ্রনাথ-দার বাড়ী ছিলো সিঁথির মোড়ের ঠিক মুখ-টায় মনে হয়, ভারি ভালো লোক ছিলেন, এই বছরেই রিটায়ার করলেন ... এখন বয়েস হয়েছে, দেখলে মন খারাপ লাগে ...

    @অরিত্র, ২০০২-এ মাধ্যমিক? তাহলে তুমি তো আমার প্রায় সমসাময়িক ... নিশ্চয়ই টিফিনে মাঠে একসাথে বল পিটিয়েছি, যে সুন্দর মাঠ-টা এখন গ্ল্যাক্সো বেবির পাল্লায় পড়ে বাঞ্ছারামের বাগান হয়ে গেছে।
  • ভাষা ভাষা | ১১ এপ্রিল ২০২১ ১৮:০০104643
  • বাঃ! 


    অনেকটা সময় পার করে এলে, সেই ফেলে আসা জীবনে নিজের ক্যারেক্টারে প্রবেশ করাও নেহাত সহজ ব্যাপার নয় ।

  • যদুবাবু | ১১ এপ্রিল ২০২১ ১৯:১৮104645
  • ধন্যবাদ, ভাষা ভাষা ! 

    একদম-ই ঠিক বলেছেন, আসলে সেই ক্যারেক্টারগুলোও তো সব মোমরঙে আঁকা, ধেবড়ে গেছে এতোদিন চাপা পড়ে থেকে, এখন একটু একটু মনে পড়ে সে বা তারা কেমন ছিলো, বাকিটা রাঙতামোড়া মিথ্যে। :) 

  • Abhyu | 47.39.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২১ ২০:১৩104646
  • জ্যোতিষ্ক আপনার লেখা পড়তে খুব ভালো লাগে। আই এস আইয়ের গল্পও হোক একটু। JKGর গল্প তো শুনিই নি কোনোদিন।

    JKG বলতে মনে হল, আপনার থেকে একটু সিনিয়র সুমো চাউ বলে একজন ইকোনমিক্সের ছেলে, পার্ডুতে ওনার কাছে হেল্প চাইতে গেছে, ওনার সে কি কাতর প্রার্থনা, শুভাশিস আর একটু বোসো, এইটাও একটু শুনে নাও, তোমার কাজেই লাগবে...

  • যদুবাবু | ১১ এপ্রিল ২০২১ ২০:৪৭104648
  • এই অভ্যু-দা, আমাকে আপনি বোলো না। 

    থ্যাঙ্ক ইউ ! আই-এস-আইয়ের গল্প তো তোমাদের কাছে শুনে শুনে (পড়ে পড়ে) লোককে বলি আবার সেগুলোই লিখি - গুরুতেই প্রাগৈতিহাসিক একটা টই ছিলো, যাতে তুমিও লিখতে, চিরন্তন-দাও লিখতো। সেটা একটা স্বর্ণখনি। 
    আমার দু-একটা এদিক-ওদিক লেখা আছে যাতে আই-এস-আইয়ের গল্প করেছি এটাসেটা লিখতে লিখতে। সেইগুলো পোস্টাইনি আগে, এই একটু পরেই একটা দিচ্ছি। :)

    JKG-র গল্প লিখতেই হবে শিগগিরি, ভুলে যাওয়ার আগে। উনি চলে যাওয়ার পর আর-ভি-আরের একটা ছোট্ট অবিচুয়ারি পেয়েছিলাম, খুব সুন্দর লেখা। তাতে এক জায়গায় ছিলো যে জেকেজি ওঁর লিভিং রুমের একটা প্লাস্টিকের গাছে মাঝেমাঝেই জল দিতেন, প্লাস্টিক জেনেও, জাস্ট একটা চারাগাছ জল না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে এইটা কেমন লাগতো।

    আমি ওঁকে ২০০৯-১৪ দেখেছি, প্রায় রোজ-ই, কারণ স্যার রোজ মিট করতেন, এমন কি শনিবারেও। তখন মাঝে মাঝে বেজায় রাগ হতো, শনিবার সকালে কার ভাল্লাগে অফিস যেতে? তাও গিয়ে তো রিসার্চের কাজ খুব কিছু হতো না, এমনি গপ্পসপ্প হতো বিভিন্ন বিষয়ে - কোনোদিন আফ্রিকা, কোনোদিন মঙ্গলকাব্য এইসব। ২০১৩ র পর থেকে ওঁর প্রিয়তম টপিক ছিলো, কম্প্যাশন, কাইন্ডনেস -- প্রায়-ই বলতেন এইগুলো কি বোঝার দিকে আমরা একটুও এগোলাম? 

    এখন মাঝে মাঝেই সেইসব ভয়ানক মিস করি। অমন অহমিকাশূন্য বৈদগ্ধ্য, জ্ঞানের পরিধি আমি অন্ততঃ আর এক জন মানুষ-ও দেখিনি। 

    সেই তপন রায়চৌধুরীর লেখায় ছিলো, "দীপেন প্রজ্জ্বালিত দীপবৎ" - সেইরকম-ই মনে হয়। কত মানুষজনের জীবন কত উপায়ে একটু হলেও আলোকিত করে গেছেন, সেইটা দেখে শেখার মত। 

  • Abhyu | 47.39.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২১ ২১:০২104650
  • এক শনিবার ওনার ঘরের বাইরে থেকে একজন শুনতে পেয়েছিল - উনি আস্তে আস্তে বলছেন "***, তুমি কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ছ"। (নামটা লেখা গেল না, বিখ্যাত প্রফেসর!)

  • যদুবাবু | ১১ এপ্রিল ২০২১ ২১:৪৪104652
  • :D  :D


    আমাদের ব‍্যাচেও হয়েছে। ননপ‍্যারামেট্রিক বেইয পড়ানো চলছে আর এদিকে মোহন গোপালাদেসিকান রীতিমতো নাক ডেকে ঘুম দিচ্ছে তাও সাামনের বেঞ্চে বসে। JKG পড়ানোো শেষ করে খুব মৃদু গলায় ডাকছেন, 'মোহন, মোহন, ক্লাস শেষ'। 

  • Abhyu | 47.39.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২১ ২২:৩৬104654
  • ও তো তবু ক্লাসে। এ তো পি এইচ ডি স্টুডেন্ট, অফিসে একা।

    অবশ্য আমিও ঐ কাণ্ড করেছিলাম তাপস সামন্তের ক্লাসে। উনি আমাকে আস্তে করে ডেকে বলেছিলেন, অভ্যুদয় কাল অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশুনো করেছ? কি করে আর বলি সারা রাত ভাটিয়েছি। তাও তো ভালো মৃদুলের মতো কাউকে ঘুম থেকে তুলে গান শোনাই নি যে তোমায় গান শোনাবো তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো।

  • যদুবাবু | ১১ এপ্রিল ২০২১ ২৩:০৫104655
  • হা হা হা হা ... এইবারে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে পেরেছি, বিখ্যাত প্রফেসর (বি.প্র.) কে ছিলেন বুঝে গেছি :p (উনি অবশ্য দারুণ লোক। আমার খুব-ই পছন্দের।) 

    তাপস সামন্ত-র একবার পার্ডু এসে কয়েক মাস ছিলেন, সেই সবুজ বইটা লেখার সময়। তখন টেগোর সোসাইটির ছেলেমেয়েরা ওনাকে নাটকে একটা রোল করতে বলে, তাসা শুনেই নাকচ করে দিলেও পরে জেকেজি-র বলায় করতে রাজি হন। পরে তাসা আমাকে বলেছিলেন, "জেকেজি-র কথা ফেলতে পারিনি তাই করেই দিলাম, কিন্তু শুধু একটা পুরুষ্টু গোঁপ আছে বলেই আমাকে রাক্ষসের রোল দেওয়া হবে, এ কেমন অন্যায় আবদার?" 



     

  • &/ | 151.14.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০০:৫২104657
  • এইটা চমৎকার টই। এতদিন চোখে কেন পড়ে নি কেজানে! খুব ভালো লাগল পড়তে। কমেন্টগুলোও খুব ভালো। ঃ-)

  • যদুবাবু | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০২:৫৫104658
  • ধন্যবাদ অ্যাম্পারস্যান্ড। 

    আসলে লুকিয়েই ছিলো, ভাষা ভাষা আজকে কী করে যেন ভাসিয়ে তুলেছেন এটা। আর অভ্যু-দা। :) 

    (আমার মনে হয়, আসল গল্প সবসময় কমেণ্টেই থাকে। মূল পোস্ট-টা তো টইতে আড্ডা মারার ছুতো।) 

  • &/ | 151.14.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৪:১৯104659
  • কিন্তু যদুবাবু, ওই লোক, আপনাদের সেই পাজি শিক্ষক, আপনাকে কী করেছিল? সামান্য কারণে বা প্রায় অকারণে খুব বেশিরকম মারধোর করেছিল?

  • &/ | 151.14.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৪:২২104660
  • রাস্তায় পেলেই ল্যাং মেরে ফেলে দেবেন, উপুড় করে ফেলবেন। তারপরে মহেন্দ্রলালের ছাতার চোখা শীর্ষটির খেল দেখাবেন জায়গামতন (সবসময় হাতে ছাতা রেডি রাখবেন)। :-)

  • &/ | 151.14.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৪১104661
  • যযাতির মোট পাঁচটি ছেলে ছিল না? দেবযানীর সঙ্গে দু'টি আর শর্মিষ্ঠার সঙ্গে তিনটি? যদুই কি সবচেয়ে বড় ওদের মধ্যে?

  • যদুবাবু | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫০104662
  • হ্যাঁ ভয়ানক মারতেন। আমাকে দেখে সামহাউ ওনার ওই নৃশংস সেডিস্ট রূপটা বেরিয়ে আসতো। কেন কে জানে? শাস্তির রকম কত ! একটা হচ্ছে দুই আঙ্গুলের মাঝে নটরাজ পেন্সিল ঢুকিয়ে জোরে চাপ, রাত্রে সেই হাত দিয়ে রুটি ছিঁড়তে পারতাম না। একটা কচ্ছপের মতন টিচার্স টেবিলের নিচে মুণ্ডু ঢুকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা, পড়াতে পড়াতে মাঝে মাঝেই পুচ্ছে সজোরে বেতের বাড়ি। দুই হাত আনুভূমিক রেখে হাতের উপর জলের ভারী বোতল, হাত একটুও নিচে নামলেই হাতের নিচে স্কেল দিয়ে মার।

    আর এমনি ট্রিভিয়াল ঠ্যাঙানি তো আছেই। হাতের সামনে যা পেতেন তাই দিয়েই ক্যালাতেন আর কি। একবার মিল্টনের জলের বোতল, একবার জ্যামিতি বক্স। তার উপরে বোনাস বাড়িতে মার খাওয়ানোর জন্যে গার্জেন-কল এটাসেটা তো ছিলই। ওঁর উপরে অনেক চেষ্টা করেও রাগটা যায়নি, অনেক ভেবেও ক্ষমা করতে পারিনি। 

    ছাতা একটা রেডি রাখিই বটে - আমার বিশ্বাস ছাতা সঙ্গে রাখলে বৃষ্টি হওয়ার প্রোবাবিলিটি অটোমেটিক্যালি কমে যায়, এবং ভাইসি-ভার্সা ! :D তবে সে এদেশে সস্তা ফোল্ডিং ছাতা, সামান্য হাওয়া দিলেই যা কনকেভ থেকে কনভেক্স হয়ে যায়, ওই ছাতা হারানোর থেকে কোন মহত্তর কাজে লাগে না। 
     

  • যদুবাবু | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫২104663
  • হ্যাঁ সব থেকে বড়ো যদু ! আমার সেইরকম-ই মনে আছে -- বই না দেখলে নিশ্চিত হওয়া মুশকিল। :) 

  • &/ | 151.14.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪২104664
  • যদুর নামটা খুব সহজ, কিন্তু ওঁর ভাইদের নামগুলো মারাত্মক টাইপের। একজনের নাম তো তুর্ব্সু না কী যেন। অনু আর পুরুও অবশ্য সহজ নাম। কিন্তু আরেকটা ভাই ছিল, তাঁর নাম উচ্চারণ করাই মুশকিল। দ্রুহ্যু না কী যেন। ঃ-)

  • &/ | 151.14.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৬104665
  • যদুবাবু, খেয়াল করে দেখবেন তখনকার দিনে শুধু যে পাজি শয়তান শিক্ষকগুলো ঠ্যাঙাতো তাই না, বাড়িতে অভিভাবকরাও বিস্তর ঠ্যাঙাতো। এমনকি পাড়াতুতো গুরুজনরাও অনেক সময় ঠেঙিয়ে দিতো। এসবই নাকি ছিল "শাসন" করে ভালো করে তোলার চেষ্টা।
    এখনকার দিনে পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। এখন ওরকম পাজিটাইপ টিচারদের হাজতবাস করিয়ে ছেড়ে দেবেন অভিভাবকরা।

  • &/ | 151.14.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৫৫104666
  • এইসব মারধোর করনেওয়ালা লোকেরা (টিচার বা গার্জিয়ান যেই হোক না কেন), তিলমাত্র কনসার্নড ছিল না শিশুর ভালোমন্দ বিষয়ে, দুর্বলতর কারুকে পাল্লার মধ্যে পেয়ে রগড়ানোর সুখ ছাড়া আর কিছুই এদের উদ্দেশ্য ছিল না। এরা ফিলিপ মোষের মতই। দিনের শেষে তাই অনেকেই পড়েওছে ওই ফিলিপ মোষেদের হাতেই। কর্মফলবাদ অবশ্য সেই কথাই বলে থাকে।

  • যদুবাবু | ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১১104667
  • হ্যাঁ, আমার একদম ছোটোবেলায় পরীক্ষার খাতায় নিজের আসল নাম (জ্যোতিষ্ক) লিখতেই চাপ হতো, পেটকাটা মদ্ধেন্নো ষ-এ ক-এ একটা বীভৎস ব্যাপার। দ্রুহ্য কী করতেন কে জানে। তবে যদু চালাক ছিলেন, বাবার বদ মতলব বুঝতে পেরেই স্যাট করে কেটে পড়েছিলেন। বেচারা পুরু। 

    দ্বিতীয় কথাটাও একশো পারসেন্ট ঠিক। আমি বুঝতে পারি যে আমার বা আমাদের মত মারধোর খেয়ে বড়ো হওয়া লোকের কিছু কিছু পারসোনালিটির ট্রেইট সেই ছোটবেলার চড়-থাপ্পড়-স্কেলের বাড়িতেই শেপ পেয়েছে, সেগুলো পাল্টাবে না। হয়তো অনেকদিনের চেষ্টায় একটু সাহস তৈরী হয়, কিন্তু সে-ও  একেবারেই ফ্র্যাজাইল। বরফের মতন, চাপ দিলেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে যাবে। 

    উন্নতি হয়েছে ঠিক-ই, তবে ইস্কুলের পেজ/গ্রূপে "আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম" বলে সে কি কান্না রে বাবা। লোকে বুঝেই গ্যাছে যে তাঁদের যাবতীয় ঐহিক উন্নতির মূল ছেলেবেলায় বেদম পেটানি খাওয়া, এখন নেই বলেই না গোটা প্রজন্ম তলিয়ে গেলো। কর্মফল-ই বটে। 

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন