বাঃ!
অনেকটা সময় পার করে এলে, সেই ফেলে আসা জীবনে নিজের ক্যারেক্টারে প্রবেশ করাও নেহাত সহজ ব্যাপার নয় ।
ধন্যবাদ, ভাষা ভাষা !
একদম-ই ঠিক বলেছেন, আসলে সেই ক্যারেক্টারগুলোও তো সব মোমরঙে আঁকা, ধেবড়ে গেছে এতোদিন চাপা পড়ে থেকে, এখন একটু একটু মনে পড়ে সে বা তারা কেমন ছিলো, বাকিটা রাঙতামোড়া মিথ্যে। :)
জ্যোতিষ্ক আপনার লেখা পড়তে খুব ভালো লাগে। আই এস আইয়ের গল্পও হোক একটু। JKGর গল্প তো শুনিই নি কোনোদিন।
JKG বলতে মনে হল, আপনার থেকে একটু সিনিয়র সুমো চাউ বলে একজন ইকোনমিক্সের ছেলে, পার্ডুতে ওনার কাছে হেল্প চাইতে গেছে, ওনার সে কি কাতর প্রার্থনা, শুভাশিস আর একটু বোসো, এইটাও একটু শুনে নাও, তোমার কাজেই লাগবে...
এই অভ্যু-দা, আমাকে আপনি বোলো না।
থ্যাঙ্ক ইউ ! আই-এস-আইয়ের গল্প তো তোমাদের কাছে শুনে শুনে (পড়ে পড়ে) লোককে বলি আবার সেগুলোই লিখি - গুরুতেই প্রাগৈতিহাসিক একটা টই ছিলো, যাতে তুমিও লিখতে, চিরন্তন-দাও লিখতো। সেটা একটা স্বর্ণখনি।
আমার দু-একটা এদিক-ওদিক লেখা আছে যাতে আই-এস-আইয়ের গল্প করেছি এটাসেটা লিখতে লিখতে। সেইগুলো পোস্টাইনি আগে, এই একটু পরেই একটা দিচ্ছি। :)
JKG-র গল্প লিখতেই হবে শিগগিরি, ভুলে যাওয়ার আগে। উনি চলে যাওয়ার পর আর-ভি-আরের একটা ছোট্ট অবিচুয়ারি পেয়েছিলাম, খুব সুন্দর লেখা। তাতে এক জায়গায় ছিলো যে জেকেজি ওঁর লিভিং রুমের একটা প্লাস্টিকের গাছে মাঝেমাঝেই জল দিতেন, প্লাস্টিক জেনেও, জাস্ট একটা চারাগাছ জল না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে এইটা কেমন লাগতো।
আমি ওঁকে ২০০৯-১৪ দেখেছি, প্রায় রোজ-ই, কারণ স্যার রোজ মিট করতেন, এমন কি শনিবারেও। তখন মাঝে মাঝে বেজায় রাগ হতো, শনিবার সকালে কার ভাল্লাগে অফিস যেতে? তাও গিয়ে তো রিসার্চের কাজ খুব কিছু হতো না, এমনি গপ্পসপ্প হতো বিভিন্ন বিষয়ে - কোনোদিন আফ্রিকা, কোনোদিন মঙ্গলকাব্য এইসব। ২০১৩ র পর থেকে ওঁর প্রিয়তম টপিক ছিলো, কম্প্যাশন, কাইন্ডনেস -- প্রায়-ই বলতেন এইগুলো কি বোঝার দিকে আমরা একটুও এগোলাম?
এখন মাঝে মাঝেই সেইসব ভয়ানক মিস করি। অমন অহমিকাশূন্য বৈদগ্ধ্য, জ্ঞানের পরিধি আমি অন্ততঃ আর এক জন মানুষ-ও দেখিনি।
সেই তপন রায়চৌধুরীর লেখায় ছিলো, "দীপেন প্রজ্জ্বালিত দীপবৎ" - সেইরকম-ই মনে হয়। কত মানুষজনের জীবন কত উপায়ে একটু হলেও আলোকিত করে গেছেন, সেইটা দেখে শেখার মত।
এক শনিবার ওনার ঘরের বাইরে থেকে একজন শুনতে পেয়েছিল - উনি আস্তে আস্তে বলছেন "***, তুমি কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ছ"। (নামটা লেখা গেল না, বিখ্যাত প্রফেসর!)
:D :D
আমাদের ব্যাচেও হয়েছে। ননপ্যারামেট্রিক বেইয পড়ানো চলছে আর এদিকে মোহন গোপালাদেসিকান রীতিমতো নাক ডেকে ঘুম দিচ্ছে তাও সাামনের বেঞ্চে বসে। JKG পড়ানোো শেষ করে খুব মৃদু গলায় ডাকছেন, 'মোহন, মোহন, ক্লাস শেষ'।
ও তো তবু ক্লাসে। এ তো পি এইচ ডি স্টুডেন্ট, অফিসে একা।
অবশ্য আমিও ঐ কাণ্ড করেছিলাম তাপস সামন্তের ক্লাসে। উনি আমাকে আস্তে করে ডেকে বলেছিলেন, অভ্যুদয় কাল অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশুনো করেছ? কি করে আর বলি সারা রাত ভাটিয়েছি। তাও তো ভালো মৃদুলের মতো কাউকে ঘুম থেকে তুলে গান শোনাই নি যে তোমায় গান শোনাবো তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো।
হা হা হা হা ... এইবারে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে পেরেছি, বিখ্যাত প্রফেসর (বি.প্র.) কে ছিলেন বুঝে গেছি :p (উনি অবশ্য দারুণ লোক। আমার খুব-ই পছন্দের।)
তাপস সামন্ত-র একবার পার্ডু এসে কয়েক মাস ছিলেন, সেই সবুজ বইটা লেখার সময়। তখন টেগোর সোসাইটির ছেলেমেয়েরা ওনাকে নাটকে একটা রোল করতে বলে, তাসা শুনেই নাকচ করে দিলেও পরে জেকেজি-র বলায় করতে রাজি হন। পরে তাসা আমাকে বলেছিলেন, "জেকেজি-র কথা ফেলতে পারিনি তাই করেই দিলাম, কিন্তু শুধু একটা পুরুষ্টু গোঁপ আছে বলেই আমাকে রাক্ষসের রোল দেওয়া হবে, এ কেমন অন্যায় আবদার?"
এইটা চমৎকার টই। এতদিন চোখে কেন পড়ে নি কেজানে! খুব ভালো লাগল পড়তে। কমেন্টগুলোও খুব ভালো। ঃ-)
ধন্যবাদ অ্যাম্পারস্যান্ড।
আসলে লুকিয়েই ছিলো, ভাষা ভাষা আজকে কী করে যেন ভাসিয়ে তুলেছেন এটা। আর অভ্যু-দা। :)
(আমার মনে হয়, আসল গল্প সবসময় কমেণ্টেই থাকে। মূল পোস্ট-টা তো টইতে আড্ডা মারার ছুতো।)
কিন্তু যদুবাবু, ওই লোক, আপনাদের সেই পাজি শিক্ষক, আপনাকে কী করেছিল? সামান্য কারণে বা প্রায় অকারণে খুব বেশিরকম মারধোর করেছিল?
রাস্তায় পেলেই ল্যাং মেরে ফেলে দেবেন, উপুড় করে ফেলবেন। তারপরে মহেন্দ্রলালের ছাতার চোখা শীর্ষটির খেল দেখাবেন জায়গামতন (সবসময় হাতে ছাতা রেডি রাখবেন)। :-)
যযাতির মোট পাঁচটি ছেলে ছিল না? দেবযানীর সঙ্গে দু'টি আর শর্মিষ্ঠার সঙ্গে তিনটি? যদুই কি সবচেয়ে বড় ওদের মধ্যে?
হ্যাঁ ভয়ানক মারতেন। আমাকে দেখে সামহাউ ওনার ওই নৃশংস সেডিস্ট রূপটা বেরিয়ে আসতো। কেন কে জানে? শাস্তির রকম কত ! একটা হচ্ছে দুই আঙ্গুলের মাঝে নটরাজ পেন্সিল ঢুকিয়ে জোরে চাপ, রাত্রে সেই হাত দিয়ে রুটি ছিঁড়তে পারতাম না। একটা কচ্ছপের মতন টিচার্স টেবিলের নিচে মুণ্ডু ঢুকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা, পড়াতে পড়াতে মাঝে মাঝেই পুচ্ছে সজোরে বেতের বাড়ি। দুই হাত আনুভূমিক রেখে হাতের উপর জলের ভারী বোতল, হাত একটুও নিচে নামলেই হাতের নিচে স্কেল দিয়ে মার।
আর এমনি ট্রিভিয়াল ঠ্যাঙানি তো আছেই। হাতের সামনে যা পেতেন তাই দিয়েই ক্যালাতেন আর কি। একবার মিল্টনের জলের বোতল, একবার জ্যামিতি বক্স। তার উপরে বোনাস বাড়িতে মার খাওয়ানোর জন্যে গার্জেন-কল এটাসেটা তো ছিলই। ওঁর উপরে অনেক চেষ্টা করেও রাগটা যায়নি, অনেক ভেবেও ক্ষমা করতে পারিনি।
ছাতা একটা রেডি রাখিই বটে - আমার বিশ্বাস ছাতা সঙ্গে রাখলে বৃষ্টি হওয়ার প্রোবাবিলিটি অটোমেটিক্যালি কমে যায়, এবং ভাইসি-ভার্সা ! :D তবে সে এদেশে সস্তা ফোল্ডিং ছাতা, সামান্য হাওয়া দিলেই যা কনকেভ থেকে কনভেক্স হয়ে যায়, ওই ছাতা হারানোর থেকে কোন মহত্তর কাজে লাগে না।
হ্যাঁ সব থেকে বড়ো যদু ! আমার সেইরকম-ই মনে আছে -- বই না দেখলে নিশ্চিত হওয়া মুশকিল। :)
যদুর নামটা খুব সহজ, কিন্তু ওঁর ভাইদের নামগুলো মারাত্মক টাইপের। একজনের নাম তো তুর্ব্সু না কী যেন। অনু আর পুরুও অবশ্য সহজ নাম। কিন্তু আরেকটা ভাই ছিল, তাঁর নাম উচ্চারণ করাই মুশকিল। দ্রুহ্যু না কী যেন। ঃ-)
যদুবাবু, খেয়াল করে দেখবেন তখনকার দিনে শুধু যে পাজি শয়তান শিক্ষকগুলো ঠ্যাঙাতো তাই না, বাড়িতে অভিভাবকরাও বিস্তর ঠ্যাঙাতো। এমনকি পাড়াতুতো গুরুজনরাও অনেক সময় ঠেঙিয়ে দিতো। এসবই নাকি ছিল "শাসন" করে ভালো করে তোলার চেষ্টা।
এখনকার দিনে পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। এখন ওরকম পাজিটাইপ টিচারদের হাজতবাস করিয়ে ছেড়ে দেবেন অভিভাবকরা।
এইসব মারধোর করনেওয়ালা লোকেরা (টিচার বা গার্জিয়ান যেই হোক না কেন), তিলমাত্র কনসার্নড ছিল না শিশুর ভালোমন্দ বিষয়ে, দুর্বলতর কারুকে পাল্লার মধ্যে পেয়ে রগড়ানোর সুখ ছাড়া আর কিছুই এদের উদ্দেশ্য ছিল না। এরা ফিলিপ মোষের মতই। দিনের শেষে তাই অনেকেই পড়েওছে ওই ফিলিপ মোষেদের হাতেই। কর্মফলবাদ অবশ্য সেই কথাই বলে থাকে।
হ্যাঁ, আমার একদম ছোটোবেলায় পরীক্ষার খাতায় নিজের আসল নাম (জ্যোতিষ্ক) লিখতেই চাপ হতো, পেটকাটা মদ্ধেন্নো ষ-এ ক-এ একটা বীভৎস ব্যাপার। দ্রুহ্য কী করতেন কে জানে। তবে যদু চালাক ছিলেন, বাবার বদ মতলব বুঝতে পেরেই স্যাট করে কেটে পড়েছিলেন। বেচারা পুরু।
দ্বিতীয় কথাটাও একশো পারসেন্ট ঠিক। আমি বুঝতে পারি যে আমার বা আমাদের মত মারধোর খেয়ে বড়ো হওয়া লোকের কিছু কিছু পারসোনালিটির ট্রেইট সেই ছোটবেলার চড়-থাপ্পড়-স্কেলের বাড়িতেই শেপ পেয়েছে, সেগুলো পাল্টাবে না। হয়তো অনেকদিনের চেষ্টায় একটু সাহস তৈরী হয়, কিন্তু সে-ও একেবারেই ফ্র্যাজাইল। বরফের মতন, চাপ দিলেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে যাবে।
উন্নতি হয়েছে ঠিক-ই, তবে ইস্কুলের পেজ/গ্রূপে "আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম" বলে সে কি কান্না রে বাবা। লোকে বুঝেই গ্যাছে যে তাঁদের যাবতীয় ঐহিক উন্নতির মূল ছেলেবেলায় বেদম পেটানি খাওয়া, এখন নেই বলেই না গোটা প্রজন্ম তলিয়ে গেলো। কর্মফল-ই বটে।