এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • চন্দ্রযান-উন্মত্ততা এবং আমাদের বিজ্ঞান গবেষণা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৩৭০৭ বার পঠিত
  • চন্দ্রযান-২ চাঁদের মাটিতে ঠিকঠাক নামতে পারেনি, তার ঠিক কী যে সমস্যা হয়েছে সেটা এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে শুরু হয়েছে তর্কাতর্কি, সরকারের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে। প্রকল্পটির সাফল্য কামনা করে ইসরো-র শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা প্রকাশ্যে পুজো-আর্চা করেছেন, গুরুর শরণ নিয়েছেন। তাই নিয়ে চলেছে প্রবল হাসিঠাট্টা। আর সরকারের সমর্থকেরা তার উত্তরে বলছেন, চন্দ্রযানকে চাঁদে নামাতে না পারলেও নামবার অবস্থা পর্যন্ত পাঠাতে পারাটাই এক বিরাট কৃতিত্ব, এবং দেশের পক্ষে এক ভীষণ গর্বের ব্যাপার, দেশের বৈজ্ঞানিক-প্রাযুক্তিক শক্তি-সামর্থ্যেরই প্রমাণ। কাজেই, যারা এ নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে তারা নিশ্চয়ই দেশের ব্যর্থতায় খুশি হয়েছে, এবং সেইহেতু তারা দেশের শত্রু।

    না, চন্দ্রযানের ব্যর্থতায় কোনও ভারতবাসীই খুশি হননি, হতে পারেন না। তাঁরা ব্যর্থতাকে বিদ্রূপ করেন নি, করেছেন আমাদের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের অনেকের পশ্চাৎপদ মানসিকতাকে। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, বিজ্ঞানচর্চায় ঠিক কতটা এগিয়ে আমাদের দেশ? সত্যিই কি আমাদের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আশানুরূপ হচ্ছে? একটু ভেবে দেখা যাক।

    চন্দ্রযানের অবতরণ-ব্যর্থতা নিয়ে বেশি হতাশ হওয়াটা হয়ত ঠিক না, কারণ, ওই ধরনের জটিল ও অনিশ্চিত প্রকল্পে সাফল্য পাওয়া মোটেই সহজ নয়। আবার, অন্য একভাবে ভাবলে, ব্যর্থতা না হলেও হয়ত বা একে বিরাট কিছু মৌলিক কৃতিত্ব বলে দাবি করা যেত না। পঞ্চাশ বছর আগেই যেখানে চাঁদে মানুষ চলে গেছে, সেখানে আজকের দিনে চাঁদে ল্যান্ডার নামানোটা সেই মাপকাঠিতে খুব বড় কিছু ব্যাপার নয়, যদিও তৃতীয় বিশ্বের মাপে হয়ত বা কিছু একটা। বিজ্ঞানের গবেষণা জিনিসটা এমনিতেই বেশ খরচাসাপেক্ষ ব্যাপার, আমেরিকা-রাশিয়া-ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া-চিন-জাপান এবং আরও কয়েকটি মুষ্টিমেয় দেশ ছাড়া আর কেউই তা সেভাবে করে উঠতে পারেনা। আর মহাকাশ গবেষণা এবং অন্যান্য 'লিডিং এজ সায়েন্স' তো আরওই সাংঘাতিক খরচাসাপেক্ষ ব্যাপার, সেখানে দাঁত ফোটানো দুঃসাধ্য। গবেষণা বস্তুটি তাই মূলত প্রথম বিশ্বের ধনী দেশগুলোতেই হয় (চিন বাদ দিলে)। সেখানে অন্য সমস্ত গরিব দেশগুলোর তুলনায় ভারত কিঞ্চিৎ এগিয়ে, কারণ, ভারতের মাথাপিছু আয় শোচনীয় হলেও দেশটির অর্থনীতির মোট আয়তনটি বড়। ফলে, তার থেকে সামান্য অংশ সরিয়ে রাখলেও সেটা মোট টাকার অঙ্কে কিছু একটা দাঁড়ায়, তা দিয়ে কিছু অন্তত পরিকাঠামো নির্মাণ করা চলে। 'ইসরো'-র মত সংস্থা গড়ে উঠেছে সেই পরিসরেই। কিন্তু পশ্চাৎপদ অর্থনীতির শৃঙ্খল একে সবসময়েই বেঁধে রেখেছে, বস্তুগতভাবে তো বটেই, সাংস্কৃতিকভাবেও। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, গবেষণায় মোট ব্যয়ের নিরিখে ভারত যেখানে বিশ্বে সপ্তম, সেখানে জাতীয় আয়ের শতাংশের নিরিখে বিশ্বে বিয়াল্লিশতম, আর মাথাপিছু গবেষণা-ব্যয়ের নিরিখে একাত্তরতম ! দেব-বিগ্রহ ও ধর্মগুরুর পদতলে ভুলুণ্ঠিত বিজ্ঞানীদের ছবিগুলো হয়ত বা আসলে এই পশ্চাৎপদতারই ছবি। আমাদের গবেষকমহলের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশে বোধবুদ্ধির এই দেউলিয়াপনা, এই কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও ভণ্ডামি বরাবরই ছিল। কিন্তু এই দুর্দশাকে যে এক অসাধারণ নির্লজ্জ দাপটের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী গর্ব বলে হাজির করা যায়, এই কৃতিত্বটি এই সরকারের সমর্থকদের আগে আর কেউই দেখাতে পারেন নি।

    মোটামুটিভাবে দেখা গেছে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-অর্থনীতি ইত্যাদির মাপকাঠিতে এগিয়ে থাকা দেশগুলো বিজ্ঞান-গবেষণায় ব্যয় করে জাতীয় আয়ের দুই-আড়াই শতাংশের মতন। আমেরিকা আর পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো এই শ্রেণিতে পড়ে। আবার, মানবোন্নয়নের অঙ্কে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলো, এবং যারা বিজ্ঞান-গবেষণাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে এমন অল্প কয়েকটি দেশ, যেমন সুইডেন-ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড ও অন্যান্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো, ইজরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া --- এরা একটু ব্যতিক্রমীভাবে তিন, সাড়ে তিন বা এমন কি চার শতাংশ ব্যয় করে। সেখানে ভারতের ক্ষেত্রে তা বরাবরই এক শতাংশের নিচে, যদিও তা শম্বুক-গতিতে উঠছিল, এই কিছুদিন আগেও তা ছিল দশমিক নয় আট শতাংশ (.৯৮), এবং বর্তমানে ছাপ্পান্ন ইঞ্চির দাপটে তা দাঁড়িয়েছে দশমিক আট পাঁচে (.৮৫) ! চন্দ্র-বিজয়ের খোয়াব দেখানোর আড়ালে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে এটাই।

    এসব অবশ্য শুধু টাকাকড়ি খরচের গল্প। কোনও বিশেষ দেশে বিজ্ঞানচর্চার দশা বুঝতে ওই দেশে ওই ক্ষেত্রে খরচের বহরটা কেমন সেটা একবার দেখে নেওয়াটা অতি অবশ্যই জরুরি, কিন্তু ওটাই একমাত্র কথা না। সে দেশে বিজ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চলছে, বিজ্ঞানীদের মনোভাব কী রকম, দেশের মাথারা বিজ্ঞান বিষয়ে কী ভাবেন, সাধারণ মানুষের বিজ্ঞানবোধই বা কোন জায়গায় রয়েছে, এ সবও জিনিসও বিজ্ঞানচর্চায় অনেকটা প্রভাব ফেলে। বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীদের কাছে শুনেছি, ওপরমহল থেকে নাকি প্রায়শই গোমূত্রের উপকারিতা ও ওই জাতীয় নানা বিষয় নিয়ে 'গবেষণা'-র নির্দেশ আসছে। প্রতিষ্ঠানের খাজা বিজ্ঞানীটি জানেন, তিনি বিশেষ কিছু যুগান্তকারী গবেষণা-টনা মোটেই করে উঠতে পারবেন না, এবং এই সুযোগে কোনওমতে কর্তৃপক্ষের ইপ্সিত ফল বার করে আনতে পারলে যদি একটু ভাল পদ ও স্কেল বাগানো যায় তো সেইটুকুই লাভ, ফলে তিনি প্রজেক্ট-টি লুফে নেবেন। আর, যে বিজ্ঞানী সত্যি সত্যি কোনও 'ব্রেকথ্রু' ঘটানোর স্বপ্ন দেখেন, তিনি জানবেন যে ওইসব ভুয়ো গবেষণায় একবার নাম জুড়ে গেলে আন্তর্জাতিক গবেষকমহলে প্রেস্টিজের দফারফা, ফলে তিনি ওইসব প্রজেক্ট থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইবেন, হয়ত কর্তৃপক্ষকে সবিনয়ে বলবেন যে, তিনি ওইসব বিষয় ঠিকঠাক জানেন না, যিনি জানেন তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক। এই প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত যা ঘটবে, ডারউইনের ভাষাকে একটু মুচড়ে নিয়ে তাকে হয়ত বলতে পারি, 'সারভাইভ্যাল অফ দ্য মিনেস্ট', অর্থাৎ, 'নিকৃষ্টতমের উদ্বর্তন'। জে এন ইউ এবং পুনে-র ফিল্ম ইন্সটিটিউট-এ যা ঘটছে, বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুতেই তার বাইরে থাকতে পারবে না, এবং সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা-প্রতিষ্ঠানগুলোর মাথায় অযোগ্য গো-সন্তানেরা গিয়ে বসবেন। অতঃপর, যেটুকু সামান্য বিজ্ঞান পরিকাঠামো এই গরিব দেশটিতে গড়ে উঠেছিল কতিপয় যোগ্য মানুষদের প্রাণপণ চেষ্টায়, তার সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটবে।

    দেশের কর্তারা বিজ্ঞান নিয়ে কী ভাবছেন সেটা যদি দেশের বিজ্ঞানচর্চার ব্যাপারে কোনও প্রাসঙ্গিক মাপকাঠি হয়, তো সে ব্যাপারে আমাদের দশা প্রায় সেই রোমহর্ষক বিদেশী হরর ফিল্ম-গুলোর দুঃস্বপ্নের দৃশ্যের মত। আজ যদি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মানুষের গলায় শল্য করে হাতির মাথা বসান, তো কালই বিচারপতি চোখের জল দিয়ে ময়ূরীকে গর্ভবতী করছেন, পরশু ওজনদার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডারউইন সায়েবকে নস্যাৎ করছেন এই কারণে যে কোনও বাঁদরকে তিনি স্বচক্ষে মানুষ হতে দেখেন নি, তরশু আরেক হোমরা চোমরা গরুর নিঃশ্বাস থেকে অক্সিজেন টেনে বার করছেন, এবং তার পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী মেঘলা আকাশে শত্রুপক্ষের র‍্যাডার বিকল হবার প্রত্যাশায় বুক বাঁধছেন। এসব প্রকাশ্যে বলতে তাঁরা মোটেই লজ্জা পান না, নির্লজ্জ বলে নয়, এইসব বলাটা যে লজ্জার সেইটা আজও জেনে উঠতে পারেন নি বলে।

    আমাদের বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনার জগতটা ঠিক কী রকম? এ নিয়ে যে গবেষণা চালিয়েছিলেন দুই বিজ্ঞানী রইস আহমেদ ও মধুলিকা রাকেশ, তা প্রকাশিত হয় নয়ের দশকের গোড়ায়। কেন্দ্রীয় সরকারের যে সংস্থা এ দেশের বিজ্ঞানগবেষণার অর্থ বরাদ্দ করে এবং নীতি নির্ধারণ করে, সেই ‘কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’-এর তরফে সমীক্ষা চালান এই দুই গবেষক, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি গবেষণা-প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাতে জাতপাত-লিঙ্গ নিয়ে হতাশাজনক চিত্র উঠে আসা ছাড়াও, প্রশ্ন উঠেছিল গবেষকদের যোগ্যতা ও আন্তরিকতার মত মৌলিক বিষয় নিয়েও। যেমন, স্কলারদের এক বড় অংশ সমীক্ষায় জানিয়েছিলেন, পড়াশোনা ও গবেষণা বাদ দিয়ে ‘অন্যভাবেও’ গাইড-দের প্রভাবিত করে পিএইচডি বাগানো যায়। আবার উল্টোদিকে, স্কলারদের সম্পর্কে গাইড-রা জানিয়েছিলেন, তাঁদের জ্ঞানবুদ্ধি নাকি অত্যন্ত সীমিত, এবং নিজের বিষয়টির বাইরে তাঁরা আর প্রায় কিছুই জানেন না। এ ছাড়া, গবেষকদের এক বড় অংশই জানিয়েছিলেন, তাঁদের গবেষণার বিষ্য় তাঁরা নিজে বাছেন না, স্রেফ ওপর থেকে যা করতে দেওয়া হয় তাইই করে যান।

    বিজ্ঞানচর্চায় সমৃদ্ধ এক দেশ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে এই গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসার দরকার ছিল। তা পেরেছি কিনা, সেটা জানার জন্য আরও এই রকম তুল্যমূল্য সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা প্রয়োজন, সেটা সাম্প্রতিক কালে কেউ করেছেন কিনা জানিনা। তবে, দেশের শীর্ষ কর্তা আর বিজ্ঞানীদের আচরণ দেখে সে নিয়ে ভরসা করতে সাহস হয়না। আমেরিকায় নয়ের দশকের শেষে সমীক্ষা হয়েছিল সবচেয়ে এলিট বিজ্ঞানীদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে। তাতে দেখা গিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে মাত্র সাত শতাংশ নাকি ধর্মবিশ্বাসী। হ্যাঁ, এটা টাইপো নয়, ঠিকই পড়ছেন --- সাত শতাংশ ! ইউরোপ জাপান আর রাশিয়াতেও একই চিত্র দেখা যাবে, চিনে তো যাবেই।

    কিন্তু, তিরুপতিজির মন্দিরে মাথা কামিয়ে মিডিয়ার সামনে সহাস্যে দাঁড়ানো আমাদের আদরের বিজ্ঞানীদেরকে সে সব কে-ই বা বুঝিয়ে বলবে বলুন ?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৩৭০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২১47708
  • খুব দরকারি লেখা
  • Debasis Bhattacharya | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭47709
  • দেবাশিস দা খুব ভালো লিখেছ।
  • sm | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২০47710
  • আমাদের চেনা জানা বিখ্যাত অনেক বিজ্ঞানীই তো ঈশ্বর এর অস্তিত্বে বিশ্বাসী।
    নিউটন,আইনস্টাইন,লুই পাস্তুর, আইজেনহাওয়ার -
    https://www.famousscientists.org/25-famous-scientists-who-believed-in-god/
  • sm | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৯47711
  • আর ডারউইন নিজে ঠিক কি বলেছিলেন,মানুষের উৎপত্তি সম্মন্ধে?
  • উজ্জ্বল | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:২৯47712
  • আমার মতে বিজ্ঞানী মাত্রেই ঈশ্বর অবিশ্বাসী হবেন এটা অতি সরলীকরণ । গরু থেকে অক্সিজেন, ময়ূরের চোখের জলে ময়ূরীর গর্ভধারণ এসব মূর্খের প্রলাপ, ধর্মবিশ্বাস নয় ।বিজ্ঞান প্রতিনিয়তই এগিয়ে চলেছে, অনেক কিছুই আজও অজানা । সেই অজানার ব্যাখ্যা করতে যাওয়া ইনসিকিউরিটি থেকে মুক্তি পাওয়ার বালখিল্য প্রয়াস । প্রত্যেক মানুষই ইন্সেুরে ফীল করে যা অনেক সময় অস্তিত্বের সংকট নিয়ে আসে । সেটাকে কাটিয়ে উঠে আবার নিজের কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করা বোধহয় ভুল না, তবে গরু ময়ূর ইত্যাদি গালগল্প বিজ্ঞানে।ঢোকানো শুধু মুর্খামি নয়, পরবর্তী প্রজন্মকে ভুল পথে চালানো এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
  • sm | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৬:১৩47713
  • গত কালই একটা ডকুমেন্টরি তে দেখলাম,সুপার সনিক ও হাইপার সনিক শক ওয়েভ নিয়ে কর্মরত ল্যাবের কর্নধার ,কপালে ফোঁটা কেটে এসেছেন।তিনি কি বিজ্ঞান মনষ্ক নন?

    বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যই হলো প্রশ্ন করা।
    ইউনিভার্স যে কিছু ল মেনে চলে,এই হার্মনির অস্তিত্ব নিয়েই ছিল আইনস্টাইনের জিজ্ঞাসা।কেন এমন আচরনের সৃষ্টি?
    সৃষ্টি কর্তা কেউ আছে কি?
    এটা বিজ্ঞানীর কোয়েস্ট।আর ফোঁটা কাটা হলো বিশ্বাস।
    একেবারেই পার্সোনাল জিনিষ।
    কিছু বিজেপির মূর্খ নেতা কি বললো,তাই নিয়ে চন্দ্র যান প্রকল্প কে তাচ্ছিল্য করা,বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়।
    যাই হোক,ডারউইন মানুষ আর বাঁদর নিয়ে ঠিক কি বলেছিলেন,জানা গেলো না তো?
  • অনিকেত পথিক | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৬:৩৭47714
  • বিজ্ঞান পড়া, বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে কাজ করা আর বিজ্ঞানমনস্কতা অবশ্যই আলাদা। ফোঁটা কাটা, পুজো দেওয়া পার্সোনাল বিষয় হলেও তা অবশ্যই বিজ্ঞানমনস্কতার বিরোধি কারণ এইখানে এসে ওই যে কোয়েস্ট, 'কেন' ফোঁটা কাটব, না কাটলে কি হবে, কাটলেই বা কি হবে (সবাই জানেন কিস্যু হবে না), বিজ্ঞানী সেই প্রশ্ন করার বাইরে চলে যাচ্ছেন। এতে তাঁর কাজের সরাসরি কিছু ক্ষতি হচ্ছে এমন হয়তো নয় কিন্তু বিজ্ঞানের গোড়ার শর্ত থেকে তিনি বিচ্যুত হচ্ছেন।
    এস এম-এর দেওয়া লিঙ্কে চাট্টি বিজ্ঞানীর নাম যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন। নিশ্চই অনেক বিজ্ঞানিই বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু এই ২৫ জন সবাই যে বিশ্বাসী ছিলেন তা কি করে জানা গেল ? তালিকার প্রথম নামই আইনস্টাইন। তিনি কিরকম ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন সেটা একটু জেনে নিলে ভালো হয়। বিশ্বচরাচর যে কার্য-কারণের নিয়ম-কানুনের সূত্রে বাঁধা আইনস্টাইন তাকেই ঈশ্বর বলতেন, পরিস্কার বলেছেন প্রচলিত অর্থে ঈশ্বর বিশ্বাস তাঁর নেই। এর পরও ই তাঁর নাম কাটা যাওয়া উচিত ছিল না !
  • sm | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৭:০৩47715
  • আমার আগের পোস্টে বর্ণনা দেওয়া আছে,আইনস্টাইন কি রকম ঈশ্বর বা অজানা সুপ্রীম অস্তিত্বে বিলিভ করতেন।স্পিনোজা দর্শনের সঙ্গে কিছুটা মেলে।
    প্রচলিত ঈশ্বর বলতে কি বোঝেন?আমার আপনার ঈশ্বর কনসেপ্ট নিশ্চয় এক নয়।
    ইনফ্যাক্ট আইনস্টাইন্,প্রচলিত ঈশ্বর বিশ্বাস করতেন, এমন কিছুই লিখিনি তো!
  • অনিকেত পথিক | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৮:১৪47716
  • কোন একটা বিষয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে গেলে অবশ্যই তার প্রচলিত অর্থটা ধরেই বলতে হয়। না হলে তো কথা বলাই যায় না। তা হলে এই ২৫ জন বিজ্ঞানী ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন বলার কোনো অর্থই হয় না যদি না সেটা ঈশ্বর বিশ্বাসের প্রচলিত অর্থ হয়। তার মধ্যে আইনস্টাইন আবার বিশেষভাবেই নিজস্ব ঈশ্বর (পার্সোনাল গড) ধারণার বাইরে থাকতে চেয়েছেন। প্রকৃতিতে বিস্তৃত নিয়ম-কানুন-শৃঙ্খলা (ওঁর ভাষায় হার্মনি) কে কেউ ঈশ্বর বলে মনে করলে তা কি পুজো-পাঠ-আজান-প্রেয়ার এর সমতুল্য ঈশ্বর বিশ্বাস হয় ? তা কি করেই বা অজানা সুপ্রীম অস্তিত্বে বিশ্বাস বোঝায় ?
    ওই যে লিখেছেন স্পিনোজার ঈশ্বর (চট করে এই শব্দটাই হাতের কাছে পাওয়া যায়) এই কথাটাকে একটু ভেঙে বলবেন সেটা ঠিক কি রকম ? সেটা কি করে সুপ্রীম পাওয়ারের অস্তিত্ব বোঝায় !

    আইনস্টাইন ঈশ্বরে বিশ্বাসী প্রমাণ হলে আমার কিছু যায় আসে না, কারণ আইনস্টাইন না হলেও অনেক নমস্য বিজ্ঞানীই প্রচলিত অর্থে ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু আইন্সটাইন নিজে ধর্ম ও ঈশ্বর বিষয়ে প্রচলিত ধারণার (পার্সোনাল গড) সঙ্গে ওঁকে জড়িয়ে ফেলার বিরোধিতা করেছেন বলেই এত কথা বলা।
  • অর্জুন সেনগুপ্ত | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৮:২৫47717
  • চন্দ্রাভিযান আমার কাছে শেষ বিচারে গরিবের ঘোড়া রোগ ব্যতীত ভিন্ন কিছু নয়। যে দেশের মানুষ এখনো হাজারে হাজারে ম্যালেরিয়া ও আন্ত্রিকেে মারা যায় সেখানে বিজ্ঞান বিষয়ক খাতে ধার্য অপ্রতুল অর্থ শুধু দেশের গরিমা বৃদ্ধির জন্য খরচ করা শুধু বেহিসাবি খরচ নয় অন্যায়। বিজ্ঞানীদের ঈশ্বর বিশ্বাস শুধু ব্যক্তিগত বিষয় বলে উপেক্ষা করা অনুচি। বিজ্ঞানীরা শুধু পেশাগত বিজ্ঞান চর্চায় নিজেদের নিয়োজিত করবেনা, সমাজ কে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলাও তাদের গুরুদায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে দেবাশীষের লেখাটি তাৎপর্যপূর্ণ।
  • sm | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:০০47718
  • প্রচলিত ঈশ্বর আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন না।যদি আপনি প্রচলিত ঈশ্বর বলতে,পুজো ,ফোঁটা কাটা,এসব বুঝে থাকেন।তাহলে ছিলেন না।উনি প্যানথেইস্ট ছিলেন।
    এবার কোন বিজ্ঞানী যদি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন ও বোনাস হিসাবে ফোঁটা কাটে,তাতে আপনার কি অসুবিধে?
  • S | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:১০47719
  • চীন, রাশিয়াতেও বহু লোক অনাহারে-রোগে মরছে। আম্রিগাও যখন চাঁদে লোক পাঠাতে শুরু করে, তখন তাদের দেশের অবস্থাও আজকের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিলো। তারা সত্যিই দেশের গরিমাএ জন্যই করতো। অতেব এইযে প্রায়োরাইটেজেশন - মানে আগে খাদ্য, তারপর রোগ, তারপর ইনফ্রাস্ট্রাকচার, সবকিছু হলে তবে স্পেস টেকে খেলতে এসো - এটা স্পেস সেক্টরে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর লীড (এবং মার্কেট) ধরে রাখার ফন্দি ছাড়া কিছুই না। তাছাড়া ইস্রো প্রচুর রেভিনিউ কালেক্ট করে।

  • Swaprava Nath | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৮:৩৯47720
  • আপনি নিশ্চয়ই দেশে থাকেন না, নইলে এতক্ষণে ED বা CBI পৌঁছে যেত আপনাকে দেশদ্রোহী বানাতে। আপনি যদি বামফ্রন্ট জমানা দেখে থাকেন তাহলে পুরো দেশে এখন তাই -- তুমি আমার 'দলের' হলে সাতখুন মাফ -- আর নইলে ..
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২৩523991
  • এখানেও দিন চন্দ্রযানের বিষযে কোনো লেখা, সুস্থ বিতর্ক  শুরু হোক। নাহলে দিন দিন বেশি-বেশি লোক হয়  'যবন পূর্ব সোনার ভারত'  নয়তো 'ব্রিটিশ পূর্ব সোনার ভারত' গোষ্ঠীতে ঢুকে যাচ্ছে।   
  • Debasis Bhattacharya | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:১০523995
  • sadindecisionangry
    মৌলবাদের শেষ কিস্তিটাই এখনও দিয়ে উঠতে পারলাম না ভাই, তার মধ্যে অন্য লেখা দিলে পাবলিকে প্যাঁদাবে য্যা! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন