আমি যাই লিখে না কেন মনে মনে একটা আশা, মনের গহিনে একটা ক্ষীণ আশা থাকেই যে এগুলা কিচ্ছু হবে না, নিশ্চয়ই সামনে দারুণ কিছু হবে। ডক্টর ইউনুস নোবেল জেতা একজন মানুষ, তাও শান্তিতে নোবেলে পাওয়া মানুষ। তিনি দেশের ক্ষতি হবে এমন কিছু নিশ্চয়ই হতে দিবেন না। যদি বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌ বাহিনীর ঘাটি শেষ পর্যন্ত হয়ই তাহলে আমাদের কতখানি লাভ আর কতখানি ক্ষতি হবে এইটা নিশ্চয়ই তিনি ভাববেন, ভেবেই সিদ্ধান্ত নিবেন। আমরা ছোট রাষ্ট্র, আমেরিকার সাথে পারব কেন? যদি নিজের লাভ বুঝে আমেরিকাকে এই অঞ্চলে জায়গা দেওয়া হয় তাহলে দিবে, সমস্যা নাই তো। বিচার বুদ্ধি, দুনিয়া জুড়ে উদাহরণ গুলো একটাও এই মতের পক্ষে না। যারাই জায়গা দিয়েছে তারাই সকাল বিকাল আকাশ ভরা তারা দেখছে, এইটা সত্য। জানি "মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম—তোমারি কি এমন ভাগ্য, বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম! তবুও তাও আশা করি যে আমাদের সব ভালো হবে, আমরা ঠিক টিকে যাব। কিন্তু হায়! আমি ভাবি এক আর রাষ্ট্র পরিচালনার কারিগরেরা ভাবে আরেক রকম।
হুট করেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যা আমাকে ধাক্কা দিয়ে দিবাস্বপ্ন থেকে জেগে তুলেছে। সব ঠিক হবে, সব দেশের জন্য ভালো হবে বলে যে অলৌকিক স্বপ্ন দেখছি আমি তাতে এমন বড় ধাক্কা লেগেছে যে নিজের বিচার বুদ্ধির উপরেই বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। কেন আমি এমন ভাবতে পারলাম!
আমাদের ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ পাকিস্তানের হাই কমিশনারের সাথে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেছেন তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৭১ এর ‘প্রশ্নটির’ সমাধান করতে চান।' খুব ভালো কথা। এবার বিডি নিউজ থেকে কোট করছি, - "নাহিদ ইসলাম বলেন, “ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার অংশ হিসেবে উপমহাদেশে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত সম্পর্ক রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার প্রয়োজন৷" “মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবেও পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের গভীর বন্ধন রয়েছে। যদিও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশেষত্ব দিয়েছে।”
পাকিস্তানের সাথে ভাষা সংস্কৃতি দুইটাই আলাদা আমাদের। তাহলে ইন্দো মুসলিম সভ্যাতার অংশ হিসেবে আর কিসের সম্পর্ক থাকল আমাদের? ধর্ম ছাড়া আর কিছু? না! পরিস্থিতিটা বুঝাতে কি আমি সক্ষম হচ্ছি?
জামাতের মূল লক্ষ সব সময়ই ৪৭ সালের স্বাধীনতা! তারা ৪৭ এ ফিরে যেতে চায়। এই যে পরিস্থিতি এইটাকে কী দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব? একজনের কোন ধারণাই নাই স্বাধীনতা বিষয়টা কোন মাপের বিষয়, সে ৭১ সালের কী ঘটেছে তার মীমাংসা চায় পাকিস্তানের সাথে!
এর যে প্রতিবাদ হবে তা হয় নাই। কেউ করে নাই, মানে এই সরকারের পছন্দের জনগণ, নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী সাহিত্যিক, কেউ না। গণকে আমার কোনদিনই পছন্দ না। গড্ডালিকা অর্থ হচ্ছে ভেড়া। গণ হচ্ছে ভেড়ার পালের মতো। আওয়ামীলীগ সরকারের সময় নানা অন্যায় হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে, চোখ বন্ধ করে সমর্থন দিয়ে গেছে। এখন ঠিক একই কাজ করবে এই মহান গণ! চিন্তা করবে না। এর ফলাফল ভাববে না। এরা যদি পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করতে দেখে তবুও বলবে বাহ! এই তো চাই! এই না হলে নতুন দিনের নতুন নেতৃত্ব! সমস্ত পুরাতন ভেদাভেদ ভুলে নতুন এক আগামীর স্বপ্ন দেখা শুরু করবে এই ভেড়ার পাল! আমি এক ফোঁটা বিশ্বাস করি নাই এই গণ মানুষকে।
পাকিস্তান খুশিতে আত্মহারা! হাই কমিশনার সুযোগ বুঝে বিচার দিয়েছে যে এত বছর তারা খুব অন্যায়ের শিকার হয়েছে, তাদেরকে ভিসা নিয়ে নানা সময় নানা জটিলতায় পড়তে হয়েছে। তারা সব সময়ই সম্পর্কের উন্নতি চায়। কিন্তু আওয়ামীলীগ খারাপ, তাই সম্পর্ক সব সময় খারাপ হয়েই ছিল! তিনি এই সময় জানান যে বাংলাদেশিদের পাকিস্তান যেতে কোন ভিসার দরকার হবে না, পাসপোর্ট নিবেন আর চলে যাবেন পাকিস্তান! পাক সার জমিন সাদ বাদ!
পাকিস্তানের ভিসা মুক্ত ভ্রমণ কেন আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ তা বুঝতে হলে একটু পিছনে যেতে হবে। ব্দুর রহমান, মুফতি হান্নান, মুফতি হারুন ইজহার এই নাম গুলো পরিচিত লাগে? যদি না চিনে থাকেন তাহলে আমিই বলে দিচ্ছি, এরা হচ্ছে দেশের শীর্ষ জঙ্গি। এরা প্রত্যেকে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তান গিয়েছে। গিয়ে ট্রেনিং নিয়েছে, ওইখানে তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করেছে। দেশে ফিরে দেশকে আফগানিস্তান বানানোর মিশন নিয়েছে। এই কাজ গুলো পাকিস্তানের সমর্থন ছাড়া, সাহায্য ছাড়া কোনদিনই সম্ভব হত না। আমরা কেন মাথা চুলকাই পাকিস্তানের প্রেম দেখে, এখন বুঝা গেছে? এই নাম গুলো রীতিমত আতঙ্ক ছিল এক সময় এই দেশে। আবার এমন এক দিনের দিকেই দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
আমি অতি কল্পনা করছি মনে হচ্ছে? আমি শুরুতেই লিখেছি বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে যা আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছে। আমি এত আতঙ্কিত সম্ভবত আর কোনদিনই হই নাই। দ্বিতীয় কারবারটা শুনেন এবার। গত রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনার বিষয় হচ্ছে ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড: হাসিনা ও ভারতের ষড়যন্ত্র’। আয়োজক হচ্ছে ‘বাংলাদেশ পলিসি ডিসকোর্সের (বিপিডি)’ এরা কে আল্লাই জানে, নাম শুনি নাই কোনদিন। নাম না শুনলেও কাজ শুনেই চিনে ফেলা যায় এরা কারা। কারণ এই আলোচনা সভায় পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে সামান্যই। আলোচনা চলেছে ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা নিয়ে! খেলাফত নিয়ে মাতামাতি করে কে? হিজবুত তাহরীর। বুঝেন এবার!
হিজবুত তাহরীর বহু আগে থেকেই এই দেশে খেলাফতের জন্য আন্দোলন করে আসছে। ২০১০ সালে তারা একটা খেলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধান তৈরি করে। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে এই জিনিস পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। যে ভয়ংকর পরিকল্পনা তারা করেছে তাতে আওয়ামীলীগ সরকারকে দুইবার ভাবতে হয়নি তাদের নিষিদ্ধ করতে। কিন্তু এই নিষিদ্ধ সংগঠন এখন মিটিং করছে, খেলাফতের রাস্তা নিয়ে আলোচনা করছে। আর পাকিস্তান ভিসা মুক্ত প্রবেশাধিকার দিচ্ছে! আমার দুই চোখে অন্ধাকার দেখা জায়েজ আছে?
আমরা ছোটবেলায় এই সব কাণ্ড দেখছি। আমাদের ছোট শহর শেরপুরে মিছিল হত, আমরা সব তালেবান দেশ বানাব আফগান! তখন অত বুঝতাম না। আশ্চর্য হতাম, দেশকে আরও কত উন্নত দেশ আছে তা না বানাইতে চায়া আফগানিস্তান কেন বানাইতে চায়! বুঝি নাই গুঢ় রহস্য। এখন বুঝি, জানি যে কেন দেশকে আফগানিস্তান বানাইতে চায় একটা শক্তি! নানা কৌশলে এই অপশক্তিটাকে চেপে রেখেছিল আওয়ামীলীগ সরকার। এখন সবাই স্বাধীন! জেলের কুখ্যাত আসামিও স্বাধীন, জঙ্গিও স্বাধীন, সবাই স্বাধীন!
আওয়ামীলীগ সরকার নানা ভুল করেছে। সঠিক যা করেছে তার মধ্যেও ভুল ছিল। এই তরিকার ভুল গুলোর মধ্যে বড় ভুল হচ্ছে দেশে যে জঙ্গি আছে, তারা যে তৎপর এই সত্যটাকে জনগণকে পরিষ্কার করে বুঝাইতে পারে নাই। তারা এমন সব কাজ করেছে সবাই ভাবছে নাটক করছে। এইটাকে একদম পানির মতো পরিষ্কার করে বুঝানো উচিত ছিল। দেশে জঙ্গি তৎপরতা আছে এইটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ছিল। ভাবত এইটা বোধহয় সরকারের চাল একটা বিরোধীদলকে চাপে রাখার। এক শিবির কর্মীর লেখা পড়লাম, তিনি নিজেও দেশে কোন জঙ্গি নাই, সব ভাঁওতাবাজি ধরেই ছিলেন। নিজে জেলে গেলে এক ছেলের সাথে দেখা, রিগ্যান নামের ওই ছেলেকে কল্যাণপুর থেকে ধরেছে পুলিশ। সে দেখে রিগ্যান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে আসছে। তো সে সান্ত্বনা সুলভ কথাবার্তার জন্য এগিয়ে গেছে, গিয়া বলছে, আহা, তোমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এইভাবে পঙ্গু করে দিল! ও উত্তরে বলল যে না সে আসলেই দায়েশ করে। এই কথা শুনে ওর চমকে উঠার পালা! দায়েশ অর্থ হচ্ছে দাওলাত আল-ইসলামিয়াহ ফাআল-ইরাক ওয়া আল-শাম যার আরেক নাম হচ্ছে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ বা আইএসআইএস বা আইসিস! এই শিবির কর্মী আরও লিখেছে যে এরপরে আরও কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে ওর, তারাও কেউই অস্বীকার করেনি যে তারা জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত! শুধু এই ছেলে না, আমার কত পরিচিত মানুষ সব আওয়ামীলীগের বানানো নাটক বলছে। শিবিরকেই তো স্বীকার করে নাই অনেকে। বলছে হু, দেশে শিবির আছে না? নাহ! নাইরে ভাই! সব বানানো নাটক। এখন এরা কই থেকে আসছে? কবর থেকে উঠে আসছে?
শিবিরের নানা নেতাকর্মীর পোস্ট এখন সামনে আসছে। তারা কীভাবে, কোন কৌশলে আন্দোলনের সময় সরকারকে ধোঁকা দিয়েছে, কী কোড নেম ব্যবহার করেছে। কোন কবিতার লাইনের কী অর্থ ছিল ইত্যাদি! অথচ ভেড়ার পাল এখনও বিপুল বিক্রমে দেশে শিবির নাই, জঙ্গি নাই বলে যাচ্ছে।
ভারত বিদ্বেষ এখনও চরম তুঙ্গে। বলা হচ্ছে যারা ভারত বিরোধিতা না করবে তারা দেশপ্রেমিক না! কোন বিকল্প নাই! বুঝেন এখন! সেতু উপদেষ্টা পদ্মা সেতুর টাকা বাঁচিয়ে কত বড় কাজ করছে এই কৃতিত্ব নেওয়ার পরে গতকাল বলছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ জনগণের কোন উপকার হয় নাই! এই বিষয়টাও বুঝতে হবে আপনাদের। পদ্মা সেতুতে রেললাইন হলে কেন জনগণের উপকার হবে না? পশ্চিম, দক্ষিণ বঙ্গের ওই অংশ পুরোটা রেলের আওতায় এসে যাচ্ছে, এইটা ভালো না? না! কেন? কারণ বহুদিন ধরেই একটা গুজব বাতাসে ঘুরছে এই রেল লাইন বানানোই হচ্ছে ভারতের ট্রেন যেন সোজা কলকাতা থেকে ঢাকা আসতে পারে এই জন্য! দেশের উপর দিয়ে রেল করিডর দেওয়ার কথা এই জন্যই এই পদ্মা সেতুতে রেলের ব্যবস্থা, অনেকে আরও একটু এগিয়ে বলে পদ্মা সেতু বানানোর জন্য সরকারের যে এত প্রবল ইচ্ছা ছিল তা এই কারণেই, ভারতকে দেশের ভিতর দিয়ে রেল করিডর দেওয়া! খুলনা, যশোর, বরিশাল জেলার মানুষকে কেউ জিজ্ঞাস করে না কেন এই সেতু কেন বানাইছে? জীবনে দুই একবার যে ওইদিকে গেছি, তাতেই গলা ছেড়ে কান্না আসছে যে কেন সেতু নাই! ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে এই অঞ্চলের মানুষ। আমি অবাক হয়ে গেছি এই কারবার দেখে! যাদের সুযোগ থাকে তারা লঞ্চে যাতায়াত করত তখন। কিন্তু সবার তো সেই সুযোগ ছিল না। যশোর, খুলনা, বাগেরহাট এরা কই যাবে কী দিয়া যাবে? না, সেতু বানাইছেই ভারতের জন্য! ওই যে বিলো অ্যাভারেজ আইকিউ! এই কথার পরে এখন উপদেষ্টার বুদ্ধিও মাপতে পারেন আপনারা, কোন সমস্যা নাই!
একই সাথে তুঙ্গে আছে হিন্দু বিদ্বেষ। আমাদের শেরপুরেই একটা পুজা মণ্ডপ ভেঙ্গে দিয়েছে কেউ! সদরে না, পাশের উপজেলায়। রাতের আধারে কেউ এই কাজ করে চলে গেছে। সামনে দুর্গা পূজা এইটা যেন মনে করায় দিল এই ভাঙ্গাভাঙ্গি। হিন্দু বিদ্বেষ শুধু এখানেই শেষ না। একটা স্কুলের শিক্ষকদের তালিকা অনলাইনে ঘুরছে খুব। সবাই হিন্দু আর সবাই আত্মীয়! আশ্চর্য হওয়ার মতো না? আমি বুঝতে চাইলাম কাহিনী কী? স্কুলের প্রধান শিক্ষক একটা বিবৃতি দিয়েছে। তিনি বলছেন এইটা সত্য যে এখানের সবাই আত্মীয়। কিন্তু এরাই সব না, মুসলিম শিক্ষকও আছে যাদের নাম দেওয়া হয় নাই ওই তালিকায়। আর এতজন হিন্দু আত্মীয় স্বজন এক স্কুলে কী করছে? তিনি বলছেন এই স্কুলের কোন শিক্ষকই ছিল না। এরা সবাই শিক্ষিত, এরা এতদিন বিনা বেতনে এই স্কুলে পড়িয়েছে। এখন যখন স্কুল এমপিও ভুক্ত হয়েছে তখন সবার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে! এঁরা যে এতদিন বেনা বেতনে পড়াল তার কোন স্বীকৃতি নাই বরং তাদেরকে প্রশ্নের সামনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে! বুঝেন এখন! ওই শুলের জমিও তাঁদেরই দেওয়া তবুও এখন প্রশ্ন করা হচ্ছে কেন তারা এতগুলো হিন্দু শিক্ষক এক স্কুলে! বলা হচ্ছে দেখেন আওয়ামীলীগের চক্রান্ত! আচ্ছা, এইটা চক্রান্ত হবে কেন? দুর্নীতির কথা বলতে পারত কিন্তু চক্রান্ত? এইটাই হচ্ছে সত্য! চক্রান্ত। দেশকে হিন্দুদের, ভারতকে বিক্রির চক্রান্ত! মুখের কথায় ট্যাক্স নাই, বলে দিলেই হল! যারা সমানে সাত বোন খেয়ে দিবে মুরগির গলা দিয়ে তাদেরকে একজন দেখলাম একটা ভালো জবাব দিয়েছে, ভারত থেকেই কেউ হয়ত। তিনি উল্টা দেখিয়েছেন আমাদের চট্টগ্রামের সাথে যে চিকেন নেক সেই অংশ!ত্রিপুরা থেকে মাত্র পঁচিশ কিলোমিটার নিয়ে নিলেই এদিকের পুরো অংশ ভারতের হয়ে যাবে! এইটা কোন কথা! এইভাবে কেউ বলে!
কুমিল্লার দিকে আওয়ামীলীগের এক নেতাকে মেরে ফেলছে সীমান্ত পার হওয়ার সময়। দালালেরাই মেরে ফেলছে বলে ধারণা করছে সবাই। বিএসএফ লাশ ফেরত দিয়েছে। পরিবার থেকে বলা হচ্ছে তার কাছে ছিল দুই কোটি ডলার! ধারনা করছে এই টাকার খোঁজ পাওয়াতেই তাকে মেরে টাকা নিয়ে ভেগেছে দালাল চক্র। এত টাকা! লোভ সামলানো একটু কঠিনই। শেরপুরের এক নেতার গল্প শুনলাম। পালানো শুরু হতেই তাকে তার নেতা বলছে তুমি যদি আমাদের সাথে যেতে চাও তাহলে যেভাবে বলব সেভাবে যেখানে যখন বলব সেখানে চলে আসবা। কীভাবে যেতে হবে? এক কাপড়ে বের হতে হবে, সাথে কম দামি একটা মোবাইল থাকবে, পকেটে স্রেফ দুইশ টাকা থাকবে! রাত আটটায় নালিতাবাড়ির এক স্কুলের সামনে থাকতে বলেছিল। তিনি না পালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যাওয়া হয় নাই। দশ বারো লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে বাড়িঘর, দোকান বাঁচিয়েছেন! সিনেমাময় জীবন না জীবনময় সিনেমা?
এত অসহায় লাগে নাই কোনদিন। রোমানিয়া থেকে চলে আসার সময় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু আধটু চিন্তা হয়েছে। তারপরেও একবারের জন্যও ভাবি নাই ভুল করছি। সরকার পতনের পরে একটু আতঙ্কে থেকেছি, আছি। কিন্তু তবুও মনে হয় নাই আমি দেশে ফিরে ভুল করেছি কোন। জামাতের জন্য ভয় পাচ্ছি এইটা সত্য। সর্তক আছি এইটাও সত্য। তবুও মনে হয় নাই যে দেশে কেন আসলাম। কিন্তু খোদার কসম, এই দুইদিনের কার্যকলাপ আমাকে বারবার ভাবতে বাধ্য করছে যে পায়ের জন্য চলে আসছি সেই পা কেটে ফেলে দিয়ে হলেও দেশের বাহিরেই থাকা উচিত ছিল আমার। সামনে যেদিকে এগুচ্ছে দেশ সেই দেশে অন্তত আমার কোন স্থান নাই এইটা আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি। এমন দম বন্ধ লাগে নাই কোনদিন। আমার কাছে মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। এ কেমন অনুভূতি? কেউ আমার নামে কোন অভিযোগ করে নাই, কারও সাথে আমার কোন তর্ক হয় নাই। শেরপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমাদের বন্ধু মানুষ। এক সাথে এক ক্লাবে খেলছি। ওর সাথে আমার স্মরণীয় জুটিও আছে ব্যাটিঙে। ওর সাথে বসে সেদিন অনেকক্ষণ আলাপও করলাম। ও নিঃসন্দেহে ভালো মানুষ। যার কারণে এত বছরে আওয়ামীলীগও ওর কোন ক্ষতি করে নাই। টুকটাক করে ঠিকাদারি করে চলেছে। এরা কোনদিন আমার কোন ক্ষতি করবে না এইটা আমার বিশ্বাস আছে। এমন আরও অনেকেই আছে, কিছু জানতে হলে, কোন বইয়ের খোঁজের জন্য সবার আগে খোঁজ করে আমার।
তবুও, একাবারের জন্যও কেন আমি স্বস্তি পাচ্ছি না? কেন মনে হচ্ছে গলায় পা দিয়ে চাপ দিচ্ছে কেউ আমাকে? আমি অতিরিক্ত করছি? হিজবুত তাহরীরের খেলাফত সংবিধানের লিংক দিচ্ছি, নিজেরাই একটু পড়ে দেখুন কেন একজন সুস্থ মানুষ ভয় পাবে এই জিনিস পড়ে। কেন হিজবুত তাহরীরের নাম শুনলেই কলিজা কেঁপে উঠে আমাদের। আমি লিখে বুঝাতে পারলাম কি না জানি না। পাকিস্তানের সাথে নাহিদের আলাপসালাপ আমাকে রীতিমত অসুস্থ করে দিয়েছে! আমি জানতাম এমনই হওয়ার কথা ছিল কিন্তু যখন হতে যাচ্ছে তখন কেঁপে উঠতে হচ্ছে শুধু। অলৌকিকে বিশ্বাস নাই, তাই হুট করেই সব ঠিক হয়ে যাবে এমন আশা করার কোন কারণ দেখি না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে যে কয়দিন বেঁচে আছি সে কয়দিন বেঁচে থাকতে হবে, এই আর কী! চিত্ত যেথা ভয় পূর্ণ নত যেথা শির, এই হল বেঁচে থাকার সূত্র! সাহস দেখানো যাবে না আর মাথা উঁচু করা যাবে না। এই করতে পারলেই টিকে যাওয়া যাবে হয়ত।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।