এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • কোলকাতার ঘাটের কথা

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ০২ জুলাই ২০২৪ | ৩৫১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কোলকাতার ঘাটের কথা

    গঙ্গার ধারে গড়ে উঠেছে শহর কলকাতা। উত্তর থেকে দক্ষিণে শহরের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে গঙ্গা। গঙ্গার কিনারে নানা স্থানে নানা সময়ে তৈরি হয়েছে নানা ঘাট। পুরোনো কিছু ঘাট গঙ্গার গর্ভে হারিয়ে গেছে, আবার প্রয়োজনের তাগিদে তৈরি হয়েছে নতুন অনেক ঘাট। সাহেবদের তৈরি ঘাটের পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় মানুষদের বদান্যতায় তৈরি অনেক ঘাট। জনবহুল ব্যস্ত এই শহরে শান্তিতে কিছুটা সময় কাটাবার জন্য গঙ্গার ঘাটের চেয়ে ভাল আর কোন জায়গা নেই। কবি, সাহিত্যিক, এবং ইতিহাসবিদদের কোলকাতাভিত্তিক রচনায় মাঝে মাঝেই জায়গা করে নিয়েছে মনলোভা এই ঘাটগুলি। তাঁদের নিপুণ লিখন শৈলীতে চিত্রিত হয়ে আছে বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির জন্য অপেক্ষারত অনেক ঘাটের অতীতের জৌলুশ। বইগুলির পাতা ওলটালে ঘাট সংলগ্ন পুরনো বাজার, পার্ক, স্নানের জায়গা, মন্দির, শতাব্দ প্রাচীন এমন আরো কত কিছু আমাদের মানস চক্ষে জীবন্ত হয়ে ওঠে।

    অষ্টাদশ শতাব্দীতে মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে কলকাতা শহরের কিছুটা বিকাশ ও প্রসার ঘটে। হাটখোলা থেকে পুরোনো কেল্লা অর্থাৎ বর্তমান ফেয়ারলি প্লেস অঞ্চল জুড়ে তৈরি হয় বড় বড় বাড়ি। যদিও এর অধিকাংশেরই মালিক ছিল সাহেবরা। কিছু ব্যতিক্রমী উদাহরণ ছাড়া স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় তেমন কোন পরিবর্তন তখনো আসেনি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু স্থানীয় মানুষ প্রভূত অর্থ উপার্জন করে। জমিদার, ব্যবসায়ী, উদ্যোগপতির মত ধনী মানুষেরা গঙ্গার ধারে একে একে নির্মাণ করলেন নিজস্ব গৃহ, ঘাট, স্নান ঘর, মন্দির ও আরো কত কিছু। কেউ কেউ পুরনো বাড়ি কিনে তাকে নিজের মত করে সাজিয়ে তুললেন। প্রতিটি ঘাটের সঙ্গে জুড়ে আছে শহরের নানা সময়ের অনেক কথা, অনেক গল্প। জন্ম থেকে মৃত্যু, জীবনের প্রতিটি ক্ষণের ছোঁয়া লেগে আছে এই ঘাটগুলির পৈঠায়।

    ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নির্দেশে কর্নেল মার্ক উড কলকাতার প্রথম ম্যাপ আঁকেন ১৭৮৪/৮৫ সালে এবং তা ছাপা হয় ১৭৯২ সালে। ওই ম্যাপে গঙ্গার পূর্ব পারে ৩৬টি ঘাটের উল্লেখ আছে। এই ঘাটগুলির মধ্যে অনেক ক'টির আজ আর কোন অস্তিত্ব নেই। কিছু ঘাটের নাম বদলে গেছে, তৈরি হয়েছে নতুন কিছু ঘাট। ফলে পরবর্তী সময়ে তৈরি তালিকাগুলিতে বিস্তর সংযোজন এবং নিষ্কর্ষণ নজরে আসে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তালিকায় মূলত উত্তরে কাশীপুর অথবা বাগবাজার থেকে দক্ষিণে কোথাও হেস্টিংস, কোথাও চাঁদপাল ঘাট পর্যন্ত এলাকায় অবস্থিত ঘাটগুলির বিবরণ পাওয়া যায়। কোলকাতা বন্দর গড়ে ওঠার পর বাণিজ্যের কারণে ঘাটগুলির ব্যবহার কমে যায়। পণ্য পরিবহণ কমে গেলেও যাত্রী পরিবহণ থেকে শুরু করে ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম, পুণ্য স্নান, স্বাস্থ্য চর্চা, ফুলের বাজার, শবদাহ, আড্ডা, আরো কতই না কর্মকাণ্ড নিত্য ঘটে চলেছে, ইতিহাসকে বয়ে নিয়ে চলা ইঁট বাঁধান গঙ্গা তীরের ওই পরিসরে।

    বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে এক একটি ঘাট। অধিকাংশই স্নানের ঘাট। তারও রকমফের আছে। কোন ঘাটে পুরুষ ও মহিলা এক জায়গাতেই স্নান করে, কোথাও আবার পৃথক বন্দোবস্ত আছে। নিমতলায় রাধামাধব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাট পুরুষদের জন্য আর গিরীশ চন্দ্র বসুর ঘাট মহিলাদের জন্য। ধনী ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনের জন্য নিজেদের আলাদা আলাদা ঘাট তৈরি করতেন। সেকালের এমনই কিছু ঘাট হল -- মদনমোহন দত্ত, শোভারাম বসাক, বৈষ্ণব চরণ শেঠ, হুজুরিমল, ও কাশীনাথ বাবুর ঘাট। রস বিবির ঘাট, জ্যাকসন ঘাট, ফোরম্যান ঘাট, ব্লাইথ ঘাট এবং স্মিথ ঘাটের মত সাহেবদেরও নিজস্ব কিছু ঘাট ছিল। শবদাহের জন্য তৈরি হয়েছে কাশীপুর, কাশী মিত্র এবং নিমতলা ঘাট। নবাবের ঘাট, বৈষ্ণব শেঠের ঘাট, কাশীনাথ ঘাট, কদমতলা ঘাট, কাশীনাথ বাবুর ঘাট, ব্যারেটোর ঘাট, জ্যাকসন ঘাট,হুজুরিমলের ঘাটের মত অনেক ঘাটের আজ আর কোনও অস্তিত্ব নেই।

    ব্যক্তিগত মালিকানা ছাড়াও আরও কিছু ঘাট ছিল যেখান থেকে পণ্য চলাচল বা খেয়া পারাপার হত। সেইসব ঘাটগুলি এক একজন ইজারা নিত। ইজারাদারদের বলা হত ঘাটমাঝি। নাম মাঝি হলেও এরা ঘাটেই থাকত, নৌকো বাইত না। এরা পণ্য বহনের জন্য প্রয়োজনমত বিভিন্ন আয়তনের নৌকো, পানসি ইত্যাদি এবং মালপত্র বোঝাই ও খালাস করার জন্য শ্রমিক সরবরাহ করত। এছাড়া এদেরই তত্ত্বাবধানে লোকেদের পারাপারের জন্য খেয়া পরিষেবাও ছিল। এককথায় ঘাটের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ ঘাটমাঝিদের হাতেই ছিল। বিভিন্ন পরিষেবার বিনিময়ে আদায় হত বিস্তর মাশুল, যার ফলে ঘাটমাঝিরা অধিকাংশই ছিল বিত্তবান মানুষ। খিদিরপুরে নাজির মহম্মদ ঘাটমাঝি লেন(এখন কেবল নাজির মহম্মদ লেন) নামে একটা রাস্তা আছে।

    বেনারসের ঘাটের থেকে আমাদের শহরের এই ঘাটগুলো কম আকর্ষণীয় নয়। চাই শুধু দেখার চোখ আর জানার আগ্রহ। বৈচিত্রে ভরা কোলকাতার ঘাটের সান্নিধ্যে, সৌন্দর্যে, আবিষ্ট হয় মন আর অনুভুত হয় হর্ষ, বিষাদ, পাপ, পুণ্য, স্মরণ, বিস্মরণ, আচার, অনাচার, দয়া, মনন, জ্ঞাপনে মাখা তৎকালীন সমাজ জীবনের স্পন্দন।

    নদীতীর ধরে উজান বেয়ে ঘুরে আসি কিছু ঘাটে, জেনে নিই সেগুলির ইতিবৃত্ত।

    মেটিয়াবুরুজের বিচালি ঘাট থেকে সফর শুরু করা যাক। বর্তমানে এটি একটি ব্যস্ত ফেরিঘাট। ১৩ মে ১৮৫৬ সালে ‘ম্যাকলিয়ড’ নামে একটা স্টিমার এসে দাঁড়াল এই ঘাটে। গঙ্গার ধারে কিছু সুন্দর বাংলো বাড়ি থাকলেও ওই এলাকায় ওই সময় লোকজনের বাস তেমন একটা ছিল না। চারপাশে বেগম, আত্মীয়, সহচর পরিবৃত হয়ে স্টিমার থেকে নেমে এলেন অওধের নবাব ওয়াজেদ আলী শা। কয়েক মাস আগে লর্ড ডালহৌসি অওধকে বলপূর্বক ভারতে ব্রিটিশ ঊপনিবেশের সাথে যুক্ত করেছেন। তাজবিহীন নবাব, তবুও তাঁকে শহরে স্বাগত জানানো হয়েছিল একুশটি তোপধ্বনিতে। রাজ্যপাট হারালেও নবাবের মনে ক্ষীণ আশা ছিল যে ইংল্যান্ডে আবেদন নিবেদন করে হয়ত আবার সিংহাসন ফিরে পাবেন। কিন্তু সে আশা পূর্ণ হয়নি, জীবনের শেষ তিন দশক মেটিয়াবুরুজেই কাটাতে হল। শিল্পী মানুষ, ধীরে ধীরে মেটিয়াবুরুজেই গড়ে তুললেন এক ‘ছোটা লখনউ’। তাঁর সেদিনের বাসস্থান ‘পরীখানা’ পরে দক্ষিণ পূর্ব রেলের কার্যালয়ে রূপান্তরিত হল। নবাবের আগমনের বিশেষ ক্ষণকে স্মরণ করে ঘাটের পাশে লাগান হয়েছে দুটি ফলক। একান্তে ঘাটে বসে থাকলে মন ফিরে যাবে সেই সুদূর অতীতে, কানে ভেসে আসবে ‘যব ছোড় চলি লখনউ নগরী’-র করুণ সুর।

    একটু এগিয়ে গেলেই সুরিনাম ঘাট। এলাকায় এটি বালুঘাট নামে জনপ্রিয়। ১৮৭৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এইখান থেকে ৪১০ জন যাত্রী নিয়ে ‘লাল্লারুখ’ নামে একটি জাহাজ যাত্রা করেছিল সুরিনামে। দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলের একটি ছোট দেশ। বাংলা বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে কুলী জোগাড় করে আখ চাষের জন্য ডাচ কলোনি সুরিনামে শর্তবদ্ধ শ্রমিক হিসাবে পাঠান হয়েছিল। ২৭৯ জন পুরুষ, ৭০ জন মহিলা এবং ৫০ জন শিশু পৌঁছেছিল সুরিনামে। ১১ জন জাহাজে যাত্রার সময়ে মারা যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে ৬০-৬৫টি জাহাজ বোঝাই করে আনুমানিক ৩৫০০০ শ্রমিক সুরিনামে পাঠান হয়েছিল। চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক, তাই কেউ আর দেশে ফেরত আসেনি। সেদিনের সেইসব শ্রমিকদের বংশধরেরা আজ সুরিনামের স্থায়ী বাসিন্দা। এখন তারা সংখ্যায় প্রায় ১৭০০০০, দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি। অতীতকে স্মরণ করে সুরিনামের রাজধানী পারামারিবুতে সে দেশের সরকার পুটলি হাতে ভারতীয় শ্রমিক যুগলের মূর্তি স্থাপন করেছে। ১৮৭৩ সালের ৫জুন ওইখানেই কোন ভারতীয় শ্রমিক প্রথমবার পা রেখেছিল। ২০১৫ সালে এই ঘাটেও ওই একই মূর্তি (মাই বাপ) স্থাপন করা হয়। চারপাশে বাংলা, ভোজপুরি, ইংরাজি এবং হিন্দি ভাষায় লেখা আছে অতীতের অশ্রুসিক্ত ইতিহাস।

    আদি গঙ্গার মুখে এপারে ‘দহি ঘাট’ আর ওপারে ‘বিধান ঘাট’ পার হয়ে খানিকটা গেলেই ‘প্রিন্সেপ ঘাট’। ভ্রমণকারীদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের জায়গা। পাশেই বিদ্যাসাগর সেতু এবং চক্ররেলের স্টেশন। গঙ্গার ধার বরাবর সেই ফেয়ারলি লঞ্চঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত সুসজ্জিত মিলেনিয়াম পার্ক। সবে মিলে বেশ মন ভাল করা পরিবেশ। ১৮৪১ সালে, সংগৃহীত চাঁদা এবং কিছুটা সরকারি সহায়তায়,‌ অকাল প্রয়াত জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতিতে তৈরি হয় এই ঘাট। W. Fitzgerald পরিকল্পিত মনুমেন্ট গোথিক এবং গ্রীক স্থাপত্যের এক অনবদ্য নিদর্শন। প্রিন্সেপ ছিলেন একজন পণ্ডিত মানুষ। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পাঠোদ্ধার করেছিলেন বেশ কিছু ব্রাহ্মী এবং খরোষ্ঠী লিপির। প্রিন্সেপ ঘাট তৈরি হওয়ার পর ব্রিটিশদের কাছে চাঁদপাল ঘাটের তুলনায় এই ঘাটের জনপ্রিয়তা বেড়ে ওঠে। ১৮৪৪ সালে অবসরপ্রাপ্ত বড়লাট এলেনবরো দেশে ফেরার সময় এই ঘাট থেকে জাহাজে ওঠেন। এরপর এই ঘাট থেকে যাওয়া আসা করেছেন অনেক নামী দামী মানুষ। এসেছেন, প্রিন্স অফ ওয়েলস, যিনি পরে হন রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড। এসেছেন, আরো এক প্রিন্স অফ ওয়েলস এবং প্রিন্সেস মেরি, যারা দ্বিতীয়বার এসেছেন রাজা পঞ্চম জর্জ এবং রানী মেরি হিসেবে, ভারতের রাজধানী কোলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার সূচনা করতে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ডাক্তার চার্লস আলেকজান্ডার গর্ডন এর স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায় যে সেই সময় সেনাবাহিনী এই ঘাট নিয়মিত ব্যবহার করত। রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথভাবে হওয়ায় এই ঘাট কোলকাতার একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্থল।

    প্রিন্সেপ ঘাটের একটু উত্তরেই জাজেস ঘাট। পাশেই গোয়ালিয়র মনুমেন্ট থাকার কারণে অনেকে একে গোয়ালিয়র ঘাটও বলে থাকেন। Sir Elijah Impeyর উদ্যোগে কেবলমাত্র অভিজাত সাহেবদের, বিশেষ করে জজেদের ব্যবহারের জন্য তৈরি হয় এই ঘাট। Impey ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি। তিনিই সেই জজ যিনি বন্ধু হেস্টিংসের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে দলিল জালিয়াতির সাজান অপরাধে মহারাজা নন্দকুমারের ফাঁসির আদেশ দেন। অন্যান্য অনেক ঘাটের মত এখানে কোন ঘরবাড়ি নেই। আছে কংক্রিটের শেড দেওয়া কিছুটা জায়গা যেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

    জাজেস ঘাটের পরেই আছে আউট্রাম ঘাট। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ব্রিটিশ সেনা আধিকারিক স্যার জেমস আউট্রামের স্মৃতিতে এই ঘাট তৈরি হয়। সিপাহী বিদ্রোহ দমনে বিশেষ করে লখনউ অধিগ্রহণে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। স্বভাবতই সাহেবরা এ হেন ব্যক্তির স্মৃতি তর্পণ করবেই। তৎকালে এটি একটি ব্যস্ত বন্দর ছিল। এখান থেকে পূর্ববঙ্গ এবং বার্মায় নিত্য জাহাজ চলাচল করত। এখনও এখানে একটি ভগ্ন কাস্টমস অফিস রয়ে গেছে। এই ঘাটেও কোন বাড়িঘর নেই। প্রমোদ ভ্রমণ ছাড়াও স্নান, ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ, ঠাকুর ভাসান ইত্যাদি বিবিধ কাজে এই ঘাট ব্যবহৃত হয়।

    এর পরেই বাবুঘাট। প্রবেশের মুখে একটি ফলকে লেখা আছে যে এই ঘাট ১৮৩০ সালে বাবু রাজচন্দ্র দাসের অর্থে নির্মিত এবং ঘাটটি তাঁর নামে নামাঙ্কিত হল। ফলকটিতে জনহিতকর এই কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য উইলিয়াম বেন্টিঙ্ককে সাধুবাদ জানান হয়েছে। শোনা যায় ওইখানে আর একটি ফলক ছিল, যাতে লেখা ছিল ঘাট তৈরির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। সেটির আর কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। কর্নেল মার্ক উডের ১৭৮৪ সালের ম্যাপে এই স্থানটি ছিল ডিহি কোলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে, এখান থেকেই শুরু হত গোবিন্দপুর। এই ঘাটের আর একটা পুরনো নাম আছে, ‘বাজা কদমতলা ঘাট’। রানী রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাস সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে এই ঘাট এবং তৎসংলগ্ন একটি ঘর নির্মাণ করেছিলেন। চৌরঙ্গী থেকে ঘাট পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তাও তিনি তৈরি করে দেন, এখন যার নাম রানী রাসমণি অ্যাভিনিউ। প্রায় ১৯০ বছরের পুরনো বাবুঘাটে মিশে আছে ব্রিটিশ-কলোনিয়াল স্থাপত্যশৈলী। বড়-বড় থামের উপরে ত্রিভুজাকৃতি কাঠামো গড়ে তৈরি হয়েছে বাবুঘাটের প্রবেশদ্বার। মূল চাতালের কিছুটা পরেই শুরু হয়েছে সিঁড়ি। যা সোজা নেমে গিয়েছে গঙ্গার বুকে। আগে ঘাটের ডানদিকে একটা স্টিম পাম্প বসান ছিল, জল দিয়ে রাস্তা ধোয়ার জন্য। সারাদিন এই ঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকে। বেচা-কেনা, পুজো-পাঠ, তেল মালিশ, স্নান, আড্ডা, ফেরি পারাপার, ইত্যাদি বহুবিধ কর্মকাণ্ডে সদা ব্যস্ত থাকে এই ঘাট। পালা পার্বণের সময় তো কথাই নেই, পা দেওয়ার জায়গা থাকে না। তেল মালিশের জন্য ঘাটের একধারে সার দিয়ে পাতা থাকে কাঠের পাটাতন। আগের ঘাটগুলির মত এই ঘাট পরিচ্ছন্ন নয়। Brian Paul Bach তাঁর বই Calcutta’s Edifice এ লিখেছেন, “Babus are very sophisticated people. Babughat is not very sophisticated।” পর্যবেক্ষণে কোন ভুল নেই, কারণ ব্যবহৃত ফুল, বেলপাতা, মাটি ইত্যাদিতে চারিদিক ভরে থাকে। ঠাকুর ভাসান আর ছটের পরে তো অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়ে যায়। কিছুকাল আগে ঘাটের সংস্কার করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার দিকেও প্রশাসনের তৎপরতা কিছুটা হলেও বেড়েছে।

    বাবুঘাট ছাড়িয়ে উত্তর দিকে আর একটু গেলেই পৌঁছে যাব চাঁদপাল ঘাটে। ১৭৫৩ সালের ফোর্ট উইলিয়ামের প্ল্যানে চাঁদপাল ঘাটকে শহরের দক্ষিণতম ঘাট হিসাবে চিহ্নিত করা আছে। একসময় এটি খুব ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘাট ছিল। ১৭৭৪ সালে ফিলিপ ফ্র্যান্সিস এবং সুপ্রিম কাউন্সিলের সহ কাউন্সিলারেরা এই ঘাট হয়েই কোলকাতায় প্রবেশ করেন। ভারতের প্রথম গভর্নর জেনরল লর্ড কর্নওয়ালিসও ১৭৮৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, এই ঘাটেই অবতরণ করেন। একসময় এই ঘাট ছিল ব্রিটিশদের ভারতীয় উপনিবেশের প্রবেশদ্বার। অভিজাত লোকজনের নিত্য যাতায়াত থাকলেও, ঘাট তার নামটি কুড়িয়েছে কিন্তু এক অত্যন্ত সাধারণ মানুষের থেকে। চন্দ্রনাথ পাল ছিলেন একজন ছাপোষা মানুষ। ঘাটের ধারে তাঁর টুকিটাকি জিনিসপত্রের দোকান ছিল। যাতায়াতের পথে স্থানীয়রা এমনকি মাঝ মাঝে সাহেবরাও সেখানে কেনাকাটা করত। চাঁদ পালের দোকান থেকেই লোকমুখে ঘাটের নাম হয়ে গেল চাঁদপাল ঘাট। এখনও এই ঘাটে পারাপারের জন্য ফেরি পরিষেবা আছে।

    এবার আসি আর্মেনিয়ান ঘাটে। ম্যানুয়েল হাজারমালিয়াঁ নামে একজন আর্মেনিয় ১৭৩৪ সালে এই ঘাটটি নির্মাণ করান। এই হাজারমালিয়াঁকে নামের কিছুটা সাদৃশ্যের কারণে কেউ কেউ তাঁদের লেখায় প্রাচীন কোলকাতার অতি পরিচিত হুজুরিমলের সাথে এক করে ফেলেছেন। হুজুরিমল ছিলেন শিখ আর হাজারমালিয়াঁ খ্রিস্টান, এক করে ফেললে ধর্মসংকট হয়ে যাবে। ১৮৫৪ সালে হাওড়া থেকে রেল পরিষেবা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০ বছর এই ঘাটেই ছিল রেলের টিকিট ঘর। এখানেই যাত্রীরা টিকিট কিনত আর মালপত্র ওজন করিয়ে মাশুল দিত। ঘাটে থাকত রেলের লঞ্চ, যাতে চড়ে যাত্রীরা ওপারে গিয়ে ট্রেনে চাপত। ১৮৭৪ সালে ভাসমান পন্টুন ব্রিজ তৈরি হওয়ার পর টিকিট ঘর হাওড়ায় চলে যায়। ১৮৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এইখান থেকেই কোলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলাচল শুরু হয় যা শেষ হত শেয়ালদা স্টেশনে। এই ঘাটেরই পাশে ছিল ব্যারোটো সাহেবের ঘাট আর রস বিবির ঘাট, কিন্তু দুটি ঘাটেরই আজ আর কোন অস্তিত্ব নেই। আর্মেনিয়ান ঘাটে এখনও নিয়মিত ফেরি চলাচল করে। একসময় এখান থেকে তমলুক, কোলাঘাট, ঘাটাল পর্যন্ত স্টিমার চলাচল করত। সকালে এই ঘাটের উন্মুক্ত অঞ্চলে চলে কুস্তির আখড়া।

    কাছাকাছি আছে আর একটি ঘাট, মোতিলাল শীলের ঘাট। মোতিলাল শীল উনিশ শতকের কোলকাতার একজন বিখ্যাত মানুষ। ১৭৯৭ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারান। শূন্য থেকে শুরু করে একক প্রয়াসে নানারকম ব্যবসা করে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন। উপার্জনের সাথে সাথে জীবনে দানধ্যানও প্রচুর করেছেন। মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় তিনি অনেক জমি দিয়েছিলেন, যার স্বীকৃতি স্বরূপ সেখানে তাঁর নামে একটা ওয়ার্ড আছে। ১৮৪১ সালে বেলঘরিয়ায় গৃহহীনদের জন্য একটি আবাস তৈরি করেন। ১৮৪২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মোতিলাল শীল ফ্রি কলেজ। জনহিতকর এমন অসংখ্য কাজের মাঝে গঙ্গাতীরে তৈরি করেন এই স্নান ঘাট। কোরিন্থিয়ান স্থাপত্যের চারটি স্তম্ভের উপর নির্মিত হয়েছে ঘাট সংলগ্ন ঘরটি। দুর্ভাগ্যবশত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এবং নানারকমের অবৈধ দখলদারির কারণে ঘাটটি হারিয়ে যেতে বসেছে।

    একটু এগোলেই জনানা ঘাট। শুধুমাত্র মহিলাদের স্নানঘাট। চার কোনায় চারটে মিনার, মাথায় গম্বুজ, দূর থেকে দেখলে মসজিদ বলে ভ্রম হতে পারে। মার্বেলের মেঝে, চিত্রিত দেওয়াল, নির্মাণের বৈচিত্র, ঘাটটিকে মহিমান্বিত করেছে। ঘাটটি ১৮৮০র দশকের শেষে অথবা ১৮৯০এর দশকের প্রথমদিকে নির্মাণ করান রাজস্থান থেকে আগত রামচন্দ্র গোয়েঙ্কা। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী রামচন্দ্র গোয়েঙ্কার এই ঘাট ছাড়াও আরও অনেক সমাজসেবামূলক কাজকর্মের নিদর্শন আছে। শুনতে আশ্চর্য লাগে অতকাল আগেও অনেক গঙ্গার ঘাটেই মহিলারা খুব স্বস্তিতে স্নান করতে পারতেন না। সঙের গানে শোনা যেত — “অবিদ্যা পাড়ায় ঝেঁটা/ ঘরে সতীনের লাথি/ মরদের কপালে জোটে গঙ্গার ঘাটি।” গানের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে একদল পুরুষ তখন গঙ্গার ঘাটে গিয়ে স্নানরত জনানা দর্শনে মেতে থাকত। সরকার থেকে ঘাটগুলোতে নজরদারির ব্যবস্থা করেও বজ্জাতি পুরোটা বন্ধ করা গেল না। বড়লোকের ঘরের মেয়েরা পালকি সমেত গঙ্গা স্নান করত, কিন্তু সাধারণ মানুষের তো সে ক্ষমতা ছিল না। জনানা ঘাট হওয়াতে খানিক স্বস্তি এল। ওই সময় একান্তভাবে মহিলাদের জন্য নির্মিত ঘাট কোলকাতায় খুবই কম ছিল।

    এই ঘাটের পাশেই গণপত রায় কয়ানি নামে আর একটি মহিলাদের ঘাট আছে, তবে এই ঘাটের ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।

    এবার আসি মল্লিক ঘাটে। হাওড়া ব্রিজের ঠিক নিচে দক্ষিণ দিকে এর অবস্থান। নিমাই মল্লিক ঘাট, সংক্ষেপে মল্লিক ঘাট। মল্লিক ঘাট নামটাও আবার কোন কোন জায়গায় মুছে ফেলে স্থানটিকে চিহ্নিত করা হয় ছটুলাল ঘাট হিসাবে। এই নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিস্তর বিতর্ক থাকলেও পুরোন ম্যাপ, ছবি এবং তথ্য মল্লিক ঘাট নামকেই সমর্থন করে। ১৭৯৩ সালের ৩৯টি ঘাটের তালিকা এবং ১৮৭৪ সালের ৫৮টি ঘাটের তালিকা, কোনটিতেই ছোটুলাল ঘাটের নাম পাওয়া যায় না। ১৮৫৫ সালে রামমোহন মল্লিক তাঁর পিতা নিমাইচরণ মল্লিকের নামে এই ঘাটটি নির্মাণ করেন। এই ঘাট বিখ্যাত ফুলের জন্য। সকালে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে অসংখ্য দোকানি নানা রঙের নানা রকমের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। এই ফুলের বাজার একশ বছরেরও বেশি পুরোনো। আগে মল্লিক ঘাট পুরনো হাওড়া ব্রিজ অর্থাৎ পন্টুন ব্রিজের উত্তরে ছিল। কিন্তু বর্তমান ব্রিজ আগেরটির তুলনায় অনেকটা উত্তরদিকে সরে হওয়ায় ঘাটটি এখন ব্রিজের দক্ষিণে হয়ে গেছে। ঘাটের ধারে বাড়িটি অতিব সুন্দর ছিল, এখন ফিকে হয়ে গেছে সেই জৌলুস। গঙ্গার জল শহরে সরবরাহ করার জন্য একসময় এই ঘাটে কর্পোরেশনের একটা পাম্পিং স্টেশন ছিল। হাওড়া ব্রিজকে আলোকিত করার জন্য ১৮৭৯এ এখানে একটা ডায়নামো বসান হয়েছিল। এই ঘাট থেকে অতীতে যাত্রীরা স্টিমারে চড়ে অনেক দূর দূরান্তে যাতায়াত করত। একবার দুর্যোগে ‘স্যার জন লরেন্স’ নামে একটি স্টিমার ডুবে যায়। ওই স্টিমারে চড়ে তীর্থযাত্রীরা জগন্নাথ দর্শনে যাচ্ছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ইংরেজ শিল্পী এবং লেখক অ্যালফ্রেড ফিশার তাঁর লেখায় ঘাটের কাছে এই স্মৃতি ফলকটির উল্লেখ করেছেন-
    ‘THIS STONE IS DEDICATED BY A FEW ENGLISH WOMEN TO THE MEMORY OF THOSE PILGRIMS, MOSTLY WOMEN, WHO PERISHED WITH SIR JOHN LAWRENCE IN THE CYCLONE OF 25TH MAY 1887’
    ছবি তোলার জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্পট এই ফুলের ঘাট।

    এখনকার উত্তর কোলকাতায় অর্থাৎ তখনকার সুতানুটিতে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় বড়লোকেরা অনেক ঘাট বানিয়েছিলেন। সুতানুটি ঘাট, মাণিকবাবুর ঘাট, মদন দত্তের ঘাট, টুনুবাবুর ঘাট, জোড়বাগান ঘাট, গোকুলবাবুর ঘাট, গিরিবাবুর ঘাট, হরিনাথ দেওয়ানের ঘাট, বৈষ্ণব দাসের ঘাট, নবাবের ঘাট, কদমতলা ঘাট — এইসব ঘাটের সিংহভাগই আজ ইতিহাস। মল্লিক ঘাটে প্রাণ ভরে ফুলের সুবাস নিয়ে সফর করা যাক উত্তর দিকের কয়েকটি ঘাটে।

    হাওড়া ব্রিজ পার হয়ে একটু গেলেই শোভারাম বসাকের স্নান ঘাট। নতুন ফোর্ট উইলিয়াম তৈরি হওয়ার সময় শোভারামকে গোবিন্দপুর ছেড়ে চলে আসতে হয়। বাড়ি করেন বড়বাজার অঞ্চলে। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সুতো এবং কাপড়ের ব্যবসা করে তিনি প্রভুত অর্থ উপার্জন করেন। তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তাটা আজকের শোভারাম বসাক স্ট্রিট। বাড়ির সামনে গঙ্গার ধারে তিনি জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার সামনেই আনুমানিক ১৭৬০ সালে নির্মাণ করেন স্নান ঘাট। পাশেই জগন্নাথ দেবের মন্দির থাকার কারণে তাঁর নাম হারিয়ে গিয়ে লোকমুখে ঘাটের নাম হয়ে যায় জগন্নাথ ঘাট। এই ঘাট থেকেই রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে রাখীবন্ধন উৎসব শুরু করেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেদিনের ঘটনার কথা ‘ঘরোয়া’তে লিখেছেন —

    “ঠিক হল সকালবেলা সবাই গঙ্গায় স্নান করে সবার হাতে রাখী পরাব। এই সামনেই জগন্নাথ ঘাট, সেখানে যাব — রবিকাকা বললেন, সবাই হেঁটে যাব, গাড়িঘোড়া নয়। … রওনা হলুম সবাই গঙ্গা স্নানের উদ্দেশ্যে, রাস্তার দুধারে বাড়ির ছাদ থেকে আরম্ভ করে ফুটপাথ অবধি লোক দাঁড়িয়ে গেছে — মেয়েরা খৈ ছড়াচ্ছে, শাঁক বাজাচ্ছে, মহা ধূমধাম — যেন একটা শোভা যাত্রা। দিনুও ছিল সঙ্গে। গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে মিছিল চলল—
    বাংলার মাটি, বাংলার জল,
    বাংলার বায়ু, বাংলার ফল….
    পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।।

    এই গানটি সে সময়েই তৈরি হয়েছিল। ঘাটে সকাল থেকেই লোকে লোকারণ্য, রবিকাকাকে দেখবার জন্য আমাদের চারদিকে ভিড় জমে গেল। স্নান সারা হল… সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল এক গাদা রাখী। সবাই এ ওর হাতে রাখী পরালুম। অন্যরা যারা কাছাকাছি ছিল তাদেরও রাখী পরানো হল। হাতের কাছে ছেলে মেয়ে যাকে পাওয়া যাচ্ছে, কেউ বাদ পড়ছে না, সবাইকে রাখী পরানো হচ্ছে। গঙ্গার ঘাটে সে এক ব্যাপার।”

    এই ঘাটে নিয়মিত ফেরি পরিষেবা আছে।

    আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে গঙ্গা এখনকার অবস্থানের থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াইশ মিটার পূর্ব দিক চেপে বইত। অর্থাৎ এখন যেখানে স্ট্র্যান্ড রোড, গঙ্গা ছিল সেই পর্যন্ত বিস্তৃত। মার্ক উডের পুরনো ম্যাপে সুতানুটি/হাটখোলা ঘাটের ৩০০ মিটার দক্ষিণে নিমতলা ঘাটের উল্লেখ আছে। এই ঘাট এবং সংলগ্ন কালী মূর্তি বহু প্রাচীন। নির্মাণের সময়ের ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। ঘন জঙ্গলে গঙ্গার ধারে ছিল একটি কালী মূর্তি আর শ্মশান। শ্মশানে অবস্থিত বলে বলা হত শ্মশান কালী। পরবর্তীকালে ননিমোহন ব্যানার্জী নামে এক জমিদার এখনকার মন্দিরটি বানিয়ে দেন। নাম হয় আনন্দময়ী কালী মন্দির। নিমতলা নামের উৎস নিয়েও কিঞ্চিৎ বিতর্ক আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত হল পুরোনো মন্দির এক নিমগাছের তলায় ছিল বলে নাম হয়েছে নিমতলা। আনন্দময়ী কালী মন্দিরের একটু আগেই আছে একটি মসজিদ, নিয়ামৎতুল্লাহ মসজিদ। ১৭৮৪ সালে স্থানীয় জমিদার মহম্মদ রমজান আলী তাঁর পূর্বপুরুষ নিয়ামৎতুল্লাহর নামে ওই মসজিদ নির্মাণ করিয়েছিলেন। কারো কারো মতে নিয়ামৎ থেকে জায়গার নাম হয়েছে নিমতলা। ১৮০০ সালের কিছু আগে থেকে গঙ্গা পশ্চিম দিকে সরতে থাকে। বিগত তিনশ বছরে নিমতলা ঘাটের বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তন হয়েছে। স্ট্র্যান্ড রোড তৈরি হওয়ার কারণে ১৮২৮ সালে বর্তমান চক্ররেলের লাইনের পাশে শ্মশান স্থানান্তরিত হয়। ১৮৭৫রে রেল চলাচলে অসুবিধে হওয়ার কারণে পোর্ট কমিশনের আপত্তিতে শ্মশান সরে যায় আরো পশ্চিম দিকে। ম্যাকিনটশ বার্ন কোম্পানি আনুমানিক ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে তৃতীয় শ্মশান। এই টাকার ২৫ হাজার টাকা দেন পোর্ট কমিশনেরা আর ৫ হাজার টাকা দেন জাস্টিসেরা। এরপর ১৮৯১-৯২, ১৮৯২-৯৩, ১৮৯৪-৯৫, ১৯০৫-০৬, ১৯১২-১৩ এবং ১৯১৩-১৪তে ঘাট ও শ্মশানের সংস্কার করা হয়। গত শতকের আটের দশকে হয় বৈদুতিক চুল্লি। ২০১৫ সালে একটু তফাতে অপাবৃত হয় নতুন বৈদুতিক চুল্লিযুক্ত শ্মশান। রানী রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাস শ্মশানের দক্ষিণে একটি পাকা ঘর তৈরি করে দেন। এখন শ্মশানটির আয়তন এক বিঘের মত। তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থাভাবে এবং কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় কারণে কাশী মিত্তির এবং নিমতলা ঘাটে শয়ে শয়ে মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হত। ১৮৫৪ সালে স্থানীয় সরকার এই প্রথায় লাগাম দিতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু সফল হয়নি। কেবল মানুষই নয় মৃত জন্তু জানোয়ারকেও গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হত। ১৮৩৭ সাল থেকে প্রশাসন বেশ কিছু ডোম নিয়োগ করা শুরু করে, যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন পাড়া থেকে মরা জন্তু গরুর গাড়িতে তুলে নিকটবর্তী গঙ্গার ধারে নিয়ে আসা। গঙ্গার ধার থেকে আবার সেই সব শবগুলোকে নিমতলায় এনে জড় করা হত। নিমতলায় একজন চামড়ার ঠিকাদার থাকত, যার তত্ত্বাবধানে জন্তুদের ছাল ছাড়িয়ে মুচিদের কাছে বিক্রি করা হত। দেহগুলো ওইখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকত। এই চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে নিষ্কৃতি পেতে ১৮৫৬ সালে নিমতলা ঘাটের উত্তরে গোলাবাড়ি ঘাট তৈরি করা হয়। নিমতলা ঘাটের পরিবর্তে মৃত জন্তুদের এই ঘাটে এনে জড় করা হত। এখানে একজন ঠিকাদার থাকত, যার দায়িত্ব ছিল ন্যায্য সময়ের মধ্যে শবগুলিকে শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া। ১৮৬৭ সালে রেল লাইন চালু হওয়ার পর এই ঘাটের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৭১ সাল থেকে মরা জীবজন্তুদের ধাপায় নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়। ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দাহকার্য এখানে সম্পন্ন হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এই শ্মশানঘাটে দাহ করা হয়েছিল। তাঁর সমাধিমন্দির এই শ্মশানের পাশেই অবস্থিত। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে এই শ্মশানে দাহ করা হয়।

    উত্তরে চিৎপুর থেকে দক্ষিণে জোড়াবাগান পর্যন্ত অঞ্চলটিকে মার্ক উডের ম্যাপে সুতানুটি হিসাবে চিহ্নিত করা আছে। ১৭৯২ সালের সেই ম্যাপে সুতানুটি/হাটখোলা ঘাটের উল্লেখ আছে। অতি প্রাচীন এই ঘাট। এই হাটখোলা ঘাট শহরের ইতিহাসের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত। বলা হয়, ১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট জব চার্ণক এই ঘাটেই অবতরণ করেন। এখানে খোলা জায়গায় হাট বসত বলে জায়গার নাম হয়েছিল হাটখোলা।

    কাছেই প্রসন্ন কুমার ঠাকুরের ঘাট। এই ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ করেন ঠাকুর তালুকের অছিরা। প্রসন্নকুমার পাথুরিয়াঘাটার গোপীমোহন ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। প্রসন্ন কুমার ১৮৩২ থেকে ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত হিন্দু কলেজের গভর্নর ছিলেন। কিছু সময় ওকালতিও করেছেন। আইনের অধ্যাপক নিয়োগ করার জন্য কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। তার স্বীকৃতি স্বরূপ এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঠাকুর আইন অধ্যাপক’ পদটি আছে।

    আহিরিটোলা আর শোভাবাজার কাছাকাছি দুটি ঘাট। আহির শব্দটি সংস্কৃত আভীর শব্দ থেকে এসেছে। আহির মানে গোয়ালা, সেই হিসাবে আহিরিটোলার অর্থ হয় গোয়ালা পাড়া। সুকুমার সেন প্রচলিত ধারণার থেকে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁর মতে আহিড়ি মানে পাকমারা শিকারিদের আস্তানা। উত্তর কোলকাতার এই শোভাবাজার আহিরিটোলা অঞ্চলে সেই সময়ের অনেক বিখ্যাত মানুষেরা থাকতেন। শোভাবাজার নামের উৎস নিয়েও নানা মত আছে। প্রচলিত ধারণা হল শোভারাম বসাকের নাম থেকেই শোভিত হয়েছে এই অঞ্চল। সেক্ষেত্রেও দুটি মত আছে। শোভারাম বসাকের বিখ্যাত সুতার হাটটি ছিল সুতানুটিতেই। অনেকে বলেন, এই সুতা-হাটাই কালক্রমে শোভারামের নামে শোভাবাজারে পরিণত হয়। কেউ কেউ মনে করেন, এখন যেখানে শোভাবাজার রাজবাড়ি, সেখানে শোভারামের সবজি বাগান ছিল। বাগানের সবজি বাগানেই বিক্রি হত। সেই থেকে শোভাবাজার নামটি এসেছে।

    সুকুমার সেন, হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের মতো পণ্ডিত মানুষরা সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁরা শোভাবাজারের শোভা থেকে শোভারামকে বিযুক্ত করেছেন, যুক্ত করেছেন নবকৃষ্ণ দেবকে। সেখানেও মতের ভিন্নতা রয়েছে। ‘বাংলা স্থাননাম’ বইতে সুকুমার সেন লিখছেন, “ঠিক বানান হইবে সভাবাজার, নবকৃষ্ণের ‘রাজসভা’ হইতেই এই নামের উৎপত্তি।” সামান্য পার্থক্য রয়েছে হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের বয়ানে। ‘কলিকাতা সেকালের ও একালের’ বইতে তিনি বলছেন, ১৭৭৫ সালে, নবকৃষ্ণ দেবের মাতৃবিয়োগ ঘটলে তিনি বিরাট জাঁক-জমক করে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন। সেখানে রাজ-রাজরা-মন্ত্রী-জমিদার-অমাত্যদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোজসভার আয়োজন ছিল রাজকীয়। সেই থেকেই নাকি সুতানুটির ‘পাবনা-বাসনা’ গ্রামটি নাম বদলে হয়ে পড়ে ‘সভাবাজার’। তারপর লোকমুখে হয়ে যায় ‘শোভাবাজার’। বহু পুরোনো ঘাট হলেও দুটি ঘাটই ভাল অবস্থাতে আছে। ফেরি চলাচলের কারণে ঘাটদুটিতে সারাক্ষণই লোক যাতায়াত করে।

    কোন এক সময়ের চাঁপা গাছে ঘেরা চাঁপাতলা ঘাট ছাড়িয়ে একটু গেলেই কুমারটুলি ঘাট। এই অঞ্চলই কলকাতার প্রতিমা শিল্পীদের বাসস্থান এবং স্টুডিও। কুমোরদের নাম থেকেই এলাকা তথা ঘাটের নাম। সপ্তদশ শতকে শান্তিপুর, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, প্রভৃতি অঞ্চল থেকে অনেক মৃৎশিল্পী অধিক উপার্জনের আশায় কোলকাতায় এসে এইখানে বাসা বাঁধে। সেই থেকে পুরুষানুক্রমে তারা এখানেই রয়ে গেছে। এক সময় নৌকা বোঝাই হয়ে বাঁশ, খড়, মাটি ও প্রতিমা তৈরির অন্যান্য কাঁচা মাল এই ঘাটে এসে নামত। এখন তার অনেকটাই অন্য পথে আসে। প্রায় বদ্ধ স্বল্প পরিসর এই স্টুডিও গুলোতে শিল্পীর নিখুঁত স্পর্শে যুগ যুগ ধরে প্রতিভাত হচ্ছে অনন্য সব কীর্তি।

    পাথুরিয়া ঘাট বা পাথুরিয়া ঘাটা পার হলেই পৌঁছব উত্তর কোলকাতার আর একটি শ্মশান ঘাটে। কাশীরাম মিত্রের ঘাট। রাধারমণ মিত্রের তথ্য অনুসারে ‘কাশীরাম’ নয়, সঠিক নামটি হবে কাশীশ্বর। কাশীশ্বর বিপুল ধন সম্পত্তির অধীশ্বর ছিলেন। তাঁর একটি দুটি নয়, চার চারটি পত্নী ছিল। এত আয়োজনের পরেও তাঁর কোন বংশধর ছিল না। তিনি সৎকাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন। ১৭৭৪ সালে তিনি এই ঘাটটি বানিয়ে দেন। ঘাটের কাছেই ছিল তাঁর বিশাল অট্টালিকা। মহারাজা নন্দকুমারের বিচারের সময় কাশীশ্বর তাঁর পক্ষে সাক্ষী দিয়েছিলেন। ১৮৮২-৮৩ সালে বাবু অক্ষয় চন্দ্র গুহ এই ঘাটে একটি গঙ্গা যাত্রীর আবাস তৈরি করিয়ে দেন।

    ঘাট সংলগ্ন চক্ররেলের পাশের রাস্তা দিয়ে উত্তরদিকে একটু হাঁটলেই বাগবাজার ঘাট। লোকমুখে এটাই এখন প্রচলিত নাম হলেও এর আসল নাম ‘রঘু মিত্রের ঘাট’। রঘু মিত্র ছিলেন কোলকাতার ব্ল্যাক জমিদার গোবিন্দরাম মিত্রের ছেলে। কিছু ইতিহাসবিদের মতে এই ঘাটের আদি নাম রাজা নবকৃষ্ণের ঘাট। কোলকাতার প্রাচীন ঘাটগুলির মধ্যে বাগবাজার অন্যতম। এখান থেকে নিয়মিত ফেরি চলাচল হয়। স্নান, পুজোপাঠ, বিনোদন, ভ্রমণ, বিভিন্ন অভিপ্রায়ে মানুষ এখানে আসে। এটি একটি সদাব্যস্ত ঘাট।

    দুর্গা চরণ মুখার্জী ঘাট, অধুনা মায়ের ঘাট দিয়ে ঘাট পরিক্রমা শেষ করি। ঘাট ছাড়াও দুর্গা চরণ মুখার্জীর নামে বাগবাজারে একটি রাস্তা আছে। ইনি বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন সাহেবের দেওয়ান ছিলেন। এনার বিস্তর অর্থ ছিল আর সাথে ছিল বিস্তর দেমাক। ১৩ লক্ষ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রেখে ১৮১৪ সালের মে মাসে তিনি মারা যান। এই ঘাটকে কেউ কেউ পাগলা বাবুর ঘাটও বলত। ১৯০৫ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত বাগবাজারে থাকার সময় সারদা মা এই ঘাটেই স্নান করতেন। ১৯২০ সালের জুলাই মাসে তাঁর দেহাবসানের পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে রামকৃষ্ণ মিশন এখানে একটি মন্দির নির্মাণ করে। বর্তমানে শ্রী মার বসত বাড়িটি রামকৃষ্ণ মঠের সংগ্রহশালা ও উদ্বোধন প্রকাশনীর প্রধান কার্যালয়। শ্রী শ্রী মা সারদাদেবীর নামাঙ্কিত এই ঘাটটি বর্তমানে স্নানাদি, ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম সহ নানা প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে গঙ্গারতির আয়োজন করা হয়। সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ঘাট এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেওয়ার ফলে এই ঘাট এখন কোলকাতার বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান হিসেবে গণ্য হয়। এখানে গঙ্গার খোলা হাওয়ায় বসলে মনটা জুড়িয়ে যায়।

    গঙ্গা আমাদের শহরের শোভা, ঐতিহ্য এবং সম্পদ। সম্পদকে আগলে রাখতে হয়, না হলে তা খোয়া যায়। আমাদের এই অমূল্য সম্পদের বেশ কিছুটা আজ হারিয়ে যাওয়ার প্রহর গুনছে। কুমারটুলি ঘাট থেকে নিমতলা ঘাট হয়ে জগন্নাথ ঘাট -- উত্তর কোলকাতার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধীরে ধীরে নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। বেশ কিছু ঘাটের অবস্থা খুবই শোচনীয়। গঙ্গার গ্রাসে চলে যাচ্ছে পাড়ের মাটি, কংক্রিটের ঘাট। ভাঙতে শুরু করেছে ঘাটের সিঁড়ি। জোয়ারের সময় স্নান করতে নামলে পদে পদে রয়েছে বিপদের সম্ভাবনা। মোদি ঘাট, কাঠগোলা ঘাটের মত অনেক প্রাচীন ঘাট নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। অবশিষ্ট ঘাটগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবিলম্বে আমূল সংস্কার করতে হবে। বিলম্বিত প্রয়াসে ধুয়ে যাবে শহরের অনেক ইতিহাস।

    তথ্যসুত্রঃ-
    ১. কলিকাতা দর্পণ - রাধারমণ মিত্র
    ২. কলির শহর কলকাতা - হরিপদ ভৌমিক
    ৩. কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত - বিনয় ঘোষ
    ৪. কলিকাতা সেকালের ও একালের - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ০২ জুলাই ২০২৪ | ৩৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ar | 71.174.***.*** | ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৬:৩১534116
  • বাগবাজার ঘাট আর শ্রীমায়ের ঘাটের মাঝে আরেকটা ঘাট আছে। ঠাকুর ভাসানের ঘাট। ওটাই মনে হয় রাজা নবকৃষ্ণ দেবের ঘাট। আর কাশী মিত্তির আর রঘু মিত্রের (বাগবাজার) ঘাটের মাঝে হল জাহাজবাড়ি ঘাট (চলতি নাম, আসল নাম মনে হয় মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্রের ঘাট)।

    ঘাটের কথা পড়ে খুব ভাল লাগলো।
  • Kishore Ghosal | ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৬:৪৯534118
  • খুব সুন্দর আলোচনা এবং ইতিহাস। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন