এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  পথ ও রেখা

  • রিট্রিট ডায়রি : উত্তরাখণ্ড (৬)

    শঙ্কু মহারাজ লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | পথ ও রেখা | ১৭ অক্টোবর ২০২২ | ১২৯১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)
  • ১৭. ১০. ২০২২, সকাল ৯-২৩, লোহাঘাটের পথে

    একদম ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে সাড়ে আটটায় আমাদের ছ' জনকে নিয়ে Ertiga গাড়ি রওনা দিল লোহাঘাটের উদ্দেশ্যে। পিছনে পড়ে রইল মেঘে ঢাকা আলমোড়া শহর; কিছুক্ষণ আগে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আশ্রমের সিঁড়ির পাশে ফুটে থাকা জংলা গোলাপ দেখছিলাম, সে জায়গা বিলকুল ঢাকা ধোঁয়ায়। স্বামী বিবেকানন্দের দীর্ঘকায় মূর্তি দাঁড়িয়ে রইল পাহাড়ের ঢালের গায়ে ওই আশ্রমকে নিয়ে – লাল, সবুজ টিনের চাল, ছোট ছোট কাঠের জানালা, নিচু সিলিংয়ের মঠ-অফিস, ফুলের আলুথালু সমারোহ নিয়ে।

    ড্রাইভারজী গাড়ি চালিয়ে স্পিকারে চালালেন একটা কুমায়ুনি গান – মেঠো সুর, তালের একটা গান, কিন্তু তার সঙ্গে পশ্চিমী যন্ত্রানুষঙ্গ। এমনটাই নিয়ম, এর আগেও দেখেছি। ২০০১ সালে যখন এসেছিলাম কুমায়ুনে, তখনও আমাদের ড্রাইভার ঠাকুরজি সকালে গাড়ি চালাতে শুরু করে প্রথমে অনেকক্ষণ একটা কুমায়ুনি গান চালিয়ে রাখতেন – প্রতিদিন নতুন নতুন পাহাড় আসতো, বাঁক আসতো, গন্তব্য আসতো, কিন্তু ঠাকুরজির ওই গান বদলাতো না। তখন আমি মধুবালার প্রেমে (হ্যাঁ মুঘল-এ-আজমের মধুবালা) জাস্ট ছারখার হয়ে যাচ্ছি; এবং ঠাকুরজির চালানো সেই গানে "মধুবালা" কথাটা থাকায় আজও আমার গানটির সেই দুটি লাইন মনে রয়ে গেছে, যদিও নিদারুণ এক অপভ্রংশ হয়ে। তখন শুনে যা কানে ঠেকতো, সেটাই তুলে দিচ্ছি –
    "মেরি মধুবালা, তু চ্যাংটা ঘুঁক্যাঁয় রে
    ম্যায় যাময়ু দিল্লি, জরা যাঁহা পিব্যায় দে।"
     

    যাই হোক, সে সব আগেকার লজ্জার কথা, আজ এত অব্দিই থাক। কিন্তু এবার বিপত্তি হলো, ইনি কুমায়ুনি গান চালানোয় আমাদের তিনজনের কোনও বিশেষ বক্তব্য না থাকলেও সুনন্দা কেবলই ছটফট করতে লাগলো অন্য গান চালানোর জন্য। ড্রাইভারজি অবস্থা দেখে কুমায়ুনি গান থামিয়ে ব্লুটুথে কানেক্ট করে দিলেন সুনন্দার ফোন। শুরু হলো, "ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে", "তুমি রবে নীরবে"। অবাঙালি রাজ্যে পাহাড়ি রাস্তায় ড্রাইভে এস্রাজের সঙ্গে "তুমি রবে নীরবে" চালালে যা অবশ্যম্ভাবী, গাড়ির গতি পড়তে শুরু করলো। আপাতত খুব চিন্তায় আছি, ধসপ্রবণ সরু রাস্তা। ড্রাইভারজি হাই তুলছেন।

    বেলা ১২টা, পথে

    জাগেশ্বরধামে থামা হলো মাঝে। পাহাড়ের কোলে বহু, বহু শতাব্দী প্রাচীন কিছু ছোট-বড় মন্দির, বেশিরভাগ মন্দিরই শিবের। এই মন্দিরগুলি কবে নির্মিত জানা যায় না; সপ্তম শতাব্দীতে আচার্য শঙ্কর এসে মন্দিরগুলির কয়েকটিতে পূজার প্রচলন করেন। তারপর মূলত কৌর্য এবং চন্দ বংশের উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সপ্তম শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে মন্দিরগুলি renovated হয় – জানতে পারি।

    পাহাড়ি এলাকার তুলনায় বেশ বড় একটা প্রায় সমতল চত্বরে মন্দিরগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দণ্ডায়মান। একদিকে মহামৃত্যুঞ্জয় যজ্ঞ হচ্ছে, বাকি আরও মন্দিরগুলোয় পুজো হচ্ছে, কিন্তু মোটের উপর ছিমছাম, শান্তির পরিবেশ। পুরোহিতদের প্রতিপত্তি নেই, জোর করে দক্ষিণা-আদায় করা নেই, বাবার সঙ্গে ভক্তের কোনও গিভ-এন্ড-টেক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা নেই। যে যেমনভাবে পুজো দিতে চায়, দর্শন করতে চায়, করতে পারে।
     

    কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও তিতলির কাছে আসল ব্যাপার হলো, মন্দির চত্বরে অনেক সপরিবার বাঁদর আছে। তারা একে অন্যের উকুন বাছছে, আদর করছে, করতে করতেই ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় মেরে ভাগিয়ে দিচ্ছে। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বাঁদরের মধ্যে আজ একটা হেস্তনেস্ত হবেই। গৃহযুদ্ধ লাগল বলে!

    দুপুর দেড়টা, পথে

    আলমোড়া থেকে বেরিয়ে জাগেশ্বর অব্দি দীর্ঘ পথ জুড়ে ছিল পাইনবন; কখনও জমাটবাঁধা অন্ধকারের মতো, কখনও বা পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে – তাদের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে আরও দূরের পাইনবন, পাহাড়, রুপোলি চিকচিক করা নদীর রেখা। সূর্যের আলো পাইনপাতার ফাঁক দিয়ে মেঘ কাটিয়ে বিচ্ছুরিত হচ্ছে সারা উপত্যকায়; সেই উইলফ্রেড আওয়েনের কবিতার মতো, সূর্য যেন উপচে পড়ছে ঘাসের, পাতার, ফুলের শরীর থেকে।

    একটু আগে পেরিয়ে এলাম দুটো নদীর সঙ্গম। দুটোই পাহাড়ি নদী – ভারি মিষ্টি নাম – গোরি আর কারী। গোরির জল সবুজ, আর কারীর জল কালো। সঙ্গমে এই দুজন মিলেছে, কিন্তু অদ্ভুতভাবে – মেশেনি। মিলিত হয়েও, কেমন আপসহীন বোঝাপড়ার ঢঙে সবুজ আর কালো পাশাপাশি বইছে, মাঝখানে কোন এক অদৃশ্য প্রাচীর যেন তাদের আলাদা করে রেখেছে একে অন্যের থেকে!

    কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও তিতলির কাছে আসল ব্যাপার হলো, রাস্তায় মাঝেমাঝেই প্রচুর বাঁদর দেখা যাচ্ছে। তিতলির চোখে, বাঁদরদের সামনে হিমালয় একেবারে গোহারান হেরে যাচ্ছে। ন্যাশনাল হাইওয়ের উপর আয়েসে শুয়ে থাকা, নিজেদের নামকরণের সার্থকতা প্রমাণে ব্রতী কিছু ছাগলও দেখেছি আমরা।

    বিকেল ৫-১২, লোহাঘাট রেস্ট হাউজ

    অবশেষে পৌনে তিনটে নাগাদ এসে পৌঁছেছি লোহাঘাট। ছোট একটি জনপদ; মূলত মায়াবতী অদ্বৈত আশ্রমকে কেন্দ্র করে অনেক হোটেল-দোকানপত্র গড়ে উঠেছে লোহাঘাটে। লোহাঘাট অবস্থিত পাদদেশে, কয়েকটি পাহাড়ের মাঝের উপত্যকায়। আলমোড়া থেকে রাতে পাহাড়িয়া অন্ধকারে তাকালে আলো যেমন জ্বলতে দেখা যেত নীচের দিকে, লোহাঘাট থেকে তেমনই দেখা যাচ্ছে উপর দিকে – অমিতাভ দা বলছিল তিতলিকে। পাশাপাশি আরও খেয়াল করলাম, পাদদেশে বলে লোহাঘাটে তাপমাত্রা একটু বেশির দিকে বটে, কিন্তু একইসঙ্গে বেশিটা সময়ই ছায়ায় কাটানোর ফলে এখানকার ঠাণ্ডাও বেশ একটু স্যাঁতস্যাঁতে।
     

    লোহাঘাটের সরকারি রেস্ট হাউজে আমাদের বুকিং – একেবারে হোটেলের ঘিঞ্জি ভিড় যেখানে, তার থেকে একটু সরে; তবে একেবারে নির্জনে মোটেও নয়। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা কম্পাউন্ডে এক ধরণের শান্তি, নীরবতা আছে। ফুলগাছে রঙিন ফুল ধরেছে, লেবুগাছে ফলে আছে সদ্য সবুজ-পেরোনো কমলা। দোতলায় বিরাট একটা চার-বিছানার ঘর পেয়েছি আমরা তিনজন। সকাল থেকে চান হয়নি; এসে ব্যাগপত্তর রেখেই ছুটলাম খেতে। এই রেস্ট হাউজে ততক্ষণে লাঞ্চ আওয়ার শেষ; তাই বেরিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলাম। গরম গরম রুটি, ডাল আর পনীরের তরকারি দিয়ে অমৃতবৎ আহার সেরে অমিতাভ দা বললো, "পেট যতটা ভরলো, তৃপ্তি যেন তার চেয়ে অন্তত ২৫% বেশি।" অমিতাভ দা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের অধ্যাপক, নম্বর দেওয়ার ব্যাপারে একটু ধরে খেলেছে সে কারণে হয়তো; আমি ঐ একই কলেজের হয়ে বলছি, ৭৫% এর নীচে আমি নম্বরই দেবো না আজকের দুপুরের এই অপরাহ্নভোজের তৃপ্তিকে। একটু পোড়া, আঁকা বাঁকা কোণার গরম রুটির স্বাদ আলাদা এ' সব তল্লাটে।

    রাত ১০-৩০

    আমাদের আশ্রমিক এই রিট্রিটের একমাত্র আশ্রমহীন দিন ছিল আজ। লোহাঘাট এসে কোথাও যাওয়ার ছিল না আজ, তাই সন্ধেটা এ'কথা - সে'কথায় কেটে গেল। রাতের খাওয়াও এখানে বেশ তাড়াতাড়ি, ন'টার মধ্যে শহর ঘুমিয়ে পড়ে কমবেশি।

    অমিতাভ দা'র সঙ্গে কথা হচ্ছিল আলমোড়ার শেষ দু' দিনের সান্ধ্য প্রার্থনা নিয়ে। ওঁ বললো, "পরশুর প্রার্থনার সময়ে – হয়তো জীবনে প্রথমবার – বিবেকানন্দকে অনেকটা সময় ধরে ভালোবাসলাম। আদর করা বলে না? – তেমনভাবে আদর করলাম বিবেকানন্দের বোধগুলোকে – যে'সব বোধের আড়ালে, কারণ হিসেবে হয়তো লুকিয়ে আছে সাঙ্ঘাতিক আঘাত, লাঞ্ছনা, অপমান।" বিবেকানন্দের আঘাতের কথা কমবেশি আমিও পড়েছি; মেলাতে পারলাম। কিভাবে আঘাতে একেবারে ছিন্নভিন্ন হতে হতেও শেষ অব্দি সেইসব ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন নিজের জীবনের ব্রতর সামনে, পড়েছি। অমিতাভ দা বলে চলে, "তিনি ব্রহ্মজ্ঞ নন শুরু থেকেই, তাই তাঁর উত্তরণ আছে, সেই উত্তরণ দেখা যায়, অনুভব করা যায়", আর আমারও মনে হতে থাকে, আমাদের এই অসমর্থ মানবজমিন থেকে সেই কারণেই বোধ হয় আমরা বিবেকানন্দকে এমন আদর করতে পারি।

    বিবেকানন্দের কথা শুনলে, তাঁর আঘাতের কথা শুনলে, উত্তরণের কথা শুনলে আমার চোখে জল আসে, কান্না পায়। প্রণাম করতেও ইচ্ছে করে না, জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে তাঁকে। আজও অমিতাভ দা'র কথা শুনতে শুনতে সেই অনুভূতি এল, তবু কাঁদতে পারলাম না। আমাদের, আমার অপারগতা – কান্নায় কোথায় যেন বাধে। এত জটিল হয়ে গেছি, এত সঙ্কোচ, এত দ্বিধা, এত দ্বন্দ্ব যে কান্নার মতো আনন্দী নদীর উৎসতেই বাঁধ দিয়ে দিই।

    আমার সেই সময় খালি মনে পড়তে থাকে ঠাকুরের কথা – কেন কে জানে। মনে হয়, কিভাবে ঠাকুর কত মানুষকে, কত বিচ্ছিন্ন, ভিন্ন স্বভাবের মানুষকে আশ্রয় দিয়ে গেছেন। তাঁদেরই একজন বিবেকানন্দ। ঠাকুরকে নিয়ে যে-সব গান লিখেছেন বিবেকানন্দ, বা তাঁর পরের গুরুভাইরা, সে সব গানে কী সরল, সহজ আনন্দ! সেই গানগুলিই যেন ঠাকুরের স্বভাব। সেই আনন্দে নিজেকে ছোট লাগে, 'আমার' বলে দাগিয়ে দেওয়া সমস্ত কষ্ট, শোক ঝরে পড়তে থাকে; মনে হতে থাকে আনন্দ এত সহজ, তবু কেবল 'আমার' বলে ডাকতে পারবো – এই অহংকারেই কি দৈন্যকে এতদিন জড়িয়ে বসে আছি?
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ১৭ অক্টোবর ২০২২ | ১২৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:78bd:8a32:3f71:***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৫৬512933
  • "মনে হতে থাকে আনন্দ এত সহজ, তবু কেবল 'আমার' বলে ডাকতে পারবো – এই অহংকারেই কি দৈন্যকে এতদিন জড়িয়ে বসে আছি?"-- এই লাইনটা খুব ভালো লাগলো। এই মনে হওয়াটা তো খুবই দামী।

    কুমায়ুনের গানের বদলে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালানো প্রসঙ্গে -- এই জিনিষটা আমি অনেকের মধ্যে অনেকবার দেখেছি। কোথাও বেড়াতে গিয়েও বহুপরিচিত জিনিষ গুলোরই খোঁজ করা। প্যারিসে গিয়েও কেউ ম্যাকডনাল্ডে খেতে চান, কাশ্মীরে গিয়ে মাছ-ভাতের হোটেল খোঁজেন। যেখানে গেছি সেখানকার স্বাদ, শব্দ, ভাষা এগুলো না নিলে সেই জায়গা বেড়ানো কি সম্পূর্ণ হয়? ঐ একই গান, একই খাবার বহুকাল ধরে শুনে-খেয়ে আসছি। দুদিন পরে গিয়ে আবারও শুনতে-খেতে পারবো। তবু কেন মানুষের ওগুলো এত আঁকড়ে থাকা? এও কি এক ধরণের "আমার" বলে জড়িয়ে থাকা? হারাতে ভয়? না অপরিচিত সবকিছুকেই ভয়? কিম্বা ফিয়ার অফ ডিসাপয়েন্টমেন্ট? যদি ভালো না লাগে?
  • অমিতাভ | 2409:4053:e13:cc91:57e8:22f6:f55e:***:*** | ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৪৫512938
  • খুব মন ছুঁয়ে গেল।
  • Shreyasi | 122.17.***.*** | ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২২512939
  • আগের  বার  গিয়েও  আমরা সবাই  রোজ  রুটি  খেতাম ।.সত্যি  ওখানকার  সাধারণ  রুটি  তরকারির  স্বাদ  ই  আলাদা . কলকাতায়  ফিরে  এসে  কদিন  শখ  করে  রুটি  খেলাম  কিন্তু  ওই  স্বাদ  পেলামনা . 
    Enjoying your travelogue.
  • Mousumi Banerjee | ১৮ অক্টোবর ২০২২ ২২:৪৪512965
  • ঠিকই। আনন্দ তো সর্বত্র। কিন্তু 'আমার' কষ্ট, দুঃখ, দৈন্য তা বুঝতে দেয় না। 'আমি'  বা 'আমার 'এই তকমা লাগিয়ে ফেলেই সমস্যা হয়ে গিয়েছে।
     
    বিবেকানন্দের বোধকে ভালোবাসা – ভালো লাগল। 
     
    আলমোড়া, মায়াবতীর সব জায়গায় বিবেকানন্দ আজও আছেন। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৯ অক্টোবর ২০২২ ০১:২৯512974
  • লং ড্রাইভে কি গান চালাব, সে এক মহা সমস্যা। স্নিগ্ধ, মন ভালো করা গান চালালে আমার ভালো বক্তৃতা শোনার কি ক্লাস করার অনুভূতি হয়, আবেশে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে। স্নেহশীল শিক্ষকমশাইরা বা দিদিমনিরা ক্ষমা করে দিতেন, নিরুপায় বক্তারা মেনে নিতেন। কিন্ত রাস্তা অমনোযোগ ক্ষমা করে না। পরীক্ষার ফল বারবার একই হওয়ায় বিগত দুই যুগ ধরে বাপের ভাষায় লারেলাপ্পা গানের ঝুলি নিশ্চিত করে গাড়ি চালানো শুরু করেছি। এখন অবশ্য সে পর্বও ফুরিয়ে গেছে। তাই ঘোরাঘুরির কাহিনি খুব  মন টানে।
     
    ভালো লাগছে, চলুক। 
  • শুভংকর | ১৯ অক্টোবর ২০২২ ১২:৫৩512994
  • @ অমিতাভ চক্রবর্ত্তী, @Shreyasi, @Mousumi Banerjee, ধন্যবাদ।❤️
  • শুভংকর | ১৯ অক্টোবর ২০২২ ১২:৫৬512995
  • @kk আমারও তাইই মনে হয়। familiarity চাওয়া, অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া রুটিন থেকে বেরোতে না চাওয়া। এই সবের মধ্য দিয়ে একটা comfort zone কে ধরে রাখতে চায় বাঙালি।
  • Reeta Bandyopadhyay | ২৬ অক্টোবর ২০২২ ২০:৫৯513210
  • চাট্টিখানি মাছভাত, এটা বাঙালি সর্বএ খোঁজে ।
  • dc | 2401:4900:1cd0:4b89:407c:bc7c:5768:***:*** | ২৬ অক্টোবর ২০২২ ২১:২৪513212
  • "চাট্টিখানি মাছভাত, এটা বাঙালি সর্বএ খোঁজে"
     
    কে বললো? আমি কোথাও বেড়াতে গিয়ে মাছভাত খুঁজি না, আমার অনেক বাঙালি বন্ধু আছে তারাও খোঁজে না। যেখানে ঘুরতে গেছি সেখানকার খাবারই যদি না খাবো তো ঘোরা কিসের?  
  • r2h | 208.127.***.*** | ২৬ অক্টোবর ২০২২ ২১:৫৪513213
    • শুভংকর | ১৯ অক্টোবর ২০২২ ১২:৫৬
    • ...familiarity চাওয়া, অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া রুটিন থেকে বেরোতে না চাওয়া। এই সবের মধ্য দিয়ে একটা comfort zone কে ধরে রাখতে চায় বাঙালি।
    এটা শুধু বাঙালি না, ভারতের সব জায়গার লোকই চায়। দেশ থেকে মশলা আনানো, বাইরে খাওয়া মানেই দেশি রেস্তোঁরা এই তো দেখি।
    অন্য দেশের লোকেদের ব্যাপারটা অবশ্য জানি না, অল্পদিনের জন্যে অন্যত্র গেলেও অভ্যস্ত জিনিস খোঁজে কিনা। আমেরিকানরা মোটামুটি অ্যাড্ভেঞ্চার করতে ভালোবাসে দেখি, বৃটিশরা তো আমাদের থেকেও বেশি।
    পন্ডিচেরির উপকন্ঠে দেখা যায় যেসব দোকানে একটু ফরাসী ধরনের খাবার পাওয়া যায় সেখানেই ইওরোপিয়দের ভিড়, লোকাল খাবারে তেমন মন নেই। দোষ দেওয়া যায় না, উত্তাল দক্ষিনী ঝাল ওদের সইবে না।
    উত্তর পূর্বে আগে ওএনজিসির কাজে অনেক রাশিয়ান প্রকৌশলীর দীর্ঘমেয়াদী আস্তানা ছিল, তাঁরা নিজেদের ক্যান্টিনে নিজেদের ধরনে রান্নার বাইরে কিছু খেতেন টেতেন না তেমন, নিজেদের সংস্কৃতির চর্চা করতেন নিজেদের আস্তানায়। ব্যতিক্রম কী আর ছিল না, তবে ঐরকমই মোটের ওপর ধারা ছিল। তাঁরা ট্যুরিস্ট নন যদিও, বেড়াতে গেলে কী করতেন তা আমার জানা নেই।

    আমি আবার খাদ্য পানীয়তে সর্বদা লোকালপন্থী, কিন্তু সাহিত্যে বাংলা না হলে রোচে না, গান বাজনাতেও ভারতীয় সঙ্গীতের বাইরে খুব অল্পই অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারি। উৎসাহ, দীক্ষা, চর্চা কিছুই নেই, থাকলে ভালো হত, নেই যখন কী আর করা। ভিসুয়াল মাধ্যমে আবার বাছবিচার নেই। লং ড্রাইভে চাই বাংলা গান! 

    সেদিন এক বাড়িতে খেলাম কোম্বুচা। বেশ লাগলো।

    তবে এই জিনিসটা ঠিক কিভাবে দেখবো তা নিয়েও আমার একটু দ্বিধা আছে। কেউ প্রকৃতি দেখতে চায় কিন্তু অভ্যস্ত খাবার চায়, বা খাবার চাখতে চায় কিন্তু কমোড ও হাগজে অভ্যস্ত হতে মন নেই, নাইট লাইফে আগ্রহ কিন্তু মিউজিয়াম দেখতে অনীহা - অসুবিধে কী। আপরুচি সবকিছু, অ্যারেঞ্জ করতে পারলে।

    তবে, যেকোন জাতির জাতিগত ইডিওসিনক্র‌্যাসির বিবরনে ফার্স্ট পার্সন প্রায় সর্বদাই ব্যতিক্রমঃ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন