এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • কোথায় তোমার দেশ গো বন্ধু? পর্ব ১৪

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৬ জানুয়ারি ২০২২ | ১৪৯৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)

  • “ভোর এল ভয় নিয়ে সেই স্বপ্ন ভুলিনি এখনও”
    অন্ধকারে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।
     কার লেখা? ভুলে গেছি। কিন্তু এখন আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছে। আমার বড্ড শীত করছে, কাঁপুনি দিচ্ছে। আসলে জলটা বড় ঠাণ্ডা, আর সাঁতার কাটা যাবে না। তাড়াতাড়ি পাড়ে উঠে গা-মাথা মুছে জামাকাপড় পরে ফেলব। নইলে উঃ, ঠান্ডা যেন হাড়ের মধ্যে ঢুকছে।  কিন্তু পাড়ে যেতে এতক্ষণ লাগছে কেন? হাত-পা চালাচ্ছি প্রাণপণে, এগোতে পারছি না? এ কোথায়?
    আমি তো নাকতলা জোড়াবাগানের পুকুরে নেমেছিলাম, সুভাষদের বাড়ির সামনে। এই ঝুপ্পুস বৃষ্টিভরা দুপুরে চারদিকে সব ভোঁ ভাঁ। সুভাষই বা কোথায় গেল? ও কি আমার সংগে স্নান করতে নামেনি? কিন্তু আমার পা শ্যাওলায় জড়িয়ে যাচ্ছে যে! আরে সামনে ভেসে আসছে কচুরিপানার দাম, কী বোটকা গন্ধ রে বাবা! কিন্তু এই পুকুরে তো কোন কচুরিপানা ছিল না! গত সপ্তাহেও ঘাম ঘাম রোদ্দূরে বিদ্যাসাগর কলোনির দুরন্ত ছেলের দল এপার ওপার করেছে। উঠতি বয়েসের মেয়েরা পাশের ঘাটের সামনে বুকে কলসি ধরে ঝপাং ঝপাং সাঁতার কেটেছে। তাহলে আমি কোন পুকুরে নেমেছি? আর এখন মেঘলা দুপুরে কেন সন্ধ্যের অন্ধকার নেমেছে? এত শুনশান !
    একটা অজানা ভয়। এবার যে করে হোক পাড়ে উঠতে হবে। হাঁচোড় পাঁচোড় করে হাত পা চালাই। কিন্তু কোন অদৃশ্য শক্তি আমাকে পা ধরে জলের নীচে টানছে, কচুরিপানার নীচে নিয়ে যাবে।  জোড়া পায়ে লাথি চালাই। তক্ষুণি আমার দু’হাত দূরে একটা মাথা ভেসে ওঠে। একটা ছেলের  ন্যাড়ামুণ্ডি মাথা, ফোকলা মুখে খল খল হাসি। একে তো আমি চিনি, ওই হাসি, ওই ন্যাড়া মাথা!
     স্কুলের বেড়া সদ্য ডিঙিয়েছি। কলেজ শুরু হয়নি। প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার হয়েছে। আমাদের মনে পুলক। বাড়ির এক ইঁটের তৈরি পাঁচিলে আমিও রঙ এনে এঁকে দিয়েছি কাস্তে- হাতুড়ি -তারা। রাত্তিরে পাড়ায় ছোটখাট স্কোয়াড বেরোলে তাতে ভিড়ে গিয়ে শ্লোগান দিচ্ছিঃ
       “যুক্তফ্রন্ট সরকার,-- সাথে থাক জনতার!
          কেন্দ্রীয় সরকার, -- দাবি মানো বাংলার”!
    শনিবারের দুপুর বেলা,  একটা বিকট আওয়াজে কাকিমা ঠাকুমা দাদুর ভাত ঘুম ভেঙে গেল। আমি দেখতে বেরোলাম কী ব্যাপার! বোমফাটার বিকট শব্দ, আসছে পুকুরপারের নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়িটির থেকে। দু’মাস আগে ছাদ ঢালাই হয়েছে। কিন্তু জানলা দরজা লাগেনি। কাজ বন্ধ রয়েছে, বোধহয় মালিকের পয়সায় টান পড়েছে।
    আমি বুঝে গেছি, এটা গন্ধক নয়, লাল-সাদার বোম। অর্থাৎ আর্সেনিক সালফাইড ও পটাশিয়াম ক্লোরেট মিশিয়ে তৈরি , তাই আওয়াজটা গুমম- গুমম- মম্‌  না হয়ে কড়-কড়-কড়াৎ! জানতাম কংগ্রেসের কিছু ছোট স্কোয়াড পেটোবাজি করে পাড়া দখলের তালে আছে। আমরা ভয় পাইনি। জানি, ওদের দিন গেছে। এখন পুলিশ আমাদের। জ্যোতি বসু পুলিশ মন্ত্রী।
    কিন্তু আমাদের পাড়াটা শান্ত, এখানে বোমের আওয়াজ?
       পুকুরের ওই পাড়ে একটু ঝোপঝাড় জঙ্গলমত। তার মাঝখানে  ওই বাড়িটা--ভারা বাঁধা। কাছে গিয়ে উঁকি মারি। হাওয়ায় বারুদের কড়া গন্ধ, তাতে মিশেছে সুতলি পোড়া।  কাঁচা মেজে, দুটো ছেলে পড়ে আছে। ঘরের ভেতরে দেয়াল ঘেঁষে পড়ে থাকা ছেলেটার  হাতের পাতা রক্তাক্ত। ঘরের কোণায় ক’টা সুতলি বোমের টুকরো টুকরো অবশেষ। মনে হয় একসঙ্গে ফেটেছে। অন্য ছেলেটা ভারার কাছে শুয়ে আছে, একটা পা বাঁশের ধাপের ফাঁকে আটকে রয়েছে। 
    নড়ে উঠল ওর শরীর। গোঙানির মধ্যে শুনতে পেলাম –জল! জল! শিবুদা জল!
    আরে, একে তো আমি চিনি। আমাদের পাড়ার নয়। এর মা আমাদের পাড়ায় বাসনমাজা ঘরমোছার ঠিকে কাজ করে। এর নাম তো বাদল। দু’মাস আগে ওর বাড়িতে কেউ মারা যাওয়ায় মাথা ন্যাড়া করেছিল। পুকুরের ওপাড়ের কলোনিতে ওদের টালির বাড়িটাও  চিনি। ওর মা দু’দিন কাজে না এলে ডাকতে যেতাম। বাদল বোম ফেটে মরে গেছে! আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। ও কবে এসব লাইনে এল?
    কিন্তু এতসব তখন ভাবার সময় নেই। বাদল জল চাইছে, বেঁচে আছে। আমি জল কোথায় পাব? কাকে খবর দেব? ও আদৌ বাঁচবে কি? লোকে যদি আমাকে বোমাবাঁধার দলের বলে সন্দেহ করে? যত বাজে কথা! আগে জল দিতে হবে। পার্টি অফিসে গিয়ে খবর দিতে হবে।
    বাদলের চোখ খুলে যায় । আমাকে দেখে অস্ফুটে বলে-জল!
    একটা অজানা ভয়ে আমার হাঁটু কাঁপতে থাকে।  একদৌড়ে ঘরে পৌঁছে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ি। ঠাকুমাকে বলি- আওয়াজ কোত্থেকে এল বুঝতে পারলাম না। মনে হয় পাশের কলোনি থেকে।
     না, বাদল আমাকে চিনতে পারেনি। ওর চাউনিতে সেরকম কিছু ছিল না।
    আমাকে ঘুমিয়ে পড়তে হবে, মাথা ঢেকে ফেলি। ঘুম আসে না। সন্ধের মুখে বিমান আর সন্দীপ এল। জানতে পারলাম – বাদল বোম বাঁধছিল দোতলায় আর পটলা একতলায়। বাদল একহাতে বাঁধা বোম নিয়ে ভারা দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়। ফাটে হাতের বোমা এবং সেই ভাইব্রেশনে পটলার বানানো বোমাগুলোও ফেটে যায় । দুজনেই বাঁচে নি। এদের নাটের গুরু পাড়া ছেড়ে পালিয়েছে, পুলিশ খুঁজছে। কিন্তু ওরা উদ্ধার হয় একঘন্টা পরে। যদি আগে কেউ টের পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেত?
    --না, না। তাহলেও বাঁচত না। ওইভাবে পড়ে গিয়ে বোমা ফাটলে কেউ বাঁচে নাকি? সংগে সংগে মরে গেছল। আঙুল তো আগেই উড়ে গেছল।
    --তুই কি করে  জানলি? সত্যিই তো, দুজনেরই হাতের চেটো উড়ে গেছল। বীভৎস ব্যাপার। আচ্ছা, ওরা যদি কংগ্রেস না করে আমাদের পার্টি করত তাহলে বোধহয় বেঁচে যেত!
    তলপেটে প্রচন্ড চাপ, ঘুম ভেঙে গেছে।
    আচ্ছা, এতদিন পর এই স্বপ্ন। কেন?
    গতকালের সেশনের কোন প্রতিক্রিয়া? কাল সতীশ ভাউয়ের সংগে তর্কাতর্কির ফল?
    একটা  ব্যাপার খেয়াল করেছি। সতীশভাউ প্রিয়ংবদাকে ভয় পাচ্ছেন। সেদিনের ঘটনা ওনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল থেকে উনি আমার ব্রেনওয়াশ করতে আসার সময় কালুকে নিয়ে এসেছিলেন। কালু হোল রান্নাঘরের অ্যাসিস্ট্যান্ট শেফ, বাংলায় কী বলা যায় ? সহকারী পাচক!
    গাঁট্টাগোট্টা ঢিপকপালে কালু সত্যিই কালু। আমার গায়ের রঙের থেকেও এক পোঁচ বেশি। এতদিনে বুঝে গেছি এই শ্রীমানও আসলে সিকিউরিটি পার্সন। এখানে সবাই তাই।  ও কথা খুব কম বলে। সম্ভবতঃ বাঙালী নয়, দক্ষিণের কোন রাজ্যের অধিবাসী। রান্নাঘরের একপাশে দেয়ালে একটা ডার্টবোর্ড লাগানো রয়েছে। দু’একবার নাস্তা আনতে গিয়ে দেখেছি কালু একমনে লক্ষ্যভেদ করে চলেছে। ওর প্রত্যেকটা থ্রো একেবারে বুলস আই না হলেও সবচেয়ে ছোট সার্কলের মধ্যেই গিয়ে বিঁধছে।
    আমাদের দু’জনের শাস্ত্রবিচারে কালুর কোন উৎসাহ নেই। ও দরজার কাছে একটা টুল নিয়ে বসে থাকে আর নিজের মনে মোবাইলে গেম খেলে। সম্ভবতঃ ভরতের মত ওরও প্রিয়ংবদাকে কন্ট্রোল করার মন্ত্র জানা আছে।  তবে ঘন্টা দেড় ঘন্টা পরে একবার গিয়ে চা নিয়ে আসে। এটা ভাল; কারণ প্রিয়ংবদা চা বানাতে পারে না।
    একবার সিরাজুল ওকে বলেছিল—সখী প্রিয়ংবদা, একটু আদা দিয়ে চা করে খাওয়াবে?
    ওর বুকের উপর দুটো লাইট নিভে গিয়ে একটা নীল আলো দপ দপ করে উঠল। আর শুরু হোল চায়ের কেটলি থেকে বাষ্প বেরনোর মত সুঁই সুঁই আওয়াজ। তিন চারবার এ’রকম হওয়ার পর প্রিয়ংবদার ঘ্যাড় ঘেড়ে আওয়াজে শোনা গেলঃ এসব—কথা—আমার—পছন্দ—নয়।

    গতকাল সতীশভাউ রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের অধিকারের পক্ষে ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন। বলছিলেন – সমাজতাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েবার বুঝিয়েছেন যে রাষ্ট্রের সংজ্ঞার মধ্যেই বলপ্রয়োগের একচেটিয়া অধিকার নিহিত রয়েছে। নাগরিকের সেই অধিকার নেই, থাকতে পারে না। আরে বাবা! বাড়িতে বা স্কুলে দুটো ছেলে মারামারি করলে বড়রা দুটোকেই দুটো থাপ্পড় মেরে আলাদা করে দেন না? তাদের সেই অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুললে কোন সিস্টেম চলতে পারে? খেলার মাঠে রেফারির অফসাইডের ডিসিশন বা লাল কার্ড দেখানোর রাইট আছে কি নেই?
    তাই একজন নাগরিক কাউকে মারলে বা হত্যা করলে বা রেপ করলে আদালতে মামলাটা হয় রাষ্ট্র বনাম মিস্টার এক্স। কমিউনিস্ট ব্যবস্থাতেও ডিক্টেটরশিপ অফ প্রলেতারিয়েত। খেয়াল কর মাস্টার—ডেমোক্র্যাসি অফ প্রলেতারিয়েত নয়।
    আমি বলছিলেম যে কোন অধিকারই অসীমিত হতে পারে না।  কোথাও না কোথাও লাগাম টানতে হবে।  ক্রিকেট মাঠেও আম্পায়ারের ডিসিশন নিয়ে আজকাল ডিজিটাল রিভিউ চাওয়া যায়। নইলে যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ! উদাহরণ দিচ্ছিলাম দশবছর আগের একটি ঘটনার। নাগা অঞ্চলে খনিতে কাজ করতে যাওয়া ক’টি ছেলে ট্রাকে করে তিরিশ কিলোমিটার দূরের গাঁয়ে ফিরছিল। সেদিন ওরা বড় রাস্তা ছেড়ে একটা শর্টকাট রাস্তা ধরেছিল। একটি পাহাড়ের বাঁকে সিকিউরিটি ফোর্সের অ্যামবুশে অধিকাংশ মারা যায়।  সিকিউরিটি ফোর্সের বক্তব্য –ডেফিনিট খবর ছিল ওই ট্রাকে নাগা বিদ্রোহীদের একটা দল আসছে।
    কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের বিছানায় শুয়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ২৩ বছরের ছেলেটি বলেছিল—‘ডায়রেক্ট মারিসে’।  কোন ওয়ার্নিং দেয়নি, গাড়ি থামাতে বলেনি। [1]
    কিন্তু সরকারের দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া এর কোন প্রতিকার হয়নি। । কারণ আফস্পা আইন। আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট। ১৯৫৮ সালে  পাস  হওয়া এই ছোট্ট আইনে ছয়টি ধারা। যাতে উত্তর পূর্ব অঞ্চলের অশান্ত এলাকায় সামরিক বাহিনীর হাতে অসীমিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাদের সন্দেহের বশে গুলি করে মেরে ফেলার অধিকারও রয়েছে। তাই দশবছর আগে যা ঘটেছিল তা দেশের আইন মেনেই ঘটেছিল, কী বলেন ভাউ? কিন্তু ওই ছেলেগুলো তো এই দেশেরই নাগরিক, আমার মত ‘ডাউটফুল’ নয়।
    সতীশ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে একটা সিগারেট ধরান, আমিও নিই। তারপর উনি হঠাৎ ‘আপনি’  বলা শুরু করেন।
    --কী জানেন মাস্টার , আমি অনেক ভেবেছি। এই কোল্যাটার‍্যাল ড্যামেজ আমাদের ভবিতব্য, অ্যান্টিবায়োটিকের সাইড এফেক্ট।  আমি জানি, আপনি শর্মিলা ইরমের ১৬ বছরের অনশনের কথা তুলবেন।  মণিপুরের মনোরমা থাংজ্যামের আসাম রাইফেলস এর হাতে উগ্রবাদীদের সংগে যোগাযোগের সন্দেহে ঘর থেকে তুলে নিয়ে নৃশংস অত্যাচার ও গোপনাঙ্গে গুলির উদাহরণ দেবেন। তারপর কী হোল? ছ’জন মহিলা সামরিক বাহিনীর ক্যাম্পের সামনে গিয়ে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে বুক চাপড়ে বলল—আয় মিলিটারি, আয়! আমাদের রেপ কর!
    সমস্ত খবরের কাগজে রিপোর্টিং হোল। সম্ভবতঃ দেশের বাইরেও ঘটনাটি সিভিল সোসাইটিকে নাড়িয়ে দিল। কিন্তু তারপর?
    আমি একটাই কথা বলব, ওই আফস্পা আইন বাতিল হয়েছে? হয়নি। সব দলই বিপক্ষে থাকলে এই আইনের সমালোচনা করে, কিন্তু ক্ষমতা পেলে বাতিল না করে আরেকটা কমিশন বসায়, ব্যস্‌। খুব বেশি হলে দশ বছর পর নিহতের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। [2]
    আরেকটু শুনুন। আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহেরুজি পরাধীন ভারতে সিডিশন অ্যাক্টের শিকার হয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন স্বাধীন ভারতে এই আইন বাতিল হবে। কিন্তু উলটে ওই আইন দিনে দিনে আরও পাকা আরও কঠিন হয়েছে। যদিও সংসদে বিতর্কের সময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন ১২৪(এ) ধারায় বর্ণিত সিডিশনের অপরাধ highly objectionable and obnoxious.  উনি এটাও বলেছিলেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ধারাটির থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়া উচিত। [3]
    --বুঝে গেছি। সেইজন্যেই তো মার্ক্স ও লেনিন রাষ্ট্রব্যবস্থাটা তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। বলেছিলেন ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবে।
    --ফের বাজে কথা ! শেষ হয়েছে? অন্ততঃ ক্ষয়ের কোন লক্ষণ দেখা গেছে? নাকি আজকে রাষ্ট্র আরও শক্তিশালী হয়েছে? শুনুন, নেহেরুও বলেছিলেন যে কাশ্মীর থেকে ধারা ৩৭০ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাবে। কিন্তু ষাট সাল কেটে গেল, ওই ধারা আলাদা সংবিধান আলাদা পতাকা রয়েই গেল। শেষে আমাদের সরকার কলমের এক খোঁচায় --।
    আমি দেখলাম আলোচনাটা বিপজ্জনক দিকে যাচ্ছে। তাই কথা ঘোরাই। কোল্যাটারাল ড্যামেজ! ওই আরেকটা ঢপ! রাষ্ট্র নিজের কুকীর্তিগুলো ঢাকতে ওই সব শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে। সাধারণ নাগরিকের জীবনের কোন মূল্য নেই।
    সতীশ এবার মুচকি হাসেন।
    -মেক্সিকোতে সুপারি কিলার পাঠিয়ে ট্রটস্কিকে মেরে ফেলার ঘটনাকে কীভাবে দেখেন মাস্টারমশাই? লোকটা কিছু লেখাপত্তর নিয়ে মেতে ছিল।   পত্রিকায় প্রবন্ধ টবন্ধ লিখে নিজের আহত ‘ইগো’কে  চুলকে নিচ্ছিল, ওকে মেরে ফেলা কি একান্ত জরুরি ছিল ? ও কি সত্যিই সোভিয়েত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে  বিদেশের সংগে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল?
    আমার মাথায় কিলবিল করে কিছু বেখাপ্পা চিন্তা। কিন্তু এসব কি সতীশভাউয়ের সঙ্গে শেয়ার করা যায়?
    যেমন আমি জানি মার্ক্সীয় চিন্তায় রয়েছে সমাজতন্ত্রের পর রাষ্ট্রের ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাওয়ার কল্পনা।[4] এর ফলে একশ’ বছর আগে কিছু কমিউনিস্ট ভেবেছিলেন যে রাশিয়ায় স্তালিনের আমলে রাষ্ট্রের ক্ষয় শুরু হয়েছে। সাম্যবাদী পত্রিকা লেবার মান্থলিতে এনিয়ে ১৯৩১ সালে একটা প্রবন্ধও বেরিয়েছিল।[5] কিন্তু কয়েকমাস পরে ওই পত্রিকাতেই স্তালিনের মন্ত্রীসভার চেয়ারম্যান মলোটভ লিখলেন যে শ্রেণীসংগ্রাম বন্ধ নাহয়ে আরও তীব্র হয়েছে। তাই রাষ্ট্র এখন কিছুদিন থাকবে। [6]
    কিছুদিন? দশবছর আগে কোভিডের মহামারীর মধ্যেও ওদের রাষ্ট্রপতি পুতিন গণভোট করালেন—উদ্দেশ্য যাতে উনি প্রায় আজীবন রাষ্ট্রপতি থেকে যান। চীনের শি পিং তো খোলাখুলি অমন আইন পাশ করিয়ে নিলেন—যাতে উনি আজীবন পার্টির , সৈন্যবাহিনীর এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকে যান। ভাবা যায় !
    এই যুক্তিতে আজও রাষ্ট্র রয়েছে এবং দিনের পর দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
    --কী হোল মাস্টার! কোন দুনিয়ায় আছ? যা বললাম কানে যায়নি?
    ভাউয়ের গলায় তিক্ততা। ফের আপনি ছেড়ে তুমিতে নেমে এসেছেন। আমি আশ্বস্ত করি—মন দিয়ে শুনছি।
    হ্যাঁ, যা বলছিলাম রাজনীতি এবং দেশের স্বার্থ --এর সংগে বলপ্রয়োগ থাকবেই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রাষ্ট্রসংঘের থেকে যে শান্তি মিশন যায় তাতে বিরাট সশস্ত্র সেনা যায় না? শান্তির জন্য শক্তি দরকার, অহিংসার জন্য হিংসা।
    --দেখুন, উনিশ শতকের প্রুধোঁ, বাকুনিন ইত্যাদি নৈরাজ্যবাদী দার্শনিকের মত মার্ক্সও চাইতেন ঈশ্বর ও রাষ্ট্রের বিলোপ।   তাঁরা রাষ্ট্রের নিপীড়নের শক্তির এবং স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। ভাবতেন-  স্বেচ্ছায় গঠিত সিভিল সোসাইটির সংগঠন এবং জনতার মিলিশিয়া রাষ্ট্রের পরিবর্ত হবে । মানুষ নির্ণয় নেবার অধিকার অন্য কোন শক্তিকে—ঈশ্বর বা রাষ্ট্র—অর্পণ করবে না।
    --‘ওরে বাবা! তুমি তো একেবারে নাকতলার মোড়ে স্ট্রিট কর্নারে বক্তৃতার মোডে এসে গেলে! নাকি স্কুলে মার্ক্সবাদী পাঠচক্রের আসরের মাস্টার? আরে  চোখ খুলে দেখ, তোমার মার্ক্সও  তাঁর শ্রেণীহীন সাম্যবাদী সমাজে শান্তি রক্ষার জন্য গণমিলিশিয়ার জরুরত বোধ করেছিলেন।
    আসলে কি জান, মানুষ হচ্ছে ল্যাজবিহীন বাঁদর। রাস্তায় বাঁদরওলার খেলা দেখানোর সময়েও হাতে একটা লাঠি থাকে কিনা? এটা ইন্দিরা গান্ধী বুঝেছিলেন। তাই এমার্জেন্সির সময় গান্ধীজির হাতের ডান্ডাটা ছিনিয়ে নিয়ে জনগণের পোঁদে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যস, রেলগাড়ি টাইম টেবল মেনে চলতে লাগল। তোমাদের রাইটার্সে এবং ডালহৌসি স্কোয়ারে লোকজন ঠিক সময়ে অফিসে এসে চেয়ারে বসল এবং গুলতানি ছেড়ে কাজ লেগে গেল।  সব ঠিকঠাক, তখন বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খাচ্ছিল।
    তারপর কারও ভুল পরামর্শে উনি ডান্ডাটা যেই  বার করে নিলেন অমনই শুরু হোল প্যান্ডেমোনিয়ম, ক্যাওস – একেবারে নরক গুলজার! আমাদের সর্বাধিনায়ক দেখে শিখেছেন। ওই ভুল আর হবেনা। কিছু বুঝলে’?
    হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। আর নিতে পারছিলামনা । উঠে পড়ে বললাম-আজ এই পর্য্যন্ত ভাউ। আপনি যা দিলেন তার উত্তর আমার কাছে নেই।
    চলে আসি ঘরে। বিকেলের চা আর চানাচুর খেয়ে বিছানায় এসে বসেছি কি সিরাজুল হাজির। যথারীতি  ওর মুখে একটা ফিচেল হাসি কাট আউটের মত চিপকে আছে। করোনার তিননম্বর ঢেউ পর্য্যন্ত সর্বাধিনায়কের হাসিমুখের অমন কাট আউট মুখে মাস্কের মত করে লাগিয়ে অনেকে জনসভায় আসত। বোঝা যেতনা আসল চেহারাটি কেমন।  সে এক দিন গেছে!
    এখন সবকিছুই ডিজিটাল। ফলে ভোট হয় ঘরে বসে স্মার্টফোনে- ইলেকশন অ্যাপের বোতাম টিপে। জনসভার প্রশ্নই ওঠে না। তাই কাট আউটের দিনও ফুরিয়েছে।
    সে এসেই শুরু করল—কি স্যার, গোমড়ামুখ ক্যানো? আজকের আলোচনা চক্র জমেনি? নাকি বৌদির কথা মনে পড়ে মন খারাপ?
    আমি আজকের ভাউপর্বের রানিং কমেন্টারি ওকে শুনিয়ে দিলাম। তারপর বললাম একজন দলত্যাগী প্রাক্তন বামমার্গী , অধুনা দক্ষিণাপণ, আমাকে স্টেট অ্যান্ড রেভলুশন নিয়ে ফান্ডা দেবে আর আমি চুপচাপ বাধ্য ছাত্রের মত শুনব –এটা ঠিক মেনে নিতে পারছি না।
    সিরাজুল খ্যাঁক খ্যাঁক করে বিচ্ছিরি রকম হাসতে লাগল। বলল আসল কথাটা বলুন স্যার, কোথাও ওই ভাউয়ের বাকতাল্লায় আপনার মনের কোন গোপন তন্ত্রীতে নাড়া পড়েছে। ঝংকার উঠছে।
    --কী বলতে চাইছ?
    --বলছি আপনার বুকের সেতারে তরফের তার রিনরিন করে উঠেছে। আপনি অবাক হচ্ছেন, এটা কী করে হয়? মার্ক্সবাদের ক্লাস নেওয়া মাস্টারমশাই গাইছেন -রঙ দে বাসন্তী চোলা! কিন্তু তাই হচ্ছে। অথচ আপনি মন থেকে ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছেন না। ঠিক বলছি?
    --দেখ, ওর কিছু কথা তো ঠিক। রাষ্ট্র ঘষে ঘষে ক্ষয়ে যাওয়ার বদলে এখন এক দৈত্যাকার কিংকং । শুধু ভারতে নয়, সর্বত্র। রাষ্ট্রের চোখ ঘুরে বেড়ায় আমাদের ব্যক্তিজীবনের অলিগলিতে। আমরা কী খাই কী পরি, কেমন সব বন্ধুবান্ধব, কাকে ভোট দিই—সব বিগ ব্রাদার জেনে যায়। তাহলে?
    --তাহলে আর কি? সোজা সংঘং শরণম গচ্ছামি!
    --দেখ, ফালতু কথা বলবি না। আমাকে রাগাতে চাইছিস?
    --কেন্ ঢঙ করছেন স্যার? আপনি কবাড্ডি খেলতে গেছলেন, কিন্তু বিপক্ষের ক্ষমতার আন্দাজ না নিয়ে। ভেবেছিলেন গাছেরও খাবেন, তলারও কুড়োবেন। বুঝতে পারেননি যে একটা বড় দাবা খেলায় আপনি একটা বোড়ে মাত্র। আপনি এখানে এসেছেন ওদের হয়ে কিছু কাজ করবেন সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে –ভুল বলছি?
    --তুই এসব কী করে জানলি?
    --ওসব ছাড়ুন। ঠিক বলেছি কিনা ?
    --ওরা আমাকে ছেড়ে দেবে। বৌ মেয়ের মুখ দেখতে পাব। আর কিছু নয়। আমি তো খালি স্মৃতি থেকে পুরনো কথা লিখছি। যার থেকে ওরা বাম মানসিকতার গড়ে ওঠার একটা ছবি পাবে।
    -হুম্‌ আপনার অবস্থা দেখে আমার কলেজের হোস্টেল লাইফের একটা কথা মনে পড়ছে। আমার রুম মেট ছিল চন্দোয়ানি। উত্তরাঞ্চলের ছেলে। ওর বিছানার পাশে ওয়ার্ডরোবের গায়ে একটা পোস্টার সাঁটা ছিল, তাতে লেখা – আ কিস্‌ ইজ অ্যান আপার ইনভাইটেশন ফর লোয়ার ইনভেশন। আপনার সেই দশা।
    --গেট আউট! জাস্ট নাউ!
    আমি রাগে কাঁপতে থাকি। ও বেরিয়ে যাবার আগে আমাকে একবার পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে।
    --যাচ্ছি। আর আসব না। কিন্তু এটা একটা মেটাফর। এইভাবে একটু একটু করে আপনি কোথায় যাচ্ছেন ভেবে দেখবেন। মেফিস্টোফিলিসের ব্যাপারটা এমনই হয়।
    খালি ঘর। আমার গরম লাগছে। কম্বলটা পা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিই। তারমানে এখন শীত গেছে। ফাগুন মাস? খেয়াল হয় বাইরের বাগানে একটা কোকিল ডাকছে, অনেকক্ষণ ধরে। আমি শুনতে পাইনি। আমার মাথা ধরেছে। রাত্তিরে খাব না।
    লাইট নিভিয়ে দিয়ে একটা হালকা চাদর টেনে নিই।
    দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙল। চোখের ভেতরে ছুঁচ ফুটছে। দরজা খুলে অবাক। ভরত মন্ডল। হাতে একটা প্রেসার মাপার যন্ত্র। পেছন থেকে উঁকি মারছে সিরাজুলের মুখ। ওর হাতে একটা থালা।
    --ও বলল আপনার নাকি শরীর খারাপ? প্রেসার বেড়েছে?
    আমি কিছু বলার আগেই ও আমাকে বিছানায় বসিয়ে ডানহাতের আস্তিন সরিয়ে নিপুণ হাতে একটা রবারের পাতলা নল বেঁধে দিয়ে পাম্প করতে থাকে। শেষে যন্ত্রটি গুটিয়ে নেবার সময় মাথা নেড়ে বলে- বিশেষ কিছু নয়, সামান্য সিস্টোলিক বেড়েছে।  এবার খেয়ে নিন, যতটুকু ইচ্ছে করে। নইলে আমাকে উপরে জবাবদিহি করতে হবে।
    ও চলে গেলে সিরাজুল এগিয়ে এসে সামনের ছোট স্টুলে থালাটা রাখে। তারপর চেয়ারটা টেনে ঠিক করে দেয়।  
     তিনটে রুটি, এক বাটি ডাল ও আলুসেদ্ধ মাখা, একটা কাঁচালংকা ও পেঁয়াজ কুচি।
    কোন কথা না বলে খেতে শুরু করি। মাথার ব্যথা কমছে।

    ইছামতী নদী বইছে। তার কাছে একটা গ্রাম।  আমরা এই গ্রামে বেড়াতে এসেছি। আট বছরের তারিণী আর সাতবছরের সবিতা বা সুবি। ওর একমাথা কোঁকড়ানো চুল। শ্যালদা থেকে কোন ট্রেনে যেন চড়েছিলাম? নাকি বাসে? এই জায়গাটা কেমন অস্পষ্ট। আরে অস্পষ্ট তো নয়? এটা টাকি, না না বসিরহাট। দূর বোকা, এই জায়গাটাকে বলে বনগাঁ। শুনিসনি বনগাঁয়ে শ্যাল রাজা? তুই হলি সেই শেয়াল রাজা। ভুঁড়ো শেয়াল কোথাকার!
    সব বাচ্চাগুলো হেসে ওঠে। সুবি আমাকে কাঁচকলা দেখায়। আমি ওকে তাড়া করি। কিন্তু ও একটা খরগোসের মত দৌড়ুতে থাকে। হ্যাঁ, সেদিনও নদীর পাড়ে একটা ঝোপের কাছে খরগোস দেখেছি। আমি ওকে তাড়া করি।  ও একবার পেছন ফিরে মুখ ভেঙচে ফের দৌড় লাগায়। আমি প্রায় ধরে ফেলেছিলাম, কিন্তু শেষ মুহুর্তে ও নীচু হয়ে আমার হাত গলে পালিয়ে গিয়ে উলটো দিকে দৌড়ুতে থাকে। আমি হাঁফাতে হাঁফাতে ফের তাড়া করি। আমাদের দূরত্ব কমে আসছে। একটা গাছের নীচে এসে ও হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। ঠিক সিনেমায় যেমন দেখায়। নায়িকা হোঁচট খাবেই, তারপর ভিলেন –,
    ও কেঁদে ফেলে। আমাকে মেরো না। আমি তো খেলছিলাম।
    ওর হাত ধরে টেনে তুলি। হাঁটুর কাছটায় ছড়ে গিয়েছে, রক্ত বেরোচ্ছে। ফ্রকে একটু ধূলো কাদা। চারদিকে তাকাই। কেউ কোথাও নেই। অন্য বাচ্চারা বোধহয় পিছিয়ে পড়েছে।  কোথায় এসেছি? নদীর উপরে একটা বাঁশের সাঁকো। ঘন গাছপালা।  আমরা কি পথ হারিয়েছি?
    -এ খোঁখি! ইধার ক্যায়সে? কহাঁ জাওগে?
    গম্ভীর গলার স্বর। তালগাছের মত লম্বা এক মানুষ, নাকি দত্যি? তার পরণে সবজেটে কালচে ডোরা কাটা জামাপ্যান্ট, যেমন বাঘের চামড়ায় হয়। ভারি বুট ,  মাথায় কালো ফেট্টি আর হাতে বিশাল একটা বন্দুক।
    সে হিন্দি বাংলা মিশিয়ে জানতে চায় –আমরা কোথায় থাকি, এখানে কীকরে এসেছি, কেন এসেছি।
    আমি সব ভুলে গেছি। ভয়ে কথা জড়িয়ে গেছে। কিন্তু সুবি বলে- খেলতে খেলতে, বাড়ি মামুদপুর।
    লোকটা খুব অবাক হয়। বলে অনেক দূর চলে এসেছ। বাড়িতে নিশ্চয়ই খোঁজাখুঁজি করছে। এবার শোন, তোমরা বেঁচে গেছ। ওই পুলের ওপারে পাকিস্তান। ওদিকে গেলে ছেলেধরা ধরে নিয়ে যাবে। এখন উলটো দিকে যাও। ওই তালগাছের পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। দু’কিলোমিটার  গেলে সরকারি দাওয়াখানা পড়বে, সেখান থেকে মরহম-পট্টি হয়ে যাবে, পয়সা লাগবে না। ওর সংগে চলে যাও, ভয় নেই।
    দেখি আমার পাড়ার সুজনদার মত আরেকটা লোক, ওইরকম ধরাচুড়ো পরা। সে কোন কথা না বলে ইশারা করে। আমরা ওর পেছন পেছন চলতে থাকি। ওই দাওয়াখানাটা চিনি। ওখান থেকে আমরা নিজেরাই চলে যেতে পারব।
    জানলা দিয়ে একটা গান ভেসে আসছে।
    “ রাই জাগো গো, জাগো শ্যামের মনমোহিনী বিনোদিনী রাই”।
    এই স্বপ্নটা কেন দেখলাম? এটা তো আমার জীবনে ঘটেনি।  কোনদিন ইছামতীর পারে যাইনি। টাকি-বসিরহাট-বনগাঁ ? ছোটবেলায় ভুগোলে ম্যাপে দেখেছি। এটা সবিতার গল্প, ওর মামাবাড়ির ।  কিন্তু আমি কয়েন দেখলাম আর ওর গল্পের মধ্যে ঢুকে গেলাম কী করে?
    “শ্যাম অঙ্গে অঙ্গ দিয়া, আছ গো রাই ঘুমাইয়া,
    কলংকেরই ভয় কি তোমার নাই”?

    [1] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২।

    [2][2] দি

    [3] Extracted from Ram Nandan vs. State, AIR 1959, All 101.

    [4] এংগেলস, সোশ্যালিজম, ইউটোপিয়া অ্যান্ড সায়েন্টিফিক।

    [5]  লেবার মান্থলি, সেপ্টেম্বর, ১৯৩১।

    [6] মলোটভ, লেবার মান্থলি, এপ্রিল, ১৯৩২।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৬ জানুয়ারি ২০২২ | ১৪৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন