এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • কোথায় তোমার দেশ গো বন্ধু? পর্ব ১১

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৫ জানুয়ারি ২০২২ | ১৬৪৬ বার পঠিত


  • “যুদ্ধ হয়ে গেছে শেষ, নিঃস্তব্ধ প্রহর দশদিকে,
    যেদিকে তাকাও রাত্রি প্রকাণ্ড নিকষ সরোবর”।


    ‘বাগানে বেলগাছটা বেশ বেড়ে উঠেছে।

    আমার ঠাকুমা বেলের সরবত খেয়ে পেছনের বাগানে বীজ পুঁতে দিয়ে রোজ জল ঢালতেন। একদিন চারা বেরোল, আমরা ছোট, আনন্দ আর ধরে না। সবাইকে ডাকি, দিনের মধ্যে দশবার উঁকি দিয়ে দেখি কতটুকু লম্বা হোল; তারপর হতাশ হই।

    আমার বাবা আর্মি থেকে ফিরে নাকতলায় সেকেন্ড স্কীমে এই জমিটুকু পেয়েছিলেন—ষাট বাই চল্লিশ ফুটের প্লট। তাতে একতলায় দুটো ঘর হোল আর জলছাদ। পাঁচিল তোলার টাকা ছিল না। শেষে ডাল পুঁতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হোল। নইলে গরু- ছাগলে মুড়িয়ে খাবে।

    প্রথম বেল ধরার পর পেকে ওঠার আগেই ঠাকুমা চলে গেলেন। বাবা আরও চুপচাপ। এই জমিটুকুও ঠাকুমার জিদে নেওয়া। আসলে পূববাংলা থেকে আসা রিফিউজিদের জন্যে এই প্লটগুলো, সরকারি খাস জমিন থেকে ত্রাণ বিভাগের অধীনে বিলি-বন্দোবস্ত হচ্ছিল। তাতে রিফিউজি বলে নাম লেখাতে হবে, কবে এপারে সবাই এসেছে তার কাগজ দেখাতে হবে। বাবা নিজেকে রিফিউজি বলতে রাজি নন। বলেন –আমরা কেন রিফিউজি হব? আগেই তো পার্কসার্কাসের বালু হক্কাক লেনে বাসা কইর‍্যা আছিলাম। ভাড়া দিয়া রইছি, মাগনা না, খয়রাতি না। রিফিউজি তারা যাদের কইলকাতায় মাথা গুঁজনের ঠাঁই নাই, ক্যাম্পে রইছে’।

    এসব খামোখা বাঙালে-গোঁ না দেখালে অনেক আগেই প্লট পাওয়া যেত। কাশ্মীরের যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে বাবার অহংবোধ প্রবল। বৃটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে ট্রেনিং পাইছি, বিশ্বমহাযুদ্ধে বার্মা আর ইন্দোনেশিয়ায় ছিলাম। আমি ক্যারে রিফিউজি হইতাম?

    সে যাকগে, আমার হয়েছে মামস্‌। এটা নাকি ছোঁয়াচে ! তাই পেছনের ছোট ঘরে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তবে মা বলেছেন সাতদিনে সেরে গিয়ে আবার সবার সংগে খেলতে পারব। এখন বিছানায় বসে জানলা দিয়ে দেখছি ঠাকুমার বেলগাছটাকে। সত্যি, কবে যে এমন বেড়ে উঠল, একজোড়া ফল ধরল খেয়ালই করি নি।

    সৃষ্টিরহস্য বোঝা আমাদের সাধ্যি নয়। কে যে কখন চোখের সামনে বেড়ে উঠছে খেয়াল করি না, হঠাৎ চোখে পড়ে। সেদিন এ’পাড়ার দাশ কাকিমা এসে দুপুরে খালি বাড়িতে মায়ের সংগে গল্প জুড়েছিলেন। আমি সিঁড়িভাঙ্গা অংকের হোমটাস্ক করছি, কিন্তু কানখাড়া করে শুনছি বড়দের গল্পগাছা।

    দাশ কাকিমা—মেয়ে হইল, শখ কইর‍্যা নাম রাখলাম—পাপড়ি, মাইয়া দেখি হইয়া উঠল কলাগাছের ঠুম।

    আমার মা- না গো দিদি। আপনার মাইয়ার মুখখান কী মিষ্টি! আর স্বভাব? কী ভাল গান গায়। অরে এখন থেইক্যা ভাল জায়গায় ভর্তি কইর‍্যা গান শিখান। দ্যাখবেন, এই মাইয়া একদিন আপনাদের মুখ উজ্বল করব।

    আমার খুব রাগ হোল। পাপড়িদি এই কলোনিতে সবার ফেবারিট। একটু মোটা তো কী হয়েছে? ওর সংগে খানিকক্ষণ কথা বললে সবাই ভুলে যাবে ও রোগা কি মোটা!

    তারপর একদিন মাঠে কবাড্ডি খেলছি ছেলেমেয়ে সবাই মিলে। মল্লিকাদি অ্যাটাকে এসেছে, ছুঁয়ে দিয়েছে বিপক্ষের দুটো ছেলেকে। অথচ ফেরার মুখে ফাঁদে পড়ে গেল। লাফিয়ে বেরোনোর চেষ্টায় ওর ফ্রক ছিঁড়ে গেল। কিন্তু আরও কিছু একটা ঘটে ছিল, নইলে মল্লিকাদি হাঁফাতে হাঁফাতে উঠে সমীরদাকে ঠাস করে একটা চড় মারল কেন?

    তারপর হেব্বি কিচ্যান। সমীরের পক্ষে অন্য ছেলেরা বলল—খেলতে গিয়ে অমন হতেই পারে। অত ন্যাকামি হলে আলাদা খেললেই হয়।

    এক অদৃশ্য লাইন টানা হয়ে গেল। মেয়েরা সব মল্লিকাদির সংগে দাঁড়িয়ে, ওদের চেহারায় অন্ধকার নেমেছে। ওরা চলে গেল, বলে গেল—অসভ্য ছেলেদের সংগে আর কোনওদিন খেলবে না।

    আমার কষ্ট হচ্ছিল। মল্লিকাদি, পূরবীদি, স্নিগ্ধাদের দল আর আমাদের সংগে এই মাঠে খেলবে না?

    সূর্য ডুবছে; সবাই ঘরে ফিরছি। আমি সমীরদাদের পেছন পেছন একটু দূরত্ব রেখে হাঁটছি।

    কানে এল বিজনদা বলছে—এটা কী করলি সমীর? আমাদের গ্রুপটা বদনাম হয়ে গেল। কোন মেয়ে আর আমাদের সংগে মিশবে না।

    --ছাড় তো! ‘যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার মল্লিকাবনে’।

    ভর দুপুর। কাঁসার বাটিতে গরম বার্লি নিয়ে মা ঢুকেছে—ঢক ঢক কইর‍্যা খাইয়া নে। তর গলা ফুইল্যা উঠছে, গিলতে কষ্ট—তাই এই ব্যবস্থা। মাত্র তিন চাইর দিন।

    খেয়ে দেয়ে বাটিটা ফেরত দিয়ে শোবার ধান্ধা করছি, হঠাৎ চোখে পড়ল এক আশ্চর্য দৃশ্য।

    চড়াই পাখির চেয়ে একটু বড়-- ছাতারে না কি যেন নাম—পাখিটা একটা ছোট্ট সাপের বাচ্চাকে ঠোঁটে করে তুলে এনেছে আর জানলার পাশের বেলগাছটার নীচের দিকে একটা ডালে বসে সাপটাকে কাঁটায় গেঁথে দিয়েছে। সাপটা ওই ছোট্ট মুখে ফণা তুলে হাঁ করে ছোবল মারার চেষ্টা করছে, পাখিটা লাফিয়ে সরে যাচ্ছে। সাপ, মানে বাচ্চা সাপ, অসহায় যন্ত্রণায় ছটফট করছে আছাড়ি পিছাড়ি, কিন্তু কাঁটা ফুটেছে শূলদণ্ডের মত। ধীরে ধীরে সাপটার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল। পাখিটা পাশ থেকে দু’একবার ঠোকর মারল। তবে মরা সাপ স্ট্যাচু হয়ে আছে উদ্যত ফণা তুলে। ছোট্ট হাঁ-মুখের ব্যাদান এবং চেরা জিভ সব যেন মমি হয়ে আছে।

    হেরে গিয়েও মাথা উঁচু করে থাকা! মল্লিকাদির মত?

    হ্যাঁ, হাসবেন না; এসবই আমাকে ধীরে ধীরে বাম রাজনীতির দিকে টেনেছিল। আরও শুনবেন? যে বইটা আমাকে কমিউনিস্ট করেছিল তার নাম মহাভারত। আমি জানি, কেরালায় নম্বুদ্রিপাদ সরকারের আমলে তোপ্পিলা ভাসি বলে একজন মালয়ালম ভাষায় একটি জনপ্রিয় নাটক লিখেছিলেন –‘ইউ হ্যাভ মেড মি কমিউনিস্ট’! কিন্তু ওটা ওই বয়সে আমার সিলেবাসের বাইরে।

    'আমার প্রিয় বই' রচনা লিখতে পরীক্ষার খাতায় সবসময় লিখেছি কাশীরাম দাসের মহাভারত। পয়ার ছন্দের দোলা আর সাদা কালো এবং রঙীন আর্ট প্লেটের ছবিগুলো আমায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত।

    রাজা সম্বরণ ও সূর্যকন্যা তপতী এবং সমুদ্র মন্থন (সাদাকালো), সুভদ্রা-হরণ ও শিশুপাল বধ (রঙীন), জয়দ্রথ বধ ও ভীষ্মের শরশয্যা (সাদা কালো), অম্বার আগুনে আহুতি, পারিজাত হরণ এবং দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ((রঙীন)।
    মনের অগোচরে পাপ নেই। স্বীকার করি ওই ছবিগুলোয় নারীরা সবাই আলুলায়িত কেশা ও গুরুস্তনী, বার বার দেখতাম গা’ ছমছম করা ছবিগুলো।
    ঝটকা খেলাম শেষের দিকে শান্তিপর্বে এসে। ভীষ্ম শরশয্যায় শোয়া অবস্থায় যুধিষ্ঠিরকে রাজধর্ম শেখাচ্ছেন। একজায়গায় বলছেন—যে রাজা প্রজাপালন না করে প্রজাপীড়ন করে তাকে পাগলা কুকুরের মত হত্যা করা উচিৎ।

    ব্যস্‌ আমি কনভিন্সড। প্রজাপীড়ক রাজা হোল কংগ্রেস, আর প্রজাদের পক্ষ নিয়েছে কমিউনিস্টরা। ফলে আমার কোন দ্বিধা ছিল না।

    সপ্তাহের শেষে লেখাটির প্রিন্ট আউট নিয়ে কমিটির সামনে পেশ হলাম। ওঁরা উলটে পালটে দেখে দুটো কথা বললেন—মাস্টারমশায়, এইটুকুতে হবে না। আপনি পুরোপুরি সন্দেহমুক্ত নন। কেউ কেউ মনে করছেন আপনিই ওই রাষ্ট্রদ্রোহীদের স্লীপার সেল। কাজেই এ’রকম ভাসা ভাসা গপ্পো চলবে না। ভাল করে ভাবুন, মনে করার চেষ্টা করুন—কারা আপনার জীবনে আপনার চিন্তার গঠনে বিভিন্ন সময়ে ছাপ ফেলেছে। তাদের নামগুলো? আপনার সংগে কোথায় কীভাবে পরিচয় এবং আজ তারা কী করছে ও কোথায় আছে? যতটুকু জানেন আর কি! বাকি আমরা দেখে নেব।

    অবনী বাড়ি আছো?

    মিঞা কবি এবং উকিল সিরাজুলের ব্যাপারটা অন্যরকম। অবশ্য ওর বয়েসও কম এবং ওর কেস আর আমার কেস আলাদা।

    ওর হিসেব করা হোল আমার পরের দিন।

    ফিরে এল খোঁড়াতে খোঁড়াতে । তারপর সোজা গিয়ে বিছানার আশ্রয় নিল।

    কী যে করি? ছেলেটাকে আমার ভাল লেগেছে যে! ওর ফক্কুড়ি সমেত। কিন্তু ও কামরার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার ডাকাডাকি ধাক্কাধাক্কিতে সেই দরজা খুলল না, অগত্যা!

    পরের দিন, আমি তখন কম্পিউটার রুমে নিজের কাজে ব্যস্ত, রোজকার  ১০ ইউনিট চিন্তা ও লেখালেখির কোটা পুরো করতে, সিরাজুল নিজেই এল একটা চোর চোর লজ্জা লজ্জা মুখ করে। তারপর শুরু হয়ে গেলঃ
    আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
    ব্যথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি আমি
    সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
    ‘অবনী বাড়ি আছো’?


    ‘সরি মাস্টারমশাই! কাল আপনার সঙ্গে বেয়াদপি করেছি, আপনি এতবার ‘অবনী বাড়ি আছ’? বলে চেঁচালেন। কিন্তু—আমার গায়ে বড্ড ব্যথা, উঠতে ইচ্ছে করেনি’।

    আমার গলায় উৎকন্ঠা—ফের কী ঝামেলা পাকালে? কেন যে এসব কর! তো্মাকে নিয়ে আর পারা গেল না! কী হয়েছিল?

    --মাস্টারমশাই, আমাকে কাল কবিতায় পেয়েছিল, এখনও খানিকটা রেশ রয়ে গেছে।

    -মানে? ভূতে পায়, পেঁচোয় পায় শুনেছি। কিন্তু কবিতায়?

    -- ঠিক ধরেছেন, খানিকটা ও’রকমই। ভূতে পায়, খিদে পায়, তেমনই কবিতায় পায়—বিশেষ করে কবিদের। আর আপনি মানুন না মানুন, এখানকার কর্তারা জানেন আমি একজন কবি, মিঞা কবি।

    -তুমি কি পাগল? গতবার বেদম ঠ্যাঙানি খেয়েও শিক্ষে হয়নি? ফের ওদের কবতে শোনাতে গেলে?

    --আরে না না। এটা হোল শিবরাম চক্কোত্তি মশায়ের দাওয়াই। কথা আটকে গেলে গান গেয়ে বল, তাহলে অন্যেরা বুঝবে। আমি তাই—

    --ধানাই পানাই না করে কাল কী কীর্তি করেছ সোজাসুজি বল।

    --বলছি। আমার কাছে জানতে চাইল দুটো জিনিস। এক, ছত্তিশগড় আর আসামের মধ্যে যোগাযোগের লাল করিডরের ব্যাপারে আমি কী জানি আর দুই , এতসব বোঝানোর পরেও আমার সর্বাধিনায়কের বিরুদ্ধে অসন্তোষ যাচ্ছে না কেন? কিসের অভিযোগ? ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে কীসের আপত্তি?

    আমি বললাম যে গান গেয়ে বলি? ওরা অবাক হোল, কিন্তু মাথা নেড়ে ঠিক হ্যায় বলল। তো আমি ব্রতচারীর ঢঙে নেচে নেচে শোনাতে লাগলাম। আচ্ছা, আপনি গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারীর গানগুলো শুনেছেন নিশ্চয়? ‘আমরা বাঙালী সবাই বাঙলা মা’র সন্তান’? বা জারি গান, সারি গান? ওই রকম কিছু একটা সুরে গেয়ে দিলামঃ

    আসেন মিঞা, বসেন মিঞা—পান তামুক খান,
    দু’দণ্ড বসিয়া দুঃখের কথা শুইন্যা যান, গো
    -কথা শুইন্যা যান।

    ভুইল্যা কেন গেলেন- আমরা এই দ্যাশেরই লোক,
    ভুইল্যা কেন গেলেন—আমার আছে কান আর চোখ।
    এক বাড়িতে থাকলে সবার হয় না একই রা’,
    তবে কেন আমারে কন—পাকিস্তানে যা!

    -মিঞা তুই,পাকিস্তানে যা!


    এইসব ব্যাপক ভাট শুনতে শুনতে ওদের মেজাজ গরম হচ্ছিল, কিন্তু ওরা হাসছিল যেন ফুটপাথে বাঁদরওলার খেল দেখছে। কিন্তু এরপরে মামলা সিরিয়াস হয়ে গেল। আমি লক্ষণরেখা ডিঙিয়ে ফেলেছিলাম।

    এরপর শোনালামঃ

    এক যে ছিল রাজা তার বুদ্ধি হইল নাশ,
    পোয়াতি বউরে সে যে দিল বনবাস,
    আহা, দিল বনবাস।।


    তারপর যা হোল বুঝতেই পারছেন। একবার মার খেলাম ‘বুদ্ধি হইল নাশ’ বলায়। ফের মারল দেবী সমান মাতাকে ‘পোয়াতি’ বলায়। নিজের মাকে কেউ পোয়াতি বলে? ছি ছি!

    কোথা থেকে একটা গোঁ গোঁ শব্দ শুরু হয়েছে। শব্দ থেমে নেই,এদিকেই এগিয়ে আসছে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ। প্রিয়ংবদা! ওর কপালে এবং বুকে তিনটে আলো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর ও গোঁ গোঁ শব্দ করে এগিয়ে আসছে ঠিক আমার দিকে নয়, ওর টার্গেট সিরাজুল। ওর যান্ত্রিক ডান হাত শূন্যে উদ্যত, পাঁচটা আঙুলে কুঞ্চন, মুঠো খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে—যেন কোন হরর ফিল্মের শট।

    ও এত উত্তেজিত কেন? সিরাজুলের কোন কথায় ওর এই পরিবর্তন? ভাবার সময় নেই। সিরাজুল যেন কোন যাদুকরের মন্ত্রে নিথর, নড়ার ক্ষমতা নেই। আমার চটকা ভেঙে গেল। সোজা গিয়ে সিরাজুলকে এক ঠেলা মারলাম। ও যেন জেগে উঠল। তারপর ভয়ে কেঁপে উঠে একছুটে ল্যাবের বাইরে হাওয়া।

    আমি চাইছি রোবো’র নাগালের বাইরে দিয়ে ঘুরে দেয়ালের প্যানেলে পাওয়ার সুইচ অফ করে দিতে। কিন্তু প্রিয়ংবদার মুন্ডু ঘুরে গেল। ওর দপদপে চোখ আমার দিকে । আমি টেবিলের ওপাশে সরে গেলাম। এবার ওর নাগালের বাইরে। আয়তাকার টেবিলের দুটো বাহুর কাছ ঘেঁষে প্রায় প্যানেলের কাছে পৌঁছে গেছি এমন সময় প্রিয়ংবদার হাত লম্বা হয়ে টেবিলের উপর দিয়ে আমার কলার মুচড়ে ধরল।

    দমবন্ধ হতে হতে মনে পড়ছিল দেব সাহিত্য কুটিরের পুজোবার্ষিকীর ভূতের গল্পে বৌয়ের জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে গাছ থেকে লেবু পেড়ে আনার রঙীন ছবিটি।

    হঠাৎ চাপ শিথিল হোল। প্রিয়ংবদা আমায় ছাড়েনি, বরং ঠেলতে ঠেলতে লেখার টেবিলে এনে চেয়ারে বসিয়ে খাতাটা সামনে ঠেলে দিয়ে ঘাড়ে আলতো রদ্দা মত মারল।

    আমার ভয় কেটে গেছে। ভেতর থেকে একটা অপমানবোধ আর রাগ পাকিয়ে পাকিয়ে উঠছে। মেয়েমানুষের হাতে এমন হেনস্তা! রোবো হলে কী হয়েছে, প্রিয়ংবদা যে ফেমিনিন জেন্ডার এ’ নিয়ে কোন সন্দেহ আছে?

    আমি ছাড়ব না। ওকে অকেজো করার কৌশল আমাকে ভেবে বের করতে হবে।

    কিলার রোবো

    পরের দিন। আমি কাগজের প্রিন্ট আউটগুলো নিয়ে অফিসে গিয়ে জমা দিতে গেলাম। অফিসের দরজা বন্ধ। এখানকার রান্নাঘরের ইনচার্জ বোধহয় কফি আর কিছু নাস্তা দিতে ঢুকেছিল। বেরনোর সময় দরজা খোলায় ভেতরের কিছু কথা কাটাকাটির আওয়াজ শুনতে পেলাম। ও দ্রুত দরজা বন্ধ করে রাগী চোখে আমার দিকে তাকাল।

    --মাস্টার, আজকে তো আপনার দিন নয়; এখানে কী করছেন?

    বললাম—একটু কথা বলার ছিল। মানে, ভেতরে গিয়ে--।

    -- জরুরি মিটিং চলছে। এখন হবে না। কাল আসুন, তখন দেখা যাবে,

    --প্লীজ, তুমি ভাই গিয়ে একটু বল। আমার ভয় করছে।

    --কাকে?

    --প্রিয়ংবদাকে। ওকে সরিয়ে নেওয়া হোক। ওর সামনে আমি কোন কাজ করতে পারবনা, যা জানি তা’ও সব ভুলে যাব।

    আমি জানি এই কিচেন ইনচার্জ ভরত মণ্ডল সাধারণ কর্মচারি নয়। এখানে অনেকেই এরকম। যাকে ড্রাইভার মনে করি সে ঠিক মাইনে করা ড্রাইভার নয়, অন্য কিছু। তেমনই এই লোকটা।

    ও ভুরূ কুঁচকে একটু কী ভেবে বলল—বারান্দার ও মাথায় গিয়ে দাঁড়ান, মিনিট পনের লাগবে। আর প্রিন্ট আউটগুলো আমাকে দিন, ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি।

    ও ফের ভেতরে গেল। আমি বারান্দার আর এক দিকে গিয়ে পায়চারি করতে করতে কী বলব সেটা মনে মনে গুছিয়ে গাছিয়ে নিচ্ছিলাম। এমন সময় দরজাটা খুলে গেল। টুইডের ব্লেজার পরা একটা তালঢ্যাঙা লোক বেরিয়ে এসেছে। লোকটা অবাক হয়ে আমাকে একনজর দেখল। তারপর গদাই লস্করি চালে হেলতে দুলতে আমার পাশ দিয়ে যেতে যেতে কোন দিকে না তাকিয়ে নিজের মনে বলল- দুপুরের খাওয়ার পরে সবার শেষে থালা ধোবে।

    আমি চমকে উঠলাম। ততক্ষণে অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে ভরত মণ্ডল আমাকে হাতের ইশারায় ডাকছে, ভেতরে যেতে বলছে।

    টেবিলের ওপাশে আজ শুধু দু’জন।

    --প্রিয়ংবদাকে নিয়ে কিসের সমস্যা মাস্টারমশায়?

    --ওর কলকব্জা বিগড়ে গেছে। মনে হয় ওর ভেতরের সেল ডাউন হয়েছে। আয়ু ফুরিয়ে গেছে আর কি!

    ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। একজন দু’দিকে মাথা নাড়লেন। অন্যজন আমার দিকে প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে। একটু পরে লোকটির মুখে একটা বেশ ক্ষমাসুন্দর হাসি ফুটে উঠল। যেন কাকু জানে ছোট ভাইপো এই অংকটা ভুল করবে।

    --আপনার এবংবিধ মনে হওয়ার কারণ?

    --কাল ও বিচ্ছিরি আওয়াজ করে সিরাজুলের দিকে তেড়ে এসেছিল , ও পালিয়ে বাঁচে। কিন্তু আমার জামার কলার ধরে এমন চাপ দিচ্ছিল যে--!

    --আরে এত ভয় পাবেননা। কাল যা করেছে সেটাই ওর লিমিট। রেগে গেলে এর বেশি কিছু করবে না।

    --রেগে গেলে? রোবো তো একটা যন্ত্র। ওর আবার রাগ হয়?

    -- কেন হবে না? এই রোবোগুলো ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’য় পরিচালিত হয়। মানে এদের কোন নির্ধারিত বিষয়ে মানুষের মত ক্রিটিক্যাল থিংকিং করার এবং ডেটা এনালিসিস করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকে। ওই যে আপনাদের সময় ৬০ বছর আগে টার্মিনেটর , রোবো কপ গোছের যেসব হলিউডি সিনেমা চলত সেসব এখন আর অবাস্তব কল্পনা নয়। যুদ্ধের জন্য ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ সম্পন্ন কিলার রোবোর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে ২০২১ সালের শেষে সব বড় বড় বিশেষজ্ঞ  ১৩০টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেনিভায় এক বৈঠকে বসে। সেখানে বেশির ভাগ রাষ্ট্র , অন্ততঃ ১২০টি, এগুলোকে ব্যান করার দাবি তোলে। কিন্তু আমেরিকা রাশিয়া মানলে তো? একজন বলল- এটা প্রি-ম্যাচিওর। অন্যজন বলল—যদি ১০০% সহমতি হয়, তবেই ব্যান সম্ভব, নইলে নয়।[1]

    আমি শিউরে উঠি, এসব কী শুনছি? গুল মারছে নাতো? ভয় দেখাচ্ছে?

    --তাহলে প্রিয়ংবদা মেরে ফেলতে পারে? ওর রাগ হলে? ইচ্ছে হলে?

    এবার অন্যজন মুখ খোলেন।

    -ধুর! আপনিও যেমন। ও হচ্ছে S-309.178. শস্তা মডেল; মেইনলি সিকিউরিটির প্রোগ্রাম ও ডেটা দিয়ে সিমুলেশন করা। আপনাদের পালাতে দেখলে বা হামলা করতে দেখলে ফিজিক্যালি রিস্ট্রেইন করতে যতটুকু বলপ্রয়োগ করতে হয়, তাই করবে। মেরে ফেলা? নো; দ্যাটস এ ডিফারেন্ট বল গেম। ওই মডেলের সিরিজ নম্বর আলাদা। কিন্তু কাল হয়েছিলটা কী? ও কেন রেগে গেছল?

    আমি চুপ করেথাকি।

    -- দেখুন, ও মেশিন। মানুষ নয়। কাজেই ওর চিন্তা সবসময় লজিক্যাল, অ্যালগোরিদম ভিত্তিক। কোন দেশদ্রোহী কথাবার্তা বা হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য এবং ঠাট্টাতামাশা ওর মধ্যে ভায়োলেন্স উসকে দেয়, ট্রিগারের কাজ করে। আজ মুখ নাই খুললেন, কিন্তু এই কথাটা ওই বাস্তুঘুঘু সিরাজুলকেও বলে দেবেন। ভবিষ্যতের জন্যে সাবধান!

    সিরাজুলকে কথাটা বলতে গেলাম। কিন্তু ও মন দিয়ে কিছুই শুনল না। কিছু একটা ভাবছে।

    --কী হয়েছে?

    --মাস্টারমশাই, আমরা মানে আমি- আপনি এবং আরও কেউ কেউ আজ এই দেশের নাগরিক নই। বেশ তাহলে আমরা কী?

    --আমরা? হয় বিনা অনুমতিতে সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢোকা অনুপ্রবেশকারী অথবা ধর্মের কারণে তাড়া খেয়ে ঢোকা শরণার্থী। 

    --নাঃ , আমি প্রথমটা, আপনি হয়ত পরেরটা।

    --এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন রে?

    --কেন নয়? আপনি হিন্দু, আমি মুসলমান।

    --কী বাজে কথা! আইনের চোখে আমরা সব সমান।

    --কথাটা ভুল। নইলে সি এ এ বা সিটিজেস্নশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১৯শে প্রতিবেশি দেশ থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা মুসলমানদের কথাও থাকত।

    --সব কথায় এত কমা ফুলস্টপ ধরতে নেই।  ময়ানমার থেকে চলে আসা রোহিঙ্গিয়া শরণার্থীদের ভারত ত্রাণ শিবিরে রাখেনি?

    --হ্যাঁঃ রেখেছিল! প্রতিমুহূর্তে ওদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে ওরা অবাঞ্ছিত, ওদের বেশির ভাগই ক্রিমিন্যাল। ওরা বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার করেছিল, তারই হিসেব করছে ময়ানমারের ফৌজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওদের নিয়ে যা তা মন্তব্য করা হত, কেউ বন্ধ করতে বলেনি, কেউ নিন্দা করেনি।

    --আরে রোজ কত-কি-ঘটে যাহা তাহা; সব ব্যাপারে কি সবাই কমেন্ট করে? রি-অ্যাক্ট করে?

    --ঠিক কথা। রোহিঙ্গিয়ারা আপনার মত প্রগ্রেসিভ মানুষের রাডারে নেই, তাই ওদের উপর চাপ সৃষ্টি করা আপনাদের চোখে নিও-নর্মাল।

    --এসব কী বলছিস?

    --শুনুন, মুখ যখন খুলেছি আজ বলে নেই। আজ থেকে ১২ বছর আগের কথা। হরিয়ানার নুহ্‌ গ্রামে রোহিঙ্গিয়াদের একটা রিফিউজি শিবির ছিল। শিবির বোলে তো ৩২টা কুঁড়ে ঘর, তাতে ১০২ জন মানুষ। ডিসেম্বরে শীত লহরের সময় একরাতে ওদের একজনের ঘরে আগুন লেগে গেল। আগুন নাকি ইলেক্ট্রিক্যাল শর্ট সার্কিট থেকে শুরু হয়েছিল। কুঁড়েগুলোতে দরমার বেড়া, চট ও ত্রিপলের ছাদ, আর উত্তুরে ঠান্ডা হাওয়া আটকাতে প্লাস্টিক দেয়া। আগুন নিমেষের মধ্যে সবগুলো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু গ্যাস সিলিণ্ডার ফাটতে থাকে। পুড়ে যায় মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা, লেপকম্বল, জামাকাপড় । সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হল তাদের যাদের UNHCR রিফিউজি  কার্ডচ--যা কিনা সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের তরফ থেকে রিফিউজিদের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জারি করেছিলেন -- পুড়ে গেছে। এবার ওরা সত্যি সত্যিই অনুপ্রবেশকারী হোল।

    --ফের বাজে কথা! তুইও বায়াসড্‌। শীতের দিনে শর্ট সার্কিট হয়ে কুঁড়ে ঘরে আগুন লাগা কোন অস্বাভাবিক বা বিরল ঘটনা নয়। তুই কি এর মধ্যেও পক্ষপাত আর ষড়যন্ত্রের গন্ধ শুঁকছিস?

    --বেশ, এবার খেয়াল করে দেখুন বছরে কত জায়গায় রোহিঙ্গিয়াদের শিবিরেই আগুন লাগে? আর তিব্বতের রিফিউজিরাও তো বিদেশি। কিন্তু ওরা কি এভাবে চাটাই, চট, প্লাস্টিক ঢাকা জতুগৃহে থাকে? রোহিঙ্গিয়াদের হরিয়ানা রাজ্যের রিফিউজি কমিটির মুখপাত্র আলি জোহর অনুরোধ করেছিল কিছু ইঁট আর টিন দেয়া হোক। নতুন করে বানিয়ে নেবে যাতে ফের আগুন না লাগে।[2]

    --হঠাৎ তোর মাথায় এসব চাগিয়ে উঠল কেন? মুসলিম ব্রাদারহুড চিন্তা?

    --টিভিতে নিউজ দেখতে দেখতে রেফারেন্স এল দশবছর আগের একটা ঘটনার। দিল্লিতে প্রথম লক ডাউনের সময় হজরত নিজামুদ্দিনের দরগার কাছে তবলিঘি জামাত সম্প্রদায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক’শ ডেলিগেট আসে। হঠাৎ লকডাউনে ওরা আটকে পড়ায় একমাস ওরা দরগার অতিথিশালা এবং কাছের কিছু ভাড়াটে বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা হয়। ওখানকার মৌলবীর নামে ফলস্‌ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে বলা হয় ওরা নাকি ষড়যন্ত্র করে ভারতে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে। কয়েকশ’ ডেলিগেট গ্রেফতার হয়। আপনাদের মত লোকজন বলেন যে ষড়যন্ত্র না হলেও  এটা স্পষ্ট যে ওরা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত আচরণ করেছে। পুলিশ চার্জশীট দেয়। কিন্তু দিল্লির আদালত রায় দেয় – ওরা নির্দোষ, বরং পুলিশ যা তা ভাবে তথ্য প্রমাণ ছাড়া কেস সাজিয়েছে। ওরা খালাস পেল।

    কিন্তু এই যে আমাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ এবং ঘৃণার ভাইরাস মহামারীর সময় লোকের মনে জেঁকে বসল, তার জন্যে যারা দায়ী তাদের কিছু হোল?

    আমি কথা ঘোরাই। কিলার রোবো’র গল্প শোনাই। এবং সিরাজুলকে আশ্বস্ত করি—তোর প্রিয়তমা প্রিয়ংবদা দেবী কিলার নয়। তবে কিছু কিছু জিনিসে বিশেষ করে সিকিউরিটি ও হিন্দুধর্মের প্রশ্নে ও ভায়োলেন্ট হতে পারে, কলার চেপে দুটো রদ্দা লাগাতে পারে; ব্যস্‌।

    ও অবিশ্বাসের চোখে তাকায়।

    --মাস্টারমশায়, এই বয়সে আপনারও ভীমরতি হয়েছে। স্বাভাবিক। ঠিক আছে, আপনি যখন এত করে বলছেন তো ওকে একনজর দেখে আসি। না না, ধর্ম নিয়ে কিছু বলব না। প্রেম-ভালবাসা নিয়ে কথা হবে।

    আমরা কম্পিউটার রুমে যাই এবং প্যানেল অন করি।

    প্রিয়ংবদা ঘাড় ফেরায়, আমাদের স্থির চোখে দেখে, জরিপ করে।

    সিরাজুল দু’পা এগিয়ে যায়। কিন্তু প্রিয়ংবদার থেকে এখনও অন্ততঃ ছ’হাত দূরে।

    তারপর নাটকীয় ভাবে বলে- প্রিয়ংবদা, প্রিয় সখী আমার। আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।

    প্রিয়ংবদার কোন হেলদোল নেই।

    ও আবার বলে—শরীর ! শরীর! তোমার মন নাই প্রিয়ংবদা? [3] আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি কি আমায় ভালবাসবে? বেশি নয়, এই এতটুকু?

    প্রিয়ংবদার শরীরে যেন একটা ঢেউ খেলে। ওর শরীর জেগে উঠছে। আবার একটা কফে ধরা ঘড় ঘড় আওয়াজ, যেন কিছু বলার আগে গলা খাঁকারি দিচ্ছে।

    আই- লাভ- সর্বাধিনায়ক। উই- অল -শ্যুড- লাভ- হিম। ইট -ইজ- আওয়ার -ডিউটি।

    আমরা সবাই সর্বাধিনায়ককে ভালবাসি। ওনাকে ভালবাসা আমাদের সবার কর্তব্য।

    [1] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১।
    [2] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১।
    [3] মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, পুতুল নাচের ইতিকথা।(শরীর ! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম?)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৫ জানুয়ারি ২০২২ | ১৬৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন