
gargi bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোনআজ সক্কাল সক্কাল উঠতে হয়েছে। টেলিফোন অফিস থেকে লোক আসবে।
ভোরটা তরতাজা। কারণ উঠেই নিয়মমত হাফ গ্লাস সবুজ রসের সামনাসামনি হতে হল না আজ। না, রসতত্ত্বের নবীন কোন রস নয়, নির্ভেজাল করলার থকথকে নির্যাস, যা খেলে অন্তরাত্মাও খিঁচড়ে যায় সারাদিনের জন্য। সেটাই পান করি রোজ প্রাতঃকালে। ফলত, ক্লাসে যাই তেতো মুখে, লেকচার দিই তেতো স্বরে, নম্বর বসাই তিতকুটে। প্রেমের কথা যদি বলার হত, তবে বোধহয় তাও বলতাম তিক্ত সুরে। তবে রক্ষে এই যে, আমার এই আধবুড়ো বয়সে অত ঝুঁকি নিতে কেউ সাহস পায় না।
বইতে পড়েছিলাম বটে সাক্ষাৎ রবিকবি নাকি এইরকম করলার রসে দিন শুরু করতেন। তাই দেখে টুকে দিচ্ছি এমনটা ভাববেন না। সে আমার ধৃষ্টতা হত বই কি। বিশ্বাস করুন, আমি নেহাত নিরুপায়।
জন্মের সময় জিভে মধু ছোঁয়ানোর একটা রীতি আছে। আমার বেলায় ছোঁয়ানোটা একটু বেশিই হয়ে গিয়ে থাকবে। তার ওপরে ইস্কুলে প্রার্থণায় রোজ "মধু বাতা ঋতায়তে, মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ" টাও বোধহয় খুব বেশি মনোযোগ দিয়েই বলে ফেলেছিলাম। "তথাস্তু" টা ফলল চল্লিশ পেরোনোর অনেক আগেই। মধুমেহতে ধরল আমায়। যাকে বলে ডায়বেটিস, সোজা বাংলায় সুগার। এমনকী দেখা গেল বিধাতাও ভালো মার্কেটিং শিখেছেন, 'বাই ওয়ান গেট টু' অফারে সুগারের সঙ্গে বিনি পয়সায় এল হাই ব্লাড প্রেশার ও থাইরয়েড। পুরো ত্র্যহস্পর্শ।
প্রথম প্রথম আমার যে খুব গর্ব হয় নি, তা জোরের সঙ্গে বলতে পারি নে। কেমন একটা হঠাৎ বড় হয়ে গেলাম, বড় হয়ে গেলাম - মনে হচ্ছিল। আসলে যে বুড়ো হতে শুরু করলাম, সেটা বুঝতে আরো কিছুদিন লেগেছিল। মনে আছে, ব্লাডরিপোর্ট পেয়েই সক্কলকে ডেকেডুকে বলেছিলাম, হু হু বাবা, আমি পুরো চিনি দিয়ে তৈরি। মরতে ইচ্ছে হলে এক দোকান মিষ্টি খেয়ে নিলেই হবে।
এক দোকান কেন, একটাও মিষ্টি যে আমি খাবো না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই বলেছিলাম। কারণ, মিষ্টি আমি মোটে ভালোবাসতাম না। কিন্তু কী আশ্চর্য, যেই না সুগার হল, অমনি দেখি দোকান সুদ্ধু মণ্ডা মিঠাই কেক পেস্ট্রি ডাক দিচ্ছে। পান্তুয়াগুলো রসে গ্লাব-গ্লুব করে হাবুডুবু খাচ্ছে, বচ্ছরকার নলেন গুড়ের সন্দেশের গন্ধ ম-ম করছে, এমনকী গুঁজিয়া যে গুঁজিয়া, তাকেও কেমন তন্বী সুন্দরী আকর্ষণীয় লাগছে। প্রাণ হাতে করে ঠোঁট চেপে পালাই সেখান থেকে। কিন্তু তাতে কী? রাতের বেলায় লুকিয়ে লুকিয়ে আমূল স্প্রে খাই।
একা মানুষ থাকি, কাকে লুকোই কে জানে? বোধহয় নিজেকে। ফল হাতেনাতে, চিনি যত বেশি হল, জীবনের নুন তত কম হল। গায়ে গতরে ব্যথা হল, হাঁটুতে ঝনঝনানি হল, দূর দৃষ্টি ঝপসা হল, এককথায় যন্তরপাতি লরঝড়ে হতে শুরু করল।
আর সাথে সাথে শুরু হল, উপদেশাবলী বর্ষণ। কে নেই তাতে? কর্মক্ষেত্রে কলিগ আছে, বাড়িতে কাজের দিদি আছে, ফোনে আত্মীয়/য়া আছে, ফেসবুকে বন্ধুরা আর তাদের বর-বউরা আছে, পথচলতি পথিক আছে, বাজারে সব্জিওয়লা, মাছওয়ালা, ফলওয়ালা আছে, পাড়ার মোড়ে মুদি আছে, এমনকী রিক্সাওয়ালা, পুলিশ, কেয়ারটেকার - কেউ বাদ নেই। একবার যদি জানতে পারে যে, আমি চায়ে চিনি খাই না, বা এরকমই কিছু, আর দেখতে হবে না, অমনি জ্ঞানের বাক্স খুলে বসবে। তা যার যেমন বাক্স সেইরকমই সে খুলবে - বড়, ছোট, মাঝারি, গোল, চৌকো, তেকোণা। তার থেকে হোমিওপ্যাথ, অ্যালোপাথ, আয়ুর্বেদিক, জড়িবুটি, ঝাড়ফুঁক, মাদুলি, তাবিজ - সবই বেরোতে পারে। একবার তো আমার বাড়িতে বসে চা-জলখাবার সহযোগে এক অতি সুদূর সম্পর্কের মামা ঝাড়া ঘণ্টাখানেক আমায় বুঝিয়েছিলেন - হাউ টু কন্ট্রোল ডায়াবেটিস। তারপর যখন জিগ্যেস করলাম মামীমা কেমন আছেন, টাক চুলকে বললেন --- ভালো নয় বুইলে। হাঁটুর ব্যথাটা খুব বেড়েছে। হাই সুগার তো। --- বোঝো!!
তা, আমি খুব লক্ষ্মী মেয়ে। সক্কলের উপদেশ শুনেছি এবং সবই অল্পবিস্তর ট্রাই করেছি। বলা বাহুল্য চিনি তাতে কমে নি, মুশকিল বেড়েছে। সকালে গোলমরিচ, তাপ্পরে সুজনি পাতা, লাঞ্চের আগে জামের বীজ-গুঁড়ো, দুপুরে কুঁদরির তরকারি...। আরো কত দুস্প্রাপ্য বস্তু ছিল। কিন্তু কাজের কাজ বলতে দুম দাম মাথা ঘোরা শুরু হল। বাড়ির পুরোনো ডাক্টার নাড়ি মেপে চোখ পাকালেন --- কী কী খেয়েছ শুনি? সুগার আপ-ডাউন করছে যে। আমি চোরের মতন এদিক ওদিক তাকাই। আসলে দোষ তো আমারই। এসব খাবার খাওয়ার নির্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে নিশ্চয়। আমি সেইটি মানি নি নির্ঘাত। তাই এত ভুলভাল কাণ্ড।
ডাক্টারের চোখরাঙানিতে সে সব বিসর্জন দিলাম প্রাণে ধরে। শুধু করলার রসটা ছাড় পেল। তবে নতুন করে ধরলাম প্রাণায়াম। যেই না দুদিন ফোঁস-ফাঁস করে পেট টেনে ছেড়ে মোমবাতিতে ফুঁ দিয়ে কপালভাতি করেছি, অমনি চোখ উল্টে পড়েছি, তারপর লোকের ঘাড়ে চেপে সোজা হসপিটাল। কী লজ্জা!
বাড়ি ফিরে কিছুদিন চুপচাপ। তারপর আবার বিভিন্ন রকমের আদেশ-উপদেশ-উপরোধ আসতে শুরু করল। এবার প্রাণায়ামের পর ধ্যান। উঁহু, উঁহু, মেডিটেশান। ইয়োগার (পতঞ্জলি 'যোগ' নামে ডাকতেন তখন, এখন হারাধন থেকে হ্যারি হবার মতো করে সে 'যোগ' থেকে 'ইয়োগা' হয়েছে) অন্যতম অস্তর। বন্ধুর কথায় ইন্টারনেটের লিংক পেলাম। মুড রিল্যাক্সিং মিউসিক। চোখ বন্ধ করতেই যাবতীয় চিন্তা মশার মত মস্তিষ্কে পোঁওও করে ঘুরতে শুরু করল। মশা তাড়াবার মতো করে জাগতিক চিন্তা সরাবার চেষ্টা করছি..... ক্রিং ক্রিং। নিচের ঘরে ল্যাণ্ডলাইনটা বাজছে।
ওটা জীবিত ছিল বুঝি? শেষ কবে ওখানে ফোন এসেছে? আজকাল মুঠোফোনের দৌলতে ল্যাণ্ড লাইনটা ত্যাজ্য হয়েছে। বেশিরভাগ বাড়ি থেকে বিদায় নিয়েছে। আমার বাড়িতে বাপ-পিতেমোর স্মারক চিহ্ন হিসেবে গাব্দাগোব্দা একটা কালো টেলিফোন বসার ঘরের কোণ আলো করে থাকে। ঝাড়পোঁচ হয়, কিন্তু বাজতে তো শুনি নি অনেকদিন।
- হ্যালো?
- ----
-হ্যালো, হ্যালো...হ্যা য়্যা য়্যা য়্যা ল ও ও?
- -----
- কে বলছেন?
- ------
নাহ, ওপারে অসীম নিস্তব্ধতা। আমি ফোন নামিয়ে মিউসিক চালিয়ে আবার মানসিক মশা তাড়াতে উদ্যত হলাম।
আবার বাজছে - ক্রিং ক্রিং ক্রইইইইংং। আবার পড়িমরি ছুটি একতলায়। আবার ওপারে চুপ।
-হ্যালোওও। কিছু তো বলবেন?
- -----
এমন করে আরো দুবার ফোন এল। আচ্ছা, রোসো। তোমায় দেখাচ্ছি। কথা কইবি না মানে? কইতেই হবে। চোখ বন্ধ করে সুর করে সুকুমার রায় শুরু করলাম - "যদি কুমড়োপটাশ নাচে"।
ছড়া খতম। ফোন চলছে। ওপারে খুকখুক হালকা কাশির আওয়াজ। আমার রাগ আরো একধাপ চড়ল। এবার সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত -
" ছিপখান তিনদাঁড়, তিনজন মাল্লা/
চৌপর দিন-ভোর, দেয় দূর-পাল্লা।"
তাতেও দেখলাম কিছু বলছে না, ফোনও কাটছে না। গালাগালি দেব? কিন্তু সেখানে আমার দৌড় ওই গাধা পর্যন্ত, বড়জোর বরাহনন্দন, ব্যাস। তাতে কী কিছু হবে? তাছাড়া ওপারে কে আছে, বুড়ো না ছুঁড়ো, ছেলে না মহিলা - সেসব না জেনে গালাগালি দেব কেমন করে? আর ওপাশ থেকে যদি সত্যিকারের উচ্চমার্গের কিছু শব্দ ফেরত আসে? ওরে বাবা। থাক। অন্য কিছু ভাবতে হবে। ফোন রেখে দিই।
এদিকে করলা ফ্রিজে ক-দিন থেকেই নেই। শুনছি তুঁতের জলে ভিজিয়ে বিক্কিরি করছে। আমার ঘরদোর সামলে সুমলে রাখে রিনা, সে কোথা হতে গাছের ‘অর্জিনাল’ করলা আনবে বলে আশ্বস্ত করেছে। তাই এই ক'দিন সকালটা ভালোই কাটছিল। তবে সুগার কন্ট্রোলে নিয়মিত মেডিটেশান চলছে। মানসিক মশারা আসছে, আমি মানসিক হাতে তাড়াতে চেষ্টা করছি।
দুদিন বাদে আবার ক্রিং ক্রিং। একই সময়ে। ধ্যান মোড থেকে বেরিয়ে ছুটে গিয়ে ধরলাম। যথারীতি চুপচাপ। ভূত নাকি? আচ্ছা, সেদিনের ছড়াগুলো একটু লাইট ডোজ হয়ে গেছে। আজ তবে রবি কবি। গলা তুলে শুরু করলাম "আজি এ প্রভাতে রবির কর/ কেমনে পশিল প্রাণের'পর"। শেষ হয়ে গেলে আবার খুকখুক কাশি। আবার চুপ। পূর্ণ উদ্যোমে "গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে"। দেবতার গ্রাস মুখস্ত করেছিলাম কোন ছোটবেলায়। এখন কাজে এল। কাজে কি এল আদৌ? আরে দূর মশাই, কিছু বলুন, নাহয় ফোন করা বন্ধ করুন। আচ্ছা, গান শোনাব? কিন্তু তাতে যদি ওপাশের ব্যক্তিটি হার্টফেল করে? না বাবা, দরকার নেই।
আচ্ছা, উগ্রপন্থ- টন্থী নয় তো? বা নিদেনপক্ষে ডাকাত? চিঠির বদলে ব্ল্যাংক কল দিচ্ছে?
মহা চিন্তিত হয়ে ইন্টারনেটের লিংক দেওয়া সেই বন্ধুকে মোবাইলে ফোনালাম। সে তো হেসেই খুন।
- ব্ল্যাংক কলে কবিতা ছড়া শোনাচ্ছিস? পাগল নাকি তুই?
তা, আমার আত্ম অন্বেষণ অনেক আগেই সারা আছে। নিজের স্বরূপ সম্বন্ধেও যথেষ্ট সম্যক ধারণা আছে।
বন্ধু শুধালো - তুই ল্যাণ্ড লাইন রেখেছিসই বা কেন? ওটা ছেড়ে দে। আর বল, তোর মেডিটেশান কেমন চলছে? সুগার কন্ট্রোলে তো? জানিস, আমি একটা বুদ্ধিস্ট মেডিটেশানের খোঁজ পেয়েছি। তোকে পাঠাচ্ছি।
এই রে, আবার শুরু হল। কোনক্রমে ফোন শেষ করি। ভাবতে বসি।
সত্যি এই কালো-কুলো গাব্দাগোবদা অতি প্রাচীন নেহাত অপ্রয়োজনীয় বস্তুটা রেখে হবে কী? মাসে মাসে টাকাই গুনছি কেবল। ফোন তো আসে না, এলেও এইসব অদ্ভুতুড়ে। তার থেকে ল্যাটা চুকিয়ে দিলেই তো হয়। ভেবে চিন্তে টেলিফোন অফিসে ফোন করি। ওমা, দেখি ফোন নেবার যত হ্যাপা, ফোন ফেরত দেবার তার দ্বিগুণ। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বাঝিয়ে রাজি করানো গেল। পরশু আমার ছুটি। বলল, সেদিন সকালে আসবে। ফোন নিয়ে যাবে। পরে আমাকে টাকা পত্তর অফিসে গিয়ে বুঝে আসতে হবে। তাই সই।
পরদিন যথানিয়মে যথাসময়ে পূর্ববত ক্রিং ক্রিং। আমিও তৈরি ছিলাম। আপদ বিদায়ের ব্যবস্থা যখন হয়েই গেছে, আর ভয় কী? "আপনা মাঝে শক্তি ধরো"... ইত্যাদি। আজ তৈরি ছিলাম সুধীন্দ্রনাথ দত্ত নিয়ে। শব্দের ওজন মারাত্মক। সেই ভারে যদি বাটখারা ছুঁড়ে মারার মতো করে ব্যাটাকে (বেটিকে?) কুপোকাত করা যায়।
ফোন তুলে আর কোন কথা নয়। ধরেই শুরু করে দিলাম -
" অনাদি যুগের যত চাওয়া, যত পাওয়া
খুঁজে ছিল তার আনত দিঠির মানে।
একটি কথার দ্বিধাতথরথর চূড়ে
ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী,
একটি নিমেষ দাঁড়াল সরণী জুড়ে
থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি;"
কবিতা শেষ হয়ে এল। অপার নৈঃশব্দ্য। আমিও কেমন আনমনা হয়ে গেলাম। শাশ্বতী কবিতাটা আমার বড় পছন্দের। এক যুগ বাদে বললাম, নিজের গলায় শুনলাম। ফোনটাও টুকুস করে কেটে গেল। নাহ, এমন ভাবাবেগের দরকার নেই। আর কবিতা নয়। কে না কে? তাকে কেন কবিতা শোনাবো? করলার রসে ফিরতেই হবে। রিনা যে কবে এনে দেবে!
আজ সকাল সকালেই টেলিফোনের ছেলেরা এসেছে। বাড়ির বাইরে লাইন চেক করছে। আমি টেলিফোনের সামনের সোফাতে বসে আছি। চোখ মাঝে মাঝে চলে যাচ্ছে ঘড়ির দিকে। এইসময়েই তো ফোনটা রোজ বাজে।
বাজল ফোন। নিজের অজান্তেই দৌড়ে গিয়ে ধরি।
- অ মশাই। আজই শেষ। এক্কেবারে শেষ। কী ভেবেছিলেন? রোজ রোজ ফোন করে বিরক্ত করবেন? আমি ল্যাণ্ড লাইনটা বিদায় করে দিচ্ছি। আজই। এক্ষুনি। এবার বুঝবেন।
প্রথমে চুপচাপ, তারপর একটা কাশি, খুকখুক। তারপর একটি মেঘের মতো গভীর কণ্ঠ ওপার থেকে ভেসে এল - বিদায় দিচ্ছেন? বেশ।
আমি হতভম্ব।
কয়েকক্ষণের বিরতির পর মেঘ কণ্ঠ আবার বলল - স্বীকারোক্তি করতে চাই। প্রথমদিন ভুল নাম্বার দুবার ডায়াল করে ফেলেছিলাম। তারপর সুকুমার রায় শুনে মজা পেয়ে গেলাম। তাই প্রতিদিন করতাম। যদি একখানা কবিতা শুনতে পাই। তারপর কালকের কবিতাটা...। আপনি কে, কেমন কিছুই জানি না। তবু ভরসা দেন তো বলি, আপনার গলাটা বড় সুন্দর। বড় মধুর। গলায় এত মাধুর্য অনেকদিন শুনি নি। সেই টানেই...।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে চললুম। পুর্বজন্মের ওপার থেকে কোন এক তরুণের মুখ ভেসে উঠল, যে বলেছিল আমার কণ্ঠে মধু আছে। তারপর বহুকাল কেটে গেছে, আর তো কেউ কখনো বলে নি।
ওপাশের মেঘ-গলা একটা লম্বা নিঃশ্বাসের সাথে বলল -- যাগ গে। আপনি তো টেলিফোন বিদায় করে দিচ্ছেন। তবে বিদায়। ভালো থাকবেন। ভালো কবিতা পাঠ করবেন।
আমি কিছু বলবার আগেই ফোনটা কঠাং করে কেটে গেল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জানলার বাইরে থেকে মুখ গলিয়ে এক গাল হাসি নিয়ে টেলিফোনের ছেলেটি জানাল - হয়ে গেছে দিদি। তার কেটে দিয়েছি।
তার যে কেটে গেছে সে তো আমি ভেতর থেকে বুঝেছি।
- দিদি, মিষ্টি খাওয়াবেন না?
হায় কপাল। সেই তো। আমার কাছেই তো চিনির অফুরন্ত ভাণ্ডার। মিষ্টির পয়সা একটু বেশি দিয়ে রফা করলাম, যে অকেজো টেলিফোনটা আমিই রাখব। সেটা স্থান পেল আমার কবিতার বইয়ের র্যাকে।
ছেলেগুলো যেতে না যেতে রিনা এসে উপস্থিত। হাতে প্রচুর সতেজ সবুজ করলা। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল -- কুড়িটা ট্যাকা দেবে। যে বাড়ি থেকে তুলে এনেছি তাদের দিতে হবে। তা, রস কি এখন খাবে, না কাল সকালে?
- আজই খাবো। এক্ষুণি। রক্তে চিনি বেড়ে গেছে, মনেও। এই বয়সে সহ্য হবে না বাপু। তুই শিগগির কর।
বলে আবার মেডিটেশানে বসলাম। জগত অনিত্য।
r2h | 73.106.***.*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:১৯97158
অরিন | 161.65.***.*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৭97160"বলে আবার মেডিটেশানে বসলাম। জগত অনিত্য"
কি ধরণের ধ্যান করেন? মাইণ্ডফুলনেস মেডিটেশন? সতীপথ্থন?
:|: | 174.254.***.*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৮:২১97162
anon | 73.223.***.*** | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:২৬97166bhalo laaglo. onekta nabanita debsen style er lekha. aro likhun
:|: | 174.254.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:৫২97254একজনকে পড়তে দিয়েছিলাম। খুব ওস্তাদ টাইপিস্ট নন তিনি তবু এইটি লিখেছেন -- <Kono ghatona nai tabu kato ghatona jano chilo. Bhalo laglo>
বাভ্রবী | 2402:3a80:1f0d:b787::7de1:***:*** | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:৫০102800খুব সুন্দর লাগলো দিদি।
Titir | 128.2.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২১ ০১:১৯499324