এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সেই এক ফাগুনবেলা

    শ্রাবণী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৬ মার্চ ২০১১ | ৯৪১ বার পঠিত
  • "মা আমাদের হোলি পরদিন কেন হয়?'

    "কী জানি মা, তোমাদের বাড়ির ব্যাপারস্যাপারই আলাদা। কেন জানিনা তবে এ বাড়িতে দোল পূর্ণিমাতে হয়না, পরদিন হয় তাও আবার সকালে নয় বিকেলে। পূর্ণিমাতে এ বাড়ির চাঁচর হয়।'

    "এখানে চাঁচর বলে কেন, মামুরা তো নেড়াপোড়া বলে?'

    এ প্রশ্নেও হাত উল্টে দেয় মা, যার কাছে এ বাড়ি চিরকালই "তোমাদের বাড়ি' রয়ে গেল, "আমাদের বাড়ি' হল না।

    কদিন আগে থেকেই মাঠে ঘরের চালে যেখানেই দ্যাখ, বড় ছোট নানা আকারের তালপাতা শুকোচ্ছে, চাঁচরের প্রস্তুতি। আগে থেকেই বিভিন্ন টীম গঠন হয়ে যেত চাঁচরের জন্য। একটু বড় ছেলেপিলের মধ্যে চাপা একটা প্রতিযোগীতার ভাব, চাঁচরের অভিনবত্ব নিয়ে। আকারে নতুনত্ব আনা, কী করে বেশীসময় জ্বলবে, কত বড় হবে ইত্যাদি। স্কুল থেকে ফিরে খেয়েদেয়েই শুরু হত তালপাতা কাটার অভিযান। বড় তালগাছের পাতা কোনো কাজে লাগেনা, মাঠের ধারে ছোট ছোট তালগাছের পাতা মুড়িয়ে শেষ। কেটে নিয়ে এসে পুকুর ঘাটে ফেলা, ভালো করে ধুয়ে তারপরে শুকনোর জন্যে মাঠে, দুয়ারে বা চালে পছন্দমতো জায়গায় এক করে রাখা। একদলের পাতার এলাকায় অন্যদলের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ, পাতা গুণে গুণে রাখা থাকত। কোনোসময় কারুর সংখ্যায় এদিক ওদিক হলেই, সন্দেহপ্রকাশ দোষারোপ থেকে ঝগড়া হাতাহাতি অবধি চলে যেত। অবশ্য সেসব ক্ষেত্রে বড়রা ঢুকে শাস্তিস্বরূপ পাতা ফেলে দেওয়ার বা চাঁচর না করতে দেওয়ার ভায় দেখাতে আবার শান্তি। তবে প্রস্তুতি থেকে শুরু করে চাঁচরের দিন অবধি একটা যুদ্ধের মহল যে থাকতনা পাড়ায় তা ছোটরা অন্তত কেউ হলফ করে বলতে পারতনা। এলেবেলে ছোটদের নেওয়া হত স্পাইং করার জন্য, অন্য শিবিরে ঘুরে ঘুরে কে কী ছক করছে সেসব খবর নিয়ে আসার জন্যে।

    শুকনো বাঁশ আর তালপাতা এই দুই হল প্রধান উপকরণ চাঁচরের। এছাড়া সস্তায় বাজিমাত করতে বা খুব ছোটদের যাদের তালপাতা সংগ্রহের উপায় ছিলনা তারা শুকনো পাতা ডালপালাও ব্যবহার করত। তবে সেসব চাঁচরকে কুলীন চাঁচর শিল্পীরা ধর্তব্যের মধ্যে আনতনা। রায় বাড়ির চাঁচরের সীমা শুরু হত আমাদের ঝিলের পাড়ের শুরু থেকে বারোয়ারীতলা অবধি রাস্তার দুইধার। বারোয়ারীতলায় শিব মন্দিরের উল্টোদিকে তৈরী হত ঠাকুরের নিজস্ব চাঁচর। জমিকে ভালো করে নিকিয়ে বাঁশ আর তালপাতা দিয়ে একটি কুঁড়েঘরের আকারে তৈরী। এই চাঁচরই ঠিক করে দিত আমাদের চাঁচরের শেষ সীমানা। এর পরে আর কোনো চাঁচর থাকতনা।

    পাড়া থেকে বেরিয়ে ঝিলের ধারে শুরুর চাঁচরটা তৈরী হত এক বিরাট তোরণের আকারে। দুদিকে দুটো বড় বাঁশ প্রায় আকাশছোঁয়া, তাতে মালার মত তালপাতা গাঁথা। এটা বানাতো বাড়ির সিনিয়র ছেলেরা। তারপরে রাস্তার দু পাশে নানা আকারের চাঁচর, ছেলেদের মেয়েদের। দুদিন আগে থেকেই শাবল কোদাল নিয়ে বাড়ির ছেলেরা যার যার বাড়ির কাজের লোকদের নিয়ে লেগে পড়ত। স্কুলটা যদিও সব নামে যেত, পড়াশোনা এ কদিন একেবারে ব্যাকস্টেজে। তবে সেজন্য কোনো বকাবকি নেই, এসময়টা বাড়ির বড়রা সব উদার, আর তাছাড়া তারা নিজেরাও ব্যস্ত ঠাকুরের দোল নিয়ে। বরং ফাঁকে ফাঁকে এসে উৎসাহ দিয়ে যেত হয়ত বা নিজেদের ছোটবেলার কথা মনে করেই!

    মূল উৎসব নারায়ণের মন্দিরে হলেও সমস্ত মন্দিরের আশপাশ ঘাস জঙ্গল কেটে পরিস্কার করা হত লোক লাগিয়ে। এইসব লোকেরা আগের দিন ঠাকুরের কুঁড়েঘর চাঁচর বানিয়ে আসত।

    চাঁচরের দিন সকাল থেকে পোকা ময়রা তার দোকানের ব্রাঞ্চ খুলে বসত আমাদের রাসমন্দিরে। জলখাবারে গরম গরম জিলিপী। বাবা পোকাকাকাকে বলে জিলিপীকে দুবার ভাজাত, "আমার মেয়েরা কুড়কুড়ে জিলিপী খেতে ভালোবাসে"। জিলিপী ছাড়া তৈরী হত পান্তুয়া, রসগোল্লা আর চিনির শুঁটিভাজা। ছোটরা ঘুম থেকে উঠে মুখটুখ ধুয়েই সোজা রাসমন্দির। ময়রার সামনে বসে মিষ্টি তৈরী হতে দেখা, এরকম সৌভাগ্য তো বড় একটা হয়না। হাজার সেধে বকেও তাদের নড়ানো যেত না ওখান থেকে। দোলের শেষে কিছুদিন ময়রার দোকান ময়রার দোকান খেলাও চলত, হাতে গরম সমস্ত প্রক্রিয়া তখন ছোট্ট মাথাগুলোতে জ্বলজ্বল করছে।

    আমাদের চাঁচরের দিন আসলে সারা গ্রামের দোল। ও:, বড় ঝামেলার হিসেব তাই না!

    মজার ব্যাপার ছিল দোল হলেও আমরা অবাধে রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে পারতাম। এক আধটা ভুলভ্রান্তিতে হয়ে যাওয়া কেস ছাড়া এদিন কেউ ভুলেও আমাদের গায়ে রঙ দিতনা। "ওদের আজ দোল খেলতে নেই"। বিকেল হতেই সাজসাজ, আমাদের নয় ঠাকুরের। অনেক আগে থেকেই পাল্কী সারিয়ে সুরিয়ে রঙ করে রাখা হত। ঠাকুর দালানের নীচে চার ব্রাহ্মণ (তারাই চার বেহারাও) পাল্কী বার করে সাজাত । গাঁদাফুলের মালা আর আমপাতার ঝারি দিয়ে মোড়া হত চারধার, ভেতরে পাতা হত ভেলভেটের কাপড়ের আসন । ঠাকুরের সন্ধ্যারতির পরে নারায়ণ লক্ষ্মী শালগ্রাম শিলা এইসব বাইরে নিয়ে এসে পালকীতে বসানো হত। তার আগে ঠাকুরদের সাজানো হত, রূপোর ছাতা, বাঁশি, সোনার মুকুট গয়না, ফুলের গয়না ও পীতবসন নারায়ণের, লক্ষ্মীর পরনে নীলাম্বরী।

    পাল্কী করে ঠাকুর যাবেন চাঁচর দর্শনে ও আবীর খেলতে। সবার আগে ঠাকুরের পাল্কী, তারপাশে পুরোহিতমশাই আবীরের ও মিষ্টির থালা হাতে। পিছনে কীর্তনের দল, বাড়ির লোক। গিন্নীরা যেতনা, তাছাড়া সবাই যেত। মেয়েরা বেশ সেজেগুজেই যেত, নতুন কমবয়সী বউরাও, গয়নাগাঁটি সাজগোজ প্রদর্শনের এমন সুযোগ বছরে বেশীবার তো আসেনা। অনেকেরই হাতে আবীরের ঠোঙা। দলটি ঝিলের পারে এলেই চাঁচরে আগুন দেওয়া শুরু। উল্লাস, চারদিকে আগুনের হল্কা, কীর্তনের দলের চিৎকার ও কাঁসর ঘন্টা শ্‌ঙ্খ ধ্বনির মাঝে শুরু হত ঠাকুরের দোলযাত্রা ।

    বড় দাদাদিদিদের দলে ঠাঁই নাই দুধেভাতেদের। বায়নাতে অতিষ্ঠ হয়ে শেষে মা উদ্যোগ নিল ছোট মেয়ের জন্য চাঁচরের ব্যবস্থা করতে। সঙ্গীও পাওয়া গেল আর এক মক্কেল, কাকীমার ছেলে রিন্টু। চেয়েচিন্তে তিনটে না চারটে তালপাতারও জোগাড় হল। মায়ের আইডিয়া আর বাড়ির চাষী লক্ষীকাকার ব্যবস্থায় চারদিক থেকে ক্‌ঞ্চি পুঁতে একটা পিরামিড গোছের কাঠামো হল। তার ওপরে তালপাতা চাপা দেওয়া হল। তালপাতা কম, তাড়াতাড়ি জ্বলে শেষ হয়ে যাবে, তাই ভেতরে শুকনো দেবদারুপাতা ঝোড়ায় করে এনে ডাঁই করে রাখল কাকা।

    অনেকেই এরকম শুকনো পাতার ডাঁই রাখত ভেতরে, কেউ কেউ আবার কাঁচা বেল রেখে দিত। যখন আগুন ধরত সেই কাঁচা বেল ফাটত বিকট শব্দে, প্রায় কালীপুজোর বাজি ফোটার মত।

    প্রথমে যাওয়া হত গ্রামের শেষপ্রান্তে ধর্মঠাকুর বা গেঁড়িবুড়ির থানে। সেখানে আবীর আর মিষ্টি দিয়ে ব্রজরাজ আবীর খেলা শুরু করতেন। রাস্তার দুধারে সারা গ্রাম এসে ভীড় করত। মেয়েদের জন্য বচ্ছরকার ঠাকুর দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মেয়ে বউদের সবাইকে একসাথে দেখার কৌতূহলও কিছু কম ছিলনা। কে কী সেজেছে, কার বউ কেমন দেখতে হয়েছে। কমবয়সীদের রাতের বেলায়ও ঘরের বাইরে থাকার মওকা। কর্তারা নিজেদের কর্তব্যের মধ্যে ধরত, ব্রজরাজের আবীর খেলা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় কোনো গোলযোগ ছাড়াই, তার দিকে নজর রাখা।

    আর যুবক যুবতীদের কথা কী বলব! এমন দিন, উপরি পাওনা র ঙের খেলা শেষ হয়েও হয়না রায়েদের এই সৃষ্টিছাড়া নিয়মের জন্যে।

    অন্ধকার রাস্তায় হ্যাজাকের আলোয় পুরোপুরি দুর না হওয়া আঁধারের আড়ালে এই সুযোগে দু চারটে গল্পের লাইন লেখারও যে চেষ্টা হতনা তা কে বলতে পারে! কিছু করার নেই, মওকা আর দস্তুর দুইই অনুকূল, বসন্ত জাগ্রত দ্বারে!

    গেঁড়িবুড়ির থান থেকে আবার উল্টোপথ ধরা, এবার গন্তব্য হালদার মায়ের থান। বারোয়ারীতলা পেরিয়ে যেতে হয়, ততক্ষণে সব চাঁচরই জ্বলে গেছে ব্যতিক্রম শুধু ঠাকুরের কুঁড়েঘরের চাঁচর, বারোয়ারীর আটচালার ধারে। হালদার মায়ের মন্দিরের দালানে পাল্কী রাখা হয়। আবীর আর মিষ্টি দিয়ে সেখানেও "হ্যাপী হোলি" করেন ঠাকুর। এরপর পাল্কী ফিরিয়ে নিয়ে সোজা সেই চাঁচরের কুঁড়েতে। ঠাকুরের সাথে মিছিলে সবার হাতের আবীর তখনও অটুট। আগে ব্রজরাজ তার আবীর খেলা শেষ করবেন তবে অন্যরা খেলা শুরু করবে। চাঁচরের মধ্যে রাখা হয় ঠাকুরদের, তারপরে শুরু হয় পুজো। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য, পুজো ভালো করে দেখাই যায়না। দিদির এক হাত শক্ত করে ধরা থাকে, দিদির অন্য হাতে আবীরের ঠোঙা।

    গাঁয়ের কীর্তনের দল এমনিতে "হরি হরি" বিভিন্ন চালু সিনেমার গানের সুরে গেয়ে থাকে,পাবলিক অ্যাপীলের জন্যে। কিন্তু আজ কর্তাদের কড়া নিষেধ আছে, আজকের হরিনাম যেন একেবারে আনপল্যুটেড হয়। জেঠুর তীক্ষ্ম নজর সেদিকে, ভুলেও ঐ "তুমি আমি বসে আছি বকুলতলায়" মার্কা গানের সুর যেন না এসে পড়ে। খুব বোর হয়ে দলটা তাই তারস্বরে চেঁচিয়ে যায়, পাবলিককে ইমপ্রেস করার আর অন্য উপায় না দেখে।

    পুজো শেষে পুঁ উ উ উ উ শাঁখ বেজে উঠতেই কীর্তন দলের খোল করতালের তীব্রতা আরও বেড়ে ওঠে, আর তার সাথে ফর্সা ধুতি গেঞ্জী পরা তিলক কাটা মুখে, বাবরী চুলো মাথা ঝাঁকানোর ধুমও। আটচালায় বসা কর্তাব্যক্তিদের দল এতক্ষন বসে ছিল এবার উঠে দাঁড়ায় দুই হাত জড়ো করে জয়ধ্বনি দিতে দিতে। আর একসঙ্গে সব আবীরের প্যাকেট খোলে, হাওয়ায় লাল সবুজ নীল হলুদ গোলাপী আবীরের ধুলো ওড়ে ঠিক একসাথে। পূর্ণিমার চাঁদের আলো আরো গাঢ় হয়েছে তখন, চরাচর ভেসে যাচ্ছে সাদা জোৎস্নায়। জোৎস্নার ক্যানভাসের ওপর নানা রঙের ছোঁয়ায় রাতের অন্ধকার কোথায় যেন মুখ লুকিয়েছে।

    তারপর শুরু হয় এ ওকে আবীর মাখানো। এই খেলায় বড়দের পায়ে আবীর দেওয়ার নিয়ম নেই কারণ সবার বড় মন্দিরের ঠাকুর সামনে, তার উপস্থিতিতে আর কারো পা ছোঁয়ার রীতি নেই। বড়রা এদিন দেখেও যেন না দেখার ভান করে, নিজেদের সমবয়সীদের কপালে মাথায় আবীর ছুঁইয়ে নিরাপদ দুরত্বে আটচালার ভেতরেই থাকে। আর মোরামের রাস্তায়, শিব মন্দিরের দুয়ারে, তেঁতুল গাছের নীচে, দোকানের চালায় চারধার কেমন যেন রঙীন হয়ে হাসতে থাকে।

    কে কাকে রঙ মাখালো, তারা কোন পাড়ার, কোন বাড়ির, জাতপাত, ধনী গরীব সবই এদিন হিসেবের বার, লাগামছাড়া। কার আবীরের ছোঁয়ায় কে কত বেশী রঙীন হয়েছে, কার দিকে কে কিভাবে চেয়েছে, আগামী বহু দিনের আড্ডার প্রসঙ্গ হবে সেসব, বহু দীর্ঘশ্বাসের কারণ, গ্রীষ্মের অনেক তপ্ত কঠিন দুপুর অনিদ্রায় কাটবে অনেকের এই এক দিনের কথা ভেবে।

    বেশ কিছুক্ষণ আবীর খেলার পর পুরুতদাদুই সিগন্যাল দেয় খেলা থামানোর। তখন বড়রাও উদ্যোগ নিয়ে উঠে পড়ে, রাত হচ্ছে, ঠাকুরের অনেক নিয়মরীতি তখনও বাকী। ঠাকুরেরা পাল্কীতে চড়েন আবার, পুরুত দাদু আগুন দেয় শেষ চাঁচরে, ঠাকুরের চাঁচরে। চাঁচর জ্বলে উঠতেই হুড়োহুড়ি, ঠাকুর প্রণামের ধুম, আবার শোভাযাত্রা শুরু, এবার ঘরে ফেরার পালা। বচ্ছরকার অপেক্ষার প্রহর গোণার শুরু, আবার হবে আসছে বছর।

    ফেরার সময় সবাই একটু বেশী চুপচাপ, কীর্তনের দলের সুর ও গলা দুইই নেমে এসেছে। যাবার সময় দুধার আলোকিত ছিল চাঁচরের আগুনে, এখন সেখানে কালো কালো বাঁশের কাঠামো গুলো দাঁড়িয়ে আছে শুধু।

    মন্দিরের সামনে এসে থামে সবাই। এবার হবে ঠাকুরের প্রাচিত্তির। মন্দিরের ঠাকুরের জন্য নিয়ম,সে আগের দিনের পুরনারীদের থেকেও কঠোর। ভিটের বাইরে পা দিলেই প্রায়শ্‌চিত্ত না করে ঠাকুর ঘরে অর্থাৎ তার মন্দিরে ঢুকতে পায়না। নানা বিধির সঙ্গে প্রাচিত্তির শেষ হলে ঠাকুরকে মন্দিরে ঢুকিয়ে সবাই ঘরে ফেরে, তার আগে আর এক প্রস্থ আবীর খেলা হয় বেঁচে যাওয়া আবীর দিয়ে, এবার বাড়ির গিন্নীরাও যোগ দেয়।

    দোল শুরু দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর থেকে। তাই বলে সকাল থেরে সারাদিন ব্যস্ততা কম থাকেনা। সকালবেলা চা টায়ের পাট চুকিয়ে গিন্নীরা স্নান সেরে মন্দিরে যান পুজো নিয়ে, এদিনের স্পেশাল পুজো, উপচারও অনেক বেশী বেশী, ক্ষীরটা সন্দেশটা। মন্দিরে পুজো দিয়েই কিন্তু তারা বাড়ি ফেরেনা, শুরু হয় পাড়া ঘুরোনি। আঁচলের এক খুঁটে চাবির গোছা থাকে তো আর এক খুঁটে থাকে একরাশ খুচরো পয়সা ( তখন সিকি আটানার যুগ)। কোনো অপেক্ষাকৃত ফ্যাশনেবল গিন্নীর হাতে থাকে কাপড়ের ছোট পার্স।

    প্রত্যেক বাড়ি গিয়ে গিয়ে ছোটদের হাতে হাতে তুলে দেয় চারানা আটানার উপহার রঙ কেনা বাবদ। ঐ টুকুই, কিন্তু ওরই জন্যে ছোটদের উত্তেজনার শেষ নেই। বারবার পয়সা গোণা, হিসেব করে দেখা কত হবার সম্ভাবনা আছে। তারপরে বাজেট করা, চিনির শুঁটিভাজায় কতটা খরচ করা হবে আর কতটা রঙে। রঙের খরচ অবশ্য বেশী করার দরকার নেই। অনেক আগে থেকেই বড় দাদারা দোলের জন্য ফান্ড কালেকশন করতে থাকে। বাড়ির মেয়েরা শ্বশুর বাড়ি থেকে এলে তাদের দোলে না আসার অন্যায়ের জন্য ফাইন নেওয়া হয়, বাইরে চাকরী করা ছেলেদের কাছেও তাই। এরকম ছেলে বা মেয়েরা যারা আবার দোলে পৌঁছে যায় তাদের কাছে আর ফাইন না চাঁদাই নেওয়া হয়। মোটামুটি এভাবেই প্রচুর পয়সা উঠে যায়।

    আর এই পয়সা দিয়ে কেনা হয় রঙ, ভিজে রঙ আর বোধহয় একটু বড় দাদাদের ও উৎসাহী কাকাদের সিদ্ধির শরবতের মালমশলা । এদিন আর আবীর বা অন্য শুকনো রঙের কোনো সীন নেই। কেউ কেউ নিজের থেকে মুখে দেবার পেন্ট, বাঁদুরে রঙ ইত্যাদি কেনে।

    পিচকারী টিচকারী ও শুধু কিছু দুধেভাতে বাচ্চাদের জন্য, বেলুনও তাই, কারণ এ বাড়ির দোলে রঙ ঢালা হয় বালতি বালতি। বালতির সাইজ অবশ্য ছেলেমেয়েদের সাইজ অনুযায়ী হয়। রঙ গোলাই হয় চৌবাচ্চাতে। বড় বাড়ির কলতলার বড় চৌবাচ্চা খালি করে সেখানে সারা পাড়ার রঙ গোলা হয়। তবে রঙই, কাদা গোবর ইত্যাদি এ দোলে কড়াভাবে বারন। এক এক টার্গেট ঠিক হয় আর পুরো দল প্রায় সেই "আক্রমণ" স্টাইলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বালতি উপুড় করে দেয়। রঙ বরষে তো সত্যিই এ রঙের বর্ষা। কোথাও কোনো শুকনো অবকাশ নেই,আপাদমস্তক রঙে চোবানো হয় এই ভিজে দোলে। বড়রা রঙ খেলেনা তবে রঙ মাখে খুশীমনে আর ছোটোদের নানান ফন্দী বাতলে দেয়। কোনো কোনো গিন্নী অল্প বিরক্তি দেখায়, সন্ধ্যেবেলা আবার চান করতে হবে, তবে সেসবে কেউ পাত্তা দেয় না।

    সবচেয়ে বড় টার্গেট থাকে বাড়ির নতুন বউ বা নতুন জামাইরা। এছাড়া থাকে অনিচ্ছুক কিছু লোক যারা প্রতিবছরই বিফল চেষ্টা করে যায় আক্রমনের হাত এড়াতে। এই তালিকায় মহিলাদের সংখ্যাই বেশী। তাদেরকে ধরার জন্য তাদের বাড়ির লোকের সহায়তায় নতুন নতুন উপায় বার করতে হয়। নিয়মমাফিক প্রতি বাড়িতে ঘুরে রঙ মাখানোর ফাঁকে এইসব চ্যালেঞ্জই দোলের আসল মজা এনে দেয়। ঘরে দরজা দিয়ে বসে থাকলে তেমন কিছু লাভ হয়না। মুশকিল দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে শোবার ঘরে দোর দেওয়া কী সম্ভব নাকি, বিশেষ করে একটু গিন্নী কাজের লোকেদের পক্ষে। হাজারটা কাজ থাকেনা সংসারের! এ বাড়ির দোলের এই সময়টাই গন্ডগোলের, সিষ্টিছাড়া!

    খুব বুদ্ধি করে এক বউ হাতে বাসনের পাঁজা নিয়ে পুকুরের দিকে রওনা দিলেন।

    "এই আমার হাতে এঁটো বাসন, ছুঁবিনা এখন। রঙে বাসন নষ্ট হয়ে যাবে, ধুয়ে আসি কাপড় কেচে তখন রঙ দিস।'

    প্ল্যানটা সারা দুপুরই মোটামুটি পুকুরঘাটে কাটিয়ে এদের উৎসাহ একটু কমলে টুক করে ঘরে ঢুকে দোর দেবে। কিন্তু এরাও কম খিলাড়ী নয় কেউ, প্রথমে থমকালেও বুদ্ধিটা ধরতে পেরে যায় অবিলম্বেই। সঙ্গে সঙ্গে দুজন এগিয়ে এসে কাটান দেয়,

    "আমাদের তো ভিজে কাপড়, কোনো দোষ নেই। তুমিও তো রঙে ভিজে যাবে, দোষ হবেনা।'

    ব্যস, বাসনকোসন শুদ্ধু রঙে ডোবানো হল। লাভের মধ্যে আবার ঘরে ঢুকে বেশী করে সাবান নিতে হয় কাঁসার বাসনের রঙ তুলতে আর শাশুড়ীর গঞ্জনা, "দোলের দিনে রঙ মাখবেনা, ফ্যাশন সব। ন্যাকামো করে আমার বাসন গুলোকেও খারাপ করলে----- ' ইত্যাদি।

    সেবার বাড়ির নতুন বই রীনা বউদি। পাশের গ্রামের মেয়ে, দুদিন আগেও এপাড়ায় নিয়মিত ফ্রক পরে পড়তে আসত কাকার কোচিনে। এ বাড়ির বদমাশ ছেলেমেয়ে যারা কেউ কেউ আগে তার বন্ধু ছিল এখন দেওর ননদ, এদের কারনামা ভালোই জানা আছে তার। খাওয়াদাওয়া সেরে পড়িমড়ি করে ওপরে উঠে নিজের ঘরে দরজা জানালা এঁটে বসে থাকে। বর দুরে চাকরীর জায়গায়, বাড়িতে শাশুড়ী শ্বশুর আর এক দেওর খালি। সারা দুপুর ধরে পাড়ার সব দেওর ননদের দল ধমকি অনুরোধ ফন্দিফিকির কোনো কিছুতেই দরজা খোলাতে পারলনা। সবার মুখ চুন, এবছর বোধহয় একরত্তি এই বউটার কাছে হেরে যেতে হল, পাড়ার প্রেস্টিজ ডাউন। দু চারজন বড়রাও টিপ্পনী কাটতে শুরু করল।

    বিকেল হয়ে গেল সবাই হাল ছেড়ে দিলেও পালের গোদা কয়েকজন তখনও আশায় আশায়, মায়ের ধমকানিতেও চানে যায়না। বাইরে মাঠে লুকিয়ে অপেক্ষায়। শেষমেশ বউদির শাশুড়ী জেঠিমার খুব মায়া হল, ডেকে নিলে সবাইকে বাড়ির ভেতর চুপিচুপি। দুজন সিঁড়িতে, দুজন বৌদির ঘরের দরজার দুপাশে। জেঠিমা গলা তুলে একটা শাশুড়ীমার্কা হুঙ্কার দিলেন,

    -"বউমা, বিকেল হয়ে গেল, চা বসাবে কখন? তোমার বাবার বেরনোর সময় হল, কাপড়জামা পরে অপেক্ষা করছেন। যাও চা বসাও।'

    নতুন বউ, শাশুড়ীর এহেন আদেশ উপেক্ষা করতে পারেনা, বিকেল হয়ে গেছে সত্যি। দরজা খুলে বেরোতেই চারখানা বালতির মাল উজাড় করে বৌদির ওপর।

    নতুন জামাই এসেছে কলকাতার। তার সেই প্রথম দোল শ্বশুর বাড়িতে, কোনো ধারণা নেই, বউও সেভাবে কিছু বলে রাখেনি। এই জামাইটীর আবার একটু পান গুণ ছিল। এমন দিনে নীরস শ্বশুর বাড়িতে সব নাবালক শালাদের ভীড়ে সঙ্গীহীন, আসরের ঠিক যুত হচ্ছিল না। দ্বিপ্রাহরিক নিদ্রার শেষে একটু উদাস হয়ে পকেটে গ্লাস আর বোতল নিয়ে মাঠের ধারে পুকুরপাড়ে নিরিবিলি দেখে বসেছে। চারিদিকের শোভা অত্যন্ত মনোরম, বসন্ত বাতাসও মোলায়েম। গ্লাসে প্রথম চুমুকটা দিয়েছে কী দেয়নি সেই নির্জনে হঠাৎ চারিদিক থেকে হৈ হৈ করে বালতি আক্রমণ।

    এখনও এতদিনে যখন তার নিজের ঘরে জামাই এসে গেছে, তিনি সেই মালের শোক ভুলতে পারেননি। সুযোগ পেলেই বাড়ির প্রতিটি নতুন জামাইকে এ বাড়ির ডেঞ্জারাস শালাশালীদের থেরে সাবধান করে দেওয়া তিনি তার পবিত্র কর্তব্যের মধ্যে ধরেন!

    এদিকে এইরকম ঘোরতর সিরিয়াস বালতি ভরা রঙ নিয়ে দোল খেলার ভীড়ে ছোট্ট মেয়েটার কমলা পিচকিরীর রঙ তো জায়গাই খুঁজে পায় না। পিচকিরী অবশ্য দাদা ভরে দিয়েছে কিন্তু সে কাকে রঙ দেবে! যার কাছেই যায় সেই তো পা থেকে মাথা রঙে ভুত। একটু কোথাও খালি সাদা জায়গাই নেই যেখানে রঙ দেয় ও।

    সঙ্গী আরের দুধেভাতে আবার প্রথমেই ডিক্লেয়ার করে দিয়েছে, "আমাকে রঙ দিবিনা, আমার যে ঠান্ডার ধাত, মা বকবে কিন্তু।' ব্যস,হয়ে গেল ধাত কী অতশত বোঝেনা কিন্তু ঐ যে, বারণ করছে। কেননা এর মাও যে বলে দিয়েছে কেউ বারণ করলে তাকে রঙ না দিতে।

    দাদা দিদিদের পেছন পেছন ঘুরতে থাকে। অনেকে রঙ দিয়েও চলে যায়, কিন্তু তার আর ঠির সুযোগ করে কাউকে দেওয়া হয় না। পুরো রঙ পিচকারীতেই পড়ে থাকে। দু:খে শেষে বাড়ির দরজার সামনে ভুলো কুকুর শুয়েছিল তার গায়েই কিছুটা খালি করে পিচকারী। আহারে, ভুলোটার সঙ্গে কেউ দোল খেলেনি! কিন্তু ভুলো এহেন দাক্ষিণ্যে বিন্দুমাত্র খুশী না হয়ে কাঁচা ঘুম ভাঙানোয় দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কেঁউ কেঁউ করতে করতে পালিয়ে গেল। সামনের মাঠে বাঁধা জেঠির বুধি গাই অবশ্য ভুলোর মত এত অভদ্র নয়। তাকে মনের খুশীতে এদিক ওদিক ভালো করেসারা গায়ে রঙ দেওয়ার পরেও সে টুঁ শব্দ টুকুও না করে চোখ বুজে আরামে জাবর কেটেই গেল।

    তবু সেভাবে মন ভরলনা, বেশ দাদাদের মত উপুড় করে সব রঙ কারুর ওপর ঢেলে দিয়ে ভুত না বানাতে পারলে ঠিক বড়দের দোল খেলা হল না যে! বাড়ি ঢুকল যখন, বিকেল হয়ে গেছে। মা চানটান সেরে চায়ের আয়োজনে ব্যস্ত, বাবা পরিস্কার ধুতি পাঞ্জাবীতে তৈরী মন্দিরের দোল স্পেশ্যাল আড্ডায় যোগ দিতে যাওয়ার জন্য। মেয়ের চুন মুখ, পিচকারীতে তখনও রঙ পড়ে, "কী হয়েছে? দিদি দাদা সঙ্গে নেয়নি? কেউ বদমাইশী করেছে, কিছু বলেছে? চোখে রঙ দিয়ে দিয়েছে?' অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পরে সমস্যাটা বোঝা গেলে বাবা আবার পোশাক পাল্টে উঠোনে এসে দাঁড়াল। মনের আনন্দে সব রঙ উজাড় করে দিল পিচকারীতে পিচ পিচ শব্দ তুলে।

    পরে মা চান করাতে গিয়ে পুরুল জালি ঘসতে ঘসতে গজগজ করতে থাকল, "ভালো গেঞ্জিটা নষ্ট করার কী দরকার ছিল, খালি গায়ে দাঁড়ালেই হত। আর এই মেয়েটা হয়েছে ছিঁচকাঁদুনে, আহ্লাদী। সব বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে দোল খেলছে, তোরে সবাই মিলে রঙ মাখালো আর তুই শুধু ভুলো আর বুধিকে রঙ দিয়ে চলে এলি। মাথাটা তো এমন হয়েছে কাল নাপিত ডেকে ন্যাড়া করতে হবে মনে হচ্ছে------ইত্যাদি।' ন্যাড়া হতে হওয়ার ভয়ে কুঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর বিনা প্রতিবাদে মায়ের সোডা শ্যাম্পুর আক্রমণ সয়ে যায়।

    সন্ধ্যায় পোকা ময়রার মিষ্টির দোকান হিমশিম খায় খদ্দেরের চাহিদায়। সব বাড়ি থেকে মিষ্টির থালা বেরোয় এ বাড়ি ও বাড়ি মিষ্টি বিলি করতে। বাড়ি বাড়ি সন্ধ্যে দেওয়া শেষ হলে শুরু হয় ঠাকুরের আরতি। অন্যদিনে সবাই মন্দিরে নিয়মিত না এলেও আজ এসে সবাই জড়ো হয়। আরতি তারপর শীতল দেখানো হয় আজ লুচি ক্ষীর, দোলের স্পেশ্যাল খাওয়া ঠাকুরের জন্য। সব শেষে ঠাকুর পাল্কী করে বেরোন পোড়া ঘর দেখতে। আজকে আর চাঁচরের মত অত ধুমধাম নেই, কীর্তনের দলও অনুপস্থিত। শুধু বাড়ির লোক, ব্রাহ্মনেরা আর কাঁসর ঘন্টা। যাত্রার পথ আজ সংক্ষিপ্ত, শুধু ঠাকুরের চাঁচর অবধি। যেতে যেতে পুরুতদাদু মন্ত্র পড়তে পড়তে পোড়া চাঁচরে জল ছিটোতে থাকেন। রাস্তায় কারুর চোখে পড়ে গেলে থেমে ঠাকুর প্রণাম করে, আজ আর কালকের ভীড় নেই কোথাও। সেই পোড়া কুঁড়েঘরের চাঁচরে এসে আবার একপ্রস্থ পুজো হয়। ফিরে এসে মন্দিরে ঢোকার আগে প্রায়শ্‌চিত্তের পুজো, ঠাকুরের দোল শেষ!

    আর আমাদের দোল? না শেষ হয়েও হয়না, একটু বাকী থাকে। খাওয়াদাওয়ার শেষে নতুন আর কমবয়সী বউদের উৎসাহে পাড়ার মাঝখানের মাঠে মাদুর পড়ে জোৎস্নায়। ছোটোদের সাথে গিন্নীরাও এসে বসে পান গালে দিয়ে, কত্তারা অবশ্যই থাকেনা এ আসরে সব ছেলে ছোকরাদের ব্যাপার।

    অবশ্য সেইসব ছোকরা ছেলেদেরও এ আসরে দেখা যায়না। তারা তখন সিদ্ধিতে বুঁদ হয়ে অন্য খানে অন্য আসরে। সেসব গল্প চট করে প্রকাশ হয় না, সারা বছর ধরে একটু একটু করে প্রকাশ্যে আসতে থাকে, কে কী বলেছে করেছে সিদ্ধিলাভ অন্তে, কে কীভাবে হেসেই গেছে রাতভোর!

    জোৎস্না আর বসন্তের হাওয়ায় সব কিছুই কেমন যেন অন্যরকম লাগে, বেশী ভালো, বেশী মধুর। তাই যখন নবৌদি গান ধরে

    আজ হোলী খেলব শ্যাম তোমার সনে
    একলা পেয়েছি তোমায় নিধুবনে
    -----------------------
    কুঙ্কুম পরাব তোমার রাঙা চরণে।


    নবৌদির ক্যারকেরে গলায়ও (সবাই বলে নবৌদির অমনই গলা, স্বপ্না চক্রবর্তীর মত) ঐ গান অপার্থিব, স্বপ্নের মত মনে হয়।

    এমনিভাবেই শেষ হয় আমাদের বাড়ির দোলের আসর, দোল, যা আসলে সবার দোলের একদিন পরে হয়!!!!!!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৬ মার্চ ২০১১ | ৯৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন