চারপাশে কত ধরনের লোকজন দেখতে পাই। কেউ খুব হাসিখুশি, কারুর মুখ সবসময়ই গোমড়া। কেউ হোমড়া-চোমড়া, কেউ ক্যাবলা। কেউ সবসময় কিছু ভাবছে, কারুর মনে কোনো চিন্তাই নেই..বিন্দাস।
আমরা পছন্দ করি সেইসব মানুষকে যারা প্রচুর কথা বলে। যারা সব সময় পরিবেশ মাতিয়ে রাখে। কোনো আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে তারাই জ্বলজ্বল করে। আর তাদের আলোতে চাপা পড়ে যায় কিছু মানুষ যারা কম কথা বলে।
কিছু মানুষ আছেন যারা সবার সঙ্গে খুব সহজেই বন্ধুত্ব করে ফেলতে পারেন। হাসি ঠাট্টা মজায় মেতে ওঠেন মুহুর্তের মধ্যেই। আর কিছু মানুষ আছেন যারা নিজের মনের কথাটা ঠিক গুছিয়ে বলে উঠতে পারেন না বলে যেকোনো আড্ডাতেই সবার অগোচরেই থেকে যান। সাধারণ ভাবে এই ধরনের মানুষজনদের অন্তর্মুখী বলা হয়।
এই মানুষদের নিয়ে প্রচলিত কিছু ধারণা রয়েছে যার কারণে সিংহভাগ মানুষ মনে করে থাকে অন্তর্মুখী হওয়া একটি নেতিবাচক ব্যাপার। বেশিরভাগ মানুষ ভেবে থাকে অন্তর্মুখীরা মানুষেরা খাপ খাওয়াতে পারেনা, তার কারণ হলো অন্তর্মুখী মানুষদেরকে বহির্মুখী ( Extrovert ) মানুষদের সাথে তুলনা করার প্রবণতা। কিন্ত আদতে অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী মানুষের মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ন আলাদা, এমনকি তাদের ডোপামিন (Dopamine) নিঃসরন প্রক্রিয়াও ভিন্নভাবে হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনি অন্তর্মুখী নাকি বহির্মুখী তা জন্ম থেকেই নির্ধারিত।
অন্তর্মুখী মানুষদের নিয়ে প্রচলিত কিছু ধারনা বা ভুল ধারণা আছে যেগুলো নিয়ে এই আলোচনা।
যেমন ধরুন, অনেকেই মনে করেন অন্তর্মুখী মানুষেরা বেশি কথা বলতে পছন্দ করেননা, তারা লাজুক কিছু ক্ষেত্রে অভদ্রও বটে, মানুষজন বেশি পছন্দ করেন না। অন্তর্মুখীরা সবসময় একা থাকতে চায় , তারা জানে না কিভাবে আনন্দে সময় কাটাতে হয়। তারা অদ্ভুত তারা নির্লিপ্ত।
হুমম.....
একবার চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন। অন্তর্মুখী মানুষেরা কথা বলেনা যতক্ষন পর্যন্ত না তাদের বলার কিছু আছে। শুধু বলার জন্য বলা কথাবার্তা তাদের আগ্রহের সঞ্চার যোগাতে পারে না। একজন অন্তর্মুখী মানুষের সাথে তার পছন্দের বিষয়ে কথা বলেই দেখুন, এরপর তাকে থামাতে আপনার বেশ বেগ পেতে হবে।
এঁরা প্রায়ই কোন কারণ খুঁজে পান না নিয়ম রক্ষার্তে লোক দেখানো সামাজিকতায়। তারা চায় সবাই আসল এবং সৎ থাকবে, কোন মেকি থাকবে না। দুর্ভাগ্যবশত বেশিরভাগ সমাজে এমনটা অগ্রহনযোগ্য , যার কারণে অন্তর্মুখীরা সর্বদা চাপ অনুভব করে যা তাদের জন্য ক্লান্তিকরও বটে।
কিন্তু, একটা মজার ব্যাপার হলো, অন্তর্মুখী মানুষেরা তাদের কাছের মানুষ অল্প হলেও , সেই সম্পর্কগুলোর গভীর কদর এবং শ্রদ্ধা করে থাকে।
অন্তর্মুখীরা কখনও কখনও একা থাকতে চায়। তার কারণ তারা প্রচুর চিন্তা করে, তারা স্বপ্ন দেখে। একবার অনুভব করে দেখুন তাদের মনের কথা আপনিও সেই স্বপ্নের অংশীদার হতে পারেন।
কিন্ত সত্যিকার অর্থেই তারা একা হয়ে পড়ে যখন তাদের কেউ থাকে না নিজের অনুধাবন নিয়ে কথা বলার মতো। তারা সত্যিকারের সচেতন সঙ্গ পাওয়ার জন্য আকুতি করে, একটি সময়ে শুধু একটি মানুষের কাছ হতে।
অন্তর্মুখী মানুষেরা সাধারণত ঘরে কিংবা প্রকৃতির মাঝে নিজেদের শান্তি খুজে নেয়, ব্যাস্ত জনবহুল জায়গা তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা নয়। তারা সাধারণত হৈ হুল্লোড় করে বেড়ানো প্রজাতি নয়, যদি আশেপাশে প্রচুর হৈ চৈ থাকে, তারা নিস্তেজ অনুভব করতে থাকে। তাদের মস্তিস্কের ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার খুবই স্পর্শকাতর। অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী মানুষের মস্তিস্কের প্রভাবশালী স্নায়বিক পথ একেবারেই ভিন্ন।
কথার ভিড়ে যাতে নিস্তব্ধতার কথবকথন হারিয়ে না যায়, কম কথা বলা অন্তর্মুখীরা সেই চেষ্টাই করে।
তাই, ভিড়ের কোণে হারিয়ে যাওয়া লাজুক সেই মানুষটার পাশে এসে দুটো কথা বলুন, হয়তো, তিনি আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধুদের একজন হয়ে উঠতে পারেন।
প্রসূন
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।