এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • য়া দেবী সর্বজনেষু : এবং তস্য তস্য

    শিবাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ | ১৩৬৩ বার পঠিত
  • " দুর্গো দৈত্যে মহাবিঘ্নে ভববন্ধে কুকর্মণি।
    শোকে দুঃখে চ নরকে যমদন্ডে চ জন্মনি ।।
    মহাভয়েহতিরোগে চাপ্যাশব্দো হন্তুবাচকঃ ।
    এতান হন্ত্যেব যা দেবী সা দুর্গা পরিকীর্তিতা ।।" (শব্দকল্পদ্রুম)

    ঋগবেদে দশম মন্ডলের ১২৫শ দেবীসূক্ত দেবীপূজার প্রাচীনতম মন্ত্র। এই সূক্তটি অম্ভৃণ ঋষির ব্রহ্মবাদিনী কন্যা বাকে'র একটি উক্তি। তিনি তপস্যাবলে ব্রহ্ম-তাদাত্ম্য লাভ করেছিলেন। সিদ্ধির সেই উপলব্ধি লাভের পর তিনি অনুভব করেছিলেন সবই ব্রহ্মের অংশ এবং তিনি নিজের মধ্যে সমস্ত দেবতা, চরাচর বা সার্বভৌম বিশ্বকে ধারণ করে আছেন। এটা ঠিক কোনও দেবীমহিমা নয়। কিন্তু পরবর্তীকালে এই অনুভবটিকে কেন্দ্র করেই আমাদের শক্তিতত্ত্বের বিকাশ হয়েছিলো। এছাড়া ছিলো রাত্রিসূক্ত। পরে তন্ত্রমতে মার্কন্ডেয়চন্ডীর প্রথম অধ্যায়ে রাত্রিসূক্তে দেবীর উল্লেখ এভাবে পাওয়া যায়।
    " কালরাত্রি মহারাত্রি মোর্হরাত্রিশ্চ দারুণা....", কালীর উদ্ভবের পিছনে এই কালরাত্রিদেবীর ভূমিকা আছে এজাতীয় একটি মত প্রচলিত আছে।
    ------------------------------
    সরাসরি বেদের মধ্যে দেবীর উৎস আছে বলে যাঁরা মনে করেন, তাঁদের কাছে দেবীর উৎপত্তি যজ্ঞের আগুন থেকে হয়েছে বলে প্রতীত হয়।
    " বি পাজসা পৃথুনো শোশুচানো
    বাধস্ব দ্বিষো রক্ষসো অমী বাঃ ।
    সুশর্মণো বৃহতঃ শর্মণি
    স্যামগ্নেরহং সুহবস্য প্রণীতৌ ।।" ( ঋগবেদ-৩/১৫/১)

    এটি বস্তুত যজ্ঞাগ্নির প্রার্থনামন্ত্র। এই মন্ত্রটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে স্বামী অভেদানন্দ বলেছিলেন ' ঋগবেদে অগ্নিরূপিণী দুর্গাদেবীকে শত্রুবধকারিণী ও রাক্ষসহন্ত্রী বা অসুরনাশিনী বলা হইয়াছে।"
    -------------------------------------------
    ঋগবেদের প্রাথমিক কালে দেবতা বলতে তিনজন দবঙ্গ পুরুষের নাম পাওয়া যায়, অগ্নি, সোম ও ইন্দ্র। এঁরাই এদেশের আদি দেবতা। যদিও বরুণ, মিত্র, সূর্য, বৃহস্পতি, বিশ্বকর্মণ বা ত্বষ্টার নামে শ্লোক রচিত হয়েছিলো, কিন্তু সেগুলির সংখ্যা ঐ তিন দেবতার তুলনায় অনেক কম। দেবীরাও যে ছিলেন না তা নয়। কিন্তু একজন দেবীই ঐ তিন পুরুষদেবতার সঙ্গে প্রায় এক মাত্রার বন্দনা আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন। তাঁর নাম ঊষস, অন্য নাম ঊষা। এই দেবী প্রত্যূষের আলোর সঙ্গে চিহ্নিত হতেন। তিনি ছিলেন সূর্যের পুরোভাগিনী। তাঁর কাজ ছিলো অন্ধকার দূর করা, অশুভশক্তিকে বিতাড়ন করা। তিনি শক্তিদায়িনী, শ্বাস ও জীবনের অধিষ্ঠাত্রী। তিনি ঋতের সঙ্গিনী, যাবতীয় মহাজাগতিক, সামাজিক ও নৈতিক বিবর্তনের দেবী। এর বিপরীতে রয়েছেন 'রাত্রি' দেবী। যাঁকে ঊষসের যমজ ভগ্নীও বলা হয় । রাত্রিদেবীর লক্ষণগুলি ঊষসের বিপ্রতীপ। ঊষস যখন স্বস্তি, শান্তি ও ইতিবাচক প্রতীক, তখন রাত্রি, তামসিক, অন্ধকারের নিয়ন্তা। এই দু'জন ছাড়া দেবী রয়েছেন পৃথিবী, অদিতি, সরস্বতী, বাক। এঁরা সবাই মোটামুটিভাবে সমৃদ্ধিবাচক মাতৃত্বমুখী কল্পনা। কিন্তু একটি দেবীকল্পনা, নাম নৈঋর্তি, এঁদের সবার থেকে আলাদা। ঋগবেদে যদিও এই দেবীর উল্লেখ বারবার পাওয়া যায়না, কিন্তু যখন তা আসে তখন তিনি ভয়ংকরী। তিনি মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতীক। আদি বৈদিক প্যান্থিয়নের একমাত্র নিষ্ঠুর দেবী। পরবর্তীকালের রণরঙ্গিনী দেবী দুর্গার কল্পনা'র মধ্যে মিশে আছে আদিকালের ঊষস ও নৈঋর্তি দেবীর যোগফল।
    -------------------------------------------
    "তামগ্নিবর্ণাং তপস্যা জলন্তীং
    বৈরোচনীং কর্মফলেষু জুষ্টাম।
    দুর্গাং দেবীং শরণমহং পেঅপদ্যে
    সুতরসি তরসে নমঃ ।।

    বেদের যুগে তৈত্তিরীয় আরণ্যকের 'নারায়ণীয়' উপনিষদের এই "তামগ্নিবর্ণাং তপসা জ্বলন্তীং" শ্লোকটিকে উল্লেখ করে অনেকে 'দুর্গা' ই যে প্রকৃত যজ্ঞাগ্নি এমত দাবি করেছিলেন। কিন্তু এসবের সঙ্গে পরবর্তীকালের লোকপ্রিয় রণদেবীর কোনও সম্পর্ক নেই। উত্তরবৈদিক যুগ ও পুরাণযুগে দুর্গা নামে যে দেবীর কথা বারবার পাই, তাঁর দু'টো প্রকাশভঙ্গি প্রধান। একটি তাঁর রণদুর্মদ যোদ্ধা মূর্তি, অন্যটি প্রজননমুখী শষ্যের দেবী। মজার ব্যাপার হলো এই দুই কল্পনারই শিকড় রয়েছে অনার্য সভ্যতার মাটিতে। আর্য সভ্যতার অন্দরমহলে দুর্গার মূল খুঁজতে গেলে একটু নিপাতনে সিদ্ধ হয়ে যাবে। দুর্গার যাবতীয় কল্পনার সঙ্গে পর্বত-অরণ্যের যোগসূত্র পাওয়া যায়। তা সে হিমালয় হোক বা বিন্ধ্য পর্বত। বিবর্তনের স্তরে তাঁর একটি কল্পিত রূপ পর্বতরাজ হিমালয় কন্যা পার্বতী। যিনি অনার্যদেবতা শিবঠাকুরের শক্তি বা সঙ্গিনী। এটি আর্য প্যান্থিয়নের সংযোজন। কিন্তু অন্যরূপটি অধিক প্রাচীন এবং অধিকতর বিশ্বস্ত। এদেশে আর্যদের আসার বহু আগে থেকে বিন্ধ্যপর্বত ও তার অরণ্যপ্রদেশে শবর, আভীর প্রভৃতি পার্বত্য আদিম উপজাতিদের বসবাস রয়েছে। তাদের মাতৃশক্তি হিসেবে একজন দেবী বহুদিন ধরেই পূজিত হয়ে আসছেন। নাম, বিন্ধ্যবাসিনী। এই দেবীর পূজাপদ্ধতিতে সামিল রয়েছে মদ্য-মাংস-রুধির পানের বিধি। হরিবংশ, বিষ্ণুপুরাণ ও মহাভারতে (বিরাট পর্ব) এই পূজাপদ্ধতিকে একান্তভাবে অনার্য সুলভ বলা হয়েছে। বস্তুতঃ আর্যমতেও একসময় 'বনদুর্গা' নামে এক দেবীকে স্বীকার করা হয়েছিলো, যিনি বিন্ধ্যবাসিনী দেবীর নিকটতম বিগ্রহ, সম্ভবতঃ অরিজিন্যাল 'দুর্গা'। একটা ব্যাপার মোটামুটি স্বীকৃত, খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতক, অর্থাৎ গুপ্তযুগের সময় থেকেই যুদ্ধপরা, দানবদলনী দুর্গার রূপকল্পনা করা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু মৌলিকভাবে দুর্গা'র শিকড়ে রয়েছে প্রকৃতি ও শষ্যদেবীর জলমাটি। ফলতঃ দেবীর মাতৃতান্ত্রিক পরিচয়টিই প্রধান হয়ে উঠেছে।
    --------------------------------------------
    সিংহবাহিনী, পর্বতবাসিনী দেবীর ধারণাটি সমগ্রতঃ এদেশের সম্পত্তি নয়। অতি প্রাচীনকাল থেকে এশিয়া, য়ুরোপ এবং আফ্রিকার দেবীপূজার ইতিহাসে শৈলসুতা, পার্বত্যদেবীর সন্ধান পাওয়া যায়, যিনি সিংহারূঢ়াও বটে। ক্রীট দ্বীপ থেকে পাওয়া সিগনেট আংটিতে একজন দেবীকে দেখা যাচ্ছে, যিনি পর্বতচূড়ায় দুটি সিংহ সহকারে দাঁড়িয়ে আছেন। আনাতোলিয়ার সিংহবাহিনী অন্তস্বত্বা দেবী সিবিলি'ও পর্বতীয় এবং মাতৃদেবী। 'উমা' শব্দটিই সম্ভবতঃ সংস্কৃতভাষার নয়। ব্যাবিলনীয় বা আক্কাডীয় উৎস রয়েছে তার। অতএব দেবী দুর্গা কৈলাশবাসিনী বা বিন্ধ্যবাসিনী , যাই হোন না কেন, নিছক আর্য দেবী ন'ন।
    আমাদের দেশের ব্রাহ্মণ্য দেবতা সমাজের কাঠামোটি প্রথম দানা বাঁধতে শুরু করে চতুর্থ শতক থেকে। তখন দেশে গুপ্তযুগের প্রথম পর্বের সূচনা হয়েছে। এই সময়টি আদি পুরাণযুগ। পুরোনো বৈদিক দেবদেবীদের ধারণাগুলি বিশদ বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো সারা চতুর্থ-পঞ্চম শতক ধরে। নতুন দেবতারা ক্রমান্বয়ে কল্পিত হচ্ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত বা বিবর্তিত হয়ে যাচ্ছিলেন নানা প্রাকবৈদিক ও বৈদিক ঐশী প্রতীকগুলি। ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির মেরুদন্ড ছিলো পুরুষতান্ত্রিক বিচারব্যবস্থা। স্বভাবতঃ দেব কল্পনার ক্ষেত্রেও পিতৃতান্ত্রিক ঝোঁকটিই প্রাথমিকতা পেতো। বেদের ব্রহ্মা বা ব্রহ্মণ এবং বিষ্ণু নামের ধারণাগুলির রূপ ও তাৎপর্য বিশেষভাবে নতুনমাত্রা পেতে যায়। স্রষ্টা ব্রহ্মা এবং পালক বিষ্ণুর আধিপত্য ক্রমশঃ বেড়ে উঠতে থাকে। তবে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো অনার্য কৌমসমাজের অধিপতি দেবতা শিব খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মহাদেবতার মর্যাদা লাভ করেন। বৈদিক প্যান্থিয়নে শিব ছিলেন না। 'রুদ্র' নামের এক দেবতাকে শিবের সমান্তরাল লক্ষণভাগী করে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু হয় এই পুরাণযুগের সূচনা থেকেই। এর কারণটি সম্ভবতঃ ততোটা অধ্যাত্মিক প্রেরণা থেকে আসেনি, যতোটা ছিলো তার রাজনৈতিক তাৎপর্য। সংখ্যাগুরু অনার্য লোকজনকে আর্য ব্রাহ্মণ্য ধর্মের আওতায় নিয়ে আসার জন্য এটা ছিলো একটা মাস্টারস্ট্রোক। এই সময় থেকেই শক্তিবাদী অধ্যাত্মিক আনুগত্যের বিকাশটি বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বৈদিক স্বাধীন দেবীরা এক একজন পুরুষদেবতার সঙ্গিনী হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকেন। যেমন, সরস্বতী বা লক্ষ্মী। তবে এঁদের অভিব্যক্তিগুলি ছিলো পারিবারিক সহধর্মিনীর আদলে। এঁরা সচরাচর পুরুষদেবতার শক্তি হিসেবে আসেননি। নারীদেবতার 'শক্তি'রূপে প্রতিস্থাপন শুরু হয় অনার্য শিবের দৌলতে। পর্বতরাজ কন্যা পার্বতীকে দিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা। আমাদের তন্ত্র, আগম, পুরাণ ইত্যাদির ভিত্তি তৈরি হয় পুরুষ মহাদেবতা ও নারীরূপী প্রকৃতি'র প্রতিচ্ছবিকে বিভিন্ন দেবীকল্পনার মাধ্যমে ধরতে চাওয়ার প্রচেষ্টা থেকে। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন একটি দেবী কল্পনা, নাম দুর্গা। তিনি পুরুষ দেবতা নির্ভর ছিলেন না। তিনি স্বাধীনা এবং দানবদলনই তাঁকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য। এই দানবরা কিন্তু সবাই নানা দৈবী বরপ্রাপ্ত পুরুষ। দানব মানে অনার্য, বিক্রমশালী বীরপুরুষদের দল। যাঁদের প্রতাপে আর্য ব্রাহ্মণ্য ব্যবস্থা ভীত থাকতো। তাঁদের বিনাশ করার জন্য মূলতঃ এক 'অনার্য দেবী'কেই দায়িত্ব দেওয়া হলো আর্যসমাজের পক্ষ থেকে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা চাতুরীর সম্ভবত আদিতম প্রয়োগ।
    -------------------------------------------
    " দুর্গেতি দৈত্যবচনো হপ্যাকারো নাশবাচকঃ।
    দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা ।
    বিপত্তিবাচকো দুর্গশ্চকারো নাশবাচকঃ।
    ত্বং ননাশ পুরা তেন বুধৈর্দুর্গা প্রকীর্তিতা ।। ( শব্দকল্পদ্রুম)

    আমাদের পুরাণকথায় 'দেবী দুর্গা'র গড়ে ওঠার ইতিবৃত্তটি সংহতরূপে নথিবদ্ধ হয় মার্কন্ডেয়পুরাণের ৮১ থেকে ৯৩ অধ্যায়ের 'দেবী-মাহাত্ম্য' নামক অংশে। যদিও দুর্গা ও মহিষের বৃত্তান্ত আরো নানা পুরাণ, যেমন বামনপুরাণ, বরাহপুরাণ, শিবপুরাণ, দেবীভাগবতপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ইত্যাদিতে বেশ বিশদে ধরা আছে।। শুধু মহিষ নয়, অন্য অসুর-দানব, যেমন শুম্ভ-নিশুম্ভের সঙ্গে দুর্গার সংঘর্ষের গল্পও এই সব পুরাণ-উপপুরাণে পাওয়া যায়। দুর্গা নামক দেবীর পূজাপদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে কালিকাপুরাণ, মহাভাগবতপুরাণ ও দেবীপুরাণে।

    দুর্গা'র উৎপত্তি নিয়ে নানা পুরাণে বিভিন্ন উপাখ্যান রয়েছে। বিষ্ণুপুরাণে বলা হয়েছে দুর্গা'র জন্ম বিষ্ণুর তেজ থেকে। দুর্গা, বিষ্ণুর ক্ষমতা, শক্তি ও সৃজনশীলতার মূর্ত অস্তিত্ব। বিষ্ণুর থেকে দুর্গা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেই বিষ্ণুদেবতা শয়নে পদ্মনাভ অবস্থা লাভ করেন। 'দেবী-মাহাত্ম্যে' রয়েছে পিতামহ ব্রহ্মা দুর্গাকে আহ্বান জানাচ্ছেন মধু-কৈটভ'কে বধ করার উদ্দেশ্যে বিষ্ণুর নিদ্রাভঙ্গ করার অনুরোধ নিয়ে। স্কন্দপুরাণে আবার অন্য গল্প। 'দুর্গ' নামের এক বেয়াদব অসুর যখন দেবতাদের ধ্বংস করার ভয় দেখাচ্ছিলেন, তখন শিব , পত্নী পার্বতীকে অনুরোধ করেন তাঁকে বিনাশ করার জন্য। পার্বতীর ভিতর থেকে তখন দেবী যুদ্ধং দেহি রূপে বেরিয়ে এসে দুর্গকে পরাজিত করেন। তখন তাঁর নাম হয় 'দুর্গা'। আবার এই 'দুর্গ' অসুর মহিষরূপ ধারণ করার পর নতুন করে লড়াই শুরু হয়। একই রকম গপ্পো রয়েছে মধুকৈটভ বধের অনুষঙ্গেও। সাবেক পার্বতীদেবীর খোলস ত্যাগ করে দেবী দুর্গা'র জন্ম হয়। এইভাবেই আর্য প্যান্থিয়নের প্রথম রণরঙ্গিনী দেবী রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূতা হ'ন।
    -----------------------------------------
    দেবী দুর্গার শ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে অসুর মহিষকে বিনাশ করাটাই প্রধান। তাই এই উপাখ্যানটির সঙ্গে বিজড়িত দুর্গার যে জন্মকাহিনীটি প্রচলিত, সেটাই বিশেষ লোকপ্রিয়। মহিষ, একজন বীরোত্তম ও তপস্বী অসুররাজের নাম। তিনি কঠিন তপোশ্চর্যা করে শিবের আশীর্বাদ লাভ করেন। একের এক যুদ্ধে দেবতাদের পর্যুদস্ত করে রাজা মহিষ তাঁদের প্রায় বিশ্বছাড়া করে দেন। তখন পরাজিত দেবতারা একত্র হয়ে মহিষকে উচিত শিক্ষা দেবার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ক্রুদ্ধ দেবতাদের সমবেত তেজ ও শক্তি থেকে পরমাসুন্দরী এক আলোকময়ী নারী মূর্ত হয়ে ওঠেন। অসুররাজ মহিষ বরপ্রাপ্ত ছিলেন কোনও যোনিসম্ভূত প্রাণী তাঁকে বধ করতে পারবে না। তাই এই সমবেত 'জ্যোতিসমাহারের' প্রসঙ্গ এসেছে। সেই নারীর বিভিন্ন অঙ্গ গড়ে ওঠে নানা পুরুষ দেবতার দাক্ষিণ্যে। মুখমন্ডল শিবের দান, কেশরাশি যমের, বাহুদ্বয় বিষ্ণুর, ইত্যাদি। আবার এই দেবীকে অস্ত্র সরবরাহ করেন এই সব দেবতারাই। শিব দেন ত্রিশূল, বিষ্ণু দেন চক্র, বায়ুদেবতা ধনুর্বাণ, হিমালয় সিংহবাহন, ইত্যাদি। সৃষ্ট হবার পরমূহুর্তেই এই দেবী ঘোররবে রণহুংকার দিতে থাকেন।

    এখানে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার দেখা যাবে। পরাজিত পুরুষদেবতারা তাঁদের 'তেজ' দিয়ে একজন পুরুষদেবতার সৃষ্টি না করে একজন নারীদেবীর সৃষ্টি করলেন। পুরাণযুগের ঘোর পিতৃতান্ত্রিক আবহে তৎকালীন কবিকথকেরা যে এরকম একটি 'বৈপ্লবিক' ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন সেটা তাঁদের কল্পনাশক্তির উৎকর্ষের পরাকাষ্ঠা বলা যায়। এই সময়কালের নারীরা মোটামুটিভাবে গৃহকোণে নির্বাসিত হয়ে গিয়েছিলেন। তবু যখন সেই রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থা কেন একজন বীরশ্রেষ্ঠা, সমরনিপুণা, সম্মোহনশক্তি সম্পন্না নারীর প্রয়োজন বোধ করলো, তার কোনও বাস্তবিক ব্যাখ্যা কোথাও পাওয়া যায়না। অবশ্য নানা ধরণের দার্শনিক, প্রতীকী, রূপকধর্মী ব্যাখ্যান দেখতে পাওয়া যায়। তবে সেগুলি কবিলেখকদের মনের মাধুরী। সমাজতত্ত্বের দিক থেকে গ্রহণযোগ্য ডিসকোর্স কোথাও লিপিবদ্ধ হয়নি। এই দেবী নিজের রণদুর্মদ প্রবৃত্তি শুধু একার কাছে সীমাবদ্ধ করে রেখে দেননি। তিনি সহযোদ্ধা হিসেবে নিজের 'শক্তি' থেকে সৃষ্টি করেন দুর্ধর্ষ,ভয়াল রূপের সপ্তমাতৃকা ও যোগিনীদেরও। এই সমস্ত দেবী'রা ভয়ংকর, রক্তপিপাসু ও বন্যপ্রবৃত্তি সম্পন্না। এই নারীবাহিনীকে যদিও পুরুষদেবতারা বিশেষভাবে বন্দনা করতেন, কিন্তু দুর্গা ও তাঁর বাহিনী অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধে কখনও কোনও পুরুষদেবতার সাহায্য গ্রহণ করেননি।
    ---------------------------------------------
    সে কালে দেবী দুর্গার এই বিশেষ চারিত্র্যটি তাঁকে একটা জগৎপালিনী মহিমা প্রদান করে। পুরাণযুগে তাঁর সব কার্যকলাপই ছিলো একজন নারীর পক্ষে বেশ 'অসামাজিক'। প্রায় সব বিচারেই দুর্গা একজন 'আদর্শ' হিন্দু নারীর মডেলটিকে অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি আত্মসমর্পণে বিশ্বাসী ন'ন। তাঁর কোন'ও 'গৃহকর্মনিপুণা'র ইমেজ নেই। তিনি কোনও পুরুষদেবতার অধীনে থাকেন না। যে কাজটি তিনি ভালো পারেন, তা একান্তভাবে পুরুষের মৌরসিপট্টা। সেটি হলো সবিক্রমে যুদ্ধ করে যাওয়া। অন্যান্য শক্তিদেবীদের মতো তিনি পুরুষদেবতাদের 'শক্তি' ধার দেননা। উল্টে তিনি পুরুষদেবতাদের থেকে শক্তি আহরণ করে যুদ্ধক্ষেত্রে কমাল দেখাতে থাকেন। তিনি তাঁর গুণমুগ্ধ পুরুষ পৃষ্ঠপোষকদের যাবতীয় তেজ, অগ্নি, শক্তি, তাপ আত্মস্থ করে ক্রমাগতঃ সফল হয়ে যেতে থাকেন। একজন 'সামাজিক' সত্ত্বার প্রতি সমর্পিত নারীর এই লক্ষণ থাকেনা।
    ----------------------------------------------
    দেবী দুর্গার প্রতিপক্ষেরা সবাই ছিলো বীর, বিক্রমশালী অনার্য অসুর নৃপতি। তাঁরা সবাই বহু আর্যবীরকে পর্যুদস্ত করে বিজয়গৌরব উপার্জন করেছেন। সে জন্য কোনরকম পুরুষ রক্ষীরহিত দুর্গা'কে তাঁরা নিতান্ত নিরাপত্তাহীন মনে করতেন। অনন্যসাধারণ নারীটির রূপগুণে গভীর মুগ্ধতা বশতঃ তাঁরা বিবাহের প্রস্তাব দিতেন। কিন্তু দুর্গা তাঁদের অত্যন্ত কটুবাক্যে বিদ্ধ করে যুদ্ধে আহ্বান জানাতেন। তাঁর শর্ত ছিলো যে বীর তাঁকে পরাজিত করতে পারবে, তাঁকেই তিনি স্বামিত্বে বরণ করবেন। দেবীভাগবত পুরাণে রয়েছে অসুররাজ মহিষের সঙ্গে যুদ্ধ হবার আগে তাঁদের দুজনের মধ্যে দীর্ঘ সংলাপ বিনিময় হয়। সেখানে দুর্গার কটুকথা'র বন্যা মহিষের কাছে প্রেমপ্রকাশের নিশ্চিত ছল মনে হয়েছিলো। বস্তুতঃ এই নারীর সব কিছুই অসুররাজের কাছে চূড়ান্ত যৌন আবেদনময়, অপ্রতিরোধ্য মনে হতো। একজন নারী, যে কারুর মাতা, ভগ্নী, দুহিতা বা ভার্যা কিছুই নয়, কিন্তু সে অনন্যা, অতুলনীয়া? বীরোত্তম অসুররাজ কখনও কোথাও এমনটি দেখেননি। তিনি জানতেন না, দুর্গার দৈবী রূপরাশি, সম্মোহক ভঙ্গিমা, পুরুষের কাছে আত্মসমর্পণে সার্থক হবার জন্য সৃষ্টি হয়নি। তার একমাত্র উদ্দেশ্য নারীত্বের জাদুতে আকর্ষণ করে প্রতিপক্ষকে যুদ্ধে বিনষ্ট করা। কারণ কোনও পুরুষই ভাবতে পারেনা এরকম একজন মাদকতাময়ী নারী এতো ভয়ংকর বিনাশী ক্ষমতার অধিকারিনী হতে পারেন। যতোক্ষণে তাঁরা বুঝতে পারেন ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
    ----------------------------------------------------
    বিন্ধ্যাচলের অরণ্যপর্বত সংকুল প্রদেশের অনার্য শবর সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য অনুযায়ী আদি দুর্গার এই মাংসভোজী, রুধিরপিয়াসী রূপ আর্যাবর্ত্মের নারীত্বের ছাঁচকে একেবারে প্রত্যাখ্যান করে। 'দেবী-মাহাত্ম্যে' রয়েছে মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে দেবী প্রচুর মধুপান ( মদ্যপান) করে রক্তনয়না হয়ে ঘোর রবে গর্জন করতে করতে অসুররাজকে আক্রমণ করলেন। এই দেবীকে পূজা নিবেদনের সময় তাঁর আরণ্য উপজাতিক ভক্তরা নিজের বা অপরের রুধির অঞ্জলি দিতেন। আর্যসভ্যতার মানদন্ড অনুযায়ী এই মডেলটি কখনও'ই এক নারী দেবতার গরিমা হতে পারেনা। মহিষের সঙ্গে সংলাপ বিনিময়ের সময় দুর্গা তাঁকে বলছেন যে তিনি নিদ্রা, তিনিই ক্ষুধা, তিনি অন্ধকার, তিনিই পিপাসা। এর কোনটাই 'দেবী' মহিমার অংশ হতে পারেনা। তিনি পশ্চিমের পরিভাষায় একজন বরেণ্য অ্যান্টি-হিরো।
    -----------------------------------------------------
    পুরাণযুগের 'শাস্ত্রকার' কবিরা দুর্গা নামক প্রতীকটির মধ্যে একজন 'মহাদেবী'র মাহাত্ম্য আরোপ করতে শুরু করলেন। তাঁর সম্বন্ধে লেখা হতে লাগলো, তিনিই মহাবিশ্বের সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়ের নিয়ন্তা। তিনিই সার্বভৌম জগতের সৃষ্টিকর্ত্রী এবং পালয়িতা জননী। আবার সময় হলে তিনিই সব কিছুকে বিনষ্ট করে নতুন করে সৃজন করেন। এমনিতে তিনি জগজ্জননী, কিন্তু দেবতাদের রাজ্য বিপন্ন হলে তিনি আবির্ভূতা হ'ন অসুরদলনে। 'দেবী-মাহাত্ম্য' অনুযায়ী তাঁর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধযাত্রা ছিলো গোটা তিন। একটি বিষ্ণুর বকলমে মধু ও কৈটভের সঙ্গে। দ্বিতীয়, অসুররাজ মহিষ ও তাঁর সৈন্যসামন্তের সঙ্গে। তৃতীয়টি শুম্ভ-নিশুম্ভ এবং তাঁদের সেনাপতি চন্ড, মুন্ড ও রক্তবীজের বিরুদ্ধে। এছাড়া ছোটোখাটো যুদ্ধবিগ্রহ তিনি অনেক করেছেন। এর মধ্যে দুটো প্যাটার্ন রয়েছে। হয় এই সব যুদ্ধ বিভিন্ন পুরুষদেবতার বকলমে অথবা নিজস্ব প্ররোচনার তাড়নায়। তবে উদ্দেশ্যটি ধ্রুব। অধর্মের নাশ করে ধর্ম রাজত্বকে রক্ষা করা।

    হিন্দুপুরাণের টেকস্টে দুর্গার এই যে অসুরদলনী কিম্বদন্তী, তার কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে।
    ১. একজন অসুর বা দৈত্য কঠোর তপস্যা করে অপরাজেয় হবার বরপ্রাপ্ত হলো,
    ২. সেই অসুর দেবতাদের পরাজিত করে রাজ্যচ্যুত করবে,
    ৩. দেবতারা প্রতিশোধ কামনায় সমবেত হয়ে একটি দৈবী তেজস্বী অস্তিত্বের সৃষ্টি করবে অথবা শিব, বিষ্ণু বা মহাদেবীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে,
    ৪. এবার একজন দেবী নিজস্ব সেনাদল নিয়ে যুদ্ধ করতে প্রবৃত্ত হবেন,
    ৫. অসুর বা দৈত্যকে পরাজিত হতে হবে। হয় তারা নিহত হবে নয় আত্মসমর্পণ করবে,
    ৬. দেবতারা একযোগে সেই দনুজদলনীর আরাধনায় উচ্চকিত হয়ে উঠবেন।

    উল্লেখিত প্রতিটি যুদ্ধেরই ইতিহাস ও ঘটনা পরম্পরা এইভাবেই বিন্যস্ত হতে দেখা যায়।
    ---------------------------------------

    বিশ্বভুবনের সম্রাজ্ঞী হিসেবে দুর্গা কখনও রণদুর্মদ যোদ্ধা, কখনও ভক্তদের রক্ষাকর্ত্রী সার্বভৌম মাতা। দ্যাবাপৃথিবীর যাবতীয় জাগতিক যাপনের জটিল ছন্দ'কে নিপুণভাবে পরিচালনা করাই তাঁর প্রাথমিক দায়িত্ব। তিনি অনুগতদের কাছে মহাজাগতিক শক্তি ও মানবিক স্বস্তির প্রতীক। মার্কন্ডেয় পুরাণে দুর্গার মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে তিনি শক্তি, তিনিই মায়া সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রকৃতিও। 'শক্তি' অর্থে তিনি পুরুষদেবতার ক্ষমতার উৎস। আবার 'মায়া' অর্থে তিনি পুরুষদেবতাদের আধিপত্যবোধকে চ্যালেঞ্জ জানান নারীত্বের মোহবিস্তার করে। শেষ বিচারে তিনিই প্রকৃতি, যিনি যাবতীয় প্রাণের সৃজন করে থাকেন। একজন দেবীর উদ্দেশ্যে এতোগুলো চারিত্র্য আরোপ করার ব্যাপক তাৎপর্য রয়েছে। 'শক্তি' হিসেবে তিনি একটি দৈবী মহিমা। স্বর্গ বা অন্তরীক্ষবাসিনী, যেখানে দেবতারা থাকেন। অস্যার্থে, তিনি দেবলোকের অপরিহার্য অঙ্গ। আবার 'মায়া' হিসেবে তিনি পুরুষদেবতাদের 'পৌরুষ'কে কষ্টিপাথরে বিচার করছেন। যে পরীক্ষায় প্রায় সব আর্য দেবতাই ক্রমান্বয়ে ফেল করে যান। অর্থাৎ তিনি গগনবিহারী দেবমহিমার ফানুসটিকে পলকে বিনষ্ট করে, তাদের মাটির পৃথিবীতে নামিয়ে আনতে পারেন। এভাবে তিনি দৈবিক ও মানবিক ক্ষমতার কেন্দ্রগুলির মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের দুরূহ কাজটি নির্বাহ করছেন। সবার উপরে 'প্রকৃতি' হিসেবে তিনি ধরাছোঁয়ার মধ্যে আমাদের যে নৈসর্গিক ও মানবিক জগৎ, তারও অধিষ্ঠাত্রী ও সৃজনকারিনী। এই সমস্ত ক্ষমতা ও লক্ষণ দুর্গার মধ্যে কেন্দ্রিত করার পিছনে আর্য সেরিব্রাল মননের গভীর উদ্দেশ্য কাজ করেছিলো। দেবী দুর্গা'র ধারণাটিকেই মূল 'মহাদেবী' হিসেবে প্রতিপন্ন করাই ছিলো তাঁদের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যপূর্তিটির পিছনে কতোটা অধ্যাত্ম তাড়না কাজ করেছে জানা নেই। কিন্তু এই উদ্যমটি সংখ্যাগুরু অনার্য, লোকজ জনবিশ্বাসকে সংখ্যালঘু আর্যবংশজ ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর মূলস্রোতে সামিল করতে পারলো। পুরাণ লেখকদের কলমের জোরে অনার্যমননের 'দুর্গা' নামক ধারণাটির উৎস নির্দেশ করা হলো আর্যশ্রেষ্ঠ দেবতা বিষ্ণুর মনোজগতের গর্ভে। আজকের বাণিজ্যের ভাষায় যাকে বলে উইন উইন সিচুয়েশন। এখানে একটা ডিসক্লেমার দিয়ে রাখা বোধ হয় জরুরি। এই বিপুল মাত্রার সামাজিক মন্থনটিকে এতো সরলরৈখিক ব্যাখ্যা দিয়ে হয়তো প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। কিন্তু মোটামুটিভাবে ব্যাপারটা ছিলো এরকমই।
    ---------------------------------------------------
    নানা ধরণের লৌকিক ধারণাসম্ভূত সমস্ত দেবতাই যে সমানভাবে লোকপ্রিয় হ'ন, তা নয়। সকলেই 'দেবতা' নয়। কেউ কেউ তা হয়ে উঠতে পারেন। দেবী দুর্গার বরাতে প্রথম থেকেই মানুষের ভক্তি আনুগত্যের জোয়ার জুটে গিয়েছিলো। অবশ্যই তার একটা কারণ, আর্য ও অনার্য উভয় সমাজ থেকে পেয়ে যাওয়া সামগ্রিক স্বীকৃতি। তবে দুর্গার বিগ্রহরূপটিও ছিলো এই লোকপ্রিয়তার একটা প্রধান কারণ। তার আগে বা পরে, কোনও আর্য বা অনার্য দেবীর এতো জমকালো উপস্থাপনা কেউ দেখেনি। এখানে সারা ভারতবর্ষ থেকে আমার সংগৃহীত বিভিন্ন দুর্গামূর্তির আলোকচিত্র পেশ করছি। এখানে দুর্গার সব মূর্তিরই মহিষমর্দিনী রূপ। ছবিগুলির মধ্যে উত্তরগুপ্তযুগে ষষ্ঠ শতকে চালুক্য সাম্রাজ্যের সময় রাবনফাড়ি গুহার দেবীমূর্তিটি প্রাচীনতম। তার পর সপ্তম শতকে বাদামি গুহার দুর্গা। অষ্টম শতকে আইহোলের দুর্গমন্দিরের অনুপম দুর্গামূর্তিটিও দেখা যাবে। তার পর নবম শতকে বৈতাল মন্দিরের দুর্গা।এভাবে ক্রমান্বয়ে সপ্তদশ শতকের মীনাক্ষী মন্দিরের দুর্গা ( যাঁর সরকারি নাম ভদ্রকালী) পর্যন্ত মানুষের কল্পনায় দেবী দুর্গা কীভাবে মহিষমর্দিনীরূপে বিবর্তিত হয়ে এসেছেন, তার একটা রূপরেখা পাওয়া যেতে পারে।
    ------------------------------------------
    শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজাকে 'অকালবোধন' বলা হয়। এর একটা কারণ হিসেবে রামায়ণে উল্লেখিত লঙ্কায় যুদ্ধযাত্রার ভূমিকাটি লোকপ্রিয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করলে এর মূল কারণটি অন্যরকম। এদেশে শরৎকালেই শষ্যক্ষেত সবুজগৌরবে পরিপূর্ণ থাকে। এই সদ্যো উপ্ত শষ্যরাজির সঙ্গে কৃষিজীবী অনার্য শ্রমিকদের অনেক সাধ-আহ্লাদ গভীরভাবে জড়িত। এই শষ্য ফলবতী হোক। ক্ষুধিতের কাছে অন্ন হয়ে তার সার্থকতা প্রতিষ্ঠিত হোক। মানুষ তৃপ্ত, সম্পন্ন হয়ে উঠুক। প্রকৃতি দেবী হিসেবে দুর্গার যে প্রতাপ ও লোকপ্রিয়তা, তার কাছে কৌম মানুষের এই প্রার্থনা অকালবোধনের মাধ্যমে মুখর হয়ে ওঠে। কারণ এই দেবীই কখনও অন্নপূর্ণা, কখনও শাকম্ভরী। যাঁর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে যেন, " শষ্যপূর্ণা চ বসুন্ধরা' সত্য হয়ে ওঠে সেই কামনা প্রত্যেকের অন্তস্তলে। সেখানে রামায়ণের গল্পকথাকে নেহাৎ প্রক্ষিপ্ত অংশ মনে হয়।
    -------------------------------------
    অনার্য কৃষিজীবীর জন্য যিনি অন্নদাত্রী, ক্ষত্রিয়ের জন্য তিনি বীর্যস্বরূপা। যেদেশে অতি পরাক্রমী ভয়াল পুরুষদেবতাদেরও ( ধরা যাক শিবের নানা ভৈরবরূপ) কোনও দশপ্রহরণধারী মূর্তি ভাবা হয়নি, সেখানে একজন অতি সুন্দরী নারী দেবতা'র দশ হাতে দশরকম অস্ত্ররাজি কেন কল্পনা করা হয়েছিলো সেটা বোঝা দুষ্কর। শষ্যদেবী বা প্রজয়িতাদেবীর স্বীকৃতি হিসেবে দুর্গা আরাধনায় নবপত্রিকা বা কলাবৌয়ের লৌকিক অনুষঙ্গ আসে। আবার দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে যে নবরাত্রির কল্পনা, সেখানে যে ন'জন দেবী দুর্গার প্রতিরূপ হিসেবে পূজিতা হ'ন, তাঁরা দুর্গা সংক্রান্ত জঙ্গি ভাবনার অংশ। তাঁরা মূলত তন্ত্রোক্ত দেবী এবং তাঁরা দেবী দুর্গার রাজসিক ও তামসিক প্রবণতার রূপকল্প এবং বীরাচারের কেন্দ্র। দুর্গাপূজায় পশুবলি ও অন্যান্য তন্ত্রসম্মত লোকাচারের প্রচলন এইভাবেই হয়েছিলো। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ, উভয় প্রান্তেই দুর্গানবমী'র দিনটিতে অস্ত্রপূজা বা আয়ুধপূজা উদযাপন করা হয়। এই ঐতিহ্যটি অতি প্রাচীন। বস্তুত মহিষমর্দিনী মূর্তির সাড়ম্বর যে পূজাপদ্ধতি, তার থেকেও অনেক পুরোনো। দুর্গাদশমী তিথিতে সেকালে রাজারা যুদ্ধযাত্রা করতেন। সেই দিন, অর্থাৎ দশহরা তিথিতে যুদ্ধবিজয়ের কামনায় দেবী দুর্গাকে কেন্দ্র করে যে ধর্মাচার পালিত হতো তার নামই বিজয়া। তার আগের দিন, অর্থাৎ নবমী তিথিতে যোদ্ধারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুত করে দেবীর উদ্দেশ্যে পূজা নিবেদন করতো। যাতে দেবীর আশীর্বাদে তাদের যুদ্ধযাত্রা সফল হয়। এই প্রথা অনুযায়ী 'দুর্গা' মানে সেই ঐশী অস্তিত্ব, যিনি দুর্গকে সুরক্ষিত রাখেন। এই প্রাচীন প্রথাটিই রামায়ণে রামের যুদ্ধযাত্রার অনুষঙ্গেও ব্যবহৃত হয়েছে।
    ---------------------------------------
    নিছক মহিষমর্দিনীরূপে দেবী দুর্গার পূজা বঙ্গদেশে দশম-একাদশ শতকে প্রচলিত ছিলো এমত উল্লেখ পাওয়া গেছে। কিন্তু শারদীয় দুর্গাপূজার বর্তমান রূপটি কবে থেকে শুরু হয়েছে, তা নিয়ে মতান্তর রয়েছে। আকবর বাদশার সময় ১৫৮০ সালে তাহেরপুরের জমিদার কংসনারায়ণ নাকি নয় লক্ষ টাকা ব্যয় করে এই বিগ্রহ ও পূজাপদ্ধতি প্রচলিত করেন। আবার অন্য মতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালেই (১৭২৮-১৭৮৮) নাকি প্রথম দেবী দুর্গার এই পারিবারিক কর্ত্রীরূপে আরাধনা শুরু হয়। ঘটনা যাই হোক, স্বাধীনা, রণরঙ্গিনী রূপে প্রচলিত দেবী দুর্গার যে প্রতিবিম্ব, তার সঙ্গে এই যৌথ পরিবারের মাতৃমূর্তিকে মসৃণভাবে সমন্বিত করার চিন্তা বা উদ্যম যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁদের সৃজনবোধের তারিফ করতেই হয়। বীর্যবত্তা ও কৃষিভিত্তিক যৌথপরিবার ব্যবস্থার মূল্যবোধের সূচকগুলিকে এমনভাবে সীবনহীন দক্ষতায় মিলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যে সেটাই পরবর্তীকালে সারাদেশে দুর্গাপূজার মূলস্রোত হয়ে দাঁড়ালো। কালক্রমে সেটা শুধু একটা বিগ্রহপূজন মাত্র থাকলো না। একটি বৃহৎ নৃগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসবও হয়ে উঠলো অবলীলায়।
    --------------------------------------------------
    পুরাণযুগ থেকেই সতী বা উমা এবং পার্বতীর সঙ্গে শিবের একটা সাংসারিক বন্ধনের উপাখ্যান নানা স্থানে পাওয়া যায়। শিবের অবস্থান বদলায়নি বিশেষ, কিন্তু নানা কারণে পার্বতীর রূপ পরিবর্তন হয়েছে বহুবার। তার মধ্যে প্রধান রূপটি মহিষমর্দিনী এবং বাকি রূপগুলি নানা তন্ত্রোক্ত শক্তিদেবীর নামে প্রচলিত আছে। দেবীর রূপগত বিবর্তনের নানা ধারা সমান্তরালভাবে চলে এসেছে প্রায় হাজার দুয়েক বছর। এর মধ্যে তাঁর হিমালয়দুহিতা হিসেবে সতী, উমা বা পার্বতী রূপটি চিরকালই লোকপ্রিয় ছিলো। গুপ্তযুগের অনেক আগে থেকেই শিবের এই গার্হস্থ্য যাপনটি নিয়ে লোকের সচেতনতা চোখে পড়ে। কালিদাসের 'কুমারসম্ভব' সেই আবহমান ধারণাটিরই কাব্যিক প্রকাশ। দুই পুত্র নিয়ে ভার্যাসহ কৈলাশে শিবের সংসার নির্বাহ সাধারণ মানুষের সাইকির মধ্যে গভীরভাবেই প্রোথিত হয়ে গিয়েছিলো। পার্বতীর ক্রমাগত রূপ পরিবর্তিত হয়ে কখনও 'মহাদেবী', কখনও 'আদ্যাশক্তি' বা মহিষমর্দিনী হয়ে যাওয়ার পরম্পরাটি অধ্যাত্মিক বিচারে স্বীকার করে নিলেও কন্যা উমা বা জামাতা মহেশ্বরের ইমেজ কখনও ম্লান তো হয়ইনি, বরং সময়ের সঙ্গে তাতে নানা নতুন মাত্রাও যোগ হয়েছে। বৈদিককালে দেবী সরস্বতী স্বাধীনা ছিলেন। পুরাণযুগে তিনি ব্রহ্মার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। লক্ষ্মীর সঙ্গে বিষ্ণুর যোগাযোগও নানারূপে আদ্যিকাল থেকেই রয়েছে। কিন্তু সম্ভবত ভাগবত পুরাণে এসে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী দুজনেই আদ্যাশক্তি ওরফে পার্বতীর অংশ হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকলেন। ফলে মোটামুটিভাবে ষোড়শ শতক থেকে পূর্বভারতে এই দুই দেবী ব্রহ্মা বা বিষ্ণুর পরিবর্তে শিবের সংসারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। কৃষিভিত্তিক পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সংলিপ্ত থাকলেও মধ্যযুগে বাংলা, অসম ও ওড়িশায় ব্যাপক শাক্তসংস্কৃতির চর্চা হতো। ফলে এখানে সমাজজীবনে মাতৃতান্ত্রিক ঝোঁকগুলি ছিলো বেশ প্রবল। দেবী দুর্গা'র ভগবতীরূপটি, যেটি মহাদেবীর পালনকর্ত্রীর ভাবমূর্তিটি ধরে রাখে, দেশের এ প্রান্তে ব্যবহৃত হতে শুরু করলো যৌথপরিবারের গৃহলক্ষ্মী হিসেবে। সপ্তমাতৃকা বা চৌষট্টি যোগিনী পরিবৃত চামুন্ডা বা ছিন্নমস্তারূপ থেকে অবসর নিয়ে যুদ্ধদেবী হয়ে গেলেন স্নেহময়ী, সন্তাননিষ্ঠ মাতা। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাতা এবং তাঁর সন্ততিরাই মঞ্চ অধিকার করে নিলেন। 'গৃহকর্তা' শিব সেখানে উপলক্ষ্যমাত্র। সাবেকি ভূমিনির্ভর কৃষি অর্থনীতির শর্ত পূরণ করতে ভারতবর্ষ একদিন যৌথ পরিবারব্যবস্থাকে আশ্রয় করেছিলো। এই অবসরে উমা, হৈমবতী, পার্বতী সব মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি শারদীয় দেবী দুর্গা এই ব্যবস্থাটির উপর স্বীকৃতির সিলমোহর লাগিয়ে দিলেন।
    --------------------------------
    মুঘল আমলের পরের দিকে বঙ্গদেশে শারদীয় দুর্গাপূজা করতেন সামন্তসম্প্রদায় ও অন্য মধ্যস্বত্বভোগীর দল। দুর্গার এই রূপটির সঙ্গে তাঁদের রাজকীয় অহম'ময় মনোবৃত্তি বেশ খাপ খেয়ে যেতো। সেই সময় এই পূজা'কে বলা হতো 'জাঁকে'র পুজো'। এঁদের কোনও যুদ্ধবিগ্রহ করতে হতোনা। বাদশাকে খাজনা দিয়েই তাঁরা খালাস। কোনও রাজনৈতিক উচ্চাশা ছিলোনা। রায়ত-খাতক-প্রজাদের রুধিরপান ভিন্ন অন্য কোন ক্রিয়াশীলতাও ছিলো অনুপস্থিত। এ অবস্থায় সামন্ততান্ত্রিক রোয়াব দেখানোর জন্য দুর্গাপূজার নামে বার্ষিক মোচ্ছবটি ছিলো তাঁদের প্রধান অবসর। তাই অচিরেই দুর্গা'পূজা' থেকে উপলক্ষ্যটি 'দুর্গোৎসব' হয়ে দাঁড়ালো। কোন কোন রাজা বা জমিদার কতোটা সমারোহের সঙ্গে দুর্গোৎসব পালন করলেন, অন্য জমিদারদের জন্য সেটা একটা চ্যালেঞ্জে পরিণত হলো। এই পরম্পরাটি চলে এসেছে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বহাল হবার পরেও বহুকাল ধরে। সত্যিকথা বলতে সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে। জমিদারের জায়গায় এসেছেন রাজনীতিক দাদারা।
    -------------------------------------------------------
    সেই কোন প্রাক ইতিহাসের কালে এক অনার্য দেবী তাঁর যাত্রা শুরু করেছিলেন ভয়ংকরী, রণদুর্মদ রক্তপিপাসা আর সংহারক আবেগ নিয়ে অরণ্যপর্বত জোড়া, 'সভ্যতা'র নাগাল থেকে দূরে কৌম জনতার মাঝখান থেকে। কালক্রমে তাঁর সেই একমুখী স্রোতে এসে মিলে গেলো নানা অন্য স্রোত। আবার তা বহুধাবিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে গেলো অগণিত শাখানদী'র বিস্তৃত, বিপুল পরিসরে। কালিকাপুরাণ, মার্কন্ডেয়পুরাণকে আশ্রয় করা দেবীমাহাত্ম্য আর শ্রীশ্রী চন্ডীর বেঁধে দেওয়া ছকে আজকের শারদীয় যে উৎসব, শুধু এদেশে নয়, যেখানে যেখানে ভারতবর্ষ রয়েছে, সেখানে নিশ্চিত পৌঁছে যায় বছরে অন্ততঃ একবার; নিজস্ব ছাঁচ, রুচি আর ইনটেনসিটি নিয়ে। সাবেকি ঠাকুরদালান বা চন্ডীমন্ডপের দেবী নিজেই এখন একটা আর্থ-সামাজিক সূচক হয়ে গেছেন, অত্যন্ত জটিল, টানাপড়েনের আবর্তে বিড়ম্বিত বিশ্বায়িত ভারতবর্ষে। এই উৎসবে 'দেবী দুর্গা' কতোটা থাকেন, কীভাবে থাকেন, আদৌ থাকেন কি না, সেটা হয়তো প্রশ্নের ঊর্ধে নয়। কিন্তু ভারতবর্ষ নিশ্চয় থাকে,

    বেশক।

    (সৌজন্যেঃ শিউলিপর্ব ;শারদসংখ্যা)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ | ১৩৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩৭70082
  • খুবই উৎকৃষ্ট লেখা। পড়ে খুব ভালো লাগলো।

    তবে তোমার সেকেন্ড প্যারায় ঋগবেদের যে উদ্ধৃতি দিলে,তার অনুবাদ যা পড়লাম সে তো এইরকম "হে অগ্নি! তুমি বিস্তীর্ণ তেজদ্বারা অত্যন্ত দীপ্তমান,তুমি শত্রুদের এবং রোগরহিত রাক্ষসদের বিনাশ কর।অগ্নি উৎকৃষ্ট,সুখপ্রদ,মহান এবং উত্তম আহ্বানযুক্ত।আমি তাঁরই রক্ষণে থাকবো।" এই ঋক নিয়েই "এই মন্ত্রটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে স্বামী অভেদানন্দ বলেছিলেন ' ঋগবেদে অগ্নিরূপিণী দুর্গাদেবীকে শত্রুবধকারিণী ও রাক্ষসহন্ত্রী বা অসুরনাশিনী বলা হইয়াছে।"সত্যি?

    এ তো হিংটিং ছটের থেকেও খারাপ। একেবারে যা তা ব্যাখ্যা।

    ইনি কি "মরনের পারের" অভেদানন্দ? তাহলে অবশ্য কিছু বলার নেই। ভুতের ছবির মতন - সবই সম্ভব।
  • ranjan roy | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:২৮70083
  • o এবং ডিডিকে ক।
  • শিবাংশু | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:৪৪70079
  • সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করা দুর্গা'র নানা প্রাচীন শিল্পরূপের কিছু ছবি এখানে থাক।

    https://picasaweb.google.com/103279716929236287567/Durga
  • সে | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:০৩70080
  • পুজোর দিনে দারুণ লেখা পড়তে পেলাম।
  • 0 | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:৩৩70081
  • শিবাংশুদার এ'ধরনের ইনফর্মেটিভ লেখাগুলোর পেছনে যে কতোদিন ধ'রে কি পরিমাণ পড়াশুনো রয়েছে, সেটা ভাবলেও আশ্চর্য লাগে! লেখার ভাষা আর স্টাইল নিয়ে প্রায়ই দেখেছি লোকজন আপত্তি করেছেন, তত্সম শব্দ বেশী, পুরনো কঠিন গদ্য, এসব নিয়ে। আমার কিন্তু বেশ ঝরঝরে, লুসিড্‌, শার্প্‌ আর ফ্রীফ্লোয়িং মনে হয়।
  • শিবাংশু | ***:*** | ১৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২১70084
  • dd,
    স্বামী অভেদানন্দের রচনাবলীর ওজন ব্রিট্যানিকার থেকে বেশি। মূল পড়তে যাওয়া খুব চাপ। আমি এই উল্লেখটি শশিভূষণ দাশগুপ্তের 'ভারতে শক্তিসাধনা ও শাক্তসাহিত্যে' পেয়েছি।
  • ঋজু গাঙ্গুলি | ***:*** | ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ০১:১৬70085
  • শুধু চিন্তার খোরাক নয়, গড্ডলিকা প্রবাহের পুরোপুরি বিপরীতমুখী এই লেখা থেকে অনেক নতুন জিনিস জানা ও বোঝাও গেল| সেলাম| আরও পড়ার অপেক্ষায় রইলাম|
  • b | ***:*** | ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৬70086
  • "মহারাণী ভিক্টোরিয়ার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বহাল হবার পরেও বহুকাল ধরে"
    চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন প্রভু কর্ণ-বালিশ, ১৭৯৩ সালে। ভিক্টোরিয়া ভারত সম্রাজ্ঞী হন ১৮৫৮ সালে।
  • শিবাংশু | ***:*** | ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:৫৯70087
  • b,
    সংশোধনটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    আসলে লেখার সময় আমার স্মৃতিতে উত্তরভারতের ব্যবস্থাটি বহাল ছিলো। লাট কর্ণবালিশ, লাট ওয়েলেসলি এবং লাট হেস্টিংস বঙ্গপ্রদেশে ১৭৯৩ সাল থেকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, অর্থাৎ জমিদারিপ্রথার সুপারিশ করেন। এই তিনজন ছাড়াও ১৮০২ থেকে ১৮০৫ পর্যন্ত টমাস মুনরো, লাট মিন্টো'ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালকদের কাছে শুধু বঙ্গপ্রদেশ নয়, সারা দেশে চিরস্থায়ী জমিদারি বন্দোবস্তের পক্ষে সুপারিশ করেন। কিন্তু কোম্পানির কর্তারা দক্ষিণ ভারতের জন্য রায়তারি এবং উত্তর ভারতের জন্য মহলওয়ারি ব্যবস্থার পক্ষে রায় দেন। এই দুটিই স্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। সিপাহিবিদ্রোহের পর মহারাণী ভিক্টোরিয়া ১৮৯৫ সালে বনারস থেকে শুরু করে উত্তর ভারতে বঙ্গমডেলের জমিদারি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
  • 0 | ***:*** | ২০ অক্টোবর ২০১৫ ০৫:৩৭70090
  • ডিডিদাকে থ্যাংক্‌স্‌, জহর সরকারের লেখাটার জন্যে।

    শিবাংশুদা, ওই যে ধ্বংসের নিষ্ঠুর দেবী, ওনার নামের বানানটা কেমন যেন একটু খটোমটো লাগছে। টাইপো হয়নি তো? একবার দেখবেন প্লিজ?
  • dd | ***:*** | ২০ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:৩২70091
  • নিঋর্তি (বোধয়) আসল বানান। ঋগ্বেদে একবারই উল্লেখ আছে এই কৃষ্ণা ও ঘোর দেবীর। পরে রেফারেন্স দিয়ে দেবো। নিষ্ঠুর? সেরকম তো কিছু মনে পরছে না। তিনি পাশহস্তা - ঐ টুকুই।

    তবে অসুরদলনী দেবী তো আছেনই ঋগ্বেদে।৬/৬১/৭ দেখুন না, "ভীষণা, হিরন্ময় রথে আরুঢ়া শত্রুঘাতিনী সে সরস্বতী যেন আমাদের মনোহর স্ত্রোত্র কামনা করেন। ঐ সূক্তেই আরো লিখেছে "তুমি দেবনিন্দকগনকে বধ করেছ এবং....বৃসয়ের পুত্রকে সংহার করেছ।" (রমেশ চন্দ্র দত্তের অনুবাদ)

    এর অনেক টীকা ফিকা আছে।
  • শিবাংশু | ***:*** | ২০ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:৩৪70092
  • 0,

    ঠিকই ধরেছেন, রেফ'টা বসতো ঋ'য়ের উপর। কিন্তু ইউনিকোড ঐ বানানটা নিচ্ছেনা।:-)
  • hu | ***:*** | ২০ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:১৩70093
  • খুব ভালো লাগল লেখাটা। দুয়েকটা প্রশ্ন আছে।

    ১। "ক্রুদ্ধ দেবতাদের সমবেত তেজ ও শক্তি থেকে পরমাসুন্দরী এক আলোকময়ী নারী মূর্ত হয়ে ওঠেন। "

    এটা কি শুধুই রূপকার্থে দেখব? নাকি এর মধ্যে আর্য-অনার্য মিশ্র রক্তের ঈঙ্গিত আছে?

    ২। "দুর্গাদশমী তিথিতে সেকালে রাজারা যুদ্ধযাত্রা করতেন। সেই দিন, অর্থাৎ দশহরা তিথিতে যুদ্ধবিজয়ের কামনায় দেবী দুর্গাকে কেন্দ্র করে যে ধর্মাচার পালিত হতো তার নামই বিজয়া। তার আগের দিন, অর্থাৎ নবমী তিথিতে যোদ্ধারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুত করে দেবীর উদ্দেশ্যে পূজা নিবেদন করতো। যাতে দেবীর আশীর্বাদে তাদের যুদ্ধযাত্রা সফল হয়। এই প্রথা অনুযায়ী 'দুর্গা' মানে সেই ঐশী অস্তিত্ব, যিনি দুর্গকে সুরক্ষিত রাখেন। এই প্রাচীন প্রথাটিই রামায়ণে রামের যুদ্ধযাত্রার অনুষঙ্গেও ব্যবহৃত হয়েছে।"

    উত্তর ভারতে দশেরার দিনটি রাবন বধের দিন হিসেবে উদযাপন হতে দেখেছি। মূল রামায়নটা পড়া নেই। রামচন্দ্র কি দশেরার দিনে যুদ্ধ যাত্রা করে সেদিনই রাবনকে মারলেন? নাকি, উত্তর ভারতে যে গল্পটা অনুসরন করা হয় সেটা পরে এসেছে?

    ৩। এই প্রশ্নটা আমিষ-নিরামিষ-গোমাংসের চক্করে পড়ে আজকাল খুব মনে হচ্ছে। নবরাত্রির সময় নিরামিশ খাওয়ার প্রচলন কবে থেকে হল? যে দেবীরা নবরাত্রিতে পূজিত হন তাঁরা তো কেউই শুধু শাকপাতা খেয়ে থাকতেন বলে মনে হচ্ছে না।
  • শিবাংশু | ***:*** | ২০ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:৩৩70094
  • dd
    পরবর্তীকালের সাম-বিধান ব্রাহ্মণে রাত্রিদেবীকে কন্যারূপিনী, শিখন্ডিনী, পাশহস্তা যুবতী কুমারী বলা হয়েছে। নেতিবাচী দেবীদের স্বভাব ও রূপ বর্ণনায় এই সময়কালে নানা ধরণের ওভারল্যাপ হয়ে গেছে। কোনও একটা প্রামাণ্য আকর গ্রন্থ তো পাওয়া যায়না।

    ঋগবেদে নৈঋর্তিদেবীর উল্লেখ এক আধবারই আছে। তাঁর স্বভাবচরিত্র সম্বন্ধে সরাসরি মন্তব্য না থাকলেও নানা জায়গায় তাঁকে মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও বিনাশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলা হয়েছে। ঋগবেদের ১০.৫৯ শ্লোকে তাঁর উল্লেখ রয়েছে। সেখানে তাঁর কাছে অন্ন, সম্পদ, কীর্তির আশায় আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়েছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলা হয়েছে " নৈঋর্তি যেন দূরে থাকেন"। এই দেবী ধ্বংস, ক্ষুধা, ক্রোধ, কাপুরুষতা,বার্ধক্য ও মৃত্যুর প্রতীক। পরবর্তীকালের বৈদিক সাহিত্যে এই দেবীর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি কৃষ্ণবর্ণা, কৃষ্ণবসনা এবং স্বর্ণকেশিনী। তিনি সর্বদা বলি পেতে ইচ্ছা করেন। তিনি দক্ষিণদেশ, অর্থাৎ মৃত্যুদেশবাসিনী।
  • Atoz | ***:*** | ২০ অক্টোবর ২০১৫ ১২:৩৭70088
  • কর্ণ-বালিশ?
    আহ, ভারী সুন্দর নাম! ঃ-)
    হি হি হি
    কানবালিশ সায়েব!
  • শিবাংশু | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:০১70095
  • "hu",

    ১. এই সব গল্পকথা মূলতঃ মার্কেন্ডেয় পুরাণ, দেবীমাহাত্ম্য ও শ্রীশ্রীচন্ডীর থেকে আহরণ করা হয়েছে। এই পুরাণটি রচিত হয়েছে আদি শংকরের জয়ধ্বজা প্রতিষ্ঠিত হবার পর। রূপকার্থে যদি নেওয়া হয়, তবে এখানে 'শিব' বা 'মহাদেব' নামক দৈবী প্রতীকটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনিই রাজা মহিষকে অজেয় হবার বরদান দিলেন, যেটা তাঁর অনার্যদের প্রতি পোষকতার নিদর্শন। আবার তাঁর তেজ থেকেই উৎপন্ন একজন 'দেবী'র কথা আনা হলো, যিনি মহিষকে বধ করবেন । আসলে ইতিহাসের এই সময়কালে লোকায়ত অনার্য তন্ত্রসাধনার ধারা ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণ্য আর্য মূলস্রোতে জায়গা করে নিচ্ছিলো। তন্ত্রপদ্ধতির উৎস হলো শিব ও তাঁর শক্তির, অর্থাৎ নানারূপে 'পার্বতী' নামক ধারণাটির প্রতীক কোনও দেবী'র, মধ্যে বিনিময় করা সংলাপের পরম্পরা। যে রকম লিখেছি, 'দুর্গা' একজন অনার্যধারণা সম্ভূত তন্ত্রসম্মত দেবী। কারণ তাঁর মধ্যে কোনও আর্যমতে দেবসঙ্গিনী দেবীদের লক্ষণ নেই। তাই তাঁকে আর্য ঐতিহ্যের মূলস্রোতে সামিল করার পিছনে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের দূরদর্শী রাজনৈতিক বিচক্ষণতা কাজ করেছিলো। সময়ের চাপে 'রক্তের মিশ্রণ' ব্যাপারটা হয়তো হয়েছিলো, কিন্তু তা বহু পরের কথা।
    ---------------------------------
    ২. রাম কবে যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। সারা পৃথিবীতে রাম ও তাঁর যুদ্ধযাত্রা নিয়ে অসংখ্য পরস্পরবিরোধী কিম্বদন্তী রয়েছে। তবে একটা মত আছে যে অষ্টমী ও নবমীতিথির সন্ধিক্ষণে মহিষমর্দিনী যখন অসুররাজকে নিধন করেছিলেন, সেই সময়কালীন পূজায় রাম একটি চোখ পূজার অর্ঘ হিসেবে নিবেদন করতে চেয়েছিলেন। সেই সময় যুদ্ধ জারি ছিলো। যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখে সেই মূহুর্তে রামের মনে হয়েছিলো দেবীর আশীর্বাদ ছাড়া রাবণকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। কারণ রাবণ জন্মসূত্রে একজন আর্য ও অনার্য উভয়ের তেজসমন্বিত, শিবের আশিসধন্য মহাবীর, পরাক্রমী রাজা। তুলনামূলক বিচারে অযোধ্যার রামের থেকে অনেক এগিয়ে। গল্পকথা অনুযায়ী দেবী দুর্গা রাম'কে আশ্বস্ত করেন ও ঠিক দু'দিন পরে যুদ্ধে রামের জয়লাভ সম্ভব হয়। এখানেও শিবের কাউন্টার পয়েন্ট হিসেবে দেবী'কে রাখা হচ্ছে। খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।

    এই সমস্ত কাহিনীরই মূল প্রতিপাদ্য হলো অনার্যশক্তির উপর আর্যশক্তির বিজয়ের ইতিবৃত্ত প্রতিষ্ঠা করা। মজার ব্যাপার হলো প্রতিটি ক্ষেত্রেই আর্যরা অনার্যমূলের দেবদেবীদের সাহায্য নিয়েই সফল হয়েছিলেন। রামায়ণ পুরাণকথা। সেখানে বিজয়াদশমীর দিন ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধযাত্রার ঐতিহাসিক সূত্রটিকে গল্পের প্রয়োজনে আত্তীকৃত করা হয়েছিলো।
    -----------------------------------------------
    ৩. আমাদের দেশে যতোদিন আর্য শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিলো, ততোদিন এই নিরামিষ নাশকতার কোনও ঐতিহ্য ছিলোনা। দশম শতাব্দীর পর যখন বহিরাগত বিভিন্ন যবন বা ম্লেচ্ছ শক্তিরা এদেশে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে, তখন থেকেই দেবতারাও মন্দির ছেড়ে ভাতের হাঁড়ির মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করতে শুরু করেন। একটা কারণ হয়তো হতে পারে দেবতাদের মন্দিরগুলি বিপুলমাত্রায় বিনাশপ্রাপ্ত হবার ফলে তাঁদের যাবার জায়গা বিশেষ বাঁচেনি। এই সব বহিরাগত রাজশক্তিগুলির যাবতীয় সংস্কৃতি, যার মধ্যে একটি প্রধান অঙ্গ হলো তাঁদের খাদ্যাভাস, এ দেশের ব্রাহ্মণ্যসমাজের কাছে অতিমাত্রায় পরিত্যজ্য বোধ হয়েছিলো। কালক্রমে সেই সব মধ্যযুগীয় অন্ধকার অভিশপ্ত আত্মার মতো আবার এদেশে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্রিয় হয়েছে। এর সঙ্গে কোনও ধর্মীয় বা ঐশী উপলব্ধির সম্পর্ক নেই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন