এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পিতামহদের উদ্দেশ্যে

    শিবাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ | ১৮২৯ বার পঠিত
  • অহনি অহনি ভূতানি গঞ্চংতিয় যমালয়ম ।
    শেষ স্থাবরম ইচ্ছন্তি কিম আশ্চর্যম অতহ পরম ।।
    (বনপর্বঃ মহাভারত)

    মৃত্যু না থাকলে কী কী হতো বলা যায়না। হয়তো অনেক কিছুই অন্যরকম হতো। তবে এটা ঠিক যে পৃথিবীতে কোনও ঈশ্বরের কল্পনাও থাকতো না। কোনও গোষ্ঠীবদ্ধ 'ধর্ম'ও থাকতো না নিশ্চিত। প্রনাবি ( প্রমথনাথ বিশী) একটি গল্প লিখেছিলেন, " ভগবান কি বাঙালি ?" সেখানে তিনি বলেছিলেন এই বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম থিসিসটি লেখা হবে। কারণ এটাই হবে মানুষের শেষ থিসিস। যেহেতু ভগবান বাঙালি প্রমাণ হয়ে গেলে পৃথিবীতে আর কোনও থিসিসের দরকারই হবেনা। সেরকমই মৃত্যু না থাকলে শুধু ভগবান কেন, মানুষের যাবতীয় মাথার ঘাম পায়ে ফেলার ইচ্ছেই তো বাতিল হয়ে যাবে। মৃত্যু নিয়ে সারা পৃথিবীতেই মানুষের অনন্ত কৌতুহল, প্রশ্ন, উদ্বেগ এবং অনিঃশেষ ভয়। তবে আমাদের দেশে মৃত্যুশিল্প নিয়ে যতো গভীর চিন্তা বা দর্শন দেখা যায়, তার স্তরের চর্চা আর কোথাও হয়নি। বকরূপী ধর্ম যখন রাজা যুধিষ্ঠির'কে উপরের প্রশ্নটি করেছিলেন, তখন সেটি কোনও বিচ্ছিন্ন সন্ধান ছিলোনা। তার এক দীর্ঘ ঐতিহ্য ও পরম্পরা বর্তমান। যাজ্ঞবল্ক্য-মৈত্রেয়ী সংবাদ বা উক্ত বক-যুধিষ্ঠির ডিসকোর্সটি আমাদের মৃত্যুশিল্পের দুটি মহৎ নিদর্শন। পরবর্তীকালের মদভাগবদ্গীতা নামক গ্রন্থটিতে তো শুধু এই নিয়েই আঠেরোটি অধ্যায় রচিত হয়ে গেলো। মৃত্যুভয় ও তদ্জনিত শোক কীভাবে বাগে আনতে হয় তা নিয়ে ভারতবর্ষে উপনিষদ বা বৌদ্ধবিদ্যায় সুদীর্ঘ চর্চাসমূহ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু প্রাগ ইতিহাসের অর্ধসভ্য মানুষজনের মৃত্যুকেন্দ্রিক উদ্বেগ ও আশংকার মাত্রা একুশ শতকের 'অতি'সভ্য জনসমাজেও কিছুই হ্রাস পায়নি।
    প্রশ্নটি এখনও সমান তাজা, কিমাশ্চর্যম?
    -------------------------------------
    নিজেকে মানুষ অত্যন্ত ভালোবাসে। হয়তো শুধু নিজেকেই বাসে। বাকি এক্সপ্রেশনগুলি হয় সামাজিক দায়বদ্ধতা, নয় নিছক শরীরলিপ্সা। কখনও'ই সে স্বীকার করতে পারেনা যে 'আমি' নেই, অথচ সব কিছু একইরকম রয়েছে। 'আমার' থাকা না থাকাটা এতো'ই তুচ্ছ, তাৎপর্যহীন একটা নিয়মরক্ষা, যে আমার মৃত্যুতে গাছের একটা পাতাও ঝরে পড়েনা। এই সত্যটা কখনও কোনও মানুষ সহ্য করতে পারেনা। এই 'অসহ্য' সত্যটিকে জায়গা করে দিতে রচনা করা হয় অসংখ্য দর্শন, অগণিত দৈবী-ঐশী নির্মাণ। জন্মান্তরবাদ, অবতারবাদ, কর্মফলতত্ত্ব, পাপপুণ্য মাপা পুথির পর পুথি। তবুও মরণ আসে। নিয়ম করে।অতি স্বল্প কেউ কেউ অভিযোগহীন মসৃণতায় তাকে আলিঙ্গন করেন। কিন্তু বাকিদের কী হবে? এই শরীর শেষ হয়ে যাবার পরেও কীভাবে আরো কিছুদিন প্রাসঙ্গিক থাকা যায়? চিরন্তন প্রশ্ন।
    বড়ো মানুষেরা নিজেদের কীর্তির ভিতরে বেঁচে থাকবেন। কিন্তু যাঁরা ততো বড়ো ন'ন? তাঁদেরও তো আকাঙ্খা থাকে। নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রানি, নৈনং দহতি পাবক। সে তো আত্মা নয়। সে তো মানুষের অকৃত্রিম, অপরিসীম বেঁচে থাকার ইচ্ছা। কে বাঁচিয়ে রাখবে তাকে? উত্তরপুরুষ?
    -------------------------------------
    পৃথিবীর সব 'সভ্য-অসভ্য' সংস্কৃতিতে প্রথম 'দেবতা' হলেন পিতৃপুরুষের প্রয়াত আত্মা'র কল্পনা। পিতৃপুরুষরা নিজেদের জীবৎকালে নিয়ম বেঁধে যা'ন, যেখানে শরীরের মৃত্যুর পরেও তাঁরা উত্তরপুরুষের অভিভাবক হয়ে রয়ে যাবেন। কিছু ভক্তিশ্রদ্ধা, কিছু কৃতজ্ঞ ভালোবাসা, বাকিটা আনুগত্য; সন্ততিরা এভাবেই পূর্বপুরুষদের বাঁচিয়ে রাখেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ক্রমে নানা বিশদ প্রথার জন্ম হয়। প্রথাগুলি 'শাস্ত্রায়িত' হয়ে 'ধর্মবিশ্বাসে'র অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও হয়ে যায়। মানুষ ভরসা খোঁজে দিনে আর রাতে।।।। নানা গল্পকথা, অধিআদেশের লোহার খাঁচাও তৈরি করা হয়। পূর্বপুরুষদের স্মৃতি উত্তরপুরুষদের বহন করতেই হবে। নয়তো পৃথিবী উৎসন্নে যাবে। শরীরকেন্দ্রিক অস্তিত্ত্ব ঘুচে যাবার পর স্মৃতিকেন্দ্রিক অস্তিত্ত্বের আশা মানুষের আত্মপ্রেমকে শুশ্রূষা যোগায়। স্বস্তি সান্ত্বনার আশ্বাস দেয়। নশ্বর মানুষের অলীক আশ্রয়ের একটা অছিলা তৈরি হয়ে যায় এইভাবে।
    -----------------------------------------------
    পৃথিবীর সব প্রান্তেই পিতৃপুরুষদের স্মৃতির প্রতি সম্মানসূচক নানা লৌকিক প্রথা প্রচলিত আছে। প্রাচ্যের দেশগুলিতে তার প্রভাব গভীরগামী। ভারতবর্ষ, চিনসহ দূরপ্রাচ্যের সমস্ত দেশেই যেখানে যৌথপরিবারকেন্দ্রিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থা দৃঢ়্মূল ছিলো, বহুবিচিত্র উপায়ে পূর্বজদের শ্রদ্ধা-ভক্তি-আনুগত্য নিবেদন এখনও করা হয়ে থাকে। তবে ভারতবর্ষের সনাতনধর্মীয়দের মতো এতো বিশদ, স্ট্রাকচার্ড প্রথাপ্রণালী বোধহয় আর কোথাও তৈরি হয়নি । পুরো ব্যাপারটিকে আচরণীয় ধর্মীয় কৃত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার অবকাশ বিশেষ রাখা হয়নি।
    ---------------------------------
    উদাহরণ হিসেবে আমাদের সংস্কৃতিতে পিতৃপক্ষ পালনের যে প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে তার কথা ভাবা যেতে পারে। প্রাচ্যের সব ধর্মেই চান্দ্রতিথির প্রভাব খুব বেশি। আমাদের দেশে ধর্মীয় অনুশাসনের ক্ষেত্রে আর্য অনুষ্ঠানগুলি, মানে বিষ্ণুকেন্দ্রিক অর্চনাসমূহ সাধারণতঃ পূর্ণিমাতিথিতে এবং মূলতঃ অনার্য উদযাপনগুলি, মানে শাক্ত উপাসনাভিত্তিক ধর্মাচারগুলির জন্য অমাবস্যা তিথিকে প্রশস্ত মনে করা হয়। বিভিন্ন ঋতুর সঙ্গে জড়িত পূর্ণিমার যেমন নামপদ রয়েছে, ( গুরুপূর্ণিমা, বৈশাখীপূর্ণিমা, বসন্তপূর্ণিমা, কোজাগরীপূর্ণিমা ইত্যাদি) তেমনই বিভিন্ন অমাবস্যা তিথিকেও নানা নামে ডাকা হয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি মহালয়া অমাবস্যা। অমাবস্যা তিথিটি সচরাচর যাঁরা তন্ত্র বা শাক্তমতে উপাসনা করেন, তাঁদের জন্য প্রশস্ত বলে কথিত আছে। তাই অমাবস্যার নামের সঙ্গে দেবীপ্রসঙ্গটিই সুলভ। কিন্তু মহালয়া অমাবস্যাটি নিবেদিত 'পিতৃপুরুষে'র উদ্দেশ্যে। সূর্য যখন কন্যারাশিতে প্রবেশ করে তখন যমরাজ তাঁর প্রজাদের, অর্থাৎ মৃতমানুষের আত্মাদের পক্ষকালব্যপী সাময়িক ছুটি মঞ্জুর করেন, 'বাড়ি' যাবার জন্য। 'বাড়ি' অর্থে সেই সব আত্মাদের (যাঁদের ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি 'প্রেত' নাম দিয়েছে)উত্তরপুরুষদের ভদ্রাসন। এই সময়কালটি ( সূর্যের কন্যারাশি থেকে বৃশ্চিক রাশিতে সরে যাওয়া) , যার পোষাকি নাম 'পিতৃপক্ষ', পরলোকবাসী আত্মারা অতিথি হয়ে উত্তরপুরুষদের গৃহে আসেন। এই উপলক্ষ্যে বংশধরকুলকে পক্ষকালব্যপী প্রতীকী শোক পালন করার নির্দেশও শাস্ত্রীয় বিধান। উদ্দেশ্য, প্রয়াত আত্মাদের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করা। সারা পৃথিবীর নানা দেশে এই জাতীয় বিভিন্ন লৌকিক আচার পালন করা হয়। সনাতনধর্মীয়দের মধ্যে এই পক্ষকালে পরলোকগত পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে জল ও ফলদান করার বিধি রয়েছে। ব্রাহ্মণরা বলেছেন, এই আচারটি পালিত না হলে পিতৃপুরুষ ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত হয়ে অভিশাপ দিতে দিতে মহালয়া অমাবস্যার দিন আবার যমলোকে ফিরে যাবেন। সেটা উত্তরপুরুষদের জন্য অকল্যাণকর। তাই মহালয়া অমাবস্যায় পিন্ডদান ও গঙ্গাস্নানের বিধান 'শাস্ত্রের' অঙ্গ । তবে একটা শর্ত আছে। ঔরসজাত 'পুত্র' ছাড়া কেউ পিন্ডদান করতে পারবে না। করলেও সে অন্ন পিতৃলোক পর্যন্ত পৌঁছোবে না। শুধুমাত্র কন্যার পিতারা অবহিত হউন। গরুড়পুরাণ বলছে, পুত্রহীন পিতারা কখনও মুক্তিলাভ করবেন না। পুত্রলাভের জন্য তাঁদের বারবার জন্ম নিতে হবে। মার্কন্ডেয়পুরাণ বলছে, পূর্বপুরুষের আত্মা যদি পুত্রের শ্রাদ্ধে সন্তুষ্ট হয় তবে প্রচুর সমৃদ্ধিলাভের ব্যবস্থা পাকা হয়ে যায়। মোক্ষও গ্যারান্টিড।
    --------------------------------
    এই প্রসঙ্গে একটি পৌরাণিক আখ্যান উল্লেখ করা যায়। মহাভারতের কর্ণ মৃত্যুর পর যখন পরলোকবাসী হলেন, তখন ক্ষুধার্তবোধ করায় তাঁকে যমের নির্দেশে স্বর্ণসামগ্রী পরিবেশন করা হলো। কর্ণের প্রশ্নের উত্তরে যম জানালেন, যেহেতু কর্ণ আজীবন স্বর্ণদান করে এসেছেন তাই পরলোকে প্রতিদান হিসেবে তিনি শুধু স্বর্ণই পেতে পারেন। উপরন্তু তাঁর সব পুত্রই কুরুপান্ডবের যুদ্ধে বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছেন। অতএব মর্ত্যলোক থেকে তাঁকে পিন্ডদান করার কোনও অধিকারী আর জীবিত নেই। এই অবস্থায় পড়ে কর্ণ যমকে অনুরোধ করলেন তাঁকে যেন এক পক্ষকালের জন্য আবার জীবনদান করা হয়। সেক্ষেত্রে তিনি মর্ত্যে গিয়ে নিজের আত্মার উদ্দেশ্যে যথেষ্ট জল ও অন্নের পিন্ডদান করে আসবেন। পরলোকে অন্নকষ্ট দূর করার জন্য তাঁর কাছে আর কোনও উপায় নেই। যমরাজ রাজি হলে কর্ণের বরাতে একপক্ষকালের নরজন্মলাভ হলো। এই সময়টিতে তিনি মর্ত্যে এসে নিষ্ঠাসহকারে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে অন্নজলে তর্পণ করলেন। যদিও কর্ণের পিতৃপুরুষ যে আসলে কে, তা নিয়ে মতান্তর রয়েছে। যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে থেকে পূর্বজদের উদ্দেশ্যে তর্পণ ও পিন্ডদান করেছিলেন, সেই সময়কালটিকেই 'পিতৃপক্ষ' বলা হয়ে থাকে। শাস্ত্রবিচারে যমলোক'কে 'মহালয়' মনে করা হয় । কারণ এই আলয়ে সমস্ত জীবিত প্রাণীকে একদিন গিয়ে বসবাস করতেই হবে। যেহেতু এই অমাবস্যার দিন পিতৃপুরুষদের সাময়িক মর্ত্যবাসের পর আবার মহালয়ে ফিরে যেতে হয়, তাই এর নাম 'মহালয়া অমাবস্যা'।
    -----------------------------
    পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা অবশ্যই পুণ্যকর্ম এবং সেহেতু এই দিনটি একটি পবিত্র উপলক্ষ্য । কিন্তু এর সঙ্গে শোকের মাত্রা যোগ করাটি পুরাণযুগের অবদান। বৈদিকযুগে মৃত্যুঞ্জয় হবার সাধনা করা হতো, পশ্য, মৈত্রেয়ী, নচিকেতা ইত্যাদি । যেহেতু মৃত্যু জীবনের স্বাভাবিক পরিণতি, তাই বেদ-উপনিষদের কালে তার মাহাত্ম্য স্বীকার করা হলেও ততো প্রাধান্য দেওয়া হতোনা। কিন্তু পুরাণযুগে মানুষ চারিত্র্যে অল্পপ্রাণ হয়ে যাবার ফলে, 'মৃত্যু' মানুষের মনে এক চরম ভীতিকর মাত্রা নিয়ে আসতে শুরু করে। এই ভীতির বাণিজ্যীকরণ করে পুরোহিতকুল বহু লোকাচারের সৃষ্টি করেছে। তার মধ্যে মহালয়ার দিন পিন্ডদান ইত্যাদি অবশ্য আচরণীয় কৃত্য। এ ছাড়া আরেকটি স্মার্ত মাত্রাও দেখা যায়। পরবর্তী শুক্লপক্ষ যেহেতু 'দেবী'পক্ষ, তাই তার আগে একটি এক্সক্লুসিভ 'পুরুষ'পক্ষ উদযাপনকেও ব্রাহ্মণ্যব্যবস্থার পক্ষ থেকে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। পিতৃপুরুষকে 'স্মরণ' করাই যেহেতু উদ্দেশ্য , সেক্ষেত্রে মহালয়া অমাবস্যাকে একটি একটি শুভতিথি মনে করা যায়। কিন্তু তা করা হয়না। ব্রাহ্মণ্যমাত্রায় এইদিনের অভিঘাতটি নেতিবাচক।
    ----------------------
    আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় সদ্যোমৃত প্রিয়জনকে 'হারানো'র যে বেদনা, তার একটা শেলফ লাইফ রয়েছে । বেদনার প্লাবন চলে যায়, কিন্তু পলিমাটির মতো যা পড়ে থাকে, তার নাম শোক। শোক একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি। এর কোনও সামাজিক তাৎপর্য নেই, পূর্ণত গহনগামী এক উপলব্ধি। এই উপলব্ধি এক নিগূঢ় শিল্পের মতো। এ বিষয়ে আমার জানা শ্রেষ্ঠ শিল্পীর নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। লোকাচারের 'শ্রাদ্ধ' ইত্যাদি অনুষ্ঠানের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। লোকাচারের 'শ্রাদ্ধে' আমাকে এক ব্রাহ্মণ পুরোহিত যখন বলে আমার প্রয়াত মাতৃদেবী ক্ষুধার্ত প্রেত হয়ে আমার পিন্ডদানের জন্য অশরীরী অপেক্ষা করে আছেন এবং 'পিন্ড' না পেলে তিনি আমার অমঙ্গল করবেন। আমি সেই ব্রাহ্মণকে বলি, যে 'লোকাচার' মনে করে ঐ চালকলার পিন্ড না পেলে আমার মা আমার অমঙ্গল করবেন, সেই মূর্খতাকে ধিক্কার জানাই এবং আমি কোনমতে সেই 'শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে'র অংশ থাকতে পারিনা। পুরোহিত বিড়ম্বিত বোধ করেন এবং আমি এরকম একটি মূঢ়তার অংশভাগী হয়ে নিজের প্রতি করুণা বোধ করি। এই লোকাচারটিকে যদি 'শ্রাদ্ধ' বলা হয়, তবে তা কোনমতে শুভবোধের অংশ নয়। সেক্ষেত্রে 'শুভবিবাহে'র মতো 'শুভশ্রাদ্ধ' বলাটা 'শুভত্বে'র অবমাননা হবে। গুজরাতে কচ্ছের রাজপরিবারে শ্রাদ্ধপালন নিষিদ্ধ, যেহেতু মৃত্যু একটা 'অশুভ' ঘটনা। কিন্তু শব্দার্থে যে 'শ্রাদ্ধ' মানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, সেখানে শুভ প্রত্যয় ব্যবহার করাই যায়।
    ----------------------------------------
    এই লেখাটির শীর্ষক ধার করেছি আমাদের বাল্যকালে রতনকুমার ঘোষ রচিত একটি নাটক থেকে। যে পৃথিবীকে আমরা রেখে যাচ্ছি উত্তরপুরুষদের জন্য, আমি নিশ্চিত তারা ভাবীকালে আমাদের খুব একটা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে না। ধুলোকাদায় মিশে যাওয়ার ভবিতব্য, পিতা পুত্র সবার....কে কাকে বাঁচিয়ে রাখে?

    "আমি তার উপেক্ষার ভাষা
    আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
    অবহেলা করে গেছি; যে নক্ষত্র- নক্ষত্রের দোষ
    আমার প্রেমের পথে বারবার দিয়ে গেছে বাধা
    আমি তা ভুলিয়া গেছি;
    তবু এই ভালোবাসা-ধুলো আর কাদা-.........."

    ( সৌজন্যেঃ কালিমাটি অনলাইন)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ | ১৮২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কান্তি | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৫২69479
  • কিছু মানুষ কিন্তু তার পিছনে ফেলে যাওয়া প্রিয় জনেদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকার ভীরু আকাঙ্ক্ষা লালন করে।
    এখানে কোন তত্ত্ব নেই।
  • Atoz | ***:*** | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:১৫69482
  • কর্ণ দেখি একেবারে টাইম সার্কেল করে দিলেন! নিজেই নিজের উদ্দেশ্যে প্রচুর অন্নজল দিয়ে শ্রাদ্ধ ট্রাদ্ধ করে নিশ্চিন্তে আবার পরলোকে চলে গেলেন। ঃ-)
    কার উপরেই বা ভরসা করবেন? বাবা তো উঁকি দিয়ে দ্যাখেন নি ছেলে বাঁচল কি মরল, মা ভাসিয়ে দিলেন নদীতে, অধিরথ আর রাধা দু'জনে না থাকলে কে বা পালন করতেন?(ভেবে দেখুন, এরা যদি বিবাহিত যুবক যুবতী অবস্থায় সংসার পেতে না রেডি থাকতেন, তাহলে কর্ণকে পেলেও তো তুলে নিতে পারতেন না হয়তো! সমাজে নানা কথা উঠতো। ) পরে বড় হয়ে বে থা করে অনেক ছেলেপুলে হল, তো সেই ছেলেপুলেরাও সব বীরগতি প্রাপ্ত।
  • Atoz | ***:*** | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৪৪69483
  • সামান্য আলাদা জানতাম এটা।

    "অহন্যহন্যানি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম
    শেষাং স্থিরত্বমিচ্ছন্তি কিমাশ্চর্যমতঃপরম্‌ "

    ঃ-)
  • Atoz | ***:*** | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৫১69484
  • কিংবা এইটাও হতে পারে-

    "অহন্যহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম
    শেষাং স্থিরত্বমিচ্ছন্তি কিমাশ্চর্যমতঃপরম্‌ "

    ঃ-)
  • 0 | ***:*** | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:১৮69480
  • শিবাংশুদা, প্লিজ একটু ভেরিফাই করলে ভালো হয়।
    ১) মৎ(মদ্‌)/মান/বান এই শব্দগুলো তো with/having অর্থে হয়। যেমন শ্রীমৎ, শ্রীমান। শুধু 'মৎ'/'মদ্‌' ('মদভাগবদগীতা') বোধয় শুদ্ধ নয়।
    ২) **আকাঙ্ক্ষা, **পিণ্ড, **মার্কণ্ডেয়, **পূর্ণতঃ, **উদ্‌যাপন, **পুঁথি, **উচ্ছন্ন ও **অধ্যাদেশ (সন্ধি কম্পালসরি), **ব্যাপী, **প্রাক্‌

    বেশ ইনফর্মেটিভ। বিশেষ ক'রে পূর্ণিমা--অমাবস্যায় পালনীয় এই প্রথাগত তফাতটা। কর্ণের গল্পটাও অজানা ছিল।

    লাইক/থাম্বস্‌আপ : "যে 'লোকাচার' মনে করে ঐ চালকলার পিন্ড না পেলে আমার মা আমার অমঙ্গল করবেন, সেই মূর্খতাকে ধিক্কার জানাই এবং আমি কোনমতে সেই 'শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে'র অংশ থাকতে পারিনা।"
  • de | ***:*** | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:৩৩69481
  • "গরুড়পুরাণ বলছে, পুত্রহীন পিতারা কখনও মুক্তিলাভ করবেন না। পুত্রলাভের জন্য তাঁদের বারবার জন্ম নিতে হবে। মার্কন্ডেয়পুরাণ বলছে, পূর্বপুরুষের আত্মা যদি পুত্রের শ্রাদ্ধে সন্তুষ্ট হয় তবে প্রচুর সমৃদ্ধিলাভের ব্যবস্থা পাকা হয়ে যায়। মোক্ষও গ্যারান্টিড।"

    তাহলে শুধু কন্যাসন্তানের পিতামাতার শ্রাদ্ধ করা অর্থহীন, সেই তো ফিরেই আসতে হবে! আর পিতৃতর্পণে কি মাতা ইনক্লুডেড?
  • Atoz | ***:*** | ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৩৯69488
  • পুং না, পুৎ। পুৎ নামক নরক থেকে উদ্ধারকারী বলে পুত্র!
    ঃ-)

    এখনকার দিনে সমস্ত পিতা পিতর ইত্যাদিকে প্যারেন্ট দিয়ে আর সমস্ত পুত্র পুত্রঃ ইত্যাদিকে চিল্ড্রেন দিয়ে রিপ্লেস করে দিলেই হয়।

    ইন ফ্যাক্ট কিছু কিছু সভ্য দেশে তাই হয়েই গিয়েছে অনেক জায়গায়।

    মাতাপিতা আর কন্যাপুত্র সব ইকোয়াল ফুটিং এ দাঁড়িয়ে গেছে! আসলে তো লিনিএজ রাখতে সমান সমানই লাগে দুইদলকে। একদলী বেশী গুরুত্ব টুরুত্ব নাম টাম পাওয়া ইত্যাদি সব তো মানুষের চালাকি। দরকারবশতঃ একসময়ে এইসব কায়্দা চালু করেছিল লোকে। এখন সময় বদলেছে, নতুন কায়্দা চালু করাই তো ঠিক।
  • শিবাংশু | ***:*** | ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৬:০০69485
  • 'o',

    একেবারে ঠিক; 'মদ' বি'শ্রী' হতে পারেনা। হয় শুধু ভগবদগীতা অথবা শ্রীমদ ভগবদগীতা। আর বানানগুলো এভাবে ভুল হয়ে গেছে, খেয়ালই করিনি। অমার্জনীয়। অনেক ধন্যবাদ।

    'd'

    পিতৃতর্পণে মাতা ইনক্লুডেড ন'ন। ব্যথাটা এইখানেই। কারণ এইসব স্মৃতিশাস্ত্র যখন রচনা হয়েছে ততোদিনে বৈদিকযুগ ফুরিয়ে গিয়েছিলো। অবশ্য তখনও যে খুব একটা সম্মান ছিলো, এমন নয়। তবে কিছু ছিলো। সমকালীন সমাজের মান্যতা গুলো'ই পরবর্তীকালের জন্য 'শাস্ত্র' হয়ে গেছে। বংশগতি যেহেতু পিতার নামে, তাই পিতা পিণ্ড পেলেই বাকিদের পাওয়া হয়ে যাবে। এই প্রথা তো এখনও রয়েছে। বাবা বর্তমান থাকতে এখনও র‌্যাশন কার্ড মা'য়ের নামে হয়না।

    'Atoz',

    ঠিকই, পাঠান্তর রয়েছে। সন্ধি ও বিচ্ছেদ বা ক্রিয়াপদের রূপ। তবে অর্থটি একই থাকছে।
  • ranjan roy | ***:*** | ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:৫৪69486
  • এতোজ,
    আপনার দ্বিতীয় ভার্শনটি সঠিক।
  • ranjan roy | ***:*** | ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:৫৯69487
  • দে,
    তখন তো পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যাঃ।
    নরনারীর মিলনের পেছনেও ইমোশন নয়, পুত্রসন্তান প্রাপ্তিই লক্ষ্য। কারণ সে পুং নামক নরক থেকে ত্রাণ করবে!
    শালা!
  • ranjan roy | ***:*** | ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৬:৩১69489
  • এতোজ,
    মানে -- পুৎ নাম নরকাৎ ত্রায়তে যঃ সঃ= পুত্র?
    বা পুৎ+ নাম= পুংনাম? পুন্নাম?
  • cm | ***:*** | ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৬:৩৬69490
  • একদল ই বেশি গুরুত্ব পাওয়া ঠিক ইউনিফর্ম নয়। খাসিয়াদের মধ্যে অন্যরকম। দক্ষিণ আমেরিকায় কি জানতে কৌতুহল হয়।
  • Atoz | ***:*** | ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:২৬69492
  • পৃথিবীর কোনাকাঞ্চিতে সামান্য সামান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনজাতিতে অন্যরকম হলেই বা কি এসে যায়? মূল জনস্রোতে তাদের প্রভাব কোথায়?
    ইম্প্যাক্ট ফেলতে গেলে বড় বড় জাতির পালের গোদাগুলোকে ধরতে হবে। তারপরে তুলে আছাড়! সব সমান না হয়ে যাবে কোথা?
    ঃ-)
  • cm | ***:*** | ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২০69493
  • সে নাহয় হবে মানে ঐ আছাড় টাছাড়। কিন্তু ছেলেদের এই বাড়বাড়ন্ত কি চাষাবাদের সাথেই শুরু হল?
  • Atoz | ***:*** | ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:০৩69494
  • শিকারের আমলে মানে ঐ দল বেঁধে ম্যামথ ট্যামথ শিকারের আমলেও মনে হয় ছেলেদের বাড়বাড়ন্তই ছিল।
  • cm | ***:*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৩১69495
  • মানুষের ইতিহাসে এর সূত্রপাত কবে? প্রমাণ হয়ত শক্ত কিন্তু কোন কনজেকচার কি আছে?
  • Atoz | ***:*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:০১69496
  • এইখানেই তো মুশকিল। মানুষের ইতিহাস বলে যা জানা যায় সেই জিনিসটাই তো বেশ ভাসা ভাসা। কংক্রীট সেরকম কিছু তো না! পাথরের অস্ত্র, হাড়, ঝিনুকের মালা, কুড়ুল, গুহার দেয়ালে আঁকা ছবি --এইসব দেখে দেখে বোঝার চেষ্টা কী থেকে কী হলো। তার উপর যাঁরা ইন্টার্প্রিট করছেন, তাঁরাও তো তাঁদের সমাজ ও সময়ের প্রোডাক্ট, তাঁদেরও বায়াস থাকতে পারে। ইন্টারপ্রিটেশন গুলো আবার বদলে বদলেও যায়।

    (যেমন সম্প্রতি একটা আর্টিকলে পড়লাম ফ্যারাও খুফুর পিরামিড মোটেই ক্রীতদাসদের মেরেধরে জোর করে খাটিয়ে তৈরী হয় নি, হয়েছিল খুবই যত্নে আত্তিতে রাখা এলিট ওয়ার্কফোর্স দিয়ে ঃ-))

    দৈহিক শক্তির ব্যাপারটাকে যদি প্রিভিলেজ হিসেবে ধরা যায়, তবে অতীতে চিরকালই ছেলেদের বাড়বাড়ন্ত, কারণ তখন টেকনোলজি অতি প্রিমিটিভ, অনেক কাজই জাস্ট দৈহিক শক্তিতে করতে হতো। মানে পারা গেলে। সেই হিসাবে ধরলে অতীতে সাম্য কোনোদিনই ছিল না, সাম্য আসতে পারে একমাত্র ভবিষ্যতে, যখন ক্রমোন্নত টেকনোলজি ক্রমাগত মিনিমাইজ করতে থাকবে শারীরিক শক্তির গুরুত্বের ব্যাপারটা।
  • ranjan roy | ***:*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:২৯69497
  • এতোজ,
    কিন্তু, ধরুন ছেলেদের মধ্যেও অনেকে রোগাপ্যাংলা, শারীরিক শক্তিতে তেমন কিছু নয়। আবার মেয়েদের মধ্যেও কেউ কেউ অ্যামাজোনিয়ান , ছেলেদের কুস্তিতে আছাড় দিতে পারেন।
    মানে সেই যুগে , সভ্যতার আদিপর্বে,যখন সবাইকেই মিনিমাম ক্রুড হাতিয়ারের জোরে শিকার করে খাদ্য জোগাড় করতে হত, তখন নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে যৌথ শ্রমে হাত লাগাতে হত?
    শুধুমাত্র সন্তানের জন্ম দেওয়ার কালে মেয়েরা পিছিয়ে পড়ত। এ বিধাতার অন্যায় পক্ষপাত। সেও একদিন বিদায় নেবে হয়ত।
  • Atoz | ***:*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৩৫69498
  • উঁহু, ব্যাপারটা অন অ্যান অ্যাভারেজ দেখুন। একশোজন ছেলে আর একশোজন মেয়ের মধ্যে দেখুন। গড়ে শারীরিক শক্তি কাদের বেশী।

    আর শুধু সন্তান জন্ম দেবার কালে নয়, তার আগে যখন শিশু মায়ের মধ্যে বেড়ে উঠছে আর তার পরে যখন ক্ষুদ্র অসহায় ইঁদুরছানার মতন শিশু উত্তাপ ও খাদ্যের জন্য মায়ের উপরে নির্ভরশীল, সেই পুরো সময়টা। আর তারপরে দ্বিতীয় সন্তান, তারপরে তৃতীয়, তারপরে আরো। প্রায় পুরো প্রজননসমর্থ সময়টাই অনেক মহিলাকে ব্যস্ত থাকতে হতো সন্তান দেখভালে। অবধারিতভাবে তাদের মুখে খাদ্য যোগানোর ব্যাপারগুলো বাবাদের দেখতে হতো। তারা দল বেঁধে শিকারে যেত অথবা চাষাবাদ করতে বা পশু চারণে। অনিশ্চয়তা তখন অনেক বেশী ছিল, আজ খাবার জুটছে, কাল জুটবে কিনা কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। শিশুমৃত্যুর হারও অনেক বেশী ছিল, উইকলিং রা ঝরে যেত শিশুকালেই, যুঝতে পারার মতনগুলো বাঁচতো। তাই সন্তানজন্ম বন্ধ করার চেষ্টাও চিন্তার বাইরে ছিল, যুবক যুবতী হয়ে ওঠার মতন শক্তসমর্থ মানুষ না থাকলে গোষ্ঠী টিঁকবে কেমন করে?
  • ranjan roy | ***:*** | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০১69499
  • চমৎকার গ্রাফিক এবং যুক্তিনিষ্ঠ বর্ণনা-- মেনে নিলাম।
  • Atoz | ***:*** | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:১০69500
  • রঞ্জন,
    ঃ-)
    কিন্তু আপনার ঐ সপ্তদশ অশ্বারোহী, মহেন্দ্রের ঘোড়া, ছত্তিশগড়ের চক্করে, অনন্তসিংহের সিংহ --এসব লেখাগুলোর কী হলো? ঃ-)
  • cm | ***:*** | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:২৩69501
  • বেঁচে থাকার তাগিদেই যদি শ্রম বিভাজন হয়, তাহলে কি দৈহিক শক্তিকে প্রিভিলেজ বলা যায়? আরো প্রিসাইজলি বললে, প্রিভিলেজের অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ক্যারাক্টেরাইজেশন কি? সেটি স্পষ্ট না হলে কি বলা যায় প্রথমদিন থেকেই ছেলেদের বাড়বাড়ন্ত?
  • Atoz | ***:*** | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৩৫69502
  • তখনকার ধারণাগুলো কীরকম ছিল কেজানে! হতেই পারে উভয়ের কাজকেই গুরুত্ব দেওয়া হতো, কারুকেই ছোটো করা হতো না। আবার হতেই পারে শক্তিশালী রক্ষক ও খাদ্য যোগাড়কারীদেরই সম্মান। মহিলারা যন্ত্রমাত্র। জন্ম দেয় ও পালন করে চলে। বানর, গরু, ভেড়া, বাঘ, সিংহ ইত্যাদিদের মতন। বিশেষ কৃতিত্বের তো কিছু নাই! প্রকৃতিতে গাছগাছালি পাখপাখালির জন্মানোর ও বেড়ে ওঠার মতন।
    গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে লড়াই টড়াই হলে যোদ্ধাদের বিশেষ সম্মান। সেইক্ষেত্রে অবশ্যই পুরুষপ্রাধান্য গড়ে দেখতে গেলে।
    এখনকার সমাজ ও সময়ের দৃষ্টিতে তাদের দেখার চেষ্টা করছি মাত্র, সত্যিটা কী ছিল কেজানে!
  • cm | ***:*** | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৪69503
  • তখনকার বলতে? আমি সময়ের হিসেবে ভাবতে চাই। চাষাবাদের আগের যুগের কথা বলছি। আমার সাধারণ বুদ্ধি বলছে, তখন প্রজাতি হিসেবে মানুষের ভবিষ্যৎ সাফল্য পরিষ্কার ছিলনা। জন্মদানে নারী পুরুষের আলাদা ভূমিকা, এ বাদে সকল কাজেই (অর্থাৎ স্বীকার ধরায় ) সকলের সমান অধিকার ছিল। সহজ চাহিদা ও যোগানের (শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর কথা বলছি) হিসেবে সে সমাজে ছেলেরা ডিস্পেন্সেবল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ( কোন জনগোষ্ঠিতে হঠাৎ করে পুরুষের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেলে তাদের বাউন্স ব্যাক করতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। তাই ছেলেরা ডিস্পেন্সেবল বা তুলনামূলক কমদামী হওয়ার কথা।)
  • Atoz | ***:*** | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০৫69504
  • হুম, সম্ভবত বহুবার ঐভাবে বাউন্স ব্যাক করেছে। বড়ো বড়ো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ইত্যাদির পর পর নির্ঘাত প্রচুর ছেলে মরে যেত যুদ্ধে, আস্তে আস্তে রেপ্লেনিশড হতো পরে।
    কিন্তু যুদ্ধ বা শিকারের অস্ত্র বানানো, যুদ্ধ বা শিকার করতে শেখা---এইসব জিনিস গুলো অ্যাকোয়ার্ড স্কিল, এগুলো প্রাকৃতিকভাবে লভ্য নয়, এরজন্যে প্ল্যান ট্যান দরকার। সেই হিসাবে দেখতে গেলে এগুলো একধরণের প্রিভিলেজ, যদিও অর্জিত গুণ।
  • cm | ***:*** | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৫69505
  • প্রিভিলেজের একটা বৈশিষ্ট্য বোঝা গেল, গুণ অর্জনের অধিকার। মেয়েদের কি সেই অধিকার ছিলনা? অবশ্যই স্ট্যাটিস্টিকালি, সেই অধিকার প্রয়োগের চেয়ে বাচ্চার জন্মদান বেশি জরুরী ছিল।
  • Atoz | ***:*** | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৮:০৯69506
  • হুঁ, মনে হয় অস্ত্র বানানো, যুদ্ধ ও শিকারে কিছু কিছু মহিলাও যেতেন, যাঁরা হয়তো কোনো কারণে সন্তান ধারণ করতে পারতেন না, বা সেই বয়স উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তখনও শক্তসমর্থ ছিলেন, তাঁরা।
    কিন্তু স্ট্যাটিস্টিকালি দেখতে গেলে গড়পড়তা সেই সংখ্যা গড়পড়তা পুরুষসংখ্যার চেয়ে অনেক কম, কারণটাও সহজবোধ্য।
  • Atoz | ***:*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:২৯69507
  • তুল্লাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন