এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্কুলশিক্ষার হালহকিকত

    Barnana Pal লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ জুন ২০২৫ | ৯৫ বার পঠিত
  • স্কুলছুট্ বন্ধ করে শিশু ও কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় আগ্রহী করে তুলতে বেশ কিছু আকর্ষণীয় পরিকল্পনা সরকারি স্তরে গ্রহণ করা হয়েছে অনেকদিন আগেই৷ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থী-সহায়ক পরিষেবাগুলির পরিসরও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এসব সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চোখে পড়ার মতো একটা অংশ মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না৷ এর জন্য আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি কিছুটা দায়ী, তবে লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে ছেলেমেয়েরা যে আগ্রহ হারাচ্ছে সেকথা বোধহয় অস্বীকার করা যাবে না৷

    পড়াশোনার অতিরিক্ত বোঝা যাতে শিক্ষার্থীর কাছে ভয়ের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য সিলেবাসের ভার লাঘব করা হয়েছে, পাশ-ফেল প্রথাও তুলে দেওয়া হয়েছে৷ বই, ব্যাগ, স্কুলের পোশাক ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি প্রতিটি পড়ুয়াকে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে৷ স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য সাইকেলও দেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়াও ব্যবস্থা হয়েছে পুষ্টিকর খাদ্যের, শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য যে জিনিসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ মিড-ডে মিলে পরিবেশিত খাদ্যে পুষ্টিগুণ কতটা আছে, বা মিড-ডে মিলের জন্য বরাদ্দ অর্থে কতটা পুষ্টিকর খাবারের সংস্থান হতে পারে সেটা একটা বড় প্রশ্ন৷ সম্প্রতি মিড-ডে মিলে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে৷ বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য এই অর্থের পরিমাণ জনপ্রতি ৬.৭৮ টাকা আর উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ১০.১৭ টাকা৷ এই অর্থে কিভাবে সকল শিক্ষার্থীর মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা হয় সেও এক বিস্ময়! তাছাড়া একবেলার ভরপেট খাবার কি প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য যথেষ্ট? আপাতত এ প্রসঙ্গ থাক্৷ তবে এত কিছু সুবিধাজনক পরিকল্পনার আবহেও ছেলেমেয়েদের যে সেভাবে লেখাপড়া শেখার বিষয়ে উৎসাহী করে তোলা যাচ্ছে না সেটা বাস্তব ঘটনা৷ পরিসংখ্যান থেকেই এ তথ্য উঠে আসছে৷ কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলছুটের সংখ্যা শূন্য এবং নবম দশম শ্রেণীতে স্কুলছুটের হার ১৭.৮৫ শতাংশ৷ ২০২৪ এ মাধ্যমিকে পশ্চিমবঙ্গে পাশের হার ছিল ৮৬.৫৬ শতাংশ৷ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলছুট্ শূন্য হবার অন্যতম কারণ মিড-ডে মিল, এমনটাই শিক্ষক মহলের অভিমত৷ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে গেলেও এরা প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিক স্তরের পাঠ কতটা আয়ত্ত করতে পারছে সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে৷ বিভিন্ন অসরকারি সমীক্ষায় প্রকাশ পাচ্ছে এদের অনেকেই বাংলা বা ইংরাজীর সহজ ভাষা পাঠে সাবলীল নয়৷ সাধারণ যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের অঙ্ক কষতেও তারা সমস্যায় পড়ে৷ স্বাভাবিক ভাবেই নবম দশম শ্রেণীতে পৌঁছে এরা লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে৷ নবম দশম শ্রেণীর স্কুলছুটের সংখ্যাই এই বাস্তব অবস্থার পরিচয় দেয়৷

    শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনেকেরই প্রশ্ন – লেখাপড়া শিখে কী হবে? চাকরি কোথায়? মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও একটি কথা শোনা যায় – লেখাপড়া শিখেও সেই পরের বাড়িতে সংসার সামলানো, এই তো মেয়েদের ভবিষ্যৎ৷ তাই পড়াশোনার জন্য অযথা সময় ব্যয়ে কী লাভ? অভিভাবকের এরকম ভাবনা শিশু ও কিশোরদের উৎসাহিত করার পরিবর্তে তাদের মনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ মূল প্রশ্নটি হল – লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য কি শুধুই একটা চাকরি পাওয়া? আর কিছু নয়? লেখাপড়া শেখার মূল উদ্দেশ্য তো অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনা৷ এই বিশ্বসংসারের প্রকৃতি, পরিবেশ, আমাদের চারপাশের মানুষজন, গাছপালা, পশুপাখি – যাদের ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ তাদের বিষয়ে নূন্যতম জ্ঞান থাকা তো সমাজ জীবনের আবশ্যিক শর্ত৷ এই জ্ঞান আহরণের প্রক্রিয়ার সূচনা হয় শিশুবয়সে আর তা চলতে থাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত৷ বিশ্বসংসারের বিস্তৃতি এবং তার মধ্যে ব্যক্তিবিশেষের অবস্থানটিকে ঠিকভাবে বুঝবার জন্যই তো লেখাপড়া শেখবার প্রয়োজন৷ আর এই বুঝে নেওয়ার ক্ষমতাটিই ভবিষ্যত জীবন গড়ে তোলার চাবিকাঠি৷ শিক্ষক এবং অভিভাবকের সাহচর্য শিক্ষার্থীকে এই ক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করে এবং তার নিজস্ব জীবনের পথটি সে নিজেই খুঁজে নিতে পারে৷

    শিক্ষার্থীর মূল্যায়নে পরীক্ষা এবং পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে পাশ করে উঁচু ক্লাসে ওঠা বা ফেল করে একই ক্লাসে আবার পড়া, এই ব্যবস্থা পড়ুয়াদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে৷ তাই শিক্ষার্থীকে চাপমুক্ত রাখতে এবং তার আগ্রহ বজায় রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়া৷ এটা অত্যন্ত জরুরী এবং কার্যকরী পদক্ষেপ বলেই অনেকের মত৷ এ বিষয়ে একটু ভাবনা-চিন্তার অবকাশ আছে বলেই মনে হয়৷ শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি সব স্কুলকেই মেনে চলতে হয়৷ নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর শিক্ষার্থী কতটা শিখেছে যাচাই করা হয় বহু উত্তরধর্মী বা অবজেকটিভ ধরনের কিছু প্রশ্নমালার উত্তরের ভিত্তিতে৷ এই মূল্যায়নের ফলাফল সন্তোষজনক না হলেও বছরের শেষে পড়ুয়া পরবর্তী শ্রেণীতে পড়ার ছাড়পত্র পেয়ে যায়৷ কোনোভাবেই কোনো পড়ুয়াকে একই শ্রেণীতে এক বছরের বেশী আটকে থাকতে বাধ্য করা যায় না৷ অভিভাবকের বিশেষ অনুরোধও এক্ষেত্রে কাজে আসে না, এমনই নিয়মের গ্যাঁড়াকল! এখানেই প্রশ্ন, পূববর্তী শ্রেণীর পাঠ্য বিষয় মোটামুটি আয়ত্তে না এলে পরবর্তী শ্রেণীর পাঠ আয়ত্ত করা আদৌ কি সম্ভব? আর পাঠ্য বিষয় যেখানে অবোধ্য সেখানে আগ্রহ কি বজায় থাকে? বুদ্ধি এবং মেধা সব শিশুর একরকম হয় না, এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই৷ যে শিশুটি ক্লাসে পিছিয়ে পড়ছে তার প্রয়োজন একটু অন্য ধরনের সহায়তা৷ কারো ক্ষেত্রে হয়তো একটু বেশি সময় দরকার পাঠ্য বিষয়গুলি আত্মস্থ করবার জন্য৷ পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর প্রকৃত সমস্যার সমাধানের কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র পাশ করিয়ে তাকে লেখাপড়ায় আগ্রহী করে তোলার ভাবনাটি কি বাস্তবসম্মত? মিড-ডে মিল, বই-খাতা, সাইকেল ইত্যাদি সুবিধা লাভের আশায় ছেলেমেয়েরা কিছুদিন হয়তো স্কুলে আসবে, কিন্তু পাঠ্য বিষয়ে তাদের আগ্রহ যে উঁচু ক্লাসে ওঠার সাথে সাথে কমতেই থাকবে – এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই৷ তাই পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়াটা সমস্যার সমাধান হতে পারে না, প্রয়োজন শিক্ষার্থীকে সঠিক দিশা দেখানো৷ প্রত্যেকের বুদ্ধি ও মেধা যাচাই করে তাকে সঠিক পথে চালনা করা৷ এ কাজের দায়িত্ব অবশ্যই শিক্ষকের৷ শুধু তাই নয়, শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রশ্নে এটিই শিক্ষকের প্রধান এবং একমাত্র দায়িত্ব বলে বিবেচিত হওয়া উচিৎ৷ মিড-ডে মিল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব শিক্ষকের উপর চাপিয়ে দিলে তা শিক্ষকের কর্তব্যবিচ্যূতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ বিভিন্ন সুবিধার প্রলোভন সামনে রেখে শিক্ষার আলো দেখানোর উদ্দেশ্যে যে শিশুদের আজ বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে, দশ বারো বছর ধরে সে বিশেষ কিছু না শিখলেও তাকে স্কুল পাশের শংসাপত্র দিয়ে দিলে ঐ শংসাপত্রটি বাস্তবে কোনো কাজেই আসবে না, একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়৷ শংসাপত্রটি শিক্ষার্থীর সঠিক মূল্যায়নের পরিচয়পত্র হলে তবেই তা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে৷ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সকলকেই উচ্চপদে চাকরি করতে হবে – এমন ভাবনা নিতান্তই বাস্তববিরোধী৷ ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ – সব কাজে পারদর্শী মানুষকে সমাজের প্রয়োজন৷ জীবনধারনের প্রয়োজনে অর্থ উপার্জনের জন্য প্রযুক্তিগত শিক্ষা আর সমাজে সুস্থ জীবন যাপনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ৷ পাশ-ফেল প্রথা তুলে স্কুলছুট্ রোধ করার ভাবনা বিসর্জন দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার যথাযথ সংস্কারের আশু প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই বোধ হয়৷ বিষয়টি শিক্ষানীতি নির্ধারক ব্যক্তিবর্গ অনুধাবন করেছেন এটাই আশার কথা৷ স্কুল স্তরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে পাশ-ফেল প্রথা৷

    শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ, অর্থাৎ বই-খাতা, ব্যাগ, পোষাক, জুতো এগুলো সকল শিক্ষার্থীকে দেওয়ার কিছু যুক্তি নিশ্চয়ই আছে, তবে প্রত্যেককে সাইকেল দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত সে বিষয়ে প্রশ্নের অবকাশও আছে৷ প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কিছু সময় পর জঞ্জালের স্তুপেই স্থান পায়৷ একই কথা প্রযোজ্য ট্যাবের ক্ষেত্রেও৷ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ট্যাবের জন্য বরাদ্দ টাকা পাওয়ার পরেই শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর স্কুলের পথে পা মাড়াচ্ছে না। শিক্ষা সংসদের তথ্য অনুযায়ী ২০২৫-এ উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলছুটের সংখ্যাটা ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে৷ তবে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবার উদ্দেশ্যে অনুমোদিত প্রকল্পগুলিকে আশ্রয় করে এক শ্রেণীর মানুষ যে উপকৃত হয়েছেন বা হচ্ছেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এই সব পরিষেবায় সহায়তাকারী ব্যক্তি ও সংস্থাগুলি নিঃসন্দেহে লাভবান হয়েছে৷ কী ধরনের দুর্নীতি হয়ে চলেছে এগুলিকে আশ্রয় করে তার পরিচয় কিছুটা আন্দাজ করা যাচ্ছে সংবাদপত্রে এবং সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলি থেকে৷ স্বাভাবিকভাবেই মনে সংশয় জাগে, শিক্ষার্থীর কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে কি এসবের অবতারণা না কি অন্য কোনো স্বার্থ সিদ্ধির কারণে প্রকল্পগুলির প্রস্তাবনা! শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রশ্নে শিক্ষক এবং অভিভাবক, উভয়েরই ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ৷ সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর রাখা অভিভাবকেরই কর্তব্য৷ শিশুর স্বাস্থ্যপোযোগী পুষ্টিকর খাবার এবং শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণগুলির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মা-বাবার হাতে থাকাটাই শ্রেয়৷ সমাজে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে এসবের দায়ভার শিক্ষকের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ শিক্ষক পূর্ণ উদ্যমে শিক্ষাদানের বিষয় এবং পদ্ধতিতে মনোনিবেশ করতে পারেন৷

    শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূ্র্ণ বিষয় হল প্রত্যেক স্কুলে ছাত্রসংখ্যার অনুপাতে উপযুক্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষকের উপস্থিতি। শিক্ষাকর্মীর ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ প্রয়োজন অনুপাতে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর অভাব অন্যান্য সুবিধার আড়ম্বর দিয়ে পূরণ হবার নয়৷ বছরের পর বছর বিভিন্ন জটিলতায় স্কুলগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে৷ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দু্র্নীতির প্রসঙ্গ জনসমক্ষে আসবার পর থেকেই ক্রমে ক্রমে প্রকাশ পাচ্ছে এর লাগামছাড়া গতিপ্রকৃতি৷ যত সময় যাচ্ছে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে৷ বলা ভাল, সমস্যাটিকে জটিলতর করে তোলা হচ্ছে৷ আদালতের হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান অদূর ভবিষ্যতে হবার আশা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে৷ শিক্ষকতার পেশাকে পাখির চোখ করে যারা নির্ধারিত পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেছেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতির জটিলতায় তাদের নিয়োগও যে আকস্মিকভাবে বাতিল হয়ে যেতে পারে তা কি কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিলেন? নিয়োগ পদ্ধতির যাদুকাঠি অযোগ্য প্রার্থীকেও নিয়োগপত্র দিতে পারে, এটাও কি কেউ ভাবতে পেরেছিলেন? এরকম ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। দুর্নীতির সর্বগ্রাসী জটাজাল সমাজকে আজ এক অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তার সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে৷ চাকরিহারা শিক্ষকদের জীবনধারণই কঠিন প্রশ্নের মুখে আর অপ্রতুল শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী, যারা এখনও শিক্ষা নামক ব্যবস্থাটিকে কোনোরকমে টিকিয়ে রেখেছেন তাদের অনিশ্চয়তা এর ভবিষ্যত নিয়ে৷ অন্যদিকে স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে কেউ যোগ্য, কেউ অযোগ্য – এই ঘটনা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে কি প্রশ্ন জাগিয়ে তুলছে তা বা তার কি প্রভাব শিশুমনে পড়ছে তা আন্দাজ করা সহজ নয়৷ এরকম অবস্থায় বেসরকারি স্কুলগুলিই অভিভাবকদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে, অবশ্যই যাদের সামর্থ্য আছে তাদের কাছে। সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় অন্যান্য সুবিধার প্রলোভন যতই থাকুক না কেন সে ব্যবস্থায় শিক্ষার নাগাল পাওয়া পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এইরকম জটিল এক পরিস্থিতিতে গরীব নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া শিখে গাড়িঘোড়া চড়ার স্বপ্ন দেখা রূপকথার গল্পের মতোই অলীক কল্পনা, বাস্তব থেকে দূর বহু দূরে ৷
           
    বর্ণনা পাল
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন