এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • বিজ্ঞানের অ(নেক?)-ক্ষমতা # পর্ব-৩

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০২ এপ্রিল ২০১৯ | ২৪২৭ বার পঠিত
  • [৪] এস্পার ওস্পার!

    এখন, এরকম একটা তর্ক অনেকে তোলেন, “আচ্ছা বেশ, বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সমন্বয় সম্ভব নয়—এটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু আপনাদের বিজ্ঞান কি প্রমাণ করতে পারে যে ঈশ্বর নেই? বিজ্ঞান কি দেখাতে পারে, আত্মার ধারণা ভুল? টেলিপ্যাথি অসম্ভব? ইত্যাদি। বিজ্ঞান কি এই সব নিয়ে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছে যার মাধ্যমে এই সব ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়ে গেছে?”

    না, সত্যি কথা বলতে কি, আমি যদ্দুর জানি, বিজ্ঞান এ পর্যন্ত এরকম কোনো চেষ্টাই করেনি। কারণ, যুক্তিশাস্ত্রের বুনিয়াদি নিয়ম অনুযায়ী এসব অপ্রমাণ করার দায় বিজ্ঞানের উপরে বর্তায় না। আসলে, কাকে সে অপ্রমাণ করবে? প্রমাণ কই যে খণ্ডন করবে? যাঁরা এসবের প্রবর্তক, প্রস্তাবক বা প্রচারক, যাঁরা এই সমস্ত ধারণার পৃষ্ঠপোষণ করেন—ভারতীয় ন্যায়শাস্ত্র অনুযায়ী যাঁরা ঈশ্বরতত্ত্ব অধ্যাত্মবাদের “পূর্বপক্ষ”—প্রথমে তাঁদের নিজেদের বক্তব্য প্রমাণ করতে হবে। অর্থাৎ, তার সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে হবে। “উত্তরপক্ষ” হিসাবে তখন বিজ্ঞানের কাজ হবে সেই প্রমাণসমূহকে যাচাই ও বিচার করা, গ্রহণযোগ্য মনে হলে গ্রহণ করা, আর অযৌক্তিক মনে হলে খণ্ডন ও বর্জন করা। ঈশ্বরতত্ত্বের প্রস্তাবক বা সমর্থকরা যদি তাঁদের বক্তব্য যুক্তি ও তথ্য সহযোগে প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে থাকেন, এবং তাঁদের ভাবখানা যদি এরকম হয়, “আমাদের ঈশ্বর আত্মা ব্রহ্ম জাতীয় ধারণার সপক্ষে সবচাইতে বড় প্রমাণ হচ্ছে এই যে, বিজ্ঞান আজ অবধি এদের বিরুদ্ধে কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ সংগ্রহ করে উঠতে পারেনি”, তাহলে বুঝতে হবে—তাঁদের নিজেদের বিশ্বাসে কোথাও বড় রকমের ফাঁকি আছে।

    সুতরাং আগে ওঁদেরকেই প্রমাণ দিতে হবে।

    তবে, বিজ্ঞানের কাছে প্রমাণ বলতে কী বোঝানো হয় সেটাও মনে রাখা দরকার।

    বিজ্ঞানের কাছে প্রমাণ বলতে বিজ্ঞানীদের ভোট বোঝায় না! কত জন বড় বড় বিজ্ঞানী ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছেন, কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি আত্মা এবং ভূতে বিশ্বাস করেছেন—এসবের উল্লেখ করলে বা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু “প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা”-র রঙিন বর্ণনা সহ কিছু মন্তব্য তুলে ধরলে তা কোনো প্রমাণ হয়ে ওঠে না। বিজ্ঞানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রমাণ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও সুবিন্যস্ত যুক্তির ভিত্তিতে ধাপে ধাপে সিদ্ধান্ত নিষ্কাশন ও নির্ধারণ করে দুদিক থেকে এগোতে হবে।

    প্রথমত, আরোহ পদ্ধতি (inductive method)-তে দেখাতে হবে, পর্যায়ক্রমে কিছু তথ্য, পর্যবেক্ষণ, যুক্তিগ্রাহ্য সংজ্ঞা এবং প্রতিজ্ঞা মেনে নিলে ঈশ্বর (কিংবা আত্মা কিংবা ভূত . . .)-এর ধারণা ও তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নটি একটি অনিবার্য ও স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত (necessary logical consequence) হিসাবে উঠে আসে।

    তারপর অবরোহ পদ্ধতি (deductive method)-তে দেখাতে হবে, কোন কোন সুপরিজ্ঞাত প্রাকৃতিক ঘটনার রহস্য বুঝবার বা ব্যাখ্যা করবার জন্য ঈশ্বর (কিংবা আত্মা কিংবা ভূত . . .)-এর ধারণা ও তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নটি একটি আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত প্রাথমিক শর্ত বা স্বীকার্য (necessary and sufficient condition)।

    এই যুক্তিবাদী কাঠামো পরিহার করে প্রমাণের কোনো প্রচেষ্টাই বিজ্ঞানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং যাঁরা বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সমন্বয় খোঁজেন, তাঁদের তো আরও গুরুত্ব সহকারে এই রকম প্রমাণ পেশ করতে হবে।

    বিজ্ঞান এই রকম প্রমাণ পেলে শুধু যে খুশি হবে তাই নয়। প্রমাণগুলোকে আগ্রহের সঙ্গে বিচার করে দেখবে, গ্রহণযোগ্য বুঝলে এই সমস্ত ধারণাই মেনে নেবে। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ না হলে বিজ্ঞানের এদের দিকে সামান্যতম আগ্রহও থাকবে না। বিজ্ঞান মনে করে, তার কার্যকারিতা যেহেতু তথ্য যুক্তি প্রমাণ ও প্রয়োগের চতুর্ভুজের দ্বারা আবদ্ধ, এই কঠোর শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞানন-পদ্ধতির বদলে যদি সে কোনো ছোটখাট সমস্যার ব্যাপারেও শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমাধান করতে এগিয়ে যায়, তার পরিণাম খুব হাস্যকর, এমনকি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

    বিজ্ঞানচর্চা সেই সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই একটি নিরীশ্বরবাদী জগত-মনস্ক মনন ক্রিয়া। বিজ্ঞানীদের অনেকেই—সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই—তাঁদের ব্যক্তিগত চিন্তায় ধর্মপ্রাণ বা ঈশ্বরভক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কেউ বিজ্ঞানের তত্ত্বে বা সূত্রে কোথাও ঈশ্বর আত্মা ব্রহ্মের কথা ঢোকাতে যাননি বা পারেন না। বস্তুত, অতীতে যাঁরা বাস্তব জগতকে বোঝার বা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, তাঁরা কখনও না কখনও অনুভব করেছেন, ঈশ্বরে বিশ্বাস তাঁদের কোনো কাজে লাগে না। প্রাচীন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক কপিল তাই স্পষ্ট ভাষাতেই ঘোষণা করেছিলেন: “ঈশ্বরাসিদ্ধে প্রমাণাভাবাৎ।” [সাংখ্যসূত্র, ১/৯২] অর্থাৎ, প্রমাণ নেই, তাই ঈশ্বরের ধারণা অসিদ্ধ। সেকালের আর একজন মহান যুক্তিবাদী দার্শনিক বৃহস্পতি (মতান্তরে, চার্বাক) খোলাখুলি বলেছিলেন, “পরকাল বলে কিছু নেই”, “দেহোত্তর বা দেহাতিরিক্ত আত্মা বলে কিছু হয় না”, ব্রাহ্মণদের “জর্ফুরি তর্ফুরি মন্ত্র” বাস্তব সমস্যার সমাধানে কোনো সাহায্য করে না, ইত্যাদি। [Cowell and Gough (trans.) 1882, 10-11]

    অন্যান্য দেশেও এরকম ভাবনার জন্ম হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিস দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ এপিকিউরাস (খ্রিঃপূঃ ৩৪১-২৭০) বাস্তব জগতের দিকে তাকিয়ে একটি অকাট্য কূটাভাস পরিবেশন করেছিলেন: “ধর্মবিশ্বাসীরা যাই বলুন, ঈশ্বর একাধারে সর্বশক্তিমান এবং পরম করুণাময় হতে পারেন না।” [Cited by Voltaire 1935, 34] কারণটাও তিনি ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছিলেন। এই পৃথিবীতে বাস্তবিক সাধারণ মানুষের উপর যত রকম দুঃখকষ্ট শোষণ বৈষম্য অন্যায় অবিচার নির্যাতন রয়েছে, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হলে নিশ্চয়ই এক লহমায় তার অবসান ঘটাতে পারেন। তিনি তা করেননি। তাই তাঁকে করুণাময় আর বলা যায় না। অন্য দিকে যদি বলা হয়, তিনি সত্যই বিগলিত করুণায় জগতের যাবতীয় দুঃখক্লেশ নিবারণ করতে চান, তাহলে ফলাফল দেখেই বলা চলে, তিনি তা করে উঠতে পারেননি। অতএব তিনি সর্বশক্তিমান নন।

    প্রায় দুহাজার বছর পরে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ফরাসি বিপ্লবের যুগের বিশিষ্ট যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী দার্শনিক ফ্রাঁসোয়া মারি আঁতোয়া বোলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) রসিকতা ছলে বলেছিলেন: “কুছ পরোয়া নেই; দুজন ঈশ্বর বানাও—একজন ভালো ভালো জিনিস সৃষ্টি ও কাজের ব্যাপারটা দেখভাল করবেন; আরও একজনকে লাগবে, যিনি খারাপ জিনিসগুলোর স্রষ্টা ও পরিচালক হিসাবে থাকবেন। কিন্তু দুজনেই সমান শক্তিধর—কেউ কাউকে কখনও হঠাতে বা হারাতে পারবেন না। দুনিয়াটাও যথেষ্ট বড়। দুজনেই তাঁরা করবার মতো অনেক রকম কাজ পেয়ে যাবেন।” [Voltaire 1935, 34] লক্ষ করুন, সূক্ষ্ম রসের আড়ালে বোলতেয়ার আসলে কী বলতে চাইছেন, ঈশ্বর ধারণাটা এমন যে না থাকলে ক্ষতি নেই; কিন্তু থাকলে তা দিয়ে বাস্তব জাগতিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা করতে গেলে জটিলতা বৃদ্ধি পায়। ভগবান থাকলে শয়তানকেও আনতে হয়; God-এর জন্য Devil; আল্লাহর জন্য ইবলিশ; ইত্যাদি। আর একবার এনারাও এসে গেলে ভগবানকে রাখার উদ্দেশ্যটাই তো মাটি হয়ে যায়!

    প্রসঙ্গত, আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দের জার্মানির প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী আর্নস্ট হ্যেকেল (১৮৩৪-১৯১৯)। তাঁর ১৮৯৯ সালে লেখা বিজ্ঞান দর্শন ও ধর্ম সংক্রান্ত একটি বইতে ধর্মের লাভক্ষতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে লাতিন ইউরোপে ঈশ্বরের নামে খ্রিস্টীয় পোপতন্ত্রের সহস্র বৎসর ব্যাপী অকথ্য অত্যাচারের ইতিহাস স্মরণ করে দয়ালু ঈশ্বরের অক্ষমতা নতুবা অনস্তিত্বকে এক অনবদ্য ভাষায় তুলে ধরেছিলেন: “Unbelieving philosophers who have collected disproof of the existence of God, have overlooked one of the strongest arguments in that sense—the fact that the Roman Vicar of Christ could for twelve centuries perpetrate with impunity the most shameful and horrible deeds in the name of God.” [Häckel 1934, 261] মানে হল, শয়তানরা এত লম্বা সময় ধরে শয়তানি করে গেল ভগবানের নাম নিয়ে, অথচ ভগবান তা বারোশ বছরেও থামাতে পারলেন না, নাকি থামালেন না! কে জানে!!

    আসলে, ভালো করে বিচার করলে দেখা যাবে অসীম অনাদি অনন্ত রূপে ঈশ্বরের সংজ্ঞা দিতে গেলেই তা সাধারণ নৈমিত্তিক জাগতিক যুক্তি তর্ক ও তথ্যের সাপেক্ষে অসঙ্গতি দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে বিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করা তো তার পক্ষে আরও মুশকিল। পক্ষান্তরে, ঈশ্বরকে সসীম সাদি সান্ত রূপে গ্রহণ করলে এই সমস্ত অসঙ্গতি কেটে যায় ঠিকই; কিন্তু তখন আবার ঈশ্বরের ঈশ্বরত্ব আর বজায় থাকে না। যদিও, মনে রাখতে হবে, তর্কশাস্ত্রীয় অর্থে দুই তরফে সংজ্ঞার্থের সঙ্গতি পাওয়া গেল মানেই তা বাস্তবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করে দিল—এমন নয় বিষয়টা।

    অনেক দিন আগেই এটা বুঝতে পেরে নিকোলাস দ্য কুসা (১৪০১-৬৪), জিওর্দনো ব্রুনো এবং বারুখ স্পিনোজা ঈশ্বরকে বাস্তব জগতের সঙ্গে একাকার করে দিয়ে ধারণাটাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কেন না, তাঁরা ব্যক্তিগত চিন্তায় ঈশ্বর বিশ্বাস থেকে মুক্ত ছিলেন না, অথচ, বাস্তব সমস্যার ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঈশ্বর ধারণাকে যুক্তিসম্মতভাবে কোনোভাবেই কাজে লাগাতেও পারছিলেন না। কিন্তু ধর্মপ্রভুরা সেদিন ঠিকই বুঝেছিল, এতে ঈশ্বরের ঐশ্বরিক মহিমা অনেকখানি ক্ষুণ্ণ হয়ে যাবে, জগতের তুলনায় ঈশ্বরের এবং ইহজগতের তুলনায় উহজগতের গুরুত্ব কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না! পরবর্তীকালে আর্থার শোপেনহাওয়ার (১৭৮৮-১৮৬০) কথাটা সরাসরিই ফাঁস করে দেন: “Der Pantheismus ist eine höflische Form der Göttesleugnung!” [Cited by Häckel 1934, 238] অর্থাৎ, সর্বেশ্বরবাদ আসলে নিরীশ্বরবাদেরই একটু ভদ্রলোকসুলভ নাম। বিজ্ঞানীরা হয় স্পষ্টভাষায় নিরীশ্বরবাদী হন, নতুবা ঈশ্বরচিন্তার সাথে ভদ্রলোকের চুক্তি করে সর্বেশ্বরবাদের কথা বলেন। তার বেশি জায়গা বিজ্ঞানের খাতায় ভগবানের জন্য ছাড়তে পারেন না। তাই দেখা গেল, কোপারনিকাস, গ্যালিলেও, কেপলার (১৫৭১-১৬৩০) এবং এমনকি নিউটনের মতো বড় মাপের চিন্তাবিদও, ব্যক্তিগতভাবে ধার্মিক এবং ঈশ্বর বিশ্বাসী হওয়া সত্তেও, বিজ্ঞানের সীমানায় ঈশ্বরকে ঢোকাতে চাননি বা পারেননি। আর, প্রখ্যাত ফরাসি গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক রনে দকার্ত (১৫৯৬-১৬৫০) দুই দলের কাজের এলাকাই ভাগ করে দিতে চাইলেন: বিজ্ঞানীরা মর্ত্য জগত এবং জড় পদার্থ নিয়ে মাথা ঘামান, আর দার্শনিকরা আত্মা পরমাত্মা পরমেশ্বরের অমৃতলোক নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে থাকুন! যাতে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি না হয়।

    অবশেষে অষ্টাদশ শতাব্দের শেষ দশকে ফ্রান্সের বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক পিয়র সিঁমো দ্য লাপ্লাস (১৭৪৯-১৮২৭) এসে বিজ্ঞানের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক পাকাপাকিভাবে নির্দেশ করে দিলেন। তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত Méchanique Céleste গ্রন্থটি তিনি ফ্রান্সের তদানীন্তন সদ্য ক্ষমতাসীন সম্রাট নেপোলিয়ঁকে উৎসর্গ করেছিলেন। সম্রাট বইটা আদ্যপান্ত নেড়েচেড়ে দেখলেন, তাতে কোথাও জগতস্রষ্টা হিসাবে ঈশ্বরের নাম উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি। খুব আশ্চর্য হয়ে এই ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করলে একটি মাত্র বাক্যে বিজ্ঞানের পক্ষে প্রদেয় সবচেয়ে যথাযথ কারণটি লাপ্লাস সম্রাটকে জানিয়ে দিলেন: “Je n’avais pas besoin de cette hypothèses” [Cited by Engels 1974, 200; also see Ball 2003]; অর্থাৎ, তাঁর যা আলোচ্য বিষয়বস্তু সেখানে যুক্তি বা তথ্য, কোনো দিক থেকেই এই বহুপ্রচলিত (ঈশ্বর নামক) তত্ত্বকল্পের দরকার হয়নি।

    সত্যিই এ এক অনবদ্য উত্তর। এই কথাটার একটা সাধারণ তাৎপর্যও আছে। বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়গুলোতে কখনও এবং কোথাও ঈশ্বর ধারণার দরকার হয় না। কেন না, বিজ্ঞানের লক্ষ্যই হল, প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে ন্যূনতম সংজ্ঞা ও প্রতিজ্ঞার সাহায্যে সিদ্ধান্ত নিষ্কাশণ করতে করতে এক একটা তত্ত্বকে দাঁড় করানো; এবং প্রদত্ত তথ্য, সংজ্ঞা, প্রস্তাব ও তত্ত্বের ভিত্তিতে অজানিত ও প্রাপ্তব্য তথ্য সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বিজ্ঞান দেখতে চাইবে—“ঈশ্বর আছেন”, অথবা, “ঈশ্বর সমুদয় জগত সৃষ্টি করিয়াছেন”—এই জাতীয় প্রস্তাবনা থেকে বিজ্ঞানের একটাও নতুন কিছু সূত্র বের করা যায় কিনা; অথবা, প্রচলিত সূত্রগুলির কোনো বিকাশ ঘটানো যায় কিনা। যদি তা না করা যায় বিজ্ঞানের কোনো কাজে এই সব প্রস্তাব লাগছে না। সুতরাং তা বাতিল করে দেওয়াই ভালো।
    উদাহরণ দিই।

    ধরা যাক, আর্কিমেদিস (খ্রিঃপূঃ ২৮৭-২১২)-এর নীতিকে এইভাবে লেখা হল: “ঈশ্বরের কৃপায় কোনো বস্তুকে কোনো তরলে নিমজ্জিত করিলে বস্তুটির ওজনের যে আপাত হ্রাস হয় তাহা উহার সম আয়তন অপসারিত তরলের ওজনের সমান।” কিংবা, আধুনিক কালে এসে প্লাঙ্কের সূত্রকে এইভাবে বর্ণনা করা হল: “ঐশ্বরিক বিধান এই যে কোনো বস্তু হইতে তাপ বিকিরণ বা তদ্দ্বারা তাপ শোষণ নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ঘটে না, উহা ঘটিয়া থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককের হিসাবে, যাহার পরিমাণ বিকিরিত/শোষিত শক্তির কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক হইবে।” এই রকম প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বোঝার চেষ্টা করে, “ঈশ্বর”, তাঁর “কৃপা” বা “বিধান” জাতীয় সংজ্ঞা বা প্রস্তাব যোগ করার ফলে সূত্রগুলিতে সামান্য হলেও কিছু নতুন জ্ঞান সংযুক্ত হল কিনা, তাদের উপলব্ধি একটুও উন্নততর হল কিনা। যদি না হয়ে থাকে, তখন শুধু শুধু অবান্তর কিছু জিনিস ঢোকানোর কোনো মানে হয় না। ফরাসি বিপ্লবের সার্থক সন্তান লাপ্লাসও সেদিন সম্রাটকে ঠিক এই কথাটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন।

    আরও ভেঙে বলা যাক।

    নিউটন তাঁর সমগ্র বলবিদ্যার কাঠামোটি গড়ে তুলেছিলেন তিনটি মাত্র মৌল সংজ্ঞার সাহায্যে—ভর, সরণ, সময়। আরিস্ততলীয় দর্শন থেকে ঢুকে পড়া মানবোপম পরিভাষাগুলি, যথা—ইচ্ছা, প্রবণতা, উদ্দেশ্য, উৎকর্ষ, ইত্যাদির অনেক কিছুই সযত্নে বর্জন করেছিলেন—দরকার হয়নি বলে। রেখে দিয়েছিলেন দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ শব্দ—বল এবং জাড্য। কারণ, এগুলোর প্রয়োজন ছিল। আরিস্ততল মনে করতেন, ঈশ্বরের কাজ হচ্ছে নিখুঁত এবং বৃত্ত হচ্ছে নিখুঁত আকার। সুতরাং গ্রহগুলিও গোলাকার, তাদের আবর্তন পথও বৃত্তাকার। কেপলার যখন প্রমাণ করে দিলেন, গ্রহগুলির আবর্তন পথ বৃত্তাকার নয়, উপবৃত্তের মতো, ঘোরতর ঈশ্বর-বিশ্বাসী নিউটন দেখলেন—“ঈশ্বর” এবং তাঁর কাজের “উৎকর্ষ”—দুটো ধারণাই গ্রহের কক্ষপথ বোঝার ক্ষেত্রে শুধু অনাবশ্যকই নয়, আপত্তিকরও বটে! তাঁর এতগুলো গতিসূত্র এবং মহাকর্ষ সূত্র—কোথাওই তিনি ভগবানকে বৈজ্ঞানিক পদ মর্যাদায় স্থান দিতে পারলেন না। উলটে, তাঁর মহাগ্রন্থ Philosophie Naturalis Principia Mathematica-তে এক জায়গায় তিনি ঘোষণাই করে রাখলেন, “Hypotheses non fingo”, অর্থাৎ, যে সংজ্ঞা ও প্রস্তাবের দরকার নেই, তাকে আমি কোথাও কল্পনায় তৈরি করে আমার তত্ত্বে কাজে লাগাইনি। আমি বিজ্ঞানের যে দর্শনে বিশ্বাস করি, সেখানে “particular propositions are inferred from the phenomena, and afterwards rendered general by induction” [Cited by Engels 1974, 317 and 332ff]।

    [৫] আত্মারাম খাঁচা ছাড়া!

    একই রকম সমস্যা ছিল আত্মার ধারণা সম্পর্কেও।

    যত দিন পর্যন্ত আত্মার ধারণা দিয়ে সজীব বস্তুর জীবনের বৈশিষ্ট্য এবং মানুষের চেতনা ও মনের ক্রিয়া বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল, প্রাণশক্তিবাদ দিয়ে জৈব পদার্থের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হচ্ছিল, তত দিন জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, জৈবরসায়ন, প্রাণরসায়ন, প্রভৃতি বিজ্ঞানের শাখাগুলিতে কোনো অগ্রগতিই সম্ভব হয়নি। ব্যাখ্যার জটিলতাই শুধু বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মনোবিজ্ঞান প্রাচীন স্তরেই আটকে ছিল। তখন পর্যন্ত মনের ক্রিয়াকলাপ এবং মানসিক রোগ সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝার বা চিহ্নিত করার কোনো উপায়ই ছিল না। মৃগী রোগ, হিস্টিরিয়া, সিজোফ্রেনিয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, ইত্যাদিকে ব্যক্তির নিজস্ব মানসিক বা শারীর-মানসিক সমস্যা হিসাবে দেখা হত না। দেখা হত বাইরের উপদ্রব হিসাবে।
    উদাহরণ দিলে বুঝতে হয়ত সুবিধা হবে।

    সুদূর অতীতে তো বটেই, এমনকি সাম্প্রতিক কালেও গ্রাম্য পরিবারের কোনো গৃহবধূ, বা কোনো গরিব নিরীহ সাধারণ লোকের এই সব লক্ষণ দেখা দিলে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটাকে ভাবা হত “অপদেবতার ভর”, “ভূতে-পাওয়া”, “দুস্টু আত্মার প্রবেশ”, “শয়তানের খেলা”, ইত্যাদি হিসাবে। আবার, সাধু সন্ত পির ফকিরদের ক্ষেত্রে এই একই লক্ষণগুলোকে “ভাব সমাধি”, “ভাবের ঘোর”, “দৈবানুগ্রহ”, “প্রত্যাদেশ”, “ঈশ্বরোন্মুখতা”, ইত্যাদি বলে ব্যাখ্যা করা হত। আজকে যাই মনে হোক, অতীত কালে এগুলো নিছক মিথ্যাচার বা ভণ্ডামির ঘটনা ছিল না। পৃথিবীর সব দেশেই মানুষ সরল মনে এভাবেই ভাবতে এবং বিশ্বাস করতে অভ্যস্ত ছিল। আত্মার ঢোকা বেরনো দিয়ে ব্যাখ্যা করলে অন্য রকম হবেই বা কেন? ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং কর্তাব্যক্তিরা এই সমস্ত ধারণা ও বিশ্বাসকে ধর্মতাত্ত্বিক আশ্রয় ও ব্যবহারিক প্রশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। কোনো গ্রামে পর পর দুচার জন লোক অসুখে বা দুর্ঘটনায় মারা গেলে, হঠাৎ করে গৃহপালিত পশু মরে গেলে, কিংবা ফসলে মড়ক লাগলে ওঝা গুণিনদের পরামর্শে এরকম কোনো মনোরোগীকেই ডাইন বা ডাইনি আখ্যা দিয়ে বীভৎস নির্যাতন করে মেরে ফেলা হত। কী আর করা যাবে—দুষ্ট আত্মার ব্যাপার যে। ধর্মশাস্ত্র ধরে এর চাইতে বেশি জানার বা ভাবার সুযোগ ছিল না!

    অষ্টাদশ শতাব্দ জুড়ে ফ্রান্সের বোলতেয়ার, দনিস দিদরো (১৭১৩-৮৪), অলবেতিয়াস (১৭১৫-৭১), ওলবাখ (১৭২৩-৮৯), প্রমুখ “বিশ্বজ্ঞানী” (encyclopaedist) ও যান্ত্রিক বস্তুবাদী দার্শনিকদের নিরন্তর প্রচারের ফলে বিজ্ঞানীরা যখন থেকে আত্মার ধারণা বর্জন করলেন, প্রাণশক্তিবাদের প্রস্তাবনাও বাতিল করে দিলেন, তখন থেকেই—ঊনবিংশ শতাব্দ থেকেই—একে একে জীববিজ্ঞানের বিকাশের দ্বার খুলে গেল, জৈববস্তু রসায়নের বিচার্য এলাকায় ঢুকে পড়ল, শারীরতত্ত্ব, ভেষজবিদ্যা, জীবাণুবিদ্যা, জৈব রসায়ন, জিনতত্ত্ব এবং প্রাণরসায়নের বিকাশ সম্ভব হল। আর এরই ভিত্তিতে প্রায় সমান্তরালভাবে স্নায়ুতন্ত্র তথা মস্তিষ্কের গঠন ও কাজকর্ম বুঝে নিয়ে তার সাহায্যে মানুষের ভাষা চিন্তা মানসিক ক্রিয়াকলাপ এবং মানসিক তথা শারীর-মানসিক নানা রকম জটিলতা ও রোগের সমস্যা পাঠ করার জন্য মনোবিজ্ঞানের জন্ম হল।

    এই সব পুরনো কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য। এখানেও মনে করিয়ে দিতে চাই যে বিজ্ঞানীরা আত্মার ধারণাকে বসাবার মতো কোনো জায়গা খুঁজে পাননি, বরং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানের অগ্রগতির পথে একে বাধা হিসাবে দেখেছেন বলেই একে বর্জন করেছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আত্মার অস্তিত্ব অনস্তিত্ব প্রমাণ বা অপ্রমাণ করার দরকার হয়নি। এটা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার যে গভীরভাবে ইশ্বরভক্ত ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত বেদান্ত দর্শনে বিশ্বাসী বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু যখন আবিষ্কার করলেন যে গাছেরও বাইরের উদ্দীপনায় সাড়া দেবার ক্ষমতা আছে, তখন কিন্তু তিনি এটাকে দেখিয়ে তাঁর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে “গাছেরও আত্মা আছে” বলে দাবি করে বসেননি।

    অধ্যাত্মবাদীদের পক্ষে সান্ত্বনার কথা এই যে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এরকম আরও বেশ কিছু ভ্রান্ত ও অবান্তর ধারণা বাতিল করে আসতে হয়েছে। যেমন, রসায়ন শাস্ত্রে এক সময় “ফ্লোজিস্টন”-এর ধারণা দিয়ে দাহ্যবস্তুর দহনশীলতার ব্যাখ্যা দেওয়া হত। পদার্থবিদ্যায় তাপের ব্যাখ্যা করা হত ক্যালরিক-তত্ত্ব দিয়ে। চুম্বক কেন চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষণ করে তা বোঝানো হত কোনো এক কল্পিত “চৌম্বক তরল”-এর সাহায্যে। একই ভাবে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর বহু দিন পর্যন্ত বিদ্যুতকেও মনে করা হত এক প্রকার অদৃশ্য তরল। আজ শুধু যে এই সব ধারণার কোনো অস্তিত্ব নেই তা-ই নয়, বিজ্ঞানের ছাত্ররা অনেকে জানেই না যে এক কালে এই সব উদ্ভট ধারণা বিজ্ঞানের বইতে ছিল। সে সব উবে গেল কী করে? পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে একের পর এক বাতিল হয়ে? একদম নয়। বস্তুর বিভিন্ন ধর্ম এবং শক্তির বিভিন্ন রূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, নানা রকম কার্যকরী পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ফলাফল ব্যবহার করে সেই সব বিষয়ে তত্ত্ব নির্মাণ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা একে একে দেখতে পেলেন, এই সমস্ত ধারণা কোনো কাজে তো লাগেই না, উপরন্তু এদের জন্য বস্তুর ধর্ম ও পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কাজ আরও বরং জটিল এবং আজগুবি হয়ে পড়ছে। নতুবা, বেশি জিনিস দিয়ে কম জিনিসের ব্যাখ্যা হচ্ছে। তখন তাঁরা আর এসবের পেছনে বেশি সময় না দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, এদের এখন থেকে বাদ দেওয়াই ভালো।

    ঈশ্বর এবং আত্মার ধারণার ব্যাপারটাও অনেকটা এই রকম। তবে অন্য ধারণাগুলি ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের বই থেকে পুরোপুরি বহিষ্কৃত হয়ে গেলেও এই দুটো ধারণাকে এখনও বিজ্ঞানের ঠিক সীমানার বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আপন ধর্ম বিশ্বাস থেকে অনেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন—যদি কখনও বিজ্ঞানের কোনো তত্ত্বে ব্যাখ্যার এমন কিছু ফাঁক ফোকর পাওয়া যায় যা দিয়ে আবার তাঁরা এদের বিজ্ঞানে ঢুকিয়ে দিতে পারেন! বিজ্ঞানের উপলব্ধি এঁদের যেমনই হোক, ধৈর্য অসীম!

    অবশ্য বিজ্ঞানের সীমানায় এই সব তত্ত্ব চালান দেবার পরিণাম কী হতে পারে, তা বোঝার জন্য স্বামী অভেদানন্দের আলোচনাগুলি সকলের কাছেই শিক্ষণীয় হতে পারে। তাঁর সেই বইতে এক জায়গায় আছে: “বৈজ্ঞানিকরাও দেহ ছাড়া আত্মার পৃথক সত্তা আছে কিনা তা জানার জন্য গবেষণা করেছেন এবং এই বিরাট রহস্যের সমাধানের জন্য তাঁরা কোনো চেষ্টা করতেই বাকি রাখেননি। যত রকম সূক্ষ্ম যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে সেগুলি তাঁরা কাজে লাগিয়েছেন মৃত্যুর পর মস্তিষ্ক থেকে কোন জিনিস বার হয়ে যায় তা দেখার জন্য। জীবজন্তুর মাথায় তাঁরা অস্ত্রোপচার করে দেখেছেন। মানুষ যখন মরে যায় তখনও সতর্কভাবে সযত্নে তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন কোন জিনিসটি দেহ ছেড়ে চলে যায়, কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁদের সকল রকম চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।” [অভেদানন্দ ১৯৮৬, ৫৩]

    তাঁর এই সমস্ত কথা শুনে হবে, তাহলে অনেক দিন আগেই বিজ্ঞানের প্রথাসিদ্ধ পদ্ধতিতে যত দূর সম্ভব হাতে-কলমে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে যে আত্মা বলে কিছু নেই। অভেদানন্দ এই কথাটাই শেষ অবধি বলে গেলে আমাদের কাজ কত সহজ হয়ে যেত!

    কিন্তু না!

    তাঁর বইতে তিনি আগাগোড়া মরণোত্তর দেহাতীত আত্মার কথা শোনাবেন বলেই যে কলম ধরেছিলেন। ফলে সেই রচনায় আত্মা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইল পাঞ্জাবি আলুপরোটায় পেঁয়াজের টুকরোর মতো করে: “বিজ্ঞানীরা এ বিষয়টি ইউরোপে গবেষণার বস্তু হিসাবে গ্রহণ করেছেন। এই বস্তুটির নাম দিয়েছেন তাঁরা ‘এক্টোপ্লাজম’ বা ‘সূক্ষ্মবহিঃসত্তা’। এটি বাষ্পময় বস্তু, এর কোনো একটি নির্দিষ্ট আকার নেই। একে দেখতে এক খণ্ড মেঘের মতো, কিন্তু যে কোনো একটি মূর্তি আকার এ নিতে পারে। আর তাই এর ছবিও তোলা যায়।” [অভেদানন্দ ১৯৮৬, ২৮-২৯] তিনি দাবি করেছেন, “আমি নিজে প্রেতাহ্বায়ক বৈঠকে এই ধরনের এক্টোপ্লাজম নির্গত হতে দেখেছি। . . . আমি হাত দিয়ে তা দেখেছি ও স্পর্শ করেছি।” [অভেদানন্দ ১৯৮৬, ২৯] বইতে শেষ দিকে পৌঁছে তিনি আরও স্পষ্ট ভাষায় আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন: “সংস্কৃত ভাষায় একে বলে ‘সূক্ষ্মশরীর’। একে ভৌতিক বা বায়বীয় শরীরও বলে। মরণের সময় এই মানস বা বায়বীয় শরীরই কুয়াশার আকারে জড় দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। . . . সাধারণ মানুষের চোখে ওই কুয়াশা ধরা পড়ে না বটে, কিন্তু আলোকচিত্র গ্রহণের এমন শক্তিসম্পন্ন কাঁচ (সেনসিটিভ ফটোগ্রাফিক প্লেট) আছে যাতে এর ছবি অনায়াসে নেওয়া যায়। এখন আবার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে, কোনো মানুষ বা প্রাণী যখন মরে তার অব্যবহিত পূর্বে ও পরে যদি কোনো সূক্ষ্ম ও অত্যন্ত শক্তিসম্পন্ন দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা যায়, তবে তার ব্যবধান বেশ বোঝা যায়।” [অভেদানন্দ ১৯৮৬, ১৬৯]

    সব গুলিয়ে গেল। একই বইতে একই লোক এতটা দুরকম কথা লেখেন কী করে? তাঁর কোন কথাটা ঠিক? জড়বস্তুর মতো করে আত্মার প্রমাণ পাওয়া গেছে, না, যায়নি? একটা জিনিস, যার ফটো তোলা গেছে, ওজন নেওয়া গেছে, অভেদানন্দ হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছেন, মেঘের মতো দেখেছেন, বইতে ছবিও ছাপিয়ে দিয়েছেন, তাকেই আবার বিজ্ঞানীরা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম যন্ত্র দিয়েও ধরতে পারলেন না—এমনটা সত্যিই হতে পারে? অপেশাদার অভেদানন্দের চাইতেও অদক্ষ—কারা সেই আত্মা নিয়ে গবেষণারত পেশাদার বিজ্ঞানী?

    প্রশ্ন আরও অনেক তোলা যায়। এই সব কোনো প্রশ্নেরই উত্তর স্বামী অভেদানন্দের বইতে নেই। থাকার কথাও নয়। ফলে তাঁর গোটা প্রতিবেদনের সত্যতা সম্বন্ধেই সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। সমস্যা হল, বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী লোকেদের মনে এই সব প্রশ্ন উঁকি দিলেও ধর্ম বিশ্বাসী গুরুবাদে আপ্লুত পাঠকের মনে এই সব স্ববিরোধিতায় কিছু আসে যায় না! তাঁরা যখন শোনেন, অনেক চেষ্টা করেও আত্মার নাগাল পাওয়া গেল না, ভক্তিভরে গদগদচিত্ত হয়ে ভাবেন, আহা—পাবে কী করে ওরা? এ কি আর যে সে জিনিস? আবার সেই তাঁরাই যখন দেখেন, পাওয়া গেছে, ছোঁওয়া গেছে, বলেন, তবে? তেমন করে বিশ্বাস নিয়ে চেষ্টা করলে পাবে না মানে? “তেমন ভাবে ডাকলে পরে পাষাণেরও অশ্রু ঝরে!” কলকাতার রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ থেকে বাংলা অনুবাদে বইটার পৌনঃপুনিক সংস্করণ পুনর্মুদ্রণেও ছেদ পড়েনি। সম্পাদকীয় সংশোধক মন্তব্যও কেউ যোগ করেননি। অর্থাৎ, সবই ঠিক আছে।

    বিজ্ঞানের সাহায্যে আত্মাকে ধরার কী বিড়ম্বনা!

    এই বিড়ম্বনার আর একটা আকর্ষণীয় কাহিনি আমরা প্রায় সকলেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি। এক আমেরিকান ডাক্তারের গল্প। যিনি তাঁর একজন মুমূর্ষু রোগীকে মৃত্যুর ঠিক আগে কাচের বাক্সে পুরে দেন। রোগীর যখন মৃত্যু হল, সেই ডাক্তার দেখলেন, কাচের বাক্স এক জায়গায় ফেটে গিয়ে অদৃশ্য বাষ্পের আকারে রোগীর আত্মা বেরিয়ে গেল। গল্পটা অবশ্য (আমেরিকায় না হলেও) সারা ভারতবর্ষেই বেশ প্রচারিত ও প্রচলিত। শিক্ষিত লোকেরা অন্তত প্রায় সকলেই বাড়িতে স্কুলে পাড়ায় আত্মীয়পরিজন বা বন্ধুবান্ধবের কাছে শুনেছেন এবং বিশ্বাসও করেছেন। অনেকেই আবার দু পাঁচজনকে শুনিয়েওছেন! গল্পটার মধ্যে ফাঁকিটা কোথায় বুঝতেই হয়ত পারেননি।

    এখানেই বিশ্বাসের সঙ্গে বিজ্ঞানের ফারাক। এতটুকু বৈজ্ঞানিক মানসিকতা থাকলেই আপনি প্রশ্ন করতেন, আরে আরে, একটা জীবন্ত লোককে নিরেট কাচের বাক্সে পুরে দেওয়া যায় নাকি? শ্বাস বন্ধ হয়ে লোকটা তো তখনই মারা যাবে! আর আত্মার নামে এই পরীক্ষা করতে চাইলে তার বা তার বাড়ির লোকেদের থেকে অনুমতি লাগবে। হয়ত পুলিশ প্রশাসনের থেকেও অনুমতি নিতে হবে। পশ্চিমি দেশ বলে আরও বেশি করে এই সব আইনি রক্ষাকবচ লাগবে। আর সত্যিই এরকম একটা আইনসম্মত পরীক্ষা হলে তা নিয়ে দুনিয়ায় হুলুস্থুলু পড়ে যেত! কাচ ফেটে আত্মা বেরলে তো আরও বেশি করে!

    কেউ জানেন নাকি, কোন বিজ্ঞানের জার্নালে সেই বিস্ফোরক ঘটনার খবর এবং স-ফলাফল বিশ্লেষণ বেরিয়েছিল?

    আবার বলি, আত্মা পরমাত্মায় বিশ্বাসীরা সচরাচর এইভাবে যুক্তি তর্ক করেন না। করেন না, তাঁরা ভণ্ড বলে নয়, বিজ্ঞানের সাথে আত্মা-বিশ্বাস মেলাতে চাইলেও বিজ্ঞানের পদ্ধতিটাকে তাঁরা অন্তর থেকে—হয়ত আপন মনের অগোচরেই—অপছন্দ করেন বলে। বিজ্ঞানের পরিচিত পরিভাষাগুলি তাঁরা নেন, যেখানে যেমন লাগে; এই যেমন উপরোক্ত বইতে অভেদানন্দ নিয়েছেন—পরীক্ষা, এক্টোপ্লাজম, ফটোসেন্সিটিভ কাচ, অ্যামরফাস, ইত্যাদি। কিন্তু বিজ্ঞান মানে যে বিজ্ঞানের শব্দকোষ মাত্র নয়—এটা বোধ হয় তাঁরা ভুলে যান! অথচ, ঠান্ডা মাথায় বিচার করে দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারতেন, এই সব কাহিনি আসলে আধুনিক কালের নির্ভেজাল রূপকথা। আত্মা নিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার সমস্ত গল্পই শুনতে রোমাঞ্চকর হলেও সত্য নয়। বিজ্ঞানে এই ধারণাকে বাতিল করার জন্য কোনো পরীক্ষার আয়োজন করা দরকার পড়েনি। অপ্রয়োজনীয় বিধায় বিজ্ঞান একে নিঃশব্দে বর্জন করেছে।

    এই প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের দুজন নামকরা বিজ্ঞানীর কথা মনে পড়ছে। স্বামী অভেদানন্দের বইতে (এবং আরও অনেকেরই সমজাতীয় রচনায়) আত্মা সম্পর্কিত পরীক্ষার প্রশ্নে এই দুজন বিজ্ঞানীর নাম বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে—উইলিয়াম ক্রুক্স (১৮৩২-১৯১৯) এবং অলিভার লজ (১৮৫১-১৯৪০)। এঁদের অবদান সংক্রান্ত আলোচনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার কাছে কিছু তথ্য শোনা যাক: “ক্রুক্স এক কালে Psychical Society-র সদস্য ও সভাপতি ছিলেন। তিনি psychical experience সম্বন্ধে নানাবিধ গবেষণা করতেন এবং বলা বাহুল্য, এই সব গবেষণামূলক বৃত্তান্ত সম্পূর্ণ লিখে রাখতেন। তিনি একজন কৃতী বৈজ্ঞানিক এবং বিশ্ববিখ্যাত Royal Society-র সভাপতি পর্যন্ত হয়েছিলেন। সুতরাং এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, অধ্যাত্মবাদীগণ দাবি করবেন যে তাঁরা খুব একটা ‘বড় কাতলা’-কে বড়শিতে গাঁথতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ক্রুক্সকে যে সমস্ত অধ্যাত্মবাদী নিজেদের দলভুক্ত বলে প্রচার করেন তাঁরা খুব সততার পরিচয় দেন না, কারণ তাঁরা ক্রুক্সের অধ্যাত্মবিদ্যা চর্চার পরবর্তীকালের ইতিহাস জানাতে ভুলে যান [অভেদানন্দও ভুলে গেছেন—অ. মু.]। ক্রুক্স একদিন অধ্যাত্মবিদ্যা বিষয়ক তাঁর যাবতীয় গবেষণা ও অভিজ্ঞতার কাগজপত্র অগ্নিসাত করেন এবং যত দিন বেঁচে ছিলেন তত দিন এই সম্বন্ধে কোনো কথাই মুখে আনতেন না। লোকে কল্পনা-জল্পনা করে—He was the victim of some confidence trick!”

    অলিভার লজ সম্পর্কে সাহার মন্তব্য: “বিলাতের ওয়াকিব মহলে জনশ্রুতি এই যে, স্যার অলিভার লজ ভূতুড়ে (spiritualist) হওয়ার পর তিনি খাঁটি বৈজ্ঞানিক মহলে অনেকটা প্রতিপত্তি হারিয়েছেন। তিনি প্রায় অর্ধ শতাব্দ আগে কিছু গবেষণা করেছিলেন, কিন্তু তারপর তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে কিছু দান করেননি। ‘ভূতুড়ে বিজ্ঞানে’ কী দান করেছেন তা আমার জানা নেই।” [সাহা ১৯৮৬, ১১৮]

    এই দুই কাতলার পরিণতি সম্পর্কে অভেদানন্দের পরবর্তী গবেষকরা আশ্চর্যজনকভাবে নীরব।

    [চলবে]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০২ এপ্রিল ২০১৯ | ২৪২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • চয়ন মান্না | ***:*** | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪২47963
  • খুবই ভালো মানের লেখা। আরো বৃহত্তর মানুষদের কাছে পৌঁছাতে পারলে ভালো হত। তবে লোকে বিশ্বাসী তোখুব, যুক্তি দিয়ে বোঝালেও মানবে কিনা কে জানে
  • dd | ***:*** | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:০৪47964
  • হ্যাঁ , জটিল বিষয়, কিন্তু খুবই ইন্টেরেস্টিং করে লেখা
  • বিজ্ঞান | ***:*** | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০৭47965
  • এত সবই ২০০-৩০০ বছর আগের বিজ্ঞান নিয়ে, কোয়ান্টাম র কোয়ারক নিয়ে একটু কথা হোক, তারা কি, কেমন দেখতে - কি ভাবে কাজ করে,,,,,
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন