বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে কিছু কথা মনে এসে গেল। ... ...
সেই জানার ভিত্তিতে আজ বোধ হয় বলতে পারি, স্বাধীনতা উত্তরকালে সমস্ত দেশ জুড়ে এত বৃহদাকার ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলন আর হয়নি। ১৯৭৪ সালের ২২ দিনের রেল ধর্মঘট মাথায় রেখেও বলছি। দেশ ব্যাপী রেল সংযোগের কারণেই সেই সংযোগ হারিয়ে সারা দেশ উত্তাল হয়েছিল। রেল কলোনিগুলিতে এক দিকে চলেছিল জিআরপি সিআরপিএফ প্যারামিলিটারি পুলিশের দাপাদাপি, রেলের কর্মচারীদের ঘর থেকে টেনে তুলে নিয়ে গাড়ি চালানোর চেষ্টা। অপরদিকে ঘর ছাড়া পলাতক রেল কর্মীদের সঙ্গে আমাদের রাতের অন্ধকারে সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে গোপন ডেরায় গিয়ে গিয়ে যোগাযোগ স্থাপন, খবরের লেনদেন, অভুক্তদের খাদ্য পানীয় বিতরণ। সেই সব দিনের সেই গরম রক্তের চাষ উঠতি যৌবনে আমাদের অনেককেই স-মগজ মেরুদণ্ডী করে তুলেছিল। ... ...
[৭] অপরাবিদ্যা
শেষ করার আগে জরুরি কথাগুলো আর একবার সারসংক্ষেপ করে বলি। ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ধারণাগুলো কেন বিজ্ঞানের খাতায় পাওয়া যাবে না—বুঝে নেবার জন্য। ধর্ম এবং অধ্যাত্মবাদের তুলনায় বিজ্ঞান খুবই দুর্বল এবং ভিরু প্রকৃতির। ঈশ্বর আত্মা পরমাত্মা পুনর্জন্ম ব্রহ্ম জাতীয় অত্যন্ত গুরুগম্ভীর জটিল জিনিসগুলি প্রমাণ করার মতো মালমশলা বা সাহস কোনোটাই এর নেই। এটা তার নিতান্তই সীমাবদ্ধতা, বা অক্ষমতাও বলা যায়!
ধর্ম ও আধ্যাত্মিক সাধনায় জ্ঞানলাভ করা এক দিক থেকে কত সহজ। এক একজন মুনি ঋষি সাধু সন্ত পি ... ...
[৬] সবজান্তা বনাম জ্ঞানার্থী
উপরের আলোচনায় আমি এটা দেখাতে চেয়েছি, বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সাথে অধ্যাত্মবাদের বিরোধটা অত্যন্ত কঠোর বাস্তব। কী জানতে হবে তাতেও, কীভাবে জানতে হবে তা নিয়েও—বিরোধ এই উভয় মৌল বিন্দুতেই। তথ্য যুক্তি তর্ক সংশয় প্রমাণ অপ্রমাণ পরীক্ষা নিরীক্ষা পরিমাপন তুলনা বিচার বিশ্লেষণ—এই সমস্ত ব্যাপার ধর্মীয় চিন্তার পক্ষে শুধু অপাংক্তেয় নয়, বিপজ্জনকও বটে। “তাঁর ইচ্ছাতেই সব”, “তিনি যা করাচ্ছেন তাই হবে”, “মেলাবেন, তিনি মেলাবেন”—এই রকম ধারণা বা বিশ্বাস কোনো প্রমাণ অপ্রমাণের ধার ধা ... ...
[৪] এস্পার ওস্পার!
এখন, এরকম একটা তর্ক অনেকে তোলেন, “আচ্ছা বেশ, বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সমন্বয় সম্ভব নয়—এটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু আপনাদের বিজ্ঞান কি প্রমাণ করতে পারে যে ঈশ্বর নেই? বিজ্ঞান কি দেখাতে পারে, আত্মার ধারণা ভুল? টেলিপ্যাথি অসম্ভব? ইত্যাদি। বিজ্ঞান কি এই সব নিয়ে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছে যার মাধ্যমে এই সব ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়ে গেছে?”
না, সত্যি কথা বলতে কি, আমি যদ্দুর জানি, বিজ্ঞান এ পর্যন্ত এরকম কোনো চেষ্টাই করেনি। কারণ, যুক্তিশাস্ত্রের বুনিয়াদি নিয়ম অনুযায়ী ... ...
[২] তুমি আর আমি . . .
তাহলে, যুক্তিতর্ক এবং ইতিহাসের সাক্ষ্য, দুদিক থেকেই বোঝা গেল—কোনটা শেষ হলে কোনটা শুরু হয়। সুতরাং ধর্ম ঈশ্বর আত্মা ইত্যাদিকে আর বিজ্ঞানের উপরে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। থাকতে হলে পেছনেই অপেক্ষা করতে হবে। যে সমস্ত দূরদর্শী ধর্ম দার্শনিক এটা বুঝে ফেলেছেন, তাঁরা এর পর থেকে একটা নতুন বাণী শোনাতে লাগলেন: বিজ্ঞান আর ধর্মের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। বিজ্ঞান মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ইহজাগতিক বাস্তব জগতের শরীরের চাহিদা মেটায়; সুখ শান্তি এনে দেয়। জীবনকে উপভোগ্য করে তোলে। আর ধর্ম মানুষ ... ...
১৯৫৬ সালে প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান (১৯১৮-৮৮) ক্যালিফর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজি-তে খ্রিস্টধর্মাবলম্বী ছাত্রদের সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজনে মিলিত হয়ে একটি বক্তৃতায় বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিষয়ে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। [Feynman 1956]। ষাট বছর পেরিয়ে, সেটি সম্প্রতি বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে খুব গুরুত্ব সহ ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছে।
কেন? কেন??
ফাইনম্যান একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। সেই যে ষাটের দশকে তিনি ক্যালটেকে স্নাতক ছাত্রদের পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাশ নিতে গিয়ে একটা লেকচার-নো ... ...
উনিশ শতকের এক উদ্ভ্রান্ত সময়ের কথা। ইউরোপে তখন শিল্প বিপ্লবের ধাক্কায় কৃষি থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে যে বিপুল কারখানা শ্রমিক কর্মচারির দল তৈরি হয়েছে, তাদের তখন ভালো করে দুবেলা খাবার জুটছে না। সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত কাজ আর কাজ। কাজের কোনো সময় সূচি নেই। বারো ঘন্টা বা চোদ্দ ঘন্টা করে কাজ। মাথা গুঁজবার ঠাঁই নেই অধিকাংশের। দেশলাই বাক্সের মতো বস্তিঘরে আলুর বস্তার মতো গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে হয় প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের। সবচাইতে শিল্পোন্নত পুঁজিবাদী দেশ ইংল্যান্ডের এই জঘন্য হাল হকিকত নিয়ে সদ্য এক গ্রন্থ র ... ...
[৩] যাদুবিদ্যা ও ধর্ম
পৃথিবীর সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই প্রথম যুগে এই ম্যাজিক সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু কেন? আসুন, এবার আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখি।
সমাজ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে দেখা যাবে, ধর্মের উদ্ভবের সময়কালের সাথে এই যাদুবিদ্যার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের পার্থক্য দিয়েই সেই উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, ম্যাজিক সংস্কৃতির বিকাশ ও বিস্তারের সময় হচ্ছে প্রস্তর যুগের সংগ্রহ ও শিকার ভিত্তিক যাযাবর আদিম সাম্যবাদী জ্ঞাতিগোষ্ঠীভিত্তিক সমাজ সংগঠন। আর ধর্মের উদ্ভব ... ...
আধুনিক বিজ্ঞানে বস্তুর গতির রহস্য বুঝতে গেলেই বলের প্রসঙ্গ এসে পড়ে। আর দু এক ধাপ এগোলে আবার শক্তির কথাও উঠে যায়। সেই আলোচনা আজকালকার ছাত্ররা স্কুল পর্যায়েই এত সহজে শিখে ফেলে যে তাদের কখনও একবারও মনেই হয় না, এর মধ্যে কোনো রকম জটিলতা আছে বা এক কালে ছিল। কিন্তু আজ থেকে মাত্র দু চার হাজার বছর আগেকার কথা স্মরণ করুন। সেই ইতিহাসের গুহায় ঢুকলে দেখতে পাবেন, তখন অবধি মানুষ জানতই না, বস্তু যে চলে তা কিসের জোরে। তার নিয়ম কী, তার ভিত্তি কী। বল ও শক্তি--এই দুটো ধারণাই যে আদিম মানুষের ম্যাজিক সংস্কৃতির আঁতুরঘর ... ...