যদিও এই সপ্তাহাধিক সার্কাসে আপনি যে ক্রমান্বয়ে বিবেকানন্দের সাঁতরে "রক" এ যাওয়া, সেখানে ধ্যান করাকে ঢপ ও গুল্প বলেছেন, মিশন, জীবনীগ্রন্থের লেখকদের (স্বভাবতই সে-বইয়ের সম্পাদক/প্রকাশককেও) এবং প্রত্যক্ষদর্শী, স্বকর্ণশ্রোতা সকলকে জোচ্চোর ও মিথ্যাবাদী বলেছেন এবং RSS-এর সঙ্গে আঁতাত করে ফেব্রিকেটেড প্রমাণ সাজানোর দায়ে অভিযুক্ত করেছেন সে ব্যাপারে ফোরামে সম্ভবত দ্বিমত পাওয়া যাবে না, তবু ভবিষ্যতের পালটি খাওয়ার প্রতিবন্ধক হিসেবে প্রমাণগুলি একত্রে রেখে গেলাম।
"১৯১২ সালে প্রকাশিত হয় বিবেকানন্দের প্রথম ইংরেজি জীবনী ... বইটির প্রথম সংস্করণে লেখা হয়, ... প্রকৃত ঘটনা হল, ১৮৮৯ থেকে কোমরের বাতের জন্য তিনি খুব একটা হাঁটতেই পারতেন না, সাঁতরানো তো দূরের কথা। ...আজ অবধি বিবেকানন্দ শিলার এহেন জোচ্চুরির বিষয়ে ..." (১৭ জুলাই)~~~ এই আপনি মূল লেখায় বইটির প্রথম সংস্করণের সম্পাদক প্রকাশক স্বামী বিরজানন্দ থেকে পরবর্তী সংস্করণের প্রকাশক সম্পাদক স্বামী গম্ভীরানন্দ, স্বামী মুমুক্ষানন্দ ও সংশ্লিষ্ট সকল লেখককে জোচ্চোর ও মিথ্যাবাদী বললেন।
"১৯১৩ থেকে ২০ বছর একটা কাঁচা ঢপবাজি চলল। তারপর প্রায় ৪০ বছর সেই ঢপকে বেমালুম গিলে ফেলা হল। ফের প্রায় ৪৫ বছর হতে চলল সেই ঢপকে ফের উসকে দেওয়া হয়েছে।" (এলেবেলে | ২১ জুলাই ২০২৩ ২৩:১৮) ~~~ এই আপনি বইটির সকল সম্পাদক/প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সকল লেখককে আবার ঢপবাজ বললেন। (হিসেবটা ২০-৪৫-৪৫ হবে অবশ্য)
"সদাশিবম পিল্লাই-এর গুল্পটা .... তখনও পর্যন্ত কারও মাথায় এই গুল্প ও গুল্পের সাক্ষী হিসেবে দুই দক্ষিণ ভারতীয় ভদ্রলোককে ব্যবহার করার সুবুদ্ধি উদয় হয়নি। এটা হল কবে? না যেই ৭০ সালে জলে ভাসে শিলার গুল্পটা জনমানসে প্রতিষ্ঠিত হল, অমনি ঝোলা থেকে দুই বেড়ালকে টেনে বের করা হল গুল্পটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে।" (এলেবেলে | ২৩ জুলাই ২০২৩ ১২:৪৭) ~~~ এই আপনি শ্রী সদাশিবম পিল্লাই ও শ্রী রামসুব্বা আইয়ার কে মিথ্যাবাদী বললেন। শ্রী আইয়ারকে যতবার মিথ্যাবাদী বা মিথ্যা সাক্ষী বলছেন ততবার স্বভাবতই স্বামী বিরজানন্দকেও মিথ্যাবাদী বলছেন, কারণ তিনিই রামসুব্বা আইয়ারের দেখা পান, ও বক্তব্য শোনেন। একথা স্বামী শ্রদ্ধানন্দ 'অতীতের স্মৃতি" গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন বলে তাকেও স্বভাবতই মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করছেন।
"আরেসেসের এই কর্মকাণ্ডকে নিঃশর্ত সমর্থনকারী মিশনের এই 'ঘটনা'-র প্রমাণ হাজির করতে ওই ঠিক মিনিটখানেকই লাগে। চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা ..." (এলেবেলে | ২৩ জুলাই ২০২৩ ১৪:০৮) ~~~ এই আপনি বললেন আরেসেস-কে সাপোর্ট দিতে মিশন ফেব্রিকেটেড প্রমাণ হাজির করেছিল।
ডাঁহা মিথ্যা এতটাই পল্লবিত হয় যে শেষ পাথর টুকরোটা ...কিছুতেই পাশের পাথরের টুকরোটায় হয় না। (এলেবেলে | ২৩ জুলাই ২০২৩ ১৪:১৩) ~~~ এই আপনি আবার বিবেকানন্দর রক-এ সাঁতরে যাওয়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে মিথ্যাবাদী বললেন।
ওই সদাশিবম পিল্লাই-এর গুল্পটা ১৯৫৩ সালের আগেই হবে। তিনজনকেই হাজির করা হয়েছে ওই মন্তব্যে। তারপর ১৯৭৯-তে আরেসেস-এর অর্ডারমাফিক সাপ্লাই। (এলেবেলে | ২৩ জুলাই ২০২৩ ১৪:৪৬) ~~~ এই আবার শ্রী রামসুব্বা আইয়ার, শ্রী সদাশিভম পিল্লাই, কে এস রামস্বামী শাস্ত্রী সবাইকে মিথ্যাবাদী বললেন। প্রমাণগুলিকে RSS এর স্বার্থে সাজানো বললেন।
এবারে গুল্পটাকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ... আসরে নামলেন স্বামী গম্ভীরানন্দ। যুগনায়ক বিবেকানন্দ (প্রথম খণ্ড, ১৩৭৩) গ্রন্থে তিনি জানালেন ... যদিও একটা মিললে অন্যটা না মেলারই কথা। (এলেবেলে | ২৪ জুলাই ২০২৩ ২১:০৯) ~~~ এই স্বামী গম্ভীরানন্দকে মিথ্যাবাদী বললেন। RSS এর প্রয়োজনে মিথ্যা প্রমাণ সাজানোর দায় দিলেন।
যে লোক ত্রিবান্দমে থেকে কন্যাকুমারীর গপ্পো ঝাড়েন, তাঁকে শঙ্করীপ্রসাদ বা অন্য কেউ বিশ্বাস করতে পারেন, (এলেবেলে | ২৪ জুলাই ২০২৩ ২৩:১৫) ~~~ এই আবার কে এস রামস্বামী শাস্ত্রীকে মিথ্যাবাদী বললেন।
১৮৯৭ সালে রামস্বামী শাস্ত্রী বিবেকানন্দের থেকে যে কথা শোনেন তার ৬৮ বছর পরে সে কথা চিঠি লিখে জানালেই সেটা ধ্রুবসত্য হিসেবে ধরে নিতে হবে, এমন দায় সবার না-ও থাকতে পারে। (এলেবেলে | ২৫ জুলাই ২০২৩ ১৯:১১)~~~ আবারও স্বামী গম্ভীরানন্দকে যিনি চিঠি পেয়েছিলেন অথবা কে এস রামস্বামী শাস্ত্রীকে যিনি চিঠি লিখেছিলেন, ধ্রুব-অসত্যবাদী তথা মিথ্যাবাদী বললেন।
প্রবুদ্ধ ভারত থেকে রামস্বামী শাস্ত্রীর লেখার পরের পার্টটা দিতে পারবেন না ধরে নিয়ে দিয়েই দিচ্ছি। তাঁকে অবিশ্বাস করা না-করার সিদ্ধান্ত নিতে কাজে লাগতে পারে। আপনার না, অন্যদের।
স্বামী বিরজানন্দের সঙ্গে ১৯১৯ সালে রামসুব্বা আইয়ারের দেখা হওয়ার ঘটনা স্বামী শ্রদ্ধানন্দ লিখিত "অতীতের স্মৃতি" গ্রন্থে উল্লিখিত। সে বইয়ের প্রথম সংস্করণ ১৯৫৬। মানে মন্দির তৈরির সম্ভাবনারও অনেক আগে। তাই প্রত্যক্ষদর্শীদের প্ল্যান্ট করা হয়েছিল ১৯৬৩ তে RSS এর সুবিধে করার চাহিদায়, এই যুক্তি ওই সংস্করণের বইটির ১৯১৯ এর মোলাকাতের উল্লেখ দেখলে ধসে যেতে পারে।
আর হ্যাঁ, আমার কাছে এসব কোনো বই টই নেই। কাজেই কলার তোলার প্রশ্নই নেই। তবে আমি তো আর এসব আউলবাউল লিখতে যাইনি। যিনি লিখেছেন তাঁর কাছে লেখার ব্যাকাপ থাকা প্রত্যাশিত। এখন দেখা যাচ্ছে ব্যাকাপ বলতে দুটি "টার্শিয়ারি" রেফারেন্স আর আপন মনের মাধুরি মিশানো RSS এর ধামাধরার উপপাদ্য। শেষ পোস্টে যে মেকাপ দেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন, নিজে পড়ে দেখলেই দেখবেন আগের পোস্টগুলির গালবাদ্যের সঙ্গে সেটা একেবারেই মিলছে না, যুক্তি হিসেবেও না। যাইহোক, ভালো থাকবেন। আর কিছুই বলার নেই।