মাননীয় =)) | 103.76.82.165 -এর অভিযোগ এবং বক্তব্যগুলো সম্পর্কে একে একে আলোচনা করি।
প্রথমত, উনি কেন রবীন্দ্রনাথকে লেখা জগদীশচন্দ্রের চিঠির হাফকোট বললেন, সেটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। এর মানে কি - ১. আমি চিঠিটির যেটুকু উদ্ধৃত করেছি, সেটুকুই আমার জানা? ২. এখানে কারও কোনও চিঠি কোট করলে সে চিঠিটির পুরোটাই দিতে হবে? যাই হোক, তাঁকে আশ্বস্ত করে জানাই, আমার কাছে পুরো চিঠিটাই আছে। চাইলে সেটা গোটাটাই তুলে দেওয়া যাবে।
দ্বিতীয়ত, দুই গবেষক প্রবীর ও সুছন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের গবেষণাপত্রে আদৌ পুরো চিঠিটি উদ্ধৃত করেননি, করেছেন আমি যতটুকু করেছি তার তুলনায় সামান্য বেশি অংশ। এবং তার ভিত্তিতেই তাঁরা আমার কথাটারই পুনরাবৃত্তি করেছেন অর্থাৎ তিনি পেটেন্ট নেওয়ার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন ছিলেন না। মানে তাঁদের লেখা it becomes abundantly clear that Professor Bose was not at all against patenting his research products বাক্যাংশটির ইন্টারপ্রিটেশন যদি ঠিকঠাক করে থাকি আর কি।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তে তাঁরা পৌঁছেছেন A careful reading of this relevant portion of the letter together with the knowledge of Professor Bose’s circumstances and his current research activities as presented in the said lecture-এর ভিত্তিতে কিংবা তার পরে, কিন্তু গোটা গবেষণাপত্রটির কোথাও তাঁরা জগদীশচন্দ্রের রবীন্দ্রনাথকে পাঠানো Electrician-এ প্রকাশিত সংবাদ থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তার কথা বলেননি। বরং স্পষ্টভাবে Illustrated Official Journal (patents)-এর উল্লেখ করেছেন। তাঁরা পেটেন্টের আবেদনের যে চারটি তারিখের উল্লেখ করেছেন, তার উল্লেখ আমি আগেই করেছি। এই গবেষণাপত্রটির ভিত্তিতেই সেটা করা হয়েছে।
রইল বাকি Electrician-এর কথা যা জগদীশচন্দ্র নিয়মিত রবীন্দ্রনাথকে পাঠাতেন এবং যেখানে অধ্যাপক বসুর পেটেন্ট সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল এবং সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ জানতেন, জীবনীকার প্যাট্রিক গেডিস জানতেন এবং এত জানাজানির পরেও ২০০৮ সালে অর্থাৎ জগদীশচন্দ্রের জন্মের সার্ধশতবর্ষে দুই বাঙালি গবেষক তাঁদের গবেষণার শিরোনাম করেন TWO RECENTLY DISCOVERED PATENTS OF PROFESSOR JAGADIS CHUNDER BOSE। অবশ্য আমার কমপ্রিহেনসিভ স্কিল খুবই জঘন্য। তাই রিসেন্টলি ডিসকভার্ড-এর যথাযথ অর্থ হয়তো আমি বুঝতে অক্ষম হয়েছি।
তবে যা বুঝতে অক্ষম হয়নি তা হল এই ---
১. ১৯০১ ও ১৯০২ সালে লিখিত প্রায় খান পনেরো চিঠির মধ্যে আর একটি চিঠিতেও জগদীশচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে ইলেকট্রিশিয়ান পত্রিকাটি সম্পর্কে কিংবা তাতে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি।
২. ১৯০২ সালের ৩০ জুলাই ও ৭ অগস্ট তিনি দু-দুটি ব্রিটিশ পেটেন্ট লাভ করলেও ওই বছরে লিখিত মোট ৮টি চিঠির (২১.৩, ৮.৪, ১.৫, ৮.৫, ৩০.৫, ২৭.৬, ১৮.৭ ও ৫.৯) একটিতেও তাঁর পেটেন্ট লাভের কথাটি কবিকে জানাননি।
এবং
৩. এই দুই বছরে এ বিষয়ে তিনি রবি ঠাকুরকে যা লিখেছেন তার কিয়দংশ এইরকম ---
ক) আমি আর একটি নূতন paper লিখিয়াছি, তাহাতে practical wireless telegraphyর অনেক প্রকার সুবিধা হইবে মনে হয়। Dr. Muirhead আমাকে নূতন আবিষ্কারগুলি গোপনে রাখিতে অনুরোধ করিতেছেন; কিন্তু আমার এখানে সময় অল্প, আমার আরও অনেক কাজ করিতে হইবে। একবার যদি অর্থকরী বিদ্যার দিকে আকৃষ্ট হই, তাহা হইলে আর কিছু করিতে পারিব না। তোমাকে আমি বুঝাইতে পারিব না, আমি কি এক নূতন রাজ্যে উপস্থিত হইয়াছি, কি আশ্চর্য্য নূতন তত্ত্ব একটু একটু করিয়া দেখিতে পাইতেছি। সে-সব আমি এখন ভাষায় প্রকাশ করিতে পারিতেছি না; সেগুলি দিন দিন পরিষ্কাররূপে দেখিতে পাইব, তাহার কোন সন্দেহ নাই; কিন্তু একভাবে দিনের পর দিন সেই সত্যলাভের জন্য ধ্যান করিতে হইবে। সেই একাগ্রতার ভাব যদি কোনরূপে disturbed হয়, তাহা হইলে আমার দৃষ্টিশক্তি একেবারে লুপ্ত হইয়া যায়।
৩ জানুয়ারি, ১৯০১
খ) বন্ধু, তুমি যদি এ দেশের টাকার উপর মায়া দেখিতে— টাকা— টাকা কি ভয়ানক সর্ব্বগ্রাসী লোভ! আমি যদি এই যাঁতাকলে একবার পড়ি, তাহা হইলে উদ্ধার নাই। দেখ আমি যে কাজ লইয়া আছি, তাহা বাণিজ্যের লাভালাভের উপরে মনে করি। আমার জীবনের দিন কমিয়া আসিতেছে, আমার যাহা বলিবার তাহারও সময় পাই না, আমি অসম্মত হইলাম।
১৭ মে, ১৯০১
গ) তোমার বই পুস্তকাকারে বাহির করিব মনে করিয়াছিলাম। কিন্তু এদেশের অনেক পাব্লিশার চোর। বাণিজ্য-বিষয়ে এদেশের তৎপরতা দেখিয়া চক্ষুস্থির হইয়াছে। সেদিন যে আমার জন্য patent লইবার জন্য একজন বন্ধু আসিয়াছেন, তিনি সেদিন রাগ করিয়া গিয়াছিলেন। “এত সময় নষ্ট করিয়া আপনাকে Serveকরিবার জন্য আসিয়াছিলাম, আপনি কিছু করিলেন না, “I do not want to have anything more to do with it.” লেক্চারের পর আবার লিখিয়াছেন, “I want to serve again.” বন্ধু, আমি যেন এই Commercial Spirit হইতে উদ্ধার পাইতে পারি। একবার ইহার মধ্যে পড়িলে আর উদ্ধার নাই।
২২ মে, ১৯০১
ঘ) তুমি শুনিয়া সুখী হইবে যে, এতদিনের বিরুদ্ধগতি অনুকূল হইয়াছে। সে-দিন Nature-এর leading articleএ লিখিত ছিল, The Eastern mind coming fresh and untrammelled to the work has taught us, etc. Royal Society এখন আমার দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়াছেন। British Association হইতে সসম্মানে আহুত হইয়াছি। Botanical Section-এর President লিখিয়াছেন—
“আমি Plant Physiology সম্বন্ধে যে-পুস্তক লিখিয়াছি, তাহা অপূর্ণতা দ্বিতীয় সংস্করণে আপনার আবিক্রিয়ার দীর্ঘ বিবরণ দিয়া পূরণ করিব।”
৫ সেপ্টেম্বর, ১৯০২
লক্ষণীয়, এই চিঠিটি লেখার আগেই পেটেন্ট পাওয়া হয়ে গেছে। এখানে জগদীশচন্দ্র তাঁর সাফল্যের নানা খতিয়ান তাঁর সুহৃদকে জানাচ্ছেন কিন্তু পেটেন্টের ব্যাপারে রা কাড়ছেন না।
এই রা না কাড়ার সম্ভাব্য কারণ হিসাবে গবেষকদ্বয় বলেছেন --- Upon examination of these two patents it is immediately obvious that in these two recently discovered British patents there is a confusion between the inventors and the Intellectual Property Rights (IPR) owners. While Professor Bose is simultaneously the inventor and one of the IPR owners, Mrs. Sara Chapman Bull, the American widow mentioned in both of these British patents, is definitely not an inventor and the patent descriptions did not make that clear. This problem of confusion between the inventor and the IPR owner with these two British patents must have taken place with Professor Bose’s knowledge and consent. But his helplessness as a subject of the British Empire may have, perhaps, prevented him from disclosing in India of their existence. This, in turn, had serious implications in India with respect to correct understanding of Professor Bose’s thoughts on technology commercialization and the correct promulgation of his achievements in the
West.
আমি ঠিক জানি না এই গোপন রাখার অভিযোগটি, গবেষকদ্বয়ের নিজেদের মানসিকতারই পরিচায়ক কি না।