গ্রিক বা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের আমল থেকে মোটামুটি ১৮০০ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্রে নির্বাচনী প্রচারের পদ্ধতি একেবারেই বদলায়নি। গ্রিক বা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পরে অবশ্য রাজতন্ত্রেরই রমরমা ছিল পৃথিবীতে। কিন্তু যেখানে যেটুকু সীমিত গণতন্ত্র ছিল, তার নির্বাচনী প্রচারের পদ্ধতি খুবই সরল ছিল। যেকোনো প্রচারের মতই, নির্বাচনী প্রচারও ছিল, স্রেফ বক্তা থেকে শ্রোতার সোজা যোগাযোগ। খুব সোজা করে বললে বক্তা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতেন। শ্রোতারা শুনতেন। বক্তব্য রাখার জায়গায় চিঠি পাঠানোও হতে পারে, দাঁড়িয়ে বলার জায়গায় বসা, কিন্তু পদ্ধতিটা একই।
আধুনিক গণতন্ত্র ভ্রূণাবস্থায় থাকাকালীনই এই পদ্ধতির সমস্যাগুলো ধরা পড়ে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল অনেক মানুষের কাছে একসঙ্গে পৌঁছনো। খবরের কাগজ চালু হবার পর সেই সমস্যা কিছুটা মেটে।
কাছাকাছি সময়েই তৈরি হয় রাজনৈতিক দল। তৈরি হবার অনেক কারণ ছিল। কিন্তু এখানে স্রেফ প্রচারের কথাই বলা হচ্ছে। পার্টি তৈরি করে উপর-তলা, নিচের তলার এক জটিল সংগঠন। প্রচারের দিক থেকে যার কাজ হল, আরও সংঘবদ্ধ ভাবে অনেক অনেক মানুষের কাছে পৌঁছনো। পদ্ধতিটা জটিল হয়ে দাঁড়ায়। তৈরি হয় অনেক বক্তা, অনেক ছোটো-বড়ো নেতা-কর্মীর কাঠামো। কিন্তু মূল ব্যাপারটা একই থেকে যায়। অর্থাৎ বক্তা বলছেন এবং শ্রোতারা শুনছেন।
বৈদ্যুতিন মাধ্যম আসে আরও পরে। ভারতবর্ষের মতো দেশে হাল আমলের আগে প্রচারে টিভির কোনো ভূমিকা ছিলনা। পশ্চিমী দেশে অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই টিভির প্রভাব ছিল। কিন্তু সেখানেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত মূল পদ্ধতিটা বিশেষ বদলায়নি। খবরের কাগজ, টিভি, সংগঠন, সব মিলিয়ে প্রচারে অর্থের ভূমিকা অবশ্য বাড়তেই থাকে। কিন্তু প্রচার সেই সরাসরি বক্তা থেকে শ্রোতা, এইভাবেই চলতে থাকে।
সরাসরি বক্তা-থেকে-জনতা -- এই পদ্ধতির একটা বিরাট সমস্যা ছিল। সমস্যাটা হল প্রচারের পদ্ধতিতে কুশলতার অভাব। জনতার সমস্ত অংশ থেকে শ্রোতা ধরে আনলে সবাইকে নিজের বক্তব্য শোনানো যায় বটে, কিন্তু তার বেশিরভাগ অংশটাই পন্ডশ্রম। একটা জনসমষ্টিতে, যে কোনো মতের বিরুদ্ধে একদল শক্তপোক্ত বিরোধী থাকেন, যাদের কাছে প্রচার করার কোনো মানে নেই। প্রচারের লক্ষ্য হওয়া উচিত কেবলমাত্র তাঁরাই, যাঁরা মত বদলাতে পারেন। কিন্তু বক্তা-থেকে-জনতা পদ্ধতিতে এই অংশের কাছে পৌঁছনোর কোনো উপায় নেই। চেনারই কোনো উপায় নেই। ফলে অকারণে বহু মানুষের কাছে একই ভাবে প্রচার করে চলতে হয়, যার একটা বড় অংশ না করলেও হয়।
এটা অবশ্য শুধু সম্পদের সমস্যা। যথেষ্ট অর্থ ঢালতে পারলে প্রচারে এটুকু বাজে খরচা করাই যায়। কিন্তু বৃহত্তর সমস্যা যেটা, সেটা হল এই নানারকম জনসমষ্টিকে আলাদা করে বার্তা দেবার উপায় নেই। নির্বাচনী প্রচারের পদ্ধতি যথেষ্ট কুশলী হলে, জনসমষ্টির যে অংশ বক্তাকে বাহবা দিচ্ছেন, তাঁদেরকে জোগানো উচিত উদ্দীপনা। যাঁরা দোলাচলে, তাঁদের নিজের পক্ষে টেনে আনার বা বিপক্ষকে অপছন্দ করার বার্তা দেওয়া উচিত। যাঁরা অসহ্য ভাবছেন, তাঁদের কোনো বার্তা দেবারই কোনো মানে নেই। নির্বাচনী কৌশল অনুযায়ী বার্তাগুলো বদলাতে পারে কিন্তু বার্তাগুলো যে আলাদা হওয়া প্রয়োজন, সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নইলে রাজনৈতিক প্রচার যথেষ্ট কুশলী তো হবেই না, বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন দোদুল্যমান লোককে বারবার উজ্জীবিত চেষ্টা করার চেষ্টা করলে, সে হয়তো বিপক্ষেই চলে গেল। অথবা কর্মীকে উদ্দীপনা না দেবার ফলে সে বসে গেল। এগুলো খুবই গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। এই সমস্যাকে আমরা কুশলতার সমস্যা বলতে পারি।
টিভি এবং খবরের কাগজের জমানায় এই সমস্যার একটা সমাধান পশ্চিমী জগতে করার চেষ্টা করা হয়েছিল বিজ্ঞাপনী পদ্ধতি ব্যবহার করে। কোন চ্যানেল সমাজের কোন অংশের মানুষ দেখেন বা দেখছেন, বিজ্ঞাপনী কারণে তার বিশ্লেষণ বহু আগেই করা শুরু হয়েছিল। এই বিশ্লেষণ ব্যবহার করে পশ্চিমে নানা চ্যানেলে নির্বাচনী প্রচারের বিজ্ঞাপন দেওয়া বা না দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু হয়। গোদা ভাষায় বললে, অমুক চ্যানেলের অমুক অনুষ্ঠান সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলারা দেখেন, কাজেই সেখানে মহিলাদের ইসু নিয়ে বার্তা দেওয়া দরকার -- এই জাতীয় ব্যাপার। বলাবাহুল্য, এতে করে জনসমষ্টির নানারকম বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে (পুং-মহিলা, গরীব-বড়লোক ইত্যাদি) নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে নির্দিষ্ট বার্তা দেওয়া গেলেও, সে খুবই মোটা দাগের ব্যাপার। রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী (আমার পক্ষে, আমার বিপক্ষে বা দোদুল্যমান) বিভাজন এখানে করা যায়না। ফলে প্রকৃত অর্থে কুশলতার সমস্যাটা এভাবে সমাধান করা যায়না।
রাজনৈতিক বিভাজনের হিসেব রাখার আরেকটা পদ্ধতিও তৈরি হয়েছিল কর্মীবাহিনীর উপর নির্ভর করে। আমরা যারা আশি বা নব্বইয়ের দশকের সিপিএম জমানা দেখেছি, তাদের কাছে পদ্ধতিটা খুব স্পষ্ট। এই পদ্ধতিতে যেকোনো এলাকার স্থানীয় কর্মীবাহিনী, নিজের অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করে গোটা জনসমষ্টির তালিকা বানিয়ে, জনতাকে তিন ভাগে ভাগ করতেন -- সমর্থক, বিরোধী এবং দোদুল্যমান। প্রত্যেকটা অংশের জন্য নেওয়া হত আলাদা আলাদা পদ্ধতি। পক্ষের জনতাকে নিয়ে করা হত ছোটো সভা, যেখানে উদ্দীপনা জুগিয়ে সমর্থকদের কর্মীতে পরিণত করা হত। এই কর্মীরা তারপর যেতেন দোদুল্যমান অংশের জনতার কাছে। নিজের বার্তা পৌঁছে দোদুল্যমানদের পক্ষে টেনে আনার জন্য। আর বিপক্ষের জনতাকে কার্যত ছেড়ে দেওয়া হত। এই পদ্ধতি, বস্তুত প্রচারের কুশলতার সমস্যার সমাধান হিসেবে ছিল অত্যন্ত দক্ষ। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের দীর্ঘদিনের একাধিপত্য, প্রচারের দিক থেকে (অন্য দিকে নিশ্চয়ই অন্যান্য কারণ ছিল) এই ব্যবস্থারই ফসল।
এই পদ্ধতির সমস্যা ফলাফলে নয়। পদ্ধতিটা নিজেই সমস্যা। এই পদ্ধতিকে চালু রাখতে গেলে তেল দেওয়া মেশিনের মতো বহুস্তরে বিস্তৃত এক বিরাটা মানবিক সংগঠনের প্রয়োজন, যার প্রতিটি খুঁটিই এককটি মানুষ। এর প্রতিটা স্তরে দীর্ঘদিন উদ্দীপনা স্রেফ শৃঙ্খলা দিয়ে বজায় রাখা যায়না। ফলে কুশলতার সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদে এই পদ্ধতি দিয়েও সমাধান করা যায়নি।
নির্বাচনী প্রচারে হইহই করে ফেসবুক, গুগল, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যম ঢুকে পড়ার পর, এই কুশলতার সমস্যাটার একটা সমাধান হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কিনা বলার সময় এখনও আসেনি, কিন্তু পদ্ধতিটা আন্তর্জাতিক এবং বৈপ্লবিকও, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ২০০০ বছরে যে সমস্যার সমাধান হয়নি, নতুন প্রযুক্তি এবং তার প্রয়োগ, তাকেই আপাতত সম্ভব করে তুলেছে। এই মাধ্যমগুলোকে, নির্বাচনী প্রচারের জন্য মোটা দাগে তিনটে ধাপে কাজে লাগানো হয়।
১। তথ্য সংগ্রহ। শুধু, নাম-ঠিকানা-বয়স-লিঙ্গ নয়, যে কোনো সামাজিক মাধ্যমে মানুষ যা যা করে তার প্রতিটারই হিসেবই জমা থাকে মাধ্যমের ডেটাবেসে। বস্তুত গোয়েন্দা দপ্তরের মতো প্রতিটা মানুষেরই থাকে নিজস্ব ফাইল। তফাত এই, যে, কোনো গোয়েন্দা দপ্তরই আজ পর্যন্ত এই পরিমান তথ্য কোনো মানুষের জন্য জমা করে রাখতে পারেনি।
২। বিশ্লেষণ। এর পুরো পদ্ধতি জানা যায়না, কারণ পুরোটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত। কিন্তু মূলত ব্যাপারটা এরকমঃ
৩। নির্বাচনী বিজ্ঞাপন। শুধু রাম নয়, এই বিপুল তথ্য সংগ্রহ করা হয় প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে। এবং অর্থের বিনিময়ে তথ্য এবং বিশ্লেষণকে ভাড়া দেওয়া হয় রাজনৈতিক দলকে। তার ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল এবার জনসমষ্টিকে নানা ভাগে ভেঙে ফেলে। তার উপর দাঁড়িয়ে প্রচারের কৌশল তৈরি হয়। বিজেপির মতো দল হলে, তার কৌশল এরকম হতে পারেঃ
ব্যক্তির স্তরে এর প্রভাব কীরকম পড়ে? রাম একজন দোদুল্যমান ব্যক্তি। বিজেপির প্রচার শুরু হবার পরে, তিনি ক্রমাগত যে বার্তাগুলো পেতে থাকবেন, আন্দাজ করা যায় সেগুলো এরকম হবেঃ
এগুলো মিথ্যে খবর হতে হবে এমন নয় একেবারেই। কোথাও না কোথাও কোনো হিন্দু মন্দির নিশ্চয়ই কেউ ভাঙছে। কোথাও স্থানীয় উত্তেজনা নিশ্চয়ই হচ্ছে। পদ্ধতিটা হল, সেগুলোকে নিখুঁত প্যাকেজ করে সঠিক জায়গায় পরিবেশন করা। মিথ্যে খবর এর উপরে ছড়ালে তো সোনায় সোহাগা। এবং এখানেই শেষ নয়। রামের বান্ধবী শ্রেয়সী যদি উদ্দীপনা জোগানোর তালিকার মধ্যে পড়েন, তো, রাম কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর থেকেও একই মর্মের ব্যক্তিগত বার্তা পেতে থাকবেন, যার প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি।
মজাটা হচ্ছে, এই পুরো পদ্ধতিতে কোথাও কোনো শোরগোল তৈরি হবেনা। বস্তুত বিরোধীরা টেরই পাবেননা, কোনো প্রচার হচ্ছে। কারণ বিরোধীপক্ষ প্রচারের তালিকা থেকে একদম বাদ। তাঁরা নিজেদের পৃথিবী নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। হঠাৎ আবিষ্কার করবেন, অন্যদের প্রচার একেবারে কমে গেছে। আসলে প্রচার কিন্তু কমেনি। তিনি তীব্রভাবে নিজেকে বিজেপি-বিরোধী প্রমাণ করে ফেলে প্রচারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছেন, এই টুকুই।
এই পুরো পদ্ধতিতে কুশলতার সমস্যাটার সমাধান করে ফেলা হয়, কেবল টাকা দিয়ে। টাকা = তথ্যের অধিকার। টাকা = বিশ্লেষণ ও নীতি নির্ধারণের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। টাকা = প্রচারের সুযোগ। স্রেফ টাকার জোরেই যার কাছে যে বার্তা দেওয়া প্রয়োজন দিয়ে দেওয়া যায় প্রায় নিখুঁতভাবে। টাকার বিনিময়ে এখানে ভাড়া খাটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিশ্লেষণ ও প্রচারে কর্মীবাহিনীর কুশলতার উপর নির্ভর করার একেবারেই প্রয়োজন নেই। মানুষকে তথ্য জোগানোর জন্যও জোর করার একেবারেই প্রয়োজন নেই। তারা নিজেরাই উদ্দীপিত হয়ে সমস্ত তথ্য সামাজিক মাধ্যমের হাতে তুলে দেয়। এই উদ্দীপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বস্তুটাই সামাজিক মাধ্যমের বৈশিষ্ট্য। কর্মীদেরও একই কারণে আলাদা করে উদ্দীপিত করার প্রয়োজন পড়েনা।
এই ব্যাপারটা সম্ভব হয় কীকরে? প্রযুক্তি ছাড়াও, এখানে আরও একটা ব্যাপার আছে, যা মনস্তত্ত্বের গভীর থেকে খুঁড়ে আনা হয়। মানুষকে সামাজিক মাধ্যম এমন কিছু করার সুযোগ দেয়, যা তাকে উদ্দীপনা জোগায়। কোনো কিছুতে সক্ষম করে তোলে। সোজা কথায় মানুষের ক্ষমতায়ন হয় এবং সেই কারণেই মানুষ উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। আপনি নিজের গলার আওয়াজ গোটা দুনিয়াকে জানাতে পারেন। অজস্র মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন। এগুলো নিঃসন্দেহে ক্ষমতায়ন এবং উদ্দীপনা। এবং এই উদ্দীপনার কারণে, আপনি জেনেবুঝেও সমস্ত তথ্য স্বেচ্ছায় তুলে দেন এই বিপুল ব্যবস্থার হাতে।
কিন্তু আসলে কী হয়? যতবার আপনি নিজের ধারণার পক্ষে আওয়াজ তোলেন, ততবারই আসলে আপনি তথ্য সরবরাহ করেন বিপক্ষের প্রচারের হাতে। আপনি নিজেকে চিনিয়ে দেন। বিপক্ষ আপনাকে প্রচারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। আপনি নিজের জগত তৈরি করে তাতে বসবাস করতে থাকেন, বিদ্রোহ, বিপ্লব করতে থাকেন। আপনার বন্ধুবৃত্তের ছোট্টো বৃত্ত তাতে আপনাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। বিপক্ষ এসবে হস্তক্ষেপ অবধি করেনা। বরং তাদের প্রচার আরও নিখুঁত হয়ে ওঠে। আপনি আপনার বৃত্তে বন্দী হয়ে থাকেন, আপনার এলাকার সম্পূর্ন বাইরে বিপক্ষের প্রচার চলতে থাকে, চুপচাপ। আপনি জানতেও পারেননা। এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য একমাত্র আপনার। কারণ আপনি জেনেবুঝেই সমস্ত তথ্য তুলে দিয়েছেন ওই সর্বগ্রাসী ব্যবস্থার হাতে।
এই ব্যবস্থার হাতের পুতুল আর হয়ে থাকবেন কিনা, নাকি এমন কোনো মাধ্যম ব্যবহার করবেন, যারা ঘোষিত ভাবেই কোনো তথ্য সংগ্রহ করে রাখেনা, নৈতিক সামাজিক মাধ্যম, না মুনাফাচালিত বহুজাতিক দানবের সামাজিক মাধ্যম, কোনটা ব্যবহার করবেন, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।
আমার তথ্য ত আমি না, কে চুরি করবে
আর হল গিয়ে ক্যাপ্সুল, ত সে সর্বত্র, এবং, কোন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফ্রেম অফ রেফারেন্স নেই, বাই ডেফিনিশন হওয়া সম্ভব না, যা দিয়ে ক্যাপ্সুল কে আটকানো যায়। সবাই নিজের নিজের বাইবেল আওড়াচ্ছে।
বাজারে, দুরকম আফিম খুপ চালু। এক হল চয়েসের আফিম, যা দিয়ে ক্যাপ্সুল এর গাত্র তইরি। আরেক হল কনশাসনেস। যেটা থাকলে নাকি চয়েস ঠিকঠাক হপে, আনজনে আপ্নারে লুটে লেবে না।
বাস্তবে, মানুষ একরকম অলস শিম্পাঞ্জি, যে মোটেই কনশাসনেস থুড়ি কনফ্লিক্ট বাড়িয়ে স্টেবিলিটি ঘাঁটতে চায় না। লো এনারজি স্টেটে থাক্তে চায়,বারনিং আর কনফ্লিক্ট এর মধ্যে অপ্টিমাইজ করে চলে, যেখানে ইমোশন মূল রোল প্লে করে। ওসব কগিতো এরগো সাম জাতীয় থিওরি বহুকাল ঠোঙা, দেকার্তে ইজ অবসোলিট।
বাট এট দ্য সেম টাইম, ওই শিম্পাঞ্জিটাই, নতুন খেলনা পেলে, সারাদিন তাই নিয়ে পড়ে থাকবে, দড়ি ছেঁড়া দোলনা পেলে, বারবার দড়ি পরানোর চেষ্টা করবে। তালের ফোপাঁতে আংগুল ঢুকিয়ে শাঁস খুঁজে যাবে ঘন্টার পর ঘন্টা । হোয়াই??
দেখা গেছে, অন্যকে কনশাস চয়েস নিয়ে বোঝানর সময় আমাদের যে একটিভ এটেনশন লেভেল, নিজে চয়েস বিল্ট করার ক্ষেত্রে তার বহুগুন কম। হোয়াই??
বিকল্প মিডিয়াকে এসব ভাবতে হবে।
আপনার তথ্য আপনি নাই বা হলেন , আপনার তো একটা ডেমোগ্রাফিকস আছে , সেই কারণে আপনার তথ্য আপনার মত আরো অনেক-্কে চিহ্নিত করে | তাদের কথা কখনো ভেবে দেখেছেন? চীনদেশের সোস্যাল ক্রেডিট সিস্টেমের কথা জানেন তো? সেখানে আপনার সোস্যাল মিডিয়া সরকার প্রোফাইল করে, আপনার চাকরি বাকরি, ট্রেনে চড়া, প্লেনে ওঠা, জেল হাজত, সব কিছুই সম্ভব, শুধু সোস্যল ক্রেদিটের এদিক ওদিকে | তার থেকেও যেটা বাজে ব্যাপার, আপনি যদি অনুভব করেন যে, আপনাকে প্রতি মুহুর্তে নজরদারী করা হচ্ছে, আপনি আপনার আচার আচরন বদলাতে থাকবেন, ( Hawthorne Effect ) এর নাম শুনে থাকবেন হয়তো | ডাটা যেমন নতুন "তেল", কথাটা ঠিকই বলা হয়, তেল যেমন বিশ্বের উষ্ণায়ণে ভূমিক নিয়েছে, তেমনি এই নতুন 'তেল", সামাজিক শৈত্যের জন্য দায়ী | এই সর্বগ্রাসী ডাটার উত্পাতের জন্য মানুষ ভয় পেতে শুরু করেছে , নিজেদের আচার আচরণ বদলাতে শুরু করেছে। আপনি মহিলা হালে একরকম কাজের অয়াড দেখতে পাবেন, পুরুষ হলে আরেক রকম | কালো লোকের নাম দিয়ে গুগল সার্চ করলে এক রকম রেজাল্ট আসবে, সাদা লোকের নাম দিয়ে গুগল সার্চ করলে আরেক রকম | আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স আপনাকে কিরকম করে মাপে দেখতে চান? এই ওয়েবসাইটটতে ক্লিক করুন, https://www.hownormalami.eu/
ডিসি লিখেছে না প্রেডিকশান এলগোরিদম এর কথা? প্রেডিকটিভ পুলিশী বলে একটা ব্যাপার অছে, কমপিউটরের সাহায্যে ক্রাইম প্রবণ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা (দেখুনঃ https://www.upturn.org/reports/2016/stuck-in-a-pattern/ )
এরকম আরো লেখা যায়, কি বলতে চাইছি আশাকরি বুঝতে পারছেন |
অনেকে মনে করতে পারেন যে আমার রাজনৈতিক মত আমি যদি প্রকাশ না করি, কোনো লাইক না দিই, কোনো রাজনৈতিক লেখা না পড়ি তাহলে অ্যানালিটিক্স জানতে পারবে না। ধারণাটা বলাই বাহুল্য ভুল।
মানুষ তার চলাফেরা খাওয়া বাজার করা অর্থাৎ জীবনযাপন করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে প্রকাশ করে। যদি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতামত এর মানুষকে চেনার জন্য তার জীবনযাপন থেকে প্যাটার্ন সংগ্রহ করা যায়, কেনাকাটা ফোন করা যাতায়াত খাওয়া দাওয়া থেকে (যে তথ্য আধার দিয়ে যুক্ত করে নেওয়া যায়), তাহলে সেই জীবনযাপন প্যাটার্ন ব্যবহার করে সেই রাজনৈতিক মতালম্বী সমস্ত মানুষকে চিহ্নিত করা যায়।
টাকা যার তথ্য তার বুদ্ধি তার ক্ষমতা তার। পুরোনো রাজনীতি অতীত অকার্যকর।