'ফিলিস্তিনি সময় বুধবার আনুমানিক ভোর ৬টায় ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের 'কনসায়েন্স' জাহাজ দখল করে ইসরাইলি দখলদার সেনাবাহিনী শহিদুল আলমসহ সব এক্টিভিস্টদের অপহরণ করে।'
'পূর্ব-নির্ধারিত সিদ্ধান্ত মতে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী জাহাজে প্রবেশ করার আগেই জাহাজের সকলে (সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী, ক্রু) যার যার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ সাগরের পানিতে নিক্ষেপ করে।'
এটি প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম কর্তৃক ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত 'দৃক আর্ট গ্যালারি' সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বয়ান।
এতে বলা হয়, 'এ অবস্থায়, শহিদুল আলমের সাথে দেশের ও বর্হিবিশ্বের সকলের যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন।'
শহিদুলের হাতে লাল-সবুজ পতাকা
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে শহিদুল বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে গাজামুখী ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নিতে দেশ ছেড়েছিলেন।
তবে ভিসা জটিলতায় বিলম্ব হওয়ায় তিনি ওই নৌবহর ধরতে পারেনি।
ইতোমধ্যেই সারাবিশ্ব জেনেছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে ঘিরে ইসরায়েল বর্বরতার কথা।
আর শহিদুল ওই নৌবহরটিকেই অনুসরণ করছিলেন, 'কন্সায়েন্স' নামক চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের জাহাজে, যারা গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।
আবার তাদের জাহাজটিকে অনুসরণ করছিল 'ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন' ব্যানারে প্রায় আড়াইশ জন যাত্রীর ছোট ছোট নৌকা নিয়ে গাজামুখী স্বেচ্ছাসেবকের দল।
গ্রেপ্তারের আগে শহিদুল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, 'আমি শহিদুল আলম, বাংলাদেশের একজন আলোকচিত্রী ও লেখক। আপনারা যদি এই ভিডিও দেখে থাকেন, তবে বুঝতে হবে আমাদের সমুদ্রে আটকানো হয়েছে এবং আমাকে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী অপহরণ করেছে।'
তিনি বলেন, 'ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সক্রিয় সহযোগিতা ও সহায়তায় গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। আমি আমার সব সহযোদ্ধা ও বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাও।'
সবশেষ, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোরে 'ফ্রিডম ফ্লোটিলার' শহিদুলসহ ১৪৫ জন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মীর নিরাপত্তা দাবি করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ আইরিন খান এক বিবৃতিতে বলেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলা আটক ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করে ইসরায়েল আবারও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
বুধবার ভোরে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ও সামরিক হেলিকপ্টার ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের 'কনসায়েন্স' নামক জাহাজসহ কয়েকটি নৌযানকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক করে।
এই 'কনসায়েন্সে' বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শহিদুলসহ ৯২ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৬ জন ছিলেন ১০টি দেশের আন্তর্জাতিক সাংবাদিক।
এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী ও মানবাধিকার রক্ষাকারীরাও ছিলেন। গাজা অবরোধ ভাঙতে এ নৌযান যাত্রা করেছিল।
আটক ব্যক্তিদের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
চে গুয়েভারার মৃত্যু নেই
গত ৫ অক্টোবর আল জাজিরার খবরে বলা হয়, গাজায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাওয়া নৌ বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ নেতৃত্বে থাকা বিশ্বখ্যাত জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে আটকের পর ‘নির্যাতন’ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এমন অভিযোগ করেছেন তার সঙ্গে আটক হওয়া অন্য অধিকারকর্মীরা।
ফ্লোটিলায় থাকা এক সাংবাদিক বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি, গ্রেটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে জোর করে ইসরায়েলের পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করা হয়।’
ইতালির এক সাংবাদিক বলেন, ‘গ্রেটাকে ইসরায়েলের পতাকায় মুড়িয়ে ছবি তোলা হয়। এমনভাবে যেন সে কোনো শিকার!’
গত ১ অক্টোবর ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে গ্রেটা থুনবার্গকে বহনকারী জাহাজ আটক করে সব আরোহীকে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি নৌবাহিনী।
একে একে ফ্লোটিলার প্রায় ৪৩টি নৌযান থেকে পাঁচ শতাধিক কর্মীকেই তারা আটক করে।
____
* লেখার শিরোনামটি মৃদুল দাশগুপ্তের কবিতা থেকে, পরে এই শিরোনাম সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ব্যবহার করেছেন।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।