এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  সমাজ

  • কল্পবৃক্ষ এবং বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা একালের পারিবারিক সম্পর্ক!

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩৭৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কল্পবৃক্ষ এবং বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা একালের পারিবারিক সম্পর্ক!!

    পুরাণ থেকেই শুরু করা যাক্ আজকের কথকতা। সমুদ্র মন্থনের পর্ব। মন্থন দণ্ড মৈনাক পর্বত। তাকে ঘিরেই চলছে প্রবল টানাটানি। একদিকে প্রবল পরাক্রান্ত অসুরেরা, আর অন্যদিকে দেবকুল। মন্থনের ফলে উঠে আসছে নানান মহার্ঘ্য উপকরণ। সেইসব হাতিয়ে নেবার জন্য চলছে দুইপক্ষের প্রবল ব্যস্ততা। একে অন্যকে টপকে যাবার মরণপণ চেষ্টা। মন্থনের ফলেই উঠে এসেছে কল্পতরু। দেবরাজ ইন্দ্র চটপট তাকে হাতিয়ে নিলেন তাঁর নন্দন কাননে রোপণ করবেন বলে। কল্পবৃক্ষের মহিমা অপার। তার কাছে যা চাওয়া যাবে তাই পূরণ হবে। অশেষ গুণসম্পন্ন হবার কারণে আমাদের প্রচলিত গাছ গাছড়ার অনেককেই এই নামে ডাকা হয়। যেমন ধরুন কদলী বৃক্ষ। কলা গাছের সমস্ত অংশ আমাদের কাজে লাগে, মানে আমাদের প্রয়োজন বা মনোবাঞ্ছা পূরণে কলা গাছ অনন্য। চারা লাগাও, তার দেখভাল করো, জল দাও, সার দাও তাতে। তারপর পরিণত হয়েছে দেখলে তার কাছে প্রার্থনা করো (পড়ুন দাবি) – “বাপু হে ! তোমাকে বড়ো করতে কত শ্রম দিয়েছি, ধ্যান দিয়েছি, কত অর্থ ব্যয় (পড়ুন বিনিয়োগ) করেছি। তুমি এখন পরিণত, ফল প্রদানে সক্ষম। এবার তুমি তোমার ঋণ পরিশোধ করো। হ্যাঁ, কল্পতরু! আমরা তোমাকে ঋণ শোধের জন্য প্রযত্ন করতে বলছি।” গাছের সঙ্গে এভাবে কখনো কথা বলেছেন ভগবন্? বলেননি? কোই বাত নেহি। এযুগে এমনটাই‌ নাকি দাবি জানানো দস্তুর। শোনেননি এমন কথা? আমি শোনাবো। খালি একটু সবুর করুন। মনে রাখবেন, সবুরে মেওয়া ফলে।

    পরিবার পরিজন পরিবেশ। আমাদের জীবনের নির্মিতিতে এদের গুরুত্ব অপরিসীম। একটা সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক পারিবারিক পরিবেশ ও সংবেদনশীল পরিজনরা পাশে থাকলে একজন মানুষের বিকাশের পথ অত্যন্ত সহজ হয়ে উঠতে পারে। এটা কোনো তাত্বিক ভাবনা নয়, কালের কষ্টিপাথরে যাচাই করা সত্য। তবে একালের এলোমেলো অচেনা হাওয়া এসে সবকিছুকে কেমন যেন বদলে ফেলছে।

    কথায় বলে অর্থ‌ই অনর্থের মূল। যদিও অর্থকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে সর্বকালের সমাজ। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না তা পাগলেও বোঝে। আর হয়তো তাই এই সময়ের অধিকাংশ অভিভাবকরা চান তাঁদের সন্তান যেন সর্বোত্তম রোজগেরে হয়ে ওঠে। তাঁদের অপূর্ণ সব ইচ্ছা, দাবিদাওয়া পূর্ণ করে। সদম্ভে ঘোষণা না করলেও এমন প্রত্যাশা হয়তো সকল অভিভাবকের।

    এক I.I.T. স্নাতকের কথা বলি। খুব সম্প্রতি এই ঘটনার কথা নজরে এসেছে। জনৈক তরুণ স্নাতক ইঞ্জিনিয়ার সম্প্রতি এক গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর অভিভাবকদের বিরুদ্ধে। কী অভিযোগ? তাঁর বাবা মা তাঁকে আর্থিক ভাবে পীড়ন করছে, তাঁর পেছনে যে অর্থ খরচ হয়েছে অভিভাবকরা তা সুদে আসলে উশুল করতে চাইছেন। ছেলেটি অভিভাবকদের ঋণ শোধ করতে গিয়ে জেরবার। তাঁর অভিযোগ, অভিভাবকদের আর্থিক প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে সে তাঁর নিজের ইচ্ছেমতো সঞ্চয়, বিনিয়োগ বা ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে না। প্রতি ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এক অসহনীয় অবস্থার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে।

    Reddit মাধ্যমে সে তাঁর বক্তব্য পেশ করে জানিয়েছে –

    “আমার ফেলে আসা দিনগুলো কেটেছে এমন এক পরিবারে যেখানে মানসিকভাবে অত্যাচারিত হ‌ওয়াটা ছিল এক নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিনের রুটিনে বাঁধা এক পীড়নের পালা যেন। আর পাঁচটা পিতৃতান্ত্রিক ভারতীয় পরিবারের মতো,আমার বাবার কথাতেই সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হতো। আমার শিক্ষাগত সাফল্য আমাকে ভয়াবহ পরিণতির হাত থেকে রক্ষা করেছে, না হলে আমাকে আরও নিপীড়নের শিকার হতে হতো। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমি দেশের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান I.I.T. তে ভর্তি হ‌ই। এখানে ভর্তির জন্য দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে প্রত্যাশার মাত্রাহীন পারদ চড়ছে। আমি প্রথম বারেই সুযোগ পেয়ে যাই। আমার বাবা এতো কিছুর পরেও আমার পড়াশোনার খরচ চালাতে মোটেই রাজি ছিলেন না। আমার পারিবারিক স্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনার খরচ চালাতে আমাকে আমার নামেই ব্যাঙ্ক থেকে ১১ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে বাধ্য করা হয়। একরকম জোর করেই। বাড়ি ছেড়ে আমার ঠাঁই হলো হস্টেলে।

    I.I.T. র নিয়মানুযায়ী আমার শিক্ষাক্রমের শেষ বছরে আমি দশ মাসের জন্য একটি নামী প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাই। সেখানে আমার মাসিক বৃত্তির পরিমাণ ছিল ৮০০০০ টাকা। মাসের শেষে টাকাটা হাতে পেতেই বাবা এই টাকার সবটাই দাবি করে বসেন। প্রতি মাসেই চলতে থাকে এমন অধিকার ফলানোর যন্ত্রণা। এই টাকা জমিয়ে তিনি নাকি স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করবেন – নতুন বাড়ি বানাবেন। ভেবেছিলাম এই টাকা দিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণের দায় মেটানোর কাজ শুরু করবো। কিন্তু সেই গুঁড়ে বালি ! আমার এই সাধে বাদ সাধলেন আমার বাবা। আমি খানিকটা হতাশ হলাম। ভেবেছিলাম এখানেই ব্যাপারটা শেষ হয়ে যাবে। আমি আমার কাজে মন দিলাম।

    এখানেই শেষ নয়। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে খুব তাড়াতাড়িই আমি আমার কর্মজীবন শুরু করলাম। এই দিনের জন্য দেশের কত শত তরুণ অপেক্ষা করে থাকে। ভেবেছিলাম আমার নতুন রোজগারের টাকা আমি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী খরচ করবো। এডুকেশন লোন পরিশোধ করার চিন্তাতো ছিল‌ই। নতুন প্রতিষ্ঠানে আমার বেতন ধার্য হয়েছিল ১.৫ লক্ষ টাকা। আমি একটা স্বপ্নের ঘোরে ছিলাম। তবে এই স্বপ্ন‌ও স্থায়ী হলোনা। শিকারের গন্ধ পেয়ে শার্দুল যেমন তৎপর হয়ে ওঠে, মাইনের গন্ধে আমার বাবা-মা তেমন হয়ে উঠলেন। তাঁরা একজোট হয়ে আমার কাছে মাসিক ১.১ লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করলেন। আমি বাধ্য হলাম আমার একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছেগুলোকে জলাঞ্জলি দিতে। সমস্যা আরও বাড়লো আমার নিয়োগ দূরবর্তী স্থানে হ‌ওয়ায়। শিকার হাতছাড়া হয়ে যাবে ভেবে তাঁরা মরীয়া হয়ে উঠলেন। দাবির পরিমাণ বাড়িয়ে এবার তা দেড় লাখ টাকা করা হলো। আমি এমন দাবির কাছে বিধ্বস্ত ও দিশেহারা হয়ে আবারও বাড়ি ছেড়ে দূরে সরে গেলাম। এছাড়া আমার কাছে আর কোনোও বিকল্প ছিলো না। আমার অভিভাবকদের এমন আচরনের ফলে আমি একদম ভেঙে পড়েছিলাম। সবাই মিলে নতুন করে সবকিছু গুছিয়ে নেবো এমনটাই চেয়েছিলাম কিন্তু…..!

    এরপর কেটে গেছে আরও দুটি মাস। খবর পেলাম আমার অভিভাবকরা নতুন একটি ফ্ল্যাট কিনবেন। এই বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো রকম আলোচনাই করেন নি আমার বাবা মা, যদিও টাকা দেবার সময় এগিয়ে আসতেই তাঁদের পক্ষ থেকে নতুন আর্থিক চাপ এসে হাজির। সামান্য রুখে দাঁড়িয়ে আমি তাঁদের জানালাম যে এর মধ্যেই আমি নতুন ফ্ল্যাটের ডাউন পেমেন্ট বাবদ ২০,০০০০০ টাকা দিয়েছি। তাই এই মুহূর্তে আমার তরফ থেকে আর‌ও অর্থ প্রদান করা সম্ভব হবে না। ভেবেছিলাম এতেই বোধহয় কাজ হবে, কিন্তু ভবী না ভোলবার! দাবি দাওয়ার চেনা পথ ছেড়ে এবার তাঁরা ইমোশনাল ব্ল্যাক মেলিং শুরু করলেন। আমাকে উপযুক্ত ভাবে গড়ে তুলতে তাঁরা কতোটা কষ্ট স্বীকার করেছেন, কীভাবে ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ ক্লাস পর্যন্ত আমার পেছনে মাস পিছু ২,০০০০০ টাকা খরচ করেছেন এসব বলে আমার ওপর নতুন করে চাপ তৈরি করা শুরু করলেন। আমার বাবা সরকারি কর্মচারী হিসেবে প্রায় ১,০০০০০ টাকা বেতন পেতেন। তারপরও তাঁর এমন মহাজনের মতো আচরণ আমাকে একেবারে ভেঙে ফেলে। সন্তানের কাছে বাবা-মা কিছু প্রত্যাশা করতেই পারেন, কিন্তু তা বলে এমন আচরণ!

    প্রায় ১৪ মাস পরে বাড়ি ফিরে এলাম। ভেবেছিলাম সবকিছু হয়তো ঠিকঠাক হয়েছে। মুখ হাঁ করে তাকিয়ে থাকা আমার পূজনীয় বাবা-মা বোধহয় এবার তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। প্রাথমিক কিছু বাঁধা গৎ এর কথা চালাচালির পর আমার বাবা বললেন – শোনো, ছেলের রোজগারের টাকা ঠিকঠাক খরচ করার অধিকার একমাত্র তাঁর অভিভাবকদের। তোমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে? আমাদের নতুন ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনার জন্য ২,০০০০০ টাকা দাও। আমি আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ভেবেছিলাম আমার একান্ত পরিজনদের সঙ্গে আনন্দে কাটাব ছুটির কয়েকটি দিন। সুখ কি আর কপালে সয়? পরেরদিন সকালেই কাজের বাহানা করে বাড়ি ছাড়লাম। বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের পাশে থাকার নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে জেনেও আমি টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তাঁরা বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন। ওঁরা আমাকে কল্পবৃক্ষ বলেই ভেবেছিলেন, তাঁদের সমস্ত চাওয়া পাওয়ার একমাত্র অবলম্বন অথচ আমি পরিবারের অঙ্গনে সুগন্ধি গোলাপ গাছ হয়ে সকলের ভালোবাসা আর যত্ন পেতে চেয়েছিলাম।”

    আমার কথা আপাতত শেষ। খবরটা পড়ে খুব চিন্তায় পড়েছি। পারিবারিক আবহাওয়াও কেমন অচেনা, বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব আমাদের অজান্তেই ঘটছে এমনটা হয়তো নয়। সন্তানকে যথাযথ ভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা সব অভিভাবক‌ই সাধ্যমতো করেন। একালের অভিভাবকরা অনেক বেশি বেশি আশা করছেন সন্তানদের কাছে। কিছুদিন আগেই “প্রাণ যায় লেকিন ক্যারিয়ার না যায়” শীর্ষক এক নিবন্ধে আরও এক অভিভাবকের অপরিণামদর্শী উচ্চাশা ও তার করুণ পরিণতির কথা লিখেছি। এক অভাবনীয় পরিবর্তনের ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে আমাদের এতো দিনের বিশ্বাস আর সম্পর্কের সমস্ত বাঁধনগুলোকে। বিনিয়োগের মানদণ্ডে সবকিছুকে মাপতে গিয়ে এক গভীর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হচ্ছি আমরা সকলেই। সমাজের এহেন পরিণতির জন্য কার দিকে আঙ্গুল তুলবো? আমরা সকলেই যে এই আশ্চর্য পালাগানের কুশীলব! পট পরিবর্তনের সাক্ষী।

    পুনশ্চ:

    এই অংশটি সংযোজনের প্রয়োজন হবে বলে কখনোই মনে হয় নি। লেখাটা প্রকাশ করে দূর থেকে পাঠকদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবো, এই ছিল ইচ্ছে। ওপরের ঘটনাটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মেনে নেবো। কিন্তু বিষয়টার ওখানেই ইতি তা নয়। আবারও Reddit মাধ্যমে ঠিক একই রকম ঘটনার কথা প্রকাশ করেছেন জনৈকা ভুক্তভোগী রোজগেরে কন্যা। সে অভিযোগ জানিয়ে বলেছে যে তাঁর অভিভাবকদের আচরণে সে হতবাক কেননা তাঁদের আগ্রাসী আচরণের জন্য সে তাঁর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সে তাঁর রোজগারের টাকা নিজের ইচ্ছে বা প্রয়োজন মতো খরচ করতে পারছেনা, তাঁর অভিভাবকদের সব কিছুর ওপরে নিজেদের কর্তৃত্ব দাবি করার কারণে। বছর ২৭ এর মেয়েটির অভিযোগ, তাঁর বাবা বেতনের সিংহভাগই নিজের হাতে রাখছেন। তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন বেতনের অতি সামান্য ভগ্নাংশ। মেয়েটির মতে এই ঘটনা পারিবারিক অর্থনৈতিক শোষণের নামান্তর। মেয়েটি জানিয়েছে যে তাঁর মাসিক বেতন ৪০০০০ টাকা। এরমধ্যে তাঁকে হাতে তুলে দেওয়া হয় মাত্র ৩০০০ টাকা। বাকিটা ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করা হয়। মেয়েটি এই ব্যবস্থায় মোটেই সন্তুষ্ট নয়। ২০১৮ সালে তাঁর প্রথম চাকরির সময় থেকেই এমন ব্যবস্থা মেনে নিতে একরকম জোর করা হয়েছে। ফলে পরিবারের মধ্যেই তৈরি হয়েছে সম্পর্কের প্রবল টানাপোড়েন। এর ফলে সে তাঁর কাজের প্রতি আগ্রহ ও উদ্দীপনা হারিয়েছে এবং চরম হতাশার শিকার হয়েছে। হতাশার মাত্রা এতোটাই গভীর যে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে ওষুধ সেবন করতে হয় নিয়মিত ভাবে।

    বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করতে হবে সকলকেই।

    এক প্রবীণ মানুষের মতে, এ প্রজন্মের সন্তানদের মধ্যে দায়িত্ব পালনের মানসিকতা নেই। তাঁরা সকলেই নিজেরটুকু নিয়েই ব্যস্ত। আত্মসুখ চরিতার্থ করার জন্য তাঁরা যতটা সচেতন, পারিবারিক উন্নয়নের জন্য হয়তো ততটা নয়। এখানেই তৈরি হচ্ছে দ্বন্দ্বের নতুন ক্ষেত্র যার আঁচ এসে ছারখার করে দিচ্ছে আমাদের সম্পর্কের সমস্ত বাঁধনগুলোকে। অভিভাবকরা মরীয়া হয়ে উঠছেন নিজেদের কর্তৃত্বকে বজায় রাখতে, আর তা করতে গিয়েই ডেকে আনছেন বিবাদ, বিসম্বাদ, বিচ্ছিন্নতা।

    সেপ্টেম্বর ১২. ২০২৫
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৌমেন রায় | 2409:40e1:10fd:3d60:8000::***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১৩734063
  • কি আশ্চর্য!! সবাই উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে নাকি!
  • ধুর্বাল | 15.204.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৫734065
  • বুরহাবড়াদের বিলাপ
  • #+: | 2405:201:8000:b11b:d406:675c:f497:***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৩734080
  • ভোগবাদী সমাজের এমন রূপ দেখতে আমরা যে মোটেও অভ্যস্ত ন‌ই তা তো স্পষ্ট। সব কিছুকেই যখন আমরা অর্থমূল্যে মূল্যায়ন করতে চাইছি তখন এমন বিকৃতি অনিবার্য। সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কে আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারে?
  • পৌলমী | 2405:201:8000:b11b:d406:675c:f497:***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:০৯734086
  • লেখকের অন্তর্বীক্ষণকে প্রশংসা করি। এই প্রবণতার খোঁজ পাওয়ার জন্য অন্যরকম সংবেদন থাকা জরুরি। বছর কয়েক আগে আমার এক বান্ধবী এমন সমস্যার কথা জানিয়েছিল। তখন ভেবেছিলাম ব্যাপারটা নিছকই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। লেখাটি পড়ার পর ঐ বান্ধবীর কথা মনে পড়লো। সমাজের গতিপথ সত্যিই জটিল।
     
  • :+# | 51.75.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:২৬734087
  • #+: ওরফে সোমনাথবাবু, বেনামে নিজের লেখায় আর কত কমেন্ট করবেন?
  • Somnath mukhopadhyay | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:২৭734088
  • তাই নাকি?
  • সুবীর রায় | 115.187.***.*** | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৫২734116
  • আসলের প্রত্যাশার পারদের মাত্রা যদি বাস্তবের সীমানা ছাড়ায়, তবে তো এরকমই ঘটবে। এটাই স্বাভাবিক। আপনার লেখায় দৈনন্দিন মানুষের জীবনের যে জ্বলন্ত সমস্যাগুলি কলম থেকে বিরিয়ে আসে, তা আপনার সংবেদনশীল সামাজিক মনেরই দর্শিতা পাওয়া যায়। আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। 
  • সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। | 2409:40e0:3c:a682:8000::***:*** | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৪০734119
  • অর্থকে কি ভাবে পরিচালনা করতে হবে তার প্রথম পাঠ কিন্ত বাবা মা কেই শেখাতে হয়। যে তরুণ বা তরুণী পড়াশোনার জগৎ ছেড়ে সদ্য রোজগারের জীবনে প্রবেশ করেছে, তাকে  আয়, ব্যয় আর সঞ্চয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে কিভাবে চলতে হবে তা তো প্রাথমিক ভাবে তার বাবা  মা- ই তাকে শেখাবে। অভিভাবকদের প্রতি আর্থিক কর্তব্য পালন করার পাঠ টাও ছোটবেলা থেকে বাবা,মা কে দেখেই আমরা শিখি।  এ'খানে জোর খাটানোর প্রয়োজন তখনই হতে পারে যখন অভিভাবক দেখছেন যে তার সদ্য রোজগেরে সন্তান বেহিসেবী ভাবে খরচ করে চলেছেন ,  প্রয়োজনীয় কাজে খরচ করছেন না, অথবা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের ব্যপারে। কিংবা রোজগারের একটা অংশ বাবা মায়ের হাতে তুলে দেওয়াও যে তার কর্তব্য, সে ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। বুঝিয়েও কোনো ফল হয়নি। লেখক যে দু'টি বয়ানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন,  সেখানে অভিভাবকদের বক্তব্য আমরা জানতে পারছি না। যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে,  সেটা  একেবারেই ভুল পথ। এরা সন্তানের সান্নিধ্য অচিরেই হারাবেন। 
  • অভ্রদীপ | 240a:61:62e1:167d:d3a9:18f3:ac9f:***:*** | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৪৪734122
  • অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয় এটা। এই প্রজন্মের থেকে অভিভাবকদের প্রতি আর্থিক শোষণের অভিযোগ আসা একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একই জাতীয় ঘটনা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তবে, যে অভিযোগগুলোর উদাহরণ দিলেন সেগুলোতে অভিভাবকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগই থাকে না পোস্টগুলো রেডিটে হওয়ার কারণে। তাই আমরা কেবল এক তরফের কথা শুনছি। সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে ঢুকতে চাই না। কিন্তু অভিভাবকদের আর্থিক শোষণের ঠিক বিপরীত ঘটনা, অর্থাৎ আর্থিক সঙ্গতি লাভের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধ অভিভাবকদের পরিত্যাগ করার অভিযোগ অনেক বেশি শোনা যায়। বৃদ্ধাশ্রমের পসার ক্রমেই বাড়ছে চারিদিকে। আসলে খারাপ মানুষ তো যেকোনো বয়ঃক্রমেরই হতে পারে, তাই না?
  • শৌভিক সেন | 2405:201:8004:98d4:1ccf:4286:d452:***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৩২734130
  • লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ একেবারে অন্য আঙ্গিক থেকে বিষয়টি ভাবার জন্য। ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজেই এমন একটি পরিস্থিতির শিকার। আজ থেকে প্রায় 17 বছর আগে আমার জীবনেও এমন একটি সময় দেখেছিলাম আমি। এবং এখনো আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমার দিক থেকে তাঁদের প্রয়োজন মেটানোর ঘাটতি ছিলনা। কিন্তু তারপরেও আমাকে দুর্বিষহ পরিস্থিতি সহ্য করতে হয়েছে। কাউকে বোঝাতেই পারিনি আমার অবস্থা। কর্তব্য পালনের মুখোশে মানসিক অত্যাচার চলেছে এবং এখনো চলে। প্রাবন্ধিক সোমনাথ বাবু প্রবীণ প্রজন্মের সদস্য হয়েও যে এভাবে ভাবতে পেরেছেন তার জন্য ওনাকে অনেক ধন্যবাদ
  • DrSouravM | 106.219.***.*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৫734134
  • This is not an isolated event, but, also its not a common scenario. It depends on the particular family set up and also to some extent the socio-economic and traditional set up of families of particular regions. Personally I dont find it alarming. But what I am worried of is the lifestyle of people are becoming more superficial due to the fast pace of lifestyle and that hinders us from forming deep abstract feelings. Becoming emotionally superficial will make people more robotic and that will bring problems more in life. Already families have become nuclear and lost the charms of living altogether as families in most part of the nation. 
     
    P.S. who the hell wrote that the writer is commenting using different names?! That person himself has a few dots and asterisks in his name! I know the honesty in Mr. Somnath M.
  • sarmistha lahiri | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৫০734269
  • একদম অন্য আঙ্গিক থেকে লেখক বিষয়টি কে তুলে ধরেছেন।এটাও অবশ্যই সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া ঘটনার  একটা চিত্র। সমাজের পুরো  কাঠামো টাই যে বিগত দুই দশকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে গেছে এই লেখাটি তার ই উধাহরন। পরিবার পরিজন আমাদের মাথা র উপর একটা ভরসার ক্ষেত্র, সেই পরিবারের এই ধরনের দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবার ভেঙে যাওয়াকে আরো প্রশ্রয় দেবে। সমাজের প্রতিটি মানুষ কে আরো মানবিক ও সহানুভূতি শীল হ ওয়া প্রয়োজন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন