এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  শনিবারবেলা

  • ক্যালিডোস্কোপে দেখা - আলো-আঁধার

    অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
    ধারাবাহিক | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ৩২৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ক্যালিডোস্কোপ ঘোরালে বিভিন্ন টুকরো ছবিগুলো জুড়ে একেকবারে একেক রকম নকশা গড়ে ওঠে। কিন্তু এবারের পর্বটি এখানে তুলে আনার আগে ক্যালিডোস্কোপটি ঘোরাইনি। তাই এর প্রথম প্রকাশের পর সামান্য কিছু এদিক-ওদিক ছাড়া মূল ছবি একই রয়েছে। যে পাঠক এই পর্বটি অন্যত্র পড়ে ফেলেছেন তার কাছে এটিতে নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবু এটিকে এই ভাবেই নিয়ে এলাম দুটি কারণে – এক) দীর্ঘ অসুস্থতা পার হয়ে অন্য একটি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এইদিকে আর মনোযোগ দেওয়ার অবসর জুটছেনা। ফলে ক্যালিডোস্কোপকে আপাতত কুলুঙ্গিতে তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এই অবস্থায়, অন্তত একটি পর্ব এখানে এনে সে কথাটি জানিয়ে তার পর যতি টানা যথাযথ হবে ভেবেছি। এবং, দুই) সম্পাদকেরা জানিয়েছেন যে এবার সময় এসে গেছে এই পর্বগুলিকে দুই মলাটের মধ্যে নিয়ে আসার। বই প্রকাশের এ উদ্যোগ আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং সম্মানের। তবে, কেউ কেউ বইটি সংগ্রহ করলেও বইয়ের দত্তক না জুটলে ওনারা এই বই ছাপানোর খরচ তুলবেন কী করে তা আমার জানা নেই। ক্যালিডোস্কোপে দেখার পরের পর্যায়ে যাওয়ার আগে আরও যে কয়েকটি পর্ব এখানে আনার কথা ভেবে রেখেছিলাম তাদের বইয়ে পাওয়া যাবে।
    ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়


    দোল


    উত্তরবঙ্গের বাসায় সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছিল প্রথম দিনেই, বাড়িতে কোন বিজলী বাতি নেই। শুধু আমাদের বাসায় নয়, পুরো পাড়াতেই নেই। ঐ এলাকাতে তখনও বিদ্যুৎ আসেনি। সারা দিনে এটি তথ্যমাত্র ছিল, সন্ধ্যার আলো পড়ে আসার সাথে সাথে, সেটি অনুভবে এল। ঘরে ঘরে তেলের আলো। দিনের বেলায় বাবা যত্ন করে কেটে সমান করত - সেজবাতি কি হ্যারিকেন-এর সলতের প্রান্তভাগ। সন্ধ্যায় তাদের যখন জ্বালানো হত অন্ধকার অনেকটাই দূরে সরে যেত। আলো ঘিরে পড়তে বসতাম আমরা। কিন্তু, সন্ধ্যা যখন গড়িয়ে যেত রাতের ঘেরাটোপে, একটু একটু করে খোঁচা জেগে উঠত সলতের মাথায়। শিখা সেখানে ঘোরাল হয়ে উঠত। চিমনীর গায়ে তির তির করে পড়ত কালির পরত, আর ঘরের ভিতর, সেদিকটার দেয়ালে অন্ধকার এগিয়ে আসত গুটি গুটি, ধীরে ধীরে আরও জমিয়ে। যতই কাঁচ-ঘেরা হোক, বাতাসের ছোবল থেকে রেহাই মিলত না কোন বাতির। সলতের উপরে থেকে থেকে কেঁপে ওঠা আলো আমাদের বসিয়ে রেখে দিত আলো-আঁধারের প্রান্তসীমায়। যে জগৎ-টা নানা রহস্যে ভরা, কে জানে কোন আদিম কাল থেকে মানুষের সঙ্গী হয়ে আছে, মনে হত সে যেন ওঁত পেতে বসে আছে আমাদের ঠিক পাশেই – যে কোন সময় লাফিয়ে পড়বে আমাদের সামনে।

    আমাদের সে বাসায় বিজলীর আলো আসার আগেই আমরা সেখান থেকে গঙ্গা পার হয়ে ২৪ পরগণায় চলে আসি। যেখানে এলাম সেখানে বিজলী বাতির আলো। কিন্তু, সইল না। কিছুদিনের মধ্যেই, ‘লোডশেডিং’ নামের এক দানবের হাত ধরে অঙ্গরাজ্য বাংলায় নেমে এসেছিল দীর্ঘস্থায়ী অন্ধকার-যুগ। প্রযুক্তির অপ্রতুলতা, তার প্রয়োগের অসুবিধা এইসব কারণের পাশাপাশি সে আঁধার নামিয়ে আনার কৃতিত্ব ছিল আলো জ্বালানোর দায়িত্বে থাকা প্রশাসন আর রাজনীতির লোকেদেরও। তাদের লোভ আর অবিমৃষ্যকারীতার ফল ভুগেছে রাজ্য জুড়ে নিরুপায় মানুষেরা। আলোআঁধারির রহস্যময়তা নয়, সেই সময় আমাদের সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল হতাশা আর অবক্ষয়-এর প্রায় অন্তহীন অন্ধকার।

    আলোর অপেক্ষায় থাকা আঁধারের দিনগুলোয় সতর্কতা ছিল, ভয় ছিল, রোমাঞ্চও ছিল। আশা ছিল – আলো আসবে, আলো আসছে। কিন্তু, আলোর উল্টো পথে চলে যে আঁধারে পৌঁছে যাওয়া, আলোর সম্ভাবনাগুলোকে ধ্বংস করে আঁধারের সমুদ্রে যে ক্রম-নিমজ্জন, আমাদের বোধের জগতে সে বড় ভয়াবহ, সে বড় মর্মান্তিক অভিঘাত নিয়ে এসেছিল। সেই শেষ নয় যদিও। বস্তুত জীবন দীর্ঘ হলে আমরা বারেবারেই কালের ঘড়ির দোলকের এই প্রান্ত বদলের মধ্য দিয়ে যাই। তাই আলোর দিনে যথা সাধ্য প্রস্তুতি নিই আগামীর অন্ধকারের জন্য। আর, অন্ধকারের দিনে মনে রাখতে চেষ্টা করি, সমস্ত অন্ধকার যুগ কাটিয়ে একসময় আলোর দিন আসে, পরের অন্ধকারের আগে। আর হাতে ধরা বাতি হোক কি তারার আলোয়, এমনকি নিকষ কালো অন্ধকারেও, আলোর পথযাত্রীরা এগিয়ে চলে, কেউ কেউ পড়ে যায়, তবু এগিয়ে চলা থামেনা।

    উত্তরবঙ্গের দিনগুলো ছিল আমার চেতনার উন্মীলনের কাল। আমি চোখ মেলছিলাম আর আলো জ্বলে উঠছিল, এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে। আমার বাবা ভিটে মাটি ছেড়ে আসার সময় বস্তু হিসাবে দাম আছে এমন প্রায় কিছুই আনতে পারেনি। শুধুমাত্র দু’-একটা বই ছাড়া। পাতা খসে আসা এরকম-ই একটা বই ছিল – গল্প, নাটক, কবিতার। পড়া একটু কঠিন – বহু কথার অর্থ জানা নেই। তবে, পড়তে পড়তে আরও খানিকটা করে বোঝা যায়। বড় চমক লেগেছিল এ বইয়ের কবিতায়। নেশা ধরান, অদ্ভুত ধরণের কবিতা। পড়লে ছন্দ আছে অথচ পংক্তি শেষের মিল নেই। বাবা বলল, এ হচ্ছে, অমিত্রাক্ষর ছন্দ। যিনি লিখেছেন এ কবিতাগুলি বাংলা ভাষায় তাঁর স্বীকৃতি শুধুই একজন কবি-র নয়, মহাকবি-র। চলিত ধারণার বাইরে গিয়ে তিনি বঞ্চিতকে বসিয়েছেন নায়কের আসনে। সেই শুরু। তারপর আরও বহুকাল ধরে ফিরে ফিরে গেছি মধুকবির কাছে। একসময় পড়েছি সেই কবিতাও – সভায় সভায় যা আবৃত্তি করে বেড়িয়েছি – “রেখো মা দাসে রে মনে … … মধুহীন কোরো না গো তব মনঃ কোকনদে।” মধুকবির আকাঙ্খা পূর্ণ হয়েছিল। অমর পদ্ম হয়েই ফুটেছিলেন তিনি। আমার সে গুণ নেই। এ পরবাসে যেদিন ঝরে যাব, কয়েকটি ভালোবেসে মনে করা প্রাণের স্মৃতির সরণিতে কিছুদিনের জন্য অবরে-সবরে মনে পড়া ছাড়া, মিলিয়ে যাব এমনিই, কোথাও কোন চিহ্ন না রেখে।

    ঐ দিনগুলিতে একটি ছোট্ট ঘটনা আমার চেতনায় গভীর প্রভাব রেখেছিল। যদিও তখন সেভাবে বুঝিনি। আমাদের বাড়িতে তখন প্রশাসনের নানা মাপের, নানা দরের মানুষের আসা-যাওয়া। একদিন এক বিশিষ্ট ভদ্রলোক বাবার সাথে দীর্ঘ বৈঠক শেষে বিদায় নেওয়ার আগে আমার কাছে এগিয়ে এসে খোঁজ নিলেন আমি কোন শ্রেণীতে পড়ি ইত্যাদি। সম্ভবতঃ তখন চতুর্থ শ্রেণী চলছে। দু-চার কথার গল্পের পর জানতে চাইলেন আমি সম্রাট অশোকের ছেলে মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রার কথা জানি কি না। তারা যে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে সিংহলে গিয়েছিলেন সে কথা জানিয়ে আমি বললাম যে অনেকে কিন্তু বলে মহেন্দ্র আসলে অশোকের ভাই। আর সংঘমিত্রা মহেন্দ্রর স্ত্রী। উনি অবাক হয়ে জানতে চাইলেন এমন কথা আমি কোথায় পেলাম। আমি ইতিহাস বই খুলে দেখিয়ে দিলাম যে সেখানে ‘মতান্তরে’ বলে তাদের উভয় পরিচয়ই লিপিবদ্ধ রয়েছে। মানুষটি মন দিয়ে অনুচ্ছেদটি পড়ে মহা খুশী হলেন। এমন খুঁটিয়ে পড়া আর মনে রাখা ছেলে যে কালে কালে বিরাট কিছু হবে সে নিয়ে পূর্ণ নিশ্চয়তা জানিয়ে বিপুল উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। পরবর্ত্তী কালে আমি ইতিহাসবিদ হইনি। ঐ অন্য মতের আরও ব্যপক কোন অনুসন্ধান করিনি। বস্তুত নানা কিছুর সন্ধানে ক্রমাগত দিক বদলে আমার কোন স্মরণীয়, বরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠা হয়নি। কিন্তু একটি শিশুর সামান্য কিছু জানাতে একজন বড় মানুষের উচ্ছসিত, প্রত্যয়ী প্রশংসা সেই শিশুটিকে নানা বিষণ্ণ, ভেঙ্গে পড়া সময়ে অন্ধকার নদীর বুকে অনেক নড়বড়ে সাঁকো পার করে দিয়েছে।

    সম্ভবতঃ দ্বিতীয় শীতে এক দিন এক কাণ্ড ঘটল। বাবার সহকর্মীদের আমরা ডাকতাম সম্পর্কে জড়িয়ে নিয়ে। সেইরকমই শেখানো হয়েছিল। কাজের জায়গায় পদমর্যাদায় বাবা বড়, কিন্তু বাড়িতে আমাদের কাছে সেই সব কাকু আর পিসীদের অবস্থান ছিল যার যার সম্পর্ক আর আন্তরিকতার মাপকাঠিতে। কেউ কেউ নিয়মিত আসতেন আমাদের বাড়িতে গল্প-আড্ডায়। বাবা বেশী কথার লোক ছিল না। মা-র সাথেই জমিয়ে গল্প হত তাদের। আমাদের সাথেও হত। সেইরকমই একজন, চিত্রাপিসী সেই বিকেলে একটি ছোট আধহাত উচ্চতার সাদা মূর্তি নিয়ে এসে হাজির আমাদের বাড়িতে। সরস্বতী মূর্তি। তার দু-একদিন আগে মা-র সাথে গল্প-আড্ডায় মা-র একটি অপূর্ণ ইচ্ছের কথা পিসী জানতে পেরেছিল। তার ফলেই সেই বিকেলের ঐ উপহার। মা এ উপহার আশা করে নি। আনন্দ পেল, আবার সেই সাথে মহা চিন্তায়ও পড়ে গেল।

    মায়ের দুশ্চিন্তা একটুও অমূলক ছিল না। বাবা বাড়ি এসেই অত্যন্ত রেগে গেল
    – তুমি জানো, আমি পূজা-আর্চা করি না। তবু তুমি এই মূর্তি ঘরে তুললা?
    – আমি কি নিজে এনেছি?
    – যে আনছে তারে দিয়া দিবা।
    – আমি কেন দিতে যাব? তোমার নিজের অফিসের লোক, তুমি দিয়া দিও। বচ্ছরকার দিনে বাড়িতে মূর্তি নিজে এল। আর তুমি তারে বিদায় করে দেবে। ছেলেপিলের ঘর, যা ভাল বোঝ কইরো, আমার কি!

    বাবা যতই দোর্দন্ডপ্রতাপ হোক, মা ঠিকই মোক্ষম চালটা চেলে দিত। আর এইবারে ত ঠাকুমাও তার দিকে। ফলে সেই সন্ধ্যায় আমাদের খেলার ঘরটা সেজে উঠল অপরূপ সাজে। ট্রাঙ্ক থেকে একটি অপূর্ব চাঁদোয়া বার করে এনে মুর্তির মাথার উপর টাঙ্গানো হল। অনেকগুলি রঙিন পুরনো কাপড়ের ছয়কোনা টুকরো একটির পর একটি, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে-কোনাকুনি, পাশাপাশি সেলাই করে মায়ের নিজের বানানো সেই অনুপম শিল্পকর্মটি এখনো দেখতে পাই, অমন করেই টাঙ্গানো আছে, ঐ ঘরটিতেই। কাছের দোকান থেকে বাবা সন্ধ্যা নাগাদ নিয়ে এল নানা নানা রং-এর ঘুড়ি বানানোর কাগজ। কিন্তু আজ তাদের দিয়ে ঘুড়ি নয়, অন্য কিছু বানানো হবে। তারপর হ্যাজাকের আলো জ্বলল। আর সেই সব কাগজ কেটে তৈরী হল – শিকল, মালা, ফুল, ফুলের ঝাড়, আলপনা – কত কি। দোকান থেকে কাগজ ছাড়াও এসেছিল খাগ-এর কাঠি। তাই কেটে কলম তৈরী হল। খালি হওয়া কালির শিশিতে রাখা দুধের কালিতে ডুবিয়ে খাগের কলম দিয়ে পূজার পরের ভোরে লেখা হবে, কলাপাতায় – ব্রাহ্মীতু ভারতী ভাষা … …।

    অনেক রাত পর্যন্ত জেগে পূজার জায়গা সাজানোর কাজ চলার সময় বাবাকে পেলাম খুব কাছে থেকে। কাগজ কাটার কারিগরি শেখাতে শেখাতে অল্প কথার মানুষ বাবা সেদিন অনেক গল্প করেছিল –
    – ঈশ্বরকে ডাকতে পূজা করতে লাগে না। পূজা-আর্চা ত দেখনদারি।
    – কেন?
    – ঈশ্বর ত নিজের মনের মধ্যে। আমি তারে নিজের মনে ডাকি। তাকে ডাকতে গেলে অন্যান্যদের দেখিয়ে ডাকতে হবে কেন?
    – তা হলে তুমি যে এখন পূজা করবার জন্য এসব করছ?
    – না করলে তোমাদের মা কষ্ট পাবে। সবাই পূজা করে, তারও ইচ্ছা করে আর কি। এতদিন রাজী হই নাই। এইবার আর পারা গেল না। সংসার করলে নানা কিছুই মানতে লাগে।
    – আচ্ছা বাবা?
    – বলো
    – ঈশ্বর-কে কি ডাকতেই হবে?
    – নাঃ! লোকজন ঈশ্বর-কে ডাকে মনের মধ্যে জোর পাওয়ার জন্য, কি, মন শান্ত করার জন্য; কোনও সময় গভীর দুঃখে সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য। যে ঈশ্বর-এর সাহায্য ছাড়াই সেটা করে ফেলতে পারে তার আর ঈশ্বররে ডাকতে লাগে না।
    – তুমি ডাকো?
    – ডাকি। আমি সাধারণ মানুষ, নিজের মনে ডাকি। তা বলে তোমারও ডাকতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নাই।
    – ঈশ্বরকে না ডাকা কি পাপ?
    – ঐগুলা প্রচার। দুনিয়ায় ঈশ্বররে ডাকার নামে যত পাপ হইছে সেইগুলারে ঢাকা দেয়ার জন্য তারা এই প্রচারডা চালায়। আসল পূজা কি জান? জ্ঞানের পূজা। আমি আর তোমারে কতটুকু বলতে পারব। বই থেকে জানবা। বই পড়বা। সব রকম বই পড়বা।

    আরও কিছু কথা হয়েছিল যা আজ আর মনে নেই। আজ শুধু এইটুকুই মনে পড়ে যে সেই রাতেই আমার সূচনা হয়েছিল জিজ্ঞাসার আলো হাতে আঁধারের যাত্রীদলের সঙ্গী হয়ে যাওয়া।

    উত্তরবঙ্গের জীবনে বইয়ের যোগান বিশেষ না জুটলেও জীবনের পরবর্ত্তী পর্যায়ে সেই অভাব পূরণ হয়ে গিয়েছিল। বই জুটিয়ে নিয়ে পড়তে শুরু করে দেওয়ার ব্যাপারে আমার কোনদিন কোনরকম লজ্জা বা দ্বিধার বালাই ছিলনা। যে বাড়িতে যখন যেতাম, হাতের কাছে যা বই পেতাম, টেনে নিয়ে পড়তে বসে যেতাম। বইয়ের মালিকেরাও এ কাজে অপার প্রশ্রয় দিতেন। তবে তাদের কেউ কেঊ যখন আমার এই পাঠ-প্রীতিকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে পাঠে অনিচ্ছুক বাচ্চাদের লজ্জিত করার চেষ্টা করতেন সেইটা কিছুটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠত।

    বইয়ের ব্যাপারে আমার কোন বাছ-বিচার ছিল না। বস্তুত বিভিন্ন বাড়িতে বিভিন্ন বয়সে যে সমস্ত বই পড়েছি সেগুলি অন্য কোন কোন বাড়িতে সেই সময় আমার বয়সী পাঠকের জন্য নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হওয়ার মত ছিল। আমাদের বাড়িতে সব রকম বইয়ের প্রবেশ ছিল অবাধ, বাবা-মা দুজনকেই বিভিন্ন সময় বলতে শুনেছি, বই পড়ে কেঊ নষ্ট হয়না। নষ্ট হওয়া বলতে ঠিক কী বোঝায় সেই নিয়ে এক লপ্তে কোন বিশদ আলোচনা কখনও হয়নি, মোটের উপর ধারণা দেওয়া ছিল যে পরীক্ষায় ফেল করা, লোকজনের ক্ষতি করা, চুরি করা, গালি দেওয়া, সময়মত বাড়ি না ফেরা, বড়দের সাথে তাদের বিনা অনুমতিতে তর্ক করা এইগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ। আর নষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় পরীক্ষায় ফেল করা দিয়ে। তাই বই পড়ার ক্ষেত্রে একটিই শর্ত ছিল, স্কুলের বাধ্যতামূলক পড়ার বইগুলি পড়ায় ঘাটতি হওয়া চলবেনা।

    পরীক্ষায় ফল ভালই হত। ফলে বৎসরান্তে স্কুল থেকে কয়েকটা বই পাওয়া যেত, বয়সোপযোগী বলে বিবেচিত, একেবারে নিজের করে – বার্ষিক পরীক্ষায় আর বার্ষিক উৎসবে আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সুবাদে।

    এর মধ্যে একদিন বাবা একটা বই কিনে দিল। সেই সময়ের পাঠের অভিজ্ঞতায় বেশ মোটা বই – অথচ একটাই গল্প। বাবা জানাল, একে বলে উপন্যাস। অসাধারণ লেখার ধরণ। জমজমাট গল্প। ফিরে তাকিয়ে মনে হয়, আজকের বলিউডি চলচ্চিত্রের আদিকালের সংস্করণ প্রায়। কিন্তু গল্পটা কেমন যেন! লেখা পড়তে পড়তে রীতিমত আবেগাপ্লুত হয়ে যাচ্ছিলাম। অথচ কি রকম এক, সমস্ত গুলিয়ে দেওয়া পরিণতিতে ঠেলে দেয়া হল পড়ুয়াকে। স্বাধীনতার আন্দোলনের কথা বলবে বলে মনে হয়েছিল। তার বদলে গল্প শেষ হল ইংরেজদেরকেই দেশের দায়িত্ব নিতে বলে আর মুসলমানদের সমস্ত দোষের জন্য দায়ী করে। দায়ী করার ভাষাও ভাল লাগলনা। প্রায় রাত জেগে পড়া শেষ করে ছুটির সকালে ধরলাম বাবাকে, কেন এরকম করলেন লেখক, মানে কি হল এর। বাবা বলল, লেখক ইংরেজের প্রশাসনে বড় পদে কাজ করতেন। ইংরেজ-এর হাত থেকে বাঁচতে সে লোক নাকি ঐরকম কায়দা করেছিল। আর তাতে কাজও হয়েছিল। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জেলে যাননি কি চাকরি থেকে ছাঁটাই হননি। অথচ এই বইয়ে লেখা গান গেয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনের সৈনিকেরা প্রাণ বলিদান দিয়েছে। আমার মুখ দেখে বাবা বুঝল যে উত্তরটায় আমি খুশী হইনি। স্বীকার গেল যে ওনার মত শক্তিধর লেখক কাজটা সম্ভবত অন্য ভাবেও করতে পারতেন; এইভাবে করাটা, ভাল করেননি। তবে বাবার সাথে আমিও একমত হলাম যে ঐ বইয়ের ভাষা, গল্প বলার কায়দা এগুলো আমার জন্য নূতন অভিজ্ঞতা ছিল, শেখার মত ছিল। সম্ভবত এই পাঠ থেকেই আমার, বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাশের জন্য নয়, নিজের বোধের প্রেক্ষিতে ‘ক্রিটিকাল রিভিউয়ের’ অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

    দিন গড়াতে গড়াতে উত্তরবঙ্গ বাসের কালে আমার শেষ দুর্গাপূজা দেখার সময় এসে গেল। খানিকটা বড় হয়েছি, উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। একা একাই অনেকটা দূর ঘুরে আসি। সপ্তমীর দুপুরে প্যান্ডেলে গিয়ে হাজির হয়েছি। কাছাকাছি কেউ নেই সেই তখন। ঢাকীরাও কোথাও একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। আমি গোটা প্যান্ডেল জুড়ে ঘুরে বেড়ালাম। এক সময় চুপি চুপি বাঁশের বেড়া গলে মূর্তি যেখানে আছে সেই অংশে হাজির হলাম। ছোটদের কারও যাওয়া নিষেধ সেখানে। কি তীব্রভাবে যে বিশ্রী লাগার অনুভূতি হল! সামনে থেকে দেখতে অত সুন্দর! আর আড়ালে এই দশা – মাটি, কাঠ, খড়, রং নেই কোন, একেবারে উল্টো ছবি! বছর তিনেক আগে একবার একঝলক দেখে এতটা ধাক্কা খাইনি। এবার ভাল ভাবে জানা হল। দৃশ‍্যটা মনে বসে গেল।

    কাছে গেলে দেবতার, খসে পড়ে আংরাখা। আলো-ঝলমল অপরূপ রূপের আড়ালে – ঢাকা থাকে মাটি কাঠ খড়! ভ্রান্তিবিলাস পার করে অপার গরিমা জলে ভেসে চলে যায় – নিঃশেষে, আঁধারে।

    ***

    ক্যালিডোস্কোপে দেখার এই পর্যায় শেষ হল। কত যে চরিত্রদের দেখা বাকি রয়ে গেল! যাদের দেখলাম, তাদেরও সময়ে-অসময়ে আরও কত টুকরো ছবি ভেসে আসে, ধরা হলনা। আমি প্রকৃত ছিন্নমূল নই কারণ ছোট থেকেই ক্রমাগত ভেসে বেড়ানোয় আমার কোথাও কোন শিকড় গজায়নি। তাই বাস্তু হারানোর তীব্র বেদনা আমার নেই। যা আছে তা হল শিকড় না-থাকার শূন্যতার বোধ। আর আছে যা-চাই-তাই-পাই এমন জীবন নিয়ে জন্মে তারপর এক সময় সামনের কয়েকটা দিন বাদে খাবার কিভাবে জুটবে, কতটা জুটবে জানা নেই, এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ানোর বৈপরীত্যে দীর্ণ হওয়ার বেদনা সওয়ার অভিজ্ঞতা। ভালো লাগে যে সেই অন্ধকার সময় একদিন কাটিয়ে উঠেছি, আমি এবং আমার ভালোবাসার মানুষেরা, অন্তত বেশিরভাগ।

    আমার কাছাকাছি বয়সের মানুষদের আমার চেনা গন্ডির সমাজমাধ্যমে উপস্থিতি বেশি দেখিনা। ছোটবেলায় একসাথে পথ চলা যে কয়েকজন বন্ধু ফেসবুকে দেখা পেয়ে এগিয়ে এসেছে, প্রাথমিক দু-একটি কথাবার্তার পর তাদের থেকে আর সাড়া-শব্দ পাইনা। আমরা পরস্পরের বৃত্তের বাইরে চলে এসেছি। আরও পরের জীবনে যে বন্ধুদের পেয়েছি তাদের অনেকেই এই মাধ্যমে প্রবলভাবে হাজির, ব্যপক বিস্তৃত কাজের পরিধি নিয়ে। আমি তাদেরও গন্ডির বাইরে। অনলাইন লেখালেখির ছোট্ট একটু জগতেই এখন আমি নিজের যৎসামান্য সৃষ্টিশীল অস্তিত্বটুকু দেখতে পাই। তার মধ্যে প্রধান জগৎটি যে, সে এই গুরুচণ্ডা৯। জীবনের সিংহভাগ পার করে দিয়ে এমন একটি ঠেক মিলবে এ আমার কাছে এক অভাবিত প্রাপ্তি।
    ক্যালিডোস্কোপে দেখা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে এলেন, তাদের সবাইকে আমার অসীম কৃতজ্ঞতা জানাই। এবারের দেখার শেষে কোন ‘ক্রমশ’ থাকছেনা। সাধ্যে কুলালে সামনের বছর পরবর্ত্তী পর্যায় নিয়ে হাজির হওয়ার ইচ্ছা রাখি। উত্তরবঙ্গে বাস ছিল মাত্রই তিন বছরের, তাই পরের পর্যায়ে সেখান থেকে চলে আসার পরের দিনগুলি বেশি জায়গা করে নেবে। ভালো থাকবেন সবাই।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ৩২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৩৩539482
  • অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। লেখাটা পড়ার পরে মন খারাপ হয়ে গেলো। তাতে ক্ষতি নেই কোনো। আমি মনখারাপকে মূল্য দিতে জানি। এই লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ হয়ে থাকলেও আমি তা পড়িনি (গুরুর বাইরে অন্য কোনো বাংলা পত্রিকা পড়িনা)। এই লেখার পরতে পরতে একটা উদাস বিষন্নতা আছে। সেই বিষন্নতাটা আজকাল আপনার মধ্যে ছেয়ে থাকে বলে আমার মনে হয়। ছোটবেলার উৎসবের স্মৃতির ছবিগুলো গোলাপী আর ছাই দুটো রং নিয়ে দেওয়ালের ওপর দিয়ে চলে চলে যায়। বাবার বলা ঈশ্বর-চেতনা বড় মিষ্টি লাগে। কেমন শান্ত, সৌম্য। কতগুলো লাইন বড় বেশি ভালো লাগে -- "কাছে গেলে দেবতার, খসে পড়ে আংরাখা। আলো-ঝলমল অপরূপ রূপের আড়ালে – ঢাকা থাকে মাটি কাঠ খড়! ভ্রান্তিবিলাস পার করে অপার গরিমা জলে ভেসে চলে যায় – নিঃশেষে, আঁধারে।"

    এই লেখার শেষে "ক্রমশঃ" নেই... বিষাদ। কিন্তু আগেই বলেছি, আমি মনখারাপের মূল্য দিতে জানি। ক্যালিডোস্কোপ আবার অন্য পর্যায় নিয়ে ফিরে আসুক, অপেক্ষা থাকবে। মলাট পরে সেজেগুজে বেরোক, তারও অপেক্ষা থাকবে। দত্তক না জোটার অমূলক ভয়টা আর নাই বা পেলেন!
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:9165:c790:20cb:***:*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০১539483
  • এই পর্বটা ভীষন ভালো লাগলো, এমনকি অন্য কিছু পর্বের থেকেও বেশী ভালো লাগলো। প্রথম প্যারাগ্রাফটা তো অসাধারন! আমার ছোটবেলায় মাঝে মাঝে এরকম লোডশেডিং হতো, আর লন্ঠন এর আলোয় পড়তে বসতাম। খুব একটা পড়া অবশ্য হতো না, কারন দেওয়ালে ছায়াগুলোর দিকে তাকিয়ে নানান কল্পনা করতাম :-) আর আমার দাদু আর বাবার কথা মনে পড়ে গেলো। দাদু ছিল কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, ওনাকে নিয়ে আমাদের পরিবারে অনেক গল্প আছে। উনিও পুজো ইত্যাদির ঘোর বিরোধী ছিলেন, কিন্তু উনিও, আমার দিদার অনুরোধে, বাড়িতে পুজো চালু করেছিলেন। আরেকবার নাকি বাড়িতে কোন এক পরিবার সাহায্য চাইতে এসেছিল, উনি তাদের নিজের এবং স্ত্রীর জামাকাপড়, শাড়ি ইত্যাদি দিয়ে দিয়েছিলেন। তখন দিদা বাড়ি ছিলনা, ফিরে এসে জানতে পেরে মহা হৈচৈ করেছিল, কিন্তু পরে মেনেও নিয়েছিল। মার কাছে শোনা এসব গল্প :-)
  • পাপাঙ্গুল | 103.24.***.*** | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৪৮539485
  • হ্যাঁ এই পর্বটা আগে পড়েছি মনে হল। 'বই থেকে জানবা। বই পড়বা। সব রকম বই পড়বা।' yes
     
    বই বেরোচ্ছে এই সুসংবাদ ভাল লাগল। কেকের সঙ্গে একমত, দত্তক বা কে কিনবে সেগুলো নিয়ে তো আপনাকে ভাবতে হবে না। ঘষামাজা শেষ করে দু মলাটে চলে আসুক।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৭539499
  • @kk 
    ঠিকই, এই বিষণ্ণতা এখন সঙ্গী হয়ে গেছে। যেহেতু কোন একটিমাত্র কারণ থেকে এ আসেনি, অতএব, এ কোন ভাবে চলে যাবে, এমনও নয়। মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে পারলে তাই ভাল লাগে, তাতে বিষাদ না কাটলেও একে সাথে নিয়েই চলতে থাকাটা কিছুটা সহজ হয়। 
    'ক্রমশ' নেই, তবে পরের পর্যায় নিয়ে ফিরে আসার খুবই ইচ্ছা আছে, দেখা যাক।
    এই লেখা তোমার ভালো লাগা আমায় সবসময়ই পরের পর্ব লিখতে উৎসাহ দিয়েছে। 
    দত্তক পাওয়া নিয়ে, নাঃ, আমি আর কিছু ভাবছিনা এই নিয়ে। ভরসা দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আর heart নিও। 

    @dc
    এই পর্ব বিশেষ ভালো লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ জেনো।
    লন্ঠনের আলোয় গড়ে ওঠা দেওয়ালের কালো কালো ছায়াগুলো আমি যেন এখনও দেখতে পাই।
    তোমার দাদুর মত মানুষেরা বারে বারেই আমাদের চলতে থাকা জীবনের মাঝে ব্যতিক্রমী গল্পের ছবি এঁকে যান। 
     
    @পাপাঙ্গুল 
    তুমি যে লেখাটি চিনতে পারবে, এ আমি জানতাম। কিছুটা আয়তনে বেড়েছে, তবে ছবিটা একই রয়েছে। 
    বইয়ের জন্য ঘষামাজা চলছে। আশা করি সময়মত বের হয়ে যেতে পারবে। তোমার উৎসাহ পেয়ে ভালো লাগল খুব। 
     
  • মনমাঝি | ২২ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:০৯539554
  • স্মৃতিচারণটা দারুন লাগল এক লহমাদা! wink
    আপনার বাবার সাথে আপনার কথোপকথন আর বাড়িতে সব ধরণের বইয়ের প্রবেশ থাকার অংশটা আমার নিজের বাল্যকালকেও মনে করিয়ে দিল। কিছুটা এরকমই ছিল। বাবার সাথে ধর্ম, রাজনীতি অনেক বিষয়েই কথা হতো আমার বয়স অনুযায়ী। তবে যদ্দুর মনে পড়ে, তিনি কদাচিৎ সরাসরি নিজের মতামত দিতেন। বরং খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে (সদর্থে) আমার প্রশ্নের উত্তর আমার মুখ দিয়েই বের করার চেষ্টা করতেন। আমাকে ভাবতে বাধ্য করতেন।
    আর বই পড়ার ব্যাপারে তো উনিই (মা-ও) ছিলেন একাধারে আমার প্রধান উষ্কানিদাতা এবং পার্টনার ইন ক্রাইম!  ইন ফ্যাক্ট,বাবার সাথে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে,এমনকি কাড়াকাড়ি করেও, বই পড়তাম। কখনও উনি কিনে আনতেন এবং এনে লুকিয়ে রেখে আগে নিজে পড়ে তারপর আমাকে দিতেন। আমার জন্য লোভনীয় হতে পারে এমন কোন বই হলে সেটা নিউজ-পেপারের কাগজের মলাট দিয়ে ঢেকে পড়তেন যাতে আমি বুঝতে না পারি (এতেই বরং আসলে আমি বুঝে যেতাম! )। আবার কখনও আমিই বই আনতাম এবং একই কাজ করতাম। আবার এমন হতো যে,একজন যে বই এনে লুকিয়ে রেখেছি আগে নিজে পড়ার জন্য সেটা অন্যজন টের পেয়ে যেত। তখন তক্কে তক্কে থাকতাম কিভাবে অন্যজনের আনা বইটা আগেই হাইজ্যাক করা যায় বা সরানো যায় লুকনো স্থান থেকে।  হা হা হা...  
     
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২২ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০৭539560
  • বড় ভালো লাগল পর্বটা। বেশ খানিকটা রাস্তা গাছের ছায়ার মধ্যে দিয়ে হেঁটে এলাম। পাতার ফাঁক দিয়ে অল্প অল্প রোদ গায়ে এসে পড়ল যেন। বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৬539578
  • মাঝি-দাদা আপনার মন্তব্য এলে মনে হয় একটা আরেক রকমের ছোটবেলা ফিরে পেলাম। বহুকালের চেনা মানুষ, প্রাণের মানুষের দেখা পেলাম। দিল গার্ডেন গার্ডেন।
     
    আপনার বাবার সঙ্গে সখ‍্য আর বই নিয়ে খুনসুটির গল্প পড়ে খুব ভালো লাগল। (আমাদের বাড়িতে বাবার সাথে খুনসুটির চল ছিলনা)। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৮539586
  • অনেক ধন্যবাদ, রমিত! 
    বই - দেখা যাক। তুমি বরাবর উৎসাহ দিয়ে এসেছো। smiley
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন