এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • অর্থনীতির নোবেল, ২০২৪ -- প্রথম পর্ব

    Anirban M লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৭৫১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব
    আমার কৈফিয়ত

    গুরুচন্ডালিতে কখনো অর্থনীতির নোবেল নিয়ে লিখিনি। সত্যি কথা বলতে, অর্থনীতির নোবেল নিয়ে একবারই লিখেছিলাম সংবাদপত্রে, সেটা ব্যানার্জি, দুফলো আর ক্রেমার নোবেল পাওয়ার পরে (লিঙ্ক রইল, পড়ে দেখতে পারেন)। এই লেখাটা লিখব কিনা তা নিয়েও বেশ দোলাচলে ছিলাম। না লেখার মূল কারণ একটাই – এই সব লেখা আসলে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত। এটাতো গবেষণা নয়, তাই একাডেমিক বাজারে এর সেরকম কোন মূল্য নেই। আবার নিজের গবেষণা নিয়েও লেখা নয়, তাই নিজের ঢাক পেটানোর সু্যোগ কম। লেখার কারণ মূলতঃ দুটো। এক, আমি যখন বিদেশে পিএইচডি করতে যাই, তার কিছুদিন আগেই আচেমগলু (আমার এক টার্কিশ বন্ধু বলেছিল ঠিক উচ্চারণটা এর কাছাকাছি কিছু একটা), জনসন আর রবিনসন তাঁদের ২০০১ এর পেপার পাবলিশ করেছেন যা নিয়ে বেশ হইচই পড়ে গেছে (Acemoglu et al., 2001)। আমিও পিএইচডির দ্বিতীয় বছরে উঠে পেপারটা পড়ে এবং তার তাৎপর্য অনুধাবন করে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। এভাবে যে অর্থনীতির গবেষণা হতে পারে সেই ধারণা ছিল না আমার। কলকাতায় এমনিতেই আধুনিক অর্থনীতির গবেষণা দেরিতে এসে পৌঁছত তখন (এখনও দেরি হয়, শুধু সময়ের ফারাকটা ইন্টারনেট এসে কমেছে কিছুটা), তাই কলকাতা থেকে যাওয়া এক যুবকের মনে এইসব গবেষণা একটা নতুন হাওয়ার মত এসে লাগে। এই পেপার এবং আরো কিছু গবেষণাপত্র মিলে আমার নিজের গবেষণাকেও ইকোনমিক্স অব ইন্সটিটিউশন এবং অর্থনৈতিক ইতিহাসের দিকে ঠেলে দিল, যা আমি বিদেশ যাওয়ার আগে কোনদিন কল্পনাও করি নি। তাই আমার গবেষণা-ভাবনা গড়ে তোলার পেছনে যে কটি গবেষণাপত্রের গভীর প্রভাব আছে, আচেমগলুদের পেপার তার অন্যতম। দুই, যখন আমি দেশে ফিরে পড়াতে শুরু করি, কয়েকটি পেপার আমি সুযোগ পেলেই পড়িয়েছি। আচেমগলুদের পেপারটি তার অন্যতম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে এই পেপারটি আমি প্রায় দশ বছর ধরে পড়াচ্ছি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার প্রথম দিককার এক ছাত্র আমাকে মনে করালো যে তাদেরও আমি এই পেপারটি পড়িয়েছিলাম। সে আরো জানালো, এই পড়ানো চলাকালীন যারা “কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, দুত্তোরি” বলে বসে থাকত তারাও নাকি আচেমোগলুরা নোবেল পাওয়ার পরে বিশেষ ভাব নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্টিয়েছে! এছাড়া আমার এক বর্তমান পিএইচডি ছাত্রী আমাকে জানিয়েছিল যে সে এক সময় অর্থনীতি পড়া ছেড়ে দেবে ভেবেছিল। যে কয়েকটি পেপার পড়ে সে আবার অর্থনীতিতে আগ্রহ ফিরে পায় এবং গবেষণার পথে যায়, আচেমোগলুদের পেপারটি তার অন্যতম। তো সব মিলে এই বছরের নোবেলের সঙ্গে আমার কিছুটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে।

    আচেমগলুদের নোবেল নিয়ে বাজারে বেশ কিছু লেখা বেরিয়েছে। এইসব লেখার দুটি ধরণ আছে। একদিকে, বামপন্থী লোকজন “ঔপনিবেশিক চক্রান্ত” বলে ঢিল ছুঁড়েছেন। এই ঘরানার লেখার যুক্তির সফিস্টিকেশনের তারতম্য আছে, কিন্তু মোদ্দা বক্তব্য একই। এদের দেখে আমার তারাপদ রায়ের সেই অমোঘ পংক্তি মনে পড়ে যায় – “অঙ্ক-টঙ্ক বোঝে না, না বুঝেই বিক্ষুব্ধ”। দ্বিতীয় দলের লোকজন আরেকটু নিরপেক্ষ আলোচনা করেছেন। কিন্তু সেই আলোচনাগুলিতে একটু ধোঁয়াশা আছে। আমি এই লেখায় সেই ধোঁয়াশা কাটানোর চেষ্টা করব। আলোচনায় ঢোকার আগে একটা কথা বলে নেওয়া ভাল। কোন গবেষণা শেষ কথা বলে দিতে পারে না, বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞানে। সেই আশা রাখাটাও ঠিক না। সুতরাং সিরিয়াস পাঠকের বুঝে নেওয়া উচিত কোন গবেষণা কতটা পারল আর কতটা পারল না। আরেকটা ব্যাপার। নোবেল প্রাপকরা তো বটেই, সিরিয়াস গবেষণা যাঁরা করেন তাদের কাজের পেছনে অনেক ঘাম-রক্ত ঝরানোর ইতিহাস থাকে। কোন গবেষণার ভেতরে না ঢুকে “কিস্যু হয় নি” বলার মধ্যে কোন গৌরব নেই, বরং মুর্খের ঔদ্ধত্য আছে।
     
    উন্নয়ন অর্থনীতির দিক-বদল

    এই আলোচনাটি আরেকটু বড় পরিসরে, মান্যতাপ্রাপ্ত গবেষণাপত্র সাইট করে করা উচিত। কিন্তু যেহেতু এটা ব্লগ তাই আমি কিছুটা স্বাধীনতা নিচ্ছি। খুব বড় কোন ভুল চোখে পড়লে যদি কোন পাঠক জানান, সংশোধন করে নেব। উন্নয়ন অর্থনীতির চলার শুরু ১৯৫০’র দশকে, বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে, যখন একসাথে অনেক দেশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পায়। তখন বিশ্বনেতাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল এই দেশগুলিকে উন্নয়নের মানচিত্রে তুলে আনা। সেই সময় উন্নয়ন অর্থনীতির যে গবেষণাগুলি প্রকাশিত হচ্ছিল সেগুলি মূলৎ তাত্ত্বিক এবং তাদের মূল সন্ধানের বিষয়বস্তু ছিল এমন পলিসি বা পলিসিগুচ্ছের যা দারিদ্রের আবর্ত থেকে দেশগুলিকে মুক্ত করবে। এই সময়কার গবেষণার মূল বিষয় তাই ছিল এই প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যেমন,  প্রযুক্তি নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত – শ্রম নিবিড় বা পুঁজি নিবিড়, মুক্ত বাণিজ্যের পথে যাওয়া উচিত কিনা বা উৎপাদন ক্ষেত্র কীভাবে নির্বাচন করা উচিত (ব্যালেন্সড বনাম আনব্যালেন্সড গ্রোথ), কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রের সমণ্বয় ইত্যাদি। শেষোক্ত বিষয়টির মধ্যে ছিল কৃষির অতিরিক্ত শ্রমিককে কীভাবে শিল্পের দিকে চালনা করা যায় তাই নিয়ে অনেক গবেষণা যার মধ্যে আর্থার লুইস, হ্যারিস এবং টোডারো প্রমুখের কাজ বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্য। কিন্তু এই গবেষণাগুলি ছিল প্রায় সবই তত্ত্ব নির্ভর। আশির দশকে কমপিউটার এসে যাওয়ার পরে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে এবং এম্পিরিক্যাল বা তথ্যনির্ভর গবেষণা বাড়তে থাকে। যদিও নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত তত্ত্বের প্রাধান্য কমে নি। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে তত্ত্বের ধরণটা পাল্টাতে থাকে। এই সময় থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে যেসব তাত্ত্বিক গবেষণাগুলি অনেক বেশি মান্যতাপ্রাপ্ত প্রায়োগিক অর্থনীতির তত্ত্ব কাঠামোতে আস্তে শুরু করে। এই ব্যাপারটা বিশদে বলতে গেলে অনেকটা জায়গা চলে যাবে। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝানো যাবে। রোজেনস্টাইন-রোডান তাঁর বিখ্যাত বিগ-পুশ তত্ত্ব দিয়েছিলেন ১৯৪৩ সালে কিন্তু তাঁর আলোচনার ধরণটি ছিল বিবৃতিমূলক। ১৯৮৯ তে এসে সেই তত্ত্বকে একটা ফর্মাল, গাণিতিক চেহারা দিলেন মারফি, স্লেইফার আর ভিশনি (Murphy et al., 1989)।

    ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে এসে উন্নত কম্পিউটিং ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে উন্নয়ন অর্থনীতি আরো একবার বাঁক নিল। গরিব দেশ কেন গরিব আর বড়লোক দেশ কেন বড়লোক এটার একটি ডেটা সমৃদ্ধ উত্তর খোঁজার একটি চেষ্টা শুরু হল। এই পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখার চেষ্টা হচ্ছিল যে প্রতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নাকি প্রযুক্তি কোনটি এই বড়লোক দেশ আর গরিব দেশের পার্থক্য সব থেকে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারে। এই তিনটি মিলে এক বিরাট সংখ্যক গবেষণাকে ধারণ করতে পারে। আমি তাই শুধু প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব যেহেতু সেটিই আচেমগলুদের নোবেলের মূল বিষয়। ২০১০ এর পরেও আরো দু-একবার দিক-পরিবর্তন করেছে উন্নয়ন অর্থনীতি। কিন্তু আপাতত সে আলোচনা থাক।
     
    প্রতিষ্ঠান কী এবং কেন?

    প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ইন্সটিটিউশন। এর মানে কী? নব্য প্রতষ্ঠানের অর্থনীতির জনক এবং আরেক নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ডগলাস নর্থ প্রতিষ্ঠানকে “নিয়ম-কানুন এবং সেই সব নিয়মের রক্ষক সংস্থার সমষ্টি হিসেবে”(Rules of the Game)। পরে আভনার গ্রাইফ দিয়েছেন আরেকটু বিস্তারিত সংজ্ঞা যা নিয়মের পাশাপাশি প্রচলিত বিশ্বাস (norm) কেও প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু আচেমোগলুদের কাজ বোঝার জন্য নর্থের সংজ্ঞাই যথেষ্ট – প্রতিষ্ঠান মানে আইন কানুন এবং তার রক্ষক সংস্থা যথা, কোর্ট, পুলিশ বা রাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠান কী করে? প্রতিষ্ঠান আপনাকে পুরষ্কৃত করার মাধ্যমে কোন এক বিশেষ ধরণের কাজে উৎসাহিত করতে (যেমন বিনিয়োগ), আবার অন্য শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে অন্য ধরণের কাজে নিরুৎসাহিত করতে পারে (যেমন অপরাধ)। এখন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। তার মধ্যে মূলতঃ দু-ধরণের প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সহায়ক – সম্পত্তি মালিকানার সহায়ক প্রতিষ্ঠান (প্রপার্টি রাইট ইনস্টিটউশন) এবং চুক্তি সম্পাদনের সহায়ক প্রতিষ্ঠান (কন্ট্রাক্ট এনফোর্সমেন্ট ইনস্টিটিউশন)। নব্বই দশকের শেষ দিকে এবং শূণ্য দশকের শুরুতে যে গবেষণাপত্রগুলি বেশ হইচই ফেলে দেয় সেগুলি সম্পত্তি মালিকানার সহায়ক প্রতিষ্ঠান (সংক্ষেপে মালিকানা প্রতিষ্ঠান) সংক্রান্ত।

    আমি এই পর্যায়ে তিনটি গবেষকদলের কাজের কথা বলবঃ ১) এঙ্গারম্যান এবং শকোলফ, ২) লা পোর্টা, লোপেজ ডি সিলানেস এবং শ্লাইফার এবং ৩) আচেমোগলু, জনসন ও রবিনসন। এই তিনটি গ্রুপ ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ অবধি অনেক গুলি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন যাতে তাঁরা মালিকানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাতীয় আয়ের সম্পর্ক অনুসন্ধান করেন। এই তিনটি দলের প্রত্যেকেই দেখান যে মালিকানা প্রতিষ্ঠান ভালো হলে জাতীয় আয় বাড়বে। এর যুক্তিটি নতুন কিছু নয়। আধুনিক সমাজে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ।  মালিকানা প্রতিষ্ঠান পোক্ত না হলে যিনি বিনিয়োগ করছেন তাঁর লভ্যাংশ পাওয়া নিশ্চিত নয়। সেক্ষেত্রে এমন হতেই পারে যে কোন কারখানা লাভ করলে রাষ্ট্র সেটি কেড়ে নিতে পারে। তাই মালিকানা প্রতিষ্ঠান পোক্ত না হলে বিনিয়োগ কম হবে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও কম হবে। অন্যদিকে মালিকানা প্রতিষ্ঠানটি পোক্ত হলে বিনিয়োগ এবং জাতীয় আয় বাড়বে। এই যুক্তিকাঠামো অর্থনীতির লোকেরা বহুদিন ধরেই জানেন। কিন্তু নব্বই দশকের শেষের গবেষণাপত্র গুলি প্রকাশের আগে তেমন জোরদার প্রমাণ ছিল না।  উপরে পর্ণিত গবেষকদল এই তত্ত্ব্বটিকেই তথ্য দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের মধ্যে মূল পার্থক্য হল এই যে  ভালো মালিকানা প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে তাঁরা মেপেছেন তাঁর পদ্ধতিটি আলাদা। এবং কেন কোন জায়গায় ভালো প্রতিষ্ঠান হল আর অন্য জায়গায় খারাপ তার ব্যাখ্যাও তাঁরা আলাদা ভাবে দিয়েছেন।

    ১) এঙ্গারম্যান এবং শকোলফ (Engerman and Sokoloff, 2002) এঙ্গারম্যান এবং শকোলফের মূল বিচার্য বিষয় ছিল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়ন পথের বিভিন্নতা। উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার ঔপনিবেশিক ইতিহাস একই রকম, তা সত্ত্ব্বেও উত্তর, দক্ষিণের থেকে জাতীয় আয়ে এত এগিয়ে গেল কেন? তাঁদের মতে এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে এই দুই মহাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বিভিন্নতায়। উত্তরের জমি ছিল গম চাষের উপযোগী যাতে ইকনমিস অফ স্কেল নেই অর্থাৎ বড় জমিখন্ড বেশি উৎপাদনশীল এমন নয়। দক্ষিণ, অন্যদিকে তূলোচাষ, আখচাষ এবং খনিজ উত্তোলনের জন্য উপযোগী এবং সেখানে বিনিপয়সার ক্রীতদাস এবং কম মজুরির আমেরিকান নেটিভদের (যারা মূলত ইনকাদের বংশধর) দিয়ে ইকনমিস অফ স্কেল পাওয়া সম্ভব। এর ফলে দক্ষিণের উপনিবেশগুলি এমন আইন কাঠামো তৈরি করে যা জমির অসম বন্টন জিইয়ে রাখার মাধ্যমে গণতন্ত্রের পরিবর্তে অভিজাততন্ত্রকে স্থাপন করে। উত্তরে অন্যদিকে কৃষি ছিল মূলত পারিবারিক, জমির বন্টন সুসম এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি তুলনামূলক ভাবে গণতান্ত্রিক। এঙ্গারম্যান ও শকোলফের বিরোধিতা করে পরবর্তী কালে ন্যাথান নান (Nunn, 2007) দেখান যে আসলে জমি বন্টনের অসাম্যে নয়, সমস্যার মূল লুকিয়ে আছে দাসপ্রথার মধ্যে। আমেরিকার যেসব জায়গাতে কৃষিতে দাস ব্যবহার করা হত সেখানে প্রতিষ্ঠানও অভিজাততান্ত্রিক যা ভবিষ্যত উন্নয়নের পথ রোধ করেছে।

    ২) লা পোর্টা, লোপেজ ডি সিলানেস এবং শ্লাইফারঃ এনাদের অনেকগুলি গবেষণাপত্র আছে। সবগুলির সারাংশ, তাদের বিরুদ্ধ মতের সারাংশ এবং লেখকদের উত্তর ইত্যাদির জন্য আপনারা (La Porta and Shleifer, 2014) দেখতে পারেন। এঁদের মূল বক্তব্য ছিল যে পৃথিবীতে সর্বাধিক প্রচলিত দুটি আইনি ব্যবস্থা কমন ল (বৃটিশ) এবং সিভিল ল (ফ্রেঞ্চ/স্প্যানিশ)-এর মধ্যে মালিকানার অধিকার কমন ল তে বেশি। কেন এরকম হল তার তিনটি তত্ত্ব আছে যা তাঁরা উপরোক্ত পেপারেই আলোচনা করেছেন। এর ফলে কমন ল প্রচলিত যে দেশগুলিতে আর্থিক বৃদ্ধির হার বেশি। এই বিষয়ের ওপরে লা পোর্টারা ১৯৯৭ থেকে শুরু করে অনেকগুলি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। অন্যদিকে অনেকেই লা পোর্টাদের প্রতিপাদ্যের বেশ বিস্তারিত সমালোচনা করেন। উপরোক্ত পেপারটিতে সেই সব সমালোচনা এবং লা পোর্টাদের উত্তর বেশ বিস্তারিত ভাবেই আছে।

    ৩) এই সিরিজে তিন নম্বরে আছে আচেমোগলুদের গবেষণা। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে ঢোকার আগে কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ে ঢুকতে হবে যা না বুঝলে আচেমোগলুদের গবেষণার গুরুত্ব বোঝা যাবে না।
     
    কার্য-কারণ সম্পর্ক বিষয়ে কিছু কথা

    সম্পত্তির মালিকানা সুরক্ষিত থাকলে যে বিনিয়োগ বাড়বে এবং তার ফলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হবে এটা অর্থনীতিতে কোন নতুন কথা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল এটা ডেটাতে কী ভাবে দেখানো যায়? এমনিতে অর্থনীতিতে (এবং আরো অন্য বিষয়েও) ডেটা থেকে কার্য কারণ দেখানোর উপায় হচ্ছে রিগ্রেসন। রিগ্রেসন কী ও কেন সেটা এই আলোচনার পরিধির বাইরে। এটুকু শুধু বলার যে রিগ্রেসনে একটি নির্ভরশীল চলক (dependent variable) থাকে এবং একটি স্বাধীন চলক (independent variable) থাকে। রিগ্রেসন দেখায় যে স্বাধীন চলক, নির্ভরশীল চলককে প্রভাবিত করছে কিনা। এক্ষেত্রে স্বাধীন চলকটি হল সম্পত্তি মালিকানার সুরক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং নির্ভরশীল চলকটি হল জাতীয় আয়। কিন্তু এই যে আমরা একটি চলককে স্বাধীন বলছি আরেকটিকে নির্ভরশীল সেটি কিন্তু আমাদের অনুমান। কিন্তু যদি সে অনুমান ভুল হয়? অর্থাৎ, যদি জাতীয় আয় স্বাধীন আর প্রতিষ্ঠান নির্ভরশীল হয়? এটাতো হতেই পারে যে কোন দেশের জাতীয় আয় বাড়ার পরে সে ভালো প্রতিষ্ঠান তৈরি করল, তাই না?  রিগ্রেসন কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। আপনি স্বাধীন কে নির্ভরশীল করে রিগ্রেসন করলেও তা থেকে একই রকমের সম্পর্ক পাবেন। অর্থাৎ, দু’ভাবেই হয়ত আপনি পেলেন সম্পর্কটি সমানুপাতি – জাতীয় আয় এবং প্রতিষ্ঠানের গতি একই দিকে যায়। কিন্তু কে কার্য আর কে কারণ তা না বুঝলে তো এই জানার কোন মানে নেই। এছাড়া আরেকটা সম্ভাবনা হল হয়ত প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় আয় দুটোই নির্ভরশীল, স্বাধীন হয়ত তৃতীয় কেউ যাকে আমরা মাপতে পারছি না তাই সে বাদ গেছে (omitted). এই সমস্যাটি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয় নব্বই-এর দশকে এসে। তার আগেও এই সমস্যা নিয়ে লোকে ভাবেনি তা নয় কিন্তু তার ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ ছিল। এর ফলে একটা নতুন ভাবে ভাবা শুরু হল ডেটা সংক্রান্ত কাজ নিয়ে। এই ইতিহাস নিয়ে এতটা বিস্তারিত বলছি কারণ আচেমোগলুদের গুরুত্ব ঠিক কোথায় সেটা বুঝতে গেলে মেথডোলজির এই বিষয়টা বোঝা দরকার।

    এই সমস্যাটা যেভাবে সমাধান করার ভাবা হল সেটা রাশিবিজ্ঞানের গাণিতিক মডেলের বাইরে গিয়ে – রিসার্চ ডিসাইন দিয়ে। এই পুরো পরিবর্তনকে অনেক সময় credibility revolution বলা হয়। আপনি বিশদ জানতে চাইলে আরেক নোবেল জয়ী অ্যাঙ্গরিস্টের লেখা পড়ে দেখতে পারেন (Angrist and Pischke, 2010)। সমাধানের মূল ভাবনাটা এসেছে বিজ্ঞান বা আরো ভালো করে বললে চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোন ওষুধের কার্যকারিতা কী ভাবে পরীক্ষা করা হয়? রোগীদের মধ্যে কিছু রোগীকে র‍্যানডম ভাবে বেছে নিয়ে তাদের প্রকৃত ওষুধ দেওয়া হয় আর বাকিদের প্লাসিবো (ওষুধের মত দেখতে, কিন্তু ওষুধ নয়) দেওয়া হয়। তারপর দেখা হয় ট্রিটমেন্ট (যারা ওষুধ পেলেন) এবং কন্ট্রোল (যাঁরা প্লাসিবো পেলেন) গ্রুপের সেরে ওঠার মধ্যে কোন তারতম্য আছে কিনা। যদি ওষুধ পাওয়া লোকেরা, না পাওয়া লোকেদের তুলনায় তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে তাহলে ওষুধটি কার্যকরী। এবার যেকোন সামাজিক বা অর্থনৈতিক পলিসিকে ওষুধের মত করে ভাবুন। কিন্তু ওষুধ দেওয়ার যে কার্যকারিতা সেটা বোঝার জন্য ট্রিটমেন্ট এবং কন্ট্রোল গ্রুপের নির্বাচন র‍্যানডম হতে হবে। সামাজিক পলিসির ক্ষেত্রে সেটা কীভাবে করা সম্ভব? এখান থেকে অর্থনীতির গবেষণা দুটো দিকে চলে গেছে। একদল অর্থনীতিবিদ সামাজিক পলিসির প্রয়োগও র‍্যানডমাইসড কন্ট্রোল ট্রায়ালের (RCT) মাধ্যমে করে দেখছেন সেই পলিসি কার্যকর কিনা। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভাল যে সরকারি পলিসি তো র‍্যানডম ভাবে একদলকে দিয়ে অন্য দলকে বঞ্চিত করা যায় না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই পাইলট পর্বের কাজ RCT করে তার কার্যকারিতা দেখে নেওয়া হয়। গবেষণাপত্র হিসেবে সেই ফলাফলই প্রকাশিত হয়। কিন্তু সবক্ষেত্রে তা করা সম্ভব না। যেমন, সম্পত্তির মালিকানার অধিকার সংক্রান্ত আইন কোন দেশে কী হবে তা তো র‍্যান্ডমভাবে ঠিক করা সম্ভব না। তাই অন্যদলের অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার আকস্মিকতাকে ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে সামাজিক বা অর্থনৈতিক নীতির প্রয়োগে র‍্যান্ডমত্ব খুঁজে নিচ্ছেন। ২০১৯ এর অর্থনীতির নোবেল গেছে এই প্রথম ধরনের গবেষণার দিকে, পেয়েছিলেন অভিজিত ব্যানার্জি, এস্থার দুফলো আর মাইকেল ক্রেমার। অন্যদিকে ২০২১ এর নোবেল গেছে দ্বিতীয় ধরণের গবেষণার দিকে যা পেয়েছিলেন ডেভিড কার্ড, জশুয়া অ্যাঙ্গরিস্ট আর গুইদো ইমবেনস। আচেমোগলুদের গবেষণা এই দ্বিতীয় ঘরানার।
     
    কলোনি সাদা না কলোনি কালো?

    আরেকবার মনে করিয়ে দিই আচেমোগলুদের মূল প্রশ্নটিঃ সম্পত্তির মালিকানার অধিকার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জোরদার হলে কি দেশের জাতীয় আয় বাড়ে? এই প্রশ্নটি দেখার জন্য মালিকানা প্রতিষ্ঠানের মানের মধ্যে একটা ভেরিয়েশন দরকার এবং একই সঙ্গে সেটা স্বাধীন ভাবে নির্ধারিত হতে হবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই আচেমোগলুরা তাকালেন পূর্বতন কলোনিদের দিকে। মনে রাখতে হবে এই যে কলোনিদের নিয়ে কাজ তার কারণ এটি একটি স্ট্র্যাটেজি,  ঐতিহাসিক একটি ঘটনাকে ব্যবহার করে রিসার্চ ডিসাইন তৈরি করার স্ট্র্যাটেজি। এর মধ্যে ঔপনিবেশিক মানসিকতার ছায়া খোঁজা অর্থহীন। আমরা যদি এই কলোনিদের দিকে তাকাই তাহলে দেখব কিছু কলোনির মাথাপিছু জাতীয় আয় অনেক বেশি এবং মুলত সেখানে সাদা লোকের বাস। আমরা এদের বলি সাদা কলোনি (যেমন আমেরিকা, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়া)। আবার অনেক কলোনির মাথাপিছু জাতীয় আয় তুলনায় অনেক কম, সেখানে অ-সাদা লোকের বাস বেশি (যেমন ধরুন ভারত বা নাইজিরিয়া)। এখন সাদা কলোনিতে মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইউরোপের মত, সেখানে কালো কলোনিতে প্রতিষ্ঠান এই সব অধিকার অনেক দুর্বল। স্বাধীনতার আগেও এইসব প্রতিষ্ঠান যা ছিল, স্বাধীনতার পরেও তার অনেকগুলিই থেকে যায়। মনে করে দেখুন এরকমই একটি মালিকানা প্রতিষ্ঠান হল জমি অধিগ্রহণ আইন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে হইচই এর সময় সবাই খেয়াল করলেন আইনটি আসলে বৃটিশ আমলের। এরকম আরো উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু কীভাবে ঠিক হল কোন কলোনিতে কেমন আইন চলবে? আচেমোগলুরা দেখাচ্ছেন এর মূলে আছে বিভিন্ন কলোনির রোগের পরিবেশ। ইউরোপিয়ানরা যখন প্রথম বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া শুরু করে তখন কোন কোন কলোনিতে অনেক বেশি লোক মারা যাচ্ছিল। যেমন ভারত বা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ম্যালেরিয়া বা অন্য মশা-মাছি বাহিত রোগে অনেক বেশি সাহেব মারা যায় আমেরিকার তুলনায়। তাই সাহেবরা বুঝে যায় যে কিছু দেশে গিয়ে বেশি সংখ্যায় লোকের থাকার উপায় নেই। সেই সব দেশে তারা এমন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন যা শোষনমূলক অর্থাৎ যা দিয়ে কম সংখ্যক সাহেব বেশি সংখ্যক অ-সাহেব দের  শাসন করতে পারে। আবার যেখানে তারা বেশি সংখ্যায় থাকতে পারবে সেখানে এমন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে যা ইউরোপের মতই। আচেমোগলুরা বিভিন্ন রাশিবিজ্ঞানের পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখান যে যেসব জায়গায় প্রাথমিক ভাবে ঔপনিবেশিকদের মৃত্যুহার (settler mortality) বেশি, সেইসব জায়গায় ঐতিহাসিকভাবেই মালিকানা প্রতিষ্ঠান দুর্বল, এবং সেইসব জায়গায় সমসাময়িক মালিকানা প্রতিষ্ঠানও দুর্বল ও তার জন্য জাতীয় আয়ও কম।

    একই পদ্ধতি অবলম্বন করে আচেমোগলুরা দেখান যে পুর্বতন কলোনিদের মধ্যে ১৫০০ সালে যারা ধনী ছিল (যেমন ভারত, মেক্সিকো বা মিশর), তারা ২০০০ সালে এসে গরীব হয়ে পড়ছে আমেরিকা, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের তুলনায় যারা ১৫০০ সালে তুলনায় গরীব ছিল। এই ঘটনাকে তাঁরা নাম দেন Reversal of Fortune (Acemoglu et al., 2002). কারণ হিসেবে এই সাদা কলোনি, কালো কলোনির তত্ত্বই দিয়েছেন। এখানে বলে রাখা ভালো সাদা কলোনি, কালো কলোনি শব্দ-বন্ধ আমি ব্যবহার করেছি বিষয়টি বোঝানোর জন্য। আচেমোগলুরা প্রতিষ্ঠানের এবং মৃত্যুহারের কন্টিনিউয়াস পরিমাপ ব্যবহার করেছেন।

    পরিশিষ্ট

    শেষে কয়েকটা কথা বলে নি। আচেমোগলুদের নোবেল সংক্রান্ত বেশিরভাগ আলোচনাতেই আলোচনা হচ্ছে Why Nations Fail? বইটি নিয়ে। আমি সচেতনভাবেই বইটিকে আলোচনার বাইরে রাখলাম। কারণ বইটির লেখক আচেমোগলু এবং রবিনসন, জনসন সেখানে নেই। অথচ নোবেল কিন্তু তিনজনেই পেয়েছেন। এছাড়া বইটির ভিত্তি লুকিয়ে উপরে আলোচিত গবেষণাপত্র এবং আরো কিছু গবেষণাপত্রে। এছাড়া ২০০০ সালের আশেপাশে এবং তার পরেও অনেক উচ্চমানের কাজ প্রকাশিত হয়েছে প্রতিষ্ঠান এবং আর্থিক বৃদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে। অত কাজ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে লেখাটি দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে বলে আমি সেগুলি বাদ দিয়েছি। উৎসাহী পাঠক খুঁজে পড়ে নিতে পারেন।

    আমার এই লেখাটি লেখার একটা বড় কারণ আচেমোগলুদের কাজ নিয়ে নানারকম ভুল ধারণা চলছে দেখতে পাচ্ছি। কোন বছর অর্থনীতির নোবেল নিয়ে এত আলোচনা দেখি না। সমস্যা হল যারা লিখছেন, বিশেষত সমাজমাধ্যমে তাঁরা উপনিবেশ, ইতিহাস এইসব দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আলোচনায়, আচেমোগলুদের গবেষণায় উপনিবেশ কেন ব্যবহৃত হয়েছে তা সম্যক উপলব্ধি না করেই ( কবি তারাপদ রায়ের “অঙ্ক-টঙ্ক বোঝে না, না বুঝেই বিক্ষুব্ধ” স্মর্তব্য)। আরেকবার মনে করিয়ে দিই আচেমোগলুরা উপনিবেশদের দেখেছেন একটি ইকোনোমেট্রিক সমস্যা সমাধান করার জন্য। এবং সেটা করতে তাঁরা যে অসামান্য মেধা এবং কল্পনাশক্তির প্রয়োগ করেছেন তাকে কুর্নিশ না করে উপায় নেই। সুতরাং, যাঁরা ভারত-চিন তুলনা কেন হচ্ছে না জাতীয় আওয়াজ তুলছেন তাঁদের মনে করিয়ে দিই যে যেহেতু চিন উপনিবেশ নয় তাই এই যে রাশিবিজ্ঞানের পদ্ধতি আচেমোগলুরা ব্যবহার করেছেন (সেটলার মর্টালিটি কে  ইন্সট্রুমেন্টাল ভেরিয়েবল হিসেবে ব্যবহার) তা চিনের ক্ষেত্রে পাওয়া সম্ভব না।

    কিন্তু তার মানে এই নয় আচেমোগলুদের সমালোচনা হয় না বা করা যায় না। কিন্তু তা আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। এরকম একটি জোরালো সমালোচনা করেছিলেন ডেভিড আলবুয়ি (David Albouy). তিনি দেখিয়েছিলেন আচেমোগলুদের ফলাফলগুলি যথেষ্ট রোবাস্ট নয়। ডেটা সংক্রান্ত অনুমান একটু পাল্টালে তাঁদের ফলাফল থাকে না, বা দুর্বল হয়ে যায়। আলবুয়ি প্রথমে ব্লগে লিখে এই অভিযোগ আনেন এবং খুব দ্রুতই দুপক্ষের মধ্যে তীব্র বিতর্ক বেধে যায়। শেষমেষ আমেরিকান ইকোনমিক রিভিউ দুপক্ষের বক্তব্য ২০১২ এর একটি সংখ্যায় প্রকাশ করেন ((Acemoglu et al., 2012; Albouy, 2012)। উৎসাহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন। আমি এক সময় এই দুটো পেপার ক্লাসে পড়াতাম। তাই বলতে পারি আলবুইর অভিযোগের যথেষ্ট সারবত্তা আছে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম এই দুটি পেপার নিয়ে বিশদে আলোচনা করব। কিন্তু এখনই প্রবন্ধের দৈর্ঘ্য ৩০০০ শব্দের বেশি হয়ে গেছে। এত লম্বা লেখা কে পড়বে কে জানে! তাই আর লেখা না বাড়ানই ভাল। বাকিটা পরের পর্বে। 

     দ্বিতীয়পর্বঃ  https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=31467

    তথ্যসূত্রঃ
    Acemoglu, D., Johnson, S., Robinson, J.A., 2012. The Colonial Origins of Comparative Development: An Empirical Investigation: Reply. Am. Econ. Rev. 102, 3077–3110. https://doi.org/10.1257/aer.102.6.3077
    Acemoglu, D., Johnson, S., Robinson, J.A., 2002. Reversal of Fortune: Geography and Institutions in the Making of the Modern World Income Distribution*. Q. J. Econ. 117, 1231–1294. https://doi.org/10.1162/003355302320935025
    Acemoglu, D., Johnson, S., Robinson, J.A., 2001. The Colonial Origins of Comparative Development: An Empirical Investigation. Am. Econ. Rev. 91, 1369–1401. https://doi.org/10.1257/aer.91.5.1369
    Albouy, D.Y., 2012. The Colonial Origins of Comparative Development: An Empirical Investigation: Comment. Am. Econ. Rev. 102, 3059–3076. https://doi.org/10.1257/aer.102.6.3059
    Angrist, J.D., Pischke, J.-S., 2010. The Credibility Revolution in Empirical Economics: How Better Research Design Is Taking the Con out of Econometrics. J. Econ. Perspect. 24, 3–30. https://doi.org/10.1257/jep.24.2.3
    Engerman, S.L., Sokoloff, K.L., 2002. Factor Endowments, Inequality, and Paths of Development Among New World Economics. Working Paper Series. https://doi.org/10.3386/w9259
    La Porta, R., Shleifer, A., 2014. Informality and Development. J. Econ. Perspect. 28, 109–126.
    Murphy, K.M., Shleifer, A., Vishny, R.W., 1989. Industrialization and the Big Push. J. Polit. Econ. 97, 1003–1026. https://doi.org/10.1086/261641
    Nunn, N., 2007. Slavery, Inequality, and Economic Development in the Americas: An Examination of the Engerman-Sokoloff Hypothesis [WWW Document]. URL https://mpra.ub.uni-muenchen.de/5869/ (accessed 11.12.24).

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব
  • প্রবন্ধ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৭৫১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
    আরও পড়ুন
    বটগাছ - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৭539429
  • ভীষণ জরুরি লেখা। পুরো বিষয়টা আরো পরিষ্কার হয়ে গেল লেখাটা পড়ে। ওনাদের কাজের অনেক দিকই আরো ভালো ভাবে বোঝা গেল আপনি সাথে কিছুটা কন্টেক্সট দিয়ে দেওয়ায়। এই লেখাটা যদি সম্পাদকীয় বিভাগে বেরোত আরো ভালো হত মনে হয়। আমি গুরু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এই বিষয়ে।
  • দেবাঞ্জন ব্যানার্জী  | 115.187.***.*** | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:১৭539430
  • লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ একটা খুব জটিল বিষয়কে খুব সহজ সরল ভাবে প্রেসেন্ট করায় | তবে একটি প্রশ্ন রয়েই গেলো | উন্নয়নশীল বিশ্ব (যদিও এখন দক্ষিণী বিশ্ব ( গ্লোবাল সাউথ ) শব্দটি প্রয়োগ করা হয় ) এর অর্থনীতির ব্যাপারে rostow প্রথমে modernization থিওরি তুলে এনেছিলেন যেখানে মূলতঃ উন্নয়নশীল বিশ্বের আর্থিক সমস্যার জন্যে তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে বড় করে দেখানো হত | পরবর্তীকালে এই তত্ত্ব খণ্ডন করে সামীর আমিন প্রভৃতি অর্থনীতিবিদ dependency theory নিয়ে আসেন যেখানে পোস্ট-কলোনিয়াল রাষ্ট্রগুলোর আর্থিক বিকাশের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা ​​​​​​​হিসাবে তাদের কলোনিয়াল প্রভুদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক সম্পর্ক external dependencies কে দেখানো হয়েছিলো | এই তত্ত্ব বাজারে আসে মূলতঃ ষাট ও সত্তরের দশকে | এর পর থেকে ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকসের প্রায় ​​​​​​​সব তত্ত্বই এসেছে (যেমন নব্বই দশকের শুরুতে আসে বিশ্বায়ন তত্ত্ব ) এই external dependencies তত্ত্ব কে খারিজ করে | তা আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে এই আচেমোগলু সাহেবদের কাজ কি মূলতঃ এই dependency theory ​​​​​​​তত্ত্বের বিরোধিতা করেই ? 
     
     
  • Debasis Bhattacharya | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫৮539432
  • ভাল, স্বচ্ছ এবং একদমই নো-নন্সেন্স লেখা। এবং, খুব ইন্টারেস্টিং। রেফারেন্স-গুলো সাধ্যমত পারসু করবার চেষ্টা করব। 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৫২539434
  • অসাধারণ।

    আপনি অর্থনীতিকে প্রাঞ্জল ভাবে হাজির করেছেন। ক্যালকুলাস না জেনেও আপনার লেখা পড়ে মানুষ বুঝতে পারবে । তারাপদ রায়ের কথার মতো বলতে পারি অঙ্ক টঙ্ক না জেনেও ইকোনমিকস যে বোঝা যায়,  আপনি সেটা সাক্ষাৎ প্রমাণ করেছেন ।

    প্রথমে একটা তুচ্ছ মন্তব্য

    তুরস্কের সঙ্গে কাজের যোগাযোগের দরুন নামগুলো চিনতে হয়েছিল, ফোনেটিকালি ।  Acemoğlu
     উচ্চারণ আজেমোলু । তুর্কিতে C র উচ্চারণ জ যেমন কাচ cam (জাম , যেটা আমরা হিন্দি উর্দুতেও পাই) ğ সাইলেন্ট শুধু আগের স্বরবর্ণকে দীর্ঘায়িত করে।  

    শুধুমাত্র আপনার লেখা পড়েই লিখছি-

    ক্লাসিকাল তাত্ত্বিক অর্থনীতির সঙ্গে এম্পিরিকাল অর্থনীতি চর্চার বিশাল পার্থক্য আছে । আমার মনে হয় তথ্য ভিত্তিক অর্থনীতি সহজবোধ্য – অ্যাডাম স্মিথের অদৃশ্য হাতের গল্প পড়ানো হয়েছিল ক্লাসে।  আজ মনে হয় অদৃশ্য হাতই যদি এমন সর্বময় তাহলে এতো পড়াশোনার আর dy/dx করে কি হবে ? তবে এম্পিরিকাল চর্চায় ডেটা পয়েন্ট এবং , অর্থনীতিকের অভিশাপ -অ্যাসামপশন গুলো  আমাদের যে কোন দিকে নিয়ে  যেতে পারে ।

    “একই পদ্ধতি অবলম্বন করে আচেমোগলুরা দেখান যে পুর্বতন কলোনিদের মধ্যে ১৫০০ সালে যারা ধনী ছিল (যেমন ভারত, মেক্সিকো বা মিশর), তারা ২০০০ সালে এসে গরীব হয়ে পড়ছে আমেরিকা, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের তুলনায় যারা ১৫০০ সালে তুলনায় গরীব ছিল। এই ঘটনাকে তাঁরা নাম দেন Reversal of Fortune (Acemoglu et al., 2002)”

    এর উলটো উদাহরণ পর্তুগাল। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ পর্বে তারা মাঝারি শক্তি - ১৪৮১ থেকে সমুদ্রে নৌকো ভাসিয়ে বিশ্বজয়ে বেরিয়েছিল, ১৪৯৮ তে ভারত আগমন – মাকাউ থেকে ব্রাসিল , অ্যাঙ্গোলা মোজাম্বিক তাদের সাম্রাজ্য , ইউরোপের ধনী দেশ । কলম্বাস উলটোমুখে ভারতের সন্ধানে গেলেন । স্পেন দক্ষিণ আমেরিকার বেশীটা জয় করল। আজ এই ২০২৪ সালে কেন  গ্রিসের পরেই পর্তুগাল ইউরোপের দরিদ্রতম দেশ?

    উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা দেখতে গেলে পুরনো কমিউনিস্ট দেশগুলির ডেটা কাজে লাগতে পারে। গত শতাব্দীর ছয় ও সাতের দশকে ইউগোস্লাভিয়ার  গ্রোথ রেট পশ্চিমে ইউরোপে পিছনে ফেলে দিয়েছিল।

    কলোনি সাদা না কলোনি কালো?

    “ইউরোপিয়ানরা যখন প্রথম বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া শুরু করে তখন কোন কোন কলোনিতে অনেক বেশি লোক মারা যাচ্ছিল। যেমন ভারত বা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ম্যালেরিয়া বা অন্য মশা-মাছি বাহিত রোগে অনেক বেশি সাহেব মারা যায় আমেরিকার তুলনায়। তাই সাহেবরা বুঝে যায় যে কিছু দেশে গিয়ে বেশি সংখ্যায় লোকের থাকার উপায় নেই। “
    মৃত্যু হার দিয়ে দেখতে গেলে প্রশ্ন ওঠে একান্ত প্রতিকূল স্থানীয় জনতা, ম্যালেরিয়া উপেক্ষা ডাচ ও ইংরেজ দক্ষিণ আফ্রিকায় বাসা বাঁধলেন কেন ? সোনা হীরে তো আবিষ্কার  হয়েছে তার একশ বছর  বাদে। নামিবিয়াতে চল্লিশ হাজারের বেশী জার্মানের বাস , তাদের হাতে শিল্প ও কৃষি অথচ গত  দেড়শ বছরে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন হয়েছে তিন বার। জার্মানরা দেশ ছাড়েন নি , ব্যবসা বন্ধ করেন নি , উৎখাত হন নি । অ্যাঙ্গোলা মোজাম্বিকের মৃত্যু হার পর্তুগিজদের ভীত করে নি , বরং আজ এই দ্বিতীয় ডিপ্রেশনের পরবর্তী কালে ওই দুই দেশ থেকে পর্তুগালের পরিযায়ীদের কাছ থেকে লিসবনে  আসে প্রভূত ডলার।

    ঘুরে ফিরে হয়তো আলবুইর কথাটা মানতে হয়- ডেটা পয়েন্ট আর অ্যাসামপশন বদলালে অঙ্কটা বদলে যেতে পারে এবং যায় । আপনার যেটি পছন্দ সেটি নিয়ে যদি কাজ করেন, উত্তরটা তেমন হবে। বেন বারনাঙ্কের সেই অমর উক্তি মনে পড়ে – Not all information is beneficial !
     
  • Anirban M | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১৬539435
  • দেবাঞ্জন বাবু, ধন্যবাদ! আপনি রস্টো আর ডিপেন্দেন্সি থিওরির কথা বলেছেন। এ দুটোই আমরা আন্ডারগ্র্যাড এ পড়তাম। রস্টো আমার কোনদিন ই পছন্দ হয় নি। রস্টোতে তত্ত্বের এলিগ্যান্স নেই। যদি মেইনস্ট্রীম তত্ত্বের বাইরের থিওরি বলেন আমি বলব, মার্ক্স যেকোন দিন অনেক বড় মাপের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক। এবং এটা কিন্তু মোটের ওপর সবাই মানেন। ডিপেন্ডেন্সি থিওরিও তত্ত্ব হিসেবে বেশ খারাপ। কিন্তু তার উত্থানের একটা প্রেক্ষাপট আছে। সত্তরের দশকে এশিয়া, লাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব মাথা চাড়া দিচ্ছে। কোন্ড ওয়ারের সেই পৃথিবীতে মার্কিন ব্লক মুক্ত বাণিজ্যের কথা বলছে। সেইরকম একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ডিপেন্ডেন্সি স্কুল বলে মুক্ত বাণিজ্য মুক্তি আনতে পারবে না কারণ উন্নয়নশীল দেশ চিরকাল প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানি করে যাবে এবং পশ্চিমের পদানত থেকে যাবে। অর্থাৎ এখানে বিপদটা বাইরের। এরপর অনেক জল গড়িয়েছে। চিন ও পূর্ব এ্রশিয়ার উত্থান দেখেছি আমরা। ডিপেন্ডেন্সি স্কুলের ভবিষ্যবাণী ফলে নি। আচেমগ্লুদের মতে বিপদটা আসলে ঘরের। আমাদের মত কলোনি শাসন করার জন্য সাহেবরা ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল অল্প কিছু সাহেবের হাতে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেশি সাহেবরা বিলিতি সাহেবদের জায়গা নিল। তারা আইন পালটে ইনক্লুসিভ আইন করল না, কয়েকজনের হাতে ক্ষমতা রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করল। তাই আচেমগ্লুদের বক্তব্য ডিপেন্ডেন্সি স্কুলের সঙ্গে কোন ডায়ালগে যায় না এবং অনুন্নয়নের অন্য একটি গভীরতর কারণের কথা বলে। 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৬539437
  • আজেমলুর নামের ব্যাখ্যা করলাম আপনি সে প্রসঙ্গটা তুলেছেন বলে ! অবশ্য উনি তাঁর নামের উচ্চারণ অ্যাঙলীসাইজ করে নিয়ে আসেমগলু বলেন বলে জানা যায় 
  • Anirban M | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৮539438
  • হীরেনবাবু, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পর্তুগালের উদাহরণ এক্ষেত্রে খাটে না। কারণ পর্তুগাল কলোনাইজার, সে নিজে কলোনি নয়। আচেমোগ্লুদের তত্ত্ব এবং ডেটা পূর্বতন কলোনিদের ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু পর্তুগাল এবং স্পেন কেন ডুবে গেল এই নিয়ে অর্থনৈতিক ইতিহাসে অনেক কাজ আছে। আমি তারমধ্যে একটা উল্লেখ করি। স্পেন ও পর্তুগাল উপনিবেশ জমিয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকায় এবং সেখানে গিয়ে রূপো এবুং অন্পেযান্য়েয দামী ধাতু পেয়ে  তারা বিশেষ খুশি হয়। কিন্তু সেই সোনা-রূপোই তাদের বিপদ ডেকে আনে। এই সোনা-রূপো তারা দেশে রপ্তানি করতে শুরু করে এবং তার ফলে শ খানেক বছরের মধ্যে হাইপার ইনফ্লেশন এবং তা ঔপনিবেশিকতার দ্বিতীয় পর্বে স্পেন-পর্তুগালের পতনের কারণ। এই জায়গা তখন নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। আমি এক্টূ সরল করে বললাম কিন্তু এই নিয়ে বহু গবেষণা আছে। 
     
    আপনি আফ্রিকার কিছু দেশের উদাহরণ দিয়েছেন। রোগ থাকলে কলোনি থাকবে না তা আচেমোগ্লুরা বলছেন না কিন্তু। তাঁরা বলছেন সেই সব কলোনিতে সম্পত্তির মালিকানা আইন দুর্বল হবে। এছাড়া যেকোন রিগ্রেসন আপনাকে একটা গড় হিসেব দেয়। তার বাইরে কিছু আউটলায়ার থাকতেই পারে। আপনি যে দেশগুলির কথা বলেছেন আমি সেই সব দেশের প্রাথমিক সেটলার মর্টালিটি  এবং প্রতিষ্ঠানের মান দেখে জানাতে পারি যে মূল প্রতিপাদ্য সেই দেশগুলির জন্য ঠিক থাকছে কিনা। ডেটা তো পাবলিক। আপনিও চাইলে দেখতে পারেন। 
     
     আমি আল্বুইর সমালোচনাটা হাল্কা চালে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। তার থেকে আচেমোগ্লুদের কাজ পুরোটাই অনুমানের খেলা ভেবে নিলে ভুল হবে। আচেমোগ্লুরা পেপারটি প্রকাশ করেছিলেন আমেরিকান ইকোনমিক রিভিউতে যেখানে সর্বোচ্চ মানের রেফেরিং পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাছাড়া আমেরিকান ইকোনমিক রিভিউ কোন লেখা বেরোলে ডেটা এবং কোডও দিয়ে দেয় যা দিয়ে সে কেউ রেপ্লিকেশন করে দেখতে পারেন। এই রেপ্লিকেশন করতে গিয়ে আল্বুই কিছু সমস্যা দেখেন। আল্বুই যে প্রশ্নগুলি তোলেন তার প্রায় প্রতিটার উত্তরেই আচেমগ্লুরা দেখান যে তাঁদের রেজাল্ট থাকছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আল্বুইর অভিযোগে কিন্তু পেপারটি ভুল তা প্রমাণ হয় না, তাহলে পেপারটা রিট্র্যাক্ট করতে হত। পেপার রিট্রাক্ট করার উদাহরণ কিন্তু অর্থনীতির বড় জার্নালে দুর্লভ নয়। শুধু একটা জিনিস আচেমোগ্লুরা ডেটা্তে করেছিলেন যেটার সন্তোষজনক উত্তর তাঁরা দিতে পারেন নি বলেই আমার মনে হয়েছে। কিন্তু সেটা নিয়ে লিখতে গেলে বেশ লম্বা লেখা লিখতে হবে। পরে কখনো চেষ্টা করব।  
  • Anirban M | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৪১539439
  • আমরা এমনিতে পড়ানোর সময় এসমোগলু করেই বলি। এটা খুব বড় কিছু ব্যাপার না। আপনি অনেককাল ওদিকে আছেন। আপনার জানাটাই ঠিক হবে। কিন্তু এখন পুরো লেখাটাতে সেটা পরিবর্তন করতে হবে বলে আর করলাম না। 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:০৪539440
  • অনেক ধন্যবাদ , সময় নিয়ে উত্তর দেবার জন্য। 
  • Debasis Bhattacharya | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:০৫539441
  • তথ্য আর তাত্ত্বিক কাঠামো দুটোই যখন অযথেষ্ট, তখন বহু ব্যাখ্যার সম্ভাবনা খোলা থাকে, এবং তারা মাঝেসাঝে সম্পূর্ণ অসঙ্গত এবং পরস্পর-বিরোধীও হতে পারে। কিন্তু এ দুটো যত পোক্ত হয়ে ওঠে, বিভিন্ন ব্যাখ্যা ততই সত্যের দিকে কনভার্জ করতে থাকে। সত্যের উপলব্ধিকে যদি জ্ঞান বলি, তাহলে জ্ঞান সাময়িকভাবে আপেক্ষিক হতে পারে, কিন্তু সত্য নিজে আপেক্ষিক নয়। তা যদি হত, তাহলে কোনও জ্ঞানচর্চারই আর কোনও মানে থাকত না।
     
    বলা বাহুল্য, এটা অর্থনীতি বিষয়ক কোনও তর্ক নয়। তথ্য যুক্তি ব্যাখ্যা সত্য ইত্যাদি সম্পর্কিত এক সাধারণ উপলব্ধি মাত্র। 
  • Ranjan Roy | ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪২539442
  • অনির্বাণ এম,
    পরবর্তী কিস্তির প্রতীক্ষায়।
  • Debanjan Banerjee | 2401:4900:3144:9911:77e9:6c44:82bf:***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫২539448
  • অনেক ধন্যবাদ লেখককে সময় নিয়ে উত্তর দেবার জন্য l আমি অনুরোধে করবো আপনাকে ডিপেন্ডেন্সি থিওরি আর আজেমলু পেপার নিয়ে একটা তুলনামূলক লেখা লিখুন l 
  • যদুবাবু | ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৮539455
  • লেখাটা খুব-ই ভালো লেগেছে। আমি অবশ্য অর্থনীতির ছাত্র নই, তাই পাঠ্য হিসেবে পড়িনি, আয়রনিক্যালি (?) আমার এঁদের কাজের সাথে পরিচয় একটু ঘুরপথে ও পরে, ইকনমেট্রিশিয়ানদের হাত ধরে। ঐ ছাত্রাবস্থাতেই, সেকেন্ড বা থার্ড ইয়ারে, ইকনের বন্ধুদের কাছে। আমরা কয়েকজন একটা গাছের তলায় বিড়ি খেতে যেতাম, একজন জ্ঞান বিলোত, আমরা কুড়িয়ে নিতাম। 
     
    দুটো আবদার জানিয়ে যাই। এক, এই লেখাটার দ্বিতীয় পর্ব এলে খুব খুশি হই। আলবুয়িদের পেপারের আলোচনা বিশেষ করে। আর দুই, ঠিক এই প্রসঙ্গে টেনে আনা ঠিক কি না জানি না, কিন্তু ডেভিড অটর, লরেন্স কাটজ - এদের কাজ নিয়ে যদি কখনো লেখেন। 

    ট্যানজেনশিয়াল মন্তব্য করছিই যখন, আরেকটা করে ফেলি। রেপ্লিকেশন শুনে এই অসাধারণ কোর্সটার কথা মনে পড়ল, এখান থেকে অনেক পেপার ছাত্রদের পড়াই। https://thehardestscience.com/2016/08/11/everything-is-fucked-the-syllabus/ 
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৩১539458
  • অসাধারণ কোর্স। আচ্ছা, সেই যে জন আইওয়ানাইডিস একদা বলেছিলেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত সব গবেষণাই আসলে ভুলভাল, সেই বিখ্যাত পেপারটি সিলেবাসে দেখলাম না। এর কারণ কী হতে পারে? 
     
    আর, শেষ সপ্তাহে কালো পোশাক পরে আসবার নির্দেশেরই বা কারণ কী? ফাক্ড্ আপ বিজ্ঞানকে কবরে পাঠাবার শোক পালন!?!?
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০৩539459
  • আরেন্নাঃ, আছে তো! দেখিনি, সরি! আয়াম জাস্ট ফাক্‌ড্‌ আপ!!!!
     
    তবে, দ্বিতীয় প্রশ্নটি রয়েই গেল।
  • Anirban M | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১৩539487
  • যদুবাবু এবং রঞ্জন-দা, দ্বিতীয় পর্ব টা পোস্ট করলাম। লিখব ভাবিনি। মূলত আপনাদের উৎসাহেই লিখলাম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন