এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • ফারাও-এর দেশে কয়েকদিন - ৪

    সুদীপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৩ মার্চ ২০২৪ | ৯২৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ফিরে যখন গিজা পৌঁছোচ্ছি, তখন প্রায় সন্ধ্যে হয় হয়। মাঝে এক ‘বুলবুল ক্যাফে’-তে আমাদের কফি ব্রেক ছিল। এখানে শৌচালয় ব্যবহারের খরচ পাঁচ থেকে দশ ইজিপ্সিয়ান পাউন্ড। গিজা শহরে ঢোকার পর রিং রোড থেকে বাড়ি-ঘরের উপর দিয়ে ডানদিকে আকাশের গায়ে আবছা দেখা দিল খুফু আর খাফ্রে-র পিরামিড। আজ অবশ্য পিরামিডের কাছে যাবো না আমরা, শো-এর ব্যবস্থা পিরামিড থেকে কিছুটা দূরে, যেখান থেকে একসাথে দেখা যায় ফারাও খুফু, খাফ্রে আর মেনকাউরে-র পিরামিড, সঙ্গে দ্য গ্রেট স্ফিঙ্কস।  আমাদের শো-এর টিকিট সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা থেকে। এখনো প্রায় ঘন্টা দেড়েক সময়। গিজা – কায়রো থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরত্বে আর একটি প্রাচীন শহর। নীলনদের পূর্বে ছিল মেমফিস, যার প্রাচীন নাম মেন-নেফার। মেমফিস ছিল মিশরের ফারাও রাজত্বকালের প্রাচীনতম রাজধানী, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে এর পত্তন। মিশরের পুরাণ-কথা অনুসারে যেহেতু মৃত্যুর পরবর্তী জীবন শুরু হয় পশ্চিমদিকে, তাই গিজাকে নেক্রোপলিস অর্থাৎ সমাধিস্থল নির্মাণের স্থান হিসেবে স্থির করা  হয়েছিল। আমরা এই নেক্রোপলিস বা পিরামিড কমপ্লেক্সের কিছুটা আগেই একটি প্যাপাইরাস কারখানায় এসে পৌঁছোলাম।

    প্যাপাইরাস এক ধরণের গাছ, পরিণত অবস্থায় যার দৈর্ঘ্য বড়জোর চার থেকে পাঁচ মিটার। এই গাছের কোনো পাতা নেই, লম্বা একহারা কান্ড আর তার মাথায় খানিক দূর্বাঘাস খাড়া হয়ে লেগে আছে যেন! প্যাপাইরাস মিশরীয়দের কাছে খুবই পবিত্র একটি গাছ; এই যে মাথার উপর খাড়া হয়ে থাকা লম্বা একগুচ্ছ ঘাসের মতো অংশটি – সেটি সূর্যের ছড়িয়ে পড়া রশ্মির মতো, তাই সূর্যের দেবতা রা-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মনে করা হতো। আর এর কান্ডের নীচের দিকটি ত্রিকোণাকার, পিরামিড আকৃতির, তাই মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্যেও এর পবিত্রতা। মমির গায়ে যে প্যাপাইরাসে বুক অব দ্য ডেড-এর অংশবিশেষ লিখে দেওয়া হতো সে তো আগেই বলেছি। প্যাপাইরাসের এই ফ্যাক্টরি বা কারখানাটি একটি বিরাট বড় হলঘর যেটি শুধু পর্যটকদের মনোরঞ্জন, প্যাপাইরাস তৈরীর প্রক্রিয়া দেখানো আর বিকিকিনির উদ্দেশ্যে তৈরী। ঘর-ভর্তি অজস্র প্যাপাইরাস ফ্রেম করে বাঁধানো, কোনোটিতে মিশরীয় উপকথা থেকে উঠে আসা ছবি, কোনোটিতে শুধুই হায়রোগ্লিফ লিপি, আবার কোনোটিতে দুয়ের মিশ্রণ। হ্যাঁ এখানে নুত-এর গল্প, আখেনাতেন-নেফারতিতি, দ্বিতীয় রামেসিস-নেফারতারি সবকিছুই ধরা আছে। এখান থেকে পর্যটকরা নিজের পছন্দ বাছাই করে দাম চুকিয়ে দিলেই হাতে একটি  বেলনাকৃতি মোড়কে তুলে দেওয়া হবে সেই প্যাপাইরাস। হায়রোগ্লিফ লিপিতে নিজের নাম-ও লিখিয়ে নিতে পারেন। হলঘরের একপাশের একটি টেবিলে এখানকার ম্যানেজার এক ভদ্রমহিলা সুন্দর করে দেখিয়ে দিলেন প্যাপাইরাস তৈরীর প্রক্রিয়া। প্যাপাইরাস গাছের কান্ডের বাইরের সবুজ শক্তপোক্ত  অংশটি ব্যবহার করা হয় বেতের মতো, ঝুড়ি, মাদুর, গয়না তৈরীর কাজে। আর ভিতরের সাদা অংশটি পিষে চ্যাপ্টা ক’রে সমস্ত জলীয় পদার্থ বের করে নেওয়া হয়। এরপর এই চ্যাপ্টা টুকরো জলে ভিজিয়ে রাখা হয় পাঁচ-ছয় দিন (সাদা কাগজ পেতে হলে) অথবা দশ-বারো দিন (লালচে কাগজ পেতে হলে)। তারপর সেই টুকরোগুলি দৈর্ঘ্যে বরাবর সাজিয়ে নেওয়া হয় স্তরে স্তরে, তারপর তার উপর দিয়ে প্রস্থ বরাবর আরেক স্তর সাজিয়ে নেওয়া হয় (বেতের পাটি বা ঝুড়ি যেভাবে একটির উপর আরেকটি বেত ঢুকিয়ে বোনা হয়)। এরপর এই পুরো সাজানো চ্যাপ্টা টুকরোগুলি উপরে-নীচে ভারী পাথর রেখে সমস্ত তরল (যদি কিছু বাকি থেকে যেতো) বের করে নিয়ে একেবারে কাগজের মতো সমতল করে নেওয়া হতো। সবশেষে, প্রখর রোদে শুকিয়ে নিলেই ছবি আঁকা, লেখালিখির জন্যে তৈরী প্যাপাইরাসের পাতা। আর স্তরে স্তরে এক অন্যকে জাপটে থাকায় এই পাতা এতই টেকসই যে হাজার হাজার বছরেও রোদে-জলে এর কোনো ক্ষয় হতো না (‘ঝরে না, মরে না, পোকা ধরে না’ ইত্যাদি), সে অবশ্য আমরা দুই মিউজিয়ামে ভালোই প্রমাণ পেয়েছি। প্যাপাইরাস বা মন্দির-সমাধি ইত্যাদির গায়ে লেখা হতো যে লিপি, তারও বদল ঘটেছে সময়ের সঙ্গে। প্রথমে ছিল হায়রোগ্লিফ, তারপর এলো হিয়েরাটিক, তারপর আনুমানিক সাতশো খ্রীষ্টপূর্বে এলো ডেমোটিক আর গ্রীক লিখনপদ্ধতির প্রভাবে টলেমিক রাজবংশের রাজত্বকালে জন্ম নিলো কপটিক লিপি ও লিখনপদ্ধতি। শ্যাম্পোলিয়ান ও থমাস ইয়াং-এর রোসেটা পাথরের পাঠোদ্ধার করার ক্ষেত্রে এই লিপিগুলির সময়বিন্যাস আর ক্রমপরিবর্তন/বিবর্তন ছিল বিশেষ সহায়ক, নইলে হায়রোগ্লিফ পড়া আজও হয়ত আমাদের অধরাই থেকে যেত! আমরা এখানে ফারাও আর রাণীর একটি প্যাপাইরাস পছন্দ করে ছবির দু-পাশের কার্তুশ-এ নিজেদের নাম লিখিয়ে নিলাম হায়রোগ্লিফে, খরচ পড়ল প্রায় হাজার ইজিপ্সিয়ান পাউন্ড। আবার বাসে উঠে চললাম আমাদের শেষ গন্তব্য়, আলো এবং শব্দের প্রদর্শনী।
     

     

     
    লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-এর জন্যে আমরা ঢুকলাম গিজা কমপ্লেক্সের পিছন দিকে। এখান থেকে প্যানোরামিক একটি ভিউ পাওয়া যায় পুরো অঞ্চলটির। খোলা শান-বাঁধানো চত্বরে প্রায় হাজার খানেক বসার চেয়ার। এর একেবারে সামনেই রয়েছে ফারাও খাফ্রের পিরামিড, তার ডানপাশ ঘেঁষে সামনেই গ্রেট স্ফিংক্স। আরও ডানদিকে ফারাও খুফুর পিরামিড। আর খাফ্রের পিরামিডের বাঁদিকে বেশ কিছুটা দূরে ফারাও মেনকাউরে-র পিরামিড। দিনক্ষণ দেখে আসিনি বটে, শুধু আমাদের বিশেষ দিনটুকু মধ্যমণি করে আসা, তাও যখন এই আঁধারে অপ্রত্যাশিতভাবে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় চারদিকে ‘সমুদ্র সফেন’, আর সেই অপূর্ব জ্যোৎস্না সাড়ে চার হাজারের ইতিহাস ধুইয়ে দিচ্ছে চোখের সামনে, সেটুকু দেখে আনন্দে মন ভরে উঠবেই।  এই আমাদের প্রথম পিরামিড দেখা, এমন অপার্থিব আবহে! একবার বিরাট থালার মতো চাঁদের দিকে তাকাই, আর একবার পিরামিডের দিকে, সে-শোভা বর্ণনা করার ভাষা নেই! কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে সাতটায় শুরু হলো আমাদের শো। মিশরের ফারাও যুগের প্রাচীন ইতিহাস আর সঙ্গে আলোর খেলা - পিরামিড, স্ফিংক্স, আর পাথরের গায়ে প্রাকৃতিক  প্রোজেক্টর স্ক্রীন-এর উপর। শো-টি কেমন, সেকথায় পরে আসছি।
     
    পূর্নিমার চাঁদের আলোয় খুফুর পিরামিড,তার সামনে হেটেফেরিস-এর ছোটো পিরামিড 

     
    লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো চলাকালীন

     
    মিশরের প্রাচীন যুগের ইতিহাস, বিশেষতঃ এই ফারাওদের সময়কার ইতিহাস, যাকে ঘিরে গড়ে ওঠা সভ্যতাটিকে নিয়ে আপামর বিশ্ববাসীর উৎসাহ আর ঔৎসুক্য, সেই সময়টি মোটামুটি ৩০০০ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে ৩০ খ্রীষ্টপূর্ব (অর্থাৎ ক্লিওপেট্রার মৃত্যু অবধি) পর্যন্ত বিস্তৃত। আবার এই প্রায় তিন হাজার বছরের প্রথম দু-হাজার বছরের সময়কালটি-কে ভাগ করা হয়েছে তিন ভাগে, প্রাচীন, মধ্য আর আধুনিক রাজবংশের যুগ (Old Kingdom, Middle Kingdom, New Kingdom), প্রতিটি যুগে একাধিক ফারাও রাজবংশ রাজত্ব করেছেন। ৬০০ থেকে ৩৩২ খ্রীষ্টপূর্ব অবধি মিশরে পারস্যের আধিপত্য চলে, তারপর আসেন আলেকজান্ডার আর শেষ তিনশো বছর চলে টলেমিক ফারাওদের রাজত্ব। মাঝেমধ্যে কিছু গৃহযুদ্ধ, সেনা অভ্যুত্থান এবং স্থানীয় কেউ দু-দশবছরের জন্যে ফারাও হয়ে বসলেও এই ছিল সময়কালের হিসেব। মিশরের প্রথম ফারাও-এর নাম পাওয়া যায় নারমের (প্রথম রাজবংশ), যিনি মিশর দেশটিকে বা রাজ্যটিকে সঙ্ঘবদ্ধ করে মেমফিসে স্থাপন করেন প্রথম রাজধানী। তারপর সাক্কারা-র স্টেপ পিরামিডের (এটি বিশ্বের প্রথম নির্মিত পিরামিড হিসেবে চিহ্নিত) নাম ধরে উল্লেখযোগ্য ফারাও জোসার আর তাঁর সময়ের (তৃতীয় রাজবংশ) বিখ্যাত স্থপতি, রসায়নবিদ, পদার্থবিদ, লেখক (স্ক্রাইব) ইমহোটেপ (স্টেপ পিরামিডের নকশা ইনিই বানিয়েছিলেন)। এরপর চতুর্থ রাজবংশে পরপর এলেন ফারাও স্নেফেরু, খুফু, খাফ্রে, মেনকাউরে (বা মেনকাওরা)। স্নেফেরু বানালেন বেন্ট পিরামিড, রেড পিরামিড দাশুর-এর সমাধিক্ষেত্রে, খুফু, খাফ্রে আর মেনকাউরে পিরামিড বানালেন গিজা-য়। সুউচ্চ এই পিরামিড বানানোর অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিল মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে দেবতা আমুন-রা-র কাছাকাছি থাকা, যতটা আকাশের দিকে ঠেলে ওঠা যায়। কিন্তু পিরামিড বানানোর কাজ এতটাই ব্যয়বহুল আর সময়সাপেক্ষ ছিল যে, পরের দিকে ফারাও-রা এই পরিকল্পনা ত্যাগ করে ভ্যালি অব দ্য কিংস আর ভ্যালি অব দ্য ক্যুইনস-এর দিকে নজর ঘুরিয়ে নেন, পিরামিডের দিনকাল-ও শেষ হয়ে আসে। গিজার পিরামিডের কথা আবার দিনের আলোয়।
    শো-টি কেমন? অতি সাধারণ আলোকসম্পাত, শব্দ আর ইতিহাসের বর্ণনা। এমনকি পিরামিডের গায়ে যে আলোগুলি ফেলা হয়েছে তার-ও বিশেষ রকমফের নেই। সব মিলিয়ে বলা যায় এটি না দেখলে খুব বেশী কিছু হারাবেন না। তবে আমাদের প্রাপ্তি হলো পূর্ণিমার জ্যোৎস্না-স্নাত পিরামিডের দৃশ্য, সেটুকু একেবারে স্মৃতির মণিকোঠায় থেকে যাবে। গিজা থেকে নৈশভোজ সারতে  আমরা গেলাম একটি মিশরীয় রেস্তোঁরায়, আজ আমাদের কায়রোর শেষ রাত। রেস্তোঁরায় গিয়ে দেখি সবাই মোটামুটি জায়ান্ট স্ক্রীনে খেলা দেখতে ব্যস্ত! ইজিপ্টের ক্লাব স্তরের প্রিমিয়ার লীগের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ম্যাচ চলছে। ব্যুফে-তে খাবার নিতে নিতে আর খেতে খেতে দেখা গেল সেই খেলাও, জমজমাট ওপেন ফুটবল, গতি আর স্কিল দুইই আছে। এখানে কিছু খাবারের কথা বলে নেওয়া যাক। আমাদের ইচ্ছে ছিল কোশারি বা কোশরি খাবো একবার, খেলাম, কিন্তু এ যে খুব স্বাদু খাবার তা নয়। আর লোকজন বলে আমাদের খিচুড়ির মতো, তাও মোটেই নয়। তবে পাঁচমেশালী ডাল, চাল, ছোলা, কাবুলি ছোলা, চীজের গুঁড়ো, স্প্যাগেটি, ভার্মিসেলি, ম্যাকারনি ইত্যাদি নানা ধরণের জিনিসপত্র মিশিয়ে সেদ্ধ করে দিলে জিনিসটা খিচুড়ি দাঁড়ায় বটে, কিন্তু বাঙালী খিচুড়ির সঙ্গে তার দূরদূরান্তের মিল নেই।  অতএব আগে থেকেই কোশারি মানেই খিচুড়ি সে মধুর আবেগ কিছুটা দূরে ঠেলে রাখাই ভালো, সে আপনি যত-ই সস ঢেলে তার স্বাদ বাড়াতে চেষ্টা করুন। বাকি চিকেন, মাছ বা বীফ ইত্যাদির পদে তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই। হামাস আর রুটি ভালো লাগলো, কিন্তু যেমনটি ভেবেছিলাম তেমন নয়, এ-জিনিসও আগে চেখে দেখা, বরং আরও ভালো স্বাদের। এরা নিজেদের পদের সঙ্গে ফ্রেঞ্চ বা ইটালিয়ান খানা-ও মিশিয়ে নিয়েছে, যেমন পানজারোত্তো (ময়দা, মোজারেলা চীজ ইত্যাদি দিয়ে তৈরী একধরণের ভাজা পিঠে, ভেতরে মাংসের টুকরো ইত্যাদির পুর) যেটা খানিকটা ক্যালজোনি-র ছোটো ভাই বলা যায়, অথবা কীশ ল্যুরেন (এক ধরণের টার্ট, ডিম, বেকন, চীজ দিয়ে ভরা) – এগুলো যথারীতি বেশ ভালো স্বাদের।  খেলাম 'কুসকুস' আর 'বাবা গানুশ'। কুসকুস - সেমোলিনা নামে দুরুম জাতীয় এক ধরণের গমের সবচেয়ে শক্ত অংশ সেদ্ধ করে তৈরী হয়। খেতে খানিকটা শুকনো ঝুরঝুরে ডালিয়া-র মতো। বাবা গানুশ হলো বেগুনের পদ। বেগুন রোস্ট করে একেবারে লেই বানিয়ে তার সঙ্গে তাহিনি (রোস্টেড তিল-গুঁড়োর পেস্ট), অলিভ অয়েল, লেবুর রস মিশিয়ে তৈরী হয় এই বাবা গানুশ। রুটি দিয়ে খেতে বেশ!  আর যেটা নিয়ে বিশেষ করে বলতে হয় সেটা হলো  এদের মিষ্টি। বিশেষতঃ আমার মতো মিষ্টি-প্রেমীর কাছে এদের ডেজার্টের অংশটি ছিল একেবারে হামিনস্ত! সুতরাং তুঙ্গনাথ-চন্দ্রশিলার জন্যে মাস তিন-চার যেটুকু কাট-ছাঁট করতে হয়েছিল আর পরেও বজায় রাখবো ভেবেছিলাম, সব মুহূর্তে হাওয়ায় উড়ে গেল! কাকে ছেড়ে কার কথা বলি, উত্তরে ডাকে ‘গুলাশ’ (এটি বাকলাভার তুতো ভাই, খাস্তা খাজার মতো, চিনির রসে ভিজিয়ে নেওয়া, ভিতরে মিষ্টি ক্রীম আর উপরে বাদাম-কিশমিশ - এখানে বলে রাখি গুলাশ এদের এক ধরণের বীফ-এর রান্নার পদের নামও, সেটিও বেশ উপদেয়), তো দক্ষিণে ডাকে ‘বাকলাভা’ (স্তরে স্তরে প্যাস্ট্রির মতো দেখতে, চিনির রসে ভেজানো, ভিতরে বাদাম-পেস্তার গুঁড়ো বা পেস্ট), পূর্ব-পশ্চিমে হাঁক ছাড়ে ‘কুনাফা’ (এক ধরণের লম্বা নুডলস দিয়ে বানিয়ে নেওয়া প্যাস্ট্রি, ডুবিয়ে নেওয়া হয় ‘আত্তার’ বলে একরম চিনির রসে, আর তার পেটে মিষ্টি চীজ, উপরে গোলাপ জলের সুঘ্রাণ) আর ‘খাক’ (এটি ঈদের বিশেষ মিষ্টি মিশরের মা-ঠাকুমা-রা বানিয়ে থাকেন, এমনকি কিছু প্রাচীন মন্দিরের রিলিফেও নাকি এই মিষ্টির ছবি বা বর্ণনা আছে হায়রোগ্লিফে, এটি এক ধরণের বাটার কুকি, খেজুর আর বাদামের পেস্ট ব্যবহার করে তৈরী)। এছাড়াও রয়েছে ‘জালাবায়া’ (চকোলেটে মোড়া মিষ্টি বল), ‘কাতায়েফ’ (বা কাদাইফ – উপর থেকে দেখতে যেন রেশম গুটি, উপরে তেমনি সূক্ষ্ম তারের মতো সোনালী জালি, আর তার ভিতরে জিভে দিলেই মিলিয়ে যাবে এমন কাজু-কিশমিশের পেস্ট) আর ‘ওম আলি’ (দুধে চোবানো মিষ্টি প্যাস্ট্রি, ভেতরে বাদাম, কিশমিশ, নারকেলের পেস্ট স্তরে স্তরে)। মিশরীয় জিলিপির-ও স্বাদ নেওয়া গেল, একটু অন্যরকম, হলুদ ভাবটা কম, অনেক স্বচ্ছ। সব মিলিয়ে জিভে জল আনবেই, তবে এই সব মিষ্টি খুব কড়া মিষ্টি নয়, বরং স্বাদেই তার চাবিকাঠি! কিন্তু মিশর যাওয়ার আগে ওই এক মধ্যপ্রাচ্য-ময় বাকলাভা বাদে এসবের নাম-ই শুনিনি কখনো! এই নাম আর উপকরণ নিয়ে সামাহ-কে বেশ বিরক্ত করতে হয়েছিল বলাই বাহুল্য।  আর হ্যাঁ , খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে আসছি যখন,ম্যাচের স্কোর ৪-৩, মিনিট পনেরো খেলা বাকি, সুতরাং সেদিকেও উপভোগের কমতি ছিল না। 
    পরের দিন অর্থাৎ মিশরের তৃতীয় দিনটা শুধুই পিরামিডের দিন। সকাল আটটার মধ্যে আমরা বেরিয়ে পড়লাম আবার গিজার উদ্দেশ্যে। প্রথমেই দেখবো গতকাল রাতে দেখা পিরামিড আর স্ফিংক্স, দিনের আলোয়; তারপর সামাহ-র সঙ্গে নির্ধারিত প্ল্যান-মাফিক আমরা দু’জন দল থেকে আলাদা হয়ে সোজা চলে যাবো দাশুর আর সাক্কারা; গিজার পরের সময়টুকু আমাদের দলের কেনাকাটির জন্যে বরাদ্দ খান-এল-খালিলি বাজারে, যেটা আমাদের বিশেষ পছন্দের তালিকায় ছিল না, তার চাইতে ঢের বেশী  উৎসাহ ছিল স্টেপ, রেড আর বেন্ট পিরামিডের দিকে। আমরা ফিরবো বিকেল সাড়ে চারটেয় হোটেলে, সেখান থেকেই এয়ারপোর্ট চলে যেতে হবে, আজ রাতে আমরা যাবো আসোয়ান। আজ আমাদের বাস সরাসরি এসে দাঁড়ালো ফারাও খুফুর পিরামিডের সামনে। টিকিট কেটে রেখেছিলো সামাহ, নিজেদের টিকিট নিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম চত্বরে। কাল দূর থেকে দেখেছি, আজ একেবারে ছুঁয়ে দেখার পালা। বিশ্বাস হচ্ছে না সশরীরে দাঁড়িয়ে আছি সাড়ে চার হাজার বছরের ইতিহাসের সামনে, একটা স্পর্শ যেন দেখিয়ে দিচ্ছে পিরামিড তৈরীর দৃশ্য! ফারাও-দের রাজত্ব, প্রাচীন দেবদেবী আর হ্যাঁ, শেয়াল দেবতা রহস্য পড়ার পর থেকে আনুবিস-এর দেশ তো বটেই! বাস থেকে নামার আগে আমাদের সামাহ পই-পই করে বলে দিয়েছিল কিছু সাবধানতার কথা, যদিও পুলিশ সবসময়েই আমাদের দলের লোকজন-কে নজরে রেখেছিল। গিজার পিরামিডের এই সুবিশাল চত্বরে চুরি, ছিনতাই, বেশী দামে জিনিস গছানো বা যে কোনো উদ্ভট কারণে টাকা চাওয়ার কান্ড-কারখানা ঘটে থাকে। প্রচুর ঘোড়ার গাড়ি আর উট এখানে, আপনি এমনকি যদি সেসব গাড়ির বা উটের ছবি তোলেন পিরামিডের সঙ্গে, টাকা নেওয়ার দাবী করবে তার মালিক। বিক্রেতা-রা যদি বোঝে আপনার কোনো জিনিস ভালো লেগেছে, ‘লাগবে না’ বললেও পিছু ছাড়বে না এবং উত্যক্ত করে চলবে। সুতরাং গাইড আর পুলিশ কাছাকাছি না থাকলে এসব থেকে সাবধান থাকাই বাঞ্ছনীয়।
     
    চতুর্থ রাজবংশের ফারাও খুফুর (ওরফে খিওফস - ফারাও স্নেফেরু আর রাণী হেটেফেরিসের পুত্র, হ্যাঁ ইনি-ই সেই কাকাবাবুর ‘মিশর রহস্য’ গল্পের হেটেফেরিস) পিরামিডটি হলো মিশরের তথা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পিরামিড, উচ্চতা প্রায় ৪৫৪ ফুট। এটির বাইরের সমতল আবরণটি এখন খসে গেছে, নইলে আরও বিশ-ত্রিশ ফুট উচ্চতা থাকত। এটি তৈরী হয়েছিল আনুমানিক ২৬০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আর তৈরী হতে সময় লেগেছিল প্রায় বছর পঁচিশ। এর তিনটি তির্যক বাহু উঠে গেছে প্রায় ৫১ ডিগ্রী কোণ করে আর মিলিত হয়েছে উপরে। প্রায় বাইশ লক্ষ পাথরের ব্লক দিয়ে তৈরী এই পিরামিড। এক একটি ব্লকের উচ্চতা কম-বেশী পাঁচ ফুটের কাছে। কাছে দাঁড়িয়ে সত্যি তাক লেগে যাওয়ার মতো। আর এই সব পাথর এসেছে গিজার পাহাড়ী অঞ্চল থেকেই। উপরের সমতল অংশেরসাদা চুনাপাথর আনা হতো তুরা অঞ্চল থেকে আর গ্র্যানাইট আনা হতো আসোয়ান থেকে, নীলনদে নৌকা বেয়ে।  পাথরের ব্লকের মাঝে মর্টার নামের এক লেই (বালি, কাদা আর মাটির লেই) দিয়ে বসানো হতো। পিরামিড তৈরীর পরিকল্পনা আর পদ্ধতি নিয়ে আজও গবেষণা হয়ে চলেছে। এখন যে পথটি দিয়ে আমরা ঢুকি, সেটি আসল পথ নয় যেখান দিয়ে ফারাও-এর মমি নিয়ে যাওয়া হতো সমাধিস্থ করার জন্যে। এখনকার পথটি আসলে ধনরত্ন লুঠ করার পথ। এখন এই পিরামিডগুলোর ভিতরে আর কিছুই নেই গ্র্যানাইটের সার্কোফেগাস ছাড়া। আর ভিতরের দেওয়ালেও কোনরকম লেখা বা ছবি কিছু নেই। কিন্তু ভিতরে ঢোকার পথ খুবই সংকীর্ণ, হাঁটু আধা-ভাঁজ করে কোমর আধা-ভাঁজ করা অবস্থায় অধিকাংশ পথটাই চলতে হয়। আর একেবারে ভিতরে গর্ভগৃহে ফারাও-এর সার্কোফেগাস। তাই কেউ যদি না ঢুকতে চান, খুব বেশী কিছু হারাবেন না। বরং এর পাশেই একটি ছোটো পিরামিড আছে খুফু-র নৌকোর গর্তের পাশেই, সেটিতে নেমেও দেখে আসতে পারেন। অথবা সাক্কারা বা দাশুর গেলে সেই পিরামিডগুলোতেও ঢুকে দেখতে পারেন, সেগুলোর পথ খুফুর পিরামিডের মতো এতটা লম্বা বা উপর-নীচ করে নয়, ‘কঠোর বিকল্পের পরিশ্রম নেই’। গিজা নেক্রোপলিসের এই ছোটো পিরামিডগুলি সবই রাণীদের বা ফারাও-এর নিকটাত্মীয়ের। রাণী হেটেফেরিসের ছোটো পিরামিডটিও রয়েছে অল্প দূরেই। খুফুর পিরামিডের পাশেই পূর্বদিকে রয়েছে এই পেল্লায় নৌকো রাখার লম্বাটে গর্ত, এখানে ছিল খুফুর পরপারে যাওয়ার নৌকো। কিভাবে তার ভগ্নাবশেষ-কে আস্ত নৌকো-য় রূপ দেওয়া হয়েছিল কাঠের টুকরোর মাপ মিলিয়ে, সে আর এক গল্প! এই নৌকো আগে গিজার পিরামিড চত্বরের মিউজিয়ামে থাকলেও এখন এটি স্থান পেয়েছে নতুন গড়ে ওঠা ‘গ্র্যান্ড ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়াম’এ যেটি এখনো পর্যটকদের জন্যে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত নয়। আমাদের দলটিকে খুফুর পিরামিডের কাছেই রাখা হলো ছবি তোলা, ভিতরে ঢকা ইত্যাদির জন্যে। আমরা সেসব সেরে দুজনে মিলে চারপাশের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আর সমাধি দেখতে দেখতে হেঁটে চলে গেলাম খাফ্রের পিরামিডে।
     
    খুফুর পিরামিড 

     
    খুফু-র নৌকোর গর্ত 

     
    পাথরের ব্লকের উচ্চতা আর প্রবেশদ্বার 

     
    পিরামিডের প্রবেশপথ

    ফারাও খাফ্রে (ওরফে খেফ্রেন) ছিলেন খুফুর পুত্র। এঁর একটি মূর্তি আমরা কায়রোর ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়ামে দেখেছিলাম।  খাফ্রের পিরামিড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, প্রায় ৪৪৮ ফুট, তৈরী হয় খুফুর পিরামিডের আরও বছর পঞ্চাশ পরে। এর মাথার দিকে মসৃণ অংশ-টি এখনো কিছুটা অটুট থেকে গেছে। যদিও পিরামিডিওন, অর্থাৎ ক্যাপস্টোন-টি যথারীতি খোয়া গেছে। খাফ্রের পিরামিড-কে ছুঁয়ে আমরা আরও সামনে এগিয়ে গেলাম যেখান থেকে স্ফিঙ্কস-কে দেখা যায়, এটিকে বলে প্যানোরামিক ভিউ স্পট। আমরা পরে আবার এখানে দাঁড়াবো, তাই আবার ফিরে এলাম দলের কাছে। মেনকাউরে-র পিরামিডে আমরা যাই নি আর। ওটা আরও দুই কিলোমিটার প্রায় আসা-যাওয়া। এমনকি খুফু আর খাফ্রের পিরামিডের মধ্যেও প্রায় শ-পাঁচেক মিটার দূরত্ব, আসা-যাওয়া নিয়ে অন্ততঃ এক কিলোমিটার। বাসে ফেরার পথে আবার আমরা নামলাম দ্য গ্রেট স্ফিংক্স-এর সঙ্গে দেখা করতে, আর সেই প্যানোরামিক ভিউ নিতে যা কাল রাতে শো-চলাকালীন দেখেছিলাম। গ্রেট স্ফিংক্স-এর নির্মাতা ছিলেন সম্ভবতঃ ফারাও খাফ্রে, মুখের মিল-ও বোঝা যায় মিউজিয়ামের মূর্তির সঙ্গে। তবে এই মূর্তির নাক কি করে খোয়া গেল, সে আজও রহস্য, কেউ বলেন নেপোলিয়নের সৈন্যদের কাজ, কেউ বলেন মরুঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে। তবে মরুভূমির মাঝে এই স্ফিংক্স অসংখ্য পাখির আশ্রয়, সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই। 
     
    খাফ্রের পিরামিড

     
    দ্য গ্রেট স্ফিংক্স, অবশেষে ক্লাস সিক্সের ইতিহাস বই-এর পাতা থেকে উঠে এসে চোখের সামনে! 

     
    প্যানোরামা - এক ফ্রেম-এ খুফু , খাফ্রে , মেনকাউরের পিরামিড , সঙ্গে দ্য গ্রেট স্ফিংক্স 

     
    গিজাকে বিদায় জানিয়ে আমরা ফিরে চললাম। পথে এক জায়গায় বাস দাঁড়ালো চা-বিরতিতে। আর সামাহ আমাদের দুজন-কে তুলে দিল তার বন্ধু সায়িদি-র ফোর্ড গাড়িতে, সায়িদি আমাদের নিয়ে চলল দাশুর আর সাক্কারা।
     
    ২০২৪ এর জানুয়ারী, পিরামিড দেখলাম, বাইরে-ভিতরে , স্পর্শ করলাম, সাড়ে চার হাজার বছরের ইতিহাসকে , মনে তখন একটাই গান বাজছে -
    "কখনো সময় আসে , জীবন মুচকি হাসে ,
    ঠিক যেন প'ড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা
    অনেক দিনের পর , মিলে যাবে অবসর
    আশা রাখি পেয়ে যাবো , বাকি দু-আনা.."
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ০৩ মার্চ ২০২৪ | ৯২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:b588:2f45:5560:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৫:৪২529016
  • চমৎকার! তিন নম্বর ছবিটা খুবই সুন্দর লাগলো, দারুণ অ্যাঙ্গলটা। আর খাবারদাবারের অংশটা যে আমি দু তিনবার পড়বো সে তো বলা বাহুল্য( কুট্টিমামা যেমন মহাভারতে ভীম বকরাক্ষসের খাবার খেয়ে নিচ্ছিলো সেইটা বেশি মন দিয়ে পড়তেন)। সত্যি এই কোশারী জিনিষটা অতি অখাদ্য। খুব শখ নিয়ে খেতে গিয়ে আমার মেজাজ বিগড়ে গেছিলো। সুন্দর লাগছে  এই সিরিজ পড়তে।
  • দীমু | 182.69.***.*** | ০৪ মার্চ ২০২৪ ১০:৪২529021
  • দারুণ এগোচ্ছে yes​ 
  • Arindam Basu | ০৪ মার্চ ২০২৪ ১১:২০529022
  • লেখাটা এতটাই ভালভাবে লেখা যে শুধু এই লেখাটাকে নিয়ে দিব্য ঈজিপ্ট ঘোরা যায়। 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৩:০৮529023
  • জোৎস্না মাখা পিরামিড - এক্লাস !
    লেখাটা কাল পোস্ট হতেই পড়েছিলাম, তখন আর কমেন্ট করা হয়নি। খুব ভালো লেগেছে বলাই বাহুল্য। 
     
    জানেন হয়তো, তবু বলার ইচ্ছে হলো, এই যে ইজিপ্টে কার্তুশ বলে যেগুলো বলছেন, আর আমরা যে বন্দুকের কার্তুজ বলি দুটোরই উৎস কিন্তু এক্কেবারে এক - ফরাসি।
    ফরাসি সৈন্যরাই নেপোলিয়ন এর আমলে ইজিপ্টে গিয়ে কার্টুশ গুলো দেখে বন্দুকের কার্তুজের (cartouche) কথা ভেবে ওই নাম দিয়েছিল।
  • সুদীপ্ত | ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৭:০০529026
  • ধন্যবাদ kk! যাক, কোশারী নিয়ে ভয়ে ভয়ে লিখছিলাম, লোকজন এত চারিদিকে এই একটি পদ নিয়ে বলে, ভুল মনে হয়নি তাহলে! মানে 'অখাদ্য' শব্দটা প্রায় ওই কারণেই এড়িয়ে গিয়েছিলাম :)
     
    ধন্যবাদ দীমু! 
     
    ধন্যবাদ অরিন-দা, কিন্তু বলেন কি! এরকম কিছু না, শুধু গল্পগুলো লিখে রাখছি, এই! 
     
    ধন্যবাদ রমিত! কার্তুশের কথা মন্দিরগুলোয় গিয়ে বলবো, এখনো (তৃতীয় দিন) দেখিনি যে, কিন্তু ধরতাই দিয়ে ভালো করেছেন। 
  • | ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৭:১৩529027
  • কি ভাল যে লাগছে পড়তে। একেবারে ফাস্টো কেলাশ গাইড। খাবারের বিস্তারিত বর্ননা অতি চমৎকার। 
  • সুদীপ্ত | ০৪ মার্চ ২০২৪ ২০:০৭529029
  • থ্যাঙ্কিউ দমদি! :)
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:29b2:9616:4757:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৪ ২১:১৩529031
  • এত ভাল ভাল কাবাব, ইজিপশিয়ান পিৎজা, মাংসের স্যুপ থাকতে কোশারী খেতে যাবোই বা কেন? দু চারটে বাদ দিলে ভেজু খাবার একেবারেই অখাদ্য। cheeky
  • সুদীপ্ত | ০৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৩৬529032
  • পিৎজা খাইনি, কিন্তু কাবাব আর মাংসের স্যুপ খুব আহামরি লাগেনি কিন্তু। ওর চাইতে আমাদের জাকারিয়া স্ট্রীট অনেক ভালো।
  • hu | 72.24.***.*** | ০৪ মার্চ ২০২৪ ২৩:৪৮529035
  • এই টইটা চোখে পড়লে না পড়ে থামতে পারছি না। খুব ভালো হচ্ছে লেখা। পিরামিডের লাইট অ্যান্ড সাউন্ডটা সত্যিই খুব উচ্চমানের নয়। কিন্তু সাড়ে চার হাজার বছর ধরে কত মানুষ এই পিরামিডের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, আমিও দাঁড়ালাম এই অনুভূতিটা এমন তীব্রভাবে শিরায় শিরায় বইতে থাকে এ তার সামনে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের অপারদর্শিতা মাফ করে দেওয়া যায়। আমরা যেদিন গেছিলাম সেদিন একটা বালিঝড় উঠেছিল। খুফুর পিরামিডের কাঁধের কাছ থেকে দেখলাম একটা ধুলোর বল পাক খেতে খেতে উপরে উঠে গেল। ঝপ করে টেম্পরেচার নেমে গেল অনেকটা। অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।
  • সুদীপ্ত | ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৯:৩১529039
  • ধন্যবাদ hu। হ্যাঁ ওই অনুভূতি-টা সত্যি অসাধারণ! জানুয়ারী-তে আমাদের রীতিমতো জ্যাকেট পরতে হয়েছিল রাতে শো দেখার সময়। বালির ঝড়ের অভিজ্ঞতা দারুণ, ওই পরিবেশে! 
  • dc | 2401:4900:2341:2ef1:6020:365c:e0bc:***:*** | ০৫ মার্চ ২০২৪ ১০:০৬529040
  • "শো-টি কেমন? অতি সাধারণ আলোকসম্পাত, শব্দ আর ইতিহাসের বর্ণনা। এমনকি পিরামিডের গায়ে যে আলোগুলি ফেলা হয়েছে তার-ও বিশেষ রকমফের নেই। সব মিলিয়ে বলা যায় এটি না দেখলে খুব বেশী কিছু হারাবেন না। তবে আমাদের প্রাপ্তি হলো পূর্ণিমার জ্যোৎস্না-স্নাত পিরামিডের দৃশ্য, সেটুকু একেবারে স্মৃতির মণিকোঠায় থেকে যাবে।"
     
    আমারও ঠিক এরকম মনে হয়েছে। আমি মিশরে যাইনি, তবে ইন্ডিয়াতে এদিক ওদিক কয়েকটা লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো দেখেছি, সেগুলো ঠিক এরকমই বোরিং আর আন্ডারহোয়েল্মিং মনে হয়েছে। অন্যদিকে, কিছু কিছু জায়গায় চাঁদের আলোয় ঘুরেছি, সেসব সত্যিই অসাধারন। এই বিরাট বড়ো, বহু প্রাচীন মনুমেন্টগুলো রাত্রিবেলায় চাঁদের আলোয় একেবারে অন্যরকম মনে হয়। 
     
    আর লাইট অ্যান্ড সাউন্ড টাইপের কিছু করতে হলে এইসব দেশের সরকাররা আলাদা কোন অডিটোরিয়াম বানিয়ে সেখানে প্রফেশনাল আর্টিস্টদের দিয়ে এক বা দুঘন্টার পুরো প্রোগ্রাম দেখাতে পারে। ডিজনির অ্যানিম্যাট্রনিক্স শোগুলোর মতো খুব ডিটেলড, খুব ভালো প্রোডাকশান ভ্যালু যুক্ত প্রোগ্রাম বানালে সেটা দেখতেও প্রচুর টুরিস্ট যাবে, তারা অনেক বেশী জানতেও পারবে। থাইল্যান্ডে এরকম একটা শো আছে সিয়াম নিরামিট বলে, ওদের কালচার প্রোমোট করার জন্য, সেটা ডিজনিল্যান্ডের লাইভ শোগুলোর থেকে কোন অংশে কম নয়। ইজিপ্টেও চাইলে ওরকম কিছু বানাতেই পারে।   
  • সুদীপ্ত | ০৫ মার্চ ২০২৪ ২০:০৮529048
  • ধন্যবাদ dc. অর্ল্যান্ডো-র ম্যাজিক কিংডম বা অ্যানিম্যাল কিংডম-এর রিভার্স অব লাইট-এর মতো শো-গুলোর সঙ্গে অবশ্যই তুলনা করবো না, তবে ঐতিহাসিক বিষয়ে আন্দামানের সেলুলার জেল-এর শো-ও খুব সাদামাটা  লেগেছে। কোনোভাবে সেদিনও পূর্ণিমা ছিল, সেটাই বাঁচোয়া :)
     
    একেবারেই একমত যে এই শোগুলো নতুন করে ঢেলে সাজানো উচিৎ, এতো কনটেন্ট থাকার পরে এমন শো আজকের দুনিয়ায় অচল। 
  • শিবাংশু | ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৯:৩৪529103
  • চমৎকার । চরৈবেতি ...
  • সুদীপ্ত | ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৯:১৪529148
  • থ্যাঙ্কিউ শিবাংশুদা! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন