এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভূতের বেগার

    Arindam Basu লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৯৪২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (৫ জন)
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
    "You are delivered to the advertiser who is the customer.
    He consumes you.
    The viewer is not responsible for programming ——
    You are the end product"
    Richard Serra (1973)
     

     
    এই সারসত্যটি টেলিভিশনের য়ুগে আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৭৩ এ মার্কিন শিল্পী/ভাস্কর রিচার্ড সেরা করেছিলেন । 
    তারপর সামাজিক মাধ্যমের যুগ এল।
    আমরা, যেখানে, সেখানেই রয়ে গেলাম, পণ্যে পরিবর্তিত হলাম।
    সে একরকম চলছিল।
    এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ |
    যন্ত্রকে চোখ, কান দিয়ে শেখানোর আমল।
    রোবটেরা আসছে, এখনো আসেনি।
    এযুগের বহিঃপ্রকাশ আরো উদগ্র, আরো ভয়ঙ্কর। 
    একদল মানুষ ভূতের বেগার খেটে চলেছে দিবারাত্র, কে জানে আপনিও হয়ত তাদেরই একজন, হয়ত নন। হয়ত জেনে শুনে ভূতের বেগার খাটছেন, হয়ত অজান্তে।
     
    বিপন্ন সময়ে এই অদ্ভুত জীবন আর টেকনোলজির বিচিত্র জগতের সঙ্গে একটু পরিচয় হোক।
     
    ***
     
    লেখাটির দ্বিতীয় পর্ব শুরু করার আগে যারা এই লেখাটিতে কমেন্ট করেছেন তাঁদের কাছে  কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখি। 

    যে কারণে লেখাটা শুরু করা সেটা মানুষে মেশিনে এক ধরণের অদ্ভুত ধরণের ঠিকে কাজের বন্দোবস্ত হয়েছে, যেখানে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে মেশিন, এবং অদ্ভুত নৈর্বক্তিক সব ব্যাপার স্যাপার, যেখানে মানুষ না হলে মেশিন হয় না, আবার সেই মেশিনই কাজ শেষ হলে মানুষের কাজ নিয়ে নেয়। ব্যাপারটার মধ্যে এক অদ্ভুর ধরণের বৈপরীত্য রয়েছে, মানুষ বিশেষে এবং পরিস্থিতি বিশেষে ব্যাপারটা মর্মান্তিক। পুরো বিষয়টার একটা নৈতিক দিক, বিশেষ করে একটা নেতিবাচক নৈতিক দিক রয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। কিছুটা সেই আলোচনা উস্কে দেবার জন্যও এই লেখাটার সূত্রপাত। এখানে যে কথাটা বিশেষ করে লেখার, মানুষকে বাদ দিলে মেশিন অচল, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল intelligence)-র ক্ষেত্রে একেবারেই অচল, সেই প্রসঙ্গে আসছি। মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেনসের যুগে মানুষের কাজ মেশিনে নিয়ে নেবে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়ত হবে না,  কে জানে হয়ত আমাদের কাজের জগতের বা নটা-পাঁচটার প্রথাগত কাজের জায়গাটিতে একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে। 

    আসছি সে কথায়, তার আগে কৃবু, মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence/Machine Learning) নিয়ে দু-চার কথা লেখা যাক। কোথা থেকে শুরু করা যায়? যোষিতার ভ্যাকুম ক্লিনার (“ভ্যাক”) দিয়েই না হয় গল্পটা শুরু করা যাক।
    যোষিতার একটি রোবট চালিত রোবটিয় যন্তর আছে, যোষিতা বলে,
    > নিজেই সময়মত নেমে এসে ঘর দোর পরিষ্কার করে নিজের চার্জিং স্টেশনে গিয়ে বসে থাকে। অল্প কথাও বলে।
    ওর সেনসর সমস্ত ধুলোবালি খুঁজে খুঁজে টেনে নেয়।

    স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র।
    সেটা না হলে, এই ভ্যাককে নিজে টেনে নিয়ে সব জায়গায় পরিষ্কার করার কাজ নিজেকে করতে হয়, সে ভারি পরিশ্রমসাধ্য কাজ। এখানে মানুষ আর যন্ত্রের এক জায়গায় মিল রয়েছে, উভয়েই “চোখ” দিয়ে দেখে কোথায় ধুলোময়লা, কোন জায়গাটা কার্পেট, কোন জায়গায় সিঁড়ি শুরু হয়েছে, কোথায় দেওয়াল, মানে আপনি চোখ-কান বন্ধ করে সাধারণ একটি ভ্যাক দিয়ে ঘর পরিষ্কার করতে গেলে ঠিক করে উঠতে পারবেন না, আপনাকে কোন না কোন রকম “দৃষ্টি”নির্ভর কাজ করতে হবে।

    আর রোবোট ভ্যাক?

    “Infrared lasers are used by more expensive robot vacuum cleaners to assess the size and shape of a room, while cheaper models rely on physical boundary stripes that you must place on the floor to ensure the robots only cleans in a specific area. “
    (https://www.techradar.com/news/how-do-robot-vacuums-work-and-should-i-buy-one)

    Robotic vacuum cleaners don't use cameras to see the world. Instead, they use various types of sensors to detect and measure the worlds around them and their own progress through it, including cliff sensors, bump sensors, wall sensors and optical encoders.

    Optical encoders are the most important: these sensors on the wheels of the robot tell it how far it has gone. They are called optical encoders because they use a light sensor to detect how many times the wheels have rotated. From this (and any difference between wheels, which indicates a turn), the robot can figure out how far it has traveled. Different models may include additional sensors (such as a dust scanner to see how much dust is being picked up), but those are the basic sensors that all robotic vacuums include.
    (https://www.cnet.com/home/kitchen-and-household/appliance-science-how-robotic-vacuums-navigate/)

    এই যে বিভিন্ন ধরণের সেনসর, অপটিকাল “এনকোডার”, লাইট সেনসর, বিভিন্ন ধরণের সংবেদনকে গ্রহণ এবং তাদের বিশ্লেষণ, যা না হলে যন্ত্রটাই হয না, সে সমস্ত কাজ মানুষের। মানুষ ব্যতিরেকে শুধু “কম্পিউটারের” কাজ নয় (যদিও unsupervised learning এর একটা ভূমিকা থাকে)। মানুষ “শেখায়” কম্পিউটারকে কিভাবে দেখতে হয়, কিভাবে “শুনতে হয়”, কিভাবে “ভাবতে হয়”। যে ব্যাপারটি এখানে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য, মেশিনকে “শেখানোর” নেপথ্যে শুধু বৈজ্ঞানিকরাই বা যাঁরা কোড লেখেন, প্রোগ্রামিং করেন তাঁরাই নন, একটা বিশাল ভূমিকা গ্রহণ করেন যাঁরা “লেবেলিং” এর কাজ করেন।

    ধরুণ আপনি মেশিনকে শেখাতে চান কি করে কুকুর আর বেড়াল চিনতে হয়। এইখানে ছোট শিশুকে কুকুর বেড়াল চেনানো আর মেশিনকে কুকুর বেড়াল চেনানোয় একটা মস্ত ফারাক। মানুষের শিশুকে শেখাতে গেলে কয়েকটা ছবি, বড়জোর একটা কুকুর আর একটা বেড়ালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেই সে মোটামুটি পরের বার বেশ শিখে যাবে কোনটাকে কি বলতে হয়। মেশিন তো আর সেটা পারে না, তাকে “শেখাতে” গেলে বিস্তর চিন্তা ভাবনার ব্যাপার রয়েছে। ধরুন আপনি মনে করলেন হুঁ, কুকুরের লম্বাটে মুখ, বড় চোখ, তেকোণা কান এইসমস্ত “ফিচার” দিয়ে মেশিনকে শেখাবেন কি করে কুকুর চিনতে হয়, এবং তারপর তাকে কুকুরের ছবি দেখালে সে হয়ত শনাক্ত করতে পারবে। সেটা যে সবসময় হবে তা তো নয়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে হয়ত হবেই না। তার থেকে আরো উন্নত উপায় আমাদের মস্তিষ্কের কোষে আমরা যেভাবে ভাবি, কোষ থেকে কোষে তরঙ্গায়িত হয়ে অজস্র জালের মধ্যে সংকেত পরিবাহিত হয়, সেইভাবে যদি মেশিনকে শেখানো যায়। আমাদের মস্তিষ্কে প্রায় ৮০০০ কোটি মস্তিষ্কের কোষ এবং অযুত জালিকায় চিন্তা-ভাবনা-তরঙ্গের নিরন্তর বাহিত হয়ে চলেছে, এইরকম একটা মডেল বানানো, যেখানে কোষ থেকে কোষে যেমন আমাদের মস্তিষ্কে চিন্তা-চেতনা-তরঙ্গের চলাফেরা, তেমনই মেশিনকে “শেখানোর” ব্যাপারটি ঐভাবে করা যেতে পারে (চিত্র ১)



    চিত্রটির ওপরের প্যানেলে দুটো স্নায়ু কোষকে দেখা যাচ্ছে, যাদের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সংবেদনা পারাপার করা হচ্ছে, কোষের মাথার দিক (যে জায়গাটিতে লাল চিহ্ন দেখা যাচ্ছে), সেখান থেকে সংবেনদার তরঙ্গ বাহিত হচ্ছে axon নামের অংশটির মাধ্যমে, তারপর দুটি কোষের মাঝের অংশটি (যার নাম সাইন্যাপস), তার মাধ্যমে সংবেদনা এক কোষ থেকে অন্যত্র ধাবিত হচ্ছে।
    এর ঠিক নীচে Deep Learning এর ছবি। বাঁদিকের তিনটে নীল রঙের গোলাকার বৃত্ত থেকে তথ্যের সূত্রপাত, তীরচিহ্ন গুলোকে ধরা যাক সাইন্যাপস, মাধের লাল রঙের বৃত্তগুলোকে মনে করা যাক আরো কিছু নিউরন (পরিভাষায় hidden nodes), এবং শেষের output node আরেকটি স্নায়ুকোষ। এবং এইভাবে অজস্র স্নায়ুকোষ একে অপরের সঙ্গে মিলে তথ্যের আদানপ্রদানের বাস্তবায়ন।

    এর সঙ্গে লেবেলিং/শনাক্তকরণের আর মানুষে মেশিনে ভুতের বেগারের যে প্রসঙ্গ নিয়ে শুরু করেছিলাম, তার কি সম্পর্ক? আসছি সে কথায় এর পর |
     
    তৃতীয় পর্ব: মেকানিকাল টার্ক
    ---------
     
    যে বিষয়টি নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম, তাতে ফেরা যাক। 

    মানুষ মানুষের হয়ে কাজ করেন, সে একরকম, কিন্তু মানুষ যখন যন্ত্রের দাসত্ব স্বীকার করেন, সে এক অন্যরকমের পরিস্থিতি। অথচ মেশিন লার্নিং এবং তথাকথিত "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার" যুগে এমন একটি বিচিত্র পরিস্থিতি উপস্থিত হয়েছে, যেখানে আমাদের কাজের ধরণ ধারণ হয়ত অনেকটা পাল্টাতে চলেছে, অন্তত কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তো বটেই। সেইটা নিয়ে আলোচনা করতে গিযে কিছুটা মেশিন/ডিপ লার্নিং এর অবতারণা করেছিলাম, ওপরের ছবিটায় স্নায়ু থেকে স্নায়ু কোষে সংবেদনা কিভাবে "হস্তান্তরিত" হয় তার একটা রেখাচিত্র এঁকেছি অপটু হাতে। এটার উদ্দেশ্য অবশ্য এ কথা বলা নয় যে আমাদের মস্তিষ্কে ঐভাবেই "ইনফরমেশন" এক স্নায়ু থেকে অন্যত্র ধাবিত হয়। এটা নেহাতই একটা অতি সরলীকরণ, কেউ কি সত্যি জানেন যে মানুষের মস্তিষ্কে ঠিক কিভাবে চেতনা আর তথ্যের প্রকাশ ঘটে? মনে হয় না। 
     
    সে যাই হোক, মেশিন এবং ডিপ লার্নিং (আরো বড় করে, ধরা যাক, "কৃ্ত্রিম বুদ্ধিমত্তা") কে কেন্দ্র করে (মূলত, তবে সেটাই একমাত্র নয়), একধরণের "ঠিকে কাজের" সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যাকে কেন্দ্র করে এই লেখা। 

    এখন যে এ আই (আরটিফিশিয়াল ইনটেলিজেনস), বা বাংলায় বলা যাক কৃবু'র রমরমা, তার পেছনে কমপিউটারের "ছবি চেনা" বা "দৃষ্টি"র একটি অবদান রয়েছে। সে কিরকম? মনে করুন, আপনি একটি ফুলের ছবি তুলেছেন অথচ সে ফুলের নাম আপনার মনে পড়ছে না বা সে নাম আপনি জানেন না। আপনি যদি সেই ফুলটির ডিজিটাল ছবি কমপিউটারে কোন একটি ঐরকম অ্যাপলিকেশনে "তুলে দেন" এবং ফুলটির নাম জানতে চান, কমপিউটার প্রোগ্রাম বা অ্যাপলিকেশনটি সেই ফুলের নাম আপনাকে জানিয়ে দেবে। বা, ধরুন যেভাবে আমরা গুগলে ছবি আপলোড করে সেই ছবির সম্বন্ধে জানতে পারি বা টিন আই নামের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ছবি সম্বন্ধে জানতে পারি। 
     
    তার মানে কমপিউটার কি সে ছবি "দেখতে পেল"? ভেবে দেখলে সেইরকমই তো মনে হয়। এর অন্য নাম 'কম্পিউটার ভিশন"। কমপিউটারকে নানান জিনিস দেখানোর প্রচেষ্টা বহু প্রাচীন। ১৯৯৪ সালে আমেরিকার ডাক বিভাগ একদল কমপিউটার বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে মিলে এমন একটি সিস্টেম তৈরী করে যেখানে লোকের হাতের লেখা থেকে তাদের বাড়ির বা ঠিকানার একটা অংশ পড়া যেতে পারে (ওদের দেশের পোস্টাল কোড)।
    তো এইরকম।
     
    ২০০৬ সাল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কমপিউটার গবেষিকা ফাই ফাই লি,  তিনি স্থির করলেন জগতে যত রকমের বস্তু আছে, ফুল লতা পাতা, প্রাণী, প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, ইত্যাদির ছবি তুলে সেগুলো কমপিউটারকে "শেখাবেন"। এই মর্মে তিনি প্রায় ১২ লক্ষ ছবি তুললেন। ১২ লক্ষ ছবির ১০০০ শ্রেণী, প্রতিটি শ্রেণীতে একেকটি ছবির নাম বা পরিচয, শ্রেণীপ্রতি ১২০০ করে ছবি। 
     
    এবার কমপিউটারকে "শেখাতে" গেলে যে কাজটা করতে হবে সেটা কিছুটা এইরকম। ধরুন কমপিউটারকে আপনি গোলাপ ফুল যে গোলাপ ফুল সেইটা শেখাতে চাইছেন। প্রথমে গোলাপ এবং অন্যান্য ফুলের ডিজিটাল ছবি সংগ্রহ করলেন (প্রচুর ছবি নানান  ভাবে নানান রকমের গোলাপ ফুলের ছবি এবং অন্যান্য ফুল গোলাপ নয় এমন ফুল তাদের ছবি), তারপর সে ডিজিটাল ছবি একটি ডাটাবেসে আপলোড করলেন। তারপর আপনাকে প্রতিটি ফুল যে গোলাপ সে কথাটা কমপিউটারকে জানাতে হবে, সেটি করতে গেলে ফুলের ছবিটিকে "লেবেল" করতে হবে। একই সঙ্গে আপনাকে আরো কিছু ফুল, যে ফুল গোলাপ নয়, তাদের ছবি তুলে  এবং লেবেল করে একই রকম করে আপলোড করে দিতে হবে এবং কোনটা গোলাপ ফুল আর কোনটা গোলাপ নয় স্পষ্ট করে কমপিউটারকে শিখিয়ে দিতে হবে। তার পরে আরো কিছু জটিল অঙ্কের ব্যাপার রয়েছে। 
     
    ২০০৬ সালে যন্ত্রকে যাবতীয় জাগতিক ছবি চেনানোর এই জটিল কাজটি সম্পন্ন করার উদ্দশ্যে ফাই ফাই লি  একটি ডাটাবেস তৈরী করলেন,তার নাম দিলেন  ইমেজনেট। পরবর্তীকালে ইমেজনেটকে কেন্দ্র করে যন্ত্রকে ছবি চেনানোর বহু প্রতিযোগিতা হয়েছিল এবং  কৃবুর জগতে ইমেজনেটের অপরিসীম গুরুত্ব, কত যে আবিষ্কার ইমেজনেটের মাধ্যমে হয়েছে! আপাতত সে গল্প থাক। কাজের কথায় ফিরি। 
     
    ১২ লক্ষ ছবি তো ফাই ফাই লি তুললেন, অত ছবির লেবেল হবে কি উপায়ে? ফাই ফাই একা যদি সবকটি ছবির লেবেলের দায়িত্ব নিয়ে লেবেল করতেন এবং সারা দিন শুধু লেবেল ছাড়া আর অন্য কোন কাজ না করতেন, তাহলেও তাঁর একার পক্ষে সব ছবি লেবেল করতে কমপক্ষে ১০-১২ বছর লেগে যেত। কাজেই অন্য উপায় অবলম্বন করতেই হয়। 
    সময়টা ২০০৬, তখনও আজকালকার সাবেক তথাকথিত সামাজিক মাধ্যম বাজারে আসেনি।
     
    তখন ফাই-ফাই লি আমাজন কোমপানীর মেকানিকাল টার্কের (এমটার্ক) শরণাপন্ন হলেন। 
     
    সেই সময়ে কোম্পানি হিসেবে আমাজন আজকের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রায়তন। আমাজন শুরু হয়েছিল নানারকমের বইয়ের ডিজিটাল ক্যাটালগ এবং বিক্রির মাধ্যম রূপে। তার পর কালক্রমে সেখানে অন্যান্য বহু বিক্রেতা নিজেদের পণ্য নিয়ে পসার শুরু করলেন,ফলে আমাজন একটি বৃহদাকার ডিজিটাল বাজারে পরিণত হল। 
    এযাবৎকাল মানুষ বই বাড়ি, গাড়ি নানারকমের সামগ্রী এই সমস্ত ক্রয় বিক্রয় করে এসেছে, ডিজিটাল জগতেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। আমাজন ইন্টারনেটে অবস্থিত একটি বৃহৎ বিপণি, সেখানে কি না বিক্রি হয়।  আমাজনের বাজার যখন জমে উঠেছে তখন আরেকটি জটিল সমস্যা দেখা দিল। বিপণিটি নিঃসন্দেহে অতিবৃহৎ, সবাই বেচতে চায়, অতএব এক্ষেত্রে যা হয়, প্রচুর  পরিমাণে একই বস্তুর অজস্র ডুপ্লিকেট বেরোতে লাগল। এখন মানুষের চোখে একেক জোড়া জিনিস যে ডুপ্লিকেট, সেটি নির্ণয় করা সহজ, যন্ত্রের দ্বারা সেই কাজ সম্পন্ন হবার নয় (অন্তত সে সময়ে সম্ভব ছিল না)। দু দশ হাজার ডুপ্লিকেট ছবি না হয় মানুষজন চোখে দেখে নির্ণয় করতে পারেন এক্ষেত্রে সমস্যা হল যে লক্ষ লক্ষ জিনিসের ডুপ্লিকেট, কোন বেশ কয়েকজন মানুষের পক্ষেও করে ওঠা সম্ভব নয়, অথচ না করতে পারলে ব্যবসাটাই অচল হয়ে পড়ে। এ সেই ফাই-ফাই লি'র ছবি চেনার আর লেবেলিং এর সমস্যার মতন ব্যাপার।
     
    এর সমাধান করলেন হরিনারায়ণ নামে এক ভারতীয় ইঞ্জিনিয়র,যাকে বলে যন্ত্রে-মানুষে মেলবন্ধন ঘটিয়ে। ডুপ্লিকেট ছবি চেনার কাজটিকে যন্ত্রের সাহায্যে অসংখ্য ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলা হল, তারপর একেকটা ছোট অংশ অজস্র মানুষের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হল। এতে করে, যে যার নিজের সময়মত কাজটুকু করে জমা দিলেন, কাজটা সময়মত হয়ে  গেল। এরা এর নাম দিলেন এম টার্ক, ইউরোপের অষ্টাদশ শতকে মেকানিকাল টার্কের নামের আদলে।
     
    আমাজনের মালিক জেফ বেজোস ঝানু ব্যবসায়ী। তিনি দেখলেন, এ ব্যাপারটিকে যদি বাজারে নিয়ে আসা যায়, বা যেভাবে মানুষ বাজারে এসে পসার সাজিয়ে বিক্রিবাটা করে, ঠিক সেভাবেই এই প্রক্রিয়াটিকে কেন্দ্র করে যদি একটি 'কাজের বাজার' তৈরী করে ফেলা যায়, কেমন হয়? 
     
    ব্যাপারটা কেমন জানেন? মনে করুন আপনি একটি প্রবন্ধ লিখছেন, সে প্রবন্ধের জন্য কিছু তথ্য ও গবেষণার প্রয়োজন, আপনার হাতে সময় নেই। আপনি আমাজনের  এম টার্ক নামে প্রোজেক্টটিতে নাম লেখালেন গবেষণার কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বিজ্ঞাপণ দিলেন এবং বললেন যে আপনার কয়েকটি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ চাই ও প্রবন্ধ পিছু আপনি যে কাজ করে দেবে তাকে টাকা দেবেন। এবার মনে করুন, আমিও এমটার্কে নাম লিখিয়েছি, তবে আমি কাজ "দেব" বলে নাম লেখাইনি, কাজ "চাই" বলে নাম লিখিয়েছি। আপনার বিজ্ঞাপণটি আমার নজরে পড়ল, আমি কাজ "ধরে" নিলাম। আপনি তথ্য চাইছিলেন আমি তথ্য সংগ্রহ করে এমটার্কের মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠালাম, আপনি  আমাকে যে পারিশ্রমিক দেবেন প্রতিশ্রুতি করেছিলেন, এমটারকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলেন। এ বাবদ আমাজন এমটার্ক তাদের ধার্য টাকা কেটে নিয়ে আমাকে আমার পারিশ্রমিক মিটিয়ে দিল। 
     
    আপনি আমাকে চেনেন না, আমিও আপনার সঙ্গে পরিচিত হলাম না, আমার আর আপনার সম্পর্ক কাজ নিয়ে, তাও পুরো কাজটুকু নয় কাজের কিয়দংশ মাত্র। আমার কাজ করা হয়ে গেলে টাকা পেয়ে আমি আবার অন্য কাজ "ধরলাম", আপনিও অন্যত্র চলে গেলেন, আমাদের কেউ কাউকে চিনি না, তার প্রয়োজনও নেই এ কাজে। আপনার কাছে আমি অদৃশ্য, আমার কাছে আপনি অদৃশ্য, মাঝখানে রয়ে গেল যন্ত্র। 
     
    যন্ত্র, মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করল।
     
    মেকানিকাল টার্ক। যান্ত্রিক তুর্কী।
     
    ইউরোপে অষ্টাদশ শতকে, ১৭৭০ সালে উলফগ্যাং ফন কেমপেলেন নামে এক হাঙ্গেরিয়ান উদ্ভাবক সে সময়ের অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয় সাম্রাজ্যের মহারাণীর জন্য এক যন্ত্রের আবিষ্কার করেন, তার নাম দেন মেকানিকাল (যান্ত্রিক) টার্ক (তুর্কী?)। অদ্ভুত এই যন্ত্রের ভেতরে  একজন মানুষ থাকত, যে লোক ওস্তাদ দাবাড়ু, কিন্তু সে থাকত লোকচক্ষের অন্তরালে। লোকে দেখত যান্ত্রিক এক পুতুল, যাকে দেখতে তু্র্কী বাজিগরদের মতন, সে অনায়াসে তাবড় দাবাড়ুদের দাবা খেলায় হারিয়ে দিচ্ছে (চিত্র ২)
     

    (কেমপেলেনের যান্ত্রিক তুর্কী, মেকানিকাল টার্ক, 
     
    যন্ত্রের এহেন খেলা দেখে মানুষ মাত হলেও আসলে পুরো ব্যাপারটি একটি মহা ধাপ্পা, প্রতারণা। 
     
    এই আশ্চর্য যান্ত্রিক তুরকীর কার্যকলাপ দেখার পর মার্কিন সাহিত্যিক, যিনি একাধারে গোয়েন্দা গল্পের জনকও বটে,  এডগার অ্যালান পো, "মেলজেলের দাবাড়ু"  (maelzel's chess player) নাম দিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। আমি লেখাটি থেকে কিছু কিছু অংশ তুলে দিলাম। 
     
    > "we find every where men of mechanical genius, of great general acuteness, and discriminative understanding, who make no scruple in pronouncing the Automaton a pure machine, unconnected with human agency in its movements, and consequently, beyond all comparison, the most astonishing of the inventions of mankind. And such it would undoubtedly be, were they right in their supposition. ... what shall we think of the calculating machine of Mr. Babbage? What shall we think of an engine of wood and metal which can not only compute astronomical and navigation tables to any given extent, but render the exactitude of its operations mathematically certain through its power of correcting its possible errors? What shall we think of a machine which can not only accomplish all this, but actually print off its elaborate results, when obtained, without the slightest intervention of the intellect of man? ...  a machine such as we have described is altogether above comparison with the Chess-Player of Maelzel. By no means — it is altogether beneath it — that is to say provided we assume (what should never for a moment be assumed) that the Chess-Player is a pure machine, and performs its operations without any immediate human agency. Arithmetical or algebraical calculations are, from their very nature, fixed and determinate. Certain data being given, certain results necessarily and inevitably follow. These results have dependence upon nothing, and are influenced by nothing but the data originally given. And the question to be solved proceeds, or should proceed, to its final determination, by a succession of unerring steps liable to no change, and subject to no modification. This being the case, we can without difficulty conceive the possibility of so arranging a piece of mechanism, that upon starting it in accordance with the data of the question to be solved, it should continue its movements regularly, progressively, and undeviatingly towards the required solution, since these movements, however complex, are never imagined to be otherwise than finite and determinate. But the case is widely different with the Chess-Player. With him there is no determinate progression. No one move in chess necessarily follows upon any one other. From no particular disposition of the men at one period of a game can we predicate their disposition at a different period. ... There is then no analogy whatever between the operations of the Chess-Player, and those of the calculating machine of Mr. Babbage, and if we choose to call the former a pure machine we must be prepared to admit that it is, beyond all comparison, the most wonderful of the inventions of mankind. ... It is quite certain that the operations of the Automaton are regulated by mind, and by nothing else. Indeed this matter is susceptible of a mathematical demonstration, a priori. The only question then is of the manner in which human agency is brought to bear. (শেষের লাইনটা আমার দাগানো )। 
     
    আমরা পরে আলোচনা করব যে পো'র প্রণীত যান্ত্রিক তুর্কীর এই লেখাটি আমাদের আজকের যুগে তথাকথিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আমলে কি সাংঘাতিক রকমের প্রযোজ্য এবং কি করুণ সে সব কাহিনি। সে গল্প এর পর।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • ব্লগ | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৯৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • পরিচয় হোক | 165.225.***.*** | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩১526837
  • মাদুর পাতলাম। 
  • &/ | 107.77.***.*** | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:২৯526845
  • গুপীর মতন বলছি, 'আয় আয় আয় আয় রে আয়' :)
  • যদুবাবু | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:০৯526850
  • বাঃ, এই তো আমিও মাদুর পেতেছি। দারুণ একটা টই হতে চলেছে। :) 
  • যোষিতা | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৬526855
  • ছোট ছোট রোবট তো ঘরে ঘরেই রয়েছে।
    একটা উদাহরণ দিই। 
    আমার এক বন্ধু প্যারিসের কাছে শার্ল দ্য গলে থাকে। বাঙালি। একদিন বলল, আমার কাজের মাসী দেহ রেখেছেন, তার শেষকৃত্যের জন্য আজ প্যারিস যেতে হল। মাসীর বাবা জারমান মা চাইনিজ।
    আমি দুঃখ প্রকাশ করতে যেতেই, বন্ধু হেসে আকুল। বলছে — ওটা রোবট ছিল। ঘর পরিস্কার করত।
    বাবা মায়ের ব্যাপারটাও বুঝিয়ে দিল। জারমান টেকনোলজি কিন্তু চায়নায় তৈরি।
    ভেবে দেখলাম এমন রোবট তো আমাদেরও রয়েছে। নিজেই সময়মত নেমে এসে ঘর দোর পরিষ্কার করে নিজের চার্জিং স্টেশনে গিয়ে বসে থাকে। অল্প কথাও বলে।
    ওর সেনসর সমস্ত ধুলোবালি খুঁজে খুঁজে টেনে নেয়।
    এই ধরণের কয়েকরকম রোবট আমরা ব্যবহার করছি প্রতিনিয়ত, কিন্তু সিনেমার রোবটের মত দেখতে নয় বলে খেয়াল থাকে না। তাই না?
    অন্য রোবটের কথা পরে বলা যাবে।
     
  • যোষিতা | ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৫526857
  • শীতপ্রধান দেশ বলেই হয়ত এখানে ঘরের বাইরের দিকের দেয়াল গুলোর প্রায় পুরোটাই কাচের জানলা। সে জানলা পরিষ্কার করে ঝকঝকে করে রাখার জন্যও তো রোবট ব্যবহার করছে অনেকে।
    যেমন এইটে
     
  • যোষিতা | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:১৪526858
  • ডাক্তারবাবু এ লাইনে অনেক বেশি জানেন। আমার লাইনে পড়াশোনা জিরো। তা আমার মেয়ে যেহেতু এআই নিয়েই কাজ করে, একবার সম্ভবত এই সাইটেই কোথাও বলেছিলাম যে এআই অন্ধমানুষদের জন্য কত কাজে আসে। এদেশে অন্ধমানুষের সঙ্গে একজন করে সাহায্যকারী থাকার মত অবস্থা নেই। অন্ধ একাই থাকে, একাই চাকরিতে যায়, বাসে বা ট্রেনে চাপে। রাস্তার ক্রসিং বা ফুটপাথ বা রেলের প্ল্যাটফর্ম তাদের সুবিধের কথা ভেবেই তৈরি। কিন্তু কোন ট্রেন কখন কোন ট্র্যাকে আসবে, এরজন্য তাদের কাছে থাকে বিশেষ ডিভাইস, ফলে তাদের খবর পেতে সমস্যা হয় না।
    নেশিন লার্নিং এরকম অনেক কিছু করে চলেছে। 
    এসবের পেছনে অবিরাম কাজ করে চলেছে এআই এর কলাকুশলীরা। প্রোগ্র্যামিং করাটা কোনো বিশেষ ক্যাপা নয়। আইডিয়া বের করাটাই আসল। 
    একটু গর্ব করেই বলি, আমার মেয়ে এই দ্বিতীয় দলের। এরা সংখ্যায় নগন্য এদেশে। কিন্তু ফ্রম বিগিনিং টু এন্ড একটা জিনিস যেমন তৈরী করতে পারে, বা একটা টিম কে কাজটা ডেলিগেট করে দিতে পারে, তার চেয়েও বেশি দরকারি কাজটা করে, নতুন একটা আইডিয়া। সেটা কাজের আইডিয়া হলে, আর কথা নেই। অ্যালগরিদম তৈরি করো, সেটা বেচে দাও। নয়ত নিজেই দলবলসহ বানাও।
    যারা হৈ হৈ করে, যে এআই এলে সব চাকরি চলে যাবে, তাদের বলি, ওয়াশিং মেশিন বা ফুড প্রোসেসর এসে কাপড়কাচা বা বাটনা বাটার কাজ কমিয়েছে ঠিকই কিন্তু কাজের অভাব নেই। ডিশ ওয়াশারের ক্ষেত্রেও একই।  যদিও এগুলো রোবট নয়, বা হাতে করে চালানো ভ্যাকুউম ক্লিনারও রোবট নয়।
  • r2h | 192.139.***.*** | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১:২১526861
  • এটা ভয়ানক ভালো টপিক, যদুবাবুর টইয়ে প্রসঙ্গটা দেখেই কৌতুহল হয়েছিল।
    ব্যবহারকারীর হাতের এন্ড প্রোডাক্ট আর তৈরীর নেপথ্যের তথ্য সংগ্রহ, প্যাটার্ন, বায়াস, লক্ষ্য ইত্যাদি - এসবের মাঝে খুবই ইন্টারেস্টিং যাত্রা।

    পুরোপুরি আম জনতার বোধগম্য হবে কিনা জানি না, তাও পড়বো, সাগ্রহে অপেক্ষায় আছি।
  • যোষিতা | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:৩৩526864
  • এআই এর ব্যবহার কিনা জানি না, তবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। রিটেইল এর একটা কোম্পানীতে প্রোজেক্টে জন্য গেছলাম, ওয়্যারহাউসের ভেতর দিয়ে হেঁটে খানিকটা পথ যেতে হতো। বিশাল ওয়্যারহাউসে হয়ত একজন কি দুজন মানুষ, কিল্তু কাজ চলছে। চার পাঁচটা রোবট যাবতীয় কাজ করছে। সম্পূর্ণ আনম্যান্ড ডিভাইস। কোনওটা লেবেলিং করছে। কোনওটা জিনিস গুছিয়ে রাখছে। এ জিনিস চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। দেশে কাজ করার জন্য মানুষ কম, তাই হয়ত এমন ব্যবস্থা।
    আশির দশকের শেষে আরও বড় মেগা সাইজের রোবট এর কথা শুনলাম। সেগুলোর ব্যবহার হতো স্টিলপ্লান্টগুলোর ব্লাস্ট ফার্নেসের কাজে। তাপমাত্রা এত বেশি থাকে যে লোহা গলাবার ফার্নেসের কাছাকাছি মানুষ যেতে পারে না। উনুন নিয়ে যারা ইন্জিনিয়ারিং পড়েছেন, তাঁরা জানবেন যে আর্ক ফার্নেসের ক্ষেত্রে প্রায় ৯০% কাজের জন্যই রোরটের প্রয়োজন। 
     
  • যোষিতা | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:০৬526867
  • ভিডিওতে যে কথাগুলো লেখা রয়েছে সেসবের সত্যতা আমাদের অনেকেরই অজানা নয়।  নতুন কথাও না।
    জেনে শুনেই আমরা এই আবর্তে ঘুরে চলেছি। 
    শুধু টেলিভিশন নয়, সোশাল মিডিয়াগুলোর ক্ষেত্রেও একথা সত্য। 
    সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা। যে দাম দিয়ে আমরা কাগজ কিনি, কাগজটা ছাপবার খরচই তার চেয়ে বেশি। তাহলে কাগজওয়ালারা লাভ করে কেমন করে? কেন না  ক্রেতাই প্রোডাক্ট। 
    সংবাদপত্রের পুরো লাভটাই বিজ্ঞাপন থেকে। বিজ্ঞাপন বাদ দিলে থাকছে খবর। সেই খবর কিনে নিতে হয় নানান নিউজ এজেন্সীর কাছ থেকে চড়া দামে। সেই খবরেরও খবর আছে। সেখানেও ক্রেতা আসলেই পন্য।
    আজকের দিনে ইউটিউবার বলে এক শ্রেণীর মানুষ আছেন, দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত তথ্য ইউটিউবের কাছে বিক্রি করে বিনিময়ে পয়সা আয় করেন, তাও ভিডিও ভাইরাল হলে বিজ্ঞপন থেকে কিছু টাকা। কিন্তু বিপুল তথ্য চলে যাচ্ছে পাবলিক ডোমেইনে। আরও অসংখ্য এরকম সোশাল মিডিয়া রয়েছে। সবার কাজই তথ্য সংগ্রহ করা। এছাড়া আইপি এবং অন্য তথ্যাদির ওর বেস করে হিজ্ঞাপন আসতেই থাকে।
  • যোষিতা | ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:১২526868
  • মেশিন লার্নিং এর ক্ষেত্রে প্রচুর ডেটা টুইটার থেকে নেওয়া হয়। এখন যেটার নাম এক্স।
    এক্স সবার জন্য বিনামূল্যে উপলব্ধ। মাগনায় কিস্যু আসে না এ দুনিয়ায়। যদি মাগনায় পাওযা যায়, তার মানে যে পাচ্ছে সে নিজেই পণ্য।
  • Kishore Ghosal | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৪২526931
  • আমিও মাদুর পাতলাম। হাঁ করে শুনছি। ভারতে এসব যন্তর এখনও বোধহয় পৌঁছয়নি। 
  • π | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:১২526933
  • অরিনদার লেখার অপেক্ষায়...
  • Kishore Ghosal | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪৮526936
  • @ দীমুঃ কলকাতাতেও পাওয়া যায়? বোঝো। দেখতে হচ্ছে। 
  • dc | 122.164.***.*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৫৯526937
  • আমিও পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি। 
  • Arindam Basu | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:০৫527025
  • লেখাটির দ্বিতীয় পর্ব শুরু করার আগে যারা এই  লেখাটিতে কমেন্ট করেছেন তাঁদের কাছে  কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখি। 

    যে কারণে লেখাটা শুরু করা সেটা মানুষে মেশিনে এক ধরণের অদ্ভুত ধরণের ঠিকে কাজের বন্দোবস্ত হয়েছে, যেখানে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে মেশিনে, এবং অদ্ভুত নৈর্বক্তিক সব ব্যাপার স্যাপার, যেখানে মানুষ না হলে মেশিন হয় না, আবার সেই মেশিনই কাজ শেষ হলে মানুষের কাজ নিয়ে নেয়। ব্যাপারটার মধ্যে এক অদ্ভুর ধরণের বৈপরীত্য রয়েছে এবং মানুষ বিশেষে এবং পরিস্থিতি বিশেষে ব্যাপারটা মর্মান্তিক। পুরো বিষয়টার একটা নৈতিক দিক, বিশেষ করে একটা নেতিবাচক নৈতিক দিক রয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে | কিছুটা সেই আলোচনা উস্কে দেবার জন্যও এই লেখাটার সূত্রপাত। এখানে যে কথাটা বিশেষ করে লেখার, মানুষকে বাদ দিলে মেশিন অচল, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল intelligence) র ক্ষেত্রে  একেবারেই অচল,  সেই প্রসঙ্গে আসছি | মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক আরটিফিশিয়াল ইনটেলিজেনসের যুগে মানুষের কাজ মেশিনে নিয়ে নেবে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়ত হবে না,  কে জানে হয়ত আমাদের কাজের জগতের বা নটা-পাঁচটার প্রথাগত কাজের জায়গাটিতে একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে। 

    আসছি সে কথায়, তার আগে কৃবু, মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence/Machine Learning) নিয়ে দু-চার কথা লেখা যাক। কোথা থেকে শুরু করা যায়? যোষিতার ভ্যাকুম ক্লিনার (“ভ্যাক”) দিয়েই না হয় গল্পটা শুরু করা যাক।
    যোষিতার একটি রোবট চালিত রোবটিয় যন্তর আছে, যোষিতা বলে,

    > নিজেই সময়মত নেমে এসে ঘর দোর পরিষ্কার করে নিজের চার্জিং স্টেশনে গিয়ে বসে থাকে। অল্প কথাও বলে।
    ওর সেনসর সমস্ত ধুলোবালি খুঁজে খুঁজে টেনে নেয়।

    স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র।
    সেটা না হলে, এই ভ্যাককে নিজে টেনে নিয়ে সব জায়গায় পরিষ্কার করার কাজ নিজেকে করতে হয়, সে ভারি পরিশ্রমসাধ্য কাজ | এখানে মানুষ আর যন্ত্রের এক জায়গায় মিল রয়েছে, উভয়েই “চোখ” দিয়ে দেখে কোথায় ধুলোময়লা, কোন জায়গাটা কার্পেট, কোন জায়গায় সিঁড়ি শুরু হয়েছে, কোথায় দেওয়াল, মানে আপনি চোখ-কান বন্ধ করে সাধারণ একটি ভ্যাক দিয়ে ঘর পরিষ্কার করতে গেলে ঠিক করে উঠতে পারবেন না, আপনাকে কোন না কোন রকম “দৃষ্টি”নির্ভর কাজ করতে হবে |

    আর রোবোট ভ্যাক?

    “Infrared lasers are used by more expensive robot vacuum cleaners to assess the size and shape of a room, while cheaper models rely on physical boundary stripes that you must place on the floor to ensure the robots only cleans in a specific area. “
    (https://www.techradar.com/news/how-do-robot-vacuums-work-and-should-i-buy-one)

    Robotic vacuum cleaners don't use cameras to see the world. Instead, they use various types of sensors to detect and measure the worlds around them and their own progress through it, including cliff sensors, bump sensors, wall sensors and optical encoders.

    Optical encoders are the most important: these sensors on the wheels of the robot tell it how far it has gone. They are called optical encoders because they use a light sensor to detect how many times the wheels have rotated. From this (and any difference between wheels, which indicates a turn), the robot can figure out how far it has traveled. Different models may include additional sensors (such as a dust scanner to see how much dust is being picked up), but those are the basic sensors that all robotic vacuums include.
    (https://www.cnet.com/home/kitchen-and-household/appliance-science-how-robotic-vacuums-navigate/)

    এই যে বিভিন্ন ধরণের সেনসর, অপটিকাল “এনকোডার”, লাইট সেনসর, বিভিন্ন ধরণের সংবেদনকে গ্রহণ এবং তাদের বিশ্লেষণ, যা না হলে যন্ত্রটাই হয না, সে সমস্ত কাজ মানুষের। মানুষ ব্যতিরেকে শুধু “কম্পিউটারের” কাজ নয় (যদিও unsupervised learning এর একটা ভূমিকা থাকে) | মানুষ “শেখায়” কম্পিউটারকে কিভাবে দেখতে হয়, কিভাবে “শুনতে হয়”, কিভাবে “ভাবতে হয়”। যে ব্যাপারটি এখানে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য, মেশিনকে “শেখানোর” নেপথ্যে শুধু বৈজ্ঞানিকরাই বা যাঁরা কোড লেখেন, প্রোগ্রামিং করেন তাঁরাই নন, একটা বিশাল ভূমিকা গ্রহণ করেন যাঁরা “লেবেলিং” এর কাজ করেন।

    ধরুণ আপনি মেশিনকে শেখাতে চান কি করে কুকুর আর বেড়াল চিনতে হয়। এইখানে ছোট শিশুকে কুকুর বেড়াল চেনানো আর মেশিনকে কুকুর বেড়াল চেনানোয় একটা মস্ত ফারাক। মানুষের শিশুকে শেখাতে গেলে কয়েকটা ছবি, বড়জোর একটা কুকুর আর একটা বেড়ালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেই সে মোটামুটি পরের বার বেশ শিখে যাবে কোনটাকে কি বলতে হয়। মেশিন তো আর সেটা পারে না, তাকে “শেখাতে” গেলে বিস্তর চিন্তা ভাবনার ব্যাপার রয়েছে। ধরুন আপনি মনে করলেন হুঁ, কুকুরের লম্বাটে মুখ, বড় চোখ, তেকোণা কান এইসমস্ত “ফিচার” দিয়ে মেশিনকে শেখাবেন কি করে কুকুর চিনতে হয়, এবং তারপর তাকে কুকুরের ছবি দেখালে সে হয়ত শনাক্ত করতে পারবে। সেটা যে সবসময় হবে তা তো নয়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে হয়ত হবেই না |  তার থেকে আরো উন্নত উপায় আমাদের মস্তিষ্কের কোষে আমরা যেভাবে ভাবি, কোষ থেকে কোষে তরঙ্গায়িত হয়ে অজস্র জালের মাধ্যে সংকেত পরিবাহিত হয়, সেইভাবে যদি মেশিনকে শেখানো যায়। আমাদের মস্তিষ্কে প্রায় ৮০০০ কোটি মস্তিষ্কের কোষ এবং অযুত জালিকায় চিন্তা-ভাবনা-তরঙ্গের নিরন্তর বাহিত হয়ে চলেছে, এইরকম একটা মডেল বানানো, যেখানে কোষ থেকে কোষে যেমন আমাদের মস্তিষ্কে চিন্তা-চেতনা-তরঙ্গের চলাফেরা, তেমনই মেশিনকে “শেখানোর” ব্যাপারটি ঐভাবে করা যেতে পারে (চিত্র ১)



    চিত্রটির ওপরের প্যানেলে দুটো স্নায়ু কোষকে দেখা যাচ্ছে, যাদের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সংবেদনা পারাপার করা হচ্ছে, কোষের মাথার দিক (যে জায়গাটিতে লাল চিহ্ন দেখা যাচ্ছে), সেখান থেকে সংবেনদার তরঙ্গ বাহিত হচ্ছে axon নামের অংশটির মাধ্যমে, তারপর দুটি কোষের মাঝের অংশটি (যার নাম সাইন্যাপস), তার মাধ্যমে সংবেদনা এক কোষ থেকে অন্যত্র ধাবিত হচ্ছে।
    এর ঠিক নীচে Deep Learning এর ছবি। বাঁদিকের তিনটে নীল রঙের গোলাকার বৃত্ত থেকে তথ্যের সূত্রপাত, তীরচিহ্ন গুলোকে ধরা যাক সাইন্যাপস, মাধের লাল রঙের বৃত্তগুলোকে মনে করা যাক আরো কিছু নিউরন (পরিভাষায় hidden nodes), এবং শেষের output node আরেকটি স্নায়ুকোষ | এবং এইভাবে অজস্র স্নায়ুকোষ একে অপরের সঙ্গে মিলে তথ্যের আদানপ্রদানের বাস্তবায়ন।

    এর সঙ্গে লেবেলিং/শনাক্তকরণের আর মানুষে মেশিনে ভুতের বেগারের যে প্রসঙ্গ নিয়ে শুরু করেছিলাম, তার কি সম্পর্ক? আসছি সে কথায় এর পর |
  • যোষিতা | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২৩527027
  • চলুক ডাক্তারবাবু।
    কিছু কিছু জায়গায় দ্বিমত আছে। সেগুলো পরে বলব।
    আপনি লিখে চলুন।
  • Arindam Basu | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৭527033
  • সে ঠিক আছে। 
    একেবারে কিছ লেখা হচ্ছিল না বলে যাকে বলে stream of consciousness থেকে লিখলাম। পরে এডিট করব। লেখাটা দাঁড়াক আগে। 
  • a | 49.183.***.*** | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:৪৬527041
  • অরিনবাবু হলেন পাড়ার লোক, তাই সেই সুবাদে একটা কথা জানতে চাই। 
     
    আমার এআই টিচার বলেছিলেন নিউরাল নেটওয়ার্ক কে মস্তিষ্কের সাথে তুলনা করলে বোঝা সহজ হয় বটে, কিন্তু আসলে এদের শেখার পদ্ধতিতে আকাশ পাতাল তফাত। সেক্ষেত্রে ওনার বক্তব্য ছিল সিম্পল সরলরেখা দিয়ে শুরু করে পার্সেপ্ট্রন হয়ে এনেনে পৌছলে বোঝাটা সঠিক হয়। এবিষয়ে আপনার কি বক্তব্য? 
     
    আরেকটা প্রশ্ন, একটু এগিয়ে গিয়ে করে রাখলাম যখনসঠিক সময় হবে তখন বলবেনঃ জেফ হিন্টন বলেছিলেন ব্যাক প্রপ শেখার পদ্ধতি হিসেবে উন্নততর আর তাই এআই এর কিছুটা হলেও এজ রয়েছে। এবিষয়েও আপনার মতামত জানলে খুব ভালো লাগবে। 
  • Arin | 202.36.***.*** | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৩২527043
  • @a, দুটো কথাই ১০০% সত্যি! 
    পরের পর্বে এইগুলো নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে | 
  • যদুবাবু | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:১১527044
  • ভালো লাগলো দ্বিতীয় পর্ব-টা। পরের পর্বের অপেক্ষায়। 
     
    দুটো কমেন্ট করার লোভ সামলাতে পারছি না। এক, আমি আপাতত যেটুকু বুঝি, নিউরাল নেটওয়ার্কে "নিউরন ল্যাঙ্গোয়েজ" একটি রূপক বা মেটাফর মাত্র - অর্থাৎ, নিউরাল নেটওয়ার্ক একটা ম্যাসিভ কম্পিউটেশনাল মডেল, যার ইন্টারকানেক্টেড নোডের ঐ স্ট্রাকচার বায়োলজিক্যাল নিউরন থেকেই অনুপ্রাণিত। তবে কিছু পার্থক্য আছে, কোন স্ট্রাকচার দেখছি তার উপরে উনিশ-বিশ। যেমন ছবিতে যে নিউরাল নেটওয়ার্কটি দেখানো সেটা ফীড-ফরোয়ার্ড (ইনপুট থেকে এক-ই দিকে যাচ্ছে, আউটপুটের পানে) হলে বায়োলজিক্যাল নিউরনের সঙ্গে তার সবথেকে বড়ো পার্থক্য ঐ ওয়ান-ডিরেকশনাল নেচার। রেকারেন্ট এন-এন হলে তাতে অবশ্য লুপ থাকে। :) 

    আর দুই, আমাদের প্যালারাম বাংলা ভাষায় মেশিন লার্নিং বোঝানোর একটা চমৎকার সাইট বানিয়েছেঃ https://www.banglaml.in/ ...  এবং, আমাকে বলেছে আস্তে আস্তে আরও অনেক কিছু জুড়বে ঐ সাইটে। (আশা করছি এই কথাটা ফাঁস করার জন্য প্যালারাম আমাকে ক্যালাবে না।) 
  • Arindam Basu | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৯527045
  • একেবারে সহমত @যদুবাবু।
    ছবিটাতে শুধুই একটা যাহোক তাহোক ফিড ফরওয়ার্ড নেটওয়ার্ক দেখা যাচ্ছে, এমনকি ব্যাকপ্রোপাগেশনও দেখানো হয়নি। পরের পর্বে এগুলো নিয়ে কিছুটা যদি সম্ভব হয় লিখব।
    বাংলাএমএল সাইট টা ভারি চমৎকার! 
     
  • Arindam Basu | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৯527242
  • তৃতীয় পর্ব: মেকানিকাল টার্ক
    ---------
     
    যে বিষয়টি নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম, তাতে ফেরা যাক। 
    মানুষ মানুষের হয়ে কাজ করেন, সে একরকম, কিন্তু মানুষ যখন যন্ত্রের দাসত্ব স্বীকার করেন, সে এক অন্যরকমের পরিস্থিতি। অথচ মেশিন লার্নিং এবং তথাকথিত "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার" যুগে এমন একটি বিচিত্র পরিস্থিতি উপস্থিত হয়েছে, যেখানে আমাদের কাজের ধরণ ধারণ হয়ত অনেকটা পাল্টাতে চলেছে, অন্তত কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তো বটেই | সেইটা নিয়ে আলোচনা করতে গিযে কিছুটা মেশিন/ডিপ লার্নিং এর অবতারণা করেছিলাম, ওপরের ছবিটায় স্নায়ু থেকে স্নায়ু কোষে সংবেদনা কিভাবে "হস্তান্তরিত" হয় তার একটা রেখাচিত্র এঁকেছি অপটু হাতে। এটার উদ্দেশ্য অবশ্য এ কথা বলা নয় যে আমাদের মস্তিষ্কে ঐভাবেই "ইনফরমেশন" এক স্নায়ু থেকে অন্যত্র ধাবিত হয়। এটা নেহাতই একটা অতি সরলীকরণ, কেউ কি সত্যি জানেন যে মানুষের মস্তিষ্কে ঠিক কিভাবে চেতনা আর তথ্যের প্রকাশ ঘটে? মনে হয় না। 
     
    সে যাই হোক, মেশিন এবং ডিপ লার্নিং  (আরো বড় করে, ধরা যাক, "কৃ্ত্রিম বুদ্ধিমত্তা") কে কেন্দ্র করে (মূলত, তবে সেটাই একমাত্র নয়), একধরণের "ঠিকে কাজের" সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যাকে কেন্দ্র করে এই লেখা। 
    এখন যে এ আই (আরটিফিশিয়াল ইনটেলিজেনস),বা বাংলায় ধরুন কৃবু'র রমরমা,তার পেছনে কমপিউটারের "ছবি চেনা" বা "দৃষ্টি"র একটি অনবদ্য অবদান রয়েছে। সে কিরকম? মনে করুন, আপনি  একটি ফুলের ছবি তুলেছেন অথচ সে ফুলের নাম আপনার মনে পড়ছে না। আপনি যদি সেই ফুলটির ডিজিটাল ছবি কমপিউটারে "তুলে দেন",এবং ফুলটির নাম জানতে চান, কমপিউটার প্রোগ্রাম সে নাম আপনাকে জানিয়ে দেবে। তার মানে কমপিউটার কি সে ছবি "দেখতে পেল"? সেইরকম ই তো মনে হয়। এর অন্য নাম 'কম্পিউটার ভিশন"। কমপিউটারকে নানান জিনিস দেখানোর প্রচেষ্টা বহু প্রাচীন। ১৯৯০ সালে আমেরিকার ডাক বিভাগ একদল কমপিউটার বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে মিলে এমন একটি সিস্টেম তৈরী করে যেখানে লোকের হাতের লেখা থেকে তাদের বাড়ির বা ঠিকানার একটা অংশ পড়া যেতে পারে (ওদের দেশের পোস্টাল কোড) | 
    তো এইরকম।
     
    ২০০৬ সাল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কমপিউটার গবেষিকা  ফাই ফাই লি,  তিনি স্থির করলেন জগতে যত রকমের বস্তু আছে,ফুল লতা পাতা, প্রাণী, প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, ইত্যাদির ছবি তুলে সেগুলো কমপিউটারকে "শেখাবেন" |  এই মর্মে তিনি প্রায় ১২ লক্ষ ছবি তুললেন | ১২ লক্ষ ছবির ১০০০ শ্রেণী (তার নাম 'ক্লাস'), তার মানে একেক শ্রেণীতে ১২০০ করে ছবি। 

    এবার কমপিউটারকে "শেখাতে" গেলে যে কাজটা করতে হবে সেটা এইরকম। ধরুন কমপিউটারকে আপনি গোলাপ ফুল যে গোলাপ ফুল সেইটা চেনাতে চাইছেন। প্রথমে গোলাপ ফুলের ছবি তুললেন (প্রচুর ছবি নানান  ভাবে নানান রকমের গোলাপ ফুলের ছবি), তারপর সে ডিজিটাল ছবি একটি ডাটাবেসে আপলোড করলেন। তাতেও তো কমপিউটার জানবে না যে সে ফুল গোলাপ  না কি জবা। অতএব তখন আপনাকে প্রতিটি ফুল যে গোলাপ সে কথাটা কমপিউটারকে জানাতে হবে, ফুলের ছবিটিকে "লেবেল" করে। তাতেও পুরোটা হবে না, কারণ আপনাকে আরো কিছু ফুল, যে ফুল গোলাপ নয়, তাদের ছবি তুলে  এবং লেবেল করে একই রকম করে আপলোড করে দিতে হবে এবং কোনটা গোলাপ ফুল আর কোনটা গোলাপ নয় (না কি অন্য ফুল) স্পষ্ট করে কমপিউটারকে শিখিয়ে দিতে হবে। তো যন্ত্রকে ছবি চেনানোর এই জটিল কাজটি সম্পন্ন করার উদ্দশ্যে ফাই ফাই লি  একটি প্রোগ্রাম তৈরী করলেন,তার নাম দিলেন  ইমেজনেট , প্রোগ্রামটি শব্দ ও বাক্যের অনুরূপ একটি প্রোগ্রাম, ওয়ার্ডনেটএর অনুসারী বলে  | পরবর্তীকালে ইমেজনেট কে কেন্দ্র করে যন্ত্রকে  ছবি চেনানোর বহু প্রতিযোগিতা হয়েছিল এবং  কৃবুর জগতে ইমেজনেটের অপরিসীম গুরুত্ব, কত যে আবিষ্কার ইমেজনেটের মাধ্যমে হয়েছে! আপাতত সে গল্প থাক। কাজের কথায় ফিরি। 
     
    ১২ লক্ষ ছবি তো ফাই ফাই লি তুললেন, অত ছবির লেবেল হবে কি উপায়ে? ফাই ফাই  একা যদি সবকটি ছবির লেবেলের দায়িত্ব নিয়ে লেবেল করতেন,  এবং সারা দিন শুধু লেবেল ছাড়া আর অন্য কোন কাজ না করতেন, তাহলেও তাঁর একার পক্ষে সব ছবি লেবেল করতে কমপক্ষে ১০-১২ বছর লেগে যেত | কাজেই অন্য উপায় অবলম্বন করতেই হয়। 
    সময়টা ২০০৬,  তখনও আজকালকার সাবেক তথাকথিত সামাজিক মাধ্যম বাজারে আসেনি  | 

    ফাই-ফাই লি আমাজন কোমপানীর মেকানিকাল টার্কের ( এমটার্কের ) শরণাপন্ন হলেন। 

    সেই সময়ে কোমপানী হিসেবে আমাজন আজকের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রায়তন | আমাজন শুরু হয়েছিল নানারকমের বইয়ের ডিজিটাল ক্যাটালগ এবং বিক্রির মাধ্যম রূপে। তার পর কালক্রমে সেখানে অন্যান্য বহু বিক্রেতা নিজেদের পণ্য নিয়ে বিক্রি করতে শুরু করলেন,ফলে আমাজন একটি বৃহদাকার ডিজিটাল বাজারে পরিণত হয়। আমাজন কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা, জেফ বেজোস, তিনি সেই সময়ে  একটি অদ্ভুত কাজ করেছিলেন | সেটা এখানে সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য |

    এযাবৎকাল মানুষ বই  বাড়ি, গাড়ি নানারকমের সামগ্রী এই সমস্ত ক্রয় বিক্রয় করে এসেছে, ডিজিটাল জগতেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। আমাজন একটি বৃহৎ বিপণি, সেখানে কি না বিক্রি হয়।  আমাজনের বাজার যখন জমে উঠল তখন আরেক সমস্যা দেখা দিল। বিপণিটি নিঃসন্দেহে অতিবৃহৎ, সবাই বেচতে চায়, অতএব এক্ষেত্রে যা হয়, প্রচুর  পরিমাণে একই দ্রব্যের অজস্র ডুপ্লিকেট বেরোতে লাগল। এখন মানুষের পক্ষে একেক জোড়া জিনিস যে ডুপ্লিকেট করা সহজ, যন্ত্র ঠিক সেই কাজ করতে পারে না | আবার এক্ষেত্রে সমস্যা হল যে লক্ষ লক্ষ জিনিসের ডুপ্লিকেট, কোন একজন বা দুজন বা বেশ কয়েকজন মানুষের পক্ষেও করে ওঠা সম্ভব নয়, অথচ না করতে পারলে ব্যবসাটাই অচল হয়ে পড়ে | এর সমাধান করলেন ভেঙ্কি হরিনারায়ণ নামে  এক ভারতীয় ইঞ্জিনিয়র,যাকে বলে যন্ত্রে-মানুষে মেলবন্ধন ঘটিয়ে  | সমগ্র কাজটিকে যন্ত্রের সাহায্যে অসংখ্য ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলা হল,তারপর  একেকটা ছোট অংশ কর্মীদের দিযে দেওয়া হল। এখন এই কর্মীরাও ইনটারনেটের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে  ছিটিয়ে রয়েছেন, যে যার নিজের সময়মত কাজটুকু করে জমা দিলেন, কাজটা সময়মত হয়ে  গেল। 

    বেজোস ঝানু ব্যবসায়ী | তিনি দেখলেন, এ ব্যাপারটিকে যদি বাজারে ছাড়া যায়, বা যেভাবে মানুষ বাজারে এসে জাগতিক বস্তু ক্রয়-বিক্রয় করে, ঠিক সেভাবেই এই প্রক্রিয়াটিকে কেন্দ্র করে যদি একটি 'কাজের বাজার' তৈরী করে ফেলা যায়, কেমন হয়? ব্যাপারটা কেমন জানেন? ধরুন আপনি একটি প্রবন্ধ লিখছেন, সে প্রবন্ধের কাজের জন্য কিছু গবেষণার প্রয়োজন, আপনার হাতে সময় নেই | আপনি আমাজনের  এম টার্ক নামে প্রোজেক্টটিতে নাম লেখালেন, এবং গবেষণার কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বিজ্ঞাপণ দিলেন এবং বললেন যে আপনার কয়েকটি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ চাই ও প্রবন্ধ পিছু আপনি যে কাজ করে দেবে তাকে টাকা দেবেন। এবার মনে করুন, আমিও  এমটার্কে নাম লিখিয়েছি, তবে আমি কাজ "দেব" বলে নাম লেখাইনি, কাজ "চাই" বলে নাম লিখিয়েছি। আপনার বিজ্ঞাপণটি আমার নজরে পড়ল, আমি কাজ "ধরে" নিলাম। আপনি প্রবন্ধ চাইছিলেন আমি প্রবন্ধ সংগ্রহ করে এমটার্কের মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠালাম, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে যে পারিশ্রমিক দেবেন প্রতিশ্রুতি করেছিলেন, পাঠিয়ে দিলেন। এ বাবদ আমাজল এমটার্ক তাদের ধার্য টাকা কেটে নিয়ে আমাকে আমার প্রাপ্য পারিশ্রমিক মিটিয়ে দিল। আপনি আমাকে চিনলেন না, আমিও আপনার সঙ্গে পরিচিত হলাম না, আমার আর আপনার সম্পর্ক কাজ নিয়ে, তাও  পুরো কাজটুকু নয় কাজের কিয়দংশ মাত্র | আমার কাজ করা হয়ে গেলে টাকা পেয়ে আমি আবার অন্য কাজ "ধরলাম", আপনিও অন্যত্র চলে গেলেন, আমাদের কেউ কাউকে চিনি না, তার প্রয়োজনও নেই এ কাজে। আপনার কাছে আমি অদৃশ্য, আমার কাছে আপনি অদৃশ্য, মাঝখানে রয়ে গেল যন্ত্র। 

    মেকানিকাল টার্ক ?

    ইউরোপে অষ্টাদশ শতকে, ১৭৭০ সালে উলফগ্যাং  ফন কেমপেলেন নামে এক হাঙ্গেরিয়ান উদ্ভাবক সে সময়ের অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয় সাম্রাজ্যের মহারাণীর জন্য এক অদ্ভুত যন্ত্রের আবিষ্কার করেন, তার নাম দেন  মেকানিকাল (যান্ত্রিক) টার্ক (তুর্কী?)| অদ্ভুত এই যন্ত্রের ভেতরে  একজন মানুষ থাকত, যে লোক ওস্তাদ দাবাড়ু, কিন্তু সে থাকত লোকচক্ষের অন্তরালে | লোকে দেখত যান্ত্রিক এক পুতুল, যাকে দেখতে তু্র্কী বাজিগরদের মতন, সে অনায়াসে তাবড় দাবাড়ুদের দাবা খেলায় হারিয়ে দিচ্ছে (চিত্র ২)


    (কেমপেলেনের যান্ত্রিক তুর্কী, মেকানিকাল টার্ক, 

    পুরো ব্যাপারটি একটি মহা ধাপ্পা, প্রতারণা | এই আশ্চর্য যান্ত্রিক তুরকীর কার্যকলাপ দেখে মার্কিন সাহিত্যিক, যিনি একাধারে গোয়েন্দা গল্পের জনকও বটে,  এডগার অ্যালান পো, "মেলজেলের দাবাড়ু"  (maelzel's chess player) নাম দিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন | আমি লেখাটি থেকে কিছু কিছু অংশ তুলে দিলাম | 

    > "we find every where men of mechanical genius, of great general acuteness, and discriminative understanding, who make no scruple in pronouncing the Automaton a pure machine, unconnected with human agency in its movements, and consequently, beyond all comparison, the most astonishing of the inventions of mankind. And such it would undoubtedly be, were they right in their supposition. ... what shall we think of the calculating machine of Mr. Babbage? What shall we think of an engine of wood and metal which can not only compute astronomical and navigation tables to any given extent, but render the exactitude of its operations mathematically certain through its power of correcting its possible errors? What shall we think of a machine which can not only accomplish all this, but actually print off its elaborate results, when obtained, without the slightest intervention of the intellect of man? ...  a machine such as we have described is altogether above comparison with the Chess-Player of Maelzel. By no means — it is altogether beneath it — that is to say provided we assume (what should never for a moment be assumed) that the Chess-Player is a pure machine, and performs its operations without any immediate human agency. Arithmetical or algebraical calculations are, from their very nature, fixed and determinate. Certain data being given, certain results necessarily and inevitably follow. These results have dependence upon nothing, and are influenced by nothing but the data originally given. And the question to be solved proceeds, or should proceed, to its final determination, by a succession of unerring steps liable to no change, and subject to no modification. This being the case, we can without difficulty conceive the possibility of so arranging a piece of mechanism, that upon starting it in accordance with the data of the question to be solved, it should continue its movements regularly, progressively, and undeviatingly towards the required solution, since these movements, however complex, are never imagined to be otherwise than finite and determinate. But the case is widely different with the Chess-Player. With him there is no determinate progression. No one move in chess necessarily follows upon any one other. From no particular disposition of the men at one period of a game can we predicate their disposition at a different period. ... There is then no analogy whatever between the operations of the Chess-Player, and those of the calculating machine of Mr. Babbage, and if we choose to call the former a pure machine we must be prepared to admit that it is, beyond all comparison, the most wonderful of the inventions of mankind. ... It is quite certain that the operations of the Automaton are regulated by mind, and by nothing else. Indeed this matter is susceptible of a mathematical demonstration, a priori. The only question then is of the manner in which human agency is brought to bear. (শেষের লাইনটা আমার দাগানো ) | 

    আমরা পরে দেখব যে যান্ত্রিক তুর্কীর এই লেখাটি আমাদের আজকের যুগে তথাকথিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আমলে কতটা প্রযোজ্য, বিশেষ করে আরটিফিশিয়াল ইনটেিলজেনস নির্ভর কার্যকলাপ এবং আমাজনের মেকানিকাল টার্ক ও শুধু আমাজন নয়, আরো  অনেকের ক্ষেত্রেই  | সে গল্প এর পর |
  • dc | 2401:4900:1cd1:565e:44b9:1b:f420:***:*** | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৭527247
  • মেকানিকাল টার্কের কথায় মনে হলো, খুব কমপ্লেক্স, অতি সূক্ষ যন্ত্র আবিষ্কার করার আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আছে। যেমন ধরুন অ্যান্টিকাইথেরা মেকানিজম, যা কিনা গ্রিকরা দু হাজারেরও বেশী বছর আগে বানিয়েছিল ইক্লিপ্স ও অন্যান্য অ্যাস্ট্রোনমিকাল ফেনোমেনা নিয়ে গবেষণা করার জন্য। এই মেকানিজমকে আমাদের জানা প্রথম অ্যানালগ কম্পিউটার বলা হয়। 
  • Arindam Basu | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:০৫527256
  • dc, তখন তাড়াহুড়োতে শুধু হাঁসের কথাটা লিখলাম, ভেবে দেখলে সে আমলের মেকানিকাল টার্ক আমরা যে গোত্রের সূক্ষ্ম যন্ত্রের কথা আলোচনা করছি, সেই জিনিয়াস উদ্ভাবনের মধ্যে পড়ে না | এক ধরণের ধাপ্পাবাজি, যন্ত্রকে মানুষের ওপরে চাপানোর চেষ্টা। মানুষে যন্ত্রে দাবা বা গো খেলা যে হয়নি তা নয়, কাসপারভ ডিপ ব্লু বা সাম্প্রতিক কালে গুগল ডিপ মাইন্ডের গো খেলার কথা মনে করা যেতে পারে। 
  • dc | 2401:4900:1cd1:565e:7807:9bf0:d45a:***:*** | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:০৩527257
  • হ্যাঁ, মেকানিকাল টার্ক আসলে ধাপ্পাবাজি। ছোটবেলায় পেরেলম্যানের ফিজিক্স ফর এন্টারমেন্ট বইটা পড়েছিলাম, সেখানে পার্পিচুয়াল মোশান আলোচনা করতে গিয়ে ওরকম বেশ কয়েকটা "মেশিন" এর উদাহরন দিয়েছিলেন। 
     
    সূক্ষ্ম যন্ত্রের কথা বলতে টুর্বিয়ন (tourbillon) এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যা আঠেরশো সালে তৈরি হয়েছিল। এখন তো ট্রিপল অ্যাক্সিস টুর্বিয়নও উদ্ভাবন হয়েছে। আরেকটা উদাহরন মনে আসছে, অ্যাস্ট্রোল্যাব (astrolabe), সেও গ্রিকদের বানানো। তবে অ্যান্টিকাইথেরা মেকানিজম কিন্তু যাকে বলে ইন আ ক্লাস অফ ইট্স ওন। আর এই যন্ত্রের পাঠোদ্ধারের ইতিহাসও ভারি ইন্টারেস্টিং। 
  • Arindam Basu | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৪527273
  • অবশ্যই। 
    বিশেষ করে এনটিকাইথেরা।
     
    "Solving this complex 3D puzzle reveals a creation of genius—combining cycles from Babylonian astronomy, mathematics from Plato’s Academy and ancient Greek astronomical theories."
     
     
    আপনি এ নিয়ে লিখুন না।
    আমি কয়েকদিন থাকব না।
    ফিরে এসে কথা হবে।
     
  • dc | 2401:4900:1cd1:565e:6515:b5b5:72c6:***:*** | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৮527275
  • ঠিক আছে, একটা টই খুলে লিখব তাহলে। 
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন