প্রাচীন পলিনেশিয় বিশ্বাস অনুযায়ী মানা (উচ্চারণভেদে ম্যানা) হল এক ঐশ্বরিক শক্তি যা আমাদের পৌঁছে দিতে পারে লক্ষ্যের দোরগোড়ায়। বাজেট নিয়ে জনগণ ও মিডিয়ার সন্মিলিত রোলারুলি দেখলে মনে হয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর হাত ধরে সেই মানাই বুঝি আজ আসতে চলেছে আজ দেশের দোরে দোরে। কিন্তু হায়, বছর আসে, বছর যায়, আমরা আমাদের তিমিরেই থাকি, আম্বানি আম্বানির। মানা বুঝি ক্রমে আসিতেছে, কিন্তু অ্যাসিম্পটোটিক-সম সে আর এসে উঠতে পারে না, আমরা তবু চিঠি প্রত্যাশী কর্নেলের মত অপেক্ষায় থাকি। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন আপনার আয়করের হার ছাড়া (ভারতে মাত্র ২-৩% লোক আয়কর দেন) আর প্রায় কোন বড় সিদ্ধান্তই বাজেটে হয় না। সাম্প্রতিক অতীতে যে কয়েকটি নীতি আমাদের জীবন এবং ভারতীয় অর্থনীতিতে বেজায় ধাক্কা লাগিয়েছে -- যেমন জিএসটি, বিমুদ্রাকরণ, শ্রম আইন, নতুন শিক্ষানীতি বা নতুন কৃষি আইন -- তার কোনটাই কিন্তু বাজেটে হয় নি। মাসে, মাসে পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসের যে দাম বাড়ছে তার জন্যও বাজেট লাগছে না। আয়কর বাদ দিয়ে বাজেটে প্রস্তাবিত প্রায় কোন কিছুতেই আমরা তত প্রভাবিত (বা বিপর্যস্ত) হই না, যতটা হই বাজেটের বাইরের আরো দশটা সরকারি নীতিতে। তাহলে এই বাৎসরিক বাজেট নিয়ে এই গণ তথা মিডিয়া উন্মাদনার কারণ কী? এই প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তরের জন্য বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। তবে এর একটা কারণ সম্ভবত লুকিয়ে আছে আমাদের ইতিহাসে।
স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে একটি সমাজতান্ত্রিক কাঠামো ছিল যেখানে সরকারের ভুমিকা ছিল অনেক বেশি। সেই যুগে বাজেটের গুরুত্বও বেশি ছিল। তার ওপর আমাদের প্রাক্তন প্রভুদের দেশে বাজেট এবং তার গোপনীয়তা নিয়ে যে মেলোড্রামা এককালে ছিল তা বুঝি আমাদের কল্পনাকেও আচ্ছন্ন রাখে। এ প্রজন্মের কথা জানি না, আমাদের যৌবনে কিন্তু আমরা খুব জানতাম ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী হিউ ডাল্টনের গল্প, যিনি ১৯৪৭ সালের বাজেট পেশের ঠিক আগে, হাউস অফ কমন্সের ঢোকার সময়, এক সাংবাদিকের সাথে দু-চারটে বাক্য বিনিময় করতে গিয়ে কোন সামগ্রীর ট্যাক্স বৃদ্ধি পেতে পারে তার ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেন। সেই খবর বেরিয়ে যায় সংবাদপত্রে, তখনও শেয়ারবাজার খোলা, তাই তাঁকে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয়। এই প্রবল নাটকীয়তার গল্প শুনে বড় হয়েছে যে ভারত, সে বাজেটে মজে থাকতে চায়, তার খুব গুরুত্ব আর না থাকলেও। আর মিডিয়ার তো কিছু একটা চাই বেঁচে থাকার জন্য, আত্নহত্যা থেকে বাজেট – কিছুতেই তাদের অরুচি নেই। তাই এই উন্মাদনা - যা প্রায় সার্কাসে পর্যবসিত। এক্ষেত্রে সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে এত কথা জানার পরেও আমি কেন এইসব নিয়ে লিখে সময় নষ্ট করছি? আমি আসলে সেই কারণেই লিখছি যে কারণে সিপিএম দুর্গাপুজোয় বইয়ের দোকান দেয়! জনগণের সঙ্গে থাকতে হয় যে, নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়!
অনেক গৌরচন্দ্রিকা হল। এবার আসলে কথায় আসা যাক। বাজেট মোটের ওপর সরকারের আয় ব্যয়ের একটা হিসেব। এখন বাজেট নিয়ে যে আলোচনা সেটা মূলত সরকারের এই ব্যয়ের দিকটা নিয়ে। আসলে এই আলোচনার ভেতরে যে প্রত্যাশার সুরটি থাকে তা হল সরকারের ব্যয় আমাদের আয় বাড়াবে। এই ধারণার মূলে আছে ১৯৩০ এর মহামন্দা আর তার পরিপ্রেক্ষিতে কেইন্স সাহেবের জেনারাল থিওরি বইটি। তার আগে পর্যন্ত অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতিতে চাহিদা সংক্রান্ত সমস্যাকে খুব একটা পাত্তা দেন নি। কেইন্স বললেন মন্দাক্রান্ত (সন্ধিটা একটু বেশি কাব্যিক হয়ে গেল বোধহয়!) অর্থনীতির দাওয়াই সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি। কিন্তু এই যে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করে সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সেটা কিন্তু স্বল্পমেয়াদী বাণিজ্য চক্রজাত মন্দার সংকট। উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলি যেহেতু উচ্চহারে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে বড়লোক হয়েছে, তারা মূলত বাণিজ্যচক্র নিয়ে বেশি চিন্তা করে, যা স্বল্পমেয়াদী। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে কিন্তু চিন্তাটা মূলত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে। উন্নত দেশে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টির একটি শক্তপোক্ত কাঠামো আছে, বাজেটে খুব কিছু তাতে যায় আসে না। আমাদের দেশেও যে সামাজিক সুরক্ষা বাজেট নির্ভর তাও নয় কিন্তু। কলমের এক খোঁচায় কাজের সময় আট থেকে বেড়ে বারো ঘন্টা হতে কিন্তু কোন বাজেটের দরকার হয় নি। কিন্তু আপাতত প্রশ্ন হল, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং সামাজিক সুরক্ষার জন্য এই বাজেটে ঠিক কী আছে?
সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি উঠে আসছে তার একটা হল গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের এমপ্লয়িজ স্টেট ইনসুরেন্স কর্পোরেশন (ESIC) এর আওতায় নিয়ে আসা। এই ধরনের কর্মীর উদাহরণ হল সুইগি বা জোমাটো জাতীয় ডেলিভারি কোম্পানিতে কর্মরত মানুষজন। ESIC অনেকটা এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (EPF) মতই. কিন্তু প্রভিডেন্ট ফান্ড সেই সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে ২০ জনের বেশি চাকরি করেন এবং EPF-এর ক্ষেত্রে কর্মী ও মালিক সমপরিমাণ টাকা দেন। ESIC এর ক্ষেত্রে ১০ এর বেশি কর্মী হলেই এই ব্যবস্থার আওতায় আসা যাবে এবং মালিক জমা দেবেন দেয় মজুরির ৪.৭৫% আর শ্রমিক জমা দেবেন প্রাপ্য মজুরির ১.৭৫%। শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৩৭ টাকার কম হলে তাঁদের কিছু দিতে হবে না।১ এর বিনিময়ে শ্রমিক বা তাঁদের পরিবার কাজের কারণে আহত, অসুস্থ, বা দুর্ঘটনায় মারা গেলে ক্ষতিপূরণ পাবেন। গিগ অর্থনীতির শ্রমিকদের এর আওতায় নিয়ে আসা নিশ্চয়ই সাধুবাদের যোগ্য। কিন্তু এখানে যে প্রশ্নটা আমাকে ভাবাচ্ছিল, তা হল এই বাবদ সংগৃহীত টাকা কোথায় বিনিয়োগ হবে। একটু খুঁজতে গিয়ে পেলাম যে এতকাল ESIC র টাকা সরকারি সংস্থা বা বন্ডে বিনিয়োগ করা হত। এ বছরের ১৪ই জানুয়ারি সরকার ESIC এর একানব্বই হাজার কোটি টাকার কর্পাস খোলা বাজারে বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ তুলে নেয়।২ (এবং খেয়াল করুন এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও কিন্তু বাজেটে হয় না।) যদিও এই কর্পাসের কতটা ঠিক বাজারে বিনিয়োগ হবে তা এখনও ঠিক হয় নি। কিন্তু চৌবাচ্চায় ফুটো যখন হয়েছে, জল খালি হতে আর কতক্ষণ! ১৪ জানুয়ারিতে ESIC এর কর্পাসের ৯১,০০০ কোটি টাকার দরজা বাজারের জন্য খুলে দেওয়া আর ১ ফেব্রুয়ারি গিগ কর্মীদের ESIC এর আওতায় আনাকে নেহাতই সমাপতন হিসেবে দেখার সারল্য শৈশবেই ফেলে এসেছি! তাই গিগ কর্মীদের ESIC এর আওতায় আনার সিদ্ধান্তের মধ্যে সরকারি সদিচ্ছা ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের টাকা বাজারে ঢোকানোর হিসেবটাই মাথায় ঘুরছে বেশি।
এই গেল সামাজিক সুরক্ষার কথা। এবার আসা যাক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির কথায়। এ বিষয়টি নিয়ে অন্যত্র লিখেছি। তাও সংক্ষেপে বলে নেওয়া যাক। অর্থনীতির পাঠ্যপুস্তকে অর্থনীতি বৃদ্ধির পরিচ্ছেদের মোদ্দা কথা হল অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য পুঁজি বিনিয়োগ লাগে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ছাড়া অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সম্ভব না। এখন আপনি যদি এবারের বাজেটের দিকে চোখ রাখেন, দেখবেন সরকার বিভিন্ন যে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তা এসেছে প্রাকৃতিক গ্যাস, সড়ক, এয়ারপোর্ট এবং মৎস্য বন্দর জাতীয় ক্ষেত্রগুলিতে। এবং সেই বিনিয়োগ আসবে বড় পুঁজিপতিদের কাছ থেকে। কখনো তাঁরা তা সরাসরি করবেন অথবা প্রাকৃতিক গ্যাসের মত ক্ষেত্রগুলিতে গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড বা ইন্ডিয়ান অয়েলের মাধ্যমে করবেন।
উপরে উল্লিখিত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। এই ক্ষেত্রগুলিতে যে বিনিয়োগ তা ভৌগোলিক ভাবে নির্দিষ্ট এবং সেই কারণেই এখানে যিনি বিনিয়োগ করছেন তিনি একবার বরাত পেয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে আর কোন প্রতিযোগিতার সন্মুখীন হতে হবে না। তাই এই সব ক্ষেত্র থেকে যে মুনাফা তা একরকম খাজনার মত। জমির খাজনা যেমন শহরের ক্ষেত্রে জমির অবস্থান বা কৃষির ক্ষেত্রে জমির উৎপাদিকা শক্তির ওপর নির্ভর করে, এই ধরনের বিনিয়োগের ওপর মুনাফার হারও সেরকম এইসব প্রকল্পের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। যেমন ধরুন, যিনি দিল্লিতে বিমানবন্দর বানানোর বরাত পাবেন, তাঁর মুনাফা, যিনি রায়পুরে বিমানবন্দর বানানোর বরাত পাবেন, তাঁর তুলনায় বেশি হবে। এটি নেহাতই উদাহরণ, দিল্লি বা রায়পুরে নতুন বিমানবন্দর বানানো হচ্ছে এরকম খবর নেই।
কিন্তু একবার আপনি কোন বিমানবন্দর বা সড়কে বিনিয়োগ করলে সেই বিনিয়োগ থেকে মুনাফা তুলতে কিন্তু কোন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে না। এই যে প্রতিযোগিতামুক্ত, বরাতনির্ভর পুঁজিবাদ এর একটি পোশাকি নামও আছে – ক্রোনি ক্যাপিটালিজম। এর তেমন কোন জুতসই বাংলা না থাকায় আমি একে বরাত-নির্ভর পুঁজিবাদ বলে ডাকছি। এই বরাত-নির্ভর পুঁজিবাদকে ভারতে এনেছে বিজেপি, এমন বললে একটু অসত্য বলা হবে। বরাত-নির্ভর পুঁজিপতিরা স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতীয় অর্থনীতির নিয়ন্তা। কিন্তু এখন বাজার, বরাত, হিন্দুত্ব সব মিলেমিশে ব্যাপারটা আরো বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সেটা অন্য আলোচনা, পরে কখনো করা যাবে। আগের আলোচনাটা শেষ করা দরকার। কেউ একথা বলতেই পারেন অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য পুঁজি তো দরকার, তার জাত বিচারে আমাদের কাজ কী? কে যেন বলেছিলেন না, বেড়াল ইঁদুর মারতে পারে কি না দেখা দরকার, বেড়ালের রঙ বিচারে কাজ নেই? এবার আগে ফেলে আসা সুতোটায় ফিরি। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য পুঁজি দরকার, কিন্তু সেই বৃদ্ধি ধরে রাখতে গেলে দরকার প্রযুক্তি উদ্ভাবন। ইতিহাস (এবং অর্থনীতির তত্ত্ব) আমাদের বলে যে এই উদ্ভাবনের জন্য প্রতিযোগিতা দরকার, যার মাধ্যমে পুরোন প্রযুক্তিকে ধবংস করে নতুনের সৃজন হয়। এই প্রক্রিয়ার পোশাকি নাম ক্রিয়েটিভ ডেস্ট্রাকশন। এক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণটি মাথায় রাখা যেতে পারে। ভারতের মতই দক্ষিণ কোরিয়াতে ছয়-এর দশকে বিভিন্ন শিল্পকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল শুল্কের পাঁচিল তুলে। কিন্তু ভারতের মত কোরিয়াতে এই পাঁচিল চিরকালীন ছিল না। ভারতে যেখানে পুঁজিপতিরা প্রযুক্তির কোন রকম উন্নতি না করে সরকারি শুল্ক প্রাচীরের দাক্ষিণ্যে বছরের পর বছর খারাপ জিনিস বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা করেছে, কোরিয়াতে সেটা সম্ভব ছিল না। কোরিয়ার ঘোষিত নীতি ছিল একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে বাজারকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেই ক’বছরে যারা বিশ্বমানের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারবে তারা টিকবে, যারা পারবে না তারা টিকবে না। এইভাবে গাড়ি, জাহাজ বা ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পে কোরিয়া বিশ্বে সামনের সারিতে উঠে এসেছে, অন্যদিকে জামাকাপড় হয়ত তারা বাংলাদেশ বা ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করে।৩
ভারতের ক্ষেত্রে সরকার নানাভাবে এই ধরনের প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করতে পারত কিন্তু তা করে নি। তার কারণ বুঝতে অবশ্য খুব বেশি কল্পনা শক্তি দরকার হয় না। এই ধরণের প্রতিযোগিতামূলক যে ক্ষেত্রটির এই মুহূর্তে কথা মনে আসছে সেটা হল ওষুধ প্রস্তুত শিল্প। ভারত পৃথিবীতে জেনেরিক ওষুধ তৈরিতে একেবারে ওপরের সারিতে। ভারতে তৈরি ওষুধের দাম কম বলে গরিব দেশগুলি বহুজাতিকদের ব্র্যান্ডেড ওষুধের বদলে ভারতীয় কোম্পানির জেনেরিক ওষুধই কেনে। এবং তা কিন্তু নতুন পেটেন্ট নীতির পরেও বজায় আছে। সব থেকে বড় কথা হল এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেশি এবং অনেক তুলনামূলক ছোট কোম্পানিও ভাল করছে।৪ এটি একটি উদাহরণ মাত্র। কিন্তু আমার বক্তব্য হল আত্মনির্ভর হতে গেলে প্রযুক্তি উদ্ভাবন অবশ্য প্রয়োজন, ক্রোনি পুঁজির আগুনে ঘি ঢেলে তা হওয়া যাবে না।
তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো? প্রথম কথা হল, বাজেট কোন সর্বরোগহর দাওয়াই নয়। যদি সত্যিই সরকারি নীতি বুঝতে হয় তাহলে শুধু বাজেট দেখে লাভ নেই। বাজেটকে সারা বছর ধরে নেওয়া অন্য নীতির সাথে মিলিয়ে বুঝতে হবে। সবথেকে বড় কথা হল যে কোন নীতিকে বুঝতে গেলে সেই নীতিকে বিচ্ছিন্ন ভাবে বোঝা যাবে না, তাকে বুঝতে হবে সরকারের নীতির গতিপথ ও কাঠামোর সঙ্গে মিলিয়ে। সেটা করলে দেখবেন অনেক ঘোষণার বাইরের আবরণ খসে পড়ে তার অন্তর্লীন অভিপ্রায় বেরিয়ে পড়ছে। এই জানা বোঝাটা নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রয়োজন। দ্বিতীয় কথা হল, বাজেটের নীতির দিকনির্দেশ আত্মনির্ভরতার ঠিক উল্টোদিকে। নিজের চারদিকে পাঁচিল তুলে, নিজের অক্ষমতাকে শুল্কের রক্ষাকবচ দিয়ে ঢেকে আর যাই হোক আত্মনির্ভরতা অর্জন করা যায় না। এটা ইতিহাসের শিক্ষা, একে অবজ্ঞা করলে পেছন দিকে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের ভবিতব্য।
১ https://www.india.gov.in/spotlight/employees-state-insurance-scheme#tab=tab-3
৩ অর্থনীতির উৎসাহীরা এই প্রসঙ্গে পড়ে দেখতে পারেন: Hausmann, Ricardo, and Dani Rodrik. "Economic development as self-discovery." Journal of development Economics 72.2 (2003): 603-633.
৪ M., Gopakumar K. "Product patents and access to medicines in India: A critical review of the implementation of TRIPS patent regime." Law & Dev. Rev. 3 (2010): 326.
ধন্যবাদ
খুব, খুব দামি লেখা। লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি পারস্পেক্টিভ তুলে ধরার জন্যে।
লেখক কে ধন্যবাদ জানাই।
লেখক কে ধন্যবাদ জানাই।