খেলার সাথে যে ধূলার একটা সম্পর্ক আছে তা আমরা দিন দিন ভুলে যেতে বসেছি। কারণ এখন খেলা হয় অনলাইনে, মোবাইলে, কম্পিউটারে। সব হচ্ছে পর্দায়। ধুলা আসবে কোথা থেকে! ধূলা মুক্ত এই খেলা আমাদের কতটুকু উপকার করছে বা আদৌ উপকার করেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তো থাকবেই। কিন্তু একে অস্বীকার করার উপায় সম্ভবত এখন আর নাই। শুনছি অলেম্পিকে অনলাইন গেম যুক্ত হবে সামনে। এখন অনলাইনে খেলার টুর্নামেন্ট হচ্ছে। করোনার কারণে ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলো নিয়ে একটা টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। সব ঠিক থাকলে বাংলাদেশ এই অনলাইন খেলার দুনিয়ায় জোরেশোরে প্রবেশ করত। অনেকেই হতাশ হয়ে বলছে হায় কি হল! আর কেউ স্বস্তির সাথে বলছে যাক, বাঁচা গেল।
গত বিশ বছর সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সময়। বিশেষ করে শেষ দশ বছর। প্রযুক্তি বিশাল এক লাফ দিয়েছে এই সময়ে। পঞ্চাশ বছর আগে কেউ চিন্তা করে নাই ইন্টারনেট নামক এক দৈত্য সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। অ্যালগারিদম নামক আবিষ্কার আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। এই ঝড় তোলা আবিষ্কার আমাদের অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে তা নিশ্চিত। আমি বাংলাদেশের শেরপুরে বসে আমার সমমনাদের সাথে কত সহজেই না যুক্ত হতে পারছি। অথচ কয়েক বছর আগেও তা অকল্পনীয় ছিল। এই সহজলভ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের সব দিয়ে নিয়ে নিয়েছে অদ্ভুত সুন্দর কিছু বিষয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খেলার মাঝে যে ধুলা থাকে সেই ধুলা। মফস্বল বা গ্রামের দিকে এখনও শিশু কিশোররা সন্ধ্যায় ধুলা মেখে বাড়ি ফিরে। কিন্তু আমি যত বড় শহর দেখেছি তাতে কোথাও এই দৃশ্য আর দেখতে পারা যায় না। যান্ত্রিক জীবন আস্তে আস্তে গ্রামীণ জীবনে প্রবেশ করছে। তার প্রভাব পড়ছে খেলাধুলার ওপরে। এখন প্রথম শ্রেণির শিশুর থাকে অনেক গুলো টিউশনি আর তার বিনোদনের মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দা। আমি আমার ভাগ্নের কথা বলতে পারি। ও অষ্টম শ্রেণীর পরে সম্ভবত বড় কোন মাঠে সকলের সাথে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। তাও ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরার কারণে ও ভর্তি হয়েছিল সরকারি স্কুলে। সেখানে সকলের সাথে সুযোগ পায় ক্রিকেট খেলার। এর আগ পর্যন্ত ও জোরে, ঊর্ধ্বশ্বাসে খিঁচে দৌড় পর্যন্ত দেয় নাই!
অথচ এমন কিন্তু ছিল না। গোল্লাছুট নামের একটা খেলা খুব জনপ্রিয় ছিল একটা সময়। গ্রাম বাংলায় এই খেলা খেলেনি এমন বান্দা খুঁজে পাওয়া যাবে না। ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই খেলা দুর্দান্ত জনপ্রিয় ছিল। দুই দলে ভাগ হয়ে খেলতে হত। একদল একটা গোল দাগের ভিতরে থাকত। অন্য দল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত। নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করতে হত অন্যদলের ছোঁয়া বাঁচিয়ে। এভাবে সকলকে, যে প্রধান থাকত তাকে সহ সেই সীমানা পার হতে হত। দলের প্রধান যদি ছোঁয়া খেয়ে মারা যায় তাহলে খেলা শেষ। সবাই পার হয়েছে কিন্তু দলপতি ধরা মানে খেলা হেরে গেল। এই খেলার প্রধান অস্ত্রই ছিল দৌড়ের ক্ষমতা। অবিশ্বাস দ্রুত গতিতে এবং শরীর বাঁকিয়ে, দৌড়ের ভিতরে বাউলি দিয়ে আরেকদিকে যাওয়া ছিল সীমানা অতিক্রম করার এক মাত্র উপায়। ধান কাটার পরে যখন ফাঁকা মাঠ পাওয়া যেত তখনই সম্ভব হত এই খেলা খেলার। ক্রিকেটের কলাকৌশল স্টেডিয়ামে গিয়ে শিখেছিলাম। কিন্তু দৌড়ের হাতে খড়ি আমরা করেছিলাম গোল্লাছুট দিয়েই।
একই রকম আরেকটা খেলা ছিল। নাম হচ্ছে বউচি। এখানেও দুই দল থাকত। একজনকে বউ বা বুড়ি বানানো হত, দুইটা ঘর থাকত। এক ঘরে থেকে অন্য ঘরে বউকে যেতে হত। বউকে রেখে এই দলের সদস্যরা দম নিয়ে দৌড় দিত, দম দেওয়া অবস্থায় বিপক্ষ দলের কাওকে ছুঁয়ে দিলে মরে যেত ওই খেলোয়াড়, আবার দম শেষ হয়ে গেলে অন্যরা আবার ছুঁয়ে দিলে এই খেলোয়াড় মারা যেত। দম নিয়ে যখন অন্যদের তাড়া করত তখন ফাঁক বুঝে, বউয়ের বিচক্ষণতায় দৌড় দিয়ে যদি অন্য ঘরে চলে যেতে পারত বউ তাহলে তারা জিতে যেতো। না পারলে অন্য দল সুযোগ পেত। এই খেলাও দুর্দান্ত দৌড় ঝাঁপের খেলা ছিল। ধূলা না লাগিয়ে, মাটিতে গড়াগড়ি না খেয়ে কোনদিন পার হতে পারছিলাম কিনা জানি না।
কৈশোরে আমাদের সমস্ত সময় থাকত নানান খেলার পরিকল্পনা করে। দৌড় ঝাপের আরেকটা খেলা ছিল নুনতা বলরে নামে। একজন নুনতা নির্বাচন হত। বাকিরা একটা গোল বৃত্তে থাকত। এবার নুনতা ছড়া কাটত -
নুনতা বলোরে
এক হলোরে
নুনতা বলোরে
দুই হলোরে....(এভাবে সাত পর্যন্ত)
...আমার ঘরে কে?
-আমি রে।
কি খাস?
-লব্ণ খাই।
লবণের সের কত?
-এইটা
লবণের দাম দিবি কবে?
-লাল শুক্কুরবারে (শুক্রবার)।
কয় ভাই? কয় বোন?
-পাঁচ ভাই, পাচঁ বোন।
একটা বোন দিয়ে যা..
-ছঁতে পারলে নিয়ে যা।
নুনতা দৌড়ে ঘরে ঢুকে যেত বাকিরা দিত দৌড়। এবার নুনতা দৌড়ে একজন একজন করে ধরার চেষ্টা করত। যাকে ধরতে বা ছুঁতে পারত সে তখন নুনতা হয়ে যেত, তখন সেও দৌড়ে ধরত আরেকজন। এভাবেই চলত। নুনতা দৌড়ে যখন অন্যদের ধরতে যেত তখন দম দিয়ে যেতে হত। যদি দম শেষ হয়ে যেত তাহলে বাকিরা ধরে পিঠের মধ্যে কিল দিতে থাকত। কিল চলত যতক্ষণ ঘরে না ফিরছে ততক্ষণ। ঘরে ফিরে আবার দম নিয়ে দৌড় দিতে হত।
তবে সব খেলাই যে দৌড়ঝাঁপ যুক্ত খেলা হত তা না। লাটিম, মার্বেল খেলা ছিল এমন খেলা। লাটিমের কত কারিগরি, কত কৌশল! ঘুরছে ঘুরছে তুলে নিলাম হাতের তালুতে! একজনেরটা ঘুরছে জোরে মারা হল ওইটার ওপরে, ওই লাটিম ভেঙে চৌচির! মার্বেল সম্ভবত সবচেয়ে নেশা ধরানো খেলা ছিল, জিতে আনা যেত বাড়িতে মার্বেল। মার্বেল অভিভাবকদের ঠিক পছন্দের খেলা ছিল না কারণ এতে ঝগড়াও হত প্রচুর মার্বেলকে ঘিরে। যেহেতু লাভ লসের ব্যাপার ছিল তাই ঝগড়া অবধারিত ছিল, আর তাই অভিবাবকদের পছন্দ হওয়ার কোন কারণ ছিল না।
তবে আগের সময় অথবা বর্তমান সময়, একটা খেলা সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে আছে। এটা হচ্ছে ঘুড়ি উড়ানো। প্রাচীন কাল থেকেই চলছে ঘুড়ি উড়ানো, সম্ভবত এই এক আন্তর্জাতিক খেলা যা গ্রাম বাংলা, শহর, গঞ্জ সব জায়গায় সমান ভাবে জনপ্রিয় এবং আজ পর্যন্ত জনপ্রিয়। এই আধুনিকতম সময়েও আমার পিচ্চি ভাগ্নের চোখে দেখি একই রকম নেশা! সুতার প্রতি, ছেড়া ঘুড়ির প্রতি অদম্য টান একই রকম আছে যেমন ছিল আমার, আমার পূর্ব পুরুষের। মাঞ্জা দেওয়া নিয়ে নানান কিচ্ছা এখনও আছে যেমন ছিল আগে। ছেড়া ঘুড়ির পিছনে দৌড়ের মত আর কিছুর তুলনা হয় না। এখনো এই দৃশ দেখতে পারা যায়। কোন এলাকায় ঘুড়ি কাটছে, দৌড়াতে দৌড়াতে এসে হাজির আমাদের বাড়ির উঠানে? বাড়ি কই? এমন এক জায়গার কথা বলল যে আক্কেলগুড়ুম আমার। এই পিচ্চি ফিরে যেতে পারবে কিনা তখন সেই চিন্তা শুরু হয়ে যায় আমার! কিন্তু সে নির্বিকার। ঘুড়ির জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।
ঘুড়ির নাম গুলো অভিনব ছিল সব সময়। পেটকাটা, কালাপাহাড়, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি সহ নানান নাম। ঢাউস নামে এক প্রকার ঘুড়ি উড়ানো হত। বাঁশ দিয়ে বড় করে বানানো হত এই ঘুড়ি। ছোটবেলায় ওই ঘুড়ি দেখলে মনে হত যে আমি চড়ে বসলে হয়ত আমাকে সহ নিয়ে উড়ে যাবে এই ঘুড়ি। আঞ্চলিক ভাষায় আমরা কখনোই ঘুড়ি বলতাম না, বলতাম হচ্ছে ঘুড্ডি! এখন আমার ভাগ্নে ভাস্তেরাও দেখি ঘুড্ডি ঘুড্ডি বলে অস্থির হয়ে থাকে। ঘুড়ি খেলা বা উড়ানোর ভিতরে ঘুড়ির পরেই জরুরি জিনিস হচ্ছে সূতা। যেনতেন সূতা দিয়ে উড়ালে ঘুড়ির কাম শেষ! এর কত যত্ন, কত শ্রম! কাঁচের গুড়ো, আঠা, আরও নানান সম্ভব অসম্ভব জিনিস দিয়ে তৈরি করা হত মাঞ্জা। সূতায় মাঞ্জা দেওয়ার প্রক্রিয়াও দেখার মত এক কাজ। দিয়ে গিয়ে হাত কেটে একসা আবার দেওয়ার পরে অসাবধানতায় হাত কেটে সর্বনাশ। ফলাফল দুইবারই বাড়ি ফিরে ধুপুস ধাপুস! তবে সব ম্লান হয়ে যেত যখন ঘুড়ি নীল আকাশে অনেকক্ষণ রাজত্ব করতে পারত তখন। চিলের সাথে পাল্লা দিচ্ছে আমার ঘুড়ি, এর চেয়ে মুগ্ধকর আর কিছু আমি ভাবতে পারতাম না কোনদিন।
ঘুড়িকে অবশ্য আলাদা মর্যাদা দিয়ে রেখেছে পুরান ঢাকা। পৌষ সংক্রান্তির দিন পালন করা হয় সাকরাইন উৎসব। এ জিনিস না দেখলে বিশ্বাস করানো মুশকিল যে ওইদিন পুরান ঢাকায় আসলে কী হয়! হাজার হাজার ঘুড়ি আকাশে। উড়ছে কাটছে আবার উড়ছে! চলছে সারাদিন ধরে এই উৎসব। আর সন্ধ্যার পরে শুরু হয় আতশবাজি আর আগুনের নানান খেলা।
দারিয়াবান্দা, কুতকুত (এইটা সম্ভবত আন্তর্জাতিক খেলা, অনেক বিদেশি সিনেমায় দেখছি তারাও কুতকুত খেলে! নিয়ম কানুনে হয়ত পার্থক্য আছে কিন্তু খেলে।) ফুলটোকা বা গোলাপ টগর, রুমাল চোর, কানামাছি, মোরগ লড়াই, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বাইস্কোপ , আজকে আর কেউ খেলে না। এর মধ্যে দারিয়াবান্দা খুব জনপ্রিয় একটা খেলা। ব্যাডমিন্টন কোর্টের মত করে কোর্ট কাটা হত। একদল দাগে দাঁড়িয়ে থাকত অন্য দল ঘর গুলাতে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে হবে। দাগে যারা দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা দাগে পা রেখে ঘরের ভিতরে যারা আছে তাদের ছোঁয়ার চেষ্টা করবে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সময়ও যদি ছোঁয়া যায় তাহলেও চলবে। এক ঘর থেকে অন্য ঘর এভাবে পুরোটা যেতে হবে আবার আসতে হবে। সবাই মরে গেলে অন্য দলের সুযোগ। এই খেলার একটা আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। দারিয়াবান্দা খেলা একটু নরম প্রকৃতির, মেয়েরাও অংশ নিতে পারত। এটার একটা পুরুষালি ধরণ ছিল। এতে হাত পা যেমন খুশি তেমন ছুঁড়ে বিপক্ষকে ঘায়েল করা যেত। কেউ হয়ত লাফ দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করল, অন্য জন হয়ত সোজা লাথি মেরে ফেলে দিল! বেশ ভয়ংকর একটা ব্যাপার ছিল। এর নাম ছিল চিক। আমরা দারিয়াবান্দা খেললে কেউ কেউ মেয়েদের খেলা খেলছি বলে খেপানোর চেষ্টা করত। কিন্তু চিক খেলছি দেখলে! হুম, এবার হচ্ছে খেলা! কতদিন যে চিক খেলে হাত পায়ে ব্যথা পেয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। সেই ব্যথাও এখন সুখের মনে হয়। কী অদ্ভুত সময় পার করে এসেছি। এখন ভাবলে পরাবাস্তব কিছু বলে মনে হয়।
প্রযুক্তির কথা শুরুতে বলেছি। প্রযুক্তি মাঠ থেকে আমাদের ক্রমশয়ই পর্দায় বন্দি করে ফেলছে।লুডুও এখন মানুষ মোবাইলে খেলতে পছন্দ করে! মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার মত অবিচার প্রযুক্তি করছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। মূলত করেছি আমরাই, করেছি প্রযুক্তির সহযোগিতায়। গ্রামীণ খেলাধুলা কিন্তু এর আগেই মারা গিয়েছিল। মারা গিয়েছিল ক্রিকেটের রাজসিক আগমনের কারণে। বাংলাদেশে ক্রিকেটের উত্থান অন্য সব কিছুকে ম্লান করে দিয়েছে। যে ফুটবল সারা পৃথিবী রাজত্ব করছে সেই ফুটবল পর্যন্ত হোচট খেয়েছে ক্রিকেটের সামনে। এখন আর অন্য কিছু দেখা যায় না খোলা মাঠে। যার যা সম্বল আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ক্রিকেট খেলতে।
আমাদের সময় দিয়েই শুরু। ১৯৯৭ সালে যখন আইসিসি ট্রফি জিতে বাংলাদেশ তখন আমি ক্লাস সেভেনে। বল কেনার উপায় ছিল না, তাল গাছের নিচ থেকে পড়ে যাওয়া তালের কড়া কুড়িয়ে আনতাম। অনেক গুলা এনে শুরু হত বল করা, ব্যাট ছিল চৌসুপারি গাছের তক্তা দিয়ে বানানো এক আজব জিনিস। এরপর টেনিস বলে টেপ পেচিয়ে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন যাত্রা।
এমন গল্প কম বেশি সবার। মূল কথা হচ্ছে ক্রিকেট হটিয়ে দিয়েছে অন্য সব গ্রামীণ খেলাকে। তবুও ক্রিকেট নিয়েও যারা মাঠে আছে তারা তবুও মাঠে আছে, বাকিরা? যারা পর্দায় হুলুস্থুল ক্রিকেট, ফুটবল খেলছে? এক সময় চোর পুলিশ ছিল অনেকটা জাতীয় খেলা, মুখ দিয়ে গুলির শব্দ, গাছের ডাল দিয়ে বন্দুক, সমানে গুলি! দুই ভাগ হয়ে চলত খেলা। এখন মোবাইলে খেলে সবাই। হাই রেজুলেশন গেম! নিখুঁত গুলির শব্দ!
শৈশব ঢুকে যাচ্ছে পর্দায়, আবদ্ধ হয়ে রইছে পর্দায়। আমরা আবাদের জমি পাচ্ছি না খেলার মাঠ চাইব কোন সাহসে। আমার শৈশবে খেলা সমস্ত মাঠ এখন মানুষের আবাসভূমি। যেখানে দুর্দান্ত সব খেলা হত সেখানে এখন কেউ ভাত ঘুম দেয় নিশ্চিন্তে, বিকালে আলস্যে সময় কাটায়, ঠিক যখন ওই জায়গায় আমরা খেলার আয়োজন করতাম। সুতরাং সামনে আরও কঠিন দিন আসছে। গ্রামীণ খেলাধুলা হারিয়ে গিয়েছে, মাঠ হারাচ্ছে, আমরা এরপর খেলার সাথে ধূলা কেন যুক্ত হয়েছে তা জানতে গুগল করব, প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কাছে জানতে চাইব। সেইদিন সম্ভবত বেশি দেরি নাই আর।
দাড়িয়াবাধার আরেক নাম "কাবাডি"। জাতীয় পর্যায়ে এই খেলা হলেও গ্রাম বাংলায় এটি বিলুপ্ত প্রায়। অপরাপর খেলাও তাই।
সাতের দশকে খোদ ঢাকায় গলির ভেতর ছেলেরা ডাংগুলি, মার্বেল খেলতো, মুদি দোকানেই পাওয়া যেত বয়াম ভর্তি মার্বেল। নানান রকম বাহারি ঘুড়ি, নাটাই-সুতো। এখন সব রূপকথা মনে হয়।
তবে কুতকুত বোধহয় সত্যিই শহর-গ্রাম-দেশ-বিদেশ সব সময়ের জনপ্রিয় খেলা, কন্যা শিশুরাই এর একচ্ছত্র অধিকারী।
লেখাটি নস্টালজিক।
বিপ্লব ভাই, দারিয়াবান্দার সাথে কাবাডির কোন মিল নাই। দারিয়াবান্দার আরেক নাম কাবাডি কই পাইলেন জানি না। আমাদের এদিকে অন্তত এমন কোন মিল ছিল না দারিয়াবান্দার। কাবাডিতে যে দম দেওয়ার ব্যাপার থাকে দারিয়াবান্দায় তেমন কিছু নাই। এটা একটা মাত্র পার্থক্য বললাম। আরও পার্থক্য আছে কিন্তু মুশকিল হচ্ছে আমি নিজেই অনেক কিছু ভুলে গেছি!
আরে তাই তো, দাড়িয়াবান্ধা আর কাবাডি ভিন্ন খেলা! স্মৃতি বিভ্রম, তবে দুটোই খোলা মাঠে দল বেধে দু-পক্ষ ভাগ হয়ে খেলতে হয়, এইটুকু মিল মাত্র। জাতীয় পর্যায়ে কাবাডিই খেলা হয়, দাড়িয়াবান্ধা নয়।
বাকি মন্তব্য ঠিকই আছে। সাদেকুজ্জামান, সংশোধনীর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
সাতের দশকে, তখন স্কুলে উঁচুক্লাসের ছাত্র । থাকতাম, পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙ্গায় । পাড়ায় একটা মাঠ ছিল । সেখানে আমরা গাদি খেলতাাম । খেলার কোর্ট, আমরা বলতাম ঘর, নিয়মকানুন সব ছিল মোটামুটি, আপনি যা লিখেছেন ঐ দাড়িয়াবান্ধারই
মত।