এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • হনন (পর্ব ১)

    প্রতিভা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ জুন ২০২০ | ৫৩৮২ বার পঠিত | রেটিং ২ (১ জন)
  • হ্যারি পটারের সাইরিয়াস ব্ল্যাকের মৃত্যুদৃশ্য মনে আছে তো? ধুন্ধুমার লড়াই চলছে, তার মধ্যেই হঠাত বেলাট্রিক্সের অভিশাপে সাইরিয়াসকে গপ করে গিলে নিল সেই কালো পর্দা যা আলাদা করে রেখেছে জীবিত ও মৃতকে। হ্যারির বাড়ানো হাতের স্পর্শের নাগালেই যে ছিল, সে চলে গেল পর্দার ওপাশে আর তিরতির করে কাঁপতে লাগলো সেই সর্বগ্রাসী অন্ধকারের আড়ালে। কালো পর্দার কোণ এমনভাবে আলোড়িত হচ্ছিল, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল কেউ এইমাত্র ওপাশে হারিয়ে গেছে, কিন্তু তাকে আর ফিরিয়ে আনবার কোনো উপায় নেই।
    জীবন আর মৃত্যু কোনো বিনিময় প্রথায় বিশ্বাস রাখে না।

    এই দেশের মাথায় এখন অনবরত ঝরে পড়ছে বেলাট্রিক্সের অভিশাপ। নিমেষে উধাও হয়ে যাচ্ছে কতো অরণ্য, পাহাড়-নদী, প্রাণী। মানুষেরও ছাড় নেই। হাঁটতে হাঁটতে গাড়ি চাপা পড়ছে, ট্রেনে কাটা পড়ছে, অসুখে মরছে, দাঙ্গায় কচুকাটা হচ্ছে, অনাহার রোগ ক্ষুধা সব ছাপিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে অতিমারি। আজ যে ছিল, কাল সে চোখের নিমেষে নেই হয়ে যাচ্ছে। প্রতিকার নেই, চিকিৎসা নেই। ব্যাঙ্কের সুদের মতো সবই কমছে, আরো আরো কম। নাগাড়ে বাড়ছে শুধু তেলের দাম আর পি এম কেয়ারসে জমা পড়া টাকার পরিমাণ। প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে জমা পড়া ২০০০০+ ক্রোর টাকায় তৈরি হতে পারে ২২ টা এইমস, ৪০ টা সরকারি মেডিকাল কলেজ , ৬০ টা সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু বাস্তবে ?

    সর্বনাশের কালো পর্দার আড়ালে চলে যাচ্ছে এদেশের পরিবেশ-ভাবনা। অথচ পরিবেশ থাকলে মানুষ থাকবে, মানুষ রাখলে পরিবেশ। আর এই হাপিস করবার কাজে সুচতুর উপায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা অতিমারিকে। সামাজিক দূরত্ব, জমায়েতের ওপর বিধিনিষেধ, ঘরবন্দী অবস্থা, প্রলম্বিত লক ডাউন, আদালতের ঝাপ বন্ধ, এইসবের আড়ালে একটার পর একটা আঘাত নামিয়ে আনা হচ্ছে। সচেতন মানুষ থাকা আর না-থাকার তফাত বুঝতে পারছে, কিন্তু ঠিকমতো প্রতিবাদও করতে পারছে না। করোনাকেই যেন সাইরিয়াসকে গিলে ফেলা সেই কালো পর্দার মতো ব্যবহার করছে শাসক, যার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ ও মানুষ।

    আসামের তিনসুকিয়াতে বাঘজান তৈলকূপের কথাই মনে এল সবার আগে। কারণ খবরের কাগজে একেবারে ভেতরের পাতায় এ খবর কতোজনের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে নিশ্চিত নই। অথচ ক্ষতি যা হল তা মারাত্মক। এই তৈলকূপ ঘিরে রয়েছে ডিব্রু-শইখোয়া ন্যাশনাল পার্ক। পার্কের গাছপালা, পশুপাখি ঝলসে গেছে। লাগোয়া বিলে ভেসে উঠছে অসংখ্য জলজ প্রাণীর পচাগলা মৃতদেহ। বিলেই পাওয়া গেছে দুজন দমকল কর্মীর লাশ। আগুন আর গ্যাস তাদের এমনভাবে ঘিরে ফেলেছিল যে পালাবার অবকাশ ছিল না। ডিব্রু নদী বিখ্যাত ছিল নানা বিরল প্রজাতির মাছ ও গাঙ্গেয় ডলফিনের জন্য। লাগোয়া বন বিখ্যাত ছিল বুনো ঘোড়ার জন্য। ৩৬ টি স্তন্যপায়ী প্রজাতি যার মধ্যে বাঘ একটি, এবং ৩৮২টি প্রজাতির পাখি এই ৩৪০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির বনে বাস করত। তাদেরই বা কী হল ! শোনা যাচ্ছে ৪ সপ্তাহের আগে এ আগুন নেভানো সম্ভব হবে না।

    শুধু এরাই নয়, আশেপাশের গ্রামের দুরবস্থা দেখবার মতো। আগুনে ফুটিফাটা চাষের জমি পোড়া ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছে অনেকে। কারো সে সৌভাগ্য হয়নি। অন্ততপক্ষে ৩০ টি বাড়ি ও অন্যন্য সম্পত্তি পুড়ে ছাই হয়েছে।গত ২৭ মে থেকে জ্বলছে এই তৈলকূপ। এর মধ্যেই পরিবেশ মন্ত্রক আরো ৭ টি নতুন কূপ খননের অনুমতি দিয়েছে। একটিকেই সামলাতে পারে না, তো আরো সাত সাতটি !

    এই গ্যাস লিক ও তার পরবর্তী অগ্নিকান্ডের কারণ কী? সরকারিভাবে বলা হচ্ছে ২৭ শে মে তে একটি তৈলকূপের ঢাকনা উড়ে গিয়ে প্রবল বেগে প্রাকৃতিক গ্যাস নির্গত হতে থাকে। যখন অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের বিশেষজ্ঞ এবং ইঞ্জিনিয়াররা গ্যাস এবং তৈলকণা নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণ করবার চেষ্টা করছিল, তখনই বিস্ফোরণ ঘটে।

    কিন্তু স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী বিস্ফারিত হবার আগে ঐ তৈলকূপ থেকে একটি প্রাইভেট কম্পানি তেল তোলার বরাত পেয়েছিল। কুয়োর ওপরে ঢাকনার জন্য কঠিন কনক্রিটের মোটা স্তর ব্যবহার করা হয়। সেটা তৈরি করেছিল অয়েল ইন্ডিয়া। কারণ খাতায় কলমে কুয়োটি তাদের। সেই কনক্রিট সেট করবার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কিন্তু প্রাইভেট কম্পানিটি সে সময় দেয় না, উপরন্তু যে পরিমাণ প্রেশার দেবার কথা তার বহুগুণ বেশি প্রেশার দিয়ে কাজ শুরু করে। শুভ লাভের অবধারিত ফল এই বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের ১৪ দিন আগে থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকলেও লক ডাউনের বাজারে রক্ষণাবেক্ষণ তেমন হয়নি। যেমন হয়নি বিশাখাপত্তনমে। অপরিকল্পিত লক ডাউনের ফলে উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এল জি পলিমার কম্পানির একটি জীর্ণ ট্যাংক থেকে স্টাইরিন গ্যাস বেরিয়ে কেড়ে নিল ১১টি তরতাজা প্রাণ।
    এখানেই কিন্তু শেষ নয়। গত ৪৫ দিনে শুধু গুজরাটের ভারুচ জেলায় ৫ টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ৩রা জুন দাহেজে শিল্পাঞ্চলে ঘটে সাম্প্রতিকতমটি। ৫ মৃত, গুরুতর আহত অন্তত ৪০। এতো তীব্র ছিল বিস্ফোরণ যে কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ১০ টি ট্রাকে দাউদাউ আগুন জ্বলে ওঠে। রাসায়নিক নির্গত হতে থাকে। অনুমান করা যায় আশেপাশের মানুষ ও পরিবেশের কতটা ক্ষতি হয়েছে। আশঙ্কা, এই বিস্ফোরণগুলির কারণ সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। করোনার অছিলায় গুরুতর কাজে গাফিলতি। জবাব দেবার দায় কার ?



    এইভাবেই অতিমারির কালো পর্দার আড়ালে লুকিয়ে কাজ করে যাচ্ছে মানুষের লোভ ও অবহেলা। শুধু মানুষই তো এর বলি হচ্ছে না। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ, যদিও আমরা এখন ভাল করেই জানি করোনার কোপে আমরা পড়েছি খোদার ওপর খোদকারি, অর্থাৎ পরিবেশ ও বন্য জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করার ফলেই।

    কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। লক ডাউনে সমস্ত সরকারি অফিস কাছারি বন্ধ থাকলেও মহামান্য ভারত সরকারের একটি মন্ত্রকে চূড়ান্ত ব্যস্ততা দেখা গিয়েছে। সেটি হচ্ছে পরিবেশ মন্ত্রক ( Union Ministry of Environment, Forests and Climate Change)। জনমতকে এড়িয়ে গিয়ে দেশের সংরক্ষিত এলাকায় পরিকল্পিত অথচ অনুমোদন না পাওয়া এবং সেই কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা 'ডেভেলপমেন্টাল' প্রজেক্টগুলোকে পাস করিয়ে নেবার এই সুযোগ তারা হাতছাড়া করেনি মোটেই। এপ্রিলের প্রথম হপ্তায় কেবল ভিডিও কনফারেন্স করেই তারা এইরকম ৩০টি বিতর্কিত প্রজেক্ট পাস করিয়ে নিয়েছে অথবা পাস করাবার প্রস্তাব রেখেছে। এই ক্লিয়ারান্স যোগাড় করবার কাজে তারা সঙ্গী পেয়েছে ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফকে। যাদের কাজ হওয়া উচিত ছিল জলবায়ুর পট পরিবর্তনের এই সাংঘাতিক সময়ে দেশের জীববৈচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখা, তারাই কর্পোরেট-তোষক লোভী শাসকের হাত ধরে অতিমারির পর্দার আড়ালে বিকিয়ে দিল দেশের যেটুকু-হোক-বেঁচে-থাকা পরিবেশের তলানি। এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে কতো প্রাণ বলি দিয়ে, কতো অতিমারির প্রকোপ সয়ে কেউ তা জানে না।

    যাই হোক, ভালোয় ভালোয় ৩০ টি প্রজেক্ট পাস হয়ে যাবার পর কোভিড নিয়ে টনক নড়েছে ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফের। ঢাক ঢোল পিটিয়ে তারা রাজ্যগুলির কাছে পরোয়ানা পাঠিয়েছে যে বনভূমির ধারেকাছেও যেন কেউ আন্দোলন জমায়েত ইত্যাদি করার কথা না ভাবে। পাছে করোনার জার্ম মানুষ থেকে পশুতে সংক্রমিত না হয়। একেই কি বলে গোড়া কেটে আগায় জল ঢালা ? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে লক ডাউনের কারণে প্রতিবাদীরা কেউ আন্দোলন করতে পারবে না, আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে না, সেই সুযোগ নিয়েছেন কর্তাব্যক্তিরা। লক আউট হতে হতে যা করবার করে ফেলা যাবে।

    সন্দেহ নেই এই ৩০টি প্রজেক্টের প্রত্যেকটিই এ দেশের পরিবেশের কফিনে মস্ত মস্ত পেরেক পুঁতবে। কারণ এদের প্রস্তাবনার সীমারেখার মধ্যে আছে ১৫ টি টাইগার রিজার্ভ, স্যাংচুয়ারি, পরিবেশ- সংবেদী জোন, বন্যপ্রাণী চলাচলের পথ এবং অরণ্যভূমি। তবু আলাদা করে কয়েকটির কথা না বলে পারা যাচ্ছে না। দিবাং ভ্যালির কথায় পরে আসব, কিন্তু পশ্চিমঘাট পর্বতের অরণ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে যে ক'টি প্রজেক্ট, তার সব কটাতেই ফণা তুলে রয়েছে সাক্ষাৎ সর্বনাশ। যেমন Sharavathi Lion Tailed Macaque Sanctuary তে কর্ণাটক পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রজেক্ট। সিংহের মতো লেজওয়ালা এক বিশেষ প্রজাতির বাঁদরের অভয়ারণ্য এই স্যাংচুয়ারি।শিবমোগগা জেলায় শারাবথী স্যাংচুয়ারিকে ঘিরে থাকা স্থানীয় মানুষজন এর বিরুদ্ধে, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। ক্ষমতা মানেই লুটের ছাড়পত্র পাওয়া এই সরকার ২০১৮ সালে এই সংরক্ষিত বনভূমিকে অসংরক্ষিত ঘোষণা করে কেবল মাত্র শারাবথী প্রজেক্টকে রূপায়িত করবে বলে।

    অথচ শিবমোগগা জেলা ইতোমধ্যেই Kyasanur Forest Disease ( KFD) নামে একটি সর্বনেশে ভাইরাল রোগের উৎপত্তি স্থল হিসেবে চিনহিত হয়েছে। এ রোগের মারণ ক্ষমতা কোভিডের থেকে বেশি বই কম নয় - ৩% থেকে ১০ %।
    কীভাবে এলো রোগটি ?
    পশ্চিমঘাট পর্বত লুটেরারা দেশীয় গাছগাছড়ার বদলে রোপণ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক একাসিয়া, ইউক্যালিপটাস,টিক ইত্যাদি। যে জীবরা খাদ্যের জন্য দেশীয় ফলমূলের ওপর নির্ভরশীল ছিল,যেমন বাঁদরেরা, তারা এবার লোকালয়ে হানা দিতে শুরু করে। এইভাবেই মানুষের মধ্যে KFD রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
    এইখানে স্মর্তব্য , নিপা ভাইরাসও কিন্তু এইভাবেই ছড়িয়েছিল। অরণ্য ধ্বংসের ফলে ফলখেকো বাদুরেরা দলে দলে আশ্রয় ও খাদ্যহীন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয় মানুষের খাদ্যশস্য ভরা খেতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে। বাদুড়ের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মারণ ভাইরাস -- নিপা।
    তবে কি আমাদের ভাগ্যলিখন ভাইরাসেই প্রাণ খোয়ানো ? করোনার পর আবার নিপা বা নতুন রোগ KFD বা অন্যকিছু ?

    পরিবেশবিদরা বার বার সাবধান করছেন যে ঐ আদিম অরণ্যের অবশিষ্টাংশে একটুখানি হস্তক্ষেপই খুব মারাত্মক হয়ে ফিরে আসতে পারে। এতই তার সংবেদনশীলতা। কিন্তু KPCL বলে যাচ্ছে যেহেতু তার পাম্পড স্টোরেজ পাওয়ার প্ল্যান্ট ভূগর্ভস্থ প্রজেক্ট, তেমন কিছুই হবে না। কোন ভরসায় তাহলে ছাড় পেল হুব্বাল্লি- এনকোলা রেলওয়ে প্রসারণ প্রজেক্ট ? উত্তোলিত লৌহ আকরিক আনবার জন্য নতুন রেললাইন পাতা হবে অরণ্য ধ্বংস করে এটাতে যারা আপত্তি করেছিলেন সেইসব পরিবেশবিদ মেম্বারদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র "স্পেশাল ইনভাইটি"দের অনুমতিক্রমে এই প্রজেক্ট ছাড় পেয়ে গেল ! অথচ প্রস্তাবিত রেলপথের সমান্তরাল হয়ে বিছিয়ে রয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে ৫২। আদৌ দরকারী কি এই সম্প্রসারণ? কতো শক্তিশালী লবি হলে তবে দেশের সবচাইতে প্রাচীন অরণ্য ধ্বংসের পারমিট রাতারাতি লক ডাউনের আড়ালে বার করে নেওয়া যায় তা বোঝা তো একেবারেই শক্ত নয়। ক্ষমতা যার, লুটের অধিকারও তার।

    শুধু তো রেলপথ প্রসারণ নয়, পশ্চিমঘাট অরণ্যমালায় আরো হবে একটি ট্রান্সমিশন লাইন, এবং হাইওয়ে প্রসারণ। নষ্ট হবে ভগবান মহাবীর ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি, যা রয়েছে আদিম অরণ্যের একেবারে কেন্দ্রস্থলে। ট্রান্সমিশন লাইন ও হাইওয়ে প্রসারণ এই দুইয়ে মিলে খাবে ৯১ হেক্টর মহীরুহ ঠাসা বনভূমি। আড়াই একরে এক হেক্টর হলে কত একর জমির গাছপালা কেটে সাফ করতে হবে তা তো অবোধ্য নয়।
    এইখানেই রয়েছে দুধসাগর প্রস্রবণ। মান্ডবী নদীর আরব সাগরমুখী গতিপথে চার স্তরে নেমে আসা এই প্রস্রবণ চারপাশের সবুজ নিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হলে।

    অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষার দ্বন্দ্বকে চূড়ান্ত বিন্দুতে নিয়ে যাচ্ছে ভারতের দক্ষিণপন্থীরা। বৃক্ষহীন, নদীনালা পাহাড় বৃষ্টিহীন এক উষর মরুতে তারা টেনে নিয়ে যাচ্ছে এদেশের জনজীবনকে। শক্ত এবং মরিয়া প্রতিরোধ ছাড়া এই অঘটনকে রোধ করা যাবে না। যদিও গোটা উত্তরপূর্ব জয় বিজেপির প্রায় সমাপ্ত, তবু প্রতিরোধের গল্প একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। আসামের ডিহিং পাটকাইয়ের সেই কাহিনী পরের কিস্তিতে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৪ জুন ২০২০ | ৫৩৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ১৪ জুন ২০২০ ০৬:৫০94287
  • ১.

    তিনসুকিয়া বা এপারের মাগুরছড়া গ্যাস ফিল্ডের আগুন বুঝি জ্বলবেই। বন পুড়বে, প্রাণী মরবে, আদিবাসী উচ্ছেদ হবে, বাতাস-জল দূষিত হবে -- তবেই না হবে উন্নয়ন! 

    এই সব নিষ্ঠুরতার কী কোনো শেষ  নাই? 

    ২.

    কালই এপারের শ্রীমঙ্গল খাসি পাহাড় থেকে আদিবাসী নেতা ডিবারমিন ফোন  করেছিলেন। আদিবাসী গ্রাম (পুঞ্জি) ঘেঁষে   মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ঘিরে সরকারের ইকো-ট্যুরিজম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। 

    এই প্রকল্পে খাসি আদিবাসী পাহাড়িদের কথা ভাবাই হয়নি, তাদের সাথে নূন্যতম আলোচনা তো দূরের কথা!  অথচ মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের জলের ওপর আশেপাশের এলাকায় আদিবাসী পুঞ্জিগুলো নির্ভরশীল, তাদের শত বছরের স্বাধীন জীবন জড়িত।                 

    এই নিয়ে মিডিয়ায় এতো বছরের ডজন  ডজন সরেজমিন প্রতিবেদন বা "পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের"  চিৎকার-চেঁচামেচিতেও  সরকারের কানে বাতাস যায়নি।  এখন করোনা ক্রান্তিতে জোরে শোরে বাস্তবায়নের উদ্যোগ চলছে ইকো-ট্যুরিজমের।                            

     ৩.

    আজকাল এই সব খবরে খুব অসহায় লাগে।  বয়স বাড়ছে, রক্ত ক্রমেই ঠান্ডা হয়ে আসছে। 

    আর কতকাল?        

    প্রতিভা দি,  আরও লেখ।  

  • aranya | 162.115.***.*** | ১৪ জুন ২০২০ ০৮:৪৩94292
  • ভারতে একমাত্র আদালত, বিচারব্যাবস্থাই মাঝে সাঝে, তাও কিছুটা কাজ করে।
    'সন্দেহ নেই এই ৩০টি প্রজেক্টের প্রত্যেকটিই এ দেশের পরিবেশের কফিনে মস্ত মস্ত পেরেক পুঁতবে। কারণ এদের প্রস্তাবনার সীমারেখার মধ্যে আছে ১৫ টি টাইগার রিজার্ভ, স্যাংচুয়ারি, পরিবেশ- সংবেদী জোন, বন্যপ্রাণী চলাচলের পথ এবং অরণ্যভূমি' - এই প্রজেক্টগুলোর বিরুদ্ধে কি কোন জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে?
  • b | 14.139.***.*** | ১৪ জুন ২০২০ ০৯:৩৫94298
  • ভারতে একমাত্র আদালত, বিচারব্যাবস্থাই মাঝে সাঝে, তাও কিছুটা কাজ করে।
    প্রায় কিছুই করে না।
  • একলহমা | ১৪ জুন ২০২০ ০৯:৫২94300
  • সারা পৃথিবীতে এখন এক ছবি।

  • aranya | 162.115.***.*** | ১৪ জুন ২০২০ ১০:১৫94304
  • আমার ধারণা, বি, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিচার ব্যবস্থা তাও কিছুটা কাজ করে। কিছু প্রগতিশীল রায় চোখে পড়ে , কালও দেখলাম মহারাষ্ট্র হাইকোর্ট সরকারকে বলেছে স্বাস্থ্য বাজেট বাড়াতে, পরিযায়ী শ্রমিক-্দের কথা না ভাবার জন্য সরকারের সমালোচনা করেছে
  • কুশান | 2401:4900:314b:f5c3:d2da:265d:dbf:***:*** | ১৪ জুন ২০২০ ১০:২২94307
  • পরিশ্রমী লেখা। আপনার সহজাত কলম এমন লিখতে পারে।

    লকডাউন একটা সুযোগ করে দিয়েছে রাষ্ট্র ও কর্পোরেটদের। অথচ কোনো প্রতিবাদ নেই, করোনার দোহাই।

    যেভাবে ন্যারেট করেছেন, পড়তে পড়তে শিউরে উঠছি। বিশ্বাস বলতে আর কিছু বাকি থাকছে না। পরিবেশ নিয়ে সরকারি কথাবার্তা কি একটা নিছক রেটোরিক হয়ে দাঁড়ালো তবে?

    পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি। 

  • aranya | 162.115.***.*** | ১৪ জুন ২০২০ ১০:৩৬94309
  • পরিবেশ তো কখনো ই গুরুত্ব পায় না। এই যে ডিব্রু-শইখোয়া ন্যাশনাল পার্ক জিজি-তে গেল, আগুন এখনো জ্বলছে, এবং, জ্বলতেই থাকবে
    মিডিয়ায় নামমাত্র কভারেজ। সরকার তো সব কর্পোরেট-দের হাতে তুলে দেওয়ার জন্যই ব্যস্ত
  • রৌহিন | 2401:4900:3144:b0b6:2407:63ef:b0d:***:*** | ১৪ জুন ২০২০ ১২:৩০94317
  • কিছু বলতে পারি না - ভিতরে ভিতরে রাগটাও কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে আজকাল, বেঁচে থাকার লোভে। বেঁচে থাকার লোভে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে চলেছি কেবলই

  • b | 14.139.***.*** | ১৪ জুন ২০২০ ১৫:২৫94323
  • শিবাংশু | ১৪ জুন ২০২০ ১৬:৪২94329
  • প্রথমে জাগে ক্রোধ, ঐ তেলকূপের আগুনের তীব্র জ্বালা তার। তার পর ছাই হয়ে যায় সাধ, স্বপ্ন। কোনও চিহ্ন থাকেনা আর মানুষের, প্রাণের, পৃথিবীর। দুর্দৈবের ব্যবসা, সর্বনাশের বাণিজ্য, সংজ্ঞাহীন স্বদেশ। আরও কতোদিন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন