এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • দিল্লী লৌহস্তম্ভ – এখনো ক্ষয়ে যায় নি কেন? (পর্ব - ১)

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৬ এপ্রিল ২০২০ | ৫৭২৮ বার পঠিত | রেটিং ৩.৫ (২ জন)


  • দিল্লীর লোহস্তম্ভ ক্ষয়ে যাচ্ছে না কেন সে নিয়ে আমার আদপেই কোন মাথা ব্যাথা ছিল না বছর কুড়ি আগে পর্যন্ত। সত্যি বলতে কি সেই স্তম্ভ কত বছরের পুরানো এবং হিসেব মত এতদিন বাইরে পরে থেকে থেকে তার ক্ষয়ে যাওয়াই উচিত ছিল সেটাও অতশত জানতাম না। তো এমন অবস্থায় তখন কানপুর আই আই টিতে পড়াশুনা করা কালীন প্রোফেসর বালাসুব্রামানিয়াম (যাকে সবাই ‘বালা’ বলে ডাকত) এর সাথে বেশ গাঢ় আলাপ হয়ে গেল। আমাদের ‘করোশন’ বিষয়ের ক্লাস নিতেন তিনি। কেন জানি না আমাকে বেশ পছন্দ করতেন উনি। এই ভাবেই বালার কাছ থেকেই সুযোগ এসে গেল দিল্লীর লৌহ স্তম্ভ নিয়ে কিছু নাড়াঘাঁটা এবং সেই ধাতু নিয়ে কাজকর্ম করার সুযোগ।

    সাম্প্রতিক সময়ে ধাতুগত দিক থেকে ওই লৌহস্তম্ভ ক্ষইছে না কেন তা নিয়ে সবচেয়ে বেশী রিসার্চ এবং লেখালিখি করেছিলেন বালা-ই। বেশ কিছু পেপার, এমনি একটা বইও আছে বালার এর উপরে। শুধু দিল্লীর লৌহ স্তম্ভ নয়, প্রচীন ভারতের বেশ কিছু ধাতু সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন বালা ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাথে। যারা এই সব ব্যাপারে উৎসাহী তারা বালার বই এবং পেপার গুলো পড়ে দেখতে পারেন, খুব ইন্টারেষ্টিং।

    আমার কাজ ছিল সেই প্রোজেক্টে লৌহস্তম্ভের ধাতুর ‘হাই-টেম্পারেচার অক্সিডেশন’ নিয়ে নাড়াঘাঁটা – মানে ফার্নেসে ঢুকিয়ে, বের করে – তার পর এক্স-রে ডিফ্রাকশন, আরো নানাবিধ টেকনিক দিয়ে দেখা যে ধাতুর ভিতরে বা তার ধাতুর সারফেসে কি পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু ব্যাপার হল লৌহস্তম্ভের ধাতু দেবে কে? দিল্লীর এই ধাতব মালটাকে নিয়ে নাড়াঘাঁটা শুরু হয়েছে সেই বৃটিশ পিরিওডে, ১৯১২ সাল থেকে যতদূর সম্ভব। কিন্তু এখন তো আর সেই যুগ নেই যে সাদা চামড়ার কেউ টুপি পরে অকুস্থলে গিয়ে নেঙটি টাইপের ধুতি পরা এক ভারতীয়কে বলবে, ‘অ্যাই, এই পিলার থেকে আমাকে একটা ছোট দেখে পিস কেটে দে – আহা, তাবলে মাঝখান থেকে কাটতে যাচ্ছিস কেন? গাধা কি সাধে বলে – কোণ চেপে কাট’। তাই বৃটিশ আমলে যা হয়েছে হয়েছে, এখন দিল্লীর পিলার থেকে ধাতুর নমুনা পাওয়া বেশ চাপের। তাহলে কি হবে? তবে দিল্লীর লৌহ স্তম্ভ থেকে কিছু মরচে সংগ্রহ করতে পেরেছিল বালা সেই ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাহায্যে। কিন্তু সেই মরিচা নিয়ে অন্য ছাত্র লড়ে যাচ্ছে।

    দিল্লীর লোহ স্তম্ভের মূল ধাতু যাওয়া যখন পাওয়া গেল না, তখন তার কাছাকাছি বিকল্প নিয়েই কাজ করতে হবে। এবার কাছাকাছি বিকল্প পেতে গেলে জানতে হবে এই লৌহ স্তম্ভ কোন সময়ের এবং কেমন ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল। সৌভাগ্য বশতঃ এই নিয়ে বেশ কিছু তথ্য আগে থেকেই পাওয়া যায় – সেই তথ্য অনুযায়ী এই লৌহ স্তম্ভ তৈরী করা হয়েছিল গুপ্তযুগে, ৪০০-৪৫০ খ্রীষ্টাব্দের কাছেকাছি সময়ে। এটার জানার ফলে, খোঁজ নেওয়া হল, সেই সময়ের অন্য কোন ধাতুর নমুনা পাওয়া যাবে কিনা। এই ভাবে খুঁজতে খুঁজতে মধ্যপ্রদেশের কোন এক মন্দিরের এক ধাতব আঙটা খুলে গেছে, যা কোন কাজে লাগে না আজকাল – সেই আঙটা গুপ্ত যুগে এই লৌহ স্তম্ভের কাছাকাছি সময়ে বানানো হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তাই সেই আঙটা থেকে লোহার নমুনা সংগ্রহ করেই রিসার্চ আর কি। এই ভাবেই পরোক্ষ নমুনার সাহায্যে অনেক কিছু তথ্য উদঘাটিত হয়েছিল এই লৌহ স্তম্ভের। আর কত যে থোড় বড়ি খাড়া পেপারের সংখ্যা বেড়েছিল সে আর নাই বা বললাম।



    তো বর্তমানে এই লৌহস্তম্ভ রয়েছে দিল্লীর কুতুব কমপ্লেক্সে। বর্তমানে বললাম এই জন্যই যে, এই স্তম্ভ দিল্লীতে চিরকাল ছিল না। মালটা প্রথমে কোথায় ছিল সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে - তবে মোটামুটি সব বিজ্ঞরা আজকাল এই সিদ্ধান্তে এসে পোঁছেছেন যে, এই স্তম্ভ প্রথমে খাড়া করা হয়েছিল বর্তমান উদয়গিরি-তে, ওই ৪০০-৪৫০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ। তারপর সেখান থেকে দিল্লীতে আসে। যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই স্তম্ভ সত্যিই ১৬০০ বছরের পুরানো, তাহলে বছরের হিসাবে দেখতে গেলে দিল্লীতে এর ঠাঁই শেষ আটশো বছরের মত। হিসেব মত এই লৌহ স্তম্ভ প্রায় ২৩ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা, যার মধ্যে নীচের দিকের ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি মত আছে মাটির নীচে পোঁতাব। এই স্তম্ভ ওজনে প্রায় ৬০০০ কেজি। উপরের দিকে ঘন্টাকারের গোল অংশটি ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি, আর তার পরের ডিম্বাকৃতি অংশটির দৈর্ঘ্য ২ ফুট ৪ ইঞ্চি। স্তম্ভের নীচের ব্যাস প্রায় ১৭ ইঞ্চি এবং উপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ ইঞ্চি।



    ভারতীয় পাবলিকের যেকোন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে সে স্থলে নিজের নাম খোদাই করার এক অদ্ভূত কৃতিত্ব আছে – এবং বিশেষ করে “অমুক + তমুক” লেখার ব্যাপারটা। না লিখতে পারলে হাত নিশপিশ করে, তখন সেটা ছুঁয়ে কিছুমিছু একটা তো করতেই হবে এবং ভাব চলে আসে। বলাই বাহুল্য এই লৌহ স্তম্ভে নিজের নাম খোদাই তো তেমন সম্ভব ছিল না, তাই পাবলিক সেটা আঁকড়ে ধরতে শুরু করল – দাবী হল যে এই স্তম্ভ জড়িয়ে ধরে কিছু কামনা করলে নাকি সেই কামনা পূর্ণ হয়! ফলতঃ বছরের পর বছর লাখো লাখো লোকের আলিঙ্গনে সেই পরম লোহার আগেও হালকা ক্ষয় দেখা গেল – ঘর্ষণ এবং আরো নানাবিধ কারণে। তাই ১৯৯৭ সালে পর থেকে লৌহ স্তম্ভটি বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হল – পাবলিকের চটকানো থেকে থাকে বাঁচানোর জন্য।

    এই লৌহ স্তম্ভটির ইতিহাস তা হলে কিভাবে অনুমান করা হয়? স্তম্ভের গায় বেশ কিছু শ্লোক খোদাই করা আছে – এর মধ্যে সবচেয়ে পুরানো শ্লোকটি ছয় লাইনে সংস্কৃত ভাষায় লেখা। সেই শ্লোক পাঠোদ্ধার করে যা বোঝা গেলে তা হল – এই স্তম্ভটি ‘বিষ্ণুপদগিরি’ পাহাড়ের কোলে এক বিষ্ণুমন্দিরের প্রাঙ্গণে স্থাপন করেছিলেন ‘চন্দ্র’ নামে কোন এক রাজা। ব্যাস চন্দ্র নাম শোনার পরই পন্ডিত সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়লেন – এ কোন চন্দ্র?? সেই লিপির প্রকার দেখে টের পাওয়া গেল তা মোটামুটি ৪০০ থেকে ৪৫০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে লেখা। এবং সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত এই স্তম্ভ গুপ্ত যুগের। তা না হয় হল – কিন্তু কোন গুপ্ত সম্রাট? প্রথম চন্দ্রগুপ্ত , নাকি সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত, কুমারগুপ্ত বা স্কন্দগুপ্ত?



    ব্যাস আবার শুরু হয়ে গেল পেপার লেখা – এত বড় সুযোগ কেউ ছাড়ে? একজন অনুরূপ লিপিতে লেখা সোনার মুদ্রার খুঁজে বের করে বলল, “ভাইসকল দ্যাখো, এই মুদ্রায় লেখা আর স্তম্ভে লেখা প্রায় একপ্রকার। আর এই মুদ্রায় দ্যাখো স্পষ্ট করে চন্দ্র লেখা আছে এবং এ হল গিয়ে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এর সময়কার, তাহলে এই স্তম্ভ নির্ঘাত উনার আমলেই বানানো”। অন্য দল সেই শুনে হইহই করে উঠল – বলল, “শুধু একটা মুদ্রা দিয়েই কেস ডিসাইড করে দেবেন নাকি?” এত রসালো বিষয়ের এত তাড়াতাড়ি পরিসমাপ্তি! পেপার – প্রতি-পেপার লিখন ইত্যাদি চলল। বেশ বোরিং ব্যাপার একটু – আপনাদের যদি ইন্টারেষ্ট থাকে তা হলে বালার বই এবং পেপার গুলো খুঁজে পড়ে নেবেন। কুমারগুপ্তর নাকি আবার এক বিদ্রোহী সন্তান ছিল ঘোটৎকচগুপ্ত নামে – সেও নাকি আলোচনায় ঢুকে গিয়েছিল সেই ফাঁকে। আসলে সব গবেষকই চাইছিল মনে হয় নতুন নাম প্রপোজ করতে – বেশী চেনা নাম ফুরিয়ে গেলে, এই সব অল্পচেনা ঘোটৎকচগুপ্ত বা নরসীমাগুপ্ত, বুদ্ধগুপ্ত, বিনয়গুপ্ত এনাদের ঢোকানো হয়। তো যাই হোক সেই সময়ে পাওয়া মুদ্রার সাথে তুলনা করা করে শেষমেশ মোটের উপরে সবাই একমত হল যে, এই মুদ্রার চন্দ্র এবং লোহস্তম্ভের চন্দ্র একজনাই – দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য।

    কার আমলে বানানো হয়েছিল তার একটা মোটামুটি সন্তোষজনক পরিসমাপ্তির পর উনারা নিয়ে ঝাঁপালেন বিষ্ণুপদগিরি কোথায় ছিল সেটা নিয়ে। কিছু লোক বেশী খোঁজ টোঁজ না করেই দুম করে বলে দিলেন দ্যাখো এ যখন দেবতাদের নাম নিয়ে কারবার, তাহলে এ জিনিস নির্ঘাত কাশীর কাছাকাছিই হবে! এক সাহেব তো বললেন, এ জায়গা বর্তমানের মথুরা। তো যাই হোক এই নিয়ে বাক বিতন্ডা চলতেই থাকল – কিন্তু একটু মাথা ঠান্ডা যাঁদের তাঁরা ভেবে দেখলেন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত যখন একটা বানিয়েছেন সেটা প্রমাণ হয়েই গেছে তাহলে বিষ্ণুপদগিরি স্বভাবিক বুদ্ধিতে সেই গুপ্ত যুগের কোন প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ শহরের কাছাকাছি হবারই সম্ভাবনা বেশী। সেই সময়ের ধর্ম ইত্যাদি বিষয় ঘেঁটে দেখে পন্ডিতরা যে অঞ্চলটা ঠিক করলেন খুঁজে দেখার জন্য তা হল “উদয়গিরি –বেসনগর-বিদিশা-সাঁচি”। গুপ্ত যুগের আগে থেকেই এই অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ছিল ব্যবসা বাণিজ্য এবং ধার্মিক চিন্তা ভাবনার কেন্দ্র হিসাবে। উদয়গিরিতে পাওয়া কিছু স্থাপত্য দেখে জানা যায় যে সেই অঞ্চলে এক সময় বিষ্ণু আরাধনার প্রচলন ছিল। এছাড়া উদয়গিরির গুহাতে পাথর কেটে মন্দির বানানোর প্রমাণ পাওয়া যায় গুপ্ত যুগে। এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত যে এখানে উপস্থিত ছিলেন তা জানা যায় নানা খোদাইয়ে তাঁর নাম দেখে। উদয়গিরিতে পাথর কেটে বানানো স্থাপত্যের মধ্যে প্রধান এবং উল্লেখযোগ্য হল বিষ্ণুর বরাহ অবতারের মূর্তি। তো এক জায়গায় এই বরাহঅবতার বাঁ পা তুলে হাঁটু বেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন – এবং গবেষকরা একমত যে এই বরাহ অবতার স্বরূপ বিষ্ণু মূর্তির সামনে ঝুঁকে থাকে দ্বিতীয় ব্যাক্তিটি আর কেউ নয়, স্বয়ং দ্বিতীয় চন্দগুপ্ত নিজে।

    প্রত্নত্বাত্তিকরা যেখানে মাটির তলা থেকে উদ্ধার করা একটা মাত্র চামচ থেকে গোটা সভ্যতা কেমন ছিল হাজার হাজার বছর আগে তা বলে দেবার দাবী জানাতে পারেন – সেখানে এই মাত্র ১৬০০ বছর আগের বরাহ অবতার কেন পা তুলেছিলেন তা বলে দেবেন সেটা আর আশ্চর্য্য কি! উনারা বললেন আসলে এই এই বরাহ অবতার স্বরূপ বিষ্ণু মূর্তি পা তুলে যাতে দিয়েছিলেন তা এক পর্বত এবং সেই পর্বত আর কিছুই নয় বরং গোটা বিষ্ণুপাদগিরির এক সিম্বল মাত্র। পা দেওয়া সেই পাথরের (যা পর্বতের সিম্বল) গায়ে আবার ছোট ছোট খোদাই করা গর্ত আছে, যা নাকি উদয়গিরি পাহাড়ের গায়ের গুহাগুলিকে রিপ্রেজেন্ট করে। ব্যাস, এতো বোঝার পর আর কি সিদ্ধান্তে আসতে বাকি থাকেন পন্ডিতেরা – বেশীর ভাগ মেনে নিলেন যে ওই দিল্লীর লৌহস্তম্ভের গায়ে বিষ্ণুপদগিরি বলে যার উল্লেখ আছে তা আদপে উদয়গিরি। মোটামুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া গেল যে এই লৌহ স্তম্ভ উদয়গিরির পাঁচ নম্বর গুহায় আগে উল্লিখিত বরাহমূর্তির খোদাইয়ের সামনেই ছিল। বরাহ অবতারের সাগরের তলদেশ থেকে পৃথিবীকে উদ্ধারের গল্পের সাথে মিল রয়েছে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তর শক-দের হাত থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ধার করার ব্যাপারটায়।

    তাহলে কে বানিয়েছে বোঝা গেল, কোথায় প্রথম ছিল এই লৌহ স্তম্ভ প্রথমে তার সম্পর্কেও এক ধারণা পাওয়া গেল। কিন্তু মালটা তাহলে কিভাবে উদয়গিরি থেকে দিল্লী এল! স্বভাবিক ভাবেই এই ব্যাপারটা নিয়েও একটু চটকাচটকি হল। ঠিক কবে এই লৌহ স্তম্ভ দিল্লী এসেছিল তা জানা যায় না – তবে মনে করা হয় যে তোমর সম্রাট অনঙ্গপাল ১০৫০ সাল নাগাদ লাল কোট এ যখন মূল মন্দিরটি বানান, তখন এই স্তম্ভটি যেখানে প্রোথিত করা হয়। লাল কোট পরে চলে যায় কুতুব-উদ্দিন-আইবেকের হাতে যখন তিনি পরাজিত করলেন পৃথ্বিরাজ চৌহানকে ১১৯১ সালে। কুতুব-উদ্দিন-আইবেক তাই করলেন যা আর বাকি সম্রাটরাও করে – ১১৯১ থেকে ১১৯৯ সালের মধ্যে তিনি তাঁর দিল্লী বিজয়কে সেলিব্রেট করতে “কুয়াত-উল-ইসলাম” নামে এক মসজিদ বানিয়ে ফেললেন। আজকের দিল্লীর লৌহ স্তম্ভ ঠিক এই মসজিদের চত্ত্বরেই খাড়া আছে।

    এটাও বোঝা যায় যে কুতুব-উদ্দিন-আইবেক যেখানে মসজিদটি বানিয়ে ছিলেন তা ভিত্তিতে ছিল এক মন্দির। আর সেই মসজিদ বানাবার মালমশলা অনেকটাই এসেছিল আশেপাশের আরো ২২টি ধ্বংস করে দেওয়া মন্দিরের থেকে। মন্দিরের স্থাপত্য দেখেশুনে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ঠিক করেছেন যে আগে লৌহস্তম্ভটি এই মন্দির চত্ত্বরের অন্য কোথাও খাড়া ছিল – মন্দির থেকে মসজিদে পরিবর্তন করার সময় এই স্তম্ভটি সরিয়ে তার বর্তমান জায়গায় নিয়ে আসা হয়। আর সেই থেকে প্রায় ৮০০ বছর ধরে লৌহস্তম্ভটি একই জায়গায় আছে।
    এই পর্যন্ত ঠিক আছে – কিন্তু লৌহস্তম্ভটি ক্ষয়ে যাচ্ছে না কেন? যেখানে আমাদের বারান্দার গ্রীল বছর চারেক রঙ করে মেনটেন না করলে ক্ষয়ে গিয়ে দফারফা, সেখানে আজ প্রায় ১৬০০ বছর ধরে এই লৌহ স্তম্ভ কি ভাবে না ক্ষয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে! এর পিছনের রহস্য কি? কোন বিশেষ ধরণের লোহার ব্যাবহার, নাকি বানানোর বিশেষত্ব, নাকি মৃদু আবহাওয়ার প্রকোপ? এর পরের পর্বে নাড়াচাড়া করে দেখব সেই সব –

    [ক্রমশঃ]  
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৬ এপ্রিল ২০২০ | ৫৭২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • b | 172.69.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ২১:০৭92711
  • দৌড়ক।
    উদয়গিরি কেভসঃ https://en.wikipedia.org/wiki/Udayagiri_Caves আমি প্রথমে ভাবছিলাম পুরি-র উদয়গিরি।
  • বিপ্লব রহমান | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ২২:২২92714
  • বাপ্রে! লৌহ দণ্ড নিয়ে পুরাই মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া লেখ!  (ব্যোমকেশ ইমো) 

    উড়ুক (ওয়াই)!      

  • ধীমান মন্ডল | ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০১:২১92725
  • পরবর্তী অংশের জন‍্য অপেক্ষায় রইলাম।

  • একলহমা | ২৭ এপ্রিল ২০২০ ১৮:০১92745
  • অপেক্ষায় আছি। :)

  • Jharna Biswas | ২৭ এপ্রিল ২০২০ ২১:০১92752
  • প্রচুর তথ্য জানলাম...স্বচোক্ষেও দেখেছিলাম তবে এটা পড়ে খুঁটিনাটি আরো জেনে ভালোলাগছে..."চিনি কম" মুভিতেও এই স্তম্ভ দেখানো হয়েছিল... জানিনা ওই তত্ত্ব কতটা সত্যি - যে স্তম্ভটাকে উল্টোভাবে ধরতে পারলে নাকি ভালোবাসা স্থায়ী হয়... !..

    খুব ভালো লাগলো পড়ে সুকান্ত। একটা প্রশ্ন ছিল, ছবিগুলো কিভাবে দিলেন মানে দিতে হয়... 

  • Jharna Biswas | ২৭ এপ্রিল ২০২০ ২১:০১92751
  • প্রচুর তথ্য জানলাম...স্বচোক্ষেও দেখেছিলাম তবে এটা পড়ে খুঁটিনাটি আরো জেনে ভালোলাগছে..."চিনি কম" মুভিতেও এই স্তম্ভ দেখানো হয়েছিল... জানিনা ওই তত্ত্ব কতটা সত্যি - যে স্তম্ভটাকে উল্টোভাবে ধরতে পারলে নাকি ভালোবাসা স্থায়ী হয়... !..

    খুব ভালো লাগলো পড়ে সুকান্ত। একটা প্রশ্ন ছিল, ছবিগুলো কিভাবে দিলেন মানে দিতে হয়... 

  • সুকি | 162.158.***.*** | ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৮:৫১92758
  • বি, বিপ্লব, একলহমা, ধীমান, ঝর্ণা - সবাইকে ধন্যবাদ।

    ঝর্ণা,

        কোন এক্ট ইমেজ হোষ্টিং ওয়েব সাইটে গিয়ে যে ছবিটি লোড দিতে চান সেটি আপলোড করে দিন। যেমন, পোষ্টিইমেজ। সেখানে লোড করার পর, একটা ডাইরেক্ট লিঙ্ক পাবেন ছবিটির, সেটা পোষ্ট করে দিন এখানে। 

  • Sudipto Pal | ১১ অক্টোবর ২০২০ ২০:০৩98288
  • দারুন লেখা। অপেক্ষায় থাকব।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন