উইলিয়াম ডারলিম্পল জানিয়েছেন ভারতের সাথে বৃটিশের সংযোগের একেবারে শুরুতে যে ভারতীয় স্ল্যাং ইংরেজি ভাষায় ঢুকে পড়ে তাহল “লুট”। এ শব্দটির এমনই সামাজিক-অর্থনৈতিক মহিমা যে ক্লাইভের স্ত্রী ভারত থেকে তখনকার মূল্যের ২০০,০০০ পাউন্ডের রত্ন নিয়ে যান। আর খোদ ক্লাইভ সবমিলিয়ে ১,২০০,০০০ পাউন্ড। তো লুটের লোভে গরম, জলাভূমি, মশাভর্তি দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসার পরে কিছু দুর্বিপাক শুরু হল। তার মধ্যে প্রধান হল বেশ কয়েকটি মহামারি।
আজ হতে ১০০ বছর আগে ১৯১৮-১৯ সালে ২০২০-র করোনাভাইরাস অতিমারির মতোই উপনিবেশিক ভারতের শাসক সমাজ কেঁপে উঠেছিল বলা যায়। ভারতে ১৯১৮ সালে শুরু হল অতিমারি ইনফ্লুয়েঞ্জা। এর উৎস সেসময়ের অতিমারি “স্প্যানিশ ফ্লু”। তৎকালীন বোম্বেতে ১৮ জুন, ১৯১৮-তে ফ্লু আক্রান্ত নাবিকদের নিয়ে একটি জাহাজ এলো (এখন উড়োজাহাজ আসে) এবং মহামারি ছড়ালো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যত সৈনিক মারা গিয়েছিল তার চেয়ে বেশি, প্রায় দু কোটি, মানুষ মারা গেলো। ভারতীয় জনসংখ্যার ৬% প্রাণ হারালো। জুনের পরে সেপ্টেম্বরে আবার এর সক্রিয় আক্রমণ শুরু হলো। ১৯১৯ অব্দি চললো ধ্বংস লীলা। উপনিবেশিক ভারতের ৯টি প্রদেশ এবং ২৩১টিরও বেশি জেলা আক্রান্ত হয়েছিল। সেসময়ে গাঁধি বলেছিলেন বেঁচে থাকার সমস্ত ইচ্ছে চলে যাচ্ছে। নামী হিন্দী লেখক সুর্যকান্ত ত্রিপাঠির স্ত্রী মারা গেলেন ইনফ্লুয়েঞ্জায়। সেসময় টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে বারংবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ভিড় এড়িয়ে চলতে, আক্রান্তের সংস্পর্শে না আসতে। আজকের করোনাভাইরাস অতিমারির সাথে কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে?
এ মহামারীর সময়ে আরেকটা ঘটনা ঘটেছিল। হেলথ ইন্সপেক্টর জে এস টার্নারের পর্যবেক্ষণ ছিল বোম্বে ডকের ঐ জাহাজ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। কিন্তু উপনিবেশিক কর্তাদের দৃঢ় সিদ্ধান্ত ছিল ভারতবাসীর মধ্য থেকেই এই রোগ ছড়িয়েছে। ভারতকে শাসন করেছে ব্রটিশ শক্তি, কিন্তু সবসময়েই ভারতকে “সভ্য” ইংল্যান্ডের “অপর” হিসেবে নির্মাণ করেছে, যেখানে সমস্ত রোগ এবং কুশ্রীতার উৎস নিহিত আছে। স্প্যানিশ ফ্লু প্রতিসৃত হয়ে ভারতের রোগ হল। এমনকি এ ভাবনাও কাজ করেছে যে ভারত থেকে প্রত্যাগত সমস্ত সৈনিক, মিশনারি এবং অন্যান্যরা যেন এ রোগ নিজেদের দেহে “রেজিস্টার” করে ঘরে ফিরছে।
ডেভিড আর্নল্ড তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ কলোনাইজিং দ্য বডিঃ স্টেট মেডিসিন অ্যান্ড এপিডেমিক ডিজিজেস ইন ইন্ডিয়া-তে তিনটি প্রধান মহামারি নিয়ে আলোচনা করেছেন – স্মল পক্স, কলেরা এবং প্লেগ।
স্মল পক্সকে ব্রিটিশরা “ভারতের দৈব অভিশাপ” বলে অভিহিত করেছিল। অন্য সমস্ত রোগ মিলিয়ে যত মৃত্যু হত এক স্মল পক্সেই মৃত্যুর সংখ্যা তার চেয়ে বেশি ছিল। প্রাক-১৮৭০ নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলেও অনুমান করা হয় ৩০ লক্ষের বেশি জনসংখ্যার কলকাতা শহরে ১৮৩৭ থেকে ১৮৫১ সালের মধ্যে ১১,০০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল (এর মধ্যে ১৮৪৯-৫০-এ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬,১০০)। এবং ১৮০২ সালে জেনারের ভ্যাক্সিন প্রয়োগের পরের চিত্র এটা।
এখানে উল্লেখ্য যে স্মল পক্সের টিকা দেবার একটি দেশজ পদ্ধতি যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ভ্যারিওলেশন বলা হত তা ভারতের মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে এবং শহরাঞ্চলেও চালু ছিল। এমনকি উপনিবেশিক রাষ্ট্রের তরফেও এ পদ্ধতিকে একটি সময় পর্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। জেনারের আবিষ্কৃত টিকা (ভ্যাক্সিনেশন) ভারতে আসার পরে এ চিত্র আমূল বদলে যায়। ১৮০২ থেকে ১৮০৪ সালের মধ্যে ১৪৫,০০০ মানুষকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়। ১৮০০ থেকে ১৮০২ সালের মধ্যে ভ্যারিওলেশনের সংখ্যা ২৬,০০০, অর্থাৎ ভ্যাক্সিনেশনের এক-চতুর্থাংশ। ভ্যারিওলেশন বনাম ভ্যাক্সিনেশনের লড়াই একাধিক বিষয়কে সামাজিক এবং রাষ্ট্র পরিচালনার স্তরে প্রতিষ্ঠিত করল – প্রথম, ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্ব এবং ঔকর্ষ এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল সার্জারিতে, এবার সেটা প্রসারিত হল মেডিসিনের জগতে; দ্বিতীয়, সবাইকে সার্বজনীন ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ভারতীয় দেহের ওপরে এর অধিকার প্রতিষ্ঠা শুরু করল; তৃতীয়, রাষ্ট্রের নজরদারির বাইরে কেউ থাকতে পারবেনা এই দার্শনিক অবস্থান রাষ্ট্রিক নীতির চেহারা নিল; চতুর্থ; রাজা এবং প্রজার সম্পর্ক ধীর অথচ অমোঘ গতিতে রাষ্ট্র এবং নাগরিকের সম্পর্কে রূপান্তরিত হতে শুরু করল। সর্বোপরি, দেশজ চিকিৎসাপদ্ধতি একেবারে প্রান্তিক হয়ে উঠল। এখানে উল্লেখ করা দরকার ১৮০৬ সালে জেনার যখন ভারতে আসেন তখন বাংলা থেকে ৪,০০০ পাউন্ড তাঁকে দেওয়া হয় – উচ্চবর্গের তরফে ইউরোপীয় মেডিসিনকে বরণ করে নেবার একটি দৃষ্টান্ত। কিন্তু নিম্নবর্গের তরফে প্রতিরোধ সবসময়েই ছিল।
১৮১৭ সালে প্রথম কলেরা মহামারির পরে ১৮১৯ সালে উপনিবেশিকদের তরফে একে “সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং মারণান্তক রোগ” বলা হয়। ১৮১৭ থেকে ১৮৬৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি এবং ১৮৬৫ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ১৮৫৪ সালে ইংল্যান্ডে জন স্নো প্রমাণ করেছেন কলেরার উৎস অশুদ্ধ জল এবং জল পরিবহনের দূষিত ব্যবস্থা। এর অভিঘাতে এদেশে স্যানিটেশন এবং হাইজিনের ওপরে জোর পড়ে। বিভিন্ন কমিটি তৈরি হয়। এছাড়াও একাধিক প্রত্যক্ষ কারণ ছিল। একদিকে, সৈনিকেরাও মারা যাচ্ছিল এবং অন্যদিকে, ক্রম-হ্রাসমান জনসংখ্যা সরকারের রেভেন্যু আদায় নির্মমভাবে কমিয়ে দিচ্ছিল। কলেরার মতো মারণ রোগ প্রতিহত করার মধ্য দিয়ে মেডিসিন সাম্রাজ্যবাদের মানবিক মুখ হয়ে উঠল। আরও দুটি ঘটনার জন্ম দিল কলেরা – প্রথম, কলেরায় মৃত অজ্ঞাত পরিচয় ভারতীয় দেহের শবব্যবচ্ছেদ হল – আধুনিক মেডিসিনের ঔৎকর্ষ এবং রোগের অঙ্গ-স্থানিকতা আরেকবার দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল; দ্বিতীয়, ১৮৬৭—র পরে বাণিজ্যিক কারণে সুয়েজ খালে কোয়ারান্টাইন এড়ানোর জন্য ব্রিটিশরা কলেরাকে বলছিল ডায়ারিয়াল ডিজিজেজ। পলিসির এই পরিবর্তনে কলেরা সংক্রান্ত গবেষণা থমকে গেল।
কলেরা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রাহ্য রোগ ছিল। কিন্তু প্লেগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ভয় ছিল। প্লেগে মৃত্যুর হার একসময়ে ১০০০-এ ৪১.৩ ছিল। প্লেগ নিবারণের জন্য রাষ্ট্রের তরফে যেসব দানবীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের দাঙ্গা পর্যন্ত হয়। ভারতবর্ষে সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছয়। কিন্তু রাষ্ট্রের তরফে অনুগত, বাধ্য এবং নিয়ম-মেনে-নিতে অভ্যস্ত নাগরিক তৈরির প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। অনেকাংশে সফলও হয়। আজ ঐতিহাসিকভাবে এ সত্য মেনে না নেবার কোন কারণ নেই যে ভারতে ১৮৯৬-৯৭ সালের যে প্লেগ মহামারি ঘটেছিল তা ইউরোপে নতুন আবিষ্কৃত একাধিক ভ্যাক্সিনের পরীক্ষাগার হিসেবে কাজ ভারতের পরিবেশ এবং মানুষ।
১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন বোম্বের মান্ডভি অঞ্চলে প্লেগের প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে। এরপরে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বোম্বেতে। অনেকেরই এখানে কাম্যু-র লেখা কাল্পনিক শহর ওরান-এর কথা মনে পড়বে। মনে পড়বে ওখানকার অধিবাসীদের অসহায় মৃত্যুর কথা। ভারতে কর্মরত এক উচ্চপদস্থ বৃটিশ অফিসার পরে স্মৃতিচারণ করেছিলেন – “Streets [were] deserted, whole families [were] found dead with no record to tell who they were or where they came from, mothers [were] lying cold with helpless babies beside them whom no one dared pick up to take care of, from fear of this new and terrible disease…Business came to a standstill…” বম্বে এবং করাচির বন্দর হজ যাত্রীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখনকার সাথে মিল দেখতে পাওয়া যাবে।
ভারতবর্ষে প্লেগের তাৎপর্য একাধিক কারণে। একদিকে ভারতীয় দেহ এবং মাটির ওপরে উপনিবেশিক কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করা, অন্যদিকে ভারতীয় দেহকে নতুন ভ্যাক্সিনের পরীক্ষাগার হিসেবে কাজে লাগানো, আরেকদিকে, একই আইনের পরিভাষার অর্থ এবং ব্যঞ্জনা বদলে ফেলা। শব্দটি হল sedition। বম্বেতে ফ্লোরেন্স থেকে আসেন বিজ্ঞানী Alexandre Yersin এবং A. Lustig, হ্যাফকিন এবং অন্যান্যরা। বম্বেতে এদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন নাসেরওয়ানজি হরমুসজি চোকসি। চোকসি Arthur Road Infectious Diseases Hospital-এর চিফ মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন। এদিকে লাসটিগ তাঁর ছাত্র গ্যালেওত্তিকে নিয়ে Bacterium pestis-এর কোষ থেকে একধরনের নিউক্লিয়-প্রোটিন বের করলেন যার ইমিউনিটি তৈরি করার ক্ষমতা আছে। পরে অবশ্য হ্যাফকিনের ভ্যাক্সিন বেশি গৃহীত হয়। চোকসি সমগ্র প্রক্রিয়াটিতে নেতৃত্বে ছিলেন। ভারতীয় দেহের ওপরে ভ্যাক্সিনের হাত ধরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুফলও মিলেছিল। ১৯০০ সাল নাগাদ প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭০০০ মানুষ টিকা নেবার জন্য আসতো।
১৯০০ সালে উপনিবেশিক শক্তির ভারতীয় মাটি এবং দেহের ওপরে কর্তৃত্ব তৈরি হয়ে গেছে। ১৮৯৬ থেকে ১৮৯৭-৯৮ সাল ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বাল গঙ্গাধর তিলক তখন সর্বজনমান্য নেতা। মারাঠিতে তিনি “কেশরী” পত্রিকা প্রকাশ করতেন। সেখানে বৃটিশ প্লেগ কমিশনার ওয়াল্টার র্যান্ডের নেতৃত্বে অতিসক্রিয় প্লেগ নির্মূল অভিযান যেখানে পূনের রক্ষণশীল ব্রাহ্মনদের ঘরে পর্যনত ঢুকে গিয়ে মেয়েদের পর্দানশীনতায় আঘাত করার প্রতিবাদে তীব্র ভাষায় লিখেছিলেন। মানুষের ক্ষোভ এতদূর পৌঁছেছিল যে দামোদর চাপেকারের হাতে র্যান্ড নিহত হয়। বম্বে হাইকোর্টে তিলকের বিচার শুরু হয় রাষ্ট্রদোহিতার অপরাধে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১২৪এ ধারায়। ১৮৩৩ থেকে চালু ইংল্যান্ডে একই ধারায় “সিডিশন”-এর অর্থ ছিল “any person by words, either spoken or written, or by signs, or by visible representation, or otherwise, brings or attempts to bring into hatred or contempt, or excites or attempts to excite disaffection towards the government established by law in India”। অর্থাৎ, সশস্ত্র কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে উৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা। তিলক সেগুলো কিছুই করেন নি। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্ট্র্যাচি পুরো বিষয়টিকে বোধের জগতে অন্যত্র স্থানান্তরিত করলেন। বললেন, তিলকের লেখায় সরকারের প্রতি “absence of affection” আছে। এজন্য দণ্ডনীয়। Sedition-এর ব্যন্জনা নতুনভাবে রূপান্তরিত হল উপনিবেশিক দেশে – প্লেগকে কেন্দ্র করে। তিলকের ১৮ মাস কারাদণ্ড হল।
সবশেষে, প্লেগ শুরু হবার পরে ১৮৯৭ সালে যে এপিডেমিক ডিজিজেজ অ্যাক্ট চালু করা হয় তার প্রাসঙ্গিকতা ২০২০ সালেও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এই অ্যাক্ট আবার চালু করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও রয়েছে অপরিবর্তিত উপনিবেশিক আইন। ১৮৯৭-এর আইনকে সেসময়ের কংগ্রেসী নেতৃত্ব ড্রাকোনিয়ান তথা দানবীয় বলেছিলেন।
ইকোনমিক টাইমস পত্রিকার (২২.০৩.২০২০) শিরোনাম – “How India is fighting Coronavirus with a colonial-era law on epidemics – The law does not bestow the Centre any power beyond issuing advisories and coordinating” বিশেষজ্ঞদের মতে – “The Epidemic Disease Act was enacted in 1897 and needs to be repealed.
এই লেখার বিকল্প শিরোনাম হতে পারত
" মারী-রাজনীতির একাল ও সেকাল "
অনেকদিন বাদে কলোনাইজিং দ্য বডির রেফারেন্স দেখে ভাল লাগল, কিন্তু লেখাটা একটু jerky লেগেছে, ঠিক সুখপাঠ্য হয়নি। কিন্তু বিষয়ের গুরুত্বে সেটুকু অবজ্ঞা করাই যায়।
জানলাম তো অনেক কিছু। কিন্তু এই বাধ্য ও অনুগত নাগরিক, যাঁরা কলেরা, প্লেগ নিয়ে যা স্বাস্থ্যবিধি বলা হয়েছিল তা না মানলে ( বহু লোকেই মানেননি), পরিস্থিতি আরো ভয়নকর হতনা? ৯ লক্ষ, জনসংখ্যার, ৬% মৃত্যু কি মুখের কথা? সেটা ৯০ লক্ষ হতনা, এসব বিধি না মানলে বা ভ্যাক্সিন না এলে, কে বলতে পারে?
এই যদি আজ কেউ ডিসট্যান্সিং এর বিধিনিষেধ বাধ্যের মত না শোনেন ( অনেকেই শুনছেন না, ধর্মস্থান বা বাজারঘাটের যাসব ছবি!), তাহলে কি ভাল হবে আপনার মতে? ব্যক্তি বাধ্য না হলে যেখানে সমষ্টির ক্ষতি, ব্যক্তি সহ, সেই বাধ্যতাকে আপনারা খারাপ বলেন কেন?
এখনো তো ভ্যাক্সিনের পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে, তাকে খারাপ বললেন? বিসিজি, মিস্লস, গুটিবসন্ত, পোলিও, ডিপথেরিয়া, এসবের ভ্যাক্সিন ন্স থাকলে কত কত লোক মরতেন? গুটিবসন্ত তো মূলত টিকাতেই গেল। সেনিয়ে কী বলবেন?৷ হ্যাঁ, ভ্যারিওলেশন পদ্ধতি নষ্ট করে দেওয়া ভাল কথা নয়। কিন্তু এই পদ্ধতি ঠিক কীরকম আর কতটা কার্যকরী ছিল একটু জানালে ভাল হত। ভ্যাক্সিনেশনের সংগে তুল্যমূল্য আলোচনা। কতটা নিরাপদ পদ্ধতি, শুনেছি অনেকে মারা যেতেন?
এটাও একটু বলবেন, এই ভিলওয়াড়া মডেলকে কী চোখে দেখেন আপনারা? এতো নজরদারির হদ্দমুদ্দ। কিন্তু এর ফলে যদি ওই জেলায় প্রচুর লোকের প্রাণ বেঁচে যায় তাহলেও আপত্তি তুলবেন? আর প্রাণ বাঁচছে বলেই লোকে যদি বাধ্য হয়ে শোনে, তাহলে নরমভাবে বাধ্য করা হচ্ছে বলে তাত্ত্বিক আপত্তি থাকবে? আপনারা কি ব্যক্তিকে সমষ্টির উপরে রাখতে চান? সেও যদি রাখেন, এক্ষেত্রে তো ব্যক্তির নিজেরই বিপদ!
সবার কথার একটি অসমাপ্ত উত্তর হচ্ছে যে দেহের ওপরে নজরদারি আমাদের চাওয়া নিরপেক্ষভাবেই ঘটে এবং ঘটবে। বিশেষ করে করোনা অতিমারির পরে অতিরাষ্ট্র হবার পথে যে দেশগুলো যাত্রা শুরু করেছে (আমি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র এবং অতিরাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য করতে চাই) সে দেশগুলোতে এটা আরও প্রকট হয়ে উঠবে।
জনস্বাস্থ্য এর একটা হাতিয়ার হবে, এরকমটা আমার অনুমান। তথ্যের বিষয়ে এ পরিসরে বিতর্ক সম্ভব নয়।
আরেকটা সম্ভাবনাও হয়তো আসছে। কর্পোরেটপুঁজি এবং এর ধারক রাষ্ট্র একটা সময়ে এখনকার সংকট কাটিয়ে উঠবে - বিশ্বে ক্ষমতার বিন্যাস কিছু বদলাতে পারে। সংকট-উত্তর সময়ে টিবি, ডায়ারিয়া ইত্যাদির মতো কোভিড-১৯ ট্রপিক্যাল নেগলেক্টেড ডিজিজেস হয়ে যাবে নাতো?
আমরা ভেবে দেখবো
সোমনাথ বাবুর সাথে যোগ করে বলি, স্প্যানিশ ফ্লু, প্লেগ ছাড়াও সে সময়ের মহামারী, বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, কলেরা, কুষ্ঠ, কালা জ্বর, গুটি বসন্ত ইত্যাদি রোগের বাস্তব চিত্র ও প্রাচীন চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাই।
খুবই চিত্তাকর্ষক লেখা। উড়ুক