দীপা মেহতার '১৯৪৭ আর্থ' যখন দেখি তখন আমার কলেজেও পা রাখা হয় নি। নেহাতই হাই স্কুলের ছাত্র। ক্লাস ইলেভেন বা টুয়েলভে পড়ি হয়ত। ওই বয়সে সিনেমাটা পুরো দেখে তার অভিঘাত কী হতে পারে সেই সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। শুধু গল্প শোনার মত করে সিনেমার দৃশ্যপটগুলো দেখে গেছিলাম। মান্টো বলে যে একজন লেখক আছেন সেটা তখনও জানা হয়ে ওঠেনি। স্কুলে মাধ্যমিকের ইতিহাস বইতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন পড়তে গিয়ে দেশভাগের প্রসঙ্গ কিছুটা ছিল। পার্টিশন সম্পর্কে ধারণা বলতে ওইটুকুই। বাঙাল বাড়ি হওয়ার ফলে পার্টিশন সম্পর্কে পড়ার আগে ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছিলাম আমাদের দেশ ওপারে। ঠিক বুঝতাম না কথাগুলো। আমার দেশ তো ভারত। তাহলে মা বাবা দাদু ঠাকুমার দেশ আবার অন্য দেশ কী করে হয়! ক্রিকেট দেখার সুবাদে পাকিস্তান তখন শত্রু দেশ। এই শত্রু দেশের কনসেপ্টে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিল আল্লামা ইকবাল বা মুহম্মদ ইকবাল। স্কুলে ছোটবেলায় মাথা নেড়ে নেড়ে সারে জাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্থান হমারা গানটা মুখস্ত করেছি, গেয়েছি। জেনেছি যে এটা হিন্দুস্থান বা ভারতের জাতীয় স্তব বা ন্যাশনাল অ্যান্থেম। এটা যিনি লিখেছেন তিনি একজন মহান কবি যার নাম আল্লামা ইকবাল বা মুহম্মদ ইকবাল।
কয়েক বছর পরেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পড়তে গিয়ে শুনলাম পাকিস্তান শব্দটির জনকও নাকি আল্লামা ইকবাল। আকাশ থেকে পড়েছিলাম সেদিন। এটা কী করে হয়! একজন মানুষ যিনি ভারতের ন্যাশনাল অ্যান্থেম লিখেছেন, তিনিই আবার পাকিস্তান শব্দের জন্ম দিয়েছেন? তিনিই আবার পাকিস্তানের জাতীয় কবি। পরে আস্তে আস্তে বুঝেছি দেশভাগ আসলে ভারতবর্ষের বুকে কতবড় ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
'১৯৪৭ আর্থ' এ একটা দৃশ্য ছিল অমৃতসর থেকে লাহোরের দিকে আসা উদ্বাস্তু পরিপূর্ণ একটা ট্রেন লাহোর স্টেশনে এসে যখন দাঁড়িয়েছিল, লাহোরের আত্মীয়স্বজনরা ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ বেরোচ্ছে না দেখে যখন উঁকি মেরে দেখতে যায়, এক ঝলক দেখেই আতঙ্কে বাইরে ছিটকে সরে আসে, কেউ কেউ বা ওখানেই বমি করে দেয়। ট্রেনটা ভর্তি ছিল শুধু ছিন্নভিন্ন লাশে। একজনও কেউ জীবিত ছিল না ট্রেনে। লাহোর থেকে যখন অমৃতসরে ট্রেন যায় এদিকের উদ্বাস্তুদের নিয়ে, তখন সেই ট্রেনটাও পালটা লাশে ভরে ওঠে। অমৃতসর স্টেশনের আত্মীয় স্বজনরাও ঠিক একইভাবে আতঙ্কে সিঁটিয়ে উঠেছিল। সিনেমায় ওই দৃশ্যটা দেখে মনে মনে ভয় পেয়েছিলাম। পরে ভেবেছিলাম সিনেমার প্রয়োজনে অনেক কিছুই তো দেখাতে হয়, তাই এটাও হয়ত বানানো। এরকম যে বাস্তবে হতে পারে কখনো মাথাতেও আসে নি। অনেক অনেক পরে মান্টো পড়ার সময় বুঝেছিলাম এরকম কেন, এর থেকেও অনেক সাঙ্ঘাতিক জিনিস মানুষ করতে পারে। উন্মাদনার চরম সীমায় মানুষ যে কী করতে পারে আর কী করতে পারে না, তা মানুষ নিজেও জানে না। গুরুচণ্ডালী পাবলিকেশনের 'দময়ন্তী'র লেখা 'সিজনস অব বিট্রেয়াল' আবার সেই উন্মাদনার দিনগুলোতে নিয়ে ফেলছিল যেন।
গুরুচণ্ডালীর প্রায় সব বই এর মতই এই বইটাও চটি বই। মোট একশ দশ পাতার পাতলা বই। কিন্তু এই পাতলা বই শেষ করতেও সময় লাগে অনেক। একবারে টানা পড়া যায় না। পাতা থেকে মুখ তুলতেই হয়। একেকটা অধ্যায়ের পর বেশ কিছুক্ষণ একটা বোবা শূন্য দৃষ্টি নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে হয় আশেপাশে।
'সিজনস অব বিট্রেয়াল' আসলে বিট্রেয়ালের গল্প। বিশ্বাসভঙ্গের গল্প। সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিকদের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের আলাপ আলোচনার ফলে ভারতবর্ষের ম্যাপের কয়েকটা জায়গায় আঁচড় পড়ল আর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে গেল। কী অদ্ভুত, তাই না! যে নেতাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিল মানুষ, সেই নেতারাই তাদের জন্মস্থান কেড়ে নিল। সিজনস অব বিট্রেয়াল আসলেই বিশ্বাসভঙ্গের গল্প। যে দুই ধর্মের মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী পাশাপাশি বাস করত, তারাই মেতে উঠল একে অপরকে হত্যা করার খেলায়। মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসভঙ্গের গল্প। কানপুর থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে আসা 'অসম্ভব রোগা মাথায় লালচে বাদামি এলোমেলো জটপড়া চুলের' জামুন যখন খেতে বসে গল্প করে দিল্লির স্টেশনে আসা সেই ট্রেনের যেখানে কামরা ভর্তি হয়েছিল থাক থাক রক্তে আর ছিন্নভিন্ন হয়ে থাকা বডি পার্টসে আর পেট গুলিয়ে আসা দুর্গন্ধে, যা নাকি বোতলের পর বোতল ফিনাইল ঢেলেও যায় না, তখন এই গল্প বলতে বলতেই জামুনের মুখ চোখ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে হড়হড় করে বমি করার মাধ্যমে উগড়ে দেয় সমস্ত ভাত, তখন এই বিট্রেয়াল প্রত্যেকটি পাঠককে আঘাত করে।
কানপুর কোথায় তা দুবেলা দুমুঠো অন্নের যোগান করতে হাঁসফাঁসিয়ে ওঠা টালিগঞ্জের বাঙালি পরিবারটি জানে না। কিন্তু জানে ওদের বাড়ির মুখে টায়ারের দোকান দেওয়া পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে আসা শিখ বৃদ্ধ অমরিন্দার সিং। জুমানকে দেখেই সেই শিখ বৃদ্ধ চেপে ধরে। 'প্যান্ট খোল ব্যাটা', পরখ করে দেখতে চায় সে হিন্দু না মুসলিম। জামুন ঘন ঘন মাথা নাড়ে, অস্বীকার করে প্যান্ট খুলতে। খালি বিড়বিড় করে বলে চলে 'উনহোনে হামে মারনে আয়া, হাম ভাগে- ওরা আমার কাকাকে মারল, আমার মামাকে জিন্দা জ্বালিয়ে দিল, আমি আখ জড়িয়ে পড়ে ছিলাম, ওরা ভাবল আমি মরে গেছি, ওরা বহেনা জমনাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল - বাদমে হামনে ভাগা - ভাগতা হুয়া এক বুডঢা দাদাজি'নে মুঝে কান্ধোমে ব্যায়ঠাকে রফুজি ক্যাম্প রাখকে আয়া' বলে আর কাঁদে আর কাঁদতে কাঁদতে প্যান্টটাকে শক্ত করে ধরে রাখে কোমরের কাছে। অমরিন্দরের চোখ আরো তীক্ষ্ণ হয়। প্যান্ট উনি খোলাবেনই। অমরিন্দার সিং পড়ে যান আসলে বিশ্বাসভঙ্গের খেলায়। অমরিন্দার সিং এর নিজের গল্পও তো আরেক বিশ্বাসভঙ্গের গল্প।
রাওয়ালপিন্ডির কাছে এক গ্রামে ছিল অমরিন্দার সিং এর বাড়ি। দাঙ্গা যখন লাগল তখন ওরা কিছু লাঠি সড়কি আর কৃপান জড়ো করল। কয়েকটা বন্দুকও যোগাড় হয়েছিল এদিক সেদিক থেকে। এরপর আস্তে আস্তে ঝামেলা এগিয়ে আসতে লাগল ওদের গ্রামের দিকে। প্রথম দিন যে রাতে হামলা হল সেই রাতটা ঠেকানো গেছিল। পরের দিন রাতটাও কোনোমতে ঠেকানো গেছিল, কিন্তু সবাই বুঝে গেছিল যে তৃতীয়দিনের রাতটা আর কিছুতেই ঠেকানো যাবে না। তখনই নেওয়া হয়েছিল ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত। বাড়ির সমস্ত মেয়ে ও শিশুকে বলি দেওয়া হবে ভগবানের কাছে আর সমর্থ পুরুষরা পালাবে। মোসলাদের হাতে কাউকে পড়তে দেওয়া যাবে না। মেয়েরা কেন পালাল না সেই প্রশ্নে অমরিন্দার সিং বলে ওঠে রাস্তায় কত বিপদ আছে জানা আছে? তারপর তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে রাস্তায় ফেলে রেখে যাওয়া যাবে? তাতেও তো সেই মোসলাদের হাতেই পড়তে হবে। নিজের হাতে অমরিন্দার সিং শান দেওয়া কৃপানে একের পর এক মেয়ে আর শিশুদের মাথা কেটে বলে দিল বাড়ির ছাদে। তারপর পুরুষরা পালিয়ে কেউ চলে এলো কলকাতায় কেউ বা চলে গেল দিল্লিতে। আরেকরকমভাবেও শিখ মহিলা আর শিশুদের বলি দেওয়া হয়েছিল। মহিলারা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে কূয়োর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ত। একটা সময় কূয়ো পুরো ভর্তি হয়ে যেত লাশে। তখন পরের দিকে যারা লাফাত তারা আর মরত না।
গোবিন্দ নিহালানি ভীষ্ম সাহানির 'তমস'কে চিত্রায়িত করেছিলেন। ঠিক এরকম দৃশ্য দেখা গেছিল তাতে। সন্তান বুকে জড়িয়ে ধরে একের পর এক মা ঝাঁপ দিচ্ছে কূয়োতে। সিজনস অব বিট্রেয়াল আসলে বিশ্বাসভঙ্গের গল্প।
মির্জাপুর স্ট্রিটের মেসে কাজ করতে আসা চল্লিশোর্ধ মহিলার কথাই ধরা যাক না। সব সময় বুকের কাছে একটা পুটুলি জড়ো করা রাখা থাকত। একদিন যখন চুরির অপবাদে সেই পুটলি সবার সামনে খুলে দেখাতে হল, দেখা গেল পুটলিটাতে খুব যত্ন করে একটা সুপুরি কাটার জাতি আর একটা বড় চাবির গোছা রয়েছে। চাবিটা তার পূর্ব পাকিস্তানে ফেলে আসা বাড়ির। যত্ন করে রেখে দিয়েছে আবার যদি কখনো ফেরত যেতে পারে তাহলে চাবি দিয়ে আবার ঘর খুলবে বলে। আশা আর বিশ্বাসকে সঙ্গী করে দিন কাটাচ্ছে মহিলা। আবার সে তার বাড়ি ফিরে পাবে, আবার সেখানে নিজের ঘরে নিজের বিছানায় গিয়ে বসতে পারবে। অথচ সেই মহিলা হয়ত জানেও না যে সে বিশ্বাসঘাতকার শিকার হয়েছে।
বেলগাছিয়া থেকে রাতের বেলায় উদ্ধার হওয়া তরুণীকে দমদম জেলের হাসপাতালে রাখার পর সকালবেলা যখন জেলের ডাক্তার তাকে দেখতে যান, গিয়ে দেখেন হাতের হাতকড়া মাথায় ঠুকে ঠুকে মাথা ফাটিয়ে ফেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে। ডাক্তারের সন্দেহ হওয়াতে নার্সকে ডেকে আরো কোথাও আঘাত রয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখতে যান। নার্স বুকের কাপড়টা সরাতেই স্তন উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। অবাক চোখে ডাক্তার দেখেন স্তনটাকে যেন কোনো রবারের বল ভেবে কোন জানোয়ার অনবরত কামড়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় ক্ষত এত গভীর যে সেখান থেকে পুঁজ বেরোচ্ছে। হয়ত বর্ডার ক্রস করার সময় বা ক্রস করার আগেই শিকার হয়েছে মেয়েটি। ডাক্তারবাবুর সাথে সাথে নিজের ভাই আর তার পরিবার আর ফুটফুটে ভাইঝিটার কথা মনে পড়ে যায়। ওরা যে এখনো কিশোরগঞ্জে রয়েছে। বর্ডার ক্রস করে নি। তুলোয় টিঞ্চার আয়োডিন নিয়ে সেই ক্ষতে প্রলেপ লাগাতেই মেয়েটির মুখ থেকে ব্যাথায় আর্তনাদ বেরিয়ে আসে,'হে আল্লা'। হিসেব মেলাতে পারেন না ডাক্তার। বিশ্বাসভঙ্গ হয় হিন্দু ডাক্তারের। মান্টোর 'খোল দো' গল্পের কথা মনে পড়ে যায় যেন।
এরকম টুকরো টুকরো অনেক গল্প জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয়েছে 'সিজনস অব বিট্রেয়াল' নামক উপন্যাসটি। প্রতিটি ঘটনাই লেখকের নিজের কানে শোনা তাঁর মায়ের কাছে অথবা আত্মীয় পরিজনদের কাছে। তার সাথে যোগ করেছেন পার্টিশন সংক্রান্ত কিছু কিছু সত্যানুসন্ধান মূলক বই এর রেফারেন্স। প্রতিটা অধ্যায়ের শেষে পারিবারিক স্মৃতির অ্যালবাম থেকে তুলে আনা ছবি আর গবেষণামূলক গ্রন্থের রেফারেন্স ফুটনোট হিসেবে দিয়েছেন লেখক। দেশভাগকে কেন্দ্র করে অনেক গল্প উপন্যাস হয়ত রয়েছে। বাংলা হিন্দি আর উর্দু সাহিত্যে দেশভাগের ওপর ভুরিভুরি লেখা পাওয়া যাবে, কিন্তু নিজের কানে শোনা সত্যি ঘটনা আর তার সাথে ইতিহাসকে মিলিয়ে এরকম লেখা এর আগে আর হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। বইটা শেষ করতে আমার বেশ কটা দিন লেগেছে। আগেই বলেছি টানা পড়তে পারি নি। অভিঘাতগুলো এত তীব্র যা একেকটা অধ্যায় শেষ করার পর অনেকক্ষণ অব্দি মাথায় তার রেশ চলতে থাকে। আপনার যদি কঠোর কঠিন বাস্তব সহ্য করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে এই বই পড়বেন না। আপনি যদি লেখার মধ্যে শুধু পজেটিভিটি খুঁজতে চান, তাহলে এ লেখা আপনার জন্য নয়। কিন্তু আপনি যদি বাস্তবকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে আনতে চান, জানতে চান আসলে সেই সময়টা সত্যিই কীরকম ছিল, তাহলে আপনি অবশ্যই এই বই পড়বেন।
একদম শেষে পড়তে পড়তে বুঝতে পারবেন এই আখ্যান নিছক দেশভাগের নৃশংসতার আখ্যান নয়। এই আখ্যান আসলে উদ্বাস্তু পরিবারের যন্ত্রণার আখ্যানও বটে। একদম শেষ দৃশ্যে যখন যুঁই বলে চরিত্রটি আশেপাশের বাড়ির নিন্দেমন্দ শুনেও গটগট করে হেঁটে যায় স্কুলে পড়াশোনা করতে, আসেপাশে থেকে ভেসে আসা কথা, বাঙালবাড়ির মেয়েগুলো যেন কেমনধারা। কোনো রাখঢাক নেই। সবার সামনে গটগটিয়ে চলেছে ইস্কুলে, এবং সেই কটুক্তিগুলোকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে যুঁই ভাবছে তাকে অনেক বড় হতে হবে, ছোট ভাইটাকে মানুষ করার দায়িত্ব নিতে হবে, বাবার বয়স হয়েছে, সংসারের দায়িত্ব কাধে নিতে হবে, তখন যুঁই এর মধ্যে 'মেঘে ঢাকা তারা'র নীতাকে খুঁজে পাওয়া যায়। ঋত্বিকের চরিত্রগুলোকে যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠতে দেখি প্রতিটা পাতায় পাতায়। পদে পদে অপমানের জ্বালা সহ্য করেও দাঁতে দাঁত চেপে এদেশে উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর লড়াই করে যাওয়ার গল্পও যেন বিট্রেয়ালের গল্প। ওপারের ব্যাঙ্কের চাকরির শংসাপত্র দেখে এপারের ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের 'ওদেশে আপনারা শুধুই জমিদার ছিলেন না, ব্যাঙ্কেও চাকরি করতেন নাকি? তা এত সব কিছুই যখন ছিল, তখন এদেশে এলেনই বা কেন?’ প্রশ্ন করার মধ্যে যে তীব্র কটাক্ষ ছিল তার জবাবে ভিটেমাটি হারা হয়ে আসা লোকটা কোনো উত্তর দিতে পারে নি। শুধু ফ্যালফ্যাল করে বিট্রেয়ালের কথা ভেবেছিল। নিজের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়ে ওপারে গেলে হয়ত আরেকটু ভালোভাবে থাকা যাবে ভেবে যখন বর্ডার ক্রস করেছিল, তখন ভাবেও নি যে বর্ডার ক্রস করলেও বিশ্বাসঘাতকতার মুখে পড়তে হবে। 'সিজনস অব বিট্রেয়াল' পদে পদে এরকম বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলে যায়। আপনি যদি বিশ্বাসভঙ্গের সত্য কাহিনী শুনতে চান, তাহলে অবশ্যই পড়ুন 'সিজনস অব বিট্রেয়াল'। এই বই বিশ্বাসঘাতকতার এক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।