ফাদার অফ পাবলিক হেলথ - ৬ : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১৫৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
নর্মান নীরবতা ভঙ্গ করলেন। ‘ফ্রান্সেস ছিল নম্র, লাজুক, চাপা স্বভাবের। আমি ছিলাম কটুভাষী, অস্থির-উদ্দাম। যা করতাম তা প্রবলভাবে করতাম। ডেট্রয়েটে ডাঃ মার্টিনের সাথে যখন কাজ করতাম, জলস্রোতের মতো পয়সা আসছিল। কিন্তু আমি হতাশায় ভুগছিলাম। রোগীরা সবাই বিত্তবান। সামান্য অসুখেই ডাক্তারের কাছে আসে, হিসাব না করেই ফি দেয়। কিছুদিনের মধ্যেই ধিক্কার জন্মালো নিজের প্রতি। আর যে পথে টাকা রোজগার করছি সেই পথের প্রতি। আমি আবার ফিরে গেলাম ডেট্রয়েটের বস্তি অঞ্চলে। দিন রাত এক করে তাঁদের মধ্যে কাজ শুরু করলাম। সেই সময় শত অভাবেও ফ্রান্সেস আমার স্বাধীনতা হরণ করেনি। একবারও প্রশ্ন তোলেনি কেন আমি রাত্রে ঘরে না ফিরে কোনও বেশ্যা-পল্লীতে কারও সন্তান প্রসব করাচ্ছি। আজ কি করে তাঁর স্বাধীনতা হরণ করব আমি?’
ফাদার অফ পাবলিক হেলথ - ৩ : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৮ জুন ২০১৯ | ১৫৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
না, কোনও বিখ্যাত চিকিৎসক অথবা বৈজ্ঞানিক নন, এই উপাধি দেওয়া হয়েছে একটি রোগকে। সেই রোগের নাম কলেরা। এই কলেরাই আমাদের জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব ঘাড় ধরে শিখিয়েছে। এই কলেরার ভয়েই রাষ্ট্র তৈরী করেছে উন্নত পয়ঃপ্রণালী, জীবাণুমুক্ত জল সরবরাহ ব্যবস্থা। ভেবেছিলাম কলেরা রোগ নিয়ে লিখব। বিশেষ করে বেশ কয়েকজন বাঙালী চিকিৎসকের কলেরা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এবং ও আর এস এর প্রচলনের ক্ষেত্রে গৌরবজনক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দুই পর্ব লেখার পর মনে হল কুখ্যাত ব্ল্যাক ডেথ’কে এড়িয়ে যাব কি করে।
১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ সালের মধ্যে প্লেগের এই মহামারীতে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় মারা গেছিলেন প্রায় কুড়ি কোটি মানুষ, যা ছিল এই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের তিন ভাগের এক ভাগ। এই অঞ্চলের জনসংখ্যা এতটাই কমে গেছিল যে পরবর্তী চারশ বছর লেগেছিল আগের জনসংখ্যা ফিরে পেতে।
ফাদার অফ পাবলিক হেলথ-৫ : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১১ আগস্ট ২০১৯ | ১৭৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
নলিন বলল, ‘শুনেছিলাম মুসলিমরা পৌত্তলিক নয়। এবং পৌত্তলিকতাকে ঘৃণা করে। এখানে এসে অন্য জিনিস দেখলাম। দেখলাম রীতিমতো মুর্তি গড়ে ওলাবিবির উপাসনা হচ্ছে। ওলাবিবি একা নন, সঙ্গে আছে আরও ছয় বিবি ঝোলাবিবি, আজগৈবিবি, চাঁদবিবি, বাহড়বিবি, ঝেটুনেবিবি ও আসানবিবি। তোমারা কি বিবিগান শুনেছো? বিবিগান আখ্যান অনুসারে ওলাবিবি এক কুমারী মুসলমান রাজকন্যার সন্তান। তিনি অলৌকিক উপায়ে অদৃশ্য হয়ে যান এবং পরে দেবী রূপে আবির্ভূত হন। তাঁর আবির্ভাবের কারণ ছিল দাদামশাইয়ের ও রাজ্যের সব মানুষের আরোগ্য দান। তাঁর মাথায় থাকে মস্তকাবরণী, গলায় গলবস্ত্র ও গয়না। পায়ে তিনি নাগরার জুতো পরেন। এক হাতে জাদুদণ্ড ধরে থাকেন। এই দণ্ডের মাধ্যমে তাঁর ভক্তদের রোগ দূর করেন। এই কলেরা আর ওআরএস এর কাজটাজ মিটলে আমি ঠিক করেছি শেষ জীবনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাংলার লোকসংস্কৃতির চর্চা করব।’
ভালোবাসার অনেক রঙ : ডাঃ ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১৯৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আমি বললাম, “এই বাচ্চা গ্রামীণ হাসপাতালে রেখে কী করবে। কান্দিতে রেফার করে দাও।”
“বাড়ির লোককে কান্দি নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু ওরা নিয়ে যাবে না।
বাচ্চাটির বাবার বক্তব্য এই সন্তান জোর করে বাঁচিয়ে কোনও লাভ নেই। ও কোনও দিনই সুস্থ জীবন পাবে না। তার থেকে এ বাচ্চা মরে যাওয়াই ভাল। ওরা তো বাচ্চা হাসপাতালে রেখেই মাকে নিয়ে চলে যাবে বলছিল। কোনও রকমে আটকেছি।”
আমি বললাম, “তাহলে আর কি। এখানেই থাকুক বাচ্চা। বাড়ির লোককে ভালো করে বুঝিয়ে সই করিয়ে রাখো। তারপর যা হওয়ার হবে।”
কিন্তু যা হ’ল তাকে খুব ভাল বলা যায় না । পরের দিন আমার ২৪ ঘণ্টা অনকল ডিউটি। সকাল সাড়ে সাতটার সময় হাসপাতালে ঢুকতে গিয়ে দেখি প্রায় সমস্ত গ্রামের লোক জড় হয়েছে হাসপাতালের সামনে। আশেপাশের গ্রাম থেকেও ভ্যানে করে, হেঁটে অনেক লোক এসেছে। সবাই বাচ্চাটাকে একবার চোখের দেখা দেখতে চায়। যারা ইতিমধ্যে দেখার সুযোগ পেয়েছে তারা অন্যদের কাছে গল্প করছে। এবং তাদের গল্পের গরু মাঝে মাঝেই গাছে উঠে যাচ্ছে। একজন বলছে, ‘দেখে এলুম রাক্ষস বাচ্চাটা জন্মানোর পর পরেই হামা দিতে শুরু করেছে।’
আরেকজন বলছে, ‘রাক্ষসটা ঘন্টায় ঘণ্টায় লম্বায় বাড়ছে। জন্মের পরে যা দৈর্ঘ্য ছিল ইতিমধ্যে তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
যারা এতক্ষণেও বাচ্চাটার দর্শন পায়নি তারা অধৈর্য হয়ে উঠেছে। সবাই দল বেঁধে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢোকার চেষ্টা করছে।
আমি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলাম। ওয়ার্ড ফাঁকা করতে চাইলাম। লোকজনকে বোঝাতে চাইলাম এটা মোটেই রাক্ষস নয়।
করোনার দিনগুলি - প্রথম কিস্তি : ডা. ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ মার্চ ২০২০ | ৫৪৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
স্থানীয় শপিং মলের সামনে ফুচকা বিক্রি করে এক যুবক। তিনি বলছিলেন, 'ডাক্তার বাবু, মল বন্ধ থাকায় গত সাতদিন বেচা- কেনা একদম তলানিতে। শেষ তিনদিন ধরে বিচ্ছিরি কাশি হওয়ার পর দোকানও খুলতে পারছি না। মা আর বোনকে নিয়ে কি করে সংসার চালাবো জানিনা'।
আরেকজন বললেন, 'ডাক্তার বাবু, টোটো চালাই। দিন আনি দিন খাই। প্যাসেঞ্জার প্রায় নেই। এদিকে লোকজন চাল-ডাল কিনে বাড়িতে মজুত করতে শুরু করেছে। আজ চালের দাম দু টাকা বেড়ে গেছে। একবেলা ভাত খাচ্ছি। জানি না কতদিন খেতে পারব'।
কথায় আছে 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'। অনেকেই লক ডাউনের ভয়ে খাদ্য দ্রব্য বাড়িতে মজুত করতে শুরু করেছেন। ফেসবুকেও দেখলাম অনেকেই পোস্ট করেছেন বেশি পরিমাণে জিনিসপত্র মজুত করে রাখার জন্য। কিন্তু তাই করতে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এক শ্রেণীর মানুষের নাগালের বাইরে না চলে যায়।
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় কিস্তি : ডা. ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০২০ | ৫০৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
ওদিকে রাত্রি নটার চেম্বার খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছি। যদিও কাকুকে বলে রেখেছি জ্বর আর এমারজেন্সি ছাড়া কোনো ক্রনিক রোগী না রাখতে। কাকু ফোনে তাড়া দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি আয়। না হলে ভিড় জমে যাবে। পেটের মধ্যে ততক্ষণে মোচড় শুরু হয়েছে। চার চামচ ল্যাক্সিট প্লাসের আফটার এফেক্ট। যা থাক কপালে, জয় মা কালী বলে বেরিয়ে পড়লাম।
কপালে ভালো কিছু ছিল না। খুপরিতে প্রথম রোগী দেখার সময়ই বুঝতে পারলাম জীবনের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি। যে করেই হোক এই পরীক্ষায় সফল হতেই হবে। নইলে আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে প্রথম আসা নিম্নচাপ সামলে নিলাম। রোগীর বাড়ির লোক জ্বরের ধারা বিবরণী দিচ্ছিলো। আমার মুখের অবস্থা দেখে নির্বাক হয়ে গেল। ওষুধ পত্র লিখে তার হাতে প্রেস্ক্রিপশান ধরিয়ে বললাম, আগে ওষুধ খাও। না কমলে বাকি গল্প শুনব। ততক্ষণে আবার নিম্নচাপ আসছে।
করোনার দিনগুলি - তৃতীয় কিস্তি : ডা. ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ এপ্রিল ২০২০ | ৪৩৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মহামারীর মধ্যেও অন্যান্য এমারজেন্সি কিন্তু থেমে নেই। এনারাই পড়েছেন সবচেয়ে সমস্যায়। আজকে একজন বয়স্ক মহিলা এসেছিলেন তার স্বামীর কোলোনোস্কোপি রিপোর্ট নিয়ে। রিপোর্টে ক্যন্সারাস গ্রোথ ধরা পড়েছে। বায়োপ্সি রিপোর্ট এখনো পেন্ডিং। রেক্টাম থেকে ব্লিডিং হয়েই যাচ্ছে। যাকে দেখাচ্ছিলেন তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। নার্সিংহোমে ফোন করেছিলেন, তারা লকডাউনের পরে যোগাযোগ করতে বলেছেন। ওই মহিলা আব্দালপুর থেকে চার কিলোমিটার হেঁটে আমার বাড়িতে এসেছেন। কোনো ভ্যান, রিকশা পাননি। ওনার একমাত্র ছেলে পুনেতে আটকে আছেন, আসতে পারছেন না। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, 'ডাক্তারবাবু, আপনি শুধু ওষুধ দিয়ে এই লকডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত ব্লিডিংটা বন্ধ করে দিন।'
করোনার দিনগুলি চতুর্থ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ এপ্রিল ২০২০ | ৪৭৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মেডিসিনে মাস্টার্স ডিগ্রী করার সময় স্যার বারবার বলতেন, 'ঐন্দ্রিল, মানুষের মুখ ভালো করে লক্ষ কর। মানুষের মুখেই অনেক অসুখের ছবি ফুটে ওঠে। শারীরিক যন্ত্রণা, অসহায়তা , মৃত্যু ভয় এইসবের ছবি পড়তে পারলে তবেই চিকিৎসক হয়ে উঠতে পারবি।'
কিন্তু আজ অনেক চেষ্টা করেও ছবির মানুষগুলির মুখের ভাষা পড়তে পারছি না। মনে হচ্ছে, আতংক না, মৃত্যুভয়ও না, যেনো একরাশ ঘৃণা ফুটে উঠেছে শ্রমিকদের মুখে। আমাদের মতো স্বচ্ছল গা-বাঁচানো লোকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা। ঘৃণা সেই রাস্ট্রের প্রতি, যে রাস্ট্র রাতারাতি স্পেশাল প্লেনের ব্যবস্থা করে বিদেশ থেকে প্রভাবশালী নাগরিকদের বাড়ি ফেরাতে পারে, কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করার আগে দেশের মধ্যে থাকা নাগরিকদের বাড়ি ফেরার কোনো ব্যবস্থা করে না।
করোনার দিনগুলি - পঞ্চম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ৩৫৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এর মধ্যেই এক অবাঙালি পরিবার এলেন। এরা মাঝে মাঝেই আসেন। স্বামী গেঞ্জি কারখানায় কাজ করেন। স্ত্রীর গ্রেড থ্রি ম্যালনিউট্রিশানে ভোগা চেহারা। আঠাশ বছর বয়েসে ওজনও আঠাশ কেজি। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভোগায় অমন চেহারা হয়েছে।
...
তারপর তিনি তাঁদের দুঃখের সাত কাহন শোনালেন। গেঞ্জি কারখানার মালিক গত মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছেন। তাতে অবশ্য পুরুষটি বিশেষ দোষ দেখেন না। মালিকেরও আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়। তার উপর চৈত্র সেলের সময় ব্যবসা ভালো হবে ভেবে ধার দেনা করে অনেক কাঁচামাল তুলেছিলেন।
মহিলা ভালো বাংলা জানেন না। তিনি এক জগাখিচুড়ি ভাষায় জানালেন গত দুই সপ্তাহ ইনসুলিন বন্ধ। এখন শরীর অত্যন্ত দুর্বল। হাঁটতে গেলে মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছেন।
গ্লুকোমিটারের গোটা দুই স্ট্রিপ অবশিষ্ট ছিল। তাই দিয়ে সুগার মাপলাম। পাঁচশো বত্রিশ। বললাম, 'ইনসুলিন না নিলে তুমি শিওর মারা পড়বে।'
...
পুরুষটি বললেন, 'ডাক্তারসাব, পনেরো তারিখে লকডাউন উঠলেই বাড়ি ফিরব। হাতে টাকা পয়সা নেই। খাওয়া জুটছে না। বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে বের করে দেবে বলেছে। তার আগে যমুনাকে খাড়া করে দিন।'
একজন সহৃদয় মানুষের সাহায্যে এক ভায়াল ইনসুলিনের ব্যবস্থা হলো। কিন্তু মহিলা যে ডোজে ইনসুলিন নেন, তাতে খুব বেশি দিন চলবে না।
তাতেই তাঁরা খুব খুশি। বারবার ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, যদি আচ্ছে দিন সত্যিই আসে, তাহলে আবার দেখা হবে। তখনও আমরা কেউই জানিনা লকডাউন ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
যেতে যেতে মহিলাটি আবার ফিরে এলেন। আমায় অবাক করে ছেঁড়া চটের ব্যাগ থেকে একটা নতুন হেলথ ড্রিংকস এর কৌটো বার করলেন। যেটার বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয় এটা খেলে বাচ্চার তিনগুণ বেশি বুদ্ধি ও শক্তি হবে।
মহিলা তাঁর বিচিত্র ভাষায় জিজ্ঞাসা করলেন, 'যদি এটা রোজ দু-চামচ করে মেয়েকে খাওয়াই, তাহলে মেয়ের এই মহামারীতে কিছু হবে নাতো।'
আমি গালাগালি দিতে গিয়ে থমকে গেলাম। কাকে গালি দেব? সর্বস্ব দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখতে চাওয়া ওই অশিক্ষিত মা-কে?
সাগর দত্ত হাসপাতাল - একটি অপরিবর্তনের ছবি : ডাঃ ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ মে ২০২০ | ৩১৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
এই মধ্যমগ্রামও যেন আগের শহর নয়। আজ বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা পুরো শুনশান। চৌমাথা থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে একটাও গাড়ি চোখে পড়ল না। ওভারব্রিজের মাঝামাঝি প্রতিদিনই দাঁড়াই। প্লাটফর্মের প্রত্যেকটা সিগন্যাল লাল হয়ে আছে। এই সময় যে হাজার হাজার লোক স্টেশনে ভিড় করে থাকত, আপ ট্রেন একগাদা ক্লান্ত লোককে কলকাতা থেকে বয়ে এনে প্লাটফর্মে উগড়ে দিত, তারা কোথায় গেল? তারা আর আদৌ কোনও দিন প্লাটফর্মে ভিড় করবে তো?সবকিছু বদলে গেছে, ভেবেছিলাম হাসপাতালও বদলে গেছে। অনেকদিন হাসপাতাল ভাঙচুরের খবর নেই, ডাক্তারের মাথা ফাটছে না। বিষ্ঠা মাখতে হচ্ছে না। স্বাস্থ্য কর্মীদের কয়েক জায়গায় পাড়া ছাড়া করা হয়েছে, মাঝ রাতে সিস্টারকে ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অসংখ্য মানুষ সেই সব ঘটনার সমালোচনা করে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
করোনার দিনগুলি - নবম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ জুন ২০২০ | ৪২৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সেই গৌড় কালকে চেম্বার শেষের পর বলে ফেলল, ‘ডাক্তারবাবু, চারিদিকের ঘটনা দেখতে দেখতে কদিন ধরে ভগবানের উপর আমার ভরসা হচ্ছে না। বাচ্চা কোলে নিয়ে শ্রমিকেরা রৌদ্রের মধ্যে হাঁটছে, সেটাকি ভগবানের চোখে পড়েনা? ভগবান থাকলে এতগুলো গরীব মানুষের ঘর আম্ফানে ভেঙে যায়? অথচ দেখেন, যে নেতাগুলো এই অকালেও গরীবের পেটে লাথি মারছে তাদের কিছুই হয় না। দিব্যি আছে।’
করোনার দিনগুলি - একাদ্শ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ জুলাই ২০২০ | ৩১৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আমার এক স্কুলের বন্ধু, তার স্ত্রী, বাবা ও মা জ্বর নিয়ে দেখাতে এসেছিলেন। তাদের অন্তত একজনকে কোভিড – ১৯ পরীক্ষা করাতে বলেছিলাম। চারজনই করিয়েছে এবং চারজনই পজিটিভ। ওরা স্বামী- স্ত্রী ভালো আছে। কিন্তু বাবা মায়ের জ্বর, কাশি কমেছে না। লোকাল কাউন্সিলরকে জানিয়েছে। ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে। ফোনে স্বাস্থ্যদপ্তরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে।
সবচেয়ে মুশকিলে পড়েছে ওদের চার বছরের মেয়েকে নিয়ে। সে সম্পূর্ণ সুস্থ। ঘরে চারজন করোনা রোগীর সাথে থাকছে। তাকে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ারও উপায় নেই।
করোনার দিনগুলি - ত্রয়োদশ কিস্তি : ডাঃ ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ৩১ জুলাই ২০২০ | ৪২৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
অনেক রোগী খুপরিতে ঢুকে প্রথমেই স্যানিটাইজারের বোতল থেকে দু-চার ফোঁটা তরল বসার চেয়ার, আমার টেবিলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আজ এক ভদ্রমহিলা গঙ্গাজল এর মত আমার গায়ে কয়েক ফোঁটা স্যানিটাইজার ছিটিয়ে দিলেন। মানে চেয়ার-টেবিলের সাথে তিনি ডাক্তারকেও স্যানিটাইজ করে নিলেন। ওদিকে রোগীর সংখ্যা রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অধিকাংশই জ্বরের রোগী। জ্বর আসলেই এখন অনেকে গন্ধ শুঁকছেন। একজন বললেন, 'ডাক্তারবাবু, খাবার-দাবারের গন্ধ পাচ্ছি না। কিন্তু ডেটলের গন্ধ, ডেনড্রাইটের গন্ধ এগুলো দিব্যি পাচ্ছি।'
একজন রোগী দুদিন আগেই দেখিয়ে গেছেন। জ্বর কমছে না। আবার এসেছেন। তার পুরোনো প্রেসক্রিপশন পুরো সাদা। আমি অবাক হয়ে বললাম, 'এ কি? আমি কোন ওষুধপত্র লিখিনি নাকি?'
উনি বিব্রত মুখে জানালেন, 'হ্যাঁ লিখেছিলেন। কিন্তু বাড়ি গিয়ে প্রেসক্রিপশন স্যানিটাইজ করতেই সব লেখা উবে গেছে।'
করোনার দিনগুলি - পঞ্চদশ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১৫ আগস্ট ২০২০ | ২৭৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সাধারণত রোগ সেরে গেলে কেউ ডাক্তারের কাছে ফেরত আসেন না। যারা আসেন, হয় তাদের জ্বর কমেনি অথবা পেটে ব্যথা আরও বেড়েছে। প্রথম দিকে হতাশ হয়ে পড়তাম। ভাবতাম, কারোরই তো অসুখ কমাতে পারছি না। আস্তে আস্তে বুঝলাম, দশ জনের মধ্যে দু- তিনজন ফেরত আসছেন। বাকিরা সুস্থ আছেন বলেই আসছেন না।
দিনকে দিন অভিজ্ঞতা বাড়ছে। এখন আর সহজে আনন্দ, মন খারাপ, হতাশা এইসব হয় না।
কতো রকমের মানুষ যে হয়! সাধারণ মানুষ, ‘ডাক্তার বাবু, আমি ঠিক হয়ে যাবো তো?’
করোনার দিনগুলি - সপ্তদশ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ৩১৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আমি ভিজিট রেখে বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছিলাম, ছেলেটির বাবা বলল, ডাক্তারবাবু, দয়া করে টাকাটা রেখে দিন। সবার তো দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমার ছোট্ট একটা মুদির দোকান আছে। লকডাউনে লোকজনের অবস্থা নিজের চোখে দেখেছি। তেমন কয়েকজনকে যদি পয়সা না নিয়ে দেখে দেন। ক্ষমতা থাকলে আরও দিতাম।
আমি কিছুতেই নেব না। আর ছেলেটির বাবা দুহাত জোর করে দাঁড়িয়ে আছে। বলছে, আমি গরীব ডাক্তারবাবু, কিন্তু আমারও তো কিছু করতে ইচ্ছে করে।
গরীব? কে গরীব? যে তার সীমিত সাধ্য নিয়েও এই অকালে অন্যের পাশে দাঁড়াতে চাইছে? নাকি গরীব তারা, যারা এই মহামারীর সময়েও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াচ্ছে?
করোনার দিনগুলি - ঊনবিংশ কিস্তি : ডাঃ ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩০২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কোভিড ১৯ পরীক্ষা করানো এখন অনেক সহজ হয়েছে। কয়েকদিন আগেও আমরা যারা বেসরকারি চিকিৎসক, চাইলেই করোনা পরীক্ষা করাতে পারতাম না। পরীক্ষা হতো খুব অল্প জায়গায়। আর খরচও লাগতো প্রায় আড়াই হাজার টাকা। লকডাউনের মধ্যে অধিকাংশ মানুষেরই সঞ্চয় তলানিতে। তাই আড়াই হাজার টাকার পরীক্ষা লেখার আগে অনেক ভাবনা চিন্তা করতে হতো।
চারদিকে কি বিপুল অপচয়। রাস্তাঘাট, বাড়ি- ঘর স্যানিটাইজেশনের নামে জল, অর্থ ও লোকবলের অপচয় হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আকস্মিক লকডাউন করে করোনাকে কতদূর ঠেকানো যাবে, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বরঞ্চ স্বাভাবিক জীবনে যত দ্রুত সম্ভব ফেরার চেষ্টা করা উচিত। মানুষদের কিভাবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, সেটা প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে মাস্ক।
একটা থ্রি লেয়ার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা গেলে মহামারী ছড়ানোর গতিকে আমরা অনেক শ্লথ করে দিতে পারব। কিন্তু সেটুকু করার বদলে বাদবাকি যাবতীয় কিছু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। লোকজন করোনার ভয়ে স্বাস্থ্যকর্মীকে আবাসন ছাড়া করছেন। আর নিজে মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে ভিড়ের মধ্যে চা- সিগারেট খাচ্ছেন।
করোনার দিনগুলি - বিংশতিতম কিস্তি : ডাঃ ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩৬৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এই পরিস্থিতির সাথে আমি আগেও পরিচিত। আমাদের আর একজন গৃহ সহায়িকা অঞ্জুদিকে পাশের পাড়ার এক বাড়িতে বলেছিল, 'তুমি ডাক্তারবাবুর বাড়িতে কাজ করো। ডাক্তারবাবু রোজ জ্বরের রোগী দেখছেন। ওই বাড়িতে কাজ না ছাড়লে আমাদের বাড়ি আর কাজ করতে পারবে না।' অঞ্জুদি আমাকে হেসে বলেছিলেন, 'বললুম, আপনাদের কাজটাই তাহলে ছেড়ে দিই। তবে আপনারা জ্বর হলে কোথায় যাবেন? ডাক্তার কি দেখাবেন না?’
করোনার দিনগুলি - ত্রিবিংশতিতম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১৭ অক্টোবর ২০২০ | ৩৪১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আজ এক ভদ্রলোককে তিনজন যুবক পাজাকোলা করে আনল। সঙ্গে একজন সদ্য যুবতী। ভদ্রলোকের মেয়ে। সে শুধু বলছে, 'ডক্টর, আগে আমার বাবাকে দেখুন। খুব সিরিয়াস অবস্থা।'
জিজ্ঞাসা করলাম, 'হয়েছেটা কি?'
কিছুতেই বলতে চায়না। শুধু বলছে, 'জ্বর এসেছিলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে গেছে।'
অবশেষে কাগজপত্র ঘেঁটে বার করলাম তিনদিন আগের করোনার রিপোর্ট- পজিটিভ।
বললাম, 'একি, একে এভাবে চেম্বারে নিয়ে এসেছেন কেন? আর আপনারা জড়াজড়ি করে যেভাবে আনলেন, তাতে তো আপনাদেরও করোনা হবে।'
যুবক তিনজন হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। 'করোনা?? কিন্তু ওযে বলল..'
বললাম, 'এনাকে বাঁচাতে হলে হাসপাতালে ভর্তি করতেই হবে। এই দেখুন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮২% এ নেমে গেছে। শিগগিরী একে এম্বুলেন্সে তুলুন।'
কিন্তু এম্বুলেন্সে তোলার জন্য কেউই এগিয়ে এলো না। বস্তুত ওই তিন যুবককে আর খুঁজেই পাওয়া গেল না।
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় ঢেউ - প্রথম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৩৭৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ভ্যাকসিন নিয়ে সবার মধ্যে এতো ভয়, অথচ করোনা নিয়ে কারও মন কোনো ভয় আছে বলে মনে হচ্ছে না। সব দলই ভোটের আগে জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ইশতেহারে দারুণ দারুণ কথা লিখেছেন। কিন্তু সেসব দলের মিছিল, জনসভা দেখলেই টের পাওয়া যায়, ওই কথা গুলি কেবল কথার কথা। নিশ্চিতভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন বাংলায় ঢুকে পড়েছে, তখনও তারা জনসভায়, মিছিলে ভিড় বাড়াতে ব্যস্ত। যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্কের ব্যাবহার ইত্যাদির কোনো অস্তিত্ব নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নীতি- আদর্শগত নানা রকম পার্থক্য আছে, কিন্তু এই একটা ব্যাপারে তারা মোটামুটি একই রাস্তায় হাঁটছে।
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় ঢেউ - দ্বিতীয় কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১৭ এপ্রিল ২০২১ | ৩২৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
বোঝো, কাদের নিয়ে সংসার করছি। আমাকে উত্তর দিতে হলো না। তার আগেই শীর্ণ ভদ্রমহিলা ধমকে উঠলেন, 'এই অবস্থায় উপোষ করবি কিরে? উপোষ করলে তোর যা পূণ্য হবে, পেটের বাচ্চাটাকে না খাইয়ে রাখলে তার চেয়ে ঢের বেশি পাপ হবে।'
এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন আমি হামেশাই হই। সুগারের রোগীরা, প্রেশারের রোগীরা বারবার নিষেধ সত্ত্বেও রোজা রাখেন এবং অসুস্থ হয়ে আমার দারস্থ হন। আমি গালাগালি দিয়ে রাগ মেটাই। ওনারা বিনা প্রতিবাদে সব শোনেন। মাথা নেড়ে মেনেও নেন। এবং একটু সুস্থ হলে আবার রোজা রাখেন।
তবে এ ব্যাপারে হিন্দু ধর্মের বয়স্ক মহিলারাও কম যান না। তাঁরাও একাদশী বা যেকোনো ছুতোয় উপোষ করেন। নিজের শরীরের বারোটা বাজান।
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় ঢেউ - চতুর্থ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ০২ মে ২০২১ | ৩৪৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
যারা এতদিন বিভিন্ন জনসভায় মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়ে কান্নাকাটি করছিলেন, ভোট মিটতেই এবং করোনা বাড়তেই যে যার ঘরে গিয়ে খিল এঁটেছেন। যখন মানুষের জন্য কাজ করার, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সবচেয়ে বেশি দরকার তখন এই রকম কয়েকটি তরুণ যুবক ছাড়া কারোরই পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রত্যেকটি পাড়ায় পাড়ায় এখন এরকম ছেলেদের বেশি দরকার। তারা যদি পাড়ার প্রতি বাড়ির অসুস্থ রোগীদের খবর রাখে, তাঁদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন সহ অন্যান্য সহজ শারীরিক পরীক্ষা গুলি করতে পারে এবং রোগীর অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে তাহলে বিপর্যয় অনেকটাই এড়ানো যেতে পারে।
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় ঢেউ - পঞ্চম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ০৮ মে ২০২১ | ৩৩০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
রোগীরা সবাই শেষে একটাই প্রশ্ন করেন, ‘ডাক্তারবাবু, ভয় নেই তো?’ উত্তর দিতে গিয়ে ইদানীং মেজাজ হারাচ্ছি। বলছি, ‘আমি জ্যোতিষী নই।’ এই প্রথম মাঝে মাঝে অন্যদের দেখে হিংসে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি যদি ডাক্তার না হয়ে অন্য কিছু হতাম, বেশ হতো। বাড়িতেও সকলের মুখ ভার। রাতে ফিরে যেটুকু সময় বাড়িতে থাকছি সেটুকু সময়েও অজস্র ফোন। একটা ফোনে কথা বলতে বলতে তিনটে মিসকল হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই হাসপাতালে বেডের জন্য, অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য, ভ্যাকসিনের জন্য ফোন করছেন। এসব ব্যাপারে আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই বলতেও খারাপ লাগছে। আমি সারাদিন রোগী দেখে বাড়ি ফিরে স্নান করি। ফোনের ঠ্যালায় স্নান করতে করতে রাত বারোটা বাজছে।
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় ঢেউ - ষষ্ঠ কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ১৫ মে ২০২১ | ৩১৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পালস অক্সিমিটার জোগাড় করে নিয়মিত অক্সিজেন মাপা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। বয়স্ক মহিলার ছেলে পরপর দুদিন এলেন। বক্তব্য একই, ‘ডাক্তারবাবু, মা একেবারে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। বিছানাতেই প্রস্রাব পায়খানা করে ফেলছেন।’ রোগীকে আস্তে আস্তে খারাপ দিকে এগিয়ে যেতে দেখলে ডাক্তারদের বড় অসহায় লাগে। অসহায়তা থেকে রাগের জন্ম হয়। আমি অকারণেই ওনার ছেলেকে ঝাড় দিলাম। বললাম, ‘এতোদিনে সামান্য একটা কোভিড টেস্টের রিপোর্ট করে উঠতে পারলেন না, কী করে আশা করেন মা সুস্থ হয়ে উঠবেন? এখনও বাঁচাতে চাইলে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’
করোনার দিনগুলি - দ্বিতীয় ঢেউ - সপ্তম কিস্তি : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : স্বাস্থ্য | ২৩ মে ২০২১ | ৩০৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য আন্তরিক ভাবে লড়েছি। সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোর অভাব হয়তো ছিল, কিন্তু তা বলে চুপ করে বসে কারও মৃত্যু মেনে নিই নি। অনেক রোগী বেড পাননি। তবু মেঝেতেই রোগীর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এমন কী নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও চেষ্টা করেছি। শুধু আমি একা নই, আমার সাথে অন্যান্য চিকিৎসক এবং জুনিয়ার চিকিৎসকরাও আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। নার্সদিদিরা, ওয়ার্ডবয় ভাইরা সাধ্যের বাইরে গিয়েও অনেক সময় সাহায্য করেছেন।
ভয় : ঐন্দ্রিল ভৌমিক
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ০৮ মে ২০২২ | ২৮০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
মকিনা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হাতি ঘোড়া গেল তল, মইশা বলে কতো জল। আল্লাহ সাক্ষী রইল গো। দেখি কে কারে তাড়ায়।’
মাথা এত গরম হয়ে গেল সারা রাত্রি ঘুম হল না। তাঁর উপর ছাদ থেকে শুধু প্লাস্টার খসে পড়ছে। মশারির ভেতর দিয়ে সারা বিছানা বালি বালি হয়ে গেছে। মশারির উপরে একটা চাদর পেতে দিলে হয়। কিন্তু তাতে পাখার হাওয়া একটুও ভেতরে ঢুকবে না। কী করি ভাবতে ভাবতে লোডশেডিং হয়ে গেল। দুত্তোর বলে উঠে পড়লাম। ভাবলাম, কোয়ার্টারের সামনের রাস্তায় ঘোরাঘুরি করি। সাপের কথা ভেবে আবার মশারির ভেতরে ঢুকলাম। সারা গায়ে প্যাচপ্যাচে ঘাম। তার সাথে বিছানায় বালি ভর্তি। শুয়ে শুয়ে কান্না পাচ্ছিল। কাল আবার ভোর ছ’টা থেকে ডিউটি করতে হবে।