মুক্তধারার বাঁশিওলা : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ মে ২০১৩ | ১১৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
জ্যাক কিংএর গল্পটাই ধরুন। জ্যাক কেমিক্যাল এঞ্জিনীয়র। বহু বছর পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে সম্মানের চাকরি। তারপর সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিংএ যোগ দেওয়া। সমস্যার সূত্রপাত তখনই। জ্যাক কোস্টাল ওয়াটার সংরক্ষণের রিপোর্ট দাখিল করলেন ক্যাবিনেটে। রিপোর্টে পোর্ট পিরির লেড স্মেল্টারটিকে ভারি ধাতু দূষণের দায়ে সাব্যস্ত করলেন জ্যাক। ক্যাবিনেট থেকে নির্দেশ এল পোর্ট পিরির যাবতীয় রেফারেন্স অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার। অথচ ততদিনে সি এস আই আর ও র বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন লেড স্মেল্টারের ভারি ধাতু কিভাবে মারাত্মক ক্ষতি করছে সে অঞ্চলের জীবজগতের। বলাই বাহুল্য, কিং তাঁর মত থেকে একচুলও বিচ্যুত হ'লেন না। বরং মন্ত্রী, আমলাবর্গের কাছে বারংবার দরখাস্ত করে যেতে লাগলেন। কোনোরকম সাড়া না পেয়ে, বাধ্য হয়ে মিডিয়ায় গেলেন কিং। অর্থাৎ ফুঁ পড়ল বাঁশিতে। সঙ্গে সঙ্গে কিংএর পোজিশন 'রিডানড্যান্ট। এরপর সেই এক গল্প- মানসিক রোগীর তকমা সেঁটে দিয়ে চাকরিটি কেড়ে নেওয়া।
ব্যক্তিগত নয় : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ জুন ২০১৩ | ১২০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
ডঃ জয়ন্ত দাসের সঙ্গে আমার কথা শুরু হয় এবছরের মার্চে। নিতান্ত ব্যক্তিগত শোকের প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছিল কথা চালাচালি – অনুসন্ধিৎসাই ছিল তার মূলে – প্রথমে, ডঃ দাসের সঙ্গেই। ডঃ বিশ্বরূপ চ্যাটার্জী এলেন তার পরে। আলাপন, যা মূলতঃ হাসপাতাল থেকে আসা সংক্রমণ বিষয়ে প্রশ্নোত্তর- চলেছিল ই মেইলে; ভাষা কখনও বাংলা ছিল, কখনও ইংরিজি । আলাপনের ভঙ্গি ও কালানুবর্তিতা অটুট রেখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাকে ব্যক্তিগতর গণ্ডী টপকে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
রোব্বারের পরদিন : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৩ | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ | ১২৩৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
আসলে হাওয়ার রাত ছিল সেদিন। ফুলশয্যার খাটে ঘন নীল মশারি ফুলে ফুলে উঠছিল। তখন নীলকমলকে হাতির গল্পটা বলেছিল স্বপ্না। নীলকমল হাসিমুখ করে শুনছিল তারপর বলেছিল -ধ্যাত, সরু গলিতে হাতি ঢুকবেই না। হাতি বিষয়ে নীলকমল সবই জানে-এরকমই মনে হয়েছিল তার নতুন বৌয়ের। তখন স্বপ্না অন্য গল্প বলবে ভাবছিল- বিরাট উঠোনে জ্যোৎস্নায় লক্ষ্মীপ্যাঁচা নামত, সেই গল্প। নীলকমল ততক্ষণে সুকুমারের গল্প শুরু করেছিল। চাঁদ আর জ্যোৎস্না দিয়েই শুরু করেছিল নীলকমল। বলেছিল সুকুমারের আশ্চর্য বাড়ির কথা। বলেছিল, চাঁদ উঠলে সুকুমারের বাড়ির সামনের রাস্তায় আইসক্রীম ট্রাক আসে। লাল নীল আলো জ্বলে,ঘন্টা বাজায়। নীলকমল বলেছিল সুকুমার আইসক্রীম ভালোবাসে। স্বপ্নারও একটা গল্প ছিল আইসক্রীমের। প্রাচীন এক আইসক্রীমের রেসিপির- যা ও এক মেমসাহেবের থেকে পেয়েছিল কুচবিহারে-ওর বাপের বাড়ির পাড়ায়। জীর্ণ এক বাড়িতে থাকত সেই মেম আর তার অন্ধ কুকুর। স্বপ্না অবশ্য সে গল্প বলে নি তখন। সুকুমারের গল্প শুনেছিল চুপ করে। এক বছর শুনেছিল সুকুমারের গল্প। তারপর বছর ঘুরতেই কুচবিহার গিয়ে রুফাসকে নিয়ে এসেছিল। বলেছিল বাপের বাড়ির কুকুর। বলেছিল ছোটোবেলায় ও ইংরিজি শিখেছিল এক মেমের কাছে। ইংরিজি শিখত আর রান্না। রুফাস আর রান্নার বই এনেছিল কুচবিহার থেকে। বলেছিল মেম দিয়েছে। নীলকমল রান্নার বই উল্টে দেখেছিল। সমস্ত উপকরণ, মাপামাপির হিসেব অচেনা ঠেকেছিল নীলকমলের। বলেছিল -এসব এদিকের বাজারে পাওয়া যায় না। বলেছিল - সুকুমারকে বলে দেব, দেশে এলে নিয়ে আসবে। স্বপ্না সে বই তুলে রেখেছিল। রুফাস তখন ছোটো। স্বপ্না বলেছিল মেমের অন্ধ কুকুরের নাতি রুফাস। মেমই নাম রেখেছে। পরে একদিন তুমুল ঝড় জলে শিয়ালদায় স্বপ্নার পিসতুতো দাদার সঙ্গে নীলকমলের দেখা হয়েছিল। দার্জিলিং মেল ধরার কথা দুজনেরই। ট্রেন লেট ছিল সেদিন। অনেকক্ষণ গল্প করেছিল ওরা। মেমের কথা কিছু জানে না স্বপ্নার পিসতুতো দাদা, বরং, সেদিন সে রুপুর কথা বলেছিল আচমকা। বলেছিল, রুপু স্বপ্নার প্রেমিক ছিল কুচবিহারে। বাড়ি ফিরে স্বপ্নাকে সে সব কিছু বলে নি নীলকমল। প্রথম ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে সুকুমারের ট্রেন আটকে পড়েছিল পাটনায়-সে গল্প বলেছিল।
সদর স্ট্রিট জার্নাল : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ এপ্রিল ২০১৯ | ১৩৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
পোস্টাল অ্যাড্রেস যাই থাকুক, এ' রাস্তার নাম কিন্তু সদর স্ট্রীট। হা হা। অবাক হচ্ছেন? এই তো' লেখকের কাজ - স্থান কাল পাত্র নিয়ে খেলা করে করে পাঠককে ধন্দে ফেলে দেওয়া। ছোটোবেলা থেকেই কাজটিতে আমি পটু। বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলার স্বভাব বরাবরের; তার ওপর মানুষ, পশু, পাখি এমনকি জায়গার নাম বদলে দেওয়ার একটা ফেজও চলেছিল বহুদিন - আমিই এ' গলির নাম দিয়েছিলাম সদর স্ট্রীট।' -এই অবধি ব'লে কমলিকা সামন্ত কফিতে চুমুক
প্রাণগোপাল : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৩ জুন ২০১৯ | ১৩৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
অনিমেষ সচরাচর রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে আসে। গোপাল বহুদূর থেকে ওর গন্ধ পেয়ে ডেকে উঠত। সেই ডাক শুনে ভৌ ভৌ করে দৌড়োদৌড়ি করত গলির কুকুর, তারপর বড় রাস্তার কুকুররা ডেকে উঠত -মেক্সিকান ওয়েভের মত কুকুরের ডাক পৌঁছত অনিমেষের কানে। গলি টুকু প্রায় দৌড়ে ঢুকত বাড়িতে। গোপাল দু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে মুখ চাটত অনিমেষের। লিপি ততক্ষণে ভাত বসিয়েছে।
আজ পাড়া নিশ্চূপ, গলি শুনশান -শুধু আলোর তলায় লিপি একলা দাঁড়িয়ে । লিপির দাঁড়ানোর ভঙ্গী, ওর কান মুখ ঢাকা শাল, ওর দীর্ঘ ছায়া, মাথার ওপর ঝাঁক বেঁধে আসা মশা অনিমেষকে যেন সমস্ত বলে দিল এক মুহূর্তে। এমনকি অনিমেষ যেন লিপির হাতের হাতের ছেঁড়া শিকলিও দেখতে পেল যাতে গোপালের বকলশ ঝুলে রয়েছে। হাতের ব্যাগ নামিয়ে রেখে অনিমেষ বলল-
-'কখন? কষ্ট পেয়েছিল?'
-'ঘরে চলো'। লিপি বলেছিল শুধু।
বৌঠানের ছাদ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ২৩৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
টাকার চিন্তায় যখন পাগল পাগল লাগে, তখন মনে হয়, আমি বোধ হয় কাকীদিদা হয়ে যাচ্ছি। কাকীদিদা আমার মায়ের কাকীমা - প্রথমদিকে সত্যি টাকার দরকার ছিল, পরের দিকে ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত, মা কে তারা দিব্যি যত্নেই রেখেছে - তখনও দুপুরবেলায় বেরিয়ে পড়ত কাকীদিদা - বাসে চেপে, রিক্সায় এর বাড়ি তার বাড়ি- 'দিবি রে পঞ্চাশটা টাকা? খুব দরকার। সামনের মাসেই দিয়ে দেব'। অদ্ভূতভাবে মারা গিয়েছিল। কাকীদিদার ছোটো বাড়ি - একতলাই ছিল, বহুবছর পরে ছাদে একখানা ঘর তুলেছিল। বড়মেয়ের বিয়ে হচ্ছিল সেই ছাদে ; কে যেন বলেছিল, মেয়ের বিয়ে দেখতে নেই না কি -কাকীদিদা তাই ছাদের লাগোয়া ঘরেই বসে ছিল , ছাদের দিকে দুটো জানলায় পর্দা টানা। ওদিকে বিয়ের আসরে মালাবদল, শুভদৃষ্টির সময় ছবি তুলছে সবাই; হঠাৎই কাকীদিদার এক বোনপো 'একি একি মেজমাসি জানলায় উঠে কী করছ' বলে চেঁচিয়ে উঠতে কাকীদিদা জানলার রড ছেড়ে ঘরের মেঝেয় ধড়াম করে পড়ল।
পাড়াতুতো চাঁদ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | ৩০৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
অষ্টমঙ্গলার ঠিক কুড়ি বছরের মাথায় ক্যান্সার ধরা পড়েছিল লতিকার। বহুদিনই একটা লাম্প পুষেছিল বুকে। যখন বোঝা গেল, অনেকটাই ছড়িয়ে গেছে রোগ। ডাক্তার খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছিলেন লতিকাকে, অশোককে। বলেছিলেন, ভ্গবানকে ডাকুন। মির্যাকল তো হয়ও।
বাড়ি ফিরে খিলখিল করে হেসেছিল লতিকা- 'একদম মিলি । পুরো মিলি। জয়া ভাদুড়ির সেই সীনটা মনে আছে?'
অশোক পাগল হয়ে গিয়েছিল যেন- লতিকার ওপর রাগ করেছিল, খ্যাপার মত বলেছিল, 'শুধু সিনেমা , না? শুধু সিনেমা? তুমি মিলি হতে চেয়েছিলে , তাই বলো নি। আমি জানি। সিনেমাই সব তোমার। আমি, বাবলু -কেউ না?'
লতিকা শান্ত চোখে তাকিয়েছিল। বলেছিল-'কেঁদো না।' ওকে নন্দিনী মালিয়ার মত লাগছিল অশোকের । যেন ওরা দুজনে ভ্রমর আর অমল। যেন ওদের জোর করে কেউ সিনেমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে-অভেদ্য এক পর্দায় আটকে গিয়েছে লতিকা আর ও- দম আটকে যাচ্ছে, কিছুতেই বেরোনো যাচ্ছে না - 'ছুটি'র লাস্ট সীন চলছে। সিনেমার থেকে বেরোতে না পেরে অশোক ভাবল, তবে সিনেমাই দেখা যাক।
পয়লা আষাঢ় : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ৪১৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩১
রুবির বাঘের নাম শান্তনু। বাঘ যেমন হয়-পেল্লায়, ডোরা কাটা, বিশাল খণ্ড ত ল্যাজ। ভারি বলিষ্ঠ থাবা ঘিরে সাদা নরম রোঁয়া। বিষণ্ণ পোখরাজ চোখ। কানের পিছনে, থাবায় গভীর ক্ষতচিহ্ন। এখন রাত বারোটায় মোড়ের মিষ্টির দোকানের ঝাঁপ বন্ধ - দু ধাপ সিঁড়ির নিচে ভাঙা ফুটপাথ-সেখানে এক ছটাক ঘাসের দখল নিয়ে কাড়াকাড়ি স্ট্রীটলাইট আর জ্যোৎস্নার; দুটো লাল গাড়ি পর পর পার্ক করা। মিত্র সুইটস আর গাড়ির মাঝখানে ঐ জ্যোৎস্নার ওপর হিসি করছিল শান্তনু - আকাশের দিকে মুখ, সামনের দুপায়ে শরীরের সম্পূর্ণ ভর, পিছনের পা ভাঁজ করা এবং লম্বা ল্যাজ মাটির সঙ্গে সমান্তরাল-ওর পিঠের ডোরা এই মুহূর্তের চাঁদের আলোয় সিপিয়া আর সাদা। রুবির হাতে একটা বড় কালো চাদর ভাঁজ করা; সে শান্তনুর পিঠে হাত রেখে সটান দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছিল। রুবি যেন এক বন্ধ দরজার পাল্লা-যার আড়ালে বসে, প্রকৃতির ডাকে নিশ্চিন্তে সাড়া দিচ্ছিল শান্তনু- ঝাঁঝালো বুনো গন্ধ সিঁড়ির ধাপ বেয়ে পৌঁছোচ্ছিল মিত্র সুইটসের সাইনবোর্ড অবধি, ঘাসের ওপর চাঁদের আলো তরল আর হলুদ হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশঃ।
সব চরিত্র কাল্পনিক : ইন্দ্রনীল ও ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ২৩ নভেম্বর ২০১২ | ১৪৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
না, আমি কবিতারও কেউ নই। কবিতা কস্মিনকালেও আমাকে ডাকেনি তার সাতমহলা নাটমহলে। অথচ হাভাতে, হাঘরে আমি তার হিমজানালায় গাল ঠেকিয়ে দেখেছি অন্দরের তারা ও তুবড়ি, পানপাত্রের ক্রিস্টাল আর কলস্বনা মেয়েদের; তাদের শাড়ির ভাঁজের খসখস, তাদের হাসির ঠমক যে রূপোর ঘন্টার কেলাসিত টুং টাং-এসবই হল জনশ্রুতি। জনশ্রুতিকে আমি সত্যি হতে জেনেছি, জানালার কাচে গাল ঠেকানো বোকাহাবা ছেলে । আর বাইরে অবিরাম ঝরে গেছে বরফ। সাদা হয়ে গেছে মাঠঘাট। জ্যোৎস্না ও তুষারে।
না, আমি রাজার বাড়ির বরাতি নই। সোনার জলে ছাপা নেমন্তন্নর চিঠি আমার জন্য আসেনি কখনো। তবু ঘুমের ঘোরে কখনো তো শুনেছি রাতের শেষ ট্রেনের বাঁশি; আমার বাড়ির পাশ দিয়ে, আমার জানালার ফাঁক দিয়ে, আমার মশারির চাল আর মনসার ঘট ছুঁয়ে সে আবার মিলিয়ে গেছে দূরে, দিগন্তের দিকে। একবার, শুধু একবার। এ বেঁচে থাকায় শুধু একটিবার।
বিকেলের গল্প : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ৯৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
আই প্রোটেকশন কপালের ওপর ঠেলে তোলা, চোখ অ্যান্ড্রয়েডের স্ক্রীনে। হাই স্টুলে বসে টেক্সট পাঠাচ্ছিল টিনা। বাঁ পা নাচাচ্ছিল । ওর সামনে রিয়াকটর, অ্যাসিড ডোসিম্যাট। রিয়াকটারে মেটাল ওর আর জল। লিচিং চলছিল। টিনা অপারেটর। আট নম্বর টেক্সটটা পাঠানোর পর কম্পিউটারে চোখ যেতে খেয়াল হল টার্গেট পিএইচ সেট করা হয় নি । লগ শীট পড়েই দেখে নি । অনেক বেশি অ্যাসিড চলে গেছে রিয়াকটরে। আনামারিয়া প্রচন্ড ঝাড়বে । এই স্টেজে এত বেশি অ্যাসিড যাওয়া মানে টেস্ট ইজ কিলড। আনামারিয়াকে তো জবাবদিহি করতে হবে ওর বসের কাছে। বসকে ক্লায়েন্টের কাছে। জি এমএর কাছে। ডোসিম্যাটের রীডিং মুছে দিয়ে রিসেট করল টিনা, চোখ বুজে মনের মধ্যে একটা সংখ্যা খুঁজল। তারপর সেটাই বসিয়ে দিল লগশীটে। ধুলো আর জলই তো আফটার অল। তারপর আবার খুটখাট শুরু করল মোবাইলে।
এই সময়ে হাঁফাতে হাঁফাতে ল্যাবে ঢুকল আনামারিয়া। গলার সঙ্গে লেগে থাকা ক্রশ। সটান রিয়াকটারের সামনে এসে দাঁড়াল। বাঁদিকে সামান্য হেলে হাঁটে আনামারিয়া; কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ডোসিম্যাটের দিকে। ভুরু কোঁচকালো। ওর কোঁচকানো ভুরু শুঁয়োপোকার মত দেখায়। টিনার দিকে ফিরে বলল, এক ঘন্টা হয়ে গেছে রিয়াকশনের আর মাত্র এইটুকু অ্যাসিড গেছে?
ক্রায়োনিকস : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ১৯৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
গলা তুলে বলতে থাকে: বেশ করে লংকাকুচি আর পেঁয়াজ দিও তো আর একটু বেশি সস। একটু বেশি সস, বুঝলে? কাল কম দিয়েছিলে। তোমার দোকানের সসটা না...
‘চ-অ-ক-স’ করে তৃপ্তির শব্দ করে মেসো — ঠোঁট জিভ আর দাঁত দিয়ে — সামান্য থুতু ছিটকোয়।
পবিত্র দেখতে থাকে — প্লাস্টিকের চেয়ারে পা ছড়িয়ে বসেছে মেসো — দুহাত সামনে বাড়িয়ে বন্ধ ছাতাটা ধরে রেখেছে — হাওয়ার দাপট সামলাতে টানটান হাত — বাদলা হাওয়ায় লম্বা চুল উড়ছে, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তৃপ্তিভরা চোখে — ক্ষৌরিবিহীন কালচে মুখে রোলের দোকানের আলো, পায়ের কাছে খানিকটা জ্যোৎস্না; প্লাস্টিকের চেয়ারটা অবিকল একটা রথের মত দেখাচ্ছে এই মুহূর্তে।
হেমন্তকথা : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০০৬ | ৯১০ বার পঠিত
ঈস্টার আর অ্যানজাক ডের ছুটি শেষ। জনগণ কাজে ফিরছেন। বাতাসে মৃদু হিমভাব, আপিসফেরতা হাল্কা জ্যাকেট,এক ঘন্টা দেরীতে সকাল। অস্ট্রেলিয়ায় এখন হেমন্ত, এপ্রিল ফুরিয়ে এল স্কুলের দু সপ্তার ব্রেক শেষ হ'তে এখনও কদিন বাকি-পাবলিক লাইব্রেরি থেকে 'প্রিমিয়ার রিডিং চ্যালেঞ্জ'এর বই ইস্যু হচ্ছে প্রচুর।
নিছক ব্যক্তিগত, অথবা -- : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ৯৭৭ বার পঠিত
সেদিন উত্তর-পূর্বাঞ্চল মোটের উপর শান্তই ছিল। শুধু একজনই মারা যান গুলিতে। আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কের উপর বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যান যিনি, তিনি লেখিকার আপনজন। -- সম্পাদক। তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না। কথা তো ছিল না এমন। পুজো আসে, পুজো যায়। আমাদের বয়স বাড়ে।বিজয়ার প্রণাম সারি ফোন অথবা ইমেলে। আমাদের জানা থাকে, পরের বিজয়ায় প্রণাম করার লোক আরো কমে যাবে। আমরা প্রস্তুত থাকি। এবারে তৈরী ছিলাম না। আমাদের আর দেখা হবে না। এরকম তো কথা ছিল না।
হলদে কেকের রাস্তা : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ৮৮৮ বার পঠিত
"ফলো দ্য ইয়েলো ব্রিক রোড"-ডরোথি,কাকতাড়ুয়া, টিনের সেপাই, সিংহমশাই সবাই হাঁটছেন ইয়েলো ব্রিক রোড ধরে, এই গানখানি গাইতে গাইতে। পথের শেষে সব পেয়েছির দেশ-সব্বার মন:স্কামনা পূর্ণ হবে অজ দেশের উইজার্ডের জাদুদন্ডের ছোঁয়ায়। গন্তব্যে পৌঁছে অবশ্য মিথগুলি ভেঙে যেতে থাকে... বছরকয়েক আগের টাইম পত্রিকায় প্রায় এই লেখার মতই শিরোনাম ছিল একটি আর্টিকেলের।মনে পড়লো।তবু হেডিং বদলাতে ইচ্ছে হ'ল না। আসলে, ইয়েলো কেকের সমস্ত গল্পেই ইয়েলো ব্রিকের গানটাই থিম সঙ।
জন এলিয়টের ইচ্ছামৃত্যু : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ | ৯৮১ বার পঠিত
ইউথ্যানেজিয়া অস্ট্রেলিয়ায় বেআইনী। সুইসাইড তা' নয়। আবার, অ্যাসিস্টেড সুইসাইড নিষিদ্ধ এখানে। যদি আপনি অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা হ'ন আর রোগযন্ত্রণা আপনার বেঁচে থাকার সমস্ত ইচ্ছে শেষ করে দেয়, ইউথ্যানেজিয়ার জন্য আপনাকে যেতে হবে সুইজারল্যান্ড।নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, আর ইউ এস-এর ওরেগনে ইউথ্যানেজিয়া আইনী তবে শুধু সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য।সুইজারল্যান্ডের গল্পটা অন্য।ইউথ্যানেজিয়া নিষিদ্ধ সুইজারল্যান্ডেও। কিন্তু আত্মহননে নি:স্বার্থ সহায়তা নিষিদ্ধ নয়।
কালবেলা : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ মে ২০০৭ | ১০৫০ বার পঠিত
মেয়েদুটি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।ব্যাকগ্রাউন্ডে বালি, সমুদ্র। খোলা চুল, স্কার্ট,টপ। বছর বারো বয়স হবে হয়তো। কিম্বা তারও কম।অথচ তাদের চোখ, ঠোঁট, সামান্য তেরছা করে ঈষৎ এগিয়ে রাখা বাঁ পা নিশ্চিত মনে করাবে কোন তরুণীকে।অন্তত: এই মুহূর্তে অনেককেই সেরকমই মনে করাচ্ছে । তাঁদের একজন এমা রাশ, অস্ট্রেলিয়ান ফেমিনিস্ট, অ্যাকাডেমিক।গত অক্টোবরে এখানকার বামঘেঁষা "থিঙ্ক ট্যাঙ্ক' দ্য অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট থেকে এমা প্রকাশ করেছেন একটি অ্যাকাডেমিক পেপার,যার শিরোনামটি-ই প্রবল বিতর্কিত-করপোরেট পিডোফিলিয়া।
না-মেয়েলি কথা : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ জুলাই ২০০৭ | ১০০২ বার পঠিত
নাতাশা স্টট, সেনেটর, ডেমোক্র্যাট; ক্যারল ব্রাউন, সেনেটর, লেবার; জুডিথ ট্রোথ, সেনেটর, লিবারাল; কেরি নেটল, সেনেটর, গ্রীন। অস্ট্রেলিয়ার এই মহিলা সেনেটররা রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতাকে সরিয়ে রেখে আপাতত: একজোট দুটি বিলের সমর্থনে।
অ্যাবরশন পিল RU 486 এর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য একটি বিল, অন্যটিতে প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিংএর বিজ্ঞাপনে সত্যভাষণের দাবী।
চারটি মেয়ে, দুটি বিল-বিষয় অ্যাবর্শন। নিছক মেয়েলি প্রসঙ্গ? আসুন, দেখা যাক।
চারশো সাতান্ন : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ১০৩০ বার পঠিত
যদিও এখন শহরে এসে গেছেন জর্জ বুশ, কন্ডোলিজা রাইস কিম্বা হু জিনতাও, শিগ্গিরি এসে পড়বেন শিনজো আবে, স্টিফেন হারপার প্রমুখরা, যদিও এই মুহূর্তে সমস্ত অস্ট্রেলিয়া সিডনির দিকে তাকিয়ে, যদিও এই মুহূর্তে শুরু হ'তে চলেছে এশিয়া প্যাসিফিক ইকনমিক কো-অপরেশন ফোরামের সামিট, যদিও এখন মিডিয়া জুড়ে শুধুই নিরাপত্তার বিবরণ আর নেতাদের মুখ, ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে হলদে কেকের রাস্তা এবং ১২৩; আমরা যাব শহর থেকে দূরে, সঙ্গে থাকবে সম্পূর্ণ অন্য সংখ্যাত্রয় -৪৫৭।
শঙ্খপুরীর রাজকন্যা : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ২৬ জুলাই ২০০৫ | ৭৫৮ বার পঠিত
বিপুল দাসের তিরিশখানি ছোট গল্পের সঙ্কলন 'শঙ্খপুরীর রাজকন্যা' আনন্দ পাবলিশার্স থেকে সদ্য প্রকাশিত (জুন,২০০৫), দেড়শো টাকা দাম। সূচিপত্র চোখ বুলিয়ে আকৃষ্ট হবেন পাঠক গল্পের নামকরণে। 'রক্তচন্দন ও কালোমহিষ', 'হেমামালিনীর হিরো', 'মস্তকপ্রধান কাঁকড়া', 'চক্রবৎ সুধীর', 'কলনবিদ্যা ও শিল্পের জন্ম', 'মিউচুয়াল হয় না'-বিভিন্ন গল্পের নাম।
বিষাদবৃক্ষ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ১২ জুন ২০০৬ | ১০৫৬ বার পঠিত
মিহির সেনগুপ্তর লেখা বিষাদবৃক্ষ গতবছর আনন্দ পুরস্কার পেয়েছে; বইটির প্রকাশক সুবর্ণরেখা, দেড়শো টাকা দাম।
মলাটে লেখা আছে, "বিষাদবৃক্ষ একখানি শক্তিশালী এবং বিষাদময় আত্মস্মৃতি যা এই উপমহাদেশের এক ভয়াবহ সময়ের প্রতিবিম্বিত দর্পণমাত্র।" অবতরণিকাতে মিহির লিখছেন, "যাঁরা পঞ্চাশের ছিন্নমূল কাফেলা, তাঁদের জীবনভর দু:খ সংগ্রাম, হারিয়ে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা নিয়ে নির্মাণ হয়েছে কত লেখা, ছবি, ছায়াছবি। আজও উপমহাদেশ জুড়ে বন্ধ হয়নি তার হাহাকারি চর্চা, রোমন্থন। কেউ সামগ্রিকতায়, কেউ নৈবক্তিক খন্ডিত গন্ডিতে অব্যাহত রেখে চলেছেন সেই দু:স্বপ্নের ব্রতকথা। .... স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম যারা ... যাদের অভিভাবকদের এপারে কোনও সহায়-সম্পত ছিল না চলে এসে স্থায়ী হয়ে, থিতু হয়ে বসার মত, তারা সেদিন কীভাবে তথাকার স্বাধীনভূমিতে বেড়ে উঠেছিল বা কতটা নাগরিক অধিকার লাভ করেছিল, এ গ্রন্থ তারই একটি আলেখ্য রচনার প্রচেষ্টা।
দ্য থার্ড ম্যান অফ্ ডাবল হেলিক্স : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ মে ২০০৭ | ৮৮৯ বার পঠিত
যদিও ১৯৬২তে ডি এন এ অণুর গঠন আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেন জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক আর মরিস উইলকিন্স; সাধারণের কাছে, ক্রিক,ওয়াটসন আর ডাবল হেলিক্স যেমন অঙ্গাঙ্গী, মরিস একেবারেই তা নন। তার সঙ্গে এক অকালমৃতাও রয়ে যান কাব্যে উপেক্ষিত-রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন।
"গভীর নির্জন পথে" ও কিছু কথা : ইন্দ্রাণী, কল্লোল, রঙ্গন ও দীপ্তেন
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ০১ জুলাই ২০০৭ | ১৬৬৬ বার পঠিত
জনপ্রিয় পাক্ষিকের ধারাবাহিক উপন্যাসে বাউল সাধনত্ত্বের বিশদ কিছু বিবরণে বিব্রত, বিরক্ত পাঠককুল। মাঝপথে উপন্যাস পাঠ বন্ধ করেছেন অনেকেই। শুনতে পাই।
নিজে যখন পড়ি, একটি ক্ষীণতনু পুস্তকের কথা মনে আসে। অনেকদিন আগে পড়া। একযুগ? তা' হবে হয়তো। খুঁজে বার করে আনি বইটি। জখম শিরদাঁড়া, পাতাগুলি ঈষৎ হলদে। 'গভীর নির্জন পথে'। লেখক সুধীর চক্রবর্তী। প্রথম সংস্করণ ১৯৮৯। প্রকাশক -আনন্দ। সে'সময় চল্লিশ টাকা দাম ছিল বইখানির।
জন্মের মাটি : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ মার্চ ২০০৮ | ৮৫৯ বার পঠিত
'ভোর হবার মুখে আবছা অন্ধকারে ট্যাক্সি এসে হর্ন দেয়। ঘুম অনেক আগেই ভেঙেছিল গায়ত্রীর। সারা রাত বরং ভালো ঘুমই হয়নি তার, এমন এক ঘড়ি ধরে যাত্রার কথা থাকলে চাপা উদ্বেগে যেমন অনেকেরই বার বার ঘুম ভেঙে যায় তেমনই। অন্ধকার থাকতেই স্নান সেরে নিয়েছে সে। সুটকেস আর ব্যাগ তো দু-দিন আগেই গোছানো হয়ে গিয়েছে-গায়ত্রী আর সুধীনের দুটো আলাদা সুটকেস, একটা কিটস ব্যাগ, যার যার নিজস্ব হাতব্যাগ ও কাঁধের ঝোলা। ভোরের বনগাঁ লোকাল ধরবে শিয়ালদা থেকে, সকাল ৫-৩৫ এর গাড়ি।'
খুঁটে খাওয়ার গ্রাফিতি : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৩ জুন ২০০৭ | ১১৫০ বার পঠিত
জলপাত্রটি কানায় কানায় ভরা।তলায় নীল নুড়ি।লালচে বেগুণী পাখনায় জল কাটে, ঘাই দেয়। নুড়ি ছুঁয়ে উঠে আসে। জলপাত্রের কাঁচদেওয়ালে বিম্বিত হয় সে। সিয়ামিজ ফাইটার। লড়ে যায় নিজের প্রতিবিম্বের সঙ্গে। এক দানা, দু'দানা, তিনদানা খাবার-দিনে তিনবার। জল পাল্টানো সপ্তাহে একদিন।
পুরোনো টেবিল। দাগধরা।টেবিল ঘিরে চেয়ার।চার, পাঁচ,ছয়। কিম্বা তার বেশি। মর্নিং টী, লাঞ্চ, আফটারনুন টী। ওরা চা খায়।কফি। সূপ, কাপ নুডলস,স্যান্ডউইচ। টেবিল ঘিরে ওরা ক'জন। প্রতিদিন।
উইদাউট আ প্রিফেস : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ অক্টোবর ২০১১ | ১০১৫ বার পঠিত
আঙুলের ছোঁয়া লাগছিল মুখে, কখনও চোখ, কখনও নাকের পাশে। আলগোছে। হাল্কা ছোঁয়া। অথচ শিরশির করছিল শরীর। সমস্ত শরীর। আঙুলের নখ ছুঁয়ে যাচ্ছিল কানের পাশের গাল। আলতো। চন্দনের ঘ্রাণ আসছিল। চোখ বুজে আসছিল কপালে ঈষৎ সূচালো কিছুর স্পর্শে । সে স্পর্শ যেন অবিচ্ছিন্ন তরঙ্গের মত কপালকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে। ও চোখ খুলতে চাইল। চোখের পাতা ভারি ঠেকল। সামনে দেখল হালকা কচি কলাপাতা রং, লাল পাড়ে ঘেরা।
হরিণের কাছাকাছি : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২২ অক্টোবর ২০২০ | ৫২৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
দরজার বেল বেজেছিল একটু পরেই । পর্দার তলার ফাঁকটুকু দিয়ে সদর দেখা যায় না; নারীকণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল- ' নমস্কার , আমি শান্তি। শান্তিলতা।' কণ্ঠস্বর ক্রমশঃ এগিয়ে আসছিল বসার ঘরের দিকে- ' আপনাদের পাড়া আমাদের আগের পাড়ার তুলনায় কত আলাদা! জানেন, ঐ মোড়ের মাথায় যেখানে অনেক দোকান টোকান - মিষ্টি কিনতে গেলাম একটু আগে- দেখি একটা কুকুরছানাকে খাওয়াচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলে- বিস্কুট টিস্কুট দিচ্ছে আর হাত নেড়ে কুকুরছানার গায়ের মাছি তাড়াচ্ছে - আমরা যেমন অতিথির খাওয়ার সময় করি আর কি- খেতে খেতে কুকুরটা তাকালো আর ছেলেটা বলল, আগে তুই খা! উনি কী বলবেন জানি না- কিন্তু এও তো এক গল্প, বলুন?'
নাইদার নাইট নর ডে : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২১০৭ বার পঠিত
আই সি সি ওয়ার্ল্ড কাপের পুল বির খেলা পড়ল ইন্ডিয়া ভার্সাস পাকিস্তান। ঠিক হ'ল, শহরে একটা পাবে জায়ান্ট স্ক্রীনে খেলা দেখবে যাবে রাজীব, ওর বন্ধু সন্তোষ আর পারভেজ। ডে নাইট ম্যাচ, ওদের ফিরতে দেরিই হবে।
দুপুর হতেই দুই সখী ফিরোজ আর বকর কে নিয়ে নাসরীনের বাড়িতে টিভির সামনে বসেছে। ভারত ব্যাট করছিল প্রথমে। দুরন্ত খেলছিল ধবন, বিরাট আর রায়্না। বল উড়ে পড়ছিল বাউন্ডারির বাইরে। বাচ্চারা হাত তালি দিচ্ছিল-ওরা কোহলির ফ্যান। নাসরীন চুপচাপ-শান্ত, স্থিত উচ্ছ্বাসহীন। মায়া অস্বস্তিতে ভুগছিল-ভাবছিল, ইন্ডিয়া এত ভালো না খেললেই পারত আজ। ভাবছিল, বিরাট আউট হয়ে যাক, ইন্ডিয়া হারুক।
বস্তুতঃ উল্টোটাই ঘটছিল। পাকিস্তান ৩০০ রান চেজ করছিল। শুরুটা ভালই ছিল। কিন্তু ১০২ থেকে ১০৩ রানের মধ্যে তিনটে উইকেট পড়ে আর তারপর শহীদ আফ্রিদির ক্যাচ বিরাট ধরে নিতেই মায়ার মুখ শুকিয়ে আসে। গলা খাঁকরে বলে, এবারে খেয়ে নিলে হত না?
নাসরীন বলল, 'দোন্ট ওয়রি, দে আর এনজয়িং দ্য গেম।'
বস্তুতঃ বকর আর ফিরোজের মধ্যে কোনৈ হেলদোল দেখছিল না মায়া। চার ছয় বা কেউ আউট হলেই ওরা সোফায় উঠে নাচছিল।
খেলা শেষ হতে মায়া বাড়ি ফিরে এলো। ইন্ডিয়ার জয়ে ও কষ্ট পাচ্ছিল আর এই অনুভূতিটা আরও বড় কষ্টের জন্ম দিছিল ওর মনে। নাসরীনকে বলেছিল-' মাথা ধরে গেছে, আজ আর খাবো না'
যাপনকাল : ইন্দ্রাণী দত্ত
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৮১৬ বার পঠিত
আকাশ ছিল না। উপুড় করা চ্যাপ্টা বাটি পৃথিবীর ওপর। যা আকাশ নয়। অথচ পাখি ছিল, ডানা ছিল। একঝাঁক পাখি-ক্লান্ত অধৈর্য- ডানা মেলার খোঁজে একদিন ধাক্কা দিতে শুরু করল সেই উপুড় অর্ধগোলকে। আকাশ ভাসে না তবুও। তারা তখন তাদের চঞ্চু দিয়ে, চঞ্চুধৃত বৃক্ষশাখা দিয়ে -যে যেমন পারল-ধাক্কা দিতেই লাগল অনড় আকাশে- মাটিতে পা, চঞ্চু ঊর্দ্ধমুখী-লক্ষ ডানা ঝাপটাচ্ছে একযোগে - অবশেষে ভাসল আকাশ। উঁচুতে, আরও উঁচুতে, পাহাড় পর্বতের মাথা ছাড়িয়ে অনেক অনেক উঁচুতে। নাগালের বাইরে।
চার রঙের উপপাদ্য - হেমন্ত- ১ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৪২০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
ফ্ল্যাটবাড়ির নাম শশীবাবুর সংসার। তার ডাইনে বাঁয়ে একতলা দোতলা পুরোনো বাড়ি, শ্যাওলা ধরা দেওয়াল। তিন নম্বর বাড়ি মিঠুদের। ও বাথরুমে যাচ্ছিল- আজকাল রাত শেষ না হতেই পেট কামড়ায়, সম্ভবত রাতের খাবার হজম হয় না- ভোরের আগে বমি বমি লাগে; বিছানা ছেড়ে বাথরুমের আলো জ্বালাচ্ছে মিঠু, পাতলা সুজনির তলায় গুলগুলে আর কুন্তী ছিল এতক্ষণ- চাদর সরে যেতেই আড়মোড়া ভাঙছে, এমন সময় গুমগুম আওয়াজ যেন গলির মুখ থেকে এসে ওদের বাড়িতে ধাক্কা খেলো- জলের ফিল্টারের তলার তিন পা টেবিল অনেকদিন নড়বড়ে; ঝাঁকুনিতে ফিলটারের ওপরে উপুড় করে রাখা কাচের গেলাস খানখান হতেই মিঠু চেঁচালো - "মা, ভূমিকম্প"; এমন জোরে চিৎকার করল যে বুকে ধরে রাখা বাতাসটুকু যেন খরচ হয়ে গেল তার। আবার শ্বাস নিল সে, তারপর একদমে- "কতদিন বলেছি এই ভাবে গ্লাস রাখবে না"- বলে, পেট চেপে বাথরুমে ঢোকার আগে চোখের কোণ দিয়ে ডাইনের ঘর থেকে ছন্দাকে আলুথালু হয়ে বেরোতে দেখল। ছিটকিনি দিতে দিতে এক মুহূর্তের কৌতূহল হয়েছিল , বিপ্লবও একই ঘর থেকে বেরোলো কী না জানতে।
চার রঙের উপপাদ্য - হেমন্ত-২ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩৪৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
চৌমাথার মোড়ে কে আগে দাঁড়াবে মেঘ না বাস- মনে মনে বাজি রাখতে রাখতে সিগ্নাল লাল হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল পঙ্কজ । সেই সময় উল্টো দিক থেকে জোর হাওয়া উঠল- ধুলো, ভাজা সসেজের গন্ধ, টিউব রেল স্টেশনের চত্ত্বরের চিনে বৃদ্ধর ছড় টানা যন্ত্রের সুর শঙ্কুর মত পাক খেতে খেতে পঙ্কজকে ঘিরে নিল; মেঘের পাল টার্ন নিল সম্পূর্ণ বিপরীতে। বাসগুলো আচমকা ওয়াক ওভার পেয়ে সিগন্যালে পা ছেতরে দাঁড়িয়ে পড়ল। আর ম্যাজিক শব্দটা মুহূর্তে পঙ্কজের মনে ঢুকে তার শাখাপ্রশাখা ছড়াল; এই ক্রসিং থেকে যেমন একটা রাস্তা ডাউনে গিয়েছে, অন্যটা আপে; পঙ্কজের মগজের মধ্যে মুহূর্তে একটা রাস্তা বহু বছর আগের সাহেবগলিতে বাঁক নিয়ে ঢুকল।
চার রঙের উপপাদ্য - হেমন্ত-৩ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২২৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
পেট পেতে পড়ে থাকতে থাকতে মনে হয় মাটির তলার ঐ কাঁপুনি ওর পেটে একটা বিরাট খোঁদল তৈরি করছে -যেন বিরাট এক হাঁ যেখানে সব ঢুকে যেতে পারে সব কিছু- এই দোকান বাজার, বাড়ি ঘর, কাঁসি, পটল, সুনীল, মা কালী - সব, সব। প্রফুল্ল ধড়মড় করে উঠে আলো জ্বলা বাড়ি খুঁজে বেড়ায় তখন। আগে, এ'অঞ্চলে ব্যান্ডপার্টির চল ছিল- সে' দলের পিছন পিছন চলে যেতে পারলেই টুনি বাল্বের জ্বলা নেবা আর লুচির গন্ধ। গেটের পাশে ঘাপটি মেরে থাকলেই মাংসের ঝোল ভাত একদম গ্যারান্টিড। সুনীলের দোকানের উল্টোদিকেই একটা ব্যান্ড ছিল- জয় মা ব্যান্ড। দোকানের ফুটপাথের ওপর লাল কোট রোদে দিলেই প্রফুল্ল বুঝে যেত আজ মাংস ভাতের দিন তারপর পিছু নিত। মেরে ইয়ার কে শাদি হ্যায় গুনগুন করতে করতে পাড়ায় ফিরত ভর পেটে।
কুমুদিদি শ্রীচরণেষু : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৫৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
লীলা মজুমদার অথবা নবনীতা দেবসেন নাকী দুজনেরই প্রভাব আছে তোমার লেখায়- এই সব নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু, এই যে আমরা- আমরা তো তোমার লেখায় মায়া খুঁজতে এসেছি- একটা ট্যামটেমি, সবুজ স্যুটকেস, নীল ওড়না, নবমীর চাঁদের আলোয় দুর্যোধন আর চিত্রাঙ্গদার ছায়া টায়া নিয়ে ফিরে গেছি। তারপর আপিস গিয়ে সারাদিন গুনগুন করেছি- 'নেড়ুমুন্ডে নতুন পাতা, বেরুচ্ছেন, বেরুচ্ছেন'। প্রভাব ট্রভাব নিয়ে আর তো ভাবিই নি।
চার রঙের উপপাদ্য - হেমন্ত-৪ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৯৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
আজ এই হেমন্তের সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনের ফুটপাথে সেই কুয়াশা তাকে আবার ঘিরে ধরেছিল- যে কুয়াশা তাকে এই ক'বছরে বারে বারে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে তার শৈশবে আর সে কখনও মা, কখনও বাবা , কখ্নও জেম্মার সঙ্গে কথা বলেছে ফোনে। আজ সে' উপায় ছিল না- তার শৈশবের শেষ যোগসূত্র এই হাসপাতালের চারতলার ঘরে নাকে মুখে নল নিয়ে শুয়ে ছিল তখন। হাসপাতালের কাচ দরজা খুলছিল, বন্ধ হচ্ছিল। নীল আলো জ্বালিয়ে অ্যাম্বুলেন্স এসে থামছিল পরপর। হিম নামছিল ফুটপাথে। সেই হিমের সঙ্গে হাসপাতালের চারতলা থেকে কুয়াশার মত মৃত্যুর ছায়া এসে মিশছিল যেন।
চার রঙের উপপাদ্য - শীত-১ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০২ অক্টোবর ২০২১ | ২২১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
দ্রুত খাচ্ছিল মিঠু, বাটি থেকে চিকেনের শেষ পিস প্লেটে তুলে মনে হল -বড় দ্রুত ফুরিয়ে গেল খাওয়ার সময়টুকু। এই আলো আঁধারি, চিনে খাবারের গন্ধ, লাল রেক্সিনের পুরু গদি- ছাত্রদের কোলাহল নেই, মা'র চিৎকার নেই, সনতের এখানে আসার সম্ভাবনাও নেই - তার আরো খানিকটা সময় থেকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। হাত তুলে একটা ভ্যানিলা আইস্ক্রীম আর থামস আপ চাইল মিঠু।
প্র্যাকটিকাল ক্লাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমর ধরে গিয়েছিল মিঠুর - তার ওপর ঝুঁকে স্লাইড চেক করা। ঢেকুর উঠল বার কয়েক। ফেরার সময় বাসের জন্য দাঁড়াতেও হল অনেকক্ষণ- সি এ এ নিয়ে মিছিল বেরিয়েছে আজ শহরে।
চার রঙের উপপাদ্য - শীত-২ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৯ অক্টোবর ২০২১ | ২১২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
যেন ট্রেনে উঠেছিল লিপি- হুইশল দিতে দিতে প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে ট্রেন আর লিপি বার্থে উঠে বসছে, তারপর রেলের কামরা বদলে যাচ্ছে ওর বাপের বাড়ির পুরোনো ঘরদোরে - মলিন দেওয়ালে ঝুলে থাকা ছবি, ক্যালেন্ডার- খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে আলো ঢুকছে আর দেওয়ালে ছবি তৈরি হচ্ছে- বকুল গাছ, জবা, টগর, এই উঁচু নারকেল গাছ তারপর মেপল। লাল হলুদ ঝরা পাতার রাশ পেরোচ্ছিল ট্রেন খুব আস্তে, সে ট্রামে করে চলেছে এরকম মনে হচ্ছিল - তারপর একটা লম্বা ব্রিজে উঠল , স্পীড বাড়াল- ঝমঝম ঝমঝম ঝমঝম; ট্রেনের তীব্র গতিতে ভেঙে গেল বাপের বাড়ির দেওয়াল, ঘরদোর, দেওয়ালের ছবি-
চার রঙের উপপাদ্য - শীত-৩ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৩ অক্টোবর ২০২১ | ২০৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শীতের বিকেলে বৃষ্টি হলে ঠান্ডা যেন চামড়া ফুটো করে হাড়ে ঢুকে যায় সটান, তার ওপর ভেজা ফুটপাথ শুকোতে অনেক সময় নেয়- রাতে শোয়ার জন্য একটা শুকনো জায়গা খুঁজছিল প্রফুল্ল। এমনিতে, মন্দিরের সামনের ফুটপাথে প্লাস্টিক পেতে শুয়ে থাকে। গতবছর একটা কম্বল পেয়েছিল - সেদিন কালীমন্দিরে শ্রাদ্ধ- প্রফুল্ল, কপিল, নাথু আর রঘুবীর ফুটপাথে বসে পিন্ডমাখা দেখছে- ন্যাড়া মাথা দুটো ফরসা ছেলে পুজো করতে করতে চোখ মুছছিল। কাজ মিটে গেলে ছেলেদুটো ওদের হাতে লাড্ডু দিল। তারপর টাকা, ধুতি আর কম্বল। গতবারের শীত এই কম্বলের নিচে দিব্যি কেটেছে; তারপর প্লাস্টিক মুড়ে রেখে দিয়েছিল।
চার রঙের উপপাদ্য - শীত-৪ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ৩০ অক্টোবর ২০২১ | ২৬৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এই শহরে সবাই তেতে আছে সনতের মত- যেন প্রতিটি লোক জুয়াড়ি , যেন প্রতিটি লোক একটা হেরো ঘোড়ার ওপর নিজের জীবন বাজি ধরেছে,আর সেহেতু প্রতিটি সেকন্ডে নিজের নাড়ি ধরে হার্টবীট মাপছে, তারপর তেড়েফুঁড়ে শ্বাস নিচ্ছে যেন এই শেষবার। সবার ঘোলাটে চোখ, ছুঁচোলো ঠোঁট, নিঃশ্বাস নেয় ঘন ঘন- সনৎএর নিজেকে কানেকটেড মনে হয়। আজ সকালের বাসে লোকটা এনারসি, সি এ এ নিয়ে খুব চোপা করছিল, সনৎ কিছু বলে নি- জানলার বাইরে তাকিয়ে রাস্তা দেখছিল আপাতনিস্পৃহ, অথচ কান ছিল সজাগ- যেন লোকটার রেসের ঘোড়াকে চিনে নিতে চাইছে। মালটা হঠাৎ টপিক চেঞ্জ করে বিক্রম আর প্রজ্ঞান তুলতে ওর মাথা গরম হয়ে গেল। যেন লোকটা নিয়ম ভেঙে দুটো ঘোড়ার ওপর বাজি ফেলেছে - যার মধ্যে একটা সনতের -যার ওপর বাজি ধরার আর কারোর এক্তিয়ার নেই। নিজের ঘোড়ার পিঠ থেকে লোকটার হাত সরাতে মরিয়া হ'ল সনৎ-“মহাকাশের তুই কী বুঝিস?”
চার রঙের উপপাদ্য - বসন্ত-১ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৬ নভেম্বর ২০২১ | ১৯৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বেগুন ভাজার গন্ধে ঘরের পরিবেশ সহজ হয়ে আসছিল। টিউব লাইটের আলো ঘরময়, বারান্দার আলোর নিচে টবের ক্যাকটাস; কুন্তী, গুলগুলে সোফায় গোল্লা পাকিয়ে ঘুমোচ্ছিল, পুরোনো সব ছবির আড়াল থেকে মুখ বের করছিল গায়ে ছিট ছিট টিকটিকি- এই সব মুহূর্তগুলো অদ্ভূত- মিঠুর খিদে পাচ্ছিল আবার; মনে হচ্ছিল, যেন কিছুই ঘটে নি, যেন এ যাবৎ মৃত লোকজন বেঁচে বর্তে আছে- যেন অফিসফেরতা ট্রেন থেকে নেমে কমলালেবু, সন্দেশ কিনছে স্টেশনের কাছে, একটু পরেই বাড়ি ঢুকবে কড়া নেড়ে। বারান্দা থেকে মুখ বাড়ালেই যেন দেখা যাবে, মাণিক বেগুন বিক্রি করছে কুপি জ্বেলে। মুড়ি খাচ্ছে। মায়া জমছিল মিঠুর গলায়।
চার রঙের উপপাদ্য - বসন্ত-২ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৩ নভেম্বর ২০২১ | ২৪৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
লিপির ভালো লাগছিল এই নতুন ধরণের শনিবারগুলো- কত রকম ঘর দোর হয়; ঝাঁ চকচকে নতুন বাড়ি হয়তো - সে সব ঘরে ঢুকতেই রঙের গন্ধ পাওয়া যায়, নিঝুম সাদা দেওয়াল ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে থাকে লিপিদের দিকে; আবার কিছু বাড়ি যথাবিহিত প্রাচীন, কাঠের মেঝেয় পেরেক উঠেছে, খেয়াল করলে দেওয়ালে হাইট চার্ট দেখা যায়- পেন্সিলের রেখা আবছা হয়ে এসেছে যদিও; পিছনের ঘাসজমিতে রঙ চটা কেনেল, লাল নীল বল, ঝুপসি গাছে লম্বাটে ফল ধরে আছে - কত কী ভেবে বাড়ি করে মানুষ, তারপর বেচে দেয়-
চার রঙের উপপাদ্য - বসন্ত-৩ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২০ নভেম্বর ২০২১ | ১৬৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ফুটপাথ থেকে নেমে রাস্তায় পা রেখেছে দু সেকন্ড, রাস্তা পেরোবে; ডান দিক থেকে গোঁ গোঁ করে ছুটে এল কালো গাড়ি , প্রচন্ড স্পীডে টার্নিং নিতে কাত হয়ে গেল একদিকে, বিকট শব্দে ধাক্কা খেলো ফুটপাথে তারপর উল্টে গেল। চোখের নিমেষে রেলিংএ হাত রেখে রাস্তা থেকে পা তুলে নিয়েছিল প্রফুল্ল, মরচে ধরা রেলিংএ হাতের তালু রেখে শরীরের ভার ট্রান্সফার করেছিল চকিতে ,ঝাঁপ খেয়ে ফিরে এসেছিল ফুটপাথে। শরীর কাঁপছিল প্রফুল্লর- নাথু, কপিল ছুটে এসেছিল। গাড়ির দরজা ভেঙে গিয়ে ড্রাইভারের সীট থেকে পিছলে বেরিয়ে এসেছিল মৃত আরোহী। বিচূর্ণ শকট , থ্যাঁৎলানো মাথা , রক্তে ভেজা ফুটপাথ দেখতে ভীড় জমছিল এই সকালেই।
"পাঁড় মাতাল শালা। মেয়েছেলে নিয়ে ফূর্তিতে বেরিয়েছিল" - দাঁতন করতে করতে কে যেন বলল।
চার রঙের উপপাদ্য - বসন্ত-৪ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৭ নভেম্বর ২০২১ | ১৮৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এখন সূর্য পাটে বসছিল। স্মিতা বিকেল থেকেই পুকুরের পাশে বসে আছে। বাবলুদারা এখনও ফেরে নি। একটা মানুষের পুড়ে যেতে কতক্ষণ লাগে স্মিতা জানে না। অস্থিরতা কমাতে সে জলের কাছে বসেছিল। রোদ কমে আসায় জলের রঙ ঘন সবুজ এখন।পাখির ছানা টুই টুই টুই টুই করে ডাকছিল- সকালের সে কী না কে বলবে? ভাঙাচোরা ইঁটের গাঁথনির ওপর কালো পিঁপড়ের সারি- স্মিতা যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে এ যাত্রার শুরু বা শেষ কিছুই দেখা যায় না, যেন এক অনন্ত ক্যারাভ্যান। স্মিতার পায়ের কাছে দু চারটে ফাটা নিমফল- পিঁপড়ের সারি নিমফলের পাশ কাটাতে সামান্য বেঁকে যাচ্ছিল যেখানে, স্মিতার চটি পরা পায়ের পাতা তার খুব কাছে। স্মিতা ওর পায়ের পাতা পিঁপড়ের লাইনের একদম ওপরে নিয়ে আসছিল, সরিয়ে নিচ্ছিল পর মুহূর্তে- অনিত্যতাকে স্পর্শ করতে চাইছিল এইভাবে, সম্ভবত।
চার রঙের উপপাদ্য - গ্রীষ্ম-২ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১১ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৫২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
গ্রীষ্মের রাতে নদীর দিক থেকে হাওয়া বাতাস খেলে যায় শহরের বুকে। মল থেকে বেরিয়ে তিনবারের চেষ্টায় সিগারেট ধরালো পঙ্কজ। পার্কিংএর দিকে হাঁটল। গাড়ির দরজা খুলতে যাবে, যেন হাওয়া ফুঁড়ে বেরিয়ে এল এক মূর্তি- ফাটা জুতো, মলিন জামা প্যান্ট, গোঁফ দাড়ি, লম্বা চুল- মুখ থেকে ভকভক করে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, একহাত পঙ্কজের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, অন্যহাত পিছনে। পঙ্কজের হৃদয়ের বরফ আতঙ্কের উত্তাপে গলতে শুরু করেই আবার জমাট বেঁধে গেল। পার্কিং লটের আলোয় লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল, যে নিরানন্দ জগত থেকে আগত একমাত্র মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে , এ লোক সেই জগতেরই কেউ। এই আলোয়, এই নিয়ন সাইনের নিচে যাকে মানায় না। পঙ্কজের সামনে দাঁড়িয়ে হাত পাতল সেই লোক।
চার রঙের উপপাদ্য - গ্রীষ্ম-৩ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ | ২১৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সদর দরজা দিয়ে ঢুকে উঠোন, বড় চৌবাচ্চায় টাইম কলের জল আসছে- উঠোন থেকে দু ধাপ সিঁড়ি, তারপর দোতলার মতই টানা বারান্দা, পর পর ঘর- কোনো ঘরের দরজা খোলা- ফ্যানের হাওয়ায় পর্দা উড়ে আসছিল বারান্দার দিকে। পাশাপাশি দুটো বন্ধ দরজা একতলায়, বারান্দার দিকের জানলার পাটও ভেজানো। প্রফুল্ল তাকিয়ে আছে- কপাল বেয়ে ঘাম নামছে, মাথা চুলকোচ্ছে আর চোখ পিট পিট করছে; একটা দরজা খুলে গেল আচমকা - ফ্যানের হাওয়ায় পর্দা উড়ে গেল অনেকখানি- প্রফুল্ল তখন একটা মেয়েমানুষ দেখ্ল সেই ঘরে- স্রেফ শায়া পরা মেয়েমানুষ- ঘরের ভেতর থেকে বারান্দার দিকে আসছিল যেন। এক ঝলক দেখতে পেয়েছিল- প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে গেল কপাট ।
চার রঙের উপপাদ্য - গ্রীষ্ম-৪ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৩০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বিক্রম চাঁদে পৌঁছে গেলে, মিঠু ফিরে আসবে - এ ধারণা সনতের মনে বদ্ধমূল হচ্ছিল দিন দিন। ধারণার গোড়ায় কোনো শিকড়বাকড় নেই- সনৎ সেদিকে চোখ ঠেরেছিল বরং আগায় ঝুলে থাকা ফুল ফলের সম্ভাবনাকে আঁকড়ে ধরছিল- যতই সে' সম্ভার তার দিকে নুয়ে আসছিল; তাদের স্বাদে গন্ধে ক্রমশ সে গোড়ার কথা বিস্মৃত হচ্ছিল, চন্দ্রযানের লঞ্চিংএর জন্য নিজেও প্রস্তুত হচ্ছিল - একটা বড় উৎসবের আগে যা করে মানুষ। লঞ্চিংএর ডেট জুলাই মাসের চোদ্দোই । সনৎ ঐ সময় দুদিন ছুটি নিয়ে নিল। নিজের বিয়ের কথা মনে হচ্ছিল সনতের। যেন বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে, কার্ড ছাপা হচ্ছে, সনৎ লজ্জা লজ্জা মুখে অফিসে ছুটির অ্যাপ্লিকেশন দিচ্ছে। সে ইদানিং সর্বত্র এই উৎসবের প্রস্তুতি দেখতে পাচ্ছিল যেন।
চার রঙের উপপাদ্য - বর্ষা-১ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০২ জানুয়ারি ২০২২ | ২৪০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
শনিবার বাড়ি থেকে সরাসরি ডাক্তারের কাছে গিয়েছে মিঠু। বিপ্লব আর ছন্দা ওর সঙ্গে আজ; ফেরার পথে কেনাকাটা র প্ল্যান রয়েছে- পুজোর বাজার এখনই শুরু না করলে পরে বড় ভীড় হয়। আল্ট্রাসাউন্ড, এন্ডোস্কোপি হয়ে গিয়েছিল; টিস্যু স্যাম্পল কালেকশন হয়েছে । সমস্ত রিপোর্ট এখন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের কাছে।
আজও সেই কনকনে ঠান্ডা চেম্বার, অপেক্ষারত জনা পনের মানুষ, চশমা চোখে ছেলেটি আর তার কমপিউটার-ঘড়ির কাঁটা টিকটিক ঘুরছিল।
-সেদিনও এতক্ষণ তোকে বসতে হয়েছিল?
-হ্যাঁ
"একা একা বসে ছিলি-ইশ, বড্ড স্লো না এই ডাক্তার" ছন্দা বিজবিজ করল।
-স্লো কেন? যত্ন করে পেশেন্ট দেখেন- সময় লাগে।
-বেশি দেরি হলে, আজ আর কেনাকাটা হবে না, সব বন্ধ হয়ে যাবে। শনিবার না?
পাঁচ নম্বরে ডাক পড়ল মিঠুর।
ডাক্তার আজ গম্ভীর। মাথা নামিয়ে মিঠুর রিপোর্ট দেখছিলেন।
"সব রিপোর্ট এসে গেছে" এই বলে সামান্য থামলেন ডাক্তার
"ভালো তো সব?" ছন্দা আগ বাড়িয়ে বলল।
মুখ তুলে তাকিয়ে চশমা ঠিক করলেন ডাক্তার।
চার রঙের উপপাদ্য - বর্ষা-৩ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৫ জানুয়ারি ২০২২ | ১৭৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ ভারি হয়ে নেমে আসছিল বয়েজ হাইস্কুলের ওপরে। দু ঘন্টা ধরে সাহেবগলি বয়েজ হাইস্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে সাহিল - উঁচু পাঁচিল ঘেরা কম্পাউন্ড, জং ধরা সবুজ গেট বন্ধ রয়েছে। পেল্লায় গেট চোখে পড়তেই সাহিলের মনে হয়েছিল, একজন বুড়ো মানুষকে টুলে বসে থাকতে দেখবে।অথচ ধারে কাছে একজনও নেই। বস্তুত বিকেল চারটেয় একটা স্কুলের সামনে যা যা চোখে পড়ার- সে সব কিছুই দেখতে পাচ্ছে না সাহিল। উপরন্তু ঘন কালো মেঘ নেমে আসছিল মাথার ওপর- মনে হচ্ছিল, সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে । সাহিল ফটক ঝাঁকাল, জোরে জোরে ধাক্কা দিল ,তারপর সবুজ দরজার খুব কাছে গিয়ে কান পাতল- সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ ওদিকটা। বড় ফটকের একপাশে আয়তাকার ছোটো দরজা- ঠেলাঠেলি করেও খুলতে পারল না সাহিল।
চার রঙের উপপাদ্য - বর্ষা-২ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৮ জানুয়ারি ২০২২ | ১৯৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লরেল মুখ খুলল প্রথমে – “লুক, উই অল নো হাউ গ্যাব্রিয়েলা ট্রিটেড সীতা। আমরা এইচআর-কে ডিসক্রিমিনেশনের কেস হিসেবে ব্যাপারটা জানাতে চাই। আর স্টিভ বলছিল, গ্যাব্রিয়েলা সীতাকে কিছু স্যাম্পল হ্যান্ডল করতে দিয়েছিল, যেগুলো হ্যাজার্ডাস। স্টিভের কাছে লিস্ট আছে। আমরা জানি না কীভাবে অ্যাপরোচ করা উচিত। উই নিড ইয়োর হেল্প হিয়ার লিপি। প্লিজ একটা ড্রাফট করে দাও।
লিপি এক সেকেন্ডও সময় নিল না, সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ল।
“বোসো। লিখে দিচ্ছি। লিস্টটা আছে, স্টিভ?”
“কাজকর্ম ফেলে কী হচ্ছে এখানে?” দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকেছিল গ্যাব্রিয়েলা – লরেল, স্টিভ, মেরির সুপারভাইজর। লিপির দিকে আঙুল তুলে বলেছিল – “ব্লাডি ইন্ডিয়ান, লোক খ্যাপাচ্ছ?”
চার রঙের উপপাদ্য - বর্ষা-৪ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২২ জানুয়ারি ২০২২ | ২১৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
স্মিতা এই অঞ্চলের পথঘাট চেনে না। ধনঞ্জয়কে সঙ্গে নেবে ভেবেছিল একবার; পায়েলও বলছিল – “এই বৃষ্টিতে যেও না দিদি।” শেষ অবধি একলাই বেরোল – একটা ট্যাক্সি নিয়ে সটান সাহেব-গলি। ধনঞ্জয় বলেছিল, “গলির ভেতরে একটা পোস্টাপিস আছে, ভাই বলছিল – ওখানে জিজ্ঞেস করলে কিছু জানা যেতে পারে।” ক্লাস সেভেন-এইট অবধি পঙ্কজরা এ’পাড়ার ভাড়া বাড়িতে, তারপর শহর বদলেছিল – স্মিতা এইটুকুই জানে। আজ এই বৃষ্টিতে অচেনা গলিঘুঁজিতে এলোপাথাড়ি ঘুরে সে পঙ্কজের অতীতকে খুঁজে পাবে না – নিজেও বোঝে। তবু সে সাহেব-গলিতে আসার ডিসিশন নেয় গতরাতে।
চার রঙের উপপাদ্য - শরৎ-১ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ২৬৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
শরতের আকাশে যথারীতি হাল্কা নীলের উজ্জ্বলতম শেড সকালের দিকে – ত্যারছা রোদ এসে জবার টবে পড়েছে আপাতত, ঘুরে ঘুরে অন্য গাছের কাছে যাবে বেলা বাড়লে। এই একফালি রোদটুকু যেন মিঠুর ডাস্টার – যেন ক্লাসরুমের ব্ল্যাকবোর্ডে বড় করে লেখা আছে ক্যান্সার, লেখা আছে মৃত্যু, হাড়গোড়, নরকঙ্কাল – এই সব আঁকা রয়েছে যেন – দুষ্টু ছাত্ররা যেমন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে বোর্ডে অকথা-কুকথা লেখে – কোনো শিক্ষক রিঅ্যাক্ট করেন, কেউ নির্লিপ্ত মুখে মুছে দেন, যেন কিছুই হয়নি – সকালের এই রোদ, এই নীল রঙ হাতে নিয়ে মিঠু সব মুছে দেয়, নতুন কিছু লিখবে বলে চক নেয় হাতে; রোদ চড়া হলে ছাদের দরজা বন্ধ করে নিচে নামে। সিঁড়িতে ওর চটির শব্দ হতেই ছন্দা এসে ল্যান্ডিং-এ দাঁড়ায়, তারপর মিঠু শেষ ধাপে পৌঁছলে, ওর দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায়। ছন্দার চোখে বিষণ্ণতা আর টেনশন চিরকালই, এখন সে’ চাহনিতে ভয়কে খুঁজে পাওয়া যাবে খুব সহজে। ইদানিং মা’র চোখে চোখ রাখলে প্রবল শোককেও চিনতে পারে মিঠু – সে যে তার মায়ের সামনে জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে, ছন্দা যেন তা বিস্মৃত হয়; ওর মনে হয়, ছন্দা যেন সিঁড়ির ধাপের নিচে দাঁড়িয়ে ঘোলা চোখে মিঠুর শব দেখছে।
চার রঙের উপপাদ্য - শরৎ-২ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৭৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
অফিসের কাছাকাছি একটা ট্রাফিক সিগনালে রোজ দাঁড়াতে হয়। অভ্যাসের বশে দাঁড়িয়ে পড়ল সেখানে, অথচ আজ সিগনালের রঙ সবুজ। একশ’ কিলোমিটার স্পিডের রাস্তায় সবুজ আলোয় দাঁড়িয়ে পড়েই বুঝল – ভুল করেছে, তবু, শোধরানোর চেষ্টা করল না, দাঁড়িয়েই রইল, দাঁড়িয়ে রইল ঠায় – যেন সে চলচ্ছক্তিহীন; চোখ যতদূর যায়, ঢালা পিচরাস্তায় খণ্ড খণ্ড জলতল, বাষ্প উঠছে সেখান থেকে। পঙ্কজ তার ভাগ্যের কাছে নিজের হৃৎপিণ্ড বন্ধক দিয়ে বসে রইল – যা কিছু ঘটে যেতে পারে এই মুহূর্তে – হয়তো একটা কলিশন, হয়তো চুরচুর হয়ে যাবে গাড়ি, তালগোল পাকিয়ে যাবে পঙ্কজ নিজে – শেষ হয়ে যাবে সব।
চার রঙের উপপাদ্য - শরৎ-৩ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২১৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সুলভের সামনে কেউ নেই তখন। ভেতরে, মেঝে জুড়ে ভাঙা কাচ। দেওয়াল কাঁপছিল, দরজা, স্কাইলাইট – সব; ঘুলঘুলির সামনে পাখির বাসা মাটিতে ঠিকরে পড়তে তিনটে ডিমই ভাঙল। বাথরুমে ঢুকে কল খুলল প্রফুল্ল – লালচে জল চড়বড় করে পড়ছিল বালতির ভিতর। তারপর প্রফুল্লর চোখের সামনে কলের মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে জল বেরল, চিড় ধরল দেওয়ালে। পাশের স্নান করার খোপ থেকে জল বেরিয়ে আসছিল গব গব করে, মাথার ওপরে ছাদের আস্তর খসে পড়ল এইবার; জাহাজ তাহলে গলিতে ঢুকেছে – সাবান-মাখা, আদুল-গা প্রফুল্ল দৌড় মারল মন্দিরের দিকে।
চার রঙের উপপাদ্য - শরৎ-৪ : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৫৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
সনতের ঘাড় মাথা পিঠ টনটন করছিল; চোখ লাল, মাথা ধরে আছে। কাল থেকে ডেস্কটপে ইসরোর সাইট আর টিভির স্ক্রিনে নজর রেখে যাচ্ছে অবিরাম। মন্টুর মা সকালে লুচি আর মোহনভোগ করেছিল, তারপর রান্না করে খাবার বেড়ে রেখে গেছে দুপুরে। এই মধ্যরাতে সেই বাড়া ভাত, আর মাছের ঝোল থেকে আঁশটে গন্ধ সনতের ঘরদোরে ছড়িয়ে পড়ছিল। পিঁপড়ে ধরেছিল বাসি লুচি, মোহনভোগে। গালে হাত বোলাল সনৎ – খোঁচা খোঁচা দাড়ি; ল্যান্ডিং হয়ে যাক, কালই সেলুন যাবে, চুল কাটবে, ফিটফাট হয়েই মিঠুর বাড়ি।
কুহক : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৮ অক্টোবর ২০২২ | ২২১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার ঠিক আগে মানুষ একটা ছবি হাতে নেয়; ফ্রেম থেকে খুলে, হাতের মুঠোয় পাকিয়ে ফেললে গোটানো ক্যানভাসকে রিলে দৌড়ের ব্যাটনের মত লাগে । তারপর কোথাও হুইশল বাজে, ব্যাটন হাতে সে এবার এক পা দু পা করে পিছু হটতে শুরু করে; একটু থামে , হাতের ছবি খুলে কিছু দেখে, পিছোয় আবার; তারপর হাঁটার গতি বাড়ে, একটা সময় স্প্রিন্ট টানে সে , উল্কার বেগে সম্পর্ক থেকে বহু দূরে চলে যায়। প্রতিটি শেষ হওয়া সম্পর্কের সঙ্গে একটা করে ছবি থাকে - আমার এরকম মনে হয়; ফ্রেমহীন ছবি সব - হয়তো পুরোনো সম্পর্কের ওয়াটার কালার - লাল রঙে চুবিয়ে তোলা, কিম্বা পরের সম্পর্কের ঝকঝকে প্রিন্ট- গ্লসি ফিনিশ; অথবা হয়তো গোটাটাই অ্যাবস্ট্রাক্ট - একটা অবয়ব হয়তো, আপাতদৃষ্টিতে যাকে মনে হয় নৃত্যরত মানুষ, ডানা ঝাপটানো রাজহাঁস, ছুটন্ত ঘোড়া - কেশর উড়ছে; অথবা জাস্ট অন্ধকার, পিচ ডার্ক শূন্যতা।
ট্রফি : ইন্দ্রাণী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
Tame birds sing of freedom, wild birds fly....
হাওয়াবিহীন দিনগুলিতে আকাশকে চুপসানো বেলুনের খণ্ড মনে হয় - ফ্রেমে আটকানো; যেদিন বাতাস ওঠে, নীল বেলুনের টুকরো ঢাউস শামিয়ানা হয়ে উড়তে থাকে, মেঘ আর ডানারা মোটিফ তৈরি করে - সাদা কালো লাল নীল মেঘ ছেনে ছোটো ডিঙি, বড় বড় পালতোলা নৌকো, বিশাল সব দুর্গ, হাতি, উট আর বুড়ো মানুষ। তার ওপর ঘুড়িরা লাট খায়, জেট চলে যাওয়ার ঘন সাদা লাইন ফিকে হতে হতেই একগুঁয়ে উড়োজাহাজরা উড়ে যায় আচমকা। পাখিরা চক্কর কাটে আর চক্কর কাটে, শেপ ফর্ম করে - ভি, ওয়াই, এম, এ, ডব্লিউ; কখনও তারা মানুষের কাছাকাছি নেমে আসে এমন, যেন ডানার কথা ভুলেই গিয়েছে। ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখি- ডান হাত মাথার নিচে, বাঁ হাত শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে, কাঁধের খুব কাছেই চেটো- তাতে তিনটে আঙুল। যেন ডানা। আমি হৃদয়রাম, পঁয়ত্রিশ বছরের এক্ট্রোড্যাকটাইলি পেশেন্ট। উড়তে পারি না অথচ বাঁ কাঁধে কারো হাত ঠেকলে খাঁচায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় পাই।
আসলে এ'সবই ডানার গল্প।