এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • প্রাণগোপাল

    ইন্দ্রাণী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৩ জুন ২০১৯ | ১৩৭৫ বার পঠিত
  • রাস্তার আলো সামান্য ত্যারছা হয়ে লিপির শরীরে পড়েছে; ওর লম্বা ছায়া সরু গলির ওদিকের ফুটপাথ পর্যন্ত নিতান্ত অদরকারি ভাঙাচোরা এক সাঁকো তৈরি করেছে তার ফলে। এখন গভীর রাতে বড়রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ প্রায় নেই। একটা দুটো হেডলাইট লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে ওদের পাড়ার দিকে আসছে; সে আলোয়, ছায়ার সাঁকো ভেঙে গিয়ে নদী হয়ে যাচ্ছে, তারপর আবার জুড়ছে, ভাঙছে, আবার জুড়ে যাচ্ছে। মাঘের হাওয়া লিপির মুখের বাঁদিক কেটে নিলেও ছায়া নির্বিকার । ফলে লিপির নিজেকে আরো একা লাগছে। লিপি দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সামনে, যে বাড়িতে গোপাল, অনিমেষ আর সে ছিল গতপরশু অবধি। এই মুহূর্তে বাড়িতে কেবল লিপি আর গোপালের খাঁচা, অনিমেষ ট্যুরে, আজ ফিরবে। অনিমেষ এখনও শূন্য খাঁচার কথা জানে না। ট্রেনের হুইশল কানে এল লিপির। চাদর দিয়ে আরও ঘন করে কান, মুখ ঢাকল , তারপর নিজেকে নিজেই আঁকড়ে ধরল দু’ হাতে দুই কনুই ছুঁয়ে।

    ফুলশয্যায় অনিমেষ নিজেকে ইন্ট্রোভার্ট বলেছিল প্রথমে। নিজেকে রাগী বলেছিল; ওর তেমন কোনো বন্ধু নেই, বলেছিল সে কথাও। তারপর লিপিকে গোপালের কথা বিশদে বলে। বস্তুত, লিপির বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ার দুমাসের মধ্যে, তাড়াহুড়োয় সম্বন্ধ করে বিয়ে; অনিমেষের মামার বাড়িতে বৌভাত, ফুলশয্যা। নিমন্ত্রিত আত্মীয়স্বজন চলে গেলে , ফুল সাজানো খাটে বসে অনিমেষ বলেছিল- 'গোপালের কথা তোমার জানা দরকার। গোপাল আমার প্রাণ। আর আমার কেউ নেই।'
    ফুলশয্যায় কেঁদে ফেলেছিল অনিমেষ ।
    -' ছোটোবেলায় মা বাবাকে মরে যেতে দেখেছি; মরতে আমার বড় ভয় লিপি। '
    রজনীগন্ধা এবং গোলাপের গন্ধ ছিল ঘর জুড়ে। লিপি অনিমেষকে দেখছিল; ছোটোখাটো নিরীহ মানুষ, মাথার সামনে টাকের আভাস; আঙুলে গ্রহরত্নের আংটি-দু চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। এক অস্পষ্ট আকারবিহীন মায়া ক্রমে ঘন হয়ে উঠেছিল তারপর আচমকা ঘাই দিয়েছিল লিপির বুকে। এই প্রথম , সে তার নতুন বরের হাত ধরেছিল; গত দু'মাসে শোনা আপ্তবাক্যগুলি আউড়ে গিয়েছিল একে একে। প্রথমে বলেছিল-'জন্মিলে মরিতে হবে'। তারপর আবার গলা খাঁকরে বলেছিল-'সেই গল্প জানো তো? এক মুঠো সর্ষে দানার গল্প?' তারপর থেমে গিয়ে আর কী বলবে ভাবতে বসেছিল।
    অনিমেষ কথা বলছিল অনর্গল-' ছোটোবেলা থেকে এই রকম ভয় আমার। তুমি হাসবে শুনলে। একবার তো বুদ্ধদেবের মত তপস্যা করব ভেবে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম । ছোটোমামা অনেক খুঁজে ফিরিয়ে আনে। মামাবাড়িতে ছিল গোপাল। বিশাল কুকুর। সে মারা গেলে আর এক গোপাল এনেছিল মামা মামী। এক রং, এক চেহারা। আমার গোপাল ওদেরই ছেলের ছেলে।'
    লিপির সামান্য গুলিয়ে যাচ্ছিল, বলেছিল- 'সবার নাম গোপাল?'
    -'বড়মামা বলত, 'গোপাল অমর। এক গোপাল গেলে অন্য গোপাল আসবে....এই কথাটায় বড্ড ভরসা হয়েছিল আমার। জানো লিপি? রূপকথায় সেই প্রাণভোমরার গল্প আছে না? ভাবতাম, আমার প্রাণ যেন গোপালের মধ্যে। এক গোপাল গেলে অন্য গোপাল-আমিও মরব না কোনোদিন-এই ভাবে-'
    -'তুমি কী গো! এখনও এরকম ভাবো ?'
    অনিমেষ কেঁপে উঠেছিল।
    -'বড় ভয় করে। রাত হলেই মৃত্যুভয়- সে যে কী আতঙ্ক। অন্ধকার হলেই ....', আবার ফোঁপাচ্ছিল অনিমেষ।
    -'এবার থেকে আর হবে না, দেখো।'
    লিপি বাতি নিভিয়ে দিয়েছিল।

    পরদিন অনিমেষের প্রাচীন বাড়িতে গোপালকে প্রথম দেখে লিপি। সকালে অনিমেষ অন্যরকম। বাড়ির দরজার চাবি ঘোরালে খুলছিল না, নানা কসরতের প্রয়োজন হচ্ছিল। সে’ কসরতে রেগে উঠতে দেখেছিল অনিমেষকে। বাইরে দাঁড়িয়ে অনিমেষ চাবি ঘোরাচ্ছে, দরজা খুলছে না, আর অনিমেষ রেগে উঠছে-গালাগালির স্রোত বইছে মুখে আর সেই সময় বাড়ির ভিতর থেকে গোপালের গর্জন শুনেছিল লিপি। দরজা খুলে যেতেই দৌড়ে ঘরে ঢুকেছিল অনিমেষ- সদর পেরিয়ে দু ধাপ সিঁড়ি দিয়ে উঠেই একটা ঘর-টিভি, প্লাস্টিকের ডাইনিং টেবল, চেয়ার, একটা ডিভান আর এক বিশাল খাঁচায় পেল্লায় জার্মান শেফার্ড। অনিমেষ খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছিল-বিশাল সারমেয় দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে অভিরূপকে জড়িয়ে ধরেছিল-মুখ চাটছিল -অনিমেষ হাত বাড়িয়ে বলেছিল-'মীট মাই ব্রাদার-গোপাল।' তারপর গোপালের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেছিল-'আমার বৌ। তোর বৌদি। প্রণাম কর।' গোপাল মাথা ঘষেছিল লিপির পায়ে-পেট উল্টে শুয়ে পড়েছিল লিপির সামনে।
    অনিমেষ বলেছিল-'আদর করো।' তারপর হেসে বলেছিল-'গোপালের কথা বলছি।'
    লিপি অবাক হয়ে বলেছিল, 'এই ক’দিন ওকে কে দেখল? খেতে দিল কে?'
    -‘পিন্টু ছিল ।পাশের বাড়ির। বৌভাতে এসেছিল, মনে নেই? কেউ বাড়িতে না থাকলে , গোপাল খাঁচায় থাকে। অফিসের দিনে, দুপুরের দিকে পিন্টু এসে খাইয়ে যায়, বাইরে ঘুরিয়ে আনে।তোমার তো মর্নিং স্কুল। খুব বেশিক্ষণ ওকে থাকতে হবে না খাঁচায়। এই জন্যই তোমাকে...'
    এই অবধি বলে অনিমেষ চুপ করে গিয়েছিল। লিপির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিয়েছিল। বলেছিল, 'শুনতে খারাপ লাগলো, না?'
    লিপি মাথা নেড়ে হেসেছিল-' আমিও দেখে নিয়েছিলাম তোমার বাড়ি টাই আমার স্কুলের সব চে' কাছে। '
    অনিমেষ এবারে তাকে দীর্ঘ চুমু খেয়েছিল। আঁকড়ে ধরেছিল ।
    গোপাল খাঁচার ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। দু’ থাবায় মুখ গুঁজে চোখ বুজেছিল।

    লিপির স্কুল খুব ভোরে। সে বাড়ি ফেরার অনেক আগেই অনিমেষ অফিস চলে যায়। লিপি ফিরে খাঁচা খুলে দেয়। তারপর, অনিমেষের ফেরা অবধি এ’বাড়িতে শুধু গোপাল আর লিপি। লিপি রান্না বসায়, উঠানে কাপড় মেলে দড়িতে, আর গোপাল ওর বিশাল শরীর নিয়ে লিপির পায়ে পায়ে ঘরময় ঘুরঘুর করে, কখনও থাবার মধ্যে মুখ রেখে চোখ পিটপিট । গোপালকে খেতে দেয় লিপি, হাঁটতে বেরোয়, কখনও উঠোনের কলে স্নান করালো; হয়তো সোফায় বসে কাগজ পড়ছে লিপি, পায়ের কাছে দুপুরের রোদ- গোপাল ওর কোলে ধপ করে শুলো- হাল্কা রোঁয়া সারাঘরে উড়ে বেড়ালো খানিক, থিতিয়ে গেল মেঝেয়-

    লিপি অনিমেষের মিলনকালে , গোপাল খাঁচায় থাকত।অনিমেষ গোপালের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে যেত-'একটু খাঁচায় থাক। এক্ষুণি আসব। এক্ষুণি।' অতঃপর মিলনপর্ব দ্রুত হ'ত। পাশের ঘরে, খাঁচার ধাতব মেঝেতে গোপালের পাশ ফেরার শব্দ পেত লিপি। অনিমেষ দ্রুততর হত। তারপর দৌড়ে খাঁচার সামনে এসে দরজা খুলে দিত। বিশালদেহী গোপাল অনিমেষের সঙ্গে ওদের ঘরে এসে ঘুমোতো। গোপালের বড় বড় নিঃশ্বাস, পাশবালিশে হাত রেখে অনিমেষ হাল্কা নাক ডাকছে, মাথার ওপর পুরোনো সিলিং ফ্যান ঘুরে চলেছে অবিরাম; রাস্তার আলো অথবা জ্যোৎস্না জানলা দিয়ে ঢুকছে; ঘরময় গোপালের গন্ধ, সিগ্রেটের ঘ্রাণ, পাউডারের বাস - গোপাল, লিপি আর অনিমেষ একেই সুখ বলে চিনেছিল।

    আজ প্রায় মাঝরাতে স্ট্রীটলাইটের তলায় দাঁড়িয়ে লিপি অনিমেষকে কী বলবে ভাবছিল। গত দুই রাত সে নিজেকেই দোষী বলে ভেবেছে, প্রতিটি মিনিট প্রতিটি সেকন্ড অপরিমেয় গ্লানি তার শোককে ছাপিয়ে গিয়েছে। গত পরশুও এমনই শীত পড়েছিল। রাতে গোপালকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিল লিপি। রোজকার রাতের হাঁটা- গলি পেরিয়ে বড় রাস্তার ফুটপাথ ধরে এক চক্কর দিয়ে বাড়ি। গোপাল বরাবরই হাঁটায় উৎসাহী, লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিল-তাল রাখতে লিপির সামান্য হাঁফ ধরছিল সেদিন। বড় রাস্তায় ট্রাক, রুটের বাস, অটো- গোপালের গলার বকলস আর শিকলির জোড় আলগা হয়ে গিয়েছিল সম্ভবতঃ বহুদিন। সেদিনই ছিঁড়ে গেল। ভারি ট্রাক এসে পড়ল তখনই। লিপির হাতে ধরা শিকলিতে তখনো গোপালের বকলশ ঝুলছে। এক মুহূর্তে নেই হয়ে গিয়েছিল গোপাল।

    অনিমেষ সচরাচর রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে আসে। গোপাল বহুদূর থেকে ওর গন্ধ পেয়ে ডেকে উঠত। সেই ডাক শুনে ভৌ ভৌ করে দৌড়োদৌড়ি করত গলির কুকুর, তারপর বড় রাস্তার কুকুররা ডেকে উঠত -মেক্সিকান ওয়েভের মত কুকুরের ডাক পৌঁছত অনিমেষের কানে। গলি টুকু প্রায় দৌড়ে ঢুকত বাড়িতে। গোপাল দু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে মুখ চাটত অনিমেষের। লিপি ততক্ষণে ভাত বসিয়েছে।
    আজ পাড়া নিশ্চূপ, গলি শুনশান -শুধু আলোর তলায় লিপি একলা দাঁড়িয়ে । লিপির দাঁড়ানোর ভঙ্গী, ওর কান মুখ ঢাকা শাল, ওর দীর্ঘ ছায়া, মাথার ওপর ঝাঁক বেঁধে আসা মশা অনিমেষকে যেন সমস্ত বলে দিল এক মুহূর্তে। এমনকি অনিমেষ যেন লিপির হাতের হাতের ছেঁড়া শিকলিও দেখতে পেল যাতে গোপালের বকলশ ঝুলে রয়েছে। হাতের ব্যাগ নামিয়ে রেখে অনিমেষ বলল-
    -'কখন? কষ্ট পেয়েছিল?'
    -'ঘরে চলো'। লিপি বলেছিল শুধু।

    বাড়িতে ঢুকে থমকে দাঁড়ালো অনিমেষ, ডুকরে উঠলো খালি খাঁচার সামনে। একটু ঝুঁকে জুতোর ফিতে খুলল তারপর হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে গেল খাঁচায়। গোপালের মতই লাগছিল অনিমেষকে-জামা প্যান্ট বেল্ট আর মোজা পরা গোপাল যেন গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদছে আর হামাগুড়ি দিচ্ছে। খাঁচার মেঝেতে, লোহার জাফরিতে হাত বোলাচ্ছিল অনিমেষ ।
    -'গোপাল এখান থেকে আমাদের দেখত। কত বড় লাগছে ঘরটা, দ্যাখো লিপি-কত বড়। আমরা শুধু দুজন এই অ্যাতো বড় ঘরে। অ্যাঁ! আমরা দুজন শুধু-'
    লিপি খাঁচার পাশে বসল, গরাদের ফাঁক দিয়ে অনিমেষের আঙুল ধরার চেষ্টা করল প্রথমে তারপর নিজেও ঢুকে গেল খাঁচায়। অনিমেষের পাশে বসে লিপি দেখছিল- কত কত উঁচুতে উঠে গেছে এতকালের ছাদ, ফ্যানের ব্লেডে যেন জন্মের ঝুল কালি, দেওয়ালে অনিমেষের মা বাবা, ক্যালেন্ডারের পিছন থেকে ঐ সরে গেল টিকটিকি, দরজার মাথায় মাকড়শার জাল, ঘড়ির কাঁটা টক টক টক আওয়াজ করে ঘুরেই চলেছে, ঘুরেই চলেছে - সুখের প্রলেপ মুছে গিয়ে ওদের প্রতিদিনের ঘরদুয়ার মলিন আর জীর্ণ দেখাচ্ছে। খাঁচা থেকে বেরোনোর কথা ভাবল না দুজনের কেউ । ধাতুর শক্ত মেঝেতে গোপালের পুরোনো তোয়ালে পাতা-শোকে অশ্রুতে মাখামাখি হয়ে পাশাপাশি শুয়ে রইল দুজনে। গুটিয়ে এইটুকুনি হয়ে। লিপি ওর গায়ের চাদর বিছিয়ে নিল দুজনের ওপর।
    শেষ রাতে অনিমেষ চাদর সরিয়ে দিল, সার্ট খুলল তারপর গেঞ্জি খুলে ছুঁড়ে ফেলল, খাঁচার মেঝে ছেঁচড়ে তা গুটিয়ে গেল এক কোণে-যেন ছোট্টো গোপাল-সাদা, শুধু কোমর আর নাকের কাছে ছোপ ছোপ-অনিমেষের ঘামের দাগ। অনিমেষ উঠে এল লিপির ওপর।
    -'এভাবে বাঁচতে পারব না, লিপি। কেউ তো নেই-দ্যাখো কেউ ডাকছে না, কোথাও কোনো শব্দ নেই-উফ কী অন্ধকার-
    -'আমি তো আছি। গোপাল আসবে। আবার আসবে। আমাদের গোপাল -তোমার আমার গোপাল। কী? আসবে না?'
    -'কেউ থাকবে না। আমি না, তুমি না, যে আসবে, সেও না-কী হবে? কী হবে লিপি? আমার যে ভয় করে। সব ছেড়ে চলে যাই চলো। যাবে? বোধিবৃক্ষ কোথায় জানো লিপি? জানো তুমি?'
    লিপিকে আঁকড়ে চীৎকার করছিল অনিমেষ।

    পাখি ডাকছিল। খাঁচার বাঁদিকের দরজা দিয়ে ভোরের রোদ ঢুকেছে। লিপির ঘুমন্ত মুখ , গ্রীবা, স্তন সোনালী আভায় অপার্থিব। গলিতে সাইকেলের বেল , রিক্সার হর্ন, কুকুর ডেকে উঠল; বড় রাস্তা থেকে গাড়ির আওয়াজ আসছিল। এফ এমে আমি যামিনী তুমি শশী হে বাজছিল। পিন্টুদের রান্নাঘর থেকে ডালে ফোড়ন দেওয়ার ঝাঁঝালো ঘ্রাণ এলো জানলা দিয়ে।
    খাঁচার অন্য দিক তখনও রোদহীন , সেখানে গোপালের ঝরা রোম, গোপালের লালার দাগ, কুঁকড়োনো গেঞ্জি, এবং প্রবল শৈত্য। খাঁচার গরাদে বরফ জমেছে যেন।

    অনিমেষ দোটানায় ছিল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১৩ জুন ২০১৯ | ১৩৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ১৫ জুন ২০১৯ ০৪:১৭78730
  • উফফ!

    কিন্তু ... কিন্তু একাটু কি তাড়াহুড়ো করে লেখা?

    "বস্তুত, লিপির বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ার দুমাসের মধ্যে, তাড়াহুড়োয় সম্বন্ধ করে বিয়ে; অনিমেষের মামার বাড়িতে বৌভাত, ফুলশয্যা। নিমন্ত্রিত আত্মীয়স্বজন চলে গেলে , ফুল সাজানো খাটে বসে অনিমেষ বলেছিল- 'গোপালের কথা তোমার জানা দরকার। গোপাল আমার প্রাণ। আর আমার কেউ নেই।'
    ফুলশয্যায় কেঁদে ফেলেছিল অনিমেষ ।
    -' ছোটোবেলায় মা বাবাকে মরে যেতে দেখেছি; মরতে আমার বড় ভয় লিপি। '"

    বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ার দুইমাসের মধ্যে বিয়ে। বাকী গল্প দেখে বুঝাছি বাবা ঐ দুইমাসের মধ্যেই গত হয়েছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে অনিমেষের "ছোটোবেলায় মা বাবাকে মরে যেতে দেখেছি" টা একটু অসংলগ্ন। বিয়ের বয়স হওয়া ঠিক ছোটবেলা নয় তো।

    এরপর

    "অনিমেষ খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছিল-বিশাল সারমেয় দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে অভিরূপকে জড়িয়ে ধরেছিল-মুখ চাটছিল -অনিমেষ হাত বাড়িয়ে বলেছিল-'মীট মাই ব্রাদার-গোপাল।'"

    অভিরূপ নয় অনিমেষ।
  • i | ***:*** | ১৫ জুন ২০১৯ ০৫:১৩78731
  • এবছরের ৩টে গল্পই অসম্ভব তাড়াহুড়োয় লেখা। কী আর করা যাবে। যাই হোক, অভিরূপ / অনিমেষ এর গন্ডগোলটা একজন ধরিয়েও দিয়েছিলেন -তাও ঠিক করতে পারি নি, মানে নিজেই খুঁজে পাই নি। পরের সংস্করণে ঠিক করে নেব। ঃ)
    তবে , ছোটোবেলায় মা বাবাকে মরে যেতে দেখা'টা অনিমেষের নিজের মা বাবা প্রসঙ্গে-মানে সে শৈশবে পিতৃমাতৃহীন। ওদিকে, লিপি তার বিয়ের আগে পিতৃহীন হয়েছে সম্ভবতঃ।

    সময় সুযোগ পেলে সবাই যদি পড়েন ও ভালো মন্দ দ্বিধা দ্বন্দ্ব জানান, আমার নিজের সমালোচনা তার পরে করব।
  • | ***:*** | ১৫ জুন ২০১৯ ০৭:৪৫78732
  • আচ্ছা এটা পাঠকের অসতর্কতা তাহলে। দুঃখিত।

    আরো একটা কথা মনে হয়েছে, কিন্তু সেটা আরেকবার না পড়ে লিখবো না।
  • hu | ***:*** | ১৫ জুন ২০১৯ ১১:৫০78733
  • বাবা-মা মরে যাওয়ার ব্যাপারটা অসংলগ্ন লাগেনি। বোঝা গেছে।

    অদ্ভুত ভালো লাগল। পড়ব বলে আসিনি। পড়িয়ে নিল।
  • dd | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৯ ০২:৫২78734
  • একে তো ছোটাই'এর ল্যাখা, তায় পুরো গল্পোটাই এক কুকুর নিয়ে - আমার তো ভালো লাগবেই। লেগেওছে।

    কিন্তু, কিন্তু, লাস্ট লাইনটা ..... কী রকম যেনো, সেরম impact হোলো না। (দু বার করে পড়লাম কিন্তু)
  • dd | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৯ ০২:৫৩78735
  • আর গল্পো লেখার জন্য তাড়া কীসের, আর হুড়োটাই বা ক্যানো ?
  • dc | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৯ ০৪:৪৩78736
  • লেখাটা ভালোও লাগলো আর দুয়েকটা পুরনো কথাও মনে পড়লো। আমার পিসতুতো দাদার বাড়িতে একটা জার্মান শেফার্ড ছিলো, নাম ছিলো লুসি। আমি আর আমার দাদা একেবারে বন্ধুর মতো ছিলাম (এখনও আছি), আর লুসি ছিলো আমাদের কমন ফ্রেন্ড। আমি ওদের বাড়ির গলিতে ঢুকলেই লুসি পাড়া কাঁপিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করতো, আর ওদের বাড়িতে ঢুকলেই এসে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। তারপর দুজন মিলে এক চোট কুস্তি করে উঠে অন্য সবার সাথে কথা বলতাম। আস্তে আস্তে লুসির বয়েস এলো, তারপর এক সময়ে ডাক্তার দেখানোর কথা হলো। দাদা আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেছিল, দুজন মিলে কাঁধে করে লুসিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম। তারও কিছুদিন পর লুসি মরে গেল।
  • | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৯ ০৪:৪৪78738
  • আচ্ছা এই শেষের লাইনটা 'অনিমেষ দোটানায় ছিল' অত্যন্ত লোডেড মনে হয়েছে। কিন্তু আগের অংশ যেন ঠিক সেই লোডটা নেবার জন্য তৈরী মনে হয় নি। দোটানা কেটে গেলে রোদের দিকেও হতে পারে অন্ধকারের দিকেও ( একক হলে ঠিক অন্ধকারটা বাছত)। কিন্তু... দৈনন্দিন সব শব্দ গন্ধ সত্ত্বেও কেমন যেন ঠিক অভিঘাত আসছে না মনে হল।
  • শিবাংশু | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৯ ০৭:৩২78737
  • স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি এই লেখকের কোনও লেখা পড়ার সময় 'কাটাছেঁড়া'র সহজ প্রণালীটি মুলতুবি রাখি। কারণ এঁর গদ্যশৈলীটি বিমল করের ধারায় মৌনতাকেই অগ্রাধিকার দেয়। একধরনের হেমন্তভাষা। অন্যদিকে কনটেন্টের ভিতর গ্রটেস্ক মাত্রাগুলির চটজলদি মূল্যায়ণ করতে চাওয়া আমার বিচারে অনুচিত। ভেবে বলতে হয়। সে ভাবনা যতোক্ষণ চলতে থাকে, ততোক্ষণ একটাই প্রতিক্রিয়া দিতে পারি,

    বাহ।।।।
  • শঙ্খ | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৯ ০৮:২২78739
  • বেশ কবার পড়েছি। ছোটাই দির সেই পুরোনো দিনের ইমেজারির কথা মনে পড়লো।
    খুব ডার্ক, নয়ার। সুন্দর একটা গ্রাফিক নভেল হতে পারে।
  • i | ***:*** | ১৮ জুন ২০১৯ ০৮:২২78740
  • সব্বাইকে অশেষ ধন্যবাদ। পরে কথা হবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন