এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • চড়ুইচরিত আর কিছু অবান্তর কথা

    Sudeep Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৮ মার্চ ২০২৫ | ১৮৩ বার পঠিত
  • আগামী কুড়ি মার্চ ওয়ার্ল্ড স্প্যারো ডে। যে হারে মানুষ প্রাণীজগতের জন্য এই ডে সেই ডে বানিয়েছে, তার সিকিভাগ এফর্ট দিলে জীবজগতের উপকার হত। আমি আজকাল সচেতন ভাবে চড়ুই পাখি খোঁজার চেষ্টা করি, চোখে পড়ে না বললেই হয়। ছোটবেলায় দেখেছি, প্রায় প্রতি বাড়িতেই চড়ুই পাখির বাসা থাকত। কুলুঙ্গিতে, দেওয়ালের ফাটলে, এমনকি পাখার ওপরেও। গ্রীষ্মকালে যদি দেখা যেত পাখার ব্লেডের ওপর বাসা আছে, অনেকে পাখা না চালিয়ে হাতপাখা ব্যবহার করত। মাঝেমধ্যে খোলা জানলা থেকে চড়ুই পাখি এসে ঘরে ঢুকে পড়ত, পাখার চলন্ত ব্লেডে ধাক্কা খেয়ে মারাও পড়ত। তখন আমাদের মুখ এইটুকু হয়ে যেত, গলার কাছে কান্না এসে আটকে থাকত। আহত চড়ুই পাখিদের অনেকেই দেখেছি শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তুলতেন। শুধু চড়ুই পাখি কেন, যে কোনও পাখি বা প্রাণীর জন্যই কথাটা বলা চলে। এখন কেউ করে কি করে না সেটা কথা নয়, আসল কথা হল পরিবেশ জিনিসটা চুলোয় গেছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ আর ইকোলজিকাল ডেস্ট্রাকশন যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, সেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। প্রতিদিনই চোখে পড়ে নতুন নতুন কাণ্ড ঘটছে। মাইগ্রেশন সাইকেল বদলে গেছে, সমুদ্রের জলের তাপ আর ঢেউয়ের গতি বদলে গেছে। ডিপ সি মাইনিং এর খাঁড়া মাথার ওপর ঝুলছে। এরই মধ্যে শুনলাম হাজার হাজার ফিট নিচে বসবাসকারী সামুদ্রিক প্রাণীরা অক্সিজেনের জন্য ওপরে চলে আসছে আর অন্যান্য প্রাণীদের খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। কোরাল রিফগুলো কঙ্কালে পরিণত হচ্ছে, গলে যাচ্ছে একের পর এক গ্লেশিয়ার। গরীব আর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে নদীগুলোর অবস্থা শোচনীয়! পাহাড় জঙ্গলে দাবানলের ঘটনা বাড়ছে, প্রাণীরা লুপ্ত হচ্ছে দ্রুত। দূষণের কথা আর তুললাম না। এর মধ্যে চড়ুই পাখি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কার আছে?

    তবু কয়েকজন মানুষ থাকেন, তাদের দেখে আশা জাগে। মনে হয়, এরা আছে বলেই দেশটা চলছে, দুনিয়াটা এখনও বাসযোগ্য আছে হয়তো! হয়তো! তারা কেউ সেলেব নয়, টিভি আর ইন্টারনেটে মুখ দেখানো ইনফ্লুয়েন্সার নন, সাধারণ মানুষ। আপনার আমার মতোই।

    আমাদের দেশে আজও এমন প্রচুর মানুষ আছেন, যাঁরা পাখি বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। শৌনক সেনের  পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি 'অল দ্যাট ব্রিথস' দেখে এখন অনেকেই মোহাম্মদ সাউদ আর নাদিম শাহজাদের কথা জানতে পেরেছেন, এরা বহুদিন ধরে দিল্লিতে আহত চিলদের চিকিৎসা করছেন, তাদের সারিয়ে তুলছেন। প্রায় কপর্দকহীন অবস্থা থেকে এই কাজ শুরু করেছিলেন, হাজার বাধা আর ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলেও কাজ থামাননি। কিন্তু চড়াই নিয়েই কথা শুরু হয়েছিল যখন, আগে চড়াই ম্যানের কথাই বলা যাক। 

    রাকেশ খত্রীর গল্প শুনলে রূপকথা মনে হয়। পুরোনো দিল্লির এই বাসিন্দাকে আজ পরিবেশবিজ্ঞানীরা চেনেন এনভায়রনমেন্টিস্ট বা গ্রিন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে, কিন্তু পঁচিশ বছর আগে যখন রাকেশ পুরোদমে চড়াই পাখিদের নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন, তাঁর মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ছিল, ছোটবেলায় শোনা সেই চড়াইয়ের কলকাকলি এমন করে হারিয়ে যাচ্ছে কেন? এর কারণ অবশ্য সহজ। আগের মতো বাড়ির গঠন আর নেই, খোলামেলা বাড়িগুলো কঙ্ক্রীটের জঙ্গলে বদলে যাচ্ছে, সপাট দেওয়ালে একটা কুটোটি রাখার জো নেই। গাছপালা তো নেইই। চড়াই পাখিরা বাসা বানাবে কী করে? রাকেশ বুঝেছিলেন, এই সমস্যার সমাধান নেই। নগরায়নকে আটকানো যায় না, একটা বিকল্প ব্যবস্থা ভাবতে হবে। সেখান থেকেই তিনি ভেবে সিদ্ধান্ত নেন, চড়াই পাখিদের জন্য কৃত্তিম বাসা তৈরি করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ঘাস পাতা কাঠ কুটো নিয়ে লেগে পড়লেন তিনি। বাসাও তৈরি হল শ দুয়েক। নানান জায়গায় লাগিয়ে দিলেন বাসাগুলোকে। কিন্তু সেই বাসায় পাখি আসে না। রাকেশ বুঝলেন, অত সহজ নয়। পাখিদের বাসা মানে কতগুলো ঘাসপাতা এক করে গর্ত বানানো নয়, তার একটা প্রাকৃতিক নিয়ম আছে। একটা বিজ্ঞান আছে, একটা নান্দনিকতা আছে। পাখিদের ইঞ্জিনিয়ারিংকে হেয় করলে চলবে না, সেটা বুঝতে হবে। সময় দিয়ে, দরদ নিয়ে। এরপর থেকে রাকেশ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের নিয়ে স্টাডি শুরু করলেন। তারা কীভাবে বাসা তৈরি করে, কখন করে, কোত্থেকে তৃণখণ্ড জোগাড় করে আনে, তাদের বাসার ভিতর তাপমাত্রা বা আর্দ্রতা কেমন করে নির্দিষ্ট করা হয়! চল্লিশটা প্রজাতির ছোট পাখি নিয়ে তিনি গবেষণা করে চললেন। এক একটা করে বাসা বানান, বোঝার চেষ্টা করেন কী করে আরো নিঁখুত পাখির বাসা বানানো সম্ভ হবে! কোনও সরকারি বেসরকারি সাহায্য ছিল না, লোকে ভাবত পাগল, কিন্তু রাকেশ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এই কাজ করে গিয়েছেন। অবশেষে একদিন এল, দেখা গেল কৃত্তিম ভাবে তৈরি তাঁর বাসায় পাখিরা আসতে শুরু করেছে। উৎসাহ পেয়ে রাকেশ আরো জোর দিয়ে লাগলেন। আজ আড়াই দশক পরে রাকেশ চড়ুই পাখিদের জন্য প্রায় তিনলক্ষ বাসা বানিয়েছেন, সেখানে ঘর বেঁধেছে অসংখ্য পাখি। শুধু তাই নয়, তিনি এই মশালটা ধরিয়ে দিয়েছেন অল্পবয়সীদের হাতে৷ দেশ জুড়ে কয়েক হাজার ওয়ার্কশপ করেছেন, বড়দের পাশাপাশি ছোটদের উদ্বুদ্ধ করেছেন চড়াই পাখিদের রক্ষা করার জন্য। ২০১২ সালে গড়ে তুলেছেন ইকো রুটস ফাউন্ডেশন। কৃত্তিম ভাবে পাখিদের বাসা বানানোর পাশাপাশি তারা ই-ওয়েস্ট আর গ্রিন ডেভেলপমেন্ট নিয়েও কাজ করছেন। যে সব বাচ্চারা প্রথম হাতেখড়ি নিয়েছিল রাকেশের কাছে, আজ তাঁর সহযোদ্ধা। তারা সবাই মিলে পরম নিষ্ঠায় আমাদের চেনা চড়াইপাখিদের ঘরবাড়ি তৈরি করছেন, তাদের আগলে রাখছেন। রাকেশকে নাম দেওয়া হয়েছে নেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া। 

    রাকেশ একা নন। পরিচিতি হোক না হোক, ভারতে এবং অন্যান্য দেশে পাখিপ্রেমীদের অভাব নেই। আজও এমন মানুষ আছেন, যারা নিঃস্বার্থ ভাবে পশুপাখিদের ভালোবাসে, তাদের জন্য ভাবে৷ 

    ডক্টর পূর্ণিমা দেবী বর্মনের নাম আমজনতা কতটা জানে জানি না, কিন্তু এই ওয়াইল্ড লাইফ বায়োলজিস্টকে ২০২৪ সালে টাইম পত্রিকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে, সম্মানিত করা হয়েছে গত বছরের হুইটলি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড বা গ্রিন অস্কার প্রাইজ দিয়ে। আসামে পূর্ণিমা দেবী প্রায় ২০০০০ মহিলাদের সঙ্গে করে এমন একটা পিপল  কমিউনিটি মুভমেন্ট গড়ে তুলেছেন, যার কোনও তুলনা নেই। গ্রেটার অ্যাডজুটেন্ট স্টার্ক বা হাড়গিলেদের রক্ষার জন্য নিবেদিত এই হাড়গিলে আর্মি তৈরি করা অবশ্য সহজ ছিল না। নর্থ ইস্টে হাড়গিলেদের নিয়ে কুসংস্কার কম নেই, তাদের দুর্ভাগ্যের প্রতীক বলা হত। একসময় অকারণে এত হাড়গিলে মারা হয়েছিল যে এই প্রজাতি প্রায় লুপ্ত হতে বসেছিল। পূর্ণিমা আইইউসিএনের স্টার্ক, আইবিস আর স্পুনবিল স্পেশালিস্ট গ্রুপের সদস্য। ২০০৭ সালে তিনি যখন সারস, বিশেষ করে হাড়গিলা আর বোর্টুকুর্লা নিয়ে থিসিস লিখছেন, পূর্ণিমা জানতে পারেন হাড়গিলেদের বসবাসের গাছ, যা কোডোম গোস বা লিচহার্ট পাইন বলে প্রচলিত, সেগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। সারসের বিভিন্ন প্রজাতি আর তাদের ছানারা মারা পড়ছে। এরকম একটা ঘটনার কথা জানতে পেরে তিনি ছুটে যান, তখন তিনি সদ্য জমজ সন্তান প্রসব করেছেন। সেই দুর্বল শরীর নিয়েও পূর্ণিমা হাড়গিলেদের জখম ছানাপোনাদের হাতে করে নিয়ে গুয়াহাটি চলে আসেন, তাদের সারিয়ে তোলেন। কিন্তু দু চারটে ছানা বাঁচিয়ে কী হবে? পাখিই যদি মারা পড়ে তাহলে থিসিস লিখেই বা কী লাভ? এককালে যে পাখিগুলো জলাভূমি আর ঘাসবনে দেখতে পাওয়া যেত, সেসব শেষ হয়ে যেতে সেই পাখি আজকাল ময়লার ডিপো আর ভাগাড়ে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, সেই সঙ্খ্যাও প্রায় নিশ্চিহ্ন। পূর্ণিমা ঠিক করেন, এদের বাঁচাতেই হবে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে তিনি মানুষজনকে সচেতন করতে শুরু করেন। রাকেশের মতো তাঁকেও সবাই পাগল ঠাউরেছিল, গান গেয়ে খিল্লি করেছে দিনের পর দিন, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। গ্রামের মেয়েদের বউদের নিয়ে আস্তে আস্তে একটা রক্ষাবাহিনী গড়ে তুলেছেন। ভজন আর পিঠে রান্নার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, আন্তরিক আলাপচারিতা আর সহজবোধ্য ভাষায় গাঁয়ের লোককে বুঝিয়েছেন হাড়গিলেদের উপকারিতার কথা। তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই এই পাখিদের সঙ্খ্যা একটু একটু করে বাড়ছে।

    চেন্নাইয়ের সুদর্শন শাহ আর তাঁর স্ত্রী বিদ্যার কথাই ধরুন। ২০০৪ সালের সুনামির পর যখন উপকূল অঞ্চলে খাদ্য পানীয়ের আকাল চলছে, সুদর্শন সকালে উঠে দেখেন তাঁদের বাড়ির ছাদে চারটে টিয়া এসে বসেছে। নিতান্তই করুণার বশে তাদের আগের দিনের রাখা ভাত বের করে খাওয়ান তিনি। পরদিন দেখেন চারটের জায়গায় ছ'টা টিয়াপাখি। তাদেরও খাওয়াতে কসুর করেন না। এর পরদিন দেখা যায় টিয়াপাখিগুলো তাদের বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছে, দশ বারোটা পাখি তাঁদের ছাদে বসে আছে। তারপর দিন আসে কুড়িটা, তারপর পঞ্চাশটা, একশোটা, পাঁচশোটা। সুদর্শন ভাবেন, এ ঈশ্বরের ইচ্ছে, এই অবলা প্রাণীগুলোকে খাওয়ানোই হয়তো তাঁর কাজ। সেই শুরু। ভাবতে অবাক লাগে, বহু বছর ধরে প্রায় ছয় হাজার টিয়াপাখিকে ভাত সেদ্ধ আর বাদাম খাওয়ান এই স্বামী স্ত্রী। তাদের ছাদটা আসলে টিয়াপাখিদের স্যাংচুয়ারি হয়ে গেছে। রোজ হাজার হাজার পাখিকে খাবার খাওয়ানো মুখের কথা নয়! প্রতিদিন প্রায় ষাট কিলো চাল লাগে। সেগুলো সেদ্ধ করতে হয়, তারপর ছাদে এসে কাঠের তক্তির ওপর সাজাতে হয়। পুরো খরচটাই হয় নিজেদের পকেট থেকে, পরিশ্রমও তাঁদের। কিন্তু একদিনের জন্যও বিরক্ত হননি সুদর্শন বা বিদ্যা। বরং হাসিমুখে এই কাজ করে চলেছেন। তাঁদের কথা মানতে হলে পাখিদের খাওয়ানো শুরু করার পর তাদের শরীর মন ভালো আছে, ঈশ্বরের আশীর্বাদে খাওয়াপরার অভাব অন্তত নেই। বিলাসিতার উপায় নেই, কিন্তু এতগুলো পাখির কাছে তারা অবলম্বন হয়ে উঠেছেন, এর চেয়ে বড় সুখ আর কী হবে?

    স্বামী গণপতি সচ্চিদানন্দের কাহিনি আরো অদ্ভুত। ২০১১ সালে স্বামীজি ভেনেজুয়েলায় গিয়েছিলেন। অ্যাঞ্জেল ফলস দেখতে গিয়ে একটা দুর্ঘটনার ফলে তিনি প্রায় একশো ফুট নিচে পড়ে যান। এরকম হলে বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না বলা চলে, কিন্তু সচ্চিদানন্দ বেঁচে যান। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন, তাঁকে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য পাখি। সেখানে আমাজনের ম্যাকাও পাখি থেকে শুরু করে কতরকম রঙবেরঙের পাখি আছে, তার হিসেব নেই। স্বামীজি সেই মুহুর্তে অনুভব করেন, এই পাখিদের জন্যই তাঁর প্রাণ বেঁচে গেছে। বাকি জীবনটা তিনি পাখিদের জীবন বাঁচাবেন৷ অসুস্থ, আহত, কুড়িয়ে পাওয়া পাখিদের নিয়ে এসে আশ্রয় দেবেন, যত্ন করবেন। ভারতে ফিরে এসে ম্যায়সোরের কাছে আস্তে আস্তে সুখবন গড়ে তোলেন তিনি। দেশ বিদেশের ৪৬৮ প্রজাতির পাখি আছে এই পাখিরালয়ে। সম্প্রতি তাঁর নাম ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠেছে। এক্সোটিক কালেকটার বা পাখি সংগ্রাহক নয়, স্রেফ একজন সাধারণ মানুষ হয়েও এত রকম পাখি যে কারো বাড়িতে থাকতে পারে, প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেনি। অথচ, স্বামী সচ্চিদানন্দ পাখি কেনেন না, তিনি পাখিদের নতুন জীবন দেন। এই পক্ষীশালা আসলে একটা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার মাত্র। তাঁর কাছে সব পাখিই সমান। চড়াই, ময়না থেকে শুরু করে কাকাতুয়া, কিছুরই অভাব নেই।

    এরা একা নন। ভারতেই শত শত মানুষ পাখিদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন। সুবাইয়া ভারতীদশন আর প্রেমসাগর মিস্ত্রীর মতো অনেক লুপ্তপ্রায় শকুনদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়ে যাচ্ছেন। দিল্লির অমিত আর অভিষেক জ্যায়েন আহত পশুপাখিদের বাঁচানোর জন্য মোটরসাইকেল অ্যামবুলেন্স চালু করেছেন, প্রায় ৫০০০০ পাখিদের প্রাণ রক্ষা করেছে এই উদ্যোগ। মোহাম্মদ দিলাওয়ার নেস্ট বক্স মুভমেন্ট শুরু করে ঘরোয়া চড়ুইপাখিদের খাওয়া আর বাসস্থান ফিরিয়ে দিচ্ছেন। পক্ষীবিদ অসদ রেহমানি হিউমান ডোমিনেটেড অঞ্চলে থাকা পাখিদের রক্ষা করার জন্য বহু বছর ধরে কাজ করছেন। এই লিস্ট শেষ হওয়ার নয়।

    আমরা একটা অদ্ভুত সময়ে বাস করছি। কুড়ি পঁচিশ বছর আগেও যা স্বাভাবিক ছিল, এখন সে সব হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু কারোরই কোনও হেলদোল নেই। সরকারের তো হবেই না, আমাদের অনেকের জন্যও পশুপাখি বনজঙ্গল লুপ্ত হয়ে যাওয়াটা নর্মালাইজ হয়ে গেছে। জেনারেশনাল অ্যামনেশিয়া বলে একটা কথা আছে। যদি পরের প্রজন্ম না জানে যে সাধারণ বাড়িতে চল্লিশ পঞ্চাশটা চড়ুই পাখি বাসা বাঁধত, শালিক ময়না নীলকন্ঠ বুলবুল আকছার দেখা যেত, শয়ে শয়ে শকুন আর হাড়গিলে আর টিয়াপাখি দেখা এমন কোনও ব্যাপার ছিল না, তাহলে তারা জানতেও পারবে না, বুঝতেও পারবে না। দুটো চড়ুই বা একটা শকুন দেখেই তারা রোমাঞ্চিত হবে। এমন হলে আর কোনও আশা নেই। পাখি যে কমে গেছে, সেই নিয়ে কথা হোক। ছোটদের জানানো হোক, তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রকৃতিতে যাওয়া হোক বেশি বেশি। আজকাল চড়াই বা অন্য পাখিদের খাওয়ার জন্য ফিডিং বক্স পাওয়া যায়, খুদ বা চাল দিয়ে জল সহ বালকনিতে লাগিয়ে দিলেই হয়। যাদের সেই সুযোগ আছে, ব্যবহার করুন। নাহলে কয়েক বছর পর চড়াইদের দিন থাকবে, চড়াই থাকবে না। সব পাখিদের নিয়ে এক একটা দিন সেলিব্রেট করা হবে, কিন্তু সে পাখি আর দেখতে পাওয়া যাবে না। এই বছরের কুড়ি মার্চ থেকেই কিছু কাজ করা শুরু হোক।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৮ মার্চ ২০২৫ | ১৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৭:৫৯541775
  • খুব ভালো লাগলো এই লেখাটা।
  • Somnath mukhopadhyay | ১৮ মার্চ ২০২৫ ২০:৫৩541778
  • সুদীপ বাবুকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। এই লেখাটা পড়ে ভরসা জাগছে যে ক্ষয়িষ্ণু হলেও পরিবেশ পরিমন্ডল ও বিপন্ন প্রাণিকুল নিয়ে ভাবতে ও ভাবাতে লোকজনেরা একেবারে লোপ পেয়ে যায়নি। চড়াই পাখিদের নিয়ে গত বছর একটা নাটক লিখেছিলাম ছোটদের কথা ভেবে। পুর্নিমা দেবীর কাজকর্ম নিয়ে একটা বড়ো লেখা আগামী মাসে প্রকাশ পাবে অন্য একটি ই ম্যাগাজিনে। গুরুর পাতায় আমার সাধ্যমতো লেখালেখি করেছি এবং করছি। সম্ভব হলে একবার দেখে নিতে পারেন।এ গুলোর কথা উল্লেখ করছি মানে নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছি তা কখনোই নয়। আসলে মনের কাছাকাছি থাকা মানুষের দেখা পেলে অবরুদ্ধ আবেগ আপনা আপনিই বেরিয়ে আসে 
    এটাও সেই রকম ব্যাপার আর কি! 
    এদেশে পরিবেশ নিয়ে আলোচনা আম জনতার মধ্যে তেমন প্রসার লাভ করেনি। আমাদের সামান্য চেষ্টায় যদি সেই ভাবনায় কিছু সদর্থক পরিবর্তন আসে তাহলেই নিজেকে ধন্য মনে করবো। ভালো থাকবেন।
     
  • Sudeep Chatterjee | ১৯ মার্চ ২০২৫ ০০:৫২541780
  • অনেক ধন্যবাদ। নিশ্চয়ই দেখব। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন