এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মুনির আজও বিচার পায়নি

    Sudeep Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ মার্চ ২০২৫ | ১২৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আশাবাদী হওয়া খুব ভালো জিনিস। কিন্তু চারিদিকে যা অবস্থা, চোখকান খুলে রাখলে হতাশাই গ্রাস করে বেশি করে। বেনারসে এক পরিচিত ছেলের ভাইকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে শুনলাম, সে নাকি জানেই না কেন তুলেছে! এদিকে মাস চারেক ধরে সে জেলে বসে আছে। কাণ্ড! এদিকে রিসেন্টলি শুনলাম, সুপ্রিম কোর্ট আবারও বলেছে, ট্রায়াল ছাড়া কাউকে দিনের পর দিন আটকে রাখা চলবে না। শুনে ভালোই লাগে, যতক্ষণ না মনে পড়ে, কথাটা সুপ্রিম কোর্ট কুড়ি বছর ধরে বলেই চলেছে। এদিকে হাজার হাজার সাংবাদিক আর অ্যাক্টিভিস্ট বছরের পর বছর ধরে ট্রায়াল ছাড়া জেলে বসে আছে। ভীমা কোরেগাঁও কেসে কবীর কলা মঞ্চের একগাদা শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের প্রায় কারো কেসই আদালতে ওঠেনি। উমর খালেদের বেল রিজেক্ট হচ্ছে তো হচ্ছেই। আরে দোষী হলে তদন্ত করে সাজা দিলেই হয়, তদন্তের নামে কুড়ি বছর কাটিয়ে দিলে চলবে? এখন অনেকে এদের নাম শুনে রেগেও যেতে পারে, রাগাই দরকার। কারো নাম আলাদা করে বলবই না কেন? ইউএপিএ ইত্যাদি চুলোয় যাক, নর্মাল কেসেই ট্রায়াল হয় না। আজকাল ঠিকঠাক রিপোর্ট রিলিজ করার চলও উঠে গেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রিকর্ড বিউরো ২০২১ সালে জানিয়েছিল, ভারতবর্ষের জেলে পাঁচ লাখ চুয়ান্ন হাজার কয়েদি আছে, তাদের মধ্যে চার লাখ সাতাশ হাজার ট্রায়ালের জন্য অপেক্ষা করে আছে। এদের মধ্যে অনেকেই কয়েক বছর কাটিয়ে দিয়েছেন জেলে, কেস আদালতেও ওঠেনি। সাধেই লোকে বলে, পুলিশে ছুঁলে আঠেরো ঘা! জাস্টিস সিস্টেম এমন এক হাস্যকর জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে বলার নয়। নিজে প্যাঁচে না পড়লে কেউ বোঝে না, তা না বোঝাই ভালো। তবে এরকম পরিস্থিতি যে শুধুই ভারতে তেমনটা ভাবলে ভুল হবে। বহু দেশেই কমবেশি একই অবস্থা। বছর ঘোরে, বিচার মেলে না।

    এই সূত্রে একটা চমকপ্রদ ঘটনার কথা মনে পড়ে। এই গল্প সম্ভবত খুব বেশি মানুষ জানেন না। অথচ, দুনিয়ার ইতিহাসে এ এক বহুচর্চিত কেস।

    গল্পের নায়কের নাম মুনির। মুনির সাইদ তালিব। ১৯৬৫ সালে ইস্ট জাভার বাটুতে তার জন্ম। বাড়ির লোক বেশ উদারবাদী, প্রগেসিভ ধরনের ছিল, শিক্ষা আর সততাকে সমান মূল্য দেওয়া হত পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই তাহিরের মনে তাই জাস্টিস সিস্টেমের জন্য একটা অন্য রকম শ্রদ্ধা জন্মে গিয়েছিল। পড়াশোনায় খুবই ব্রাইট ছিল সে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি ধারালো ছিল ন্যায় বিচারের প্রতি সচেতনতা। বড় হয়ে যখন সে ব্রাউইজায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়তে ভর্তি হয়, খুব তাড়াতাড়ি সে সক্রিয় ভাবে অ্যাক্টিভিজমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। পড়াশোনা শেষ করে সুরাবায়াতে লিগাল এইড এক্সপার্ট হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। তখন কেউ জানত না স্বপ্নালু চোখের এই ছেলেটা কয়েক বছরের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে চর্চিত হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে উঠবে, হাজার হাজার মানুষের বিচারের জন্য আদালতে আওয়াজ তুলবে। 

    আশি আর নব্বইয়ের দশক ইন্দোনেশিয়ার জনতার জন্য মোটেও ভালো সময় নয়। কেউ সরকারের আলোচনা করলেই তার মাথায় খাঁড়ার ঘা নেমে আসত। রাষ্ট্রপতি সুহার্তোকে নিয়ে এমনিতেই ইন্দোনেশিয়ায় দু ধরনের গল্প আছে। এক, তিনি কড়া হাতে মিলিটারি শাসন চালু করে দেশের অর্থনীতি ঠিক করেছেন, ইনফ্লেশন কমিয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদির পত্তন করেছেন, কমিউনিস্ট রেবেলদের লাথি মেরে তাড়িয়েছেন। দুই, সুহার্তো এক নম্বরের কোরাপ্ট, ফ্যাসিস্ট, ডিক্টেটর আদমি। কয়েক বছর পর দেশের ক্ষমতা পুরোপুরি নিজের হাতে তুলে নিয়ে ডেমোক্রেসির সাড়ে তেইশ করে ছেড়েছেন, দুর্নীতি এবং বিরোধীদের খুন জখম করাতে বা গুম করাতেও তার জুড়ি মেলা ভার, ইস্ট টাইমারে জোর করে হামলা করতে গিয়ে এক ভীষণ যুদ্ধ শুরু করেছেন, যাতে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন। দুটোই মোটামুটি সত্যি। বেশিদিন পাওয়ারে থাকলে ক্ষমতা মাথায় উঠে মানুষের যা হয় আর কি! মোদ্দা কথা হল, আশির দশকের শেষ দিকে যখন দেশের অবস্থা পড়তির দিকে যাচ্ছে, একটু একটু করে বিরোধের স্বর শোনা যাচ্ছে, সুহার্তোর কথায়  আয়রন ফিস্ট রুল শুরু হয়ে গেছে। ফ্রি স্পিচ আর প্রেসকে তুলোধনা করা আর মিলিটারিকে কাজে লাগিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো যা নয় তাই করা। এইসব ঝামেলা হলে যারা সবচেয়ে আগে আওয়াজ তোলে (আর সবচেয়ে আগে মারা পড়ে), ইন্দোনেশিয়াতেও তারাই তুলেছিল। ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা। দেশ জুড়ে ছাত্ররা আন্দোলন করছে, এদিকে সুহার্তোর সেনা নিষ্ঠুর ভাবে তাদের প্রতিরোধ করছে, লাঠিচার্জ করছে, গুলি চালাচ্ছে, কিডন্যাপ করিয়ে এনকাউন্টার করছে বা বাড়ির লোককে সুদ্ধ তাদের ঘর থেকে তুলে এনে টর্চার করছে, মানে তোহফা অবস্থা।

    কিন্তু মুনির ভয় পাওয়ার ছেলে নয়। তার ভ্যালু সিস্টেম ছোটবেলা থেকেই মজবুত, ন্যায়ের জন্য সে সব কিছু কর‍তে পারে। যখন সরকারের ভয়ে অনেকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকাই সেরা পন্থা বলে মনে করছেন, মুনির ঠিক করল সে দুর্বলদের পক্ষ নিয়ে লড়বে। যাদের জন্য কথা বলার কেউ নেই, তাদের হয়ে লড়বে। সুরাবায়াতে কাজ করার সময় থেকেই সে পুলিশের অত্যাচার, বেআইনি ভূমি অধিগ্রহণ আর লেবার রাইট ভায়োলেশনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে লাগল, গরীব জনতার কেস বিনামূল্যে লড়তে শুরু করল আদালতে। কয়েকদিনের মধ্যেই রটে গেল, এ ছেলের সাহস আছে, এ কম্প্রোমাইজ করার বান্দা নয়!

    এদিকে দেশের রাজনীতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলেছে। মিলিটারি যথেচ্ছ সব কাণ্ড শুরু করেছে, শয়ে শয়ে মানুষকে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে গণগত্যা চলছে। ইস্ট টাইমার আর পাপুয়াতে তো ইন্দোনেশিয়ার মিলিটারি তাণ্ডব নৃত্য করছে। কেউ কিছু বলতে গেলেই মুণ্ডু ঘ্যাচাং। এইসব কাণ্ড যত বাড়তে লাগল, মুনিরের কাছে কেসও আসতে লাগল ততো বেশি। সে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া মানুষদের পক্ষ নিয়ে লড়ল, গণহত্যা আর ম্যাসাকারের তদন্ত করল, সেনাবাহিনীর সেই সমস্ত কীর্তিকলাপের হাঁড়ি হাটে ভেঙে ফেলল যে সব চেপে রাখার জন্য সরকার কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করছে। KontraS (কমিশন ফর দ্য ডিসঅ্যাপিয়ার্ড অ্যান্ড ভিকটিমস অফ দ্য ভায়োলেন্স) বলে একটা সংগঠন গড়ে তুলল ১৯৯৭ সালে। পরের দুই বছর ধরে প্রো ডেমোক্রেসি অ্যাক্টিভিস্ট আর জার্নালিস্টদের কিডন্যাপিংয়ের তদন্ত করে চলল সে, সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ততদিনে সুহার্তোর স্বৈরাচারী শাসন নিয়ে নিন্দেমন্দ শুরু হয়ে গেছে সারা দুনিয়ায়। মরিয়া হয়ে সরকার মরণ কামড় দিচ্ছে। শয়ে শয়ে ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, সাংবাদিক, সমাজকর্মীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। কয়েকজনকে টর্চার করে ছাড়া হলেও অনেকে চিরকালের মতো নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। মুনির এই কেসগুলোর তদন্ত করে সরাসরি প্রমাণসহ সরকারকে দোষী ঠাউরাল। এক একজনের নাম নিয়ে সে প্রেসে প্রমাণ দাখিল করতে লাগল। স্বভাবতই মুনিরের সঙ্গে সরাসরি মিলিটারি, ইন্টেলিজেন্স আর পলিটিকাল এলিটদের ঠোকাঠুকি লেগে গেল, সে তখন সকলের চোখের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে স্পেশাল ফোর্সের পূর্ব প্রধান জেনারেল প্রাবোও সুবিয়ান্ত আর সুহার্তোর জামাই তাকে দু চক্ষে দেখতে পারত না।

    মুনিরের কাছে প্রথমে হুমকি এল। তারপর শাসানো হল নানাভাবে। তাকে ফলো করা হতে লাগল। তারপর এল আক্রমণ। বারবার। কখনও শারীরিক ভাবে, কখনও মানসিক ভাবে। একবার এক শ্রমিক বাঁচাতে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মীর কাছে মার খেয়ে হাত ভাঙল, একবার কিডন্যাপিংয়ের ঘটনায় কোপাসাস বা সিক্রেট আর্মির ভূমিকা সম্পর্কে তদন্ত করতে গিয়ে ঘরে কে যেন বোমা রেখে এল। ততদিনে সুহার্তো শুধু নয়, গোটা রাজনৈতিক ঘরানা আর আর্মি তাকে শত্রু বলে মনে করছে।  সুহার্তোর শাসন উঠে যাওয়ার পরেও তার প্রতি আক্রোশ কমল না।কিন্তু মুনির শত ঝুঁকি সত্ত্বেও কাজ থামাচ্ছে না। প্রেস কনফারেন্সে বক্তৃতা দিয়ে সরকারের অবস্থা ঢিলে করে দিচ্ছে, প্রোটেস্ট লেড করছে, ট্রায়াল আর মিলিটারি আধিকারিকদের এক্সপালশনের জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে। টিমোর, পাপুয়া, আসেহতেও যে সমস্ত বেআইনি হত্যা আর ডিটেনশন হয়েছে, সেই নিয়েও সে সোচ্চার। এদিকে সে এও প্রমাণ পেয়েছে যে এই জায়গা থেকে মিলিটারির কোরাপ্ট অফিসিয়ালরা নিষিদ্ধ ড্রাগ আর চোরাই কাঠের ব্যবসাও করছে।

    মুনির জানত, সে কোন লেভেলের ঝুঁকি নিয়েছে।একবার সে বলেছিল, "Being a human rights activist means you have to be ready to be beaten, terrorized, and even killed. But if I stop, who else with fight for the justice?"

    মুনির ততদিনে ইন্ডোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার হয়ে উঠেছে। মানবাধিকার আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য নিবেদিত 'ইমপার্সিয়াল'-এ তাকে ডিরেক্টর করা হয়েছে, তাতে তার কাজের ব্যাপ্তি আর ঝুঁকি, দুটোই বেড়েছে।

    ২০০৪ সালের কথা। মুনির অ্যামস্টারডামে আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে যাচ্ছিল। সেপ্টেম্বর মাসের সাত তারিখে সে গরুডা ইন্টারন্যাশনালের আমস্টারডামগামী ফ্লাইটে উঠল, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই তার বুকে পেটে ভয়ানক ব্যাথা শুরু হল, বমি হতে লাগল বার বার। ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টরা প্রথমে ভেবেছিল ফুড পয়জনিং, কিন্তু মুনিরের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে লাগল। প্লেন যখন আমস্টারডামের মাটি ছুঁল, তার দেহে আর প্রাণ নেই। মাত্র ৩৮ বছর বয়স হয়েছিল তার। 

    অটোপ্সি করে জানা গেল ফুড পয়জনিং নয়, পরিকল্পনা করে তাকে খুন করা হয়েছে। ডাচ অথোরিটিরা জানালেন, তার পেট থেকে প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক পাওয়া গেছে, লিথাল ডোজ। ব্যাপারটা কাকতালীয় নয়। ঘটনা ইচ্ছে করে ঘটানো হয়েছে, যখন প্লেন থাকবে ৩৫০০০ ফুটে, আর মেডিকাল অ্যাসিস্ট্যান্স পাওয়ার কোনও উপায় থাকভে না। তার খুনের পরিকল্পনা করেছে যারা তারা নিশ্চিত হতে চেয়েছিল মুনির প্লেন থেকে জীবিত অবস্থায় নামবে না।

    মুনিরের মৃত্যুতে গোটা ইন্ডোনেশিয়া জুড়ে প্রতিবাদের বন্যা বয়ে গেল। এটা সাধারণ একটা অ্যাসাসিনেশন নয়, মুনির মানুষের কথা ভেবে বাঁচত, আজীবন সাধারণ মানুষকে বিচার দেওয়ার জন্য লড়ে গেছে সে। তার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারেনি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সুসিলো বাম্বাং য়ুধোউনো চাপে পড়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম আর তদন্ত কমিটি বসালেন বটে, কিন্তু অর্ধসত্য ছাড়া কিছুই বেরোল না। পলিটিকাল ইন্টারফেরেন্স আর কভার আপ করে সত্যি চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলতেই লাগল। এদিকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেশনে জানা গেল ইন্ডোনেশিয়ার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বিআইএন এর পিছনে আছে। গরুডা ইন্টারন্যাশনানের পাইলটই সম্ভবত মুনিরের পানীয়তে বিষ মিশিয়েছিল, বহুদিন পর তাকে চোদ্দ বছরের সাজা দেওয়া হল, কিন্তু কার নির্দেশে সে এমন করল সেটা জানা গেল না। এদিকে তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হল ওপর থেকে নির্দেশ পেয়ে, প্রমাণ লোপ পেল, সাক্ষীরা হুমকি পেতে লাগল, হাই র‍্যাঙ্কিং অফিসিয়ালদের জেরা অব্দি করা হল না। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টরা অবশ্য হাল ছাড়লেন না। একে একে সুতো জুড়তে লাগল, বোঝা গেল মুনিরকে সরানোর পিছনে সরকারের বড় বড় নেতা, আর্মি অফিশিয়াল আর ইন্টেলিজেন্সের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের হাত আছে। সকলেরই মুখোশ খুলে দিচ্ছিল মুনির, তাকে বাঁচিয়ে রাখা বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। তাদের অনেকেই এখনও ক্ষমতাসীন, বড় বড় জায়গায় বসে আছে সবাই। প্রচুর প্রতিবাদ হল, মিছিল হল, তদন্ত কমিটি বসল, কিন্তু বিচার হল না। যারা মুনিরকে মেরেছে, তাদের কোনও সাজা হল না।

    আজ একুশ বছর কেটে গেছে, মুনিরের হত্যার জন্য দায়ী মানুষরা আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার স্ত্রী সুশিওয়াতি নিজেও লেবার রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট, দুই সন্তানকে নিয়ে সে আজও স্বামীর জন্য বিচার চেয়ে চলেছে। এখনও প্রতি মাসে ইন্দোনেশিয়ায় কোথাও না কোথাও মুনিরের জন্য বিচার চেয়ে প্রোটেস্ট হয়, হাজার হাজার আবেদন পড়ে স্বাধীন ভাবে তদন্ত করার জন্য, কিন্তু লাভ হয় না কিছুই। মারা যাওয়ার পর মুনিরের নামে প্রচুর সম্মান দেওয়া হয়েছে, তার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে বহু মানবাধিকার সংগঠন খুলেছে, তার লিগেসি রয়ে গেছে। কিন্তু দোষীদের সাজা হয়নি। যে ছেলেটা অন্যদের বিচার দেওয়ানোর জন্য আটত্রিশ বছর বয়সে মারা গেল, সে নিজে আজও বিচার পায়নি। 

    দুনিয়া জুড়ে এই অবস্থা। তাহলে কেনই বা কেউ অবিচারের বিরুদ্ধে লড়বে? কেনই বা ন্যায় চাইবে? কেন আশা রাখবে? কেন বিচার চাইতে কোর্টে যাবে? 

    এর উত্তর মুনির জানত। সে বলেছিল, "If we stay silent in the face of injustice, we become part of the crime."

    We have tired of Violence 
    The new press
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ মার্চ ২০২৫ | ১২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২৩ মার্চ ২০২৫ ১৭:১৩541855
  • এইই হয়। যত বড় লোকের কীর্তি ফাঁস ততই বিচারের আশা দূর। 
     
    উমর খালিদের নামে কেস প্রমাণ করতে পারবে না জেনেই আটকে রাখছে। যেমন ভীমা কোরেগাঁও কেসে রেখেছিল। 
  • :( | 2405:8100:8000:5ca1::478:***:*** | ২৩ মার্চ ২০২৫ ২১:০৭541859
  • কোথাও প্লেনের পাইলট, কোথাও সঞ্জয় রায়। আর কারও শাস্তি হয় না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন