এখন আলোচনার বিষয়বস্তু পরিবর্তন হয়ে গেছে। একের পর এক শিবির কর্মীর আত্মপ্রকাশ হচ্ছে আর সাধারণ মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছে আমাদের আবেগ নিয়ে খেলেছে শিবির, কেউ প্রশ্ন করছে ঠিকই করেছে, এমন না করলে কী স্বৈরচারী সরকারের পতন হত? অনেক তারকা যারা সরাসরি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল তারা নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। সায়ানকে দেখলাম একটা দীর্ঘ ভিডিওতে তাঁকে এখন যে গালিগালাজ করা হচ্ছে তার প্রতিবাদে একটা কবিতা পাঠ করতে, কিন্তু কী থেকে কী হল তা নিয়ে কিছু বলেছেন বলে মনে পড়ছে না।
আসলেই তো এই প্রশ্নটা জরুরি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইটা কী মেনে নেওয়ার মতো? এমন একটা আন্দোলন, যাকে গণ অভ্যুত্থান বলা হচ্ছে, এখন দেখা যাচ্ছে তা সরাসরি স্বাধীনতা বিরোধী একটা চক্রের খুব সুনিপুণ পরিকল্পনার অংশ, এটাকে মেনে নেওয়া যায়? না কি মেনে নিব আমরা এই বলে যে এমন একটা পরিকল্পনা করা হইছিল বলেই শেখ হাসিনাকে গদি চ্যুত করা করা গেছে, না হলে কোনদিন তা সম্ভব হবে এমন স্বপ্নও কেউ দেখে নাই কিছু দিন আগে। কোনটা জরুরি বেশি?
এইটা বুঝার জন্য একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে। জুলাই ম্যাসাকারের জন্য সরকারের দায় নাই? একশ ভাগ আছে, এইটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। এখন আপনে যদি শুধু থাপড় দেওয়া দেখে বিচার করেন আর কেন থাপড় মারা হল তা চিন্তা না করেন তাহলে বিচার হবে ভিন্ন, আর যদি ভাবেন কেন কেউ একজন থাপড় মারল আরেকজনের গালে, কারণটা কী তাহলে হিসাব হবে ভিন্ন। আমি এই প্রসঙ্গ এনেছি বলে ভাবার দরকার নাই যে আমি জুলাই ম্যাসাকার সমর্থন করছি, আমি কী কেন কীভাবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি শুধু।
শিবির বা জামাতের যে বিশাল পরিকল্পনার গল্প আমরা শুনছি এখন, তাদের যে নেতা কর্মীদের পরিচয় বের হচ্ছে, তারা যেসব কথাবার্তা বলছেন মিডিয়ার সামনে তা দেখে আমার মতো মানুষের ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আমি এই ভয়টাই পেয়েছি পুরো জুলাই আন্দোলন জুড়ে। সাধারণ আন্দোলনে এমন দৃশ্য দেখা যায় না, এমন কিছু ঘটেও নাই, যা এই আন্দোলন জুড়ে হচ্ছিল। যারা শিবিরের কার্যক্রম সম্পর্কে জানত, যারা শিবিরকে কাছ থেকে দেখেছে তারা আমাকে শুরুতেই বলছিল যে ভাই, এগুলা শিবিরের কাজ! আমিও তাই মনে করতাম কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম না। কারণ দেখছি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, সবাই শিবির? এখন দেখা যাচ্ছে সবাই শিবির হওয়ার দরকার নাই, শুধু বিশাল ভেড়ার পালকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কিছু হলেই চলে! যদিও আমরা এখনও জানি না ঠিক কতজন শিবির এমন আত্মপরিচয় লুকিয়ে কাজ করে গেছে। শুধু মাথার কয়েকজনের পরিচয় জানা গেছে। কর্মীদের সংখ্যা কত, তাদের ভূমিকা ইত্যাদি জানা যায়নি, জানা যাবেও না সম্ভবত।
আজকে একটা ভিডিও দেখলাম, তাতে দেখা যাচ্ছে ডক্টর ইউনুস তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এই আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে। সেখানে তিনি বলেন, "He (Mahfuz) is known as Subedar behind the whole revolution, he denied repeatedly it’s not me many others …but now we recognise that there brain behind the whole thing … it’s amazing meticulously designed thing…it’s not just suddenly came it’s not like that…very well designed … even the leadership pattern …people don’t know who is the leader…you can’t catch one and say it’s over…it’s not over"
যারা জানার তারা জানত। ডক্টর ইউনুস নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেলেও ভালো করতেন, যে তিনিও জানতেন বৃহৎ এক পরিকল্পনা করা হচ্ছে সরকার পতনের। তাহলে হয়ত পুরোটা বলা হত, সত্য বলা হত। যাই হোক এগুলা এখন দিনের আলোর মতো সত্য, কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক।
যে প্রশ্ন দিয়ে শুরু করে ছিলাম, শিবির বা জামাত পরিচালিত এই আন্দোলনের ফলে যে সরকারের পতন তাকে গণ অভ্যুত্থান বলা যাবে কি না। এবং এতে দায় সরকারের কতটা? লাশের দায় তো নিতেই হবে। কিন্তু লাশ হওয়ার জন্যই যদি আসে? যদি পরিকল্পনাই থাকে আত্মঘাতী? যে কট্টর পন্থিদের কথা বলা হচ্ছে তাদের দ্বারা এইটা খুব অসম্ভব? একশ মরে যাব, দুইশ মরে যাব দেখে কীভাবে সরকার টিকে থাকে, এমন যদি আসল পরিকল্পনা হয়ে থাকে? আপনি কী করে টিকে থাকবেন? আর এমন লাশ পড়লে মানুষ মেনে নিবে না, রাস্তায় নামবেই, আর এটাই তো চাওয়া ছিল, ওইটাই পাওয়া হয়েছে, তাই না?
ডক্টর ইউনুসের বক্তব্যটা আবার খেয়াল করে দেখুন, তিনি একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন যে এইটা সুনিপুণ পরিকল্পনার অংশ। বলেছেন কে নেতা তাও খুব চাতুরটার সাথে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, একজন ধরা পড়লে আরেকজন তার জায়গা নিয়েছে। এই যে কর্ম পদ্ধতি এগুলা আমরা ইসলামিক কট্টর পন্থিদের মাঝে আগেও দেখেছি। বিশেষ করে মাহফুজ আলম, যাকে সন্দেহ করা হয় হিজবুত তাহরীরের সাথে সম্পর্ক আছে তার, তখন আরও পরিষ্কার হয় না? ওদের দ্বারাই তো সম্ভব। হোলি আর্টিজেনের মতো কাণ্ড যারা ঘটাতে পারে তাদের পক্ষে সম্ভব কী? এক্সট্রিমিস্ট সবাই যে এক হয়নি তা আমি আপনি কী নিশ্চিত? আমরা জানি কি যে সমস্ত ইসলামিক এক্সট্রিমিস্ট্ররা এক হয়েই এমন একটা কাণ্ড ঘটিয়েছে? আমরা জানি না।
দায়ের আলাপে যাচ্ছি। তার আগে নোবেল জয়ীকে নিয়ে একটু বলি। লোকটাকে মহৎ, মহানুভব, বট বৃক্ষের মতো মনে করে অনেকেই। তিনি কেন নিচু মনের কাজ করবেন? তিনি কেন দেশ বিরোধী কিছু করবেন এমন বিশ্বাস অনেকেরই আছে। আমিও মেনে নিতে দ্বিধা করি বারবার যে তিনি আসলেই দেশ বিরোধী কিছু করবেন। কিন্তু এই কয়দিনে আমার বিশ্বাস টুকরোটুকরো হয়ে গেছে কয়েকবার করে। তার কথা গুলো খেয়াল করে দেখুন আবার। তিনি তিনি গর্ব করে যাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তিনি নিশ্চয়ই জানেন এই ছেলে সোজা ছেলে না, কেউ বলে শিবির, কেউ বলে হিজবুত তাহরীরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তার। এইটা তো বাস্তব সম্মত না যে একটা ছেলে খুব দুর্দান্ত পরিকল্পনা করেই আওয়ামীলীগের মতো শক্তিশালী একটা দলকে দেশ ছাড়া করে ছাড়ল। এইটা তো সম্ভব না। তো এই যে মাস্টার মাইন্ড তিনি নিশ্চয়ই কোন দলের আদর্শে বিশ্বাস করেন। অনেকেই যেমন বললাম বিশ্বাস করে হিজবুত তাহরীরের সাথে বা শিবিরের সাথে তার যোগাযোগ ছিল বা তিনি তাদেরি কর্মী বা নেতা। এই যদি হয় তার পরিচয় তাহলে একজন দেশ ভক্ত, দেশপ্রেমিক নাগরিক কী করে এই ছেলেকে নিজের সহকারী নিয়োগ দেয়, তাকে বিশ্ব দরবারে গর্ব করে পরিচয় করিয়ে দেয়? তার কী জানা নাই জামাত কী? শিবির কী? হিজবুত তাহরীর কী? তিনি সত্যই বিশ্বাস করেন শুধু মাত্র পরিকল্পনা করেই সরকার ফেলে দিয়েছে মাহফুজ আলম? যে জেনে বুঝে এমন একটা কাজ করল তাকে আমরা কী নামে ডাকব? যে নিজের স্বার্থে বা একটা দলের স্বার্থে, এমন কট্টর ইসলামিক দল গুলোর সাথে হাত মিলাতে দ্বিধা করলেন না! তিনি জামাত তো জামাত, গোলাম আজম বেঁচে থাকলে তার কোলে গিয়ে উঠতেও দ্বিধা করতেন বলে মনে হয় না।
আওয়ামীলীগের দায় অস্বীকার করার উপায় নাই। এমন একটা বিশাল পরিকল্পনা হচ্ছে এইটা তারা জানে না এইটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। লাশ ফেলার দায় তো আছে। আত্মঘাতী হয়ে যাচ্ছে কিছু মানুষ এগুলা বুঝা উচিত ছিল না? অন্য কেউ, কোন কোন সোর্স থেকে গুলি করে মানুষ মারছে এইটা বুঝা দরকার ছিল না? সেই অনুযায়ী কাজ করা দরকার ছিল না? তা না করে সেই আগের ফর্মুলায় সব ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দিব বলে সমাধান করতে গেছে। ফলাফল চোখের সামনে!
কেউ কেউ বলবেন যে আওয়ামীলীগ যেমন করে বসে ছিল তাদের নামাতে এমন কিছুই দরকার ছিল। তা যদি সত্য হয় তাহলে এতদিন হল না কেন? কেন এমন লম্বা সময় ধরে মানুষ রাস্তায় নামল না? মানুষ এত এত অত্যাচারে শিকার হচ্ছিল, মানুষের রাস্তায় নামার কথা না? ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে, মানুষ পাত্তাও দেয় নাই। বিএনপি ডেকে ডেকে হয়রান হয়েছে, গণ মানুষ নামে নাই। কেন? কারণ গণ মানুষের কাছে মনে হয়েছে যেমন চলছে তেমন চলাই ভালো, এরচেয়ে ভালো আর কেউ চালাইতে পারবে না। নানান অপকর্ম সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে একটা পর্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে, যখন চোখের সামনে আসছে তখন ধরা হয়েছে, ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বিকল্প নাই বলে যে মতবাদ চালু ছিল তা এমনে এমনেই না। তার কিছু সার ছিল। এত খুঁজে, এত আয়োজন করে সবচেয়ে যোগ্য যে বিকল্প হাজির করা হল তার অবস্থা কেমন তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি না? বিকল্প নাই তাহলে খুব ভুল কি বলা হয়েছে?
কোন হিসাবে কোন যুক্তিতে দাগি সব আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে? কার বুদ্ধি? এইটা কোন বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ? এইটা একদিন কেউ আমাদেরকে নিশ্চয়ই জানিয়ে যাবেন। চট্টগ্রামের ডুলাহাজরায় যে সেনা অফিসার ডাকাত ধরতে গিয়ে মারা গেছেন, বলা হচ্ছে এই ডাকাতরা ৫ আগস্টর পরে জামিনে মুক্ত হয়েছে। বেলাল হোসেন নামের এই ডাকাত বেশিদিন আগে না, ২ জুলাই ধরা পরে। নয়টা মামলা আছে তার নামে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, ঘের দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে।২৪ সেপ্টেম্বর তাকে ধরা হয়েছে। কেউ জিজ্ঞাস করবে না তাকে ছাড়া হয়েছিল কেন?
ডক্টর ইউনুস লাফ দিয়ে যে রংপুর গিয়ে আবু সাইদের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন ক্ষমতা পাওয়া মাত্র, তিনি এই শহীদ সেনা অফিসারের বাড়ি যাবেন? তার পরিবারকে বুঝিয়ে বলবেন এই সব দাগি ডাকাতদের ছাড়ার মহৎ পরিকল্পনাটা? আমরাও জানতাম এমন একটা কাজের আসল কারণ!
আমরা দায় দিব আওয়ামীলীগকে, শেখ হাসিনাকে। কিন্তু একবার এই পরিবর্তিত সময়ে, মানে যখন সব পরিষ্কার হয়েছে যে এইটা একটা পরিকল্পিত আন্দোলনের ফসল তখন আমরা একবারও শেখ হাসিনা আগে কী বলে গেছে তা শুনব না? তার এই কথা গুলো যদি সত্য হয়, বাকি গুলোও কেন সত্য হবে না ভাবছি আমরা? তিনি বলে আসছিলেন জামাত শিবিরের তাণ্ডব এগুলো, আমরা বিশ্বাস করি নাই। এখন দেখা যাচ্ছে এগুলা সত্য, প্রধান উপদেষ্টা নিজেই দুনিয়ার কাছে তা বলে বেড়াচ্ছেন। তাহলে একটু চিন্তাশীল যদি কেউ হয়ে থাকি আমরা, আমরা কি বাকি কথা গুলো এখন আবার দ্বিতীয়বার শুনব না? আবার নতুন করে চিন্তা করব না? তিনি আর কি বলছেন? চট্টগ্রামের কিছু অংশ, মায়ানমার নিয়ে একটা খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাটি তৈরি করা হবে, এইটা বৃহৎ পরিকল্পনা, এমনই তিনি বলেছিলেন। আমরা তখন এগুলাকে খুব একটা পাত্তা দেই নাই। এখনও পাত্তা দিব না?
আমরা অবশ্যই আওয়ামীলীগকে দায় দিব। কিন্তু যারা আজকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছে এইটা একটা দুর্দান্ত পরিকল্পনার ফসল তখন আমরা কেন তাদেরকেও দায় দিব না? যে ছেলে গুলো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে তাদেরকে কি কেউ গিয়ে বলবে যে তারা আসলে দাবার গুটি ছিল, বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ ছিল? এতগুলো মানুষের জীবন গেল, কেউ তাদের পরিবারকে গিয়ে বলবে স্বৈরাচার পতনের জন্য আপনার সন্তানের লাশটা আমাদের প্রয়োজন ছিল? এমন একটা ঘোষণার পরে কেন এই আন্দোলনের পরিকল্পনাকারীদেরকে প্রশ্নের আওতায় আনা হবে না? কেন জিজ্ঞাসা করা হবে না যে তারা কতদূর পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছিল? যদিও এখন উত্তর হবে আমরা জীবন দিয়ে দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকব এমন পরিকল্পনা করেছিলাম, শেখ হাসিনা একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে গেছে, সরকার পতন হয়ে গেছে!
আসল খবর জানি না। যে ইউনুস সাহেব বিশ্ব দরবারে হাসতে হাসতে যা বলেছে সেই আলোকেই বললাম এগুলা। আজকে দেখলাম ছাত্রদলের বেশ কিছু নেতা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইউনুস সাহেবের এই ঘোষণার। তারা বলছে আমরা সব কিছু করলাম, তারেক জিয়া টাকা দিল, ঢাকা অচল করে দিলাম আমরা, যখন সব ছাত্ররা পিছিয়ে গেল তখন আমরা ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে রাস্তায় নামলাম আর আজকে দুনিয়ার সামনে বলা হচ্ছে মাস্টার মাইন্ড হচ্ছে মাহফুজ আলম! এই হচ্ছে অবস্থা! আর একে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বলা হচ্ছে, গণ অভ্যুত্থান বলা হচ্ছে। হয় এগুলা সত্য, এরাই সব করেছে, মানুষ মারার প্লান করেছে, মরেছে নিজেরাও, মরিয়া হয়ে সরকার পতনের চেষ্টা করেছে আর না হয় জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমে সরকারের পতন ঘটিয়েছে। যদি সব তারাই করে তাহলে সাধারণ মানুষ যারা মারা গেছে, আহত হয়েছে তাদের সাথে চরম বেইমানি করা হল না? প্রকারন্তে বলা হল না তোমরা কিছুই কর নাই, আমরাই সব করছি! অলরেডি দুইপক্ষ হাজির সব কৃতিত্ব নেওয়ার, তাহলে সাধারণ জনগণ কী করল? ভেড়ার পালের ভূমিকা?
এত কিছুর পরেও এইটা সত্য যে হত্যাযজ্ঞের দায় আওয়ামীলীগকে নিতে হবে। এত গুলা লাশ যে কারণেই হোক, যেভাবেই হোক, যেহেতু তাদের সরকার ছিল তাই দায় তাদেরকে নিতে হবে। নিজেদের ব্যর্থতা শিকার করতে হবে, ভুল গুলোকে বুঝতে হবে, তারপরেই যদি সামনে আগানোর পরিকল্পনা করা যায়। এ ছাড়া উত্তরণের অন্য কোন পথ নাই। সামনে কঠিন সময় আসছে। ডক্টর ইউনুস দানব হয়ে আওয়ামীলীগকে শেষ করে দেওয়ার জন্য সম্ভবত এমন কোন পথ নাই যা তিনি চেষ্টা করবেন না। আইন উপদেষ্টা খালেদ মহিউদ্দিনের অনুষ্ঠানে বলছে আওয়ামীলীগকে নিয়ে কী করা হবে তা এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি, সংগঠনকে বিচার তারা করতে চান না, নিবন্ধন বাতিল এমন কিছু ভাবা হচ্ছে ইত্যাদি! এদের সাথে টক্কর দিয়ে সামনের রাজনীতির পথ খুঁজতে হবে আওয়ামীলীগকে।
আচ্ছা, ৫ আগস্টের আগের সব মৃত্যুর দায় যদি আওয়ামীলীগকে নিতে হয়, যা নিতেই হবে তাদেরকে, ৫ তারিখের পরের মৃত্যু গুলোর দায় কেন ইউনুস সরকার নিবে না? ৫ আগস্টের আগে যতজন মারা গিয়েছে তারপরে ততজন বা তারচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে, সেই দায় কেন ডক্টর ইউনুস নিবে না?
[img]
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।