এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • যে আঁধার আলোর অধিকঃ পর্ব ৬

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)


  • আজ সকাল থেকেই অন্ধকার করে বৃষ্টি নেমেছে। জানলা দিয়ে হিমালয় দেখতে দেখতে সাদা ধোঁয়াশায় লেপা সুররিয়ালিস্ট ছবি হয়ে গেল। ঠান্ডা হাওয়ায় একটু একটু কাঁপন লাগছে। নিধির শরীর ভাল যাচ্ছিল না। এইসব তর্কবিতর্কের মাঝে উনি একটু জায়গা করে লম্বা হয়ে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে পড়লেন।

    ও এখন নিধিকে দেখছে। কত শান্ত নির্ভরতায় ঘুমিয়ে পড়েছেন। এখন আর ওঁকে রহস্যময় নির্জ্ঞান মনের কুটিল-বক্রপথের নাবিক বা টারো কার্ডের রাণী মনে হচ্ছে না। বরং যেন পাশের বাড়ির খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়া মেয়েটি।

    চওড়া কাঁধের গুঁফো চল্লিশছোঁয়া নতুন ভদ্রলোকটি একদিন দেরি করে এসেছেন।

    ফলে উনি বুঝতে পারেন নি যে এই গ্রুপ ইতিমধ্যে প্রথমদিনের এক-একজনের জীবনের নানা পাঁচমেশালি গল্প শোনার স্টেজ ছাড়িয়ে গেছে।
    এখন গ্রুপ কথায় কথায় বলেঃ হিয়ার অ্যান্ড নাউ-- ইয়েস; দেয়ার অ্যান্ড দেন-- -নো।
    আবার ধুয়ো ধরে — পাস্ট ইজ হিস্ট্রি, ফিউচার ইজ মিস্ট্রি, প্রেজেন্ট ইজ ওনলি রেলিভ্যান্ট।

    কাজেই কথা বল শুধু বর্তমান নিয়ে আর বর্তমানের অনুভূতি নিয়ে। তাই আমরা আদৌ কারও পুরনো দিনের ইতিহাস বা পুরাণকথা শুনতে উৎসাহী নই। কারণ, আগে কারও ব্যক্তিজীবনে কী ঘটেছিল তার কোন নিরপেক্ষ এভিডেন্স নেই; এবং সবাই নিজের কথা বলতে গিয়ে একটু বাড়িয়ে বলে। আর স্মৃতি কখনও সখনও প্রতারক হয়।

    শ্রীমান দাস ভাবে—হক কথা; রবি ঠাকুর কি নিজেই বলেন নি যে স্মৃতির পটে যেই আঁকুক, সে ছবিই আঁকে?
    শ্যামলা ছেলেটি আজ এক বড়সড় এস এল আর ক্যামেরা নিয়ে ক্লাসে এসেছে। সবার চোখ সেদিকে মাঝে মাঝে ঘুরে যাচ্ছে। শুধু দুই ফেসিলিটেটর যেন দেখেও দেখেন নি ।

    নতুন প্রতিভাগী নিজের কথা শুরু করতেই শ্যামলা ছেলেটি বলে উঠল — আ-আপনার কথা স্পষ্ট হচ্ছে না। ধীরে বলুন।
    সবাই নতুন লোকটির দিকে তাকিয়ে, দাসবাবু বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে। কখন বৃষ্টি থেমে গেছে, মেঘ সরে গেছে। নীলচে হিমালয়ের গায়ে রোদ্দূর ঝলমল করছে। সবুজ গাছপালা স্পষ্ট, এত কাছে যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে।

    নতুন ভদ্রলোক এবার কয়েক সেকেন্ড ওর দিকে তাকিয়ে থেকে লম্বা শ্বাস টানলেন। তারপর চশমা খুলে রুমাল দিয়ে সাফ করে আবার চোখে পরে প্রশ্নকর্তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন।
    -- শ্রীমান ফটোগ্রাফার! এই যে আপনি একটু আগে বল্লেন যে আমার কথা ঠিক স্পষ্ট হচ্ছে না, এটা পাঁচ বছর আগে কেউ বল্লে তাকে আমি মাটিতে শুইয়ে দিতাম।
    -- কেন?
    -- যে অতীতকে আমি পেছনে ফেলে এসেছি, আপনি তাকে আবার সামনে নিয়ে এলেন।
    -- মানে?

    -- আমি ছোটবেলা থেকে একটু তোতলা ছিলাম। বাবা আমাকে দূরদূর করতেন।
    বলতেন- দু-দুটো মেয়ের পর একটি পুত্রসন্তান, সেও তোতোয়া?
    এ তো জীবনে প্র্যাকটিক্যালি কিছু করতে পারবে না। আমাকে খাওয়াতে তো পারবে না, বরং আমার বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

    আমি মরমে মরে যেতাম। প্রাণপণে চেষ্টা করতাম যাতে বাবার সামনে ভাল করে কথা বলতে পারি। বাবার একটু প্রশংসা পাই।
    কিন্তু, যত এতসব ভেবে বাবার সামনে যেতাম, বাবা কড়া চোখে তাকাতেই সব গুলিয়ে যেত। কখনো-সখনো, বলতে লজ্জা নেই, প্যান্ট ভিজে যেত।
    বাবাকে এড়াতে শুরু করলাম। অধিকাংশ সময় কাটাতাম স্কুলে আর মাঠেঘাটে।

    কিন্তু কেউ আমাকে তোতলা বলে দেখুক তো, এমন মার মারতাম যে বাছাধন আর দ্বিতীয়বার পেছনে লাগতো না। মারতাম ও মার খেতাম।
    এমন মারতাম যে বিপক্ষের দাঁত, ঠোঁট –সব মিলিয়ে কিছু রক্তাক্ত কান্ড।
    তারপর মার পড়তো আমার ওপরে। হয় বিরোধী দলের হাতে, নয় হেডমাস্টারের বেতের বাড়ি। আর বাড়িতে খবর গেলে বাবা তো আছেনই।
    কিন্তু একদিন এমন ঘটনা ঘটল যা আমি জীবনে ভুলতে পারি নি।

    আমার মা মারা যেতেই একমাসের মধ্যে বাবা আবার বিয়ে করলেন।
    নতুন মা আমার থেকে মাত্র একবছরের বড়।
    -- তো?
    -- আমি আর থাকতে পারলাম না। একটি পনের ইঞ্চি ছুরি ধার দিয়ে জামার মধ্যে লুকিয়ে একদিন বাবার অনুপস্থিতিতে মার ঘরে এলাম। উদ্দেশ্য? মাকে খুন করব। কেন বাবা আরেকজনকে আনলেন? আমি কি যথেষ্ট নই?
    বাবার সব কিছু জরুরত পুরো করা, দেখাশোনা, রান্নাবান্না করা—সব আমিই তো করয়ে দিতে তৈরি ছিলাম। আমার আর বাবার মাঝে আর একজন কেন আসবে?

    সবাই চুপ।
    নিধি বল্লেন-- এইসব গল্প শুনে বক্তা রামজীবন তিওয়ারির সম্বন্ধে আপনাদের কী কী অনুভূতি হচ্ছে কেউ বলবেন কি?

    ফুলটুসি বলে উঠলো--- বলার কি আছে? ফালতু লোক। এই অরুচিকর কাহিনীটি অন্ততঃ আমি শুনতে রাজি নই।ইন ফ্যাক্ট, আমার সন্দেহ ঘটনাটি আদৌ সত্যি নয়। বাবাজীবন এটা রঙ চড়িয়ে বলছে, যাতে আমাদের সহানুভূতি পায়, মেয়েদের ইম্প্রেস করে দেরিতে আসা মাপ হয়ে গিয়ে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
    সব মিলিয়ে ফুটে উঠছে এমন একটি ইতর মানুষের ছবি আমি যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইনা।

    রামজীবন তিওয়ারি বল্লেন-- আপনারা ভাবতে পারেন যে আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি বা রঙ চড়িয়ে বলছি। সেটা আপনাদের প্রেরোগেটিভ, আমি কি বলব!
    কিন্তু এখানে আমি মিথ্যে বলতে আসিনি।
    সেরেনা বল্লেন-- আপনি মেয়েদের ইম্প্রেস করতে এসব বানিয়ে বলছেন তা বলছিনে। কারণ এইসব গল্পে মেয়েরা আদৌ ইম্প্রেস হয় না। কিন্তু বীভৎস রসের গল্পে সবার চোখ আপনার দিকে যাবে, তাতো নিশ্চিত। তবে ছোটবেলায় কি করেছিলেন সেসব এখন বলতে গেলে আপনার অজ্ঞাতসারেই একটু কল্পনার রঙ লেগে যায়। তাই বলছি এসব কেন বলছেন?

    রামজীবন কিছু বলার আগে গঙ্গারাম বলে ওঠে - আমি কিন্তু ওই গল্পের পরিণতিটুকু জানতে ইচ্ছুক। আপনি পনের ইঞ্চি ছুরি নিয়ে সৎমাকে মারতে গেলেন। মারলেন না কেন? মানে সত্যি সত্যি মেরে থাকলে হয়তো সারাজীবন জেলে থাকতেন। কিন্তু এখন জ্বলজ্যান্ত আমাদের সামনে বসে গল্প শোনাচ্ছেন তো, তাই বলছি।
    --- আহা উনি হয়তো জুভেনাইল ডেলিংকোয়েট হিসেবে ""বাল অপরাধ সংশোধনাগার'' এ কিছুদিন কাটিয়ে এসেছেন। আফটার অল্‌, তখন ওনার বয়স কত ছিল তা দেখতে হবে না!
    কেউ ফুট কাটে।

    বিক্রম শোলাংকি হাত তুললেন--- ওনাকে বলতে দেয়া হোক, যদিও এসব হিয়ার অ্যান্ড নাউ না হয়ে দেয়ার অ্যান্ড দেন ক্যাটিগরিতে পড়ছে।
    -- হ্যাঁ, আমি ছুরি নিয়ে সৎমাকে মার্ডার করতেই গেছলাম। মেরেই দিতাম কিন্তু মারতে গিয়ে টের পেলাম যে মা অন্তঃসত্ত্বা, মায়ের পেটে বাচ্চা রয়েছে।
    সেই বাচ্চা আমার সবচেয়ে ছোটবোন। আমিই ওকে আজ বড় করে লেখাপড়া শিখিয়ে তারপর বিয়ে দিয়েছি।
    -- কেন, আপনার বাবা?
    -- বাবা ওই ঘটনার পর আর বেশিদিন বাঁচেন নি।
    গল্প বেশ জমে উঠেছে এমন সময় দুই ফেসিলিটেটর, থুড়ি সহেজকর্তা ভাবলেশহীন মুখে উঠে রওয়ানা দিলেন।
    মহা বেরসিক তো!

    রাত্তিরে খাওয়াদাওয়া কোন রকমে শেষ হয়েছে এমন সময় আলো চলে গেল।
    নিকষকালো আঁধার। শুধু এখানে নয়, সামনে হিমালয়ের কোলে কোথাও কোন আলোর রেখা নেই। বাইরে আবার ঝুপঝুপিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। ভেজা হাওয়ায় কেমন যেন শিহরণ। কোনরকমে হাত-টাত ধুয়ে পেছল পাকদন্ডী পথে অন্যের হাত ধরে আর মোবাইলের আলোয় পথ দেখে নিজের ঘর এবং বিছানায় পৌঁছনো গেল।
    আজ রাতে বিজলী আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

    গঙ্গারাম দাসের ভুতের ভয় নেই। তবে সাপ আর আরশোলার ভয় আছে। এখানে পাহাড়ের ওপর সাপ থাকার কথা, যদি একটা দুটো অন্ধকারে এই বৃষ্টির চোটে ঘরে ঢোকে, তারপর বিছানায়! বা রাত্তিরে ইয়ে পেলে বিছানা থেকে নামতে গেলাম আর পা পড়ল একটা ঠান্ডা হিলহিলে কারো গায়ে।
    পাহাড়ি চিতি বা অজগর! আফ্রিকান ব্ল্যাক মাম্বা!
    দূর ছাই! আফ্রিকান মাম্বা হিমালয়ের কোলে কোত্থেকে? কোথায় যেন পড়েছিল ব্ল্যাক মাম্বা সাপের কথা? ছোটবেলায় শুকতারা মাসিক পত্রিকায়? না না, বিভুতিভূষণের " চাঁদের পাহাড়''।

    ঘুমটা সবে এসেছে, এমন সময় এক ঝটকায় ও উঠে বসল।
    অন্য উইং থেকে জনাকয় ছেলে গান গাইছে। পরিচিত গান। ছোটবেলার হিন্দি ফিল্মি গান। দেশাত্মবোধক গান।
    "আও বাচ্চো, তুমে দিখায়েঁ ঝাঁকি হিন্দোস্তান কী। ইস মিট্টিকে তিলক করোঁ ইয়ে ধরতী হ্যায় বলিদান কী।''

    আরে ! মূল গানটা এরা বদলে দিয়েছে! তার বদলে গাইছে এক অশ্লীল প্যারডি।
    -" আও বাচ্চো তুমে দিখায়েঁ ঝাঁকি ফিল্মিস্তান কী, নুতন কো তুম--''
    অশ্লীল ক্রিয়াপদের ব্যবহারে অন্ধকারে বিশাল হল ঘরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত অবধি বয়ে যায় হা-হা হাসির ঢেউ।
    এবার অন্যপ্রান্ত থেকে কোরাসে শোনা যাচ্ছে অন্তরার লাইনগুলো
    -- " বৈজন্তীমালাকে পিছে দেবানন্দ যব দৌড়া থা,--"
    বর্ণনা বেশ চিত্রময় তো, ডিটেইলস্‌ এর কাজে ভর্তি। গঙ্গারাম দাসের ভেতর থেকে একটা হাসি কুলকুলিয়ে ওঠে।

    আচ্ছা, এই অশ্লীল প্যারডি কি করে হিন্দি বলয়ের লোকজন , রাজস্থান থেকে ইউ পি, মধ্যপ্রদেশ- সবাই জানে? কয়েকদশক ধরে? সেই শ্রুতি সাহিত্যের মত? সাব -অল্টার্ন শ্রুতি না কি লোকগাথা?
    এইসব সাত সতেরো ভাবতে ভাবতে ও ঘুমিয়ে পড়ে।

    শিশুবিদ্যাপীঠ গার্লস্‌ স্কুল। কিন্তু ক্লাস ফাইভ অবধি ছেলেদের নেয়া হয়। গঙ্গারাম গেছে নতুন খাতা-বই সব নিয়ে সেশনের শুরুতে,ক্লাস থ্রি বিতে। ওরা পাস করে নতুন ক্লাসে এসেছে। একে অন্যের বইখাতা পরীক্ষা করে দেখছে। কার মলাট কেমন। কে নাম,ক্লাস বিষয় লেখা চৌকো লেভেল কেমন করে বইয়ের মলাটে বা খাতার মলাটে লাগিয়েছে।

    একজন বইয়ের শুরুতে কায়দা করে লিখেচে--
    এই বই যে করবে চুরি,
    পেটে তাহার পড়বে ছুরি।
    সামনে আছে পুলিশ ফাঁড়ি,
    ধরিয়ে দেব তাড়াতাড়ি।।
    বেশ তো, কিন্তু "ফাঁড়ি' কাকে বলে?
    ‘ফাঁড়া’ জানি কিন্তু ফাঁড়ি?
    সে কি রে! তোরা ফাঁড়ি কাকে বলে জানিস না? দাঁড়া, ফাঁড়ি হচ্ছে--।

    ক্লাস টিচার প্রতিভাদির হাত ধরে ক্লাসে ঢুকছে সাদা টপ ও নেভি ব্লু স্কার্ট পরা একটি মেয়ে। তার সদ্য বেঁধানো কানে সোনার পাতলা তার। কিন্তু এদিক-ওদিক ছটফট করা উজ্বল চোখজোড়া যেন মার্বেল খেলার কাঁচের গুলি।
    টিফিনের ছুটির পরের পিরিয়ড থেকেই ও এসে গঙ্গারামের পাশের খালি জায়গাটিতে বসে পড়ে। ওর নাম অর্পিতা। ওর বাবা চন্দ্রপুরা থেকে বদলী হয়ে এসেছেন।
    পিরিয়ডের ফাঁকে ও গঙ্গারামকে শিখিয়ে দেয় শ্যামল মিত্রের হিট গান "চিনি আমি চিনি, ওগো নন্দিনী''র প্যারডি।

    ''গুনি আমি গুনি, সেইদিন গুনি,
    কবে হবে মোর সহধর্মিণী''।
    বেশ মজার তো!

    "দেখেছি তোমায় আমি দুপুর বেলায়,
    কলেজের ফাঁকে আর সিনেমাতলায়''।
    ছুটির পর বাড়ি ফিরে জামাপ্যান্ট বদলাতে বদলাতে ও গাইতে থাকে সদ্যশেখা দ্বিতীয় অন্তরা।

    "তোমার বাবাকে তুমি বুঝিয়ে বলো,
    বেকার হলেও আমি ছেলেটি ভালো।
    প্রেম করে আমি তো গো কেটে পড়িনি''।

    -- আর একবার যদি এইসব ফালতু গান গাইতে শুনি তবে তোর স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে দেব।''
    ছোটকা কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে থাকেন।

    --উঠিয়ে দাসজী! নাস্তা কা টাইম হো গিয়া। কিতনা সোতে রহোগে?
    জানলা দিয়ে ঢুকে বিছানায় গড়াচ্ছে সোনালী রোদ্দূর। হেসে উঠছে বৃষ্টিস্নাত হিমালয়ের সারিবদ্ধ পাহাড়চুড়ো।

    ১০

    আজকে সকাল থেকেই চারদিকে একটা খুশি খুশি ভাব। বাংলাদেশের শরৎ সকালের মত হালকা মেঘের অলস গতিতে ভেসে যাওয়া আর ঝিকিমিকি রোদ্দূরের ছোঁওয়ায় হিমালয়ের গায়ের চাদরের মিনিটে মিনিটে রঙ বদলানো,-- কোথাও একটা ছুটি ছুটি ভাব। এখানে বি এস এন এল আর রিল্যায়েন্স মোবাইল কাজ করছে না। ফলে অল্পবয়সী ছেলেছোকরার দল লাজুক মুখ করে গঙ্গারামের কাছে ওর এয়ার টেল মোবাইল চাইছে, বউয়ের সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার যে!

    দাসবাবু সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অতিপ্রিয় "বড়ে ভাইয়া'' বা "তাউজী''(জ্যেঠু) অবতারের রূপ ধরলেন।
    -- হ্যাঁ, হ্যাঁ, বেটার হাফের সঙ্গে কথা বলবে বৈকি! না হলে অন্যায় হবে। না-না, একটু কেন, বেশি করে, বেশ অনেকটা করে কথা বল। বিল-টিল নিয়ে তোমাদের চিন্তা না করলেও চলবে; আমার পোস্ট-পেড্, তায় অসীমিত কল। হুঁ হুঁ বাবা!

    আমার মধ্যে কি একটা দেখনদারির, একটু শো-অফ করার প্রবৃত্তি রয়েছে? এই টি-গ্রুপ মেথড দিয়ে নিজেকে আয়না দেখালে কেমন হয়? আরে কেমন হয় আবার কি? এটাই তো নিজের উপর কাজ করা—ওয়ার্কিং অন ওয়ান’স ওন সেলফ, টু নো দ্য ড্রাইভিং ইমোশন বিহাইন্ড এ স্পেসিফিক অ্যাকশন।

    দলের মধ্যে যে আশুকবি, অর্থাৎ চটজলদি ছন্দ মিলিয়ে অন্ত্যমিল দিয়ে ছড়া বানাতে পারে, সেই ফচকে কল্‌কল্ করে ওঠে।
    --ও কিতাব, কিতাব নহীঁ,--- জিসকা কোঈ কভার নহীঁ,
    ও লড়কী, লড়কী নহীঁ,--- জিসকা কোঈ লাভার নহীঁ।
    ও দাসসাহাব ভী সাহাব নহীঁ, গর দারু পিকে "সোবার' নহীঁ।

    মলাট- না-জোটা বইগুলো সব করুণ রয়েছে চেয়ে,
    নবযৌবনে জোটেনি প্রেমিক? সেই বা কেমন মেয়ে!
    দাসবাবু হায়, চেষ্টা চালায়, কিন্তু বড়ই ঢ্যাঁটা,
    দু-ফোঁটা পেটেতে গেলে বেসামাল, সায়েব বলিবে কেটা?

    সবাই হেসে ওঠে। কিন্তু এই হতচ্ছাড়া ছড়া শুনে আমার হাড়পিত্তি জ্বলে যায়।
    -- অ্যাই শোন্‌, তোর কাব্যপ্রতিভা রেলগাড়ির বাথরুমে গ্রাফিতি লেখার জন্যে একেবারে ফিট; তার বেশি নয়।
    ---- রেগে যাচ্ছেন কেন সাহেব, আর দুদিন পড়েই সব ঘরে ফিরবে, সেই আনন্দ! তন্ত্রসাধনার গুহা থেকে মুক্তির আনন্দ।

    (চলবে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:২২537439
  • পড়ে চলেছি। 
    আমি যে এই রকম ট্রেনিং নেবনা, এইটা নিশ্চিত।
    (কেকের বুনো ঘোড়ার পিঠে চড়ার গল্প মনে আসে‌। সেটাও আমি করবনা। )
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন