এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • যে আঁধার আলোর অধিকঃ পর্ব ১৩

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১৫২ বার পঠিত
  • ১০
    সকালে খাওয়ার টেবিলে আজ আবদুল্লা আর ওর পাশে বসেনি।স্নান করতে দেরি হল নাকি? নাকি এখনো বৌ আর ছেলেদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছে? থালায় হালুয়া-পুরি আর দই নিয়ে হাসি মুখে বিনীতা এসে গঙ্গারামের পাশে বসলো।
    আজাকে ওর পরনে গাঢ় চকোলেট রঙের ঢোলা কুর্তা আর সালোয়ার, কপালে একই রঙের টিপ আর হেয়ার ব্যান্ড।আর নেল পলিশ? কি হল ওর? ও মেয়েদের ব্যাপারে উদাসীন বল্লে মিথ্যে বলা হবে। কিন্তু হেয়ার ব্যান্ড? নেল পলিশ? কালে কালে হল কি? এর পর কি ওদের অন্তর্বাসের রং নিয়েও ভাবনা-চিন্তা শুরু হবে!

    নাঃ, এগুলিই কি বুড়ো বয়সের ইয়ে? তবে কি প্রস্টেট বেড়েছে? এইবয়সে সম্ভাবনা থাকে আর তখন এইধরণের উড়ু উড়ু ভাব হয়।
    রায়পুরে ফিরে গিয়ে বৌকে না জানিয়ে প্রস্টেট চেক করাবে কি?
    -- আছ কোথায়, শ্রীমানজী? এখানে? নাকি দিল্লিতে? নাকি রায়পুরে বৌয়ের সামনে অ্যাটেনশান হয়ে রিপোর্টিং করছ?
    চমকে উঠে দেখে বিনীতা ওর মুখের সামনে হাত নাড়ছে।
    -- কী? ঠিক বলেছি না? তোমার মত বাঙালীপুরুষদের বিলক্ষণ চিনি। এরা ভীষণ ভীতু আর বৌ-ন্যাওটা হয়।
    -- আচ্ছা! বিয়ে না করেই এত কিছু জেনে বসে আছ?
    এটা কি বলল ও! না বললেই ভাল হত, কেন যে একটু ভেবে মুখ খোলে না?

    বিনীতার চেহারায় কি একটু মুখের-ওপরে-মেঘ-ভেসে-যায়?
    ও হাত নেড়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গী করে তারপর উত্তেজিত হয়ে ডাইনিং হলের বিপরীত কোণায় আঙুল তুলে ইশারা করে।
    -- ওদিকে দেখ? কি, আজকের হিরোকে চিনতে পারছ? একেই বলে মেটামরফোসিস। কিন্তু রিভার্স প্রসেস। মানুষ থেকে গুবরেপোকা না হয়ে পোকা থেকে মানুষ!

    হরিদাস অবাক হয়ে তাকিয়েই থাকে। হলঘরের নৈঋতকোণে এক লম্বা টেবিল। সেখানে একগাদা জুনিয়র ব্যাচের মেয়ে বসে খাচ্ছে। খাচ্ছে কম, হল্লা করছে বেশি। ওদের মধ্যে মাত্র দুজন ছেলে। কিন্তু পিংক টি-শার্ট পরা মানুষটি যে বড্ড চেনা। ও বোধহয় কোন শের শোনাচ্ছে বা জোকস্‌। হাসির হর্‌রা উঠছে, মেয়েগুলো টেবিল চাপড়াচ্ছে। আওয়াজ উঠছে -- এনকোর! এনকোর! ইরশাদ! ইরশাদ!

    হ্যাঁ, চেষ্টা করছে, আবদুল্লা অপরিচিত মেয়েদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করছে।

    আজকের হট সীটে কৈলাশ। লম্বা ছেলেটির টোন আপ পেশি। গতবছর মুসৌরির কাছে কেম্পটি গ্রামের ওয়ার্কশপে এর সঙ্গে ওর দোস্তি হয়। বৃষ্টিভেজা হিমালয়ের পাকদন্ডী অজানা পথে এই ছেলেটিই ওর ভারি স্যুটকেস অনায়াসে বয়ে নিয়ে ওকে বাঁচিয়েছিল।

    কিন্তু কথা হচ্ছে দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে, এর যে কোন হেলদোল নেই। বয়সে সবচেয়ে ছোট , হ্যান্ডসাম, তায় মুখে একটি টুথপেস্ট হাসি---সবাই একে একটু প্রশ্রয়ের চোখে দেখে।
    কিন্তু আজ ও হট সীটে?
    নিশ্চয়ই অ্যানাকোন্ডা চুপিসাড়ে কাউকে উসকেছে; ওয়ালিয়া মহা চালু, একদম চলতা-পূর্জা আদমী!

    সবাই চাইছে কৈলাশ কিছু বলুক। নিজের সম্বন্ধে, এই ওয়ার্কশপ সম্বন্ধে, হিয়ার অ্যান্ড নাউ প্রিন্সিপল্‌ সম্বন্ধে।
    কিন্তু ও কিছু বলছে না, শুধু মুখে একটি মোনালিসা হাসি কপি-পেস্ট করে রেখেছে। আরে বল্‌ না রে বাবা! এত্তগুলো লোক রিকোয়েস্ট করছে! এদের কোন দাম নেই!

    দাসবাবু যেন শুনতে পাচ্ছে অনেকগুলো পুরনো বাংলা গানের কলি।
    জয়ন্তঃ "বল,বল তোমার কুশল শুনি, তোমার কুশলে কুশল মানি।'
    বিনীতাঃ " বল্‌, গোলাপ মোরে বল্‌, তুই ফুটিবি সখি কবে?'
    রামজীবনঃ " বল সখি সে নাম আমার কানে কানে'।
    আবদুল্লাঃ "বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও'।
    ও এই সব দেখে গেয়ে ওঠে --বল্‌ মা তারা দাঁড়াই কোথা।

    কি আশ্চর্য্য! এত সাধাসাধিতেও যে কাজ হল না গঙ্গারামের ভাঙা গলার ইয়েতে ছেলেটা চমকে উঠে হাসিমুখে তাকাল। তারপর চড়া স্কেলে একটু নাকিসুরে গেয়ে উঠলো- মন রে, কৃষিকাজ জান না!

    সবাই অবাক। সেকি তুমি বাঙালী নাকি?
    -- আমি শিলচরের ছেলে। নেপালী হলেও বাংলা জানি। আমার ছেলেবেলার বেশির ভাগ বন্ধুই বাঙালী।
    -- বেশ, কিন্তু এখানে আমরাও তো বন্ধু। কিন্তু তুমি এমন করছ যেন এখানে থেকেও নেই। সবাই চেষ্টা করছে আত্মমন্থনের, চেষ্টা করছে "হিয়ার অ্যান্ড নাউ' প্রিন্সিপলের বা টেকনিকের ভিত্তিতে ডেটাভিত্তিক ফিড্‌ব্যাক নিয়ে নিজের আসল চেহারা চেনার। কিন্তু তুমি নিজের ইমোশন, ফিলিং কিছুই শেয়ার করছ না। লুকিয়ে রাখছ, কেন? এত সংকোচ কিসের! আমরা তোমাকে এবং পরস্পরকে হেল্প করতে চাই।

    খানিকক্ষণ চুপচাপ। ছেলেটা মাথা নীচু করে কিছু ভাবছে, বড় বড় শ্বাস টানছে, নিজের হাত দুটো উল্টেপাল্টে দেখছে।
    এবার গঙ্গারাম জিগ্যেস করতে শুরু করল।
    --আচ্ছা, এটা বল। তুমি নেপালী, শিলচরের ছেলে। এখন রাজস্থানের একটি বড় এনজিওতে কাজ করছ। আমার কৌতূহল-- শিলচর থেকে রাজস্থানে কেমন করে এলে?

    কৈলাশ হাসে। হাসলে ওর গালে বেশ টোল খায়। গঙ্গারামের মনে হয়-- আচ্ছা, ওর ক"টা গার্লফ্রেন্ড আছে?
    -- শিলচর থেকে রাজস্থানের গঙ্গানগরে আসিনি তো? আমি পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। শিলচরের রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে করেছি। বেঙ্গালুরুতে তিন বছর একটি মাল্টিন্যাশনালে কাজ করেছি। তারপর চাকরি ছেড়ে ওখান থেকে পাওয়া যোগাযোগে রাজস্থানে এনজিওর কাজ করছি।

    জয়ন্ত বলে ওঠে--" আরে , এতো প্রায় বুদ্ধদেবের রাজপাট ছেড়ে সন্ন্যাসী হওয়ার গল্প।'
    বিনীতা--" তুমি তো দেখছি ছুপা রুস্তম!'
    " সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই', রামজীবন বলে," কিন্তু এই বৈরাগ্যের কারণটা কি বলবে না? কোই করেজুয়া মেঁ তির? কোন কলজেতে তির বেঁধার গল্প'?

    কৈলাশ লাজুক হেসে মাথা নাড়ে।
    তারপর বলে, ‘দেখুন, সব চিকিচ্ছে সবার জন্যে নয়। কারো কারো হোমিওপ্যাথি কাজ করে না।আবার কারো কারো জন্যে হোমিওপ্যাথিই ঠিক। আমার মনে হচ্ছিল যে এইসব টি-গ্রুপ মেথড আমার জন্যে নয়।'
    -- তাহলে এলে কেন?
    -- আমার অর্গানাইজেশন পাঠিয়েছে তাই। একটু কৌতূহলও ছিল। আমি আর আবদুল্লাজি একই সংস্থার। ওনাকে শ্রদ্ধা করি। এতদূর একা আসবেন, তাই ওনার সঙ্গী হয়েছি। আগের বারের মত।'

    -- আমার মায়ের মৃত্যুটি আমি ঠিক মেনে নিতে পারিনি। না, না, কোন অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক নয়, আত্মহত্যাও নয়। কিন্তু অকালমৃত্যু। আমার বয়স সাত, মা চলে গেলেন। সেই অল্পবয়সেই কেমন মনে হত এর জন্যে দায়ী বাবার অবহেলা। মা চলে গেলেন অভিমানে।
    বাবা আবার বিয়ে করলেন।
    এল একটি বোন, ছোট ভাই। নতুন মা ভাল।

    ঘরে খাওয়া পরার কোন কষ্ট নেই। কাছের চা বাগানে বাবার ভাল চাকরি। কিন্তু বাবা আর আমার মধ্যে দুরত্ব বেড়ে গেল।

    ওনাকে ঠিক সহ্য করতে পারতাম না। বাবা আমার খেয়াল রাখতেন, চেষ্টা করতেন, সেটাই অসহ্য লাগত।তাই সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকার চেষ্টা করতাম। খেলে বেড়াতাম কাছের লেবার বস্তির বন্ধুদের সঙ্গে। বাড়ি ফিরতাম সন্ধ্যের পরে।

    বাড়িতে আমার ভালবাসার সম্পর্ক শুধু দিদিমার সঙ্গে। আমাদের সঙ্গেই থাকতেন। রাত্তিরে কথা বলতাম। যেন সব ব্যথা উপে যেত।
    দিদিমা চলে গেলেন। ঘর আরও অসহ্য হয়ে উঠল। চার-পাঁচদিন পরে পরে বাড়ি ফিরতাম। এখন বন্ধুদের বাড়িই আমার বাড়ি।

    একদিন বাবার মুখোমুখি হলাম। না, বরং বাবাই আমার মুখোমুখি হলেন। যা নয় তাই বল্লাম। বাবা হতবাক। কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল।''
    জয়ন্ত জলের বোতল এগিয়ে দিল।
    ঢকঢক করে খানিকটা জল খেল কৈলাশ। পা দুটো লম্বা করে ছড়িয়ে দিল। একবার আঙুল মটকালো, তারপর আবার বলতে শুরু করলো।
    --"পড়াশুনোয় ভালই ছিলাম, তাই ভাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চান্স পেলাম। কিন্তু ছুটিতে বাড়ি এসে বন্ধুদের বাড়িতে গেলে একটা জিনিস বুকে ধাক্কা মারত,-- গরীবি।“

    ছোটবেলায় অনায়াসে দৌড়ে ঢুকে গেছি বন্ধুদের টিনের বা খাপরার চালের ঘরে।
    ওদের মা-কাকিমা আমারও ঘনিষ্ঠ। ওদের বাড়ির খাবার খেয়েছি। সব কিছু আমার বাড়ির থেকে আলাদা। কিন্তু কত আলাদা তা নিয়ে কখনো ভাবিনি। সেই বয়সে এসব মনে দাগ কাটেনি।

    এখন হোস্টেল থেকে ফেরার পর এগুলো চোখে খোঁচা মারতে লাগল। বস্তির বন্ধুদের মধ্যে অনেকে পড়াশুনোয় ভাল ছিল। কিন্তু ওদের বাবা-মার স্কুলের বেশি পড়াশুনোর সামর্থ্য নেই।
    কেন এমন হবে? বাবার ওপর রাগ বেড়ে গেল।

    আরেকটা ব্যাপার হল জিমে যাওয়া। কলেজে বেধড়ক ঠ্যাঙানি খেতাম। রোগাপটকা দেখে যে সে মারত। কলেজে মেয়েবন্ধু জুটল। সে নিয়ে একবার বাওয়াল হল। মার খেলাম। আশ্চর্য্য! মেয়েটি ব্যঙ্গের হাসি হেসে চলে গেল।
    ঠিক করলাম জিমে যাব। নিয়মিত যেতাম। মাসল টোনড্‌ আপ হল। ট্রেকিং ক্লাবে যোগ দিলাম। সে এক নেশা।

    ছুটিতে বাড়ি এসে বস্তির বন্ধুদের নিয়ে ট্রেকিং ক্লাব করলাম।
    বাবা এসে বস্তির বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ নিতেন আমি ছুটিতে শিলচরে ফিরেছি কি না। কারণ হোস্টেল থেকে ফিরে বাড়ি না গিয়ে সোজা বন্ধুর বাড়িতে উঠতে লাগলাম।
    লুরুতে ভাল চাকরি হল। বছর দুই কেটে গেল।

    মন মানে না। মনে হয় এ আমার কাজ নয়। ঘরের কাছের আঁখো দেখা গরীবি-বঞ্চনা অসহ্য হয়ে উঠল। পথ কোথায়? আমার জন্যে কোন বকরূপী ধর্ম বসে নেই। উগ্রবাদে আমার আস্থা নেই। চাকরি ছাড়লাম। একটি যোগাযোগে চলে গেলাম রাজস্থানের এই মাঝারি এনজিওতে।

     গ্রামের মানুষদের মধ্যে কাজ করি। মন্দ নেই। কয়েক মাসে একবার বাড়ি যাই। এখন বাবাকে যেন খানিকটা বুঝতে পারি। কথা বলার চেষ্টা করি। দুজনেই। পারি না।
    এ'ব্যাপারে আপনাদের এই ওয়ার্কশপ, এই টি-গ্রুপ মেথড আমার খুব কাজে আসবে মনে হয় না।''
    সভা হল নিস্তব্ধ। অ্যানাকোন্ডা-ওয়ালিয়া যেন কিছু বলবেন। আমরা তাকিয়ে আছি। এমন সময় ঘন্টা বাজল। উনি চুপচাপ উঠে চলে গেলেন।

    ১১
    আজকের সেকন্ড সেশনে সবাই একটু আড্ডা মারার মুডে, তিব্বতীয় বৌদ্ধমঠের গুরুগম্ভীর ধ্যানমগ্ন ভাবটা একেবারে নেই। জয়ন্ত, বিনীতা আর গঙ্গারাম কথা বলতে থাকে আবদুল্লার নিজের ওপর পরীক্ষানিরীক্ষার সাহস নিয়ে।
    আবদুল্লা আজকাল অনেক বেশি হাসিখুশি। ও কাল শুতে যাবার আগে গঙ্গারামকে বলেছে-- "' সুবহ্‌ কা ভুলা অগর শাম তক ঘর লৌট আয়ে তো উসে ভুলা নহীঁ কহা জাতা।''
     মানে, প্রথম জীবনের ভুল যদি জীবন সায়াহ্নেও শুধরে নেয়া যায় তাহলে সেটা আর ভুল থাকে না। আর বলেছে- বিনীতাকে দেখ, এক আশ্চর্য মেয়ে। সারাজীবন বন্ধু হিসেবে ধরে রাখবার মত।

    এরপর কথা ওঠে কোলাকুলি বা হাগ্‌ করার ব্যাপারে পূর্বাগ্রহ নিয়ে। দাসবাবু এটাকে ওনার প্রেজুডিস বলে মানতে চাইছেন না। ওনার মতে এটা পশ্চিম থেকে ধার করা কালচারবিহীন নকলনবিশী। আজকের ছেলেমেয়েরা করছে, করুক। ওরা তো ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করে, তাই বলে আমরাও! এতো বাঙালভাষায় যাকে বলে " দেহাদেহি ভেকায় নাচে!''

    তুমূল তর্ক বেঁধে যায়।
    হটাৎ শেষনাগের শয্যা থেকে অ্যানাকোন্ডার হিস্‌ ভেসে আসে,--- এতে কোন অসুবিধা হওয়ার কী আছে, আমরা সেক্সুয়াল হাগিং আর নন্‌ -সেক্সুয়াল হাগিং এর তফাৎ বুঝতে পারলেই হল।
    ওরা ওয়ালিয়ার অস্তিত্ব প্রায় ভুলেই বসে ছিল।

    দাস  চটে ওঠে। হতভাগা অ্যানাকোন্ডা যখন তখন গুহা থেকে মাথা বের করে কেন!
    ও ঝাঁঝিয়ে ওঠে -- খুব বুঝতে পারি, কেন পারব না?
    -- কী করে বুঝতে পারেন একটু জানতে পারি কি?
    -- কেন, যে হাগিংয়ে শরীরে সেক্সুয়াল ট্রিগার পয়দা হয়?

    এমন সময় অফিস থেকে একজন স্টাফ রেজিস্টারের সঙ্গে একটি নোটিস নিয়ে ক্লাসরুমে ঢোকে। ওয়ালিয়া উঠে বসে রেজিস্টারে সই করে নোটিস রিসিভ করেন। তারপর, ক্লাস ছেড়ে চলে যান।এ'রকম আগে আরো দু'একবার হয়েছে। ফলে বাকিরা সবাই নিজেদের আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে।
    দাস বলে, " দেখলে? ওয়ালিয়া পর্য্যন্ত হাগিংয়ে সেক্সুয়াল ট্রিগারের কথা স্বীকার করেন। কাজেই আমি--'।
    জয়ন্ত বলে ওঠে," তো ক্যা?'

    আর আশ্চর্য, শুভা মুদ্‌গলও হামিসূচক মাথা নাড়ে।
    এরা বোধহয় বক্তব্যটি ঠিকমত বোঝেনি।
    -- "আমি বলছিলাম কি এর ভালো মন্দ দুটো দিকই আছে।'
    চশমা পোঁছতে পোঁছতে জয়ন্ত বলে--" এর মধ্যে খারাপটা কি দেখলে'?
    --" কেন ওই যে হাগিংয়ে সেক্স্যুয়াল ট্রিগারের সম্ভাবনা?'
    --" ধ্যেৎ! হোক গে সেক্স্যুয়াল ট্রিগার! হতেই পারে। একটা ফিজিক্যাল ফেনমেনন। তাতে গুড/ব্যাড কি আছে?'
    দাস সহজে জমি ছাড়বে না।
    -- হয়তো এই ট্রিগার মেয়েটির বা ছেলেটির অভিপ্রেত নয়। তাহলে?

    --- মেরী মাঁ! গুড/ব্যাড এক ভ্যালু জাজমেন্ট হ্যায়। ইসে এক ফিজিক্যাল ফেনমেনন কে সাথ কিউঁ জোড় রহে হো দাদা? দ্যাট টু, উইদাউট কন্টেকস্ট? কিশোরকুমার কা উয়ো গানা নহীঁ শুনে হো? ওহি " না কোঈ তেরী বস্‌ মেঁ জুলি, না কোঈ মেরী বস্‌ মেঁ'।
    দাসের হাঁ-মুখ বন্ধ হয় না। আর সেদিনের বেলাশেষের ঘন্টা বেজে ওঠে।

    ওয়ার্কশপের সপ্তাহ দেখতে দেখতে ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু এই অ্যাডভান্সড্‌ বেসিক ল্যাবের ছ'জনের অ্যানিমেটর বা ফেসিলিটেটর শ্রীল শ্রীযুক্ত সুরেশ ওয়ালিয়া কেন যেন ঠিক খুশি ন'ন। বলছেন না কিছু, কিন্তু কোথাও একটু উত্তাপের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।
    --" আরে, এত ভাবার কিছু নেই, ওটা অ্যানাকোন্ডার স্বভাব।" দাসবাবু ফোড়ন কাটেন।

    ওয়ালিয়া এলেন দশ মিনিট দেরিতে, বল্লেন একটি ইম্পর্ট্যান্ট শর্ট মিটিং ছিল। তারপরই অন্যদিনের মত অনন্তনাগের শয্যাগ্রহণ না করে সোজাসুজি মুখোমুখি হলেন বিনীতা শুভা মুদগলের।
    -- ম্যাডাম, তুমি এই কদিনের ওয়ার্কশপে ইন্টেন্সিভলি পার্টিসিপেট করেছ। আই শ্যুড সে অনেককে হেল্প করেছ ওপেন হতে। তোমার কিছু ইন্টুইটিভ ক্ষমতা আছে মানুষের বাহ্যিক ব্যবহার থেকে তার আন্তরিক ইমোশনকে চিনে নেয়ার।
     
    কিন্তু এই ওয়ার্কশপে তুমি কোথায়?
    আমরা শুভা মুদগলকে দেখছি। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, ভালো সাথী, চমৎকার কামেরাদারি। কিন্তু এইসবের মাঝখানে কোথায় হারিয়ে গেছে বিনীতা সায়গল। আমি তাকে খুঁজছি, এটা আমার দায়িত্ব। তার জন্যে কি পত্রিকায় হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ কলামে বিজ্ঞাপন দিতে হবে? মনে হয় তাতেও কোন লাভ হবে না। কেউ যদি হারিয়ে না গিয়ে আসলে ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকে তাহলে কি করে পাওয়া যাবে!
    কেন বিনীতা, কেন? তোমার ইনট্রস্পেক্‌শনের ডেটা কোথায়? নিজেকে কেন লুকিয়ে রেখেছ?

    --বলতেই হবে? একেবারে ব্যক্তিগত ব্যাপার।
    -- সেটা জেনেই তো এই ওয়ার্কশপের ফর্ম ভরেছ। এখন সংকোচ করলে চলবে?
    দাসবাবুর উসখুশ করা বেড়ে যায়।
    -- " এটা কি টিভি চ্যানেলের " সচ্‌ কা সামনা' গোছের রিয়েলিটি শো হয়ে যাচ্ছে না?'
    -- না, ওইসব শো কথা বলে "দেয়ার অ্যান্ড দেন' নিয়ে,বিগত সময়ে যা ঘটে গিয়েছে তা নিয়ে কনফেশনের মত। কিন্তু আমরা করছি টি-গ্রুপ মেথড, আমাদের বেসিস " হিয়ার অ্যান্ড নাউ' ম্যাক্সিম।
    শিলচরের নেপালী ছেলে কৈলাশ ফিসফিস করে গোদা বাংলায় বলে--" হল তো! বাঙালীর লোহা দেখলেই গুয়া চুলকোয়।''

    বিনীতা কথা বলে। একটু অপ্রস্তুত হেসে কপালের ওপর এসে পড়া চুর্ণ কুন্তল সরিয়ে দিয়ে কথা বলে। ওর ঠোঁটের ওপর , ওর কপালে এই গুলাবী-জাড়া বা হালকা শীতের দিনেও বিন্দু-বিন্দু ঘাম জমে ওঠে। কিন্তু আস্তে আস্তে শুভা মুদগলের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে পুরুষদের দুনিয়ায় একটি বিপন্ন অপ্রস্তুত ভ্যাবাচাকা খাওয়া মেয়ে--বিনীতা সায়গল।

    -" এখানে তো আমরা সবাই বন্ধু, একে অপরকে ট্রাস্ট করি। তাই না? আমি জানি খেলার নিয়ম অনুযায়ী এখানে যা বলব তা এই চারদেয়ালের মধ্যেই থেকে যাবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এথিকস্‌ কমিটির সার্কুলার তাই বলে বটে, কিন্তু বাস্তব জীবনে আমরা কি অত এথিক্স্‌ মেনে চলি? তাই ভয় করে, আমার বড় ভয় করে।

    আমি জানি আমি খুব মোটা, কলেজ জীবন থেকেই জানি সবাই আমাকে নিয়ে হাসে, রাস্তায় ঘুরে তাকিয়ে দেখে। আমি সুন্দর বলে নই, মোটা বলে। পাড়ায়, শপিং মলে, বাস টার্মিনাসে পেছন থেকে মন্তব্য উড়ে আসে--- এ মোটি! বাপ-মা বচপন সে ক্যা খিলাকর বড়া কিয়া?

    ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে রাস্তা দিয়ে কোন হ্যান্ডসাম ক্লাসমেটের সঙ্গে হাঁটতে সংকোচ বোধ করি। মনে হয় সবাই আমাকে দেখছে আর ভাবছে এই মোটি কি করে এমন ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
    নেপালী ছেলেটি বলে ওঠে-- " এটা কি কথা হল? খামোকা তিল কে তাল করছো? মোটা তো কি হয়েছে, এটা তো লাইফ স্টাইলের ব্যাপার। জিম যাও, সাঁতার কাটো, খাওয়ার থেকে ডালডা-ঘি-চিনি বাদ দাও। ব্যস্"
    -" বলা সহজ!" আবদুল্লা ফুট কাটে।
    কিন্তু রামজীবন তিওয়ারি বলে--" কৈলাশ তো নিজে জিম গিয়ে ওর মেয়েলি হাত-পা পেশিবহুল করে দেখিয়েছে। তাহলে উল্টোটা কেন হবে না? আর বা ঐ ধরণের কোন হেল্থ-ক্লাবে গেলে ওরা রিয়েলি খুব হেল্প করে। বিনীতা গেলে পারে। ইন ফ্যাক্ট, ওখানে আমার চেনা একজন---"।

    বিনীতা হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দেয়।
    --" আমি দিল্লির মেয়ে, আমি কি ওসব জানিনা, না চিনি না? সব করে দেখেছি। আমার ওজন, পৃথুলাবপু -- এসব আর বদলাবে না।"
    --কারণ?
    --" কারণ আমার মোটা হওয়ার কারণ শারীরিক নয়, ফুড হ্যাবিট নয়, ওটা সাইকোলজিক্যাল।"
    " তুমি কি আগে ডিপ্রেসনে ভুগতে?" গঙ্গারামের পাকামি।
    তুই ডিপ্রেসনের কী জানিস রে শালা! খালি টেকনিক্যাল টার্ম বলে ইম্প্রেশন জমানোর চেষ্টা!

    -- আমি নয়, দাদা! বহুদিন ভুগেছে। আসলে ছোটবেলায় বাবা মারা গেলে মা অথৈ জলে পড়ে যায়। মামারা সাহায্য করেছিলেন। আমি স্কুলের ডিঙ্গি পেরিয়ে গ্র্যাজুয়েট হলাম। ভাইয়া পড়ল আমাদের শহরের অনামা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, তাতেই মার কিছু চুড়ি-হার বেচে দিতে হল। ওগুলো নাকি আমার বিয়ে দিলে কাজে আসতো। আমি টিউশনের টাকায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করলাম।

    কিন্তু ভাইয়ার মন ভেঙ্গে গেল। ও চেয়েছিল আই আই টিতে ভর্তি হবে। তার জন্যে কোচিং নিতে রাজস্থানের কোটা শহরে যাবে। মামারা রাজি হলেন না। ওনাদের দোষ দিইনে, আমাদের জন্যে অনেক করেছেন। ওদেরও তো ছেলেমেয়ে আছে! কিন্তু কোথাও সুর কেটে গেল।
    ভাইয়ার মনে হল ওর উপরে আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। অনেকবার বলেছে --একবার সুযোগ পেলে করে দেখাব, তারপর ভালো চাকরি পেয়ে পাই-পাই চুকিয়ে দেব।

    কিন্তু হল না। ভাইয়া এনটিপিসিতে চাকরি পেল। সিংরৌলি প্ল্যান্টে পোস্টিং। কিন্তু ওর বন্ধুরা তো সব বাইরে গেছে। ভাইয়া হরদম ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে লাগলো। বলত ভালো লাগছে না। তারপর শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে সিংরৌলি যাওয়া ছেড়ে ঘরে বসে থাকতো। ল্যাপটপে কাকে কাকে কিসব মেইল করত। চাকরি গেল। ভাইয়া ঘর থেকে বেরোন বন্ধ করে দিল। বাতি জ্বালাত না। বলত বিল- পে হয় নি তাই লাইন কেটে দিয়েছে।

    মা সারাদিন কাঁদত। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি, ভাইয়াকে যে বড্ড ভালোবাসি। ডাক্তার দেখালাম, চিকিৎসা করালাম। সাইকিয়াট্রিস্ট, উনি আমার বন্ধুর দাদা। খরচ কিছু কম পড়ল।
    ভাইয়াকে ভালো করলাম। ও নতুন কোম্পানিতে যোগ দিল। এখন আমরা ভালো আছি।
    -- ধ্যেৎ, এসবের সঙ্গে তোমার মোটা হওয়ার সমস্যার কী সম্পক্কো? কেন সারবে না বলছ?
    দাস ঝাঁঝিয়ে ওঠে।
    --বলতেই হবে? তাহলে শোন।
    এই বলে বিনীতা চুপ করে যায়। কেউ কোন কথা বলছে না।
    এবার ও বোতল থেকে ঢকঢক করে খানিকটা জল খায়।

    তারপর ও যেন আনমনে নিজের সঙ্গে কথা বলছে এমনি ভাবে নীচুগলায় এক অদ্ভূত সিং-সং ভয়েসে বলতে শুরু করে," আমার সমস্যাটা সাইকোলজিক্যাল বলেছিলাম, কিন্তু এর উৎস ফিজিক্যাল।

    ছোটবেলায় আমার সঙ্গে একটা যা-তা ঘটনা ঘটেছিল। আজকাল যাকে বলে চাইল্ড অ্যাবিউজ। ঘরের মধ্যেই, আমার ছোটমামা। পন্ডিত মানুষ। বেশ নামকরা লেখক। প্রতিষ্ঠিত হিন্দি ম্যাগাজিনে ওনার গল্প-প্রবন্ধ বেরোয়। আমাকে খুব আদর করতেন, চকোলেট দিতেন। আমি একটু গাবলু-গুবলুগোছের ছিলাম। অনেক গল্প বলতেন, বেড়াতে নিয়ে যেতেন। আমার স্কুলের ফীসও দিয়েছিলেন। আমি অনেকদিন কিছু মনে করিনি। আসলে মনে করার মতন কোন কারণও ঘটেনি। ঠিক অস্বাভাবিক বলা যায় এমন কিছু ঘটেও নি।

    তারপর একদিন। দিনটা ছিল শনিবারের বিকেল। আমি তখন ক্লাস সেভেনে। মা গেছেন হনুমান মন্দিরে, ভাইয়া ক্রিকেট মাঠে। আমার শরীরটা ভাল লাগছিল না বলে ঘরে শুয়ে ছিলাম। ছোটমামা এলেন। শরীর খারাপের কথা শুনে আদা দিয়ে চা করে দিলেন। তারপর একথা-সেকথা। হটাৎ কেমন একরকম করে তাকালেন। হেসে বল্লেন-- আরে, তুই তো বড় হয়ে গেছিস রে! দেখি তো কত বড়?
    উনি খেলার ছলে আমার বুকের মাপ নিলেন। বড় হতে চাস? আমার কথা শোন, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবি।

    তারপর উনি আমার জামা খুলে বুক চুষতে লাগলেন। বল্লেন-ভয় পাস্‌ না। তুই বড় হচ্ছিস। বড় হতে গেলে অনেক সহ্য করতে হয়।
    এই খেলা চলল বছর দুই। আমার কখনো কখনো ব্যথা করত। দাঁতের দাগ বসে যেত। বলতাম, ছেড়ে দিন, বলতাম মাকে বলে দেব। উনি হাসতেন—বলে দে; দ্যাখ, দিদি কার কথা বিশ্বাস করে।

    তারপর যখন ক্লাস নাইনে ওঠার সময় আমার প্রথম মাসিক হল, তখন মা আমাকে অনেক আদর করল। আর ব্যাটাছেলেদের সংস্রব নিয়ে অনেক সাবধানবাণী ঝাড়ল। তখন আমি বল্লাম-- ছোটমামার কথা। মা ফ্যাকাশে হয়ে গেল আর বল্লো-- মুন্নি, আগে কেন বলিসনি।
    -- ভরসা পাইনি তুমি কাকে বিশ্বাস করবে। আর মামা যে আমার স্কুলের ফীস দেয়। যদি পড়া বন্ধ হয়ে যায়? আমি যে পড়তে চাই, মা!
    --- আগ লাগে অ্যায়সি পড়াই মেঁ; ওরে বেটি! এসব কথা তুই কেন ভাববি? তুই যে অনেক ছোট, এসব তো আমি ভাববো। মা কথা রেখেছিল। ছোটমামার এবাড়িতে আসা বন্ধ হয়ে গেল।কিন্তু আমাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ছেড়ে মিউনিসিপ্যালিটির হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে ভরতি হতে হল, ওটা যে ফ্রি!
    তখন থেকেই আমার মনের মধ্যে  ঢুকে গেল যে আমি এর জন্যে দায়ী।

    --- যত্ত বাজে যুক্তি! এমন দুর্ঘটনা ছোটবেলায় ঘটতেই পারে। কিন্তু তার জন্যে তুমি নিজেকে দোষী ভাববে আর মোটা হতে থাকবে? এসব তোমার নিজের তৈরি করা ভ্রম। তোমার মানসিক চাপের শারীরিক প্রভাব পড়তে পারে, তাই বলে এতটা?
    চশমার ফাঁকে জয়ন্তর চোখে রাগ গরগর করতে থাকে।

    -- মনের চাপ আর শরীরের পরিবর্তন-- এ'নিয়ে কতটুকু জান তোমরা? আমার মাস্টার্স সাইকোলজি নিয়েই। আর আমি নিজে ভুক্তভোগী। বলতে বাধ্য হচ্ছি ঘটনাটি ছোটমামার আসা বন্ধ হওয়ায় শেষ হয় নী, এর রেশ রয়ে গিয়েছিল । বছর আঠের-উনিশ হতেই আমার একটা অদ্ভুত শারীরিক উপসর্গ দেখা দিল। 
     
    মাসে-দুমাসে আমার ব্রেস্টের মধ্যে একটা চুলকুনি, তারপর অস্বস্তি , তারপর টনটনে ব্যথা শুরু হত। আমি ছটফট করতাম। একদিন ঘটনাচক্রে আবিষ্কার করলাম কেউ একজন মিনিটখানেক চুষে দিলে ব্যথাটা ম্যাজিকের মত চলে যায়। এটা কখন হবে কেউ বলতে পারে না।
    নিজেই এর সমাধান বের করলাম। 
     
    আমাদের ঘনিষ্ঠ পাঁচজন বন্ধুর গ্রুপ ছিল কলেজে। তিনজন মেয়ে, দুটি ছেলে। ওরা সাক্‌ করে দিত। যে কাছাকাছি থাকত সেই, বাই টার্ন। ওরা আমাকে সবাই "মাম্মি" বলে ডাকতো। এই গোপন চক্রের সবকটি বন্ধু আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছে। কেউ এই অসুখ নিয়ে আমাকে মিসইউজ্‌ করেনি।
    সভা হল নিস্তব্ধ। কেউ বুঝে উঠতে পারছে না কি করা উচিৎ।

    দাসবাবুর গলায় থুতু শুকিয়ে গেছে। মনে মনে কয়েকবার রিহার্সাল দিয়ে উনি বল্লেন," বিনীতা, কেউ তোমাকে বলেছে তুমি কত সুন্দর দেখতে?"
    বিনীতা চমকে উঠে মেঘেঢাকা চাঁদের মত হাসে, দুদিকে মাথা নাড়ে।
    -- " আমি তোমাকে বলছি-- তুমি খুব সুন্দর, অতুলনীয়া। সবার সামনেই বলছি।"
    বিনীতার হাসিতে লজ্জার অরুণিমা।
                                                                                          (আগামী কিস্তিতে সমাপ্য)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন