এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • বাংলা মুদ্রণের গোড়ার কথা

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ০৮ জুলাই ২০২৪ | ২৬৯ বার পঠিত
  • বাংলা মুদ্রণের গোড়ার কথা
    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়

    পর্তুগাল থেকে আবিসিনিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন এক ধর্মযাজক। সাথে রয়েছে ছাপাখানার যাবতীয় সাজ সরঞ্জাম। আবিসিনিয়ার পর্তুগীজ মিশনরিদের অনেকদিনের আবদার, একটা ছাপাখানা হলে কিছু গ্রন্থ ছাপিয়ে ধর্ম প্রচার করতে বেশ সুবিধে হয়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মুদ্রণে পারদর্শী ঐ যাজক ছাপাখানার মাল মশলা নিয়ে, পালতোলা জাহাজে চেপে,   পর্তুগাল থেকে চলেছেন আবিসিনিয়া। পর্তুগাল থেকে আবিসিনিয়া, উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে যেতে হত। যাতায়াতের পথে অধিকাংশ পর্তুগীজ জাহাজ গোয়াতে কয়েকদিনের জন্য নোঙর করত। গোয়া তখন পর্তুগীজদের উপনিবেশ। ঘরের বাইরে ঘর। একবারটি না গেলে চলে। গোয়ায় নামার পর নানা কারণে ঐ  যাজকের আর আবিসিনিয়া যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সালটা ১৫৫৬, দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের বছর। মুদ্রাকর রয়ে গেল তাই ছাপালখানাও রয়ে গেল। গোয়াতে তৈরি হল দেশের প্রথম ছাপাখানা। অনন্ত কাকবা প্রিয়োলকর তাঁর ‘দি প্রিন্টিং প্রেস ইন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে লিখেছেন যে ১৫৫৬ থেকে ১৬৭৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে গোয়ায় মোট ৩৪টি বই ছাপা হয়। তার মধ্যে ১৫৫৬ থেকে ১৫৬১ সালের মধ্যে ছাপা প্রথম পাঁচটি বইয়ের কোন সন্ধান নেই। ঐ ছাপাখানায়  মুদ্রিত প্রথম বইয়ের নাম ‘Conclusões e outras coisas’।

    ভারতের মুদ্রণের ইতিহাসে এটিই  প্রথম পদক্ষেপ। সবথেকে পুরনো যে বইখানি এখনও সংরক্ষিত আছে তার নাম ‘Compendio Spiritual da Vide Christaa’। ১৫৬১ সালে মুদ্রিত এই বইটির লেখক গ্যাসপার ডি লিও। ভারতে ছাপা হলেও ভারতীয় কোন ভাষার সাথে এই বইগুলির বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না। কাটল আরো কিছুটা সময়। ১৫৭৮ সালে প্রকাশিত হল ভারতীয় ভাষায় ছাপা প্রথম বই। ‘Thambiran Vanakkam’ নামে এই যুগান্তকারী বইটি ছিল পর্তুগীজ ভাষায় প্রকাশিত ‘Doutrina Christa’র অনুবাদ। বইটির তামিল হরফ তৈরি করেন ফাদার জোহানেস গঞ্জালভস। গোয়ার পর ১৬৭৪-৭৫ সাল নাগাদ বম্বেতে ছাপার কাজ শুরু হয়।

    গোয়ায় দেশের প্রথম ছাপাখানা আসার দীর্ঘ ২২৪ বছর পর বাংলা হাতে লেখা পুঁথির যুগ থেকে মুদ্রণের জগতে পদার্পণ করল।  অন্যান্য অনেক জায়গার মত বাংলায় ছাপাখানা কেবলমাত্র ধর্মীয় কারণে আসেনি। ১৭৬৫ সালে নবাবের থেকে বাংলায় দেওয়ানী সনদ পাওয়ার পর ইস্ট  ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই বৃদ্ধি পেল। রাজ্যপাট মসৃণভাবে সামলানোর জন্য বাংলা জানাটা খুবই জরুরি। ওয়ারেন হেস্টিংস এবং উইলিয়াম জোনসের উদ্যোগে কোম্পানির সাহেবদের মধ্যে স্থানীয় ভাষার চর্চা শুরু হল। যার মধ্যে বাংলা ছাড়াও ছিল সংস্কৃত, ফারসির মত আরো কিছু ভাষা। ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হলহেড ছিলেন কোম্পানির একজন রাইটার। কাসেমবাজারে কাজ করার সময় বাংলাটা বেশ রপ্ত করে ফেলেছিলেন। হেস্টিংসের নির্দেশে তিনি রামগোপাল ন্যায়ালঙ্কার, বাণেশ্বর বিদ্যালংকার, বীরেশ্বর পঞ্চানন, কৃষ্ণজীবন ন্যায়ালঙ্কার, কৃপারাম তর্কসিদ্ধান্ত, সীতারাম ভট্টাচার্য  প্রভৃতি পন্ডিতদের সাহায্যে প্রাচীন হিন্দু  আইন ও দন্ডবিধি  এবং আরো কিছু গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ করেন। হেস্টিংস তাঁর এক চিঠিতে এই পণ্ডিতদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে লিখেছেন যে এঁরা নির্লোভ ছিলেন। বেশি পারিশ্রমিক দিতে চাইলেও, কলকাতায় থাকা খাওয়ার জন্য মাত্র এক টাকা করে নিতেন। এই অনুবাদ ‘এ কোড অফ জেন্টু লজ’ নামে ১৭৭৬ সালে লন্ডনে ছাপা হয়। তখনও এখানে ছাপাখানা  আসেনি।

    ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয় হলহেডের ‘এ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ । এটিই বঙ্গদেশে ছাপা প্রথম বই যাতে বাংলা হরফের ব্যবহার ছিল। বইটি ইংরেজিতে লেখা হলেও বেশ কিছু  দৃষ্টান্ত বাংলা হরফে ছাপা হয়েছিল।  এই বইয়ের সঞ্চালনযোগ্য বাংলা হরফগুলি তৈরি করেছিলেন চার্লস উইলকিনস। শক্ত ইস্পাতের ওপর ছেনি দিয়ে কেটে তৈরি করা ছাঁচে ঢালাই করে বানান হয় ধাতুর হরফ। এই কাজে তাঁর সহযোগী ছিলেন স্থানীয় শিল্পী পঞ্চানন কর্মকার। হলহেডের এই গ্রামার বই ছাপা হওয়ার অনেক আগেই বিদেশে বাংলা হরফে ছাপার কিছু নিদর্শন আছে।  হলহেডের গ্রামার বই প্রকাশের ১১১ বছর আগে, ১৬৬৭ সালে অ্যামস্টারডাম থেকে প্রকাশিত হয় ‘চায়না ইলাস্ট্রেটা’। এটিই প্রাচীনতম গ্রন্থ, যেখানে বাংলা অক্ষরের ব্যবহার দেখা গেছে। এরপর ১৭৭৭ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু মুদ্রিত বিদেশী বইয়ে বাংলা অক্ষরের মুদ্রিত প্রতিলিপি  আছে।

    সেই বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

    ১. চারজন জেসুইট ধর্মযাজক রচিত ‘অবজারভেশানস’। বইটি প্যারিস থেকে ১৬৯২ সালে ছাপা হয়।
    ২. লাইপৎসিক থেকে ১৭২৫ সালে প্রকাশিত হয় গেওর্গ যাকোব্ কের রচিত ‘Aurenck Szeb’.
    ৩. ঐ একই জায়গা থেকে ১৭৪৮ সালে প্রকাশিত হয় যোহান  ফ্রিদরিখ্ ফিৎস এর লেখা ‘Orientalischer Und Occidentalischer Sprachmeister’.
    ৪. ডেভিড মিল রচিত ‘Dissertiones Selectae’  বইটি ১৭৪৩ সালে লাইডেন থেকে প্রকাশিত  হয়।
    ৫. ১৭৭২ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ‘Encyclopedie Francoise’

    এ ছাড়াও হলহেডের ‘এ কোড অফ জেন্টু লজ’ ১৭৭৬ সালে লন্ডনে মুদ্রিত হয়। এই সব বইয়ে বাংলা হরফের কিছু কিছু ব্যবহার থাকলেও তার সবটাই অচলনশীল ব্লকে ছাপা। বাংলা  সঞ্চালনযোগ্য হরফের ব্যবহার তখনও শুরু হয়নি। হলহেডের গ্রামার বইটি প্রথম সঞ্চালনযোগ্য বাংলা হরফে ছাপা হয়। হলহেডের ব্যাকরণ বই ছাপা হয় হুগলির জন এন্ড্রুজের ছাপাখানায়। এটাই ছিল বাংলার প্রথম ছাপাখানা। ১৭৬৮ সালে উইলিয়াম বোলটস কলকাতায় ছাপাখানা তৈরি করে সংবাদপত্র প্রকাশ করতে প্রয়াসী হন, কিন্তু তাঁর সেই প্রয়াস সাফল্যের মুখ দেখেনি।   কালের নিরিখে এন্ড্রুজের ছাপার মান যথেষ্ট উন্নত ছিল। এতদসত্ত্বেও এই প্রেস থেকে ছাপা  আর  কোন বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এটাই খুব আশ্চর্যের ব্যাপার। সম্ভবত এই প্রেসের যাবতীয় সরঞ্জাম কলকাতার সরকারি প্রেসে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

    বইটি লেখার আগে হলহেড পন্ডিতদের কাছে কিছু বাংলা গ্রন্থ যত্ন সহকারে পড়েছিলেন। তার মধ্যে মুখ্য বইগুলি হল কৃত্তিবাসী রামায়ণ, কাশীরাম দাসের মহাভারত এবং ভারতচন্দ্রের কালিকামঙ্গল - বিদ্যাসুন্দর। ব্যাকরণ বইয়ের প্রায় সকল উদ্ধৃতি এই বইগুলি থেকে নেওয়া হয়েছে। ২১৬ পৃষ্ঠার এই বইটির দাম ছিল ৩০/- টাকা। ছাপান হয়েছিল ১০০০ কপি। বড়োলাটের নির্দেশে ছাপা হয়েছে তাই কোম্পানি বইয়ের সমস্ত কপি কিনে নেয়। হলহেড তাঁর ব্যাকরণ বইয়ের ভূমিকায় বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে হেস্টিংসের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ইংল্যান্ড থেকে বইটি ছাপার জন্য অগ্রিম অর্থের অনুমোদন আসতে সময় লাগবে। হেস্টিংস অতটা কালক্ষেপ করতে চাননি। অনুমোদন আসার আগেই তিনি নিজে অর্থ বরাদ্দ করেন। হলহেড এবং উইলকিনসের লেখার কোথাও পঞ্চানন কর্মকারের কোন উল্লেখ নেই। ছাপার কাজে সর্বতোভাবে পাশে থাকা এই মানুষটিকে তাঁরা কোন স্বীকৃতি দেননি। এমনকি সমসাময়িক সরকারি তথ্যেও পঞ্চাননের কোন উল্লেখ নেই। ১৭৮৩ সালে কোম্পানির জনৈক কর্মচারী জর্জ পেরির  এক চিঠিতে বইটি ছাপার ক্ষেত্রে কোন ভারতীয়ের সহযোগিতার অস্পষ্ট উল্লেখ দেখতে পাই। লন্ডনের নিকলসকে লেখা সেই চিঠির একটি অংশে লেখা আছে ‘অ্যাসিস্ট্যান্স অফ এ পিপল হার্ডলি সিভিলাইজড’। ঔপনিবেশিক দম্ভকে আগলে রেখে সামান্য একটু স্বীকৃতি। অনুমান করা যায় মানুষটি পঞ্চানন কর্মকার। পরবর্তীকালে শ্রীরামপুরের পাদ্রী লেখকদের রচনায় পঞ্চানন উপেক্ষিত হননি। ১৮৩৪ সালে ‘ক্যালকাটা ক্রিশ্চিয়ান অবজার্ভার’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর একটি লেখায় জশুয়া মার্সম্যান উইলকিনসের সহযোগী হিসাবে দ্বার্থহীন ভাষায় পঞ্চানন কর্মকারের নাম উল্লেখ করেছেন।

    হলহেডের ব্যাকরণ আমাদের দেশে বাংলা হরফে ছাপা প্রথম বই, এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।  তবে বঙ্গদেশে ছাপার ওটিই প্রথম নিদর্শন নয়। এক দেউলিয়া ব্যবসায়ী হাজতবাস করার সময়, বকেয়া ঋণ পরিশোধের উদ্দেশে, সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে, ১৭৭৭ সালে কারাগারের মধ্যেই ছাপার কাজ শুরু করেন। লন্ডনে হদিস পাওয়া গেছে ১৭৭৮ সালে ছাপা একটি ক্যালেন্ডারের, যার শিরোনাম — Calender For the Year  of our Lord MDCCLXXVIII. মুদ্রণের স্থান হিসেবে উল্লেখ করা আছে কলকাতার নাম। ১৭৭৮ সালের ক্যালেন্ডার সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যে ওটি বছর শুরুর আগেই ছাপান হয়েছিল। অনুমান করা হয় ক্যালেন্ডারটি ঐ আইরিশ বন্দির ছাপাখানাতেই তৈরি। বন্দির নাম জেমস অগাস্টাস হিকি। ভারতের প্রথম সংবাদপত্র ‘হিকিস বেঙ্গল গেজেট’ এর প্রকাশক এবাং সম্পাদক। শুধু এইটুকুই তাঁর পরিচয় নয়। কাগজের অফিসে তাঁর অভিভাবকত্বে পোক্ত হয়েছিলেন বেশ কিছু সাংবাদিক, যাঁরা পরবর্তীকালে প্রকাশনার জগতে নিজ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। হিকির প্রেসে কিছুকাল অনেক সরকারি কাগজপত্র ছাপা হত। ঐ বাবদ তাঁর পাওনা হয়েছিল ৩৫০৯২ সিক্কা টাকা। দীর্ঘ  ষোল বছর পর তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৬৭১১ সিক্কা টাকা, যা পাওনা টাকার সুদের থেকেও কম। হিকি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা নির্ভীক সাংবাদিক। সর্বহারা হয়ে দিতে হয়েছিল সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করার মাশুল।       

    কোম্পানির প্রেস হল বাংলার দ্বিতীয় ছাপাখানা। সঠিক দিনক্ষণ জানা না গেলেও, অনুমান করা হয় উইলকিনসের তত্ত্বাবধানে এটি ১৭৮০ সালের প্রথম দিকে স্থাপিত হয়। ১৭৭৮ সালের ১৩ নভেম্বরের সরকারি নথিতে দেখা যায়, ওই সময় উইলকিনস সরকারি কাজকর্মের জন্য সরকারের পরিচালনায় একটি ছাপাখানা স্থাপনের প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাবে কোন কাজের কত মূল্য, কর্মচারীদের কার কত মাইনে ইত্যাদি  বিস্তারিতভাবে দেওয়া ছিল। ১৭৭৮ সালের ২২  ডিসেম্বর কোম্পানি উইলকিনসের প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। একটু দেখে নেওয়া যাক, কেমন ছিল সেই প্রস্তাব -
    ছাপার মূল্য - ইংরেজিতে এক দিস্তা কাগজ ছাপতে লাগত ৩/-টাকা। পাতার উভয়দিকে ছাপলে  লাগত ৫/- টাকা। ঐ একই প্রকার ছাপা বাংলা এবং ফারসি  হলে দিতে হত ৫/- টাকা এবং ৭/- টাকা।

    ছাপাখানার কর্মীদের বেতন-
    ২ কম্পোজিটর- বাংলা এবং ফারসি                         মাসিক ৭৫/- টাকা হিসাবে
    কম্পোজিটর ইংরেজি                                               “   ১০০     “
    ১ সর্টার                                                             “     ২০     “
    ১ পণ্ডিত                                                             “     ৩০     “
    ১ মুনশি                                                              “     ৩০     “
    ৮ প্রেসম্যান                                                          “       ৭     “
    ১ হ্যান্ড প্রেসম্যান                                                    “     ১২      “
    ৮ পিওন                                                               “      ৫      “
    ১ জমাদার                                                             “    ১০      “
    ১ দপ্তরী                                                                “     ১৫     “

    উইলকিনস এর মাসিক ভাতা ৩৫০/- টাকা, এ ছাড়া বাড়ি ভাড়া বাবদ তাঁর প্রাপ্য ছিল সমপরিমাণ অর্থ। হুগলীর মত কলকাতার ছাপাখানাতেও পঞ্চানন উইলকিনসের সহকারী  ছিলেন।

    সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পিটার রিড এবং বি. মেসিঙ্কের প্রচেষ্টায় ১৭৮০ সালের নভেম্বার মাসে  প্রকাশিত হয় ইন্ডিয়া গেজেট।  উইলকিনস এবং পঞ্চাননের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্ভবত প্রেসের নিজস্ব ঢালাইখানাও তৈরি হয়েছিল। এই প্রেসে ছাপা প্রথম বই  হল জোনাথান ডানকানের ‘ইম্পে কোড’ এর বঙ্গানুবাদ। বইটি ছাপা হয়েছিল ১৭৮৫ সালে। ২৪৬ পৃষ্ঠার এই  বইয়ের ১২০ পৃষ্ঠা বাংলায় ছাপা। এই বই থেকেই শুরু হয় বাংলা গদ্য রচনা। এই বইয়ে ব্যবহৃত হরফ হলহেডের বইয়ের থেকে কিছুটা ছোট এবং অনেক সুন্দর। ১৭৮৫ থেকে ১৮০২ সালের মধ্যে এই প্রেস থেকে আরো বেশ কয়েকটি বই ছাপা হয়। এগুলির অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন আইনের  বঙ্গানুবাদ।

    কোম্পানির সরকারি প্রেসের পাশাপাশি ঐ সময় ৩৭ লারকিন্স লেনে তৈরি হয় আর একটি ছাপাখানা। ১৭৮৪ সালের ৪ মার্চ এই আধা সরকারি ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হয়, ইংরেজি সাপ্তাহিক, ‘ক্যালকাটা গেজেট’। ইংরেজি পত্রিকা হলেও এখানে প্রায়শই বাংলায় বিজ্ঞপ্তি থাকত। ১৭৮৬ সালে আত্মপ্রকাশ  করল ক্রনিকাল প্রেস। উইলিয়াম বেইলি এবং এ আপজনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত হল ‘ক্যালকাটা ক্রনিকাল’ পত্রিকা। এই পত্রিকায় বাংলা বিজ্ঞাপন ছাপা হত।  একেবারে প্রথম দিকে বাংলা মুদ্রন মূলত চারটি বিষয়ের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। ১. আইনের অনুবাদ; ২. ব্যাকরণ; ৩. অভিধান ও শব্দকোষ; ৪. সমসাময়িক পত্রিকায় বাংলা বিজ্ঞাপন। পরে এই পত্রিকা ভিত্তিক ছাপাখানা থেকে ঐ সময় কিছু কিছু বাংলা বইও ছাপা হয়েছে। এই ধারার প্রথম ব্যতিক্রম ছিল ‘ঋতু সংহার’।  ক্যালকাটা গেজেট প্রেসে ১৭৯২ সালে ছাপা হল, বাংলা হরফে কালিদাসের সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থ ‘ঋতুসংহার’, ‘দ্য সিজনস্’। ১৭৯৩ সালে ক্রনিকাল প্রেস থেকে প্রকাশিত হল প্রথম বাংলা অভিধান, আপজনের ‘ইঙ্গরাজি   ও বাঙ্গালি বোকেবিলরি’। ১৭৯৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘দ্য টিউটর’ বা ‘সিক্ষ্যাগুরু’। উনিশ শতকের গোড়ায় কোম্পানির প্রেস থেকে প্রকাশিত হল, ‘এসেজ বাই দি স্টুডেন্টস অফ দি কলেজ অফ ফোর্ট উইলিয়াম(১৮০২)। এই সংকলনে বাংলা হরফে বাংলা নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল।  এই সময় ছাপাখানার সাথে যুক্ত লোকেদের অধিকাংশ এদেশেই কাজ শিখেছেন, ইংল্যান্ড থেকে এই পেশায় দক্ষ হয়ে আসা লোক ছিল না বললেই চলে।

    ১৮০০ সালের আগে কলকাতার ছাপাখানার কর্মচারীরা কিছু কিছু স্থানীয় মানুষ হলেও  মাথারা সকলেই ছিলেন ইউরোপীয়। বাবু রামই হলেন প্রথম স্থানীয় মানুষ, যিনি ১৮০৭ সালে খিদিরপুরের অদূরে নিজের ছাপাখানা বানিয়েছিলেন। ওই প্রেসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের জন্য হিন্দি এবং সংস্কৃত বই ছাপা হত। ১৮১৫ সালে মুদ্রাকর বিশ্বনাথ দেব শোভাবাজার অঞ্চলে বটগাছের নিচে একটি বইয়ের দোকান খোলেন। বহু চর্চিত‘বটতলার বই’ প্রকাশের সেই শুরু।

    ১৮১৮ সালের ১৬ মে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত হল প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক, ‘বাঙ্গাল গেজেটি’।  ঐ বছরের ২৩ মে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হয় মার্শম্যান এর ‘সমাচার দর্পণ’। ‘বাঙ্গাল গেজেটি’র কোন কপি পাওয়া যায়নি তাই অনেকে ‘সমাচার দর্পণ’ কে প্রথম বাংলা সংবাদপত্রের শিরোপা দিয়ে থাকেন। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এবং জেমস লঙ উভয়েই ‘বাঙ্গাল গেজেটি’কেই প্রথম বাংলা সংবাদপত্র হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। ‘বাঙ্গাল গেজেটি’ প্রকাশের আগে গঙ্গাপ্রসাদ ১৮১৬ সালে কলকাতার ফেরিস অ্যান্ড কোম্পানি প্রেস থেকে প্রকাশ করেন ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’। এটি প্রথম বাংলা হরফে ছাপা ছবিওয়ালা বই। ৩১৮ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে সেকালের বিখ্যাত শিল্পী রামচাঁদ রায়ের ছটি কাঠ খোদাই ও ধাতু খোদাই ছবি ছিল। বইটির কাটতিতে উৎসাহিত হয়ে তিনি আরো বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেন। গঙ্গাকিশোর বাঙালিকে স্বাধীনভাবে বই প্রকাশনার জগতে বিচরণ করতে শিখিয়েছিলেন।

    নতুন শতকে পদার্পণের সাথে সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে বাংলার ছাপার জগতে নতুন যুগের সূচনা হয়। ১৮০০ সালের ১০ জানুয়ারি, ব্যাপটিস্ট মিশনরি উইলিয়াম কেরি এবং উইলিয়াম ওয়ার্ডের নেতৃত্বে শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠিত হল ‘শ্রীরামপুর মিশন প্রেস’। ওই বছরেরই  ১৮ অগাস্ট কলকাতায় আত্মপ্রকাশ করল ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। দুটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমটি ধর্ম প্রচারের জন্য, অপরটি প্রশাসনিক প্রয়োজনে বাংলা মুদ্রণের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। ‘তমসাচ্ছন্ন নেটিভদের’ কাছে যীশুর অমৃত বাণী প্রচারের জন্য ছাপা পুস্তিকার বড়ই প্রয়োজন ছিল। অপরদিকে প্রশাসনিক প্রয়োজনে, কোম্পানির ইউরোপিয়ান কর্মচারীদের  দেশীয় ভাষায় দক্ষ হওয়াটা জরুরী ছিল। তার জন্য প্রয়োজন ছিল পর্যাপ্ত বই। দুটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ভিন্ন হলেও কিছু সময় পরে তারা একে অপরের পরিপুরক হয়ে গিয়েছিল। কলেজের প্রয়োজনে মিশন প্রেস ছেপে দিত বাংলা বই, অন্যদিকে কলেজ মিশন প্রেসকে দিয়েছিল আর্থিক স্বাচ্ছল্য। ব্রিটিশ সরকার মিশনরিদের খুব একটা সুনজরে দেখত না। কিন্তু শ্রীরামপুর সেই সময় ডেনিশ শাসনে থাকার ফলে মিশন প্রেস নির্দ্বিধায় কাজ করতে পেরেছিল। একটিমাত্র কাঠের মুদ্রণ যন্ত্র সম্বল করে মিশন প্রেসের যাত্রা শুরু হয়। উডনি সাহেব বিদেশ থেকে আনা ঐ মুদ্রণ  যন্ত্র কলকাতায় নিলামে কিনে কেরিকে উপহার দেন। প্রতিষ্ঠার কিছু সময়ের মধ্যেই এটি হয়ে ওঠে সমকালীন বাংলা মুদ্রণের বৃহত্তম কেন্দ্র। কলকাতায় থাকাকালীন কেরির সাথে পঞ্চানন কর্মকারের যোগাযোগ হয়। শ্রীরামপুরে প্রেস তৈরি হলে পঞ্চানন পাকাপাকিভাবে সেখানে চলে  আসেন। মিশন প্রেসে যোগদানের পর পঞ্চানন নিজস্ব একটি হরফ ঢালাইখানা তৈরি করেন। পঞ্চানন ছাড়া ঐ প্রেসে কেরির  সহযোগী হন দক্ষ মুদ্রাকর ওয়ার্ড। কলকাতা থেকে আনা বাংলা  হরফ আর কিছু পাটনাই ও কিছু বিদেশী কাগজ নিয়ে ছাপার কাজ শুরু হয়। এখানে ছাপা প্রথম সম্পূর্ণ বই হল, নিউ টেস্টামেন্টের কেরির করা বাংলা অনুবাদ, ধর্মপুস্তক। ৮০০ র কিছু বেশি পৃষ্ঠার বইটি ছাপতে সময় লেগেছিল প্রায়  নয় মাস। সম্পূর্ণ বই প্রকাশিত হওয়ার আগে বইয়ের প্রথম অধ্যায়( ১০৭ পৃষ্ঠা), ‘মঙ্গল সমাচার মাতিউর রচিত’ নামে, ৫০০ কপি ছেপে পরিশিষ্ট সহ স্থানীয় মানুষদের মধ্যে বিলি করা হয়। ১৮০০ সালের অগাস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত হল রামরাম বসু রচিত ‘হরকরা’ ও ‘জ্ঞানোদয়’ নামে দুটি প্রচার পুস্তিকা। ওই দুটি ছিল মিশন প্রেসে ছাপা প্রথম পুস্তিকা।

    মিশন প্রেসের আয়তন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ১৮১৫ সালে মুদ্রণ যন্ত্র ছিল ১০টি এবং  ১৮২০তে তা বেড়ে হয় ১৭। সাথে ছিল পঞ্চানন কর্মকারের হরফ ঢালাইখানা।  পঞ্চাননের মৃত্যুর পর তাঁর  জামাই মনোহর কর্মকার এর দেখাশোনা করতেন। এখানে কাটা হরফে চিনা সহ প্রায় চল্লিশটি ভাষায় বাইবেল ছাপা হয়। নিজেদের কাগজ ও কালি তৈরির ব্যবস্থা করে এবং অনুবাদ বিভাগ স্থাপন করে শ্রীরামপুর মিশন একটি বৃহৎ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। জর্জ স্মিথের লেখা কেরির জীবনী থেকে জানা যায়, ১৮৩২ সাল পর্যন্ত এই প্রেসে ৪০টি বিভিন্ন ভাষায় ২,১২,০০০ কপি বই মুদ্রিত হয়েছিল। নিজেদের ধর্মপুস্তক ছাড়াও ১৮১৬ সালের মধ্যে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলি হলঃ রামরাম বসুর ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’(১৮০১), ‘লিপিমালা’ (১৮০২), কেরির ‘কথোপকথন” (১৮০১), ‘ইতিহাসমালা’ (১৮১২), গোলকনাথ শর্মার ‘হিতোপদেশ’ (১৮০২), মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘বত্রিশ সিনহাসন’ (১৮০২), ‘হিতোপদেশ’ (১৮০৮), ‘রাজাবলি’ (১৮০৮), রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়ের ‘মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র  রায়স্য চরিত্রং’ (১৮০৫), চণ্ডী চরণ মুন্সীর ‘তোতা ইতিহাস’ (১৮০৫), হরপ্রসাদ রায়ের ‘পুরুষ পরীক্ষা’ (১৮১৫)। এছাড়া প্রকাশিত হয় কাশীরাম দাসের ‘মহাভারত (৪ খন্ড) এবং কীর্তিবাসের রামায়ন (৫ খন্ড) ১৮০২-৩। এই বইগুলির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৫৬৪০। এরপর প্রকাশিত হয় কেরির ‘বাংলা অভিধান’ (দুই খন্ডে ১৮১৫-১৮২৫)।

    মিশন প্রেসে ছাপা অধিকাংশ বাংলা বই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে পাঠ্যপুস্তক হিসাবে   ব্যবহৃত হত। বইগুলির অধিকাংশ লেখক ছিলেন কলেজের পণ্ডিত। কেরি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। কেরির উদ্যোগেই পন্ডিতেরা ঐ কলেজে যুক্ত হন। ওই পণ্ডিতদের লেখাগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। অধিকাংশ বই লেখা হত সংস্কৃত ঘেঁষা বাংলায়। এই রীতির লেখায় সব থেকে সুন্দর লিখেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়য় বিদ্যালঙ্কার। আরবি-ফারসি মেশান বাংলায় লিখেছেন রামরাম বসু। কেরি লিখতেন কথ্য বাংলায়।  কর্তৃপক্ষ তাঁদের পারিশ্রমিক  দিতেন এবং প্রকাশিত বইয়ের অনেকগুলি করে কপি কিনে নিতেন। মিশন প্রেস ছাড়াও সংস্কৃত প্রেস (১৮০৭), হিন্দুস্থানী প্রেস (১৮০২), ফারসি প্রেস (১৮০৫) প্রভৃতি প্রেসগুলি বিভিন্নভাবে কলেজের সাহায্য পেয়েছিল। এই সময়ের আর একটি উল্লেখযোগ্য বই হল, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রথম  স্থানীয় গ্রন্থাগারিক মোহন প্রসাদ ঠাকুরের বাংলা-ইংরেজি শব্দকোষ (১৮১০)। 

    রামমোহন রায়ের আগমন এবং ১৮১৭ সালের মে মাসে স্কুল বুক সোসাইটির পত্তন, ওই যুগের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ধর্মের কঠোর অনুশাসন ভেদ করে, কুসংস্কার মুক্ত  যুক্তিবাদী চিন্তা ভাবনার একটি প্রশস্ত অঙ্গন তৈরির ক্ষেত্রে রামমোহন ছিলেন সেই যুগের অগ্রপথিক। নিজের ভাবনার সমর্থনে লেখেন বেশ কিছু বই। তাঁর চিন্তার প্রবাহ থেকেই বাংলা সাহিত্য  প্রত্যক্ষ করল গদ্য রচনার নতুন রূপ। রচনাগুলি দ্রুত ছাপা হতে থাকায় বাংলা মুদ্রণ শিল্পও নতুন পথের সন্ধান পেল। বাংলা মুদ্রিত গ্রন্থ তখন থেকেই বিষয়বস্তুর মাধ্যমে সমৃদ্ধ হতে থাকে। রামমোহনের প্রথম বই ‘বেদান্ত গ্রন্থ’ (১৮১৫) থেকেই বাংলা ভাষায় বেদান্ত-উপনিষদ চর্চার শুরু। 

    স্কুল বুক সোসাইটির মূল লক্ষ্য ছিল উন্নতমানের পাঠ্যপুস্তক ছাপিয়ে সেগুলি অল্প দামে বা একেবারে বিনা পয়সায় পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ভাল বই না থাকলে ভাল পঠন পাঠন সম্ভব নয়, আবার পর্যাপ্ত স্কুল না থাকলে ছাপা বইয়ের চাহিদা থাকবে না। এই দুটি দিকেই স্কুল বুক সোসাইটির নজর ছিল। তাঁরা বইও ছেপেছেন আবার স্কুল তৈরির ক্ষেত্রেও উদ্যোগী হয়েছেন। অংক, ভুগোল,  জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তক তো ছিলই, ১৮২২ সালে ছাপা হয়, নানা পশুর ছবি সম্বলিত বিবরণ, পশ্বাবলি। ১৮১৭ থেকে ১৮২৫ সালের মধ্যে স্কুল বুক সোসাইটি কলকাতা এবং মফস্বলের বিভিন্ন স্কুলে এক লক্ষেরও অধিক বই বিক্রি অথবা বিলি করেছেন।

    বাংলা মুদ্রণশিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রেরও একটা বড় ভূমিকা ছিল। উনিশ শতকের  প্রথম অর্ধেই বাজারে আসে, বাঙ্গাল গেজেটি, সমাচার দর্পণ, সম্বাদ কৌমদি, সম্বাদ প্রভাকরের মত কাগজ। সময় গড়ানোর সাথে সাথে প্রকাশিত হতে থাকে তত্ত্ববোধিনি, সমাচার চন্দ্রিকা, বঙ্গদূত, বিবিধার্থ সংগ্রহ, মাসিক পত্র এবং সোমপ্রকাশের মত আরো অনেক পত্রিকা। কিছু দীর্ঘদিন টিকে থেকেছে  আবার কিছু অল্প সময়েই হারিয়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে সংবাদপত্রের প্রভাবে  বাংলা মুদ্রণের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছিল।

    রামমোহন রায় ১৮৩৩ সালে দেহ রাখেন, পরের বছরেই মৃত্যু হয় উইলিয়াম কেরির। কিছু সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় মিশন প্রেস। ১৮৫৪ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজও বন্ধ হয়ে  যায়। এই তিনটি ঘটনাই সমকালীন বংলা মুদ্রণ শিল্পের কাছে ছিল বড় ধাক্কা। একটি যুগের অবসান হল। তবু এর দীর্ঘমেয়াদী কোন প্রভাব পড়েনি কারণ, তা সামলাবার মত ক্ষমতা তখন এই শিল্প অর্জন করেছে। তখন আর একটি-দুটি নয়, কলকাতা এবং সন্নিহিত অঞ্চলে স্থাপিত হয়েছে  বহু প্রেস। পট পরিবর্তন হয়েছে, সূচনালগ্নের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে বাংলা মুদ্রণ তখন
    সাবালকত্ব অর্জনের লক্ষ্যে অতিক্রম করেছে অনেকটা পথ।    

    তথ্যসূত্রঃ
    PRINTING IN CALCUTTA TO 1800-GRAHAM SHAW
    ছাপাখানা - চীন থেকে চিনসুরা – রাধাপ্রসাদ গুপ্ত 
    বাংলা মুদ্রণের পশ্চাৎপট – সুখময় মুখোপাধ্যায়
    তিন পথিকৃৎঃ  উইলকিন্স - পঞ্চানন - মনোহর - নিশীথ রঞ্জন রায়।
    মিশন প্রেস- শ্রীরামপুর – সুনীল কুমার চট্টোপাধ্যায়
    বাংলা মুদ্রণের চার যুগ — বরুণ কুমার মুখোপাধ্যায়
    তলোয়ার বনাম কলমঃ  প্রথম শতবর্ষে — শ্রী পান্থ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ০৮ জুলাই ২০২৪ | ২৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কৌতুহলী | 103.249.***.*** | ০৮ জুলাই ২০২৪ ২১:৫০534397
  • অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য, বিষয়টাতে আমার আগ্রহ আছে। মিশন প্রেস শ্রীরামপুর বইটার পাবলিশার্স বলতে পারবেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন