অজন্তার গুহাগুলি খ্রীস্টপূর্ব ২০০ থেকে এদিকে ৭০০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে বানানো হয়েছে। তখনকার ব্যবসায়ীরা ছিলেন এইসব গুহানির্মাণ কাজের পৃষ্ঠপোষক। তাদের উল্লেখ রয়েছে প্রতিটি গুহায়। বুদ্ধ ও তাঁর পূর্বজন্মের জাতক কাহিনী বিবৃত গুহার দেওয়ালে, ভিতরের ছাতে। বুদ্ধের পুরনো অনুগামীরা হীনযান সম্প্রদায়ের। তাঁরা বুদ্ধের মূর্তি বানাতেন না। বুদ্ধ কে বোঝানর জন্য পদ্ম, বৃক্ষ ইত্যাদি নানান চিহ্ন ব্যবহৃত হ'ত। পরবর্তীতে মহাযান সম্প্রদায়ের চিত্রে বুদ্ধ ও তাঁর পূর্বজন্মের অবতারদের (এনারা বোধিসত্ত্ব নামে পরিচিত) চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে প্রাচীন গুহায় শুধুই অবয়বহীন চিহ্ন পাওয়া যায়। পরের দিকের গুহায় অবয়বযুক্ত কাহিনী। আরও পরে দেখা যাবে দ্বিমাত্রিক চিত্রের চেয়ে শিল্পীরা উৎসাহিত হলে ভাস্কর্যের দিকে।
গুহার ক্রমোল্লেখে এই সময়সারণী মানা হয়নি। বরং যেখান থেকে গুহার প্রবেশপথ, সেখান থেকে পর পর নম্বর দেওয়া আছে। প্রথম গুহাতে যেমন দেখা যাবে বোধিসত্ত্ব জাতকের কাহিনী — যা মোটামুটি ভাবে অজন্তা নির্মাণের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা।
পাহাড়ের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে গুহাগুলি বানানো হয়েছে। ভিতরের দেওয়াল ও ছাত মসৃণ করা হয়েছে। তারপর তা প্লাস্টারিং হয়েছে — এর পরে চলেছে চিত্রায়ণ ও বর্ণলেপন। রঙ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে খনিজ উপাদান। দুই রকমের গুহা দেখা যায় এখানে। প্রথমটি হ'ল “বিহার”, যা বুদ্ধ শ্রমণদের আবাসগৃহ। দ্বিতীয়টি “চৈত্য” বা উপাসনাগৃহ।
অজন্তার এই গুহাগুলি সৃষ্টির পরে বহুকাল অবধি মানুষের অজ্ঞাত ছিল। ইংরেজ সৈন্যের একটি দল ঘটনাচক্রে গুহাগুলি দেখতে পায় দূরের এক পাহাড় শ্রেণী থেকে। এই আবিষ্কারের পর অনেকটা সময় গেছে এর তাৎপর্য অনুধাবন করতে। পরে রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির তত্ত্বাবধানে এই গুহাচিত্রের অঙ্কিত অনুলিপি প্রকাশিত হ'লে তা ক্রমশ: শিল্পরসিক তথা ঐতিহাসিক কে আকৃষ্ট করে।
অজন্তা, প্রথম গুহা
অঙ্কিত ছবির অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে মানুষের লোভে ও আবহাওয়ার প্রকোপে। তবু যা এখনও দেখা গেল তার আবেদন মনোমুগ্ধকর। পর পর সাজানো ছবিগুলি অনেকটা যেন সংলাপহীন কমিক স্ট্রিপের কায়দায় গল্প বলে যায়। সেই গল্প আগে থেকে জানা থাকলে মিলিয়ে দেখার সুবিধা সেই চিত্রকলার খুটিনাটি। নারায়ণ সান্যাল রচিত গ্রন্থ “অজন্তা অপরূপা” বইতে এর বেশিরভাগই খুবই যত্ন সহকারে বিধৃত। এমনকি ওখানকার প্রতিটি গাইড অবধি এই বইয়ের প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতা স্মরণ করেন। আমি অবশ্য অজন্তা ইলোরা নিয়ে জানতে প্রথমেই "গুরু" স্মরণাপন্ন হই ও হুচির টই (
https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=25359&srchtxt=%E0%A6%85%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE) থেকেই প্রাথমিক ধারণা পাই।
কিছু গুহা অসম্পূর্ণ। হয়ত মাঝপথে পৃষ্ঠপোষক বণিকের অনুদান বন্ধ হয়ে গেছে। হয়ত বা পাহাড়ের এমন কোনও অঞ্চল সামনে এসেছে যাতে আর এগোন সম্ভব হয় নি। এমন গুহায় অবশ্য তাদের কাজের পদক্ষেপগুলির আভাস পাওয়া সম্ভব।
দিনের বেলাতেও গুহার ভিতর অন্ধকার, ঠান্ডা। ভিতরের দেওয়ালে মশাল রাখার গর্ত দেখালেন গাইড। এখনকার পর্যটকেরা মোবাইলের টর্চ দিয়ে দেখেন, গাইডের হাতেও থাকে টর্চ। জোনাকির আলোর মতো সেই আলো ঘুরে বেড়ায় প্রাচীন গুহাচিত্রের শরীরে। সেই আলোতে উদ্ভাসিত হ'ন বোধিসত্ত্ব, ঝলমল করে ওঠেন সুন্দরী নায়িকারা ও তাঁদের দাসদাসী পরিবৃত প্রাসাদ।
২৬ নং গুহা, মহা-পরিনির্বাণ
ক্যামেরায় ছবি তোলার এত উপাদান সামনে, অথচ প্রায় পাশাপাশি প্যানেলেও আলোর ফারাক অনেকটাই। ক্যামেরা কে বেশিরভাগ সময়েই তাই ম্যানুয়াল মোডে রাখতে হচ্ছিল। ISO আর শাটার স্পিড কমিয়ে বাড়িয়ে — এদিকে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শুনতে হচ্ছিল গাইডের ধারাবিবরণী — ছবি তোলার পর তা একবার দেখে — আর একটু অ্যাডজাস্ট করার সময় পেলে ছবি ভালো পাওয়া যেত। কিন্তু তা হয়ে উঠল না। এখনকার মোবাইল ক্যামেরা নিজে থেকেই সে সব খুঁটিনাটি ঠিকঠাক করে ছবি তোলে। দলের মধ্যে পিছিয়ে পড়ছিলাম তাই বারবার।
অজন্তা গুহাচিত্র
গুহাগুলি প্রায় কাছাকাছি একে অপরের সঙ্গে। কয়েকটা জায়গায় অবশ্য ওঠা নামা আছে। কিন্তু পরের দিকে সেটুকু আর গায়ে লাগছিল না। মোট ৩০ টি গুহার মধ্যে ২৬ নং গুহা দেখেই আমাদের ক্ষান্ত দিতে হ'ল। বাকিগুলি অসম্পূর্ণ ও দুর্গম। ২৬ নং গুহাতে আছে বুদ্ধের মহা-পরিনির্বাণ শায়িত মূর্তির ভাস্কর্য, গুহার ভিতর বাঁ দিকের দেওয়ালে। জাতকের গল্প থেকে শুরু বুদ্ধের পরমার্থ-পর্যটন। মহা-পরিনির্বাণে সে অধ্যায় সম্পূর্ণ হ'ল। এখানেই বুদ্ধের মূর্তির চারপাশে প্রদক্ষিণ করা যায়। এটিও একটি চৈত্য বা উপাসনা গৃহ হিসেবে নির্মিত।
মহা-পরিনির্বাণে বুদ্ধ, পায়ের কাছে আনন্দ, রেশমীর তোলা ছবি।
পড়লাম বাগোড়া নদী ঘিরে পাহাড়ের শ্রেণীর মধ্যে অবস্থিত গুহাগুলি যতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল, তার অতটা ক্ষতি হয় নি — যতটা তার পরে হয়েছে। বেশ কয়েকটা গুহায় দেখলাম রাসায়নিক প্রয়োগ করে ভিতরের চিত্রগুলির আয়ু বাড়ানর প্রচেষ্টা।
ফেরার সময়ে গুহার সামনের পাথুরে পথে না গিয়ে আমরা ছোট্ট সেতু পার হয়ে নদী পেরিয়ে জঙ্গলের রাস্তা ধরলাম। সুস্বাদু আনারস, পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে। আর আছে হনুমানের ঝাঁক। টানা ঘন্টা তিনেকের চড়াই উতরাই গুহা সফরে দলের সবাই বেশ অল্পবিস্তর কাহিল। যেখানে গুহায় উঠতে শুরু করেছিলাম — সেখানেই MTDC পরিচালিত রেস্তোরাঁ আছে। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেই সুযোগ মিলল খাওয়ার।
সেদিন আর কোথাও যাওয়ার নেই। আস্তানায় ফিরে সায়মাশে আলু দেওয়া মাংস আর ভাতের ব্যবস্থা করতে বলে জিরিয়ে নিলাম।
মিষ্টি আনারসওলা।
প্রচুর পাখির আনাগোণা এই অঞ্চলে তাদের সম্মিলিত হাঁকডাক সারাক্ষণই আবহসঙ্গীত হয়ে বাজে। সেইসকাল ও সন্ধ্যায় তা ওঠে সপ্তমে। রাতে একেবারে শুনশান। তখন আমাদের আড্ডা বিতর্ক পান ভোজন চলল অনেকক্ষণ।
৪ তৃতীয় দিন
পরের দিন একটা দশ আসনের ফোর্স ক্রুইজার ঠিক করা হয়েছিল যাতে ঔরাংগাবাদ দেখে ইলোরা পৌঁছনর কথা। প্রথমে থামা হ'ল বিবি কা মকবারায়। ঔরঙ্গজেবের স্ত্রী দিলরাস বানু বেগমের স্মৃতিসৌধ বানিয়েছিলেন ঔরঙ্গজেবের ছেলে আজম শাহ। তাজের কারিগরের নাতি কে ডাকা হয়েছিল নির্মাণকার্যে। তাজমহলের ব্যাপ্তি ও দীপ্তি এতে পাওয়া যায় না। তবে সেই তুলনা সরিয়ে রাখতে পারলে জায়গাটা ভালো লাগে। গেট থেকে মূল সৌধের দিকে এগোতে দু-পাশের বিরাট বাগান একটা পাঁচিলের আড়ালে থেকে গেছে। সেটা না থাকলে ভাল লাগত।
বিবি কা মকবারায় সস্ত্রীক সপুত্র।
সেটা দেখে বেরোতেই দুপুরের খাবারের জন্য থামলাম সাগর রেস্তোরাঁয়। নামের মধ্যে সাগর থাকায় তা এক নিরামিষ ভোজনের ইঙ্গিত দিলেও রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডের উর্দু অক্ষর ভরসা দিল। বীফের পদও পাওয়া গেল। তবে বিরিয়ানির ধরণ হায়দ্রাবাদী, তা আবার আমার কাছে তাজমহল বনাম মিনি তাজমহলের তুলনায় নিয়ে আসে।
বিবি কা মকবারায় জাফরির কাজ
এবার গাড়ি চলল দৌলতাবাদ দুর্গের দিকে। যা কিনা ঔরাঙ্গাবাদ ছাড়িয়ে ইলোরার পথে। আগে এ জায়গার নাম ছিল দেওগিরি। যাদব বংশের (দক্ষিণের যাদব) রাজা ভিলামা এই দুর্গের পত্তন করেন ১১৮৭ সালে। ১৩০৮ সালে এই দুর্গ দখলে নিয়েছিলেন আলাউদ্দিন খলজী। তার পরেই নাম পরিবর্তন হয়ে দৌলতাবাদ হয় এর নাম।
দৌলতকবাদ কেল্লার মুল দরজার সামনে।
দু'শো মিটার উঁচু এই কেল্লা পাহাড়ের ঢালকে ব্যবহার করে এক অপরাজেয় দুর্গ হিসেবে নির্মিত হলেও সে অর্থে খুব বেশিদিন সে গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে নি। প্রতি পদক্ষেপে গাইড আমাদের বলে চলেন — শত্রু এদিক থেকে এভাবে আসলে ঠিক এইভাবে কচুকাটা হবে — এতে অনেকটা আমার “যদি ব্যাটা কোনও পাজি, বসে যদি মাঝামাঝি” ধরণের সমস্যার কথা মনে করিয়ে দেয়।
এই সিঁড়ি বেয়ে ওঠা প্রাণান্তকর ভরাপেটে।
অনেকটা হাঁটা ও বেশ খানিকটা খাড়া চড়াই ছিল কেল্লার টপে উঠতে। এদিকে দুপুরের গুরুভোজনের পর তা এক কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা। আমরা অনেকেই ধারণা করতে পারিনি সে কেল্লা এত বিশাল ও চড়াই সংকুল। ভিতরে প্লাস্টিকের বোতল ফেলে রাখা বন্ধ করার জন্য প্রতি প্লাস্টিক বোতল পিছু কুড়ি টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে। যা ফেরৎ পাওয়া যাবে ফেরার পথে সে বোতল দেখালে। কেল্লার ভিতর রাজাদের মূল বাসস্থান মেরামত চলছে। আমরা শুধু তাই শত্রু যে পথে এসে পদে পদে বিপদে পড়বে — তাতেই চলাফেরা করলাম।
কেল্লার ভিতর, পট্টর তোলা ছবি
১৩২৭ সালে এই দৌলতাবাদেই রাজধানী স্থানান্তর করেন মহম্মদ বিন তুঘলক। দিল্লির প্রতিটি রাজকর্মচারী তথা বহু সাধারণ নাগরিককেও বস্তুতপক্ষে বাধ্য করা হয় দিল্লি থেকে দৌলতাবাদে যেতে। পরে এই রাজধানী পরিবর্তন প্রক্রিয়া বদলে ফেলেন নবাব। ভোগান্তি দ্বিগুণ হয় প্রত্যেকের।
দৌলতাবাদ কেল্লার পার্কিং থেকে সূর্যাস্ত।
দৌলতাবাদ কেল্লা থেকে বেরিয়ে গাড়ির পার্কিং অবধি পৌঁছতেই সূর্যাস্ত হয়ে গেল। সেখান থেকে দশ বারো কিলোমিটার দূরের ইলোরায় কৈলাশ হোটেলে পৌঁছে চেক ইন করতে করতে রাত নামল। ইলোরা গুহার প্রবেশপথের সবচেয়ে কাছের হোটেল এটি। হাঁটা পথে দু'শো মিটারও হবে কি না সন্দেহ। অজন্তার তুলনায় এখানে ছোট বড় দোকানপাট মানুষজনের ভিড় বেশি।
কৈলাশ হোটেলেও কটেজ ধরণের ঘর। প্রতি ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দা ও তাতে ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার রয়েছে। ঘরের ভিতরও যথেষ্ট প্রশস্ত। রাতে ভেজ খাওয়া স্থির হ'ল সকালের গুরুভোজনের পর। সে সব বিশদে আর লেখার মতো নয়।
৫ চতুর্থ দিন
চাঁদ ডুবল। আলো ফুটল। দেখলাম হোটেলের একপাশের লন থেকে দূরের পাহাড়ের গায়ে ইলোরার গুহা দেখা যাচ্ছে। খুব সকালে ইলোরায় ঢোকার প্ল্যান থাকলেও টিকিট কেটে ভিতরে যেতে যেতে দশটা বেজে গেল। এখানেও গুহার ক্রমাঙ্ক অবস্থান অনুযায়ী। যদিও এখন যে গেট দিয়ে ঢোকা বা বেরোন হয় তা ১৬ নম্বর গুহার সামনে। সেখানেই কৈলাশ মন্দির।
ইলোরার গুহাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কৈলাশ মন্দির। এ মন্দির সে অর্থে কোনও কিছু জুড়ে জুড়ে তৈরি নয়, বলা ভালো একটা আস্ত পাহাড়কে কুড়ে কুড়ে সম্পূর্ণ মন্দির কে বের করে আনা হয়েছে।
৩২ মিটার উঁচু, ৭৮ মিটার দৈর্ঘ্য কৈলাশ মন্দিরের। রাষ্ট্রকূট রাজা কৃষ্ণের আমলে এই মন্দিরের কাজ শুরু হয় খ্রীস্টিয় অষ্টম শতাব্দীতে। গাইড জানালেন মন্দির সম্পূর্ণ হতে লেগেছিল প্রায় ২০০ বছর। পরপর কয়েক প্রজন্ম ধরে চলা এই নির্মাণযজ্ঞ একসুরে কাজ করে গেছে মূল নকশা অনুযায়ী। যখন ভাবি একটা ছেনি ও হাতুরির আঘাতের হেরফের ভুল করার সুযোগ ছিল না কখনও। সেই সময় থেকে আজ অবধি এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মনোলিথিক স্ট্রাকচার হয়ে দাঁড়িয়ে।
কৈলাশ : পিছনের পাহাড় থেকে তোলা
মন্দিরটি রথের আকৃতির। অন্যান্য গুহাগুলির মতো এটি সামনে থেকে পিছনে পাথর কেটে এগিয়ে যাওয়া নয়। পাহাড়ের মাথা থেকে বনজঙ্গল সাফ করে খুঁড়ে তার খনিজ স্তর পার করে মূল পাথর কুঁদে বানানো। কীভাবে নকশা তৈরি হয়েছিল, কী ভাবে নির্ধারিত হয়েছিল ওই বিরাট মন্দিরের বিভিন্ন অংশের মাপ — তখন অটোক্যাড তো দূরস্থান, সামান্য ক্যালকুলেটর অবধি নেই — তবে?
এই ছবিটা বাবুইদি'র তোলা শিব-পার্বতীর বিবাহ, কৈলাশ মন্দির
মূল মন্দিরের ভিতরের ছাতেও নানান নিখুঁত বুননের নকশা কাটা। অজন্তার ধাঁচে কিছু আঁকা ছবিও দেখা গেল তাতে। মন্দির টি তার পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে আলাদা করে পথ করে দেয় দর্শনার্থীরা যাতে মন্দির প্রদক্ষিণ করতে পারেন। মন্দিরের বাইরে পাহাড়ের দেওয়াল কুঁদে বানানো আছে এক করিডোর যা আবার পাথরের স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা। ভিতরের দেওয়ালের ভাস্কর্যে শিবঠাকুর সংক্রান্ত নানান গল্পের চিত্ররূপ। শিব- পার্বতী র বিয়ের ভাস্কর্যের ডিটেল সাংঘাতিক।
সব মিলিয়ে ৩৪ টি গুহা আছে ইলোরায়। গুহা নং ১ থেকে ১২ অবধি বৌদ্ধ গুহা। ১৩ নং থেকে ২৯ নং হিন্দু গুহা। গুহা নং ৩০ থেকে ৩৪ জৈন গুহা। বৌদ্ধ গুহাগুলির নির্মাণকাল মোটামুটি খ্রীস্টীয় ৫ম থেকে ৮ম শতাব্দী। হিন্দু গুহাগুলি নির্মিত ৭ম থেকে ১০ম শতাব্দীতে। জৈন গুহাগুলি অপেক্ষাকৃত নতুন — তৈরি হয়েছে ৯ম থেকে ১২শ শতাব্দীতে। অজন্তার সময়সারণী মাথায় রেখে বলা যায় — ঠিক যে সময়ে শিল্পীরা রঙ তুলি ছেড়ে ছেনি হাতুড়ি তুলে নিলেন তার ঠিক পরেই ইলোরার পত্তন। স্থানীয় শাসকের ও পুঁজির ভরকেন্দ্রের ধর্মীয় অবস্থান কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তাও এই গুহানির্মাণের সময়সারণী তে বিধৃত।
বৌদ্ধ গুহার সামনে ঝর্ণা
অজন্তার ২৬ নং গুহার সঙ্গে আশ্চর্য মিল ইলোরার ১০ নং গুহার। এটি ইলোরার বৌদ্ধ গুহার মধ্যে একমাত্র চৈত্য। এখানকার বাকী বৌদ্ধ গুহাগুলির সঙ্গে অজন্তার ভাস্কর্যবহুল গুহাগুলির মিলও প্রচুর। তারা প্রায় সমবয়স্ক। একটি চৈত্য বাদ দিলে বাকিগুলি বৌদ্ধ শ্রমণদের বাসস্থান বা বিহার। একটা তিনতলা স্কুলের মতো বৌদ্ধবিহারও দেখা যাবে এখানে। বলা বাহুল্য এটিও পাথর কুঁদে তৈরি, সামনে থেকে খুঁড়ে পিছনে এগিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাঝে থামের আকৃতির পাহাড়ের অংশ রেখে দেওয়া হয়েছে অবলম্বণের জন্য।