এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • মাই ইয়ার্স ইন অ্যান ইন্ডিয়ান প্রিজনঃ মেরি টাইলার। অনুবাদ

    বর্গীয় জ লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ২৯ জুলাই ২০২৩ | ৮৯৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • রাজনৈতিক বন্দী
    ~~~~~~~~~~~

    কোন কোন দিন পায়চারি করার সময় লক্ষ্য করতাম, কয়েদীরা তাদের অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র থেকে চাল ডাল তেল ছোট, বোধহয় সিগারেট বা তামাকের, টিনের কৌটো দিয়ে মাপছে। সেলে রাতে ঘুমনো মেয়েদের মধ্যে একজন বললো, মেয়েরা তাদের রেশনের চাল, ডাল, আটা, সাবান, তেল, গুড় - এসব একটু একটু করে জেলের কর্মচারীদের বিক্রী করে। তার বদলে টাকা, অথবা বাইরের অন্য জিনিস পাওয়া যায়। এইসব কেনাবেচায় কয়েদীরা খুব প্রত্যাশিতভাবেই বাজারের দামের থেকে কম দামে রেশন বেচতো আর বেশি দামে বাইরের জিনিস কিনতো, কিন্তু জেল থেকে দেয় না এমন দরকারী জিনিস, বা মেয়েদের সামান্য শখের জিনিস পাওয়ার জন্যে এটা একমাত্র পথ ছিল। রেশন বিক্রী করার জন্যে বেশিরভাগ মেয়েরাই খেতো খুব অল্প করে।
    ঠিক করলাম আমরাও এইভাবে কিছু বেচা কেনা করবো। আমাদের দরকারের তালিকায় ছিল টুথপেস্ট, সেফটিপিন, কল্পনার ঘন চুলের গোছা বাঁধার জন্য রাবার ব্যান্ড। আমরাও একটু একটু করে রেশন জমাতে শুরু করলাম। ওয়ার্ড্রেস প্রথম রাজি হচ্ছিল না - ভাবছিল হয়তো আমরা ওর হাড়ি হাঁটে ভাঙার জন্য এসব করছি - অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করানো গেল শেষে। বড়দিনের মধ্যে আমরা এক শিশি নেসক্যাফে কেনার মত জিনিস জমিয়ে ফেললাম! নেসক্যাফের শিশি, সে বিরাট শৌখিন জিনিস! বেশ কয়েক সপ্তাহ খুবই কৃচ্ছ্রসাধন করে কাটালাম - বড়দিনের দিন সেসব জমানো জিনিস দিয়ে, আটা ময়দা গুড়ের তৈরি খুব আনাড়ি কিছু মিষ্টি তৈরি করে সবাই মিলে ভাগ করে খেলাম! আর বড়দিনের ভোরে আমাদের জন্যে দারুন এক চমক অপেক্ষা করে ছিল - কে বা কারা আমাদের জন্যে দরজার সামনে একটা কেক আর এক ডজন কলা উপহার দিয়ে গেল! স্টোরের লোকজন আমাদের রেশনের সঙ্গে সেদিন বেশ কয়েক টুকরো পাঁঠার মেটে পাঠিয়ে দিল! জেনানা ফাটকের বাইরেও যে লোকজন আমাদের চেনে বা আমাদের খোঁজ খবর ভালোই রাখে সেটা সেদিন বুঝতে পারলাম!

    বড়দিনের পর শীত বাড়তে লাগলো। আমরা কোন রকমে গুটিশুটি মেরে, যতরকম কাপড়ের টুকরো আছে গায়ে চাপিয়ে রাত কাটানোর চেষ্টা করতাম। একটি হরিজন ছেলে আসতো ফাটকের পায়খানা পরিস্কার করতে, পরনে তার মোটা কাপড়ের হাত কাটা জামা আর হাফ প্যান্ট। শীতের এক সকালে সে দেখি কাজ করতে করতে ঠকঠক করে কাঁপছে। দেখে আমাদের এত খারাপ লাগলো, কল্পনা ওয়ার্ড্রেসকে বলেই, ওর একটা শাল দিয়ে দিল। কল্পনার দুটো শাল ছিল। যেই না ও কাজ শেষ করে পুরুষ বিভাগে ফিরবে, ওমনি ওয়ার্ড্রেস দৌড়ে ওয়ার্ডারকে বললো - ও নিশ্চয় আমাদের চিঠি বাইরে পাচার করছে - ভালো করে তল্লাশি করতে হবে। তল্লাশি হল - কিছু পাওয়া গেল না। কিন্তু অহেতুক সহমর্মিতা ব্যাপারটায় ওয়ার্ড্রেসের সন্দেহ হল, আর তার থেকে বেশি হল ঈর্ষা। সেটা অযৌক্তিকও কিছু না - ও হয়তো এত ভালো বা দামী শাল কখনে দেখেইনি জীবনে। পুরো ব্যাপারটাই একটা আবাঞ্ছিত পরিস্থিতি তৈরি করলো -  ছেলেটির পায়ে বেড়ি পরা সলিটারি হয়ে গেল, আর হুকুম হলো ও আর কোনদিন জেনানা ফাটকে কাজে আসবে না। আমরা চিফ হেড ওয়ার্ডারের কাছে অনেক দরবার করলাম, কিন্তু কোন লাভ হলো না - 'নকশাল' কয়েদীপের সঙ্গে কারও মেলামেশা করার হুকুম নেই।  

    এর কিছুদিন পর, জেল সুপার জানালো বিহার সরকার অমলেন্দুর পরিবারকে আমার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছে। মনে হচ্ছিল সরকার যেন আমাদের বিয়েটা "অনেকটা" মেনে নিয়েছে। অমলেন্দুর বাবা আসবে ফেব্রুয়ারি মাসে দেখা করতে। 

    অমলেন্দু আমাকে একটা চিঠি লিখেছিল। পাঠানোর সময় একজন ওয়ার্ডার সেটা ধরে ফেলে জেলারের কাছে রিপোর্ট করে দেয়। তার ফলে আমাদের দুজনেরই বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি বাতিল হয়ে গেল, আর অমলেন্দুর ডান্ডাবেড়ির সাজা হলো। ডান্ডাবেড়িতে অমলেন্দুর কথা ভেবে আমার চোখের জল বাঁধ মানলো না।
    ডান্ডা বেড়িতে হাতে পায়ে কড়া পরিয়ে দেওয়া হয়। কড়াগুলো একটা করে কুড়ি ইঞ্চি শিকের দু'মাথায়। সেই শিক গুলো পা থেকে কোমর পর্যন্ত লম্বা আরেকটা শিকের সঙ্গে আটকানো - আর সেই শিকটা বাঁধা কোমরে। এই ভারী ডান্ডাবেড়ি নিয়ে কোনরকম চলাফেরা, বসা, ঘুমনো, বাথরুম এক অমানুষিক কষ্ট।
    মাঝে মধ্যে যতই খুচরো ছাড় থাকুক, এই ঘটনায় বুঝলাম আমাদের তখনও সরকার খুব সন্দেহজনক বা বিপজ্জনক বলেই মনে করছে।

    জেল জীবনের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল উপোস। উপোস ব্যাপারটা যেন প্রায় একটা প্রতিষ্ঠানের মত। প্রতি রোব্বার কয়েদীদের উপোস করার অনুমতি ছিল। তাতে তারা বরাদ্দ খাবারের বদলে বিড়ি, খৈনি বা অন্য কোন মুখরোচক খাবার দাবার পেতে পারে। ব্যবস্থাটাকে আপাতদৃষ্টিতে মানবিক মনে হলেও, কয়েদীদের বশে রাখার জন্য এটা ছিল কর্তৃপক্ষের একটা খুব সুচিন্তিত কার্যকরী পদ্ধতি। ছোট ছোট সুযোগ দিয়ে কয়েদীদের সারাক্ষন এইসব হারানোর ভয়ের জালে বন্দী করে রাখা - তাতে, কয়েদীরা অন্য কোন কিছুতেই ভুলেও সাড়া শব্দ করবে না। জেলের মজুতখানার সঙ্গে যুক্ত সবার কাছে উপোস ছিল একটা আর্থিক লাভের উপায়। কয়েদীরা উপোস করে যেসব জিনিস নিত, তাতে খাবারের আর ঐ জিনিসের বাজারদামের বিরাট তফাত। মেয়েরা এই হিসেবটা খুব ভালৈ বুঝতো, কিন্তু মুখ খুলতো না, পাছে ব্যবস্থাটা পুরোই বন্ধ হয়ে যায়। উপোস করে পাওয়া সামান্য দুচার টাকা দিয়ে দিয়ে ওরা দরকার মত ওষুধ, কাচের চুড়ি, মরশুমি ফল, সব্জি আনাতো। সারা সপ্তাহ মেয়েরা একটু একটু করে চাল ডাল জমিয়ে রাখতো - যেন রোব্বার জেলের খাবার না নিতে হয়। সেদিন সকাল থেকে দেখা যেত মেয়েরা ভাত বা লপ্সিতে দেওয়ার জন্যে সব্জী ক্ষেতে ঘোরাঘুরি করছে। আসল সব্জী সব মেটিনের ভোগে যেত, তবে ক্ষেতের কিছু আলু, মুলো, সর্ষে শাক কয়েদীরা পেত। রান্না করার ব্যবস্থা ছিল খুবই সীমিত, তাই রোব্বার মেয়েদের খুব সমস্যা। উনুন ছিল দুটো - একটা আমাদের, আর একটা মেটিনের। মেটিন তার পেয়ারের লোকেদের উনুন ব্যবহার করতে দিত, তার নিজের পঞ্চব্যঞ্জন রান্না হওয়ার পর। সব মেয়েদেরই খুব ক্ষিদে পেয়ে যেত - কেউ কেউ কোন রকমে মাটির উনুন বানিয়ে দাঁতনের নিমডাল দিয়ে কিছু বানাতো। এছাড়া আমাদের তেলের টিনে মাটি লেপে বানানো ছোট কয়লার উনুনে ভিড় লেগে থাকতো সারাদিন, তাতে আমাদের কাউকে না কাউকে ক্ষিদে চেপে আগের জন্যের রান্না শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা তো করতেই হতো।

    রোব্বারের আরেকটা বড় ঘটনা ছিল মুলাকাতি। যেসব মেয়েদের জেলেই কোন পুরুষ আত্মীয় আছে, রবিবার করে তারা জেল অফিসে গিয়ে, সহকারী জেলারের নজরদারিতে কয়েক মিনিট সেই আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারতো। আমি খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম দেখে যে প্রচুর মেয়েদের বাবা, ভাই, স্বামী, ছেলে - কেউ না কেউ ঐ একই জেলে, একই অপরাধের অভিযোগে আটক। অনেকেই তাদের পুরুষ আত্মীয়দের জন্যে টুকটাক কিছু রান্না করে রাখতো। হয়তো রাতে একটু চাল বা ছোলা ভিজিয়ে রাখলো - সকালে সেটা পাথরে বেটে, বেলে, বাঁচিয়ে রাখা সর্ষের তেলে ভেজে নিয়ে গেল। 

    বেলা তিনটে নাগাদ, সকালে কাচা শাড়ি পরে, চুল আঁচড়ে, পরিষ্কার কাপড় অথবা খবরের কাগজে খাবার মুড়ে মুলাকাতির জন্য তৈরি হত। কোন কোন দিন পাঁচটার একটু আগেই ঘন্টা বাজিয়ে গেট খুলে দিত ডিউটি ওয়ার্ডার। নুড়ি বিছানো পথ দিয়ে সবাই ঐ অতি যত্নে তৈরি খাবার নিয়ে যেত - যেন কোন অর্ঘ্য নিয়ে যাচ্ছে। ডিউটি ওয়ার্ডার খাতায় নাম মিলিয়ে মিলিয়ে সবাইকে বের করতো। পনেরো মিনিট বাদেই সব হইহই করে ফিরতো - নতুন নতুন গল্প নিয়ে। নক্শাল ছাড়া অন্য বন্দীদের জেলের ভেতর নানান কাজে ঘোরাঘুরি করার সুযোগ ছিল - তারা নানান খবর টবরও পেত। কোন কয়েদীর আদালতের তারিখ, কোন বড় লোকের ভিজিট, জেল কর্মচারীদের বদলি, কারো জামিন, কারো ছাড়া পাওয়া - এইসব নানান খবর। কল্পনা আর আমি মুলাকাতি থেকে ফেরা মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম - যদি কোন খবর পাওয়া যায়! 

    শুরুর দিকে আমি একটু অসুবিধেয় পড়তাম - এখানে সবাই একজন আরেকজনকে কীভাবে সম্বোধন করে তা নিয়ে। আস্তে আস্তে বুঝলাম বড়দের মা, মাসি এইরকম ডাকতে হয় - ভারতীয় সংস্কৃতিতে বড়দের নাম ধরে ডাকাটা সহবত নয়। আমাকে সবাই হয় বেটি না হয় দিদি ডাকতো। একজন আমাকে দিদিমা বলে ডাকছিল - ওর বয়স আমার মা'র কাছাকাছি হবে! অন্যরা বকাঝকা করায় বললো, আমার বয়্স নিশ্চয় অনেক বেশি, কারন আমার তো সব চুলই সাদা। 
    এটা অবশ্য প্রথমবার না, আমার সোনালী চুলের জন্য পুলিশ, ওয়ার্ডার, অনেকেই আমাকে সাতাশ বছরের থেকে অনেক বেশি বয়সী বলে ভেবেছে নানা সময়!

    ওখানে একজন ছিল, আমরা সবাই মা ডাকতাম, ওর নাম সাইবুন্নিসা। বছর পঁয়তাল্লিশের মুসলিম মহিলা। সাইবুন্নিসা, ওর বর, তিন ছেলে, এক ভাইপো - সবার কুড়ি বছরের জেল হয়েছে। জমি নিয়ে মারপিটে ওর দেওর খুন হয়েছিল। ওদের সাজা হওয়ার সময় ওর তেরো বছরের ছেলে পাঁচবছর জেলে কাটিয়ে নিয়েছে। সবচে বড়জনকে যখন আমরা প্রথম দেখি তখন ওর বয়স উনিশ। ওর আরো তিনজন ছোট ছোট মেয়ে - তারা জেলের বাইরে। জেলে আসার সময় ওদের বয়স তিন, চার আর ছ’বছর। সাইবুন্নিসা মা মাঝে মাঝেই কাঁদতো। কী করে এই মেয়েগুলি নিষ্ঠুর গ্রাম্য সমাজে বাঁচবে - গ্রামের মানুষ হয়তো ওদের বিনা মাইনের চাকরের মত খাটাবে, অথবা বিক্রি করে দেবে - ক্রীতদাস বা বেশ্যা হওয়ার জন্য।

    সাইবুন্নিসার মায়ের স্নেহের লক্ষ্য ছিলাম আমরা। নিজের ছেলে মেয়েদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রনায় ও আমাদের বিপদটা খুব ভালো বুঝতো। 
    সাইবুন্নিসার মা আমাদের জন্যে চালের পিঠে ভাজতো - একটু একটু করে চাটুর ওপর জলের ছিটে দিয়ে - আমি আর কল্পনা গরম গরম খেতাম যখন, ওর মুখে তৃপ্তি ঝরে পড়তো। বেশিরভাগ কয়েদীই খুব অবাক হতো ওদের রান্না খাওয়া নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই দেখে - ওদের অভিজ্ঞতায় অন্যত্র ওরা অস্পৃশ্য, অপবিত্র, নোংরা - এইসব বলে পরিচিত। যখন ওরা আবিষ্কার করলো ওদের রান্না আমাদের সত্যিই দারুন পছন্দ, সবাই আমাদের জন্য নানান রকম জিনিস বানাতে শুরু করে দিল - ওদের নিজেদের ভাগের খাবার দিয়ে! 
    মানুষ হৃদয় উজাড় করে নিজের অতি সামান্য সম্বল থেকে ভালোবেসে কী করে অন্যকে বিলিয়ে দিতে পারে - তা দেখে আমি যে কী অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম তা বোঝানো কঠিন।

    আমাদের আরেকজন বন্ধু হয়েছিল রোহিনী। অল্পবয়সী, কৃষক মেয়ে; খুনের অভিযোগে বন্দী। অসম্ভব পরিশ্রমী - বাগানের মাটি কুপিয়ে, ওয়ার্ড্রেসের কাপড় কেচে, মেটিনের হুকুম খেটেও ওর ক্লান্তি নেই। ও খালি আমাদের কাজ করে দিতে চাইতো - কাপড় কাচা, বাসন মাজা, সেল পরিষ্কার, হাত পা মালিশ করে দেওয়া! এই মেয়েরা কখনো কোন স্কুল কলেজে পড়াশুনো করা মানুষকে নিজের কাজ নিজে করতে দেখেনি, তাই চেনাশুনো হয়ে যাওয়ার পর আমাদের কয়লা ভাঙতে, বা বাসন মাজতে বা সেল ঝাড়ু দিতে দেখে ওরা খুব অস্বস্তিতে পড়ে যেত। আমরা বুঝিয়ে বললাম যে পড়াশুনো শিখেছি বলে নিজের কাজ নিজে করতে হবে না, এমন কোন নিয়ম কোথাও নেই। আস্তে আস্তে এই জিনিসটা পরিস্কার হয়ে যাওয়ার পর আমাদের সবার সঙ্গেই খুব সুন্দর চেনাশুনো হয়ে গেল।

    রোহিনী বলেছিল ওর অনেকদিনের লুকনো ইচ্ছে লেখাপড়া শেখার। কল্পনা দুপুরের কাজকর্ম শেষ করে রোহিনীকে হিন্দি অক্ষর পরিচয় শুরু করলো।
    কিন্তু এতে এমন একটা হিতে বিপরীত হলো যেটা আমরা কল্পনা করতে পারিনি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • বইপত্তর | ২৯ জুলাই ২০২৩ | ৮৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত  | 165.225.***.*** | ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫৫521841
  • আরেব্বাস 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩৩521844
  • এই অমূল‍্য রত্ন এত সুন্দর করে পড়ানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
  • | ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৯:৩৮521845
  • খুবই ভাল হচ্ছে। 
  • Aranya | 2601:84:4600:5410:e8f4:685c:1232:***:*** | ২৯ জুলাই ২০২৩ ১০:৪২521847
  • বাঃ 
  • Samaresh Mukherjee | ২৯ জুলাই ২০২৩ ১১:৫৬521850
  • নৃশংস, নিকৃষ্ট অপরাধে স্বাধীনতা হারিয়ে দীর্ঘ কারাবাস‌ই অপরাধীর পক্ষে যথেষ্ট শাস্তি। কিন্তু বিনা অপরাধে, সন্দেহের বশে বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিশোধ‌স্পৃহায় কেউ এমন শাস্তি পেলে তা নিদারুণ হতাশা ও চূড়ান্ত মানসিক চাপের ব‍্যাপার। তার সাথে একটু আহারযোগ‍্য খাদ‍্য, অতি আবশ্যিক প্রয়োজনীয় কিছু বস্তু যেমন জুতো, শীতের পোষাক ইত্যাদি না দিয়ে সেই শাস্তি আরো দুঃসহ করে তোলা নিতান্তই অমানবিক। ভাবতে অবাক লাগে মানুষ কী করে মানুষের সাথে এমন ব‍্যবহার করতে পারে। মানুষ বড় বিচিত্র প্রাণী।

    ব্রিটিশ প্রভূরা একদা বিনা বা সামান্য অপরাধে বহু পরাধীন ভারতবাসী‌কে এমন কঠিন শাস্তি দিয়েছে। 3/2020তে একাকী ভ্রমণে মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর কেল্লায় গেছিলাম। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ শাসক ওটাকে জেল বানিয়ে ছিল। ভারতছাড়ো আন্দোলনের জিগির তোলায় 1942সালে নেহরু, প‍্যাটেল, মৌলানা আজাদের সাথে মোট বারোজনকে ওখানে তিন বছর বন্দী করে রেখেছিল। দেখেছি নেহরুর সেলে সেই টেবিল চেয়ার যেখানে বসে তিনি লিখেছেন 'ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া'। নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অভিভূত হয়েছি। 

    হাজারিবাগ জেলে‌ই ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় রাজেন্দ্র প্রসাদ, জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো জনপ্রিয় নেতাদের বন্দী করে রাখা হয়েছিল। পরে স্বাধীন ভারতে ব্রিটিশ‌দের তৈরী সেই হাজতে এক ব্রিটিশ মহিলাকে বিনা অপরাধে অমানবিক পরিবেশে পাঁচ বছর বন্দী থাকতে হয়েছিল। হায় ভাগ‍্যে‌র কী পরিহাস! মানুষের ওপর মনুষ‍্যকৃত অন‍্যায় সর্বদাই ধিক্কার‌যোগ‍্য।

    লেখা‌টা পড়ে দুটো সিনেমার কথা মনে পড়লো - 2003এর মূখ‍্য ভূমিকা‌য় Van Damme অভিনীত "IN HELL" এবং 2004এর উর্মিলা মাতোন্ডকর, স‌ইফ আলী খান অভিনীত "এক হাসিনা থী"। দুটোতে‌ই দেখি‌য়েছিল নিরপরাধ বন্দী‌ জেলের বীভৎসতায় ক্রমশ কীভাবে বদলে গেল।

    কোথায় পড়েছি মনে নেই - (সম্ভবতঃ) এক দার্শনিক বা বিজ্ঞানী‌কে চার্চের বিরোধী‌তা করায় সলিটারি সেলে দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল। কিছুদিন পর তিনি প্রহরী‌কে অনুরোধ করে কিছু গমের দানা জুটি‌য়ে সেগুলো গুনে রেখেছি‌লেন। প্রাতরাশের পর সেগুলো কুঠরির এবড়োখেবড়ো পাথরের মেঝেতে ছড়িয়ে দিয়ে নিকষ অন্ধকারে মেঝেতে হাত ঘষে ঘষে সেগুলো খুঁজে, গুণে, আবার জড়ো করতেন। লাঞ্চের পর আবার ছড়িয়ে দিয়ে খুঁজতেন। ঘোর অন্ধকার কুঠরিতে দিন রাতের তফাৎ ছিল না তবু দিনের অনেকটা সময় তাঁর এভাবে ব‍্যায়িত হোতো।

    বহুদিন পর মুক্তি পেয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন - দিনে দুবার অন্ধকার সেলে হাতড়ে হাতড়ে গরুখোঁজা করে গমের দানা খুঁজে নিজেকে ব‍্যস্ত না রাখলে ভেবে ভেবে‌ই উন্মাদ হয়ে যেতেন।

    লেখা‌টা পড়ে, নিজেকে মেরি‌র জায়গায় ভেবে আবেগতাড়িত হয়ে এসব লিখে ফেললুম। পাঠ প্রতিক্রিয়া হিসেবে এতো দীর্ঘ মন্তব্য অবাঞ্ছিত মনে হলে - মার্জনাপ্রার্থী। 
  • ইন্দ্রাণী | ২৯ জুলাই ২০২৩ ১৫:০৫521862
  • প্রিয় বর্গীয় জ,
    নীরবে পাঁচে পাঁচ দিয়ে চলে যাই, আজ সামান্য লিখি।
    এই কাজটির জন্য মস্ত বড় ধন্যবাদ । নমস্কার জানবেন।
    লেখাটিতে এমন একটি মায়া, ও শান্তস্বর নিহিত যে পড়তে পড়তে, হন্যমান বা জেলের ভিতর জেল পেরিয়ে আরো পুরোনো একটি লেখা মনে পড়ছে- রাণীচন্দের জেনানাফাটক- ভাবী, ছোট্টো লেবুগাছ, দোপাটিফুলের চারা, পায়রা, মায়া জানলার পাশে বসে গাইছে, 'কাঁদিয়া আকুল গোপিকাকুল' , দাসীপুসি, জেলের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন চেয়ে পাঠানো তাতে ১৫৯ টি নিয়ম, ইন্দুমতী, নেছামন , জামিনা, রূপজান, আজিমন...

    সমরেশবাবু,
    অনুরূপ একটি ঘটনা পড়েছিলাম কবিতা সিংহের লেখায়-্তাঁর জীবনের দুটি 'সঞ্জীবনী কাহিনীর ' কথা। সে লেখার নাম ছিল বিলু ও ছটি মরচে পড়া আলপিন। একটি সাহিত্যের গল্প অন্যটি জীবনের আখ্যান। জাগরী উপন্যাসে বিলু ছিল ফাঁসির আসামী। ছোট্টো চারার সবুজ শরীর দেখে সে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেত। অন্য গল্পটি ঐ মরচে পড়া আলপিনের। ফরাসী বিপ্লবের পরে এক ব্যারন স্ত্রীকে ছটি মরচে পড়া আলপিন উপহার দিয়েছিলেন। স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কারাগারে থাকার সময় তিনি যখন দেখলেন অন্য বন্দীরা আত্মহত্যা করছেন কিংবা পাগল হয়ে যাচ্ছেন, তখন স্রেফ ঐ ভয়ানক নিয়তির থেকে নিজেকে বাঁচাতে পকেট থেকে ছটি আলপিন বের করে ছুঁড়ে দেন অন্ধকারে। বছরের পর বছর ধরে কেবল তাদের ছুঁড়ে দেওয়া আর কুড়িয়ে আনার কাজে সময় কাটান। ওরাই তাঁকে বাঁচিয়ে দেয়। কবিতা সিংহের কাছে লেখাই বিলুর ঐ চারাগাছ বা ব্যারনের ঐ ছটি মরচে পড়া আলপিন।
    আপনার পোস্ট দেখে মনে পড়ে গেল।
     
  • বর্গীয় জ | ৩০ জুলাই ২০২৩ ০৫:৩৮521894
  • সবাইকে ধন্যবাদ!

    অমিতাভদা, হ্যাঁ, এই বইটাকে নানা কারনে আমার হিডেন জেম শ্রেণীর মনে হয়।

    সমরেশবাবু, দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া বাড়তি ইনসেন্টিভ!
    কথার পিঠে কথা, লেখার পিঠে লেখা, অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার চালাচালি আড্ডার উপার্জন, আমি একটা অনুবাদ করছি শুধু, লেখক নই, ঐ আড্ডার উপার্জনের দিকেই নজর।
    জেলখানায় সাধারন নিরপরাধকে অপরাধীতে পরিনত করা বিচারব্যবস্থার বড় অভিশাপ। কোনদিন হয়তো কারাগার সত্যিই সংশোধনাগার হবে।

    ইন্দ্রাণীদি, আমি ফিমেল ওয়ার্ডের অনুবাদ হিসেবে জেনানা ফাটক ব্যবহার করছি - সেটা একেবারেই রাণী চন্দের জেনানা ফাটকের ঋণ!

    ১৯১ পাতার বই, ৬৭ পাতা পর্যন্ত হয়েছে। আশা করছি মাঝে বড় বিরতি না নিয়ে শেষ করতে পারবো।
    কিছু খটকা, প্রশ্ন আছে, শেষ হলে করে রাখবো, ঐসময়ের খোঁজখবর জানা কেউ হয়তো বলতে পারবেন।

    সবাইকে ধন্যবাদ আবারও!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন