এই সময় মনে হল, জেলের থাকার সময়টা একটু প্রাথমিক চিকিৎসা, ওষুধপত্র - এসব শিখে নিলে তো হয় - যেখানেই যাবো কাজে লাগবে। ভাবা সহজ ছিল, করা সহজ হল না। এক বছর পর ইংল্যান্ডের এক বন্ধু রুথ ফস্টারের সাহায্যে একটা বই জোগাড় হল। দেখা গেল ঐ বইয়ে যা আছে তার সঙ্গে এখানকার স্থানীয় অসুখ বিসুখের কোন সম্পর্ক নেই। এরকম সময়গুলিতে একটা লাইব্রেরি বা বইয়ের দোকানের অভাব প্রচণ্ড অনুভব করতাম। যেকোন রকম পড়াশুনো করা মানে অসংখ্য দরখাস্ত, অনুরোধ, তাগাদা, আর দেরির পর দেরি।
তাও দ্য টাইমস কাগজটা মানসিক ভাবে সচল রাখতে অনেকটা সাহায্য করেছিল - যদিও অনিয়মিত, দেরি করে আসতো; তবু বড় বড় আন্তর্জাতিক খবরগুলি জানতে পারতাম। সেই বসন্তে ভিয়েতনাম ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের অভ্যুত্থান আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিল। আমি যেন নতুন উদ্দীপনা পেলাম - একটা সাধারন মানুষের আন্দোলন তার সাফল্যকে ছুঁতে চলেছে। একেক সময় ভারতীয় খবরের কাগজগুলিতেও খুব ভয়ানক খবর থাকতো। গত পনেরো মাসে নাকি কলকাতায় পুলিশের গুলিতে ১৯৯ জন মানুষ মারা গেছে। ভাগলপুর জেলের একটা ঘটনায় ১৬০ জন আহত আর ১০ জন ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছে। এর মধ্যেই মার্চ মাসের সাধারন নির্বাচনে কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়ী হল। এতে অবশ্য আমার খুশি হওয়ার কিছু ছিল না। একজন ওয়ার্ড্রেস বললো ওর বর নাকি কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য পনেরো টাকা পেয়েছে (ঐ সময় এক পাউন্ড মানে ভারতীয় আঠেরো টাকা মত)। জেলে যেসব মজুররা প্রখর রোদে দেওয়াল ঠিক করার কাজ করতা, তাদের দৈনিক মজুরী ছিল দু'টাকা। কংগ্রেস মন্ত্রীসভা উচ্চ উপারজনকারী শ্রেণীর জন্য বড় রকম কর হ্রাস ঘোষনা করলো - নাকি কর ফাঁকি কমানোর জন্য। এদিকে অসংখ্য বিজলীহীন গ্রামগুলিতে কেরোসিনের দাম বেড়ে যাওয়ার কারন হিসেবে বলা হত পূর্ব বঙ্গের উদ্বাস্তুদের জন্য সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
কল্পনা আর অমলেন্দু চলে যাওয়ার পর হাজারিবাগ জেলের অন্য নক্শাল বন্দীরা যে যেমন পারে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতো। ওরা ভয় পেত এরকমভাবে কয়েদ থেকে আমি না মানসিক অবসাদে চলে যাই। মাঝে মাঝে ওদের কারো থেকে গোপন চিরকুট পেতাম। আমি তখন জানতাম না, কিন্তু ওয়ার্ডাররাও ওদেরকে আমার খবরাখবর দিত। একদিন একটা চিঠি পেলাম - ওদের দেশের মানুষের প্রতি আমার সহমর্মিতাকে সাধুবাদ জানিয়ে।
এই জেনানা ফটকের বাইরে আমাকে নিয়ে কে কী ভাবতো আমি জানতাম না, কিন্তু এই চিঠিটা পড়ে মনে হলো আমার সত্যিই অর্থপূর্ণ কোন কাজ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত।
নকশালপন্থী দলগুলির আভ্যন্তরীন বিবাদের খবরগুলি সেন্সর আটকাতো না। মোটামুটি ১৯৭১-এর শরৎকাল থেকে এই খবরগুলি নিয়মইতই কাগজে আসতে শুরু করলো। প্রথমে মনে হত এসব হয়তো বানিয়ে লেখা, কিন্তু নকশাল সেলের গোপন চিঠি চিরকুটে বুঝলাম সত্যিই ১৯৭০ সাল থেকে কিছু বড় ব্যর্থতার পর একটা বড় রকম আভ্যন্তরীন তাত্ত্বিক বিবাদ শুরু হয়েছে। এইসব বিতর্ক রাতারাতি মিটে যাওয়া সম্ভব ছিল না, এদিকে আলাদা আলাদা দলগুলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের নিজেদের মত কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল।
যে আমাদের পায়খানা পরিস্কার করতো সে বললো আমাদের সঙ্গে আটক হওয়া একজন কয়েদীর যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। ও-ই একদিন আমাকে চুপিচুপি বললো, ও নাকি তুকতাক জানে, আমার কেস যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পড় আছে, তার নাম বললে ও আমার জামিনের ব্যবস্থা করে দেবে। এটা আমি মজা করে অন্য মেয়েদের বলে মস্ত ভুল করলাম। সবাই আমাকে বোঝাতে লাগলো এটা খুব কাজের জিনিস - সবারই এরকম কিছু না কিছু ঘটনা জানা আছে যেখানে আসামীরা জাদুটোনা করে ছাড়া পাওয়া যায়। এক বিচারককে নাকি একজন এমন বশীকরণ করেছিল যে বিচারক একজন আসল খুনীকে বেকসুর খালাস দিয়ে দিয়েছিল।
পুরুষ বিভাগের বন্দীদের সঙ্গে আমাদের দেখা হতো না, তবে অনেকসময় রাতে শুনতাম দেওয়ালের ঐ পারে ওরা গান গাইছে। একেকদিন ওরা দিনরাত টানা কিছু একটা ধর্মীয় গান গাইতো - সেটা আস্তে আস্তে তীব্র থেকে তীব্রতর হতে হতে উন্মাদনার মত হয়ে যেত। লেওনি বলতো ওখানে নাকি কয়েকজন হরিজন ছেলে আছে, তারা মেয়েদের মত নাচগান করতে পারে। কোন ফাটক রাতে ওরকম নাচ গানের আয়োজন করতে চাইলে ওয়ার্ডারকে টাকা দিতে হয়। বাইরেও নাকি ভ্রাম্যমান নাচিয়েরা ঐ জাত থেকেই আসে।
বাইরে থেকে টুকিটাকি কাজে আসা পুরুষ বন্দীদের সঙ্গে আমার কথা খুবই কম হয়েছে - ওয়ার্ড্রেসরা কড়া নজর রাখতো। ওদের ক্লান্ত, রুগ্ন চেহারা দেখে বোঝা যেত যে দু'চারজন ব্যতিক্রমী কর্তৃপক্ষের পেয়ারের লোক ছাড়া সবাই খুবই কঠিন জীবন কাটায় - আমাদের থেকে অনেক কঠিন। আমার খুব ইচ্ছে করতো ওদের কেস, বাড়িঘর, জেলের জীবন নিয়ে জানি - কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না।
আমার মা খুব অসুস্থ - চিঠিতে খবর পেলাম। বাবা লিখেছে, মা'র একটা বড়রকমের হার্ট অপারেশন হবে, হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমি এখানে, বন্দী, ওদের সাহায্য করার কোন উপায় নেই। দিনের বেলা অনেক মানুষের মধ্য থাকতাম - একা বসে চিন্তা করার সময় ছিল না। কিন্তু রাতে কত কী কল্পনা করতাম, স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্নে যেন আমার ইংল্যান্ড আর ভারত মিলেমিশে এক হয়ে যেত। জেলের মেয়েরা যেন আমাদের বাড়িতে, মা বাবা সহ আমরা সবাই এক সঙ্গে রাতের খাবার খাচ্ছি। অথবা যেন আমার খাবারের বাক্সে ওখানকার আর এখানকার খাবার মিলেমিশে আছে। আমার অবচেতন যেন স্থির করতে পারছে না - আমি কোথায় থাকতে চাই। আমার চাওয়া বোধহয় অসম্ভবটা - এইকই সঙ্গে দুটো জায়গায় থেকে যাওয়া।
দুরাশা
~~~~~~
১৯৭২এর মার্চ মাসে অমলেন্দুর মা বাবা আবার সেই দীর্ঘ কষ্টকর সফর করে এলন আমাকে দেখতে। এবার ওঁদের জেল অফিসের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হলো না। লোহার তারজালির ঐ পাশে ওঁদের ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন, বয়স্ক মুখগুলি দেখে বুঝতে পারছিলাম ওঁরা ঠাহর করে দেখতে চেষ্টা করছেন আমি রোগা হয়ে গেছি কিনা। ওঁরা বললেন অমলেন্দু সহ যে ষোলজন কলকাতার আটক আছে তারা হয়তো আরো দীর্ঘদিন জেলেই থাকবে - কলকাতাতেও তদন্ত বা বিচারের অগ্রগতি এখানকার থেকে আলাদা কিছু না। আমাদের সবার বিচার প্রক্রিয়াই এইসবের কারনে দেরি হবে। ওঁরা চাইছেন আমার জামিনের চেষ্ট করতে। ভারতের আইনে, যে ধারাই হোক, মহিলাদের জন্য জামিন চাওয়া যেতে পারে। আমি আমার হয়ে আইনী প্রতিনিধিত্ব করার কাগজে সই করে দিলাম যেন উকিল দিয়ে জামিনের আবেদন করা যায়। যদিও জামিন গ্রাহ্য হবে এমন আশা আদৌ করছিলাম না।
কিছুদিন পর সুপার জানালো ২৯শে মার্চ জামশেদপুরে আমার আদালতে হাজিরার দিন ঠিক হয়েছে। বাবা চিঠি লিখেছিল - তাতেও এই খবর ছিল। সুপার বললো একটা চার্জশিট জমা পড়েছে, আরেকটার কাজ চলছে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম - দ্বিতীয় কেস বলে কিছু আছে আমার তো জানা ছিল নেই - কিসের চার্জশিট! সুপার নিজেও মনে হল ধন্দে পড়ে গেছে। একজন দপ্তরী আমাদের কথা শুনে দেখে বললো সত্যিই আমার বিরুদ্ধে আরেকটা সমন আছে। কাগজপত্র ঘেঁটে সেটা বেরুলো - ঐ কেসটা নিয়ে আমাকে কেউ কিছু জানানোরই প্রয়োজন বোধ করে নি। ওটা বেশি ভয়ানক - রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধঘোষনা। এই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। অভিযোগ, ১৯৭০ সালের জুন মাস পর্যন্ত আমি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলাম। ওদিকে ঐ সময়ে আমি দু'সপ্তাহ জেলে কাটিয়ে নিয়েছি।
এর ক'দিন পর আবার জেল অফিসে ডাক পড়লো। কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশ, আর তাদের মুখপাত্র হিসেবে জেল সুপার আমার অপেক্ষায়। প্রশ্ন করলো, নকশাল রাজনীতি নিয়ে আমার কী মত আর ছাড়া পেলে আমি তাদের সঙ্গে যোগ দেবো কিনা। অমলেন্দু খুবই সাঙ্ঘাতিক অপরাধী, ওর ফাঁসী প্রায় নিশ্চিতই বলা চলে, আর আমি যেহেতু "বিপুল পরিমান ভয়ানক অস্ত্রশস্ত্র সহ" ধরা পড়েছি, তাই বিচারের ঝামেলায় গেলে আমার অতি অবশ্যই লম্বা সাজা হবে। এর থেকে যদি নক্শাল রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ দেশে ফিরে যেতে রাজি থাকি, তাহলে হয়তো বেঁচে যাবো। কিছুক্ষন এইসব শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম যে ও ঠিক কী চাইছে। তাতে বাক্যবাণ একটু থেমে গেল। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, ভারত সরকার যদি সত্যিই আমাকে দেশেই ফেরত পাঠাতে চায়, তাহলে এই দু'বছর আমি জেলে বসে কী করলাম? সুপার আবার আশ্বাসের সুরে বললো আমাকে কেউ জোর করে ফেরত পাঠাবে না, তবে ফিরে যাওয়া আমার পক্ষে মঙ্গল। এইসব গোলগোল কথা শুনে বিরক্ত, ক্লান্ত হয়ে বললাম আমি আমার সেলে ফিরতে চাই।
এই আলোচনার আর কোন অগ্রগতি কোনদিন হয়নি।
২৯শে মার্চ এলো, চলেও গেল। আদালতে যাওয়ার বিষয়ে কিছুই হলো না। আমি অবাকও হইনি - শুরু থেকেই আমার এটা নিয়ে কোন ভরসা ছিল না। দ্বিতীয় কেসটা নিয়েও আমার তেমন কিছু চিন্তা হচ্ছিল না - এইসব নথিপত্র, ধারা উপধারা - ততদিনে আমি বুঝে গেছিলাম এসবে কিছুই আসলে এসে যায় না। সরকার যতদিন চাইবে আটকে রাখবে, কোনদিন যদি মনে হয় ছেড়ে দেওয়া যায় তাহলে ছেড়ে দেবে। তবে খুব আঘাত পেয়েছিলাম আমার খুব আদরের বোনের কাছ থেকে একটা চিঠি পেয়ে। খুব আকুতি করে লিখেছে যে আমি যেন বিচার বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা করি - তাতে আমি তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবো। যেন এই আটকে থাকাটা আমার নিজের আচরন, অসহযোগিতার কারনেই হচ্ছে। আমি বুঝিয়ে লেখার চেষ্টা করলাম যে আমি নিরুপায় - তবে মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে চিঠিটা পৌঁছবে না। একেকসময় ভীষন হতাশ লাগতো - বন্ধু, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করারও কোন পথ নেই। দেশে ফিরে আমার মা বাবাকে লেখা বিদেশমন্ত্রকের চিঠিগুলো পড়ে বুঝতে পেরেছিলাম কেন ওদের আমাকে নিয়ে এরকম ধারনা হয়েছিল। একটা চিঠিতে লেখা ছিল আমার কাজের জন্য আমার মধ্যে কোন "অনুশোচনা দেখা যাচ্ছে না", আরেকটা চিঠিতে ছিল, "আমার মঙ্গলের জন্য"ই অমলেন্দুর মা বাবার সঙ্গে আমার দেখা না হওয়া ভালো। এদিকে আমার প্রাথমিক দরকারগুলি, জামাকাপড়ের জন্যও অমলেন্দুর মা বাবার ওপরই নির্ভরশীল ছিলাম।
বৃটিশ হাই কমিশনের দ্বারা তেমন কিছু হবে না সেটা আমি গোড়া থেকেই বুঝেছিলাম, তাই ওদের সঙ্গে সাধারন সৌজন্যমূলক কথাবার্তার বেশি কিছু বলতাম না। কিন্তু কোনরকম অনৈতিক শর্ত না চাপানো পর্যন্ত আদালতে যাওয়া, বিচারের মুখোমুখি হওয়া, বা ইংল্যান্ডে ফেরা নিয়ে আমি কোনদিনই কোনরকম আপত্তি দেখাইনি। বরং একাধিকবার বলেছি যে ভারতের আইনে থাকলেও আমাকে নিয়মিত আদালতে হাজির করানো হচ্ছে না। ওদের জবাব ছিল আদালতে হাজির করানোর জন্য বিহার সরকারের অনুমতি লাগবে। তাই, আমি নিজেই এই পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছি এরকম ধারনা দেওয়ার কোন যুক্তি আদৌ ছিল না।
পরে, এপ্রিল মাসে সুপারের উপস্থিতিতে ডেপুটি হাই কমিশনের দুজন প্রতিনিধির সঙ্গে একটা মিটিং হল। আলাদা করে আমার বিচার প্রক্রিয়ার একটা প্রস্তাব মুলতুবি হয়ে গেল কারন যাদের কলকাতায় বদলি করা হয়েছে তাদের অদূর ভবিষ্যতে আর বিহারে আনা হবে না। হাজারিবাগেই আমার সঙ্গে আটক হওয়া বন্দীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলাম - বলা হল একটা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হবে। দাঁত নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল - প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল যে দাঁতের ডাক্তার দেখিয়ে দেওয়া হবে। চিঠিপত্র সময় মত পাই না কেন, তার উত্তরে বলা হল "ডাকবিভাগের গোলযোগে"। বাবার পাঠানো টাকা দিয়ে কিছু বই কিনে দিতে বললাম - সুপার বললো যেকোন বইপত্রই আমি পেতে পারি, শুধু পিকিং থেকে প্রকাশিত না হলেই হলো। রুথ ফস্টারের পাঠানো কিছু বইও সুপারের কাছে সেন্সরের জন্য জমা দেওয়া হল।
এক মাস পর, সহবন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বই, দাঁতের ডাক্তার - কোনটাই হলো না। দূতাবাসের লোকেদের সামনে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি ওরা যাওয়ার পরের মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে যেতে - প্রতিবারই। চিঠিপত্র দেরিতেই আসতে থাকলো। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়মিত, সরাসরি যোগাযোগের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম অনেকদিন থেকেই। আমার নিজের লেখা চিঠিও ডাকে যাওয়ার আগে সপ্তাহের পর সপ্তাহ জেলে পড়ে থাকতো - অনেক চিঠি হাপিসও হয়ে যেত। একেক সময় রেজিস্ট্রি চিঠির জন্য খাতায় সই করে সেই চিঠি দশ পনেরো দিন তাগাদার পর তাগাদা দিয়ে হাতে পাওয়া যেত। এই ক'দিন আমি খালি ভাবতাম - কে লিখেছে, কী লিখেছে।
একটা ভয়ানক শ্লথ, জড় নিয়মতন্ত্রের দাক্ষিন্যের ওপর নির্ভর করেছিল আমার সব কিছু।