এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বই

  • দ্য গ্রেট ওয়ার ফর সিভিলাইজেশান

    রঙ্গন
    আলোচনা | বই | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ১০৫৪ বার পঠিত
  • The Great War for Civilisation : The Conquest of The Middle East
    Robert Fisk

    এই বই নিয়ে কোনো আলোচনা বা সমালোচনার স্পর্ধা আমার নেই। এমনকি প্রায় এক হাজার তিনশ পাতার বইটির এক-চতুর্থাংশ মাত্র পড়ে উঠেছি। কাজেই এই লেখাটা আমার পড়ার সমান্তরালে গড়ে উঠবে। লেখাটার একটাই মানে হতে পারে। পড়তে পড়তে নিজের মুগ্‌ধতা, সংশয়, চিন্তা বা জিজ্ঞাসা অন্য অনেকের সাথে ভাগ করে নেওয়া। যে বেইরুটবাসী সাংবাদিক নিজের জীবনের প্রায় পুরোটাই পশ্চিম এশিয়াকে বুঝতে চাইছেন, যিনি আফগানিস্থানের পুশ্‌তু থেকে আরবের ঠেঁট আরবী ভাষায় সমান দক্ষ, যাঁর তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সূত্রে তৈরি প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ডকুমেন্ট ও ফাইলের ভিত্তিতে এই বই গড়ে উঠেছে, এবং যিনি রাশিয়ার আফগানিস্থান দখল থেকে আজকের ইরাক- প্রতি রণক্ষেত্রে উপস্থিত, সেই রবার্ট ফিস্কের দেখা যুদ্ধের মহাকাব্য চুপ করে শোনা ছাড়া উপায় নেই। আরও একটা কারণ আছে। আমাদের মূলধারার দেশজ মিডিয়ার ট্যাবলয়েডীকরণ প্রায় সম্পূর্ণ। রবার্ট ফিস্কের লেখা আমাদের প্রতিদিনের দেখা ও পড়া সেই খেলো (আরও সঠিক শব্দ হল inane ) সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতা আরও স্পষ্ট করে তোলে। রবার্ট ফিস্ক নিজে কোনো বিকল্প মিডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন না। কিন্তু তিনি প্রমাণ করেন মূলধারার মিডিয়াতেও সাহসী ও পরিশ্রমী সাংবাদিকতা সম্ভব। রবার্ট ফিস্ক নিজে সাংবাদিকতা নিয়ে কি ভাবেন? এই বই থেকেই-

    "I suppose, in the end, we journalists try- or should try- to be the first impartial witnesses to history. If we have any reason for our existence, the least must be our ability to report history as it happens so that no one can say: 'We didin't know- non one told us.' Amira Hass, the brilliant Israeli journalist on Ha'aretz newspaper whose reports on the occupied Palestinian territories have outshone anything written by non-Isralei reporters, discussed this with me more than two years ago. I was insisiting that we had a vocation to write the first pages of history but she interrupted me. 'No, Robert, you're wrong,' she said. 'Our job is to monitor the centres of power.' And I think, in the end, that is the best definition of journalism I have heard; to challenge authority- all authority- especially so when governments and politicians take us to war, when they have decided that they will kill and others will die.'

    রবার্ট ফিস্কের বাবা বিল ফিস্ক প্রথম বিশ্বযুদ্ধী সেনানী ছিলেন। তাঁর ছেলের প্রায় পুরো জীবনটাই কেটেছে অগ্নিগর্ভ যুদ্ধক্ষেত্রে, বারুদ আর পচা লাশের গন্ধে, বিস্তীর্ণ তৈলক্ষেত্রে অবিরত জ্বলা আগুনের বর্ণে, মিসাইল আর মিলিটারি ক্যাম্পের দৃশ্যে। ফিস্ক দেখছেন ইরানের ট্রেনে সেই প্রায়কিশোর সৈন্যবাহিনী যাদের এক হাতে কোরান আর অন্য হাতের রুমাল ভিজে যাচ্ছে ক্রমাগত উঠে আসা রক্ত আর কফে- সাদ্দাম হুসেনের ছোঁড়া নার্ভ ও মাস্টার্ড গ্যাসের যোগফল। ফাওতে সেই ইরাকি সৈন্যটি মাতৃগর্ভে শোয়ার মত পড়ে আছে কাদায়, ততক্ষণে শরীর কালো হয়ে এসেছে, বামহাতের মধ্যমায় ঝলসাচ্ছে বিয়ের স্বর্ণালী আংটি। অথবা আফগানিস্থানের পর্বতশীর্ষে ওসামা বিন লাদেনের পাশে মোমবাতির আলোয় টুকে নিচ্ছেন আমেরিকার উদ্দেশ্য লাদেনের প্রথম চেতাবনি। বা নাসিরিয়ার সেই গণকবরে যেখানে একটি পা পড়ে আছে, যার ভিতরে একটা স্টিলের টিউব আর হাড়ের সাথে লেগে আছে প্লাস্টিকের চাকতি। হতভাগ্যের পায়ের অপারেশনের সময় তাকে সোজা হাসপাতাল থেকে তুলে আনে সাদ্দামের ঘাতকবাহিনী।

    "Governments like it that way. They want their people to see war as a drama of opposites, good and evil, 'them' and 'us', victory or defeat. But war is primarily not about victory or defeat but about death and infliction of death. It represents the total failure of the human spirit. I know an editor whi has wearied of hearing me say this, but how many editors have first-han experience of war?"

    ইতিহাস। ফিস্ক বলেন সাংবাদিককে পকেটে একটা ইতিহাসে বই নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। নইলে ঘটমান বর্তমান রেকর্ড করাই সার হবে, সাংবাদিক ধরতে পারবেন না এক প্রজন্মের কীর্তি অন্য প্রজন্মের ইতিহাসে কিভাবে ছায়া ফেলে, কিভাবে একের পর এক যুদ্ধ এবং রক্তক্ষয় একে অন্যের সাথে দৃশ্য ও অদৃশ্য গ্রন্থিতে বাঁধা থাকে। তাই ফিস্ক এই বর্বরতার ইতিহাস বারবার ফিরে যাবেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রেফারেন্সে। যে যুদ্ধের ইতিহাস তাঁর কাছে ব্যক্তিগতও বটে, কারণ তাঁর বাবা সেই যুদ্ধের সৈন্য। বিল ফিস্ক এই যুদ্ধে দুটি মেডেল পান। একটিতে লেখা ছিল ১৯১৪-১৯১৯, ১৯১৯ মানে ভার্সেইয়ের সন্ধি যখন সরকারীভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল। সেই মেডেলটিতেই লেখা- The Great War for Civilisation । কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কেন বারবার রেফারেন্স হিসেবে ফিরে আসছে, ব্যক্তিগত ইতিহাসের জায়গাটুকু বাদ দিলে?

    " .....I have witnessed events that, over the years, can only be defined as an arrogance of power. The Iranians used to call the United States the 'centre of world arrogance', and I would laugh at this, but I have begun to understand what it means. After the Allied victory of 1918, at the end of my father's war, the victors divided up the lands of their former enemies. In the space of just 17 months, hey created borders of Northern Ireland, Yugoslavia and most of the Middle East. And I have spent my entire career- in Belfast and Sarajevo, in Beirut and Baghdad- watching peoples within those borders burn. America invaded Iraq not for Saddam Hussein's mythical 'weapons of mass destruction'- which had long ago been destroyed- but to change the map of the Middle East, much as my father's generation had done more than eighty years earlier. Even as it took place, Bill Fisk's war was helping to produce the country's fist genocide- that of a million and a half Armenians- laying the foundations for a second, that of the Jews of Europe.'

    এক হাজার তিনশো পাতার বইটা পশ্চিম এশিয়ার রক্তাক্ত ইতিহাসের এক অসম্ভব সাহসী দলিল। যুদ্ধ, টর্চার এবং হত্যা- স্বাভাবিকভাবেই এই বইয়ের মূল থীম। আর রয়েছে ইতিহাস যার কাছে ফিস্ক বারবার আশ্রয় নেন বহুমাত্রিক অসম্ভব জটিল বর্তমানকে বোঝার জন্য। যদিও ফিস্ক কোনো সেন্সেশনাল প্রতিবেদন লিখতে চান না, এবং পুরোনো ঘরানার সহজ স্পষ্টবাদী আঁখো দেখা হাল এবং বিশ্লেষণে বিশ্বাসী, পশ্চিম এশিয়ার বাস্তব এতটাই রক্তাক্ত, এই বইয়ের পাতার পর পাতা একটানা পড়ে যাওয়া সংবেদী মানুষের পক্ষে দু:সাধ্য। দেখা যাক অধ্যায় অনুসারে বইটার বিস্তৃতি কতটা:

    ১। One of Our brothers Had a Dream - মূলত: ওসামা বিন লাদেনের কথা
    ২। They Shoot Russians - আফগানিস্থান এবং রাশিয়ার আগ্রাসন
    ৩। The Carpet-Weavers - ইরান, শাহের পতন ও খোমেইনির উত্থান
    ৪। The Path to War - ইরাকের ইতিহাস, সাদ্দামের উত্থান
    ৫। The Whirlwind War - ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু
    ৬। Drinking the Poisoned Chalice - ইরান-ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি
    ৭। Sentenced to Suffer Death - ফিস্কের বাবা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি
    ৮। The First Holocaust - টার্কি ও সিরিয়াতে আর্মেনিয়ান গণহত্যা genocide নয়, holocaust )
    ৯। Fifty Thousand Miles from Palestine - আরব-প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল এবং অসলো চুক্তি
    ১০। The Girl and The Child and Love - অসলো চুক্তির বিনাশ ও সাম্প্রতিকতম ইন্তিফাদা আরম্ভ
    ১১। Anything to Wipe Out a Devil - আলজিরিয়ায় ফরাসী সাম্রাজ্য এবং সাম্প্রতিক গৃহযুদ্ধ
    ১২। Planet Damnation - সাদামের কুয়েত আক্রমণ ও প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু

    এই হল আমরা মোট চব্বিশটি অধ্যায়ের অর্ধাংশ। পরে বাকি অর্ধাংশের কথা হবে। সাম্প্রতিককালের জটিলতম এবং রক্তাক্ত ইতিহাস পাঠক নিতান্ত আগ্রহী না হলে পাতার পর পাতা পড়বেন ভাবা শক্ত। তবে ফিস্ক সাংবাদিক এবং জানেন পাঠককে কিভাবে আগ্রহী করে তুলতে হয়। যার প্রথম প্রমাণ অধ্যায়গুলির ক্রমবিন্যাসের মধ্যে রয়েছে। ফিস্ক বইটি শুরু করেন এমন এক ব্যক্তিত্বকে দিয়ে যিনি যে কোনো পাঠকের কাছেই প্রবল আগ্রহের বিষয়। বিশ্বায়িত সন্ত্রাসবাদের পপুলারতম আইকন ওসামা বিন লাদেনের সাথে বব ফিস্কের নিভৃত মোলাকাতের গল্প। ফিস্ক সেই বিরলতম পশ্চিমী সাংবাদিক যাকে বিন লাদেন নিজে ডেকে পাঠিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ফিস্কের সাথে লাদেনের প্রথম সাক্ষাৎ যদিও অনেক আগে, যখন আফগানিস্থানের পাহাড়ে লাদেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছেন। শেষ দেখাও আফগানিস্থানে, তালিবান রাজত্বে। যখন ফিস্ক ফিরে আসছেন-

    " So we stoppedthe Toyota and climbed out to watch the fireball as it blazed through the darkness above us, the al-Qaeda men and the Englishman, all filled with awe at this spectacular, wondrous apparition of Cosmic Energy, unseen for more than 4000 years. "Mr Robert, do you know what they say when a comet like this is seen?' It was the Algerian, standing next to me now, both of us craning our necks up towards the sky. 'It means that there is going to be great war.'

    তবে আমরা আফগানিস্থান-ইরান-ইরাক ছেড়ে নজর দেব ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনের দিকে। কারণ এই ক্ষুদ্র ভূখন্ডটি পশ্চিম এশিয়ার শান্তি ও যুদ্ধের মূলবিন্দু। আরব লীগ থেকে ন্যাটো-সবাই অন্তত: এই একটি বিষয়ে একমত। ফিস্ক যখন আফগানিস্থান-ইরাক-ইরান-টার্কি-সিরিয়া-আলজিরিয়া আলোচনা করছেন তিনি আরব একনায়কদের নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে মুখর, পশ্চিমী শক্তিগুলির দ্বিচারিতা এবং ধূর্ততা অমানবিকতা নিয়ে শ্লেষ ও ব্যঙ্গে তীব্র। কিন্তু প্যালেস্টাইন-ইজরায়েলের আলোচনায় ফিস্ক অসম্ভব ক্রুদ্ধ। সেই ক্রোধ প্রায় শারীরিকভাবে পাতায় পাতায় ফুটে উঠেছে। এতটাই ক্রুদ্ধ যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্ত আলোচনাতেও তাঁর আপত্তি নেই। লেখার কুশলতাকে ছাপিয়ে উঠছে প্রতিটি শব্দ থেকে ফেটে বেরোনো আগুনরাগ, ইজরায়েল এবং তার পৃষ্ঠপোষক পশ্চিমী শক্তিগুলির বেপরোয়া মাস্তানি দেখে।

    ফিস্ক ইজরায়েল নিয়ে ক্রুদ্ধ বলাই বাহুল্য। ফিস্ক আরাফতকে নিয়েও ভীষণ তিক্ত। ফিস্কের মতে অসলো চুক্তির একমাত্র অর্থ হল প্যালেস্টাইনের স্বাধিকারের আন্দোলনকে নষ্ট করে দেওয়া। এবং সেই কাজটি করেছেন আরাফত। আমেরিকা এবং ইজরায়েল আরাফতকে সেদিন থেকে পাত্তা দিতে শুরু করল যেদিন তারা বুঝল একে এখন যা বলব তাই শুনবে। প্রায় ভেঙে যাওয়া বিয়ে এবং পুরো ভেঙে যাওয়া শরীর নিয়ে ঘরছাড়া দেশছাড়া এক জরাগ্রস্ত বৃদ্ধ জীবনের সায়াহ্নে খড়কুটোর মত কিছু একটা আঁকড়ে ধরছেন এবং সেই মানসিকতা থেকেই অসলো চুক্তির জন্ম। এর পরে প্যলেস্টাইনের আন্দোলন আরাফতের হাতের বাইরে। একদম শেষে যখন আরাফত ইজরায়েল এবং আমেরিকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন এবং ইজরায়েল আরাফতের অফিসে হামলা চালাচ্ছে, তখন সেই প্রত্যাখ্যান আরাফত করছেন না, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া, অনবরত বিশ্বাসঘাতকতায় ক্ষুণ্ন প্যালেস্টাইনের জনতাই তাঁকে দিয়ে প্রত্যাখ্যান করিয়ে নিচ্ছে। হাস্যকরভাবে আমেরিকা তখন আরাফতকে সন্ত্রাসের নেতা বলে চিহ্নিত করছে। এই সময়ে আরাফত কথা বলার সময় ডান হাত দিয়ে অনবরত কাঁপতে থাকা বাঁ হাত চেপে ধরেন, আর কথা না বললে তলার ঠোঁট অনবরত কাঁপে। এই অথর্ব ক্ষমতাহীন বৃদ্ধকে টার্গেট করল ইজরায়েল, আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে। আমেরিকার শান্তিকল্যাণের দূতিয়ালি যে কতটা লোকদেখানো এবং অন্ত:সারশূন্য তার সমর্থনে ফিস্ক একটা মজার গল্প বলেছেন।

    " On a sofa just outside the coffee salon of the Churchill Hotel in London on the second day of the talks, I came upon a familiar figure slumped on the sofa. There was no obvious security, no poicemen, just the tall, dark-haired State Department spokesman and the woman sitting white-faced with exhaustion in the corner of the settee. Madeleine Albright looked on the point of collapse. Only hours before, she had telephoned Arafat to plead her excuses. She could not come to see him as agreed, she said. She was simply too tired to drive over to Claridge's for their meeting. Araft burst into laughter when the call was over. Never mind that his own state of health- shocking to behold hn only a few feet from him, his right hand clutching his shaking left hand, his lower lipa moving helplessly when he wasn't speaking- was far worse than Mrs. Albright's. But when it came to Netanyahu a few hours later, Albright was off in her limousine to meet the Israeli prime minister at his own hotel. '

    আমরা অনেকেই ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বের আদি ইতিহাস জানি। ব্রিটিশ শক্তি ঘোষণা করেছিল প্যালেস্টাইন ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাবে, এবং সাথে সাথে ব্যালফোর ডিক্লারেশনে ইহুদীদের মাতৃভূমির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। অত:পর প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের উপনিবেশ স্থাপন এবং লাখে লাখে প্যালেস্টিনীয় তাঁদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত, যাদের রিফিউজিদশা আজও ঘোচে নি। এর পর যুদ্ধ, নৃশংসতা, ইজরায়েল রাষ্ট্রের ক্রমাগত জমিদখল, আরও আরও প্যালেস্টিনীয় বিতাড়িত। পাশাপাশি পশ্চিমী শক্তিগুলির, বিশেষত: আমেরিকা ও গ্রেট ব্রিটেনের নির্লজ্জ ইজরায়েলতোষণ। তবে এই ভূখন্ডের লড়াই না থামার পিছনে ফিস্ক আরও একটি মাত্রা খুঁজে পান। সেটি হল ইজরায়েলিদের নিখাদ নিরেট জাতিবিদ্বেষ। ইজরায়েল মনে হয় একমাত্র রাষ্ট্র যেখানে এখনও জাতিবিদ্বেষ সরকারীভাবে স্বীকৃত নীতি। ফিস্ক ইজরায়েলিদের পরম বন্ধু বিল ক্লিন্টনের একটা গল্প বলেছেন, ইজরায়েলিদের জাতিবিদ্বেষ নিয়ে।

    "At an autumn 1998 private dinner party in the White house with junior members of the Jordanian royal family, Preseident Clinton unburdened himself of a few thoughts on Benjamin Nethnyahu. There were fewer than a dozen guests and he was talking to men and women who would sympathise with his remarks. "I am the most pro-Israeli President since Truman", he announced to his guests. "But the problem with Bibi is that he cannot recognise the humanity of the Palestinians." Stripped of its false humility- Clinton was surely more pro-Israeli than Truman- the president had put his finger on Netanyahu's most damaging flaw: his failure to regard fellow Palestinians as fellow humans.... '

    অসলো চুক্তি ভেঙে যাওয়া এবং আরাফতে মৃত্যুর পরে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা আন্দোলন এক নতুন মোড় নিয়েছে। গত ষাট বছর ধরে ইজরায়েলিরা যাদের অবাঞ্ছিত জানোয়ার ভেবে এসেছে এবং সেইরকম আচরণ করেছে, সেই প্যালেস্টিনীয়দের একাংশ এবার জানোয়ার হয়ে ওঠাই শ্রেয় বলে ভেবে নিয়েছে। ফিস্ক আত্মঘাতী বোমারুদের কথা লিখেছেন। জাপানী কামিকাজে পাইলটদের এই ঘরনা পরে লেবাননের হেজবোল্লা সফলভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু সেইসব বোমারুদের লক্ষ্য হত মিলিটারি এবং পুলিশ। এই নতুন শতাব্দীতে এই মানববোমার কবল থেকে রক্ষা পায় না কেউ। চার মাসের শিশু থেকে পঁচিশ বছরের গর্ভবতী জননী। প্যালেস্টাইনের মুক্তি আন্দোলনের একটা ধারাও এই হত্যার পথ বেছে নিয়েছে ফিস্ক যাঁর তীব্র বিরোধিতা করেন। এবং বোঝার চেষ্টা করেন। তবে ইজরায়েলি রাষ্ট্রের স্বীকৃত পুলিশ ও মিলিটারির ভয়ঙ্করতা এর দশগুণ। বস্তুত: একবিংশ শতকে প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে- শিশুহত্যা।

    " In all, Israeli human rights group B'Tsalem estimated between 1987 and May 2003, a total of 3,650 Palestinians and 1,142 Israelis were killed, an overall death toll of 4,792. But statistics alone cannot do justice to the suffering of children. By 1993, 232 Palestinian children, aged sixteen and under, had been killed by Israeli slodiers during the first Intifada. However, in just twelve months ending on 30 September 2002, at least 250 Palestinian children and 72 Israeli children had been killed. In one of the most shocking reports on the Israeli-Palestinian war, Amnesty International condemned both sides for their "utter disregard" for the lives of children. The sloemn list that Amnesty has amassed showed how ingrained child-killing had become. There was Sami Jazzar, shot in the head by an Israeli soldier on the eve of his twelfth birthday in Gaza, eleven-year-old Khalil Mughrabi, killed by an Israeli sniper in Gaza- one of his friends survived after being shot in the testicles by a high-velocity round- and there was ten-year-old Riham al-Ward, killed in her Jenin schoolyard by an Israeli tank shell. Then there were Raaya and Hemda- fourteen and two years old- killed with their parents by the Palestinian suicide bomber who attacked the Sbarro pizzeria in Jerusalem, Shalhevet Pas- she was just ten months old- shot by a Palestinian sniper in Hebron, and Avia Malka, killed by Palestinians who shot and threw granades at cars in Netanya. She was nine months old. '

    "The most terrible incident- praised by Sharon at the time as a 'great success'- was the attack by Israel on Salah Shehada, a Hamas leader, which slaughtered nine children along with eight adults. Their names gave a frightful reality to this child carnage- eighteen-month-old Ayman Matar, three-year-old Mohammed Matar, five-year-old Diana Matar, four-year-old Sobhi Hweiti, six-year-old Mohamed Hweiti, ten-year-old Ala Matar, fifteen-year-old Imam Sheahada, seventeen-year-old Maryam Matar. And Dina mAtar. She was two months old. An Israeli air force pilot dropped a one-ton bomb on their homes from an American-made F-16 aircraft on 22July 2002. '

    ফিস্ক কি নিরপেক্ষ? যে কোনো সাংবাদিকের পক্ষে এই "নিরপেক্ষতা" শব্দটা বেজায় ধন্দ ভরা। তথ্য ও কাহিনী পরিবেশনের নিরিখে ফিস্ক যতটা নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব ততটাই নিরপেক্ষ। পশ্চিম এশিয়ায় যুযুধান প্রত্যেকটি রাষ্ট্র, প্রত্যেক শিবির, প্রত্যেক জমানার হাত একইভাবে রক্তাক্ত। রক্তের এই ছবি আঁকতে ফিস্কের একটুও দ্বিধা নেই। এবং পাঠককে এই কথাটা যতটা পরিষ্কারভাবে পৌঁছে দেওয়া যায় ঠিক ততটাই সোজাসাপটাভাবে পৌঁছে দেন। আমেরিকার ইরাক হামলার পরে যে সব বামপন্থী সাদ্দামের মহানতা খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা সাদ্দামের রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বা নির্বিচারে গণহত্যা ও ধর্ষণের গল্পগুলো পড়তে পারেন। এবং আমেরিকার সাথে সাদ্দামের কোলাকুলি ও হামি খাওয়ার গল্পগুলো। খোমেইনি পূর্ববর্তী শাহের ইরান এবং পরবর্তী ইসলামীয় ইরান প্রায় একই রকম ভয়ঙ্কর। ইজরায়েল প্যালেস্টাইনের গল্প আগেই হয়েছে। যে গল্পগুলো আমাদের সামনে ঠিক এত পরিষ্কারভাবে আসে না, যেমন আর্মেনিয়ানদের হলোকস্টের গল্প, বা আলজিরিয়ার গৃহযুদ্ধের গল্প (এখানে উন্মত্ত গণহত্যার ইতিহাসের কোনো জুড়ি নেই, মনে হয় ইরাক বা আফগানিস্থানের থেকেও ভয়ঙ্কর), সেই গল্পগুলোকে ফিস্ক আমাদের সামনে নিয়ে আসেন। গণহত্যা ও যুদ্ধের ইতিহাসের মিসিং লিঙ্কগুলো খুঁজে পাই। ফিস্ক এতটা পরিষ্কার হতে পেরেছেন কারণ ভদ্রলোক কোনো ফ্যাশনেবল তত্ত্বের ধার ধারেন না। আজকের যুগে প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া সাংবাদিক নিরপেক্ষতার তঙ্কেÄ ফিস্ক বিশ্বাস করেন। যে কারণে পশ্চিমী মিডিয়ার প্রায় কোনো অংশ ফিস্কের ক্ষুরধার ব্যঙ্গের হাত থেকে রেহাই পায় না। যে কারণে ফিস্ক "এমবেডেড" সাংবাদিকতাকে মনেপ্রাণে ঘেন্না করেন। এবং ফিস্কের লেখা পড়লে আমাদের অধিকাংশ দেশীয় সাংবাদিকদের ইতিহাস-নিরক্ষরতা ও বামে-ডানে-পুবে-পশ্চিমে কান্নিক খাওয়ার অহেতুক প্রবণতা দগ্‌দগে হয়ে ওঠে।

    ঠিক এর সমান্তরালে ফিস্ক অসম্ভব পক্ষপাতদুষ্ট। কারণে নিরপেক্ষতার সাথে সাথে ফিস্ক সাংবাদিকতার আর একটি দায়ও স্বীকার করেন- "to monitor the centres of power" । দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে যুদ্ধ, রক্তপাত, টর্চার ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রত্যক্ষদর্শী এবং অসংখ্য গোপন দলিল ও চিঠিপত্রের পাঠক ভদ্রলোক জানেন পুতুলনাচের দড়িগুলো কোথায় কার হাতে আছে। সেই বিরল অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে পক্ষপাতদুষ্ট না হওয়াটাই ফিস্কের অপরাধ মনে হয়। ফিস্কের বই থেকে যদি কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ বেরিয়ে আসে তা হল সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মানবাধিকারপন্থী একজন ওল্ড স্কুল লিবারেলের মতাদর্শ। তো এই পশ্চিমী লিবারেল ভদ্রলোকটি যখন স্রেফ নিজের অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস পঠনের ভিত্তিতে ক্ষমতার কেন্দ্রগুলিকে আক্রমণ করেন, তখন তা আন্তর্জাতিক শৌখিন রিপোর্ট বা দামী তাঙ্কিÄক বইগুলোর থেকে অনেক বিশ্বাসযোগ্য লাগে। যদিও ফিস্ক কাল্ট হন না, সইদ কাল্ট হয়ে ওঠেন। তবে সাংবাদিক নিজেই হিরো হয়ে উঠছেন- এতে ফিস্কের নিজেরও তীব্র আপত্তি রয়েছে। যে কারণে ফিস্কের ব্যক্তিগত জীবন মিডিয়ার কাছে অজানা থাকে। ফিস্ক যখন দেশেবিদেশে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান, তখনও ফিস্ক একটাই কথা বলেন- কিভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোকে প্রশ্ন করে যেতে হয়।

    গত তেইশে অগাস্ট রবার্ট ফিস্ক ইন্ডেপেন্ডেন্টে এই কলামটি লিখেছেন:

    Robert Fisk: The Iraqis don't deserve us. So we betray them...
    Published: 23 August 2007
    Always, we have betrayed them. We backed "Flossy" in Yemen. The French backed their local "harkis" in Algeria; then the FLN victory forced them to swallow their own French military medals before dispatching them into mass graves. In Vietnam, the Americans demanded democracy and, one by one - after praising the Vietnamese for voting under fire in so many cities, towns and villages - they destroyed the elected prime ministers because they were not abiding by American orders.

    Now we are at work in Iraq. Those pesky Iraqis don't deserve our sacrifice, it seems, because their elected leaders are not doing what we want them to do.

    Does that remind you of a Palestinian organisation called Hamas? First, the Americans loved Ahmed Chalabi, the man who fabricated for Washington the"'weapons of mass destruction" (with a hefty bank fraud charge on his back). Then, they loved Ayad Allawi, a Vietnam-style spook who admitted working for 26 intelligence organisations, including the CIA and MI6. Then came Ibrahim al-Jaafari, symbol of electoral law, whom the Americans loved, supported, loved again and destroyed. Couldn't get his act together. It was up to the Iraqis, of course, but the Americans wanted him out. And the seat of the Iraqi government - a never-never land in the humidity of Baghdad's green zone - lay next to the largest US embassy in the world. So goodbye, Ibrahim.

    Then there was Nouri al-Maliki, a man with whom Bush could "do business"; loved, supported and loved again until Carl Levin and the rest of the US Senate Armed Forces Committee - and, be sure, George W Bush - decided he couldn't fulfil America's wishes. He couldn't get the army together, couldn't pull the police into shape, an odd demand when US military forces were funding and arming some of the most brutal Sunni militias in Baghdad, and was too close to Tehran.

    There you have it. We overthrew Saddam's Sunni minority and the Iraqis elected the Shias into power, and all those old Iranian acolytes who had grown up under the Islamic Revolution in exile from the Iraq-Iran war - Jaafari was a senior member of the Islamic Dawaa party which was enthusiastically seizing Western hostages in Beirut in the 1980s and trying to blow up our friend the Emir of Kuwait - were voted into power. So blame the Iranians for their "interference" in Iraq when Iran's own creatures had been voted into power.

    And now, get rid of Maliki. Chap doesn't know how to unify his own people, for God's sake. No interference, of course. It's up to the Iraqis, or at least, it's up to the Iraqis who live under American protection in the green zone. The word in the Middle East - where the "plot" (al-moammarer) has the power of reality - is that Maliki's cosy trips to Tehran and Damascus these past two weeks have been the final straw for the fantasists in Washington. Because Iran and Syria are part of the axis of evil or the cradle of evil or whatever nonsense Bush and his cohorts and the Israelis dream up, take a look at the $30bn in arms heading to Israel in the next decade in the cause of "peace".

    Maliki's state visits to the crazed Ahmedinejad and the much more serious Bashar al-Assad appear to be, in Henry VIII's words, "treachery, treachery, treachery". But Maliki is showing loyalty to his former Iranian masters and their Syrian Alawite allies (the Alawites being an interesting satellite of the Shias).

    These creatures - let us use the right word - belong to us and thus we can step on them when we wish. We will not learn - we will never learn, it seems - the key to Iraq. The majority of the people are Muslim Shias. The majority of their leaders, including the "fiery" Muqtada al-Sadr were trained, nurtured, weaned, loved, taught in Iran. And now, suddenly, we hate them. The Iraqis do not deserve us. This is to be the grit on the sand that will give our tanks traction to leave Iraq. Bring on the clowns! Maybe they can help us too.

    পাঠক উপরের লেখাটা পড়ুন। এই লেখা বইটির একটি অধ্যায়ের ভগ্নাংশ মাত্র। সাদ্দাম এবার আমেরিকার শত্রু। ফিস্ক একের পর এক অধ্যায়ে প্রমাণ করবেন কিভাবে আমেরিকা চূড়ান্ত দ্বিচারিতা ও নৃশংসতাকে অবলম্বন করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দেবার চেষ্টা করে চলেছে যার শুরু প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে। আমেরিকা এই যুদ্ধে দুটি নতুন মাত্রা যোগ করল যার ফল পৃথিবীর ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী। এক, নিজেদের আবিষ্কৃত ভয়ঙ্করতম মারণাস্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে ইরাকে ও কুয়েতে ব্যবহার করা হল। ফলে এখন যুদ্ধের আদলটাই গেল পাল্টে। শত্রুর মুখচ্ছবি, তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা ইত্যাদি না দেখেই সুইচ টিপে শহরের পর শহর উজাড় করে দেওয়া যায়। কাজেই যুদ্ধজনিত রক্তপাত থেকে যুযুধান সেনাদের যে ক্লান্তি আসে, তাদের ন্যূনতম মানবিকতা রক্ষা পায়, তার পথটুকুও বন্ধ হয়ে গেল। শত্রুহনন হয়ে উঠল একটি সুদক্ষ কম্পিউটার গেম্‌সের নবতম ভার্শন। একসময়ে মিডিয়ার দৌলতে এই ভয়াবহ রক্তপাতের কাহিনী পৃথিবীতে ছড়িয়ে যেতে পারত। তাও হল না, কারণ উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকা "এমবেডেড সাংবাদিকতা"র প্রচলন করল। একদিকে সি এন এনদের দৌলতে আবিশ্ব মানুষ যখন ইরাকের আকাশে মিসাইলের লাইভ শো দেখতে পেল, অন্যদিকে শহরে গ্রামে রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা হাজারে হাজারে ইরাকি ও কুয়েতি লাশ পৃথিবী কখনই দেখতে পেল না। সাধারণ মানুষের দেখায় এখন সব যুদ্ধই রক্তপাতহীন যুদ্ধ। ফিস্ক কিছু বেপরোয়া ফরাসী সাংবাদিকের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে এই মারণলীলার খবর সংগ্রহ করলেন।

    উপসাগরীয় যুদ্ধের শুরুতে আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল যার অভিঘাত পৃথিবী এখনও বহন করছে। সৌদি আরব আমেরিকাকে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সৌদি আরবের জমি ব্যবহার করতে দিল। আরব জাতীয়তাবাদী ভাবনাতে এই আঘাতের সেন্টিমেন্ট পুঁজি করেই ওসামা বিন লাদেনের জন্ম। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি জটিলতর থেকে জটিলতম হয়ে উঠবে। এক, কুয়েতে বসবাসকারী কিছু প্যালেস্তিনীয় ইরাকের সাথে যোগ দিয়েছিল বলে, কুয়েত ইরাকের দখলমুক্ত হলে পাইকারি হারে সমস্ত কুয়েতবাসী প্যালেস্তিনীয়কে কুয়েত থেকে বহিষ্কার করা হল- প্যালেস্তিনীয়দের উদ্বাস্তু জীবনের আর এক নতুন মাত্রা। দুই, সাদ্দাম সাধারণ কুয়েতবাসীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালাল, কিন্তু কুয়েতের শাসক রাজবংশের উপর এর এতটুকুও আঁচ পড়ল না। তিন, আমেরিকা শিয়া ও কুর্দ বিদ্রোহীদের সাদ্দামের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে উস্কানি দিয়ে পিছিয়ে এল। হঠাৎ আমেরিকার মনে হল এটা ইরাকের "আভ্যন্তরীণ বিষয়"। সাদ্দামের কুখ্যাত রিপাবলিকান গার্ডদের হঠাতে আমেরিকা কোনো ব্যবস্থাই নিল না। মোটের উপর সাদ্দাম যাতে শিয়া ও কুর্দদের আবার গণহত্যা করতে পারে আমেরিকা তার পথ প্রশস্ত করে দিল। চার, কুখ্যাত স্যাংশনের জমানা শুরু হল। এই নিষেধাজ্ঞা ইরাককে কিভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে তার খবর আমরা পেয়েছি শুধু কিছু পরিসংখ্যানের মাধ্যমে। কিন্তু সে সময়টায় ইরাকের নারী-শিশু-বৃদ্ধরা কিভাবে তিলে তিলে মারা গেছেন, কিভাবে ইরাকের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের বিদ্যা ও সংস্কৃতিচর্চার শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া হয়েছে, সেই অধ্যায় জানার জন্য ফিস্কের এই বই খুব জরুরী। এবং ইরাককে ধ্বংস করার এই মহৎ কাজ সম্পন্ন হয়েছে আমেরিকা ও মিত্রশক্তি এবং সাদ্দাম ও তার ঠ্যাঙাড়ে রাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে যেন দুই যুযুধান পক্ষ ইতিহাসের পাতায় কমন মিনিমাম প্রোগ্রামের এক অলিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল।

    অথচ প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার ভূমিকা ছিল একদম অন্যরকম। ফিস্কের কথায়-

    " Yet it is important to remember that the one country which- in the immediate aftermath of my father's war- chose a truly democratic alternative to the Middle East was the United States of America. I am not just referring to the Fourteen Points, in themselves a powerful argument for democratic development. In a speech to Congress, Wilson stated that "people are not to be bartered about from sovereignty to sovereignty as if they were chattels or pawns in a game." US diplomats and missionaries spread across the old Ottoman empire argued eloquently that the Arabs of the empire should be set up- as one "modern Arab nation", as they called it, to develop and progress in the world. Another powerful argument came from the King-Crane commission, set up under Wilson, which sailed to the Middle East to actually ask the people of the region what they wanted. '

    ক্ষমতার কেন্দ্রকে প্রশ্ন করা সাংবাদিকতার একটা জটিল সমস্যা। মনে রাখা দরকার ফিস্ক কিন্তু কোনো অ্যাক্টিভিস্ট সাংবাদিক নন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চলচ্চিত্র দেখে ছোটোবেলা থেকেই ফিস্ক ভেবে রাখেন বড় হলে তিনি যুদ্ধের সংবাদদাতা হবেন। কোনো মহত্তর লক্ষ্য নিয়ে ফিস্ক সাংবাদিকতায় আসেন নি। অ্যাক্টিভিস্ট সাংবাদিকতার একটা বড় সুবিধা হল- প্রথম থেকেই তাঁরা একটা পক্ষ নিয়ে নেন। এবার সেই পক্ষের দাবীদাওয়াকে তুলে ধরার জন্য তাঁর তথ্যানুসন্ধান চলে। ফিস্ক কিন্তু মূলধারার সাংবাদিক। ফিস্ক পশ্চিম এশিয়ার প্রত্যেক কুশীলবের ভন্ডামি ও নৃশংসতাকে নিজের লেখায় জায়গা করে দেন। সাদ্দাম, বুশ, আরাফত, হামাস, শাহ, খোমেইনি, ব্লেয়ার- কেউ এই বৃত্তের বাইরে নয়। অথচ ফিস্ক সুনির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক অবস্থানও গ্রহণ করেন। এই অবস্থান নিতে তাকে কোনোরকম ছলচাতুরি বা তঙ্কেÄর আশ্রয় নিতে হয়। সাবেকী সাংবাদিক সত্যবাদিতার ভিত্তিতে তিনি এই অবস্থান নেন। এখানেই ফিস্কের সাংবাদিকতার জিত এবং ভারতের মূলধারার মিডিয়ার পরাজয়। ক্ষমতার কেন্দ্রের রং দেখে যে সাংবাদিকতার প্রশ্নের ধরনধারন পালটে যেতে থাকে। যে সাংবাদিকতায় সাদামাটা তথ্যকেও রং চড়িয়ে দেখানোটাই নিয়ম। ফিস্ক কখনও "রাজনৈতিক নেতা মানেই খারাপ" জাতের কোনো ছেলেভোলানো আপ্তবাক্যের আশ্রয় নেন না, যে আপ্তবাক্য ভারতীয় মধ্যবিত্তের এবং মধ্যবিত্তচালিত মিডিয়ার রাতদিনের জপমন্ত্র। ফিস্ক ইতিহাস ও বর্তমানের সামগ্রিক মূল্যায়নে করে রাজনীতির প্রতিটি বাঁককে বুঝবার চেষ্টা করেন। রাজনৈতিক অবস্থান এবং সাংবাদিক সত্যবাদিতা যে একে অন্যের হাত ধরাধরি করে চলতে পারে, ফিস্কের লেখা তার বড়ো উদাহরণ। এবং এই দুইয়ের ঠিকঠাক মিলমিশ হলে তবেই ক্ষমতার কেন্দ্রকে দক্ষভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলা যায়।

    বব ফিস্কের সাথে এর পরের চেনাশোনার ভার ভাবী পাঠকের সদিচ্ছার উপরেই ন্যস্ত হোক। ইদানীং মুম্বাই-দিল্লির ঠান্ডা ঘরের অধিবাসীরা ঠোঁট বেঁকিয়ে সুললিতস্বরে বাণীবর্ষণ করছেন যে পৃথিবীর ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা গত কুড়ি তিরিশ বছরে আমূল পালটে গেছে। ভারতকে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তিরিশ বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ার রণক্ষেত্রের ফ্রন্টে ঘুরে বেড়ানো পোড়খাওয়া অ-বামপন্থী ফিস্কও মনে করেন - "the times they are a'changin' . শুধু ফিস্কের চোখে পালটে যাওয়ার ধাঁচটা একটু আলাদা। ফিস্কের সেই দীর্ঘ ভাষ্য দিয়েই তবে শেষ হোক এই আলোচনা-

    "All of this, however, obscured a momentous change within Arab society: the one great transition I have witnessed in almost thirty years reporting the Middle East. When I first visited the West Bank scarcely nine years after the 1967 war, there was in the occupied territories an Israeli-controlled Palestinian police militia, an army of collaborators- they even wore black berets- who "controlled" a supine and humiliated Palestinian people. North of Isaraeli border, a Lebanese popluation lived in fear of Israeli military invasion. Israeli troops had only to cross the frontier to send a quarter of million Lebanese civilians fleeing back to Beirut. To the east, millions of Iraqis lived in grovelling obedience to the Baath party.

    Today, the Arabs are no longer afraid. The regimes are as timid as ever, loyal and supposedly "moderate" allies obeying Washington's orders, taking their massive subventions from the United States, holding their preposterous elections, shaking in fear lest their people decide that "regime change"- from within their societies, not the Western version imposed by invasion- is overdue. It is the Arabs as people- brutalised and crushed for decades by corrupt dictators- who are no longer running away. The Lebanese in Beirut, under siege by Israel, learned to refuse to obey the invader's orders. The Hizbullah proved that the mighty Israel army could be humbled. The two Palestinian intifadas showed that Israel could no longer impose its will on an occupied land without paying a terrible price. The Iraqis first rose up against Saddam and then, after Anglo-American invasion, against the occupation armies. No longer did the Arabs run away."

    # First Holocaust অধ্যায়ের একটি সংযোজন: http://news.independent.co.uk/fisk/article2901136.ece

    সেপ্টেম্বর ২, ২০০৭
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ১০৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন