এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • ছোটোদের গপ্পো : লীলাবতীর বর্ষাতি

    Susmita Kundu লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০৯ মার্চ ২০২০ | ২৯৬৭ বার পঠিত
  • এক ছিল মেয়ে। সে হবে এই এক বিঘৎখানেক লম্বা। বিঘৎ শুনে ভির্মি খেওনা বাপু, বিঘৎ হল গিয়ে এই তোমার হাতের চেটো আর আঙুলগুলো মিলিয়ে যতখানি, সেই ততখানি। ওই দ্যাখো আবার ভুরু কোঁচকায়। তোমরা বুড়ো আংলার গল্প জানো? দেড় আঙ্গুলেকে চেনো? থাম্বেলিনার গপ্পো পড়েছো? আমাদের এই মেয়েও ওইরকমই। এই বিঘৎখানেক লম্বা। মেয়ের নাম হল গিয়ে লীলাবতী। লীলাবতী খুব দয়ালু আর ভারি ভালো একটা মেয়ে। সবসময় সকলের উপকার করতে ছুটে যায়। কিন্তু মুশকিল হল লীলাবতী এত্ত পুচকে যে অন্য লোকে উল্টে লীলাবতীরই চোট লেগে যাবে ভেবে তাকে পকেটে পুরে বাড়িতে দিয়ে যায়।

    সেইবার বর্ষাকালে অনেক অনেক বৃষ্টি হল। রিমঝিমিয়ে নয় এক্কেবারে ঝমঝমিয়ে। চারিদিকে খানাখন্দ জলে টইটুম্বুর, কাদা প্যাচপ্যাচ করছে। লীলাবতীর মা তাকে একটা ছাতা দিয়ে বললেন,
    -“শোন মা লীলা, সাবধানে পাঠশালে যাস। রাস্তাঘাটে কারোর সাথে কথা কইতে যাবিনে। সোওজা যাবি, পড়বি, লিখবি, শুনবি, শিখবি, বাড়ি ফেরৎ আসবি। আর এই রইল ছাতা, বৃষ্টি পড়লে মাথায় দিয়ে ফিরবি।”

    কিন্তু হলটা কী বৃষ্টির সঙ্গে সেদিন জোরে ঝোড়ো বাতাসও বইল। বাতাস তো ছাতাসহ লীলাবতীকে উড়িয়ে নিয়ে চলতেই থাকল চলতেই থাকল। লীলাবতী কোনও মতে বলে উঠল,
    -“ও ঝোড়ো বাতাস। আমার ছাতাখানি ছেড়ে দাও না বাপু। আমি তবে বাড়ি যাই। মা আমার দুধ মুড়ি ভিজিয়ে বসে আছে কখন থেকে।”
    ঝোড়ো বাতাস বলে,
    -“কী মুশকিল! তুমি এমন ছাতা ধরে ঝুললে কী করে ? বলি ওইটুকুনি মেয়ে এত্তবড় ছাতা নিয়ে বেরোলে আমি কি আর চোখে দেখতে পাই? আমি ভেবেছি এমনি ছাতা পড়ে আছে তাই তো উড়িয়ে নিয়ে গেছি। বলো দেখি তোমার বাড়ি কোথায়? পৌঁছে দিয়ে আসি।”

    ঝোড়ো বাতাস তো লীলাবতীকে বাড়িতে দিয়ে গেল। কিন্তু মায়ের হল মুশকিল। আর তো ছাতা দিয়ে পাঠানো যাবে না লীলাবতীকে পাঠশালে। আর লীলাবতীর মাপের ছোট্ট ছাতা মিলবেই বা কোন দোকানে! শেষমেষ মা করলে কী ছাতার দোকান থেকে একটু ছাতা বানানোর কাপড় কিনে এনে একটা বর্ষাতি বানিয়ে দিলে লীলাবতীকে। লীলাবতী তো ভাআআরি খুশি। সে নতুন বর্ষাতি পরে গান গাইতে গাইতে পাঠশালের পথে রওয়ানা দিল।
    -“ঝমঝমঝম বৃষ্টি
    এ কী অনাছিষ্টি!
    আমার তাতে চিন্তা কী
    আছে নতুন বর্ষাতি।”

    পথে দেখা হল ঝোড়ো বাতাসের সাথে। ঝোড়ো বাতাস হেঁকে বললে,
    -“ও মেয়ে সাবধান!”
    লীলাবতী তুড়ুর করে লাফিয়ে নেচে বললে,
    -“শনশনশন বাতাস বয়
    থরথর সব কাঁপছে ভয়ে।
    আমার তাতে ভাবনা কী
    এই দেখোনা বর্ষাতি।”
    ঝোড়ো বাতাস মুচকি হেসে উড়ে গেল।

    লীলাবতীর তো আনন্দ আর ধরে না। ফের রওয়ানা দিল পাঠশালের পথে। এমন সময় হঠাৎই কানে এল, কে যেন কাঁদছে। লীলাবতী এদিক সেদিক উঁকিঝুঁকি মারে। কেউ চোখে পড়ে না। একটু এগোয়। ফের কান্নার আওয়াজ। লীলাবতী কচুপাতার ঝোপের আড়ে চায়। ও হরি! এ যে একটা ছোট্টো ব্যাঙ। তা ব্যাঙ কাঁদে কেন? বৃষ্টি পড়লে তো ব্যাঙেরা গান গায়, নাচ করে। লীলাবতী একটু এগিয়ে ব্যাঙকে শুধোলো,
    -“হ্যাঁ ব্যাঙ, তুমি কাঁদো কেন?”
    ব্যাঙ তো প্রথমে মানুষের গলা শুনে ভয় পেতে যাচ্ছিল কিন্তু তারপর বিঘৎখানেক লম্বা লীলাবতীকে দেখে ভয় পাওয়ার বদলে অবাক হয়ে গেল।

    লীলাবতী বলে,
    -“ওমনি হাঁ করে চেয়ে রইলে কেন শুনি? আগে বুঝি ছোট্ট মানুষ দেখোনি? বুড়ো আংলা, থাম্বেলিনা এদের নাম শোনোনি?”
    ব্যাঙ ঢোঁক গিলে বললে,
    -“না ভাই! শুনিনি। আসলে আমি তো অন্য দেশে থাকি কিনা। এঁদের সব চিনিনে। আমায় একটা দমকা ঝোড়ো হাওয়া এদ্দুরে উড়িয়ে এনে ফেলেচে। এবার আমি আমার দেশে ফিরি কীকরে! ভ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ! ফ্যাঁচ্চো! ফ্যাঁচ্চো!
    তার ওপর তোমাদের দেশের বৃষ্টির জল কী কনকনে ঠাণ্ডা! আমার তো বেজায় সর্দি কাশি হাঁচি শুরু হয়ে গেছে। ওগো আমার কী হবে গোওও!”

    ব্যাঙের এমনধারা বিলাপ শুনে লীলাবতী তো ভারি চিন্তায় পড়ল। না! বেচারা ব্যাঙের উপকার করতেই হবে। নইলে যে লীলাবতীর দেশের বদনাম হবে। সে ব্যাঙকে বললে,
    -“তুমি চিন্তা কোরো না। আমি ঝোড়ো বাতাসকে খুব চিনি। ওকে আমি বলে দেব তোমার দেশে ফেরত দিয়ে আসতে তোমাকে। এখন বরং তুমি আমার সঙ্গে আমার বাড়ি চলো। আমার মা আদা দেওয়া চা করে দেবে। সেই খেয়ে তোমার হাঁচি বন্ধ হয়ে যাবে।”
    ব্যাঙ তো খুব খুশি লীলাবতীর কথা শুনে। সে বললে,
    -“এ তো ভারি ভালো কথা। কিন্তু এই কচুবনের বাইরে বেরোলেই আবার ঠাণ্ডা জলে ভিজে আমার হাঁচি হবে যে!”

    লীলাবতী তখন একটা বড়সড় কচুপাতা তুলে নিয়ে ব্যাঙের মাথায় পাকড়ে ধরল ছাতার মত। বললে,
    -“এবার চলো!”
    দুইজনায় তারপর গুটিগুটি পায়ে রওনা দিল বাড়ির দিকে। ব্যাঙ থপথপিয়ে আসতে লাগল কচুপাতার ছাতার তলায়। লীলাবতী যত হাঁটে তত কচুপাতা দোলে আর এক দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে ব্যাঙের মাথায় পড়ে। কী আর উপায়। লীলাবতী মনে মনে ভাবে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ব্যাঙ যে বাড়ি ফিরবে বেচারির তো আরও ঠাণ্ডা লাগবে। মাকে বলতে হবে ছাতার কাপড় গিয়ে আরেকটা বর্ষাতি ব্যাঙের জন্যও বানিয়ে দিতে।

    (সমাপ্ত)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ০৯ মার্চ ২০২০ | ২৯৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন