এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ওহ! হেনরি! 

    Aditi Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৫৩ বার পঠিত
  •  
     
    হেনরি নামটাই যেন অন্য কিছু বোঝাতে চায় ---করতে চায়! এই যেমন জন হেনরি, কিংবা হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও! আরেক হেনরির সাথে চেনা করিয়ে দিয়েছিলো শুকতারা। বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা ভোঁদার পাশাপাশি অনুবাদ গল্পগুলি দিত অন্যরকম স্বাদ! আর তার সুতো ধরেই জেনেছিলাম ও হেনরি নামের একজন গল্প বলা লোকের কথা! 'শেষ পাতা ' গল্পটা পড়ে, মনে আছে বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছিলাম।পরে জানলাম লোকটার আসল নাম উইলিয়াম সিডনি পোর্টার! বিচিত্র ও বহুমুখী উৎসাহের মধ্যে গপ্প লেখাটা সবার আগে এসে দাঁড়ালেও একটা সময়ে তার পরিচয় ---ব্যাঙ্কের কেরানি, তায় আবার তহবিল তছররুপের দায়ে গারদে! তখন গপ্পো লিখতে হচ্ছে মা হারা কন্যাটির খাবার জোটাতে! ছদ্মনাম ---হয়তোবা এই ভেবেই যে,আসল নামটা জেলের রেজিস্টারে কুখ্যাত হয়ে গেলো ---সেটা তো আর ব্যবহার করা যায়না এই নরম পবিত্র প্রয়োজনে! অথচ জেলও তাকে দিল অনেক কিছু ! মানুষ ---মানুষ --রং বেরঙ এর মানুষ! কোনো টাইপ, কোনো ধরাবাঁধা স্টিরিও টাইপে তাকে কি বাঁধা যায়? বাঁধতে গেলেনওনা তিনি! পরম যত্নে এঁকে চললেন মধ্যবিত্ত আর গরিব গুরবো মানুষগুলির কথা!হৃদকমলের নরম জায়গাটি থেকে আঁকলেন খেটে খাওয়া মেয়েদের কথা! সেই সদ্য তরুণীগুলির কথা, যারা পেটের দায়ে শহরে এসে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করছে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে ---উৎকট পুঁজিবাদ, উৎকট পিতৃতন্ত্রের সাথে! না! হেনরি ঘোষিত ফেমিনিস্ট ছিলেননা। কিন্তু পরম মমতা আর তীক্ষ্ণ মানবিক অনুভূতি তাঁকে চিনিয়ে দিয়েছিলো খেটে খাওয়া মেয়েগুলির কষ্ট ও স্পিরিট কে! তিনি কুর্নিশ করেছেন সেই মেয়েলি জোট আর হাসিকে, যা নাকি স্বয়ং আদমেরও আত্মবিশ্বাস কেড়ে নিতে পারে! তাঁর ভাষায় ইভ ও তার প্রথম কন্যাসন্তান যেন আদম কে বুঝিয়ে ছাড়ে তাদের 'মেয়েলি গেরস্থালী' তে সে নৈবিদ্যের কলা মাত্র! আসলে জোট বাঁধতেই হয়, চালাক চতুর হতেই হয় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে, আর এই সব মেয়েগুলি তাই দোকানের কাজ, ইস্ত্রির কাজ, সেলাই এর কাজ করতে করতেই মেপে নেয় সামনের পুরুষটির টাকা পয়সা আর মতলব দুটোর ই হালচাল! সেবা যারা কিনতে পারে তারা সেবা যে দিচ্ছে তাকে সেবাদাস হিসেবেই দেগে দেয়, বন্দি করে ফেলে কেবল সেই পরিচয়টিতেই। বনগাঁ লোকালে বাজার ফেরত বাড়ি ফেরা রুখু সুখু সবজিওয়ালি, টিপটপ পরিষ্কার--- সস্তা রং চটা শাড়ি ব্লাউজ, পোকায় খাওয়া শাঁখা পরা সেই সব 'আয়ারা ', রাজ্যের কাঠকুটো জুটিয়ে ট্রেনে ওঠা ক্যানিং এর 'মাসিরা ' কিংবা, নিউ ইয়র্ক এর 'দোকানি মেয়ে '---সবাই যেন কোননা কোনো 'টাইপ' হতে বাধ্য! না কি আমরাই তাদের বেরোতে দেইনা ওখান থেকে? হেনরি এই রাজনীতিটাকেই 'বিকৃত' বলে দেগে দিলেন! আসলে এটা নিজেই একটা টাইপ ---আল্হাদি অশিক্ষিত ক্ষমতার!তাই তাঁর গল্প সেই এক অন্যরকম বোঝাপড়ার ---সেই সংসারটার সাথে --যে সংসার ও সমাজ আমায় অসহায় করেছে, আমায় বুঝিয়ে ছেড়েছে যে যতই বাইরের সামাজিক উৎপাদনে তুমি থাকো, যতই তুমি নিজেকে যোগ্য প্রমান করো, তুমি আগেই হেরে আছো--- কারন তুমি মেয়ে --- আর, কারণ তুমি গরিব---!!অসহায়তার মধ্যে দিয়েই বাচ্চা মেয়েগুলি পৃথিবীর পাঠশালা থেকে শিখে যায় অনেক কঠিন সত্য! তারা উচ্চ শ্রেণীর আদব কায়দা রপ্ত করতে করতেই যেন বুঝে ফেলে তার শূন্যতাটুকুও। তারা লড়াই করে ভালোভাবে বাঁচতে!এরা নারীবাদের তাত্ত্বিক পাঠ নেয়নি, পুঁজিবাদ, সামন্ততন্ত্র বা সমাজতন্ত্র ---খায় না মাথায় দেয় জানেনা! কিন্তু পুরুষের রংশালায়, অর্থের অনর্থের সাথে লড়তে লড়তে কী ভাবে যেন অনায়াসে বেরিয়ে আসে চাপিয়ে দেওয়া ভাবনা ভীতি গুলো থেকে! তাই বারব্রত, রোজা আর রান্নাপুজো করতে করতেই সিসিফাসের মতো সংসারের মস্ত বড় পাথরটাকে কেবল ই ঠেলে গড়িয়ে উপরে তুলতে চায়! হেনরি যেন বার বার এসে দাঁড়ান চলন্ত লোকাল ট্রেনে, বাসে, স্টেশনে, বাজারে। দমদমের প্লাটফর্ম ধরে চলন্ত ট্রেনের পাশে ছুটতে ছুটতে মুড়ি আলুসেদ্ধর প্যাকেটগুলি লেডিসের জানলা গলিয়ে তুলে দেন মেয়েগুলির হাতে ---যারা রাত তিনটের ট্রেনে ধরে শহরে এসেছিলো, এখন ফিরে গিয়ে আবার রাঁধবে বাড়বে।কখনো বা রাজাবাজার বা মৌলালী র মোড়ে রিকশা থামিয়ে রাস্তার কলের জলে ভরা প্লাস্টিকের ভারী কলসিটা রোগা মেয়েটির মাথায় তুলে দিয়ে নির্বিকার গুন গুন করতে করতে চলে যান! তিনি কোনো আগুনখেকো বিপ্লবী ছিলেননা। 'social activist' ও না। মারা গিয়েছিলেন মাত্র আটচল্লিশে, দারিদ্রে আর সিরোসিস অফ লিভার রোগে। তবুও ----
    সেবা দিলেও মেয়েরা যে আদতে কখনোই কারোর সেবাদাসী নয়--- সেকথা তাঁর মতো করে খুব কম লোকই বোঝাতে পেরেছে! 
     
    [হয়তো FB তে দিয়েছিলাম, দিলে কবে---মনে নাই। এখানে রইলো।]
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন