কর্মস্থলে কেমন জামাকাপড় পরা উচিত তা নিয়ে monster.com -এর একটা প্রতিবেদনে চোখ আটকে গেল। দু’একটা নমুনায় পেশ করা যাক।
Shoulder the Burden
Women: Do wear sleeveless shirts, if your office has a relaxed dress code.
Men: Don't try putting on a shirt without sleeves unless you work at the beach. Suffice it to say, it's a "hairy" issue for most guys, according to Kelly (Clinton Kelly - fashion consultant and media personality).
One Button or Two?
Women: Do feel comfortable in an open-necked blouse or top that shows some of your decolletage. "If you start to see a lot of soft tissue, that's not good," Kelly says.
Men: Do unbutton one or two of your top buttons and consider a layering T-shirt, which helps wick away perspiration. Don't display a lot of chest hair.
The Long and Short of It
Women: Do wear tailored walking shorts that reach the top of your knee. "You shouldn't wear the same kind of shorts you'd wear to your kids' soccer practice," Kelly says. Don't put on skirts that leave your mid-thigh uncovered.
Men: Don't convince yourself shorts are acceptable. They're not, according to Kelly, who again cites the "hair issue" as the reason.
দেখা যাচ্ছে মেয়েদের জামাকাপড়ের চয়েস অনেক বেশি। ছেলেরা কি পরবে তা নিয়ে অনেক নিষেধাজ্ঞা। বিপ্লব কি তবে এসেই গেল? চাকা কি ঘুরছে উল্টোদিকে? শ্যাম্পেনের বোতল খোলার আগে দু’দন্ড বসে ভাবি। কি হবে যদি মেয়েরা ওয়্যাক্স করতে ভুলে যায়? তখনও কি সে মেয়ের স্লিভলেস টপ, হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট পরার অধিকার থাকবে?
মূলত এই জাতীয় চিন্তাভাবনা থেকেই গতবছর একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। গুরুচণ্ডালীর ২০১৮-র ৮ই মার্চ সংখ্যায় সেটা প্রকাশিত হয় ( http://www.guruchandali.com/default/2018/03/25/1521946224274.html )। গত এক বছরে কোন বিপ্লব আসে নি। এক কথা পুনরাবৃত্তি করতে খুব যে ভালোবাসি এমনও নয়। তবে গতবছর যে দ্বন্দ্ব নিয়ে লিখতে বসেছিলাম, তার কোন সমাধান হয়নি। উপরন্তু ঈপ্সিতা দেখালো, এবছরের ভ্যালেন্টাইন ডে-র দিন রুখমা ভাস্কার খরাচন নামে নাসিকের এক সদ্য বিবাহিত মহিলা আত্মহত্যা করেছেন। সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন, চোখ দিয়ে জল কাটছে, কাজল লাগাতে পারছি না, দেখতে খারাপ লাগছে, তাই আমি সুইসাইড করছি।
সত্যি বলতে কি খবরটা পড়ে প্রথমে বেশ রাগ হয়েছিল। কাজল লাগাতে না পারা আত্মহত্যার কোন কারণ হল! তারপর ভাবলাম আমিই বা তবে খুঁজেপেতে স্মাজ-ফ্রি কাজল কিনি কেন? রোজ না হোক, যেদিনগুলোতে পড়াতে হয়, সেমিনার দিতে হয়, কমপ্যাক্ট দিয়ে তেলতেলে মুখ মেরামত করি কেন? হয়ত কাজল ধেবড়ে গেলে আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগে না। কিন্তু নিজেকে সুন্দর দেখানোর মহাযজ্ঞে আমিও নাম লিখিয়েছি এবং এর মধ্যে কোথাও আমার নিজস্ব সৌন্দর্যাকাঙ্খা লুকিয়ে নেই। যদি চুল না আঁচড়ে, টি-শার্ট আর র্যাপ অ্যারাউন্ড পরে, তেলতেলে মুখে ক্লাসে ঢুকলে আমার একটুও সমালোচনা হবে না এমন ভরসা কেউ দিত, তাহলে আমি একদম এসব করে সময় নষ্ট করতাম না। নিজের মুখ আর কতক্ষণই বা নিজে দেখতে পাই! কিন্তু নিজে না দেখলেও বাকি পৃথিবী দেখে। আর আমি তো নেহাত চুনোপুঁটি। ফোর্বসে ২০১৬-র জানুয়ারীতে "Dressing Like A Leader: Style Tips For Women In The Spotlight" শিরোনামের একটি লেখা প্রকাশ পেয়েছে দেখছি। তাতে ইমেজ কনসাল্টান্ট এবং ওয়ার্ড্রোব স্পেশালিস্ট মিশেল ওপেনহাইমার অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং হিলারি ক্লিন্টন সম্পর্কে মন্তব্য করছেন, এনারা দিদিমার মত পোষাক পরেন। ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ডের চেয়ার পার্সন ক্রিস্টিন লাগার্দে সম্পর্কে এনার বক্তব্য “Christine Lagarde is extremely sophisticated and sharp, even chic and sexy. But although she is very feminine and beautiful, Lagarde’s sharpness connotes an almost masculine power and efficiency.” এসব পড়ে আশ্বস্ত হই, কাল-পরশু কেন, দূর দূর ভবিষ্যতেও কোত্থাও কোন বিপ্লব নেই। সারা জীবন ধরে একটা মূলত পুরুষ পরিচালিত ডোমেনে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ক্রিস্চিন লাগার্দে যে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করলেন তা শেষ পর্যন্ত একটা পুরুষালি গুণই হয়ে রইল, নারীত্বটুকু টিমটিম করে জেগে রইল তাঁর সাজপোশাকে। বারাক ওবামা একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, "You'll see I wear only gray or blue suits. I'm trying to pare down decisions. I don't want to make decisions about what I'm eating or wearing. Because I have too many other decisions to make." ন্যায্য কথা। একজন প্রেসিডেন্টের এত কিছু নিয়ে ভাবতে হয় যে তিনি কি জামা পরবেন তা নিয়ে ভাবনার সময় না থাকাই স্বাভবিক। ওবামা একঘেয়ে পোষাক পরেন এমন অভিযোগ নিয়ে কেউ প্রবন্ধ ফেঁদেছেন বলেও জানা নেই। হিলারি বা অ্যাঞ্জেলার ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁরা পাত্তা দিন বা না দিন সমালোচনা পিছু ছাড়েনি। আরো একটা কথা জেনে রাখা যাক, ডেইলিমেলের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী একজন মেয়ে গড়ে তার জীবনের ৭২২ দিন সৌন্দর্যচর্চার পিছনে ব্যয় করে।
২০১৫ সালে নিকোলা থর্প নামে লন্ডনের এক অ্যাকাউন্টেন্সি ফার্মের রিসেপশনিস্টকে অফিস থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারণ তিনি হাইহিল পরতে অস্বীকার করেন। নিকোলা তখন একটা পিটিশন্ লেখেন যাতে কোন কর্মক্ষেত্রের তার কর্মচারীদের হাইহিল পরতে বাধ্য করাকে অবৈধ ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়। একটা পার্লামেন্টারি ডিবেট শুরু করতে যতখানি জনসমর্থন লাগে, পিটিশনটি তা সংগ্রহ করতে সমর্থও হয়। ২০১৭ সালে উইমেন অ্যান্ড ইকোয়ালিটি কমিটি একটি রিপোর্ট পেশ করে যাতে বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে হাইহিল পরতে বা মেক-আপ করতে বাধ্য করা অনেক দিন ধরেই আইনবিরুদ্ধ, কিন্তু আইনটি সবজায়গায় প্রযুক্ত হচ্ছে না এবং অনেকেই এই আইন সম্পর্কে অবগত নন। রিপোর্ট পেশের দশ মাস পরে গভর্নমেন্ট ইকোয়লিটি অফিস একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে যাতে কর্মক্ষেত্রের পোশাকবিধি সেক্স ও ইকোয়ালিটি লেজিসলেশন্ মেনে চলা উচিত ইত্যাদি মামুলি কথা বলে হাত ধুয়ে ফেলা হয়। বাধ্যতামূলক মেক-আপ ও হাইহিল সংক্রান্ত কোন স্পষ্ট বিধিনিষেধ এই নির্দেশিকাতে নেই। যেমন ধরা যাক বাধ্যতামূলক মেক-আপ সম্পর্কে বলা হয়েছে “is likely to be unlawful, ... assuming there is no equivalent requirement for men” এখানে "equivalent" কথাটি অভিনিবেশ দাবী করে। কেউ চাইলে বলতেই পারে ছেলেদের টাই পরা মেয়েদের মেক-আপের সাথে "equivalent"। অবশ্য জানি না টাই কি কাজে লাগে এবং কেন সেটা বিজনেস প্রফেশনালে অবশ্য ধারণীয়।
সব জায়গায় অবশ্যই বাধ্যতামূলক মেক-আপের চাহিদা থাকে না। কিন্তু সমস্যা হয় যখন সামাজিক নির্মাণটি এমন ভাবে ঘেঁটে যায় যাতে "যত মত তত পথ"-এর বদলে রাজপথই একমাত্র পথ হয়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে ফিটফাট থাকার দাবী যদি সঙ্গতও মেনে নিই তাহলেও এই প্রশ্নটা থেকেই যায় মেয়েদের কেন ফিটফাট হতে গেলে পেশাদারী পোশাক ছাড়াও প্রসাধনীর দিকে নজর দিতে হবে। মেয়েরা কি প্রসাধন ছাড়া পেশাদারীত্ব প্রমাণে যোগ্য নয়? ২০১৬-র এপ্রিলে "রিসার্চ ইন সোশ্যাল স্ট্র্যাটিফিকেশন এবং মোবিলিটি" নামে একটি জার্নালে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর জ্যাকলিন ওয়াং এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া আর্ভিনের অ্যান্ড্রু পেনারের একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ পেয়েছে যার নাম "জেন্ডার অ্যান্ড দ্য রিটার্নস টু অ্যাট্র্যাক্টিভনেস"। গবেষণাপত্রটিতে ১৪,৬০০ মানুষের ওপর করা একটি লঙ্গিচুডিনাল স্টাডির পরিপ্রেক্ষিতে জেন্ডার এবং অ্যাট্রাকটিভনেসের মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কিনা এবং তা পারিশ্রমিকের ওপর প্রভাব ফেলে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে। সম্পূর্ণ গবেষণাপত্রটি উদ্ধৃত করা যেহেতু এই স্বল্প পরিসরে এবং স্বল্প সময়ে (ইপ্সিতাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছিল ৮ তারিখে লেখা দেব। আজ ১০।) সম্ভব নয়, তাই আমি শুধু মূল রেজাল্টটুকুই বলব। দেখা যাচ্ছে অ্যাট্রাকটিভনেসে বেশি নম্বর পাওয়া মানুষেরা গড় নম্বরধারীদের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি রোজগার করেন। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই অ্যাট্রাকটিভনেস এবং গ্রুমিং বেতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক (প্রেডিক্টর)। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে অ্যাট্রাকটিভনেসের চেয়েও গ্রুমিং এর গুরুত্ব বেশি। শুধু তাই নয়, মহিলাদের ক্ষেত্রে গ্রুমিং অ্যাট্রাকটিভনেসের একটি উপাদানও বটে। পুরুষের ক্ষেত্রে তা নয়। কিছুদিন আগেও রেট মাই প্রফেসর ওয়েবসাইটে একটি হটনেস্ সূচক থাকত। ছাত্ররা এই ওয়েব্সাইটে গিয়ে শিক্ষকদের রেট করতে পারে। বিদ্যাদানের কাজে হটনেসের কি প্রয়োজন ইত্যাদি কূটতর্ক আমরা করতেই পারি, কিন্তু হটনেস সূচকের ব্যবহার আমাদের বুঝিয়ে দেয় জিনিসটা অসঙ্গত এবং অস্বস্তিদায়ক হলেও এর অস্তিত্ব অনস্বীকার্য।
শেষ করার আগে nypost এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে কিছু পরিসংখ্যন তুলে দিই।
আমেরিকানরা সৌন্দর্য চর্চায় প্রতি মাসে গড়ে কত অর্থ ব্যয় করেন (মহিলা/পুরুষ)