১০ই জুলাই, ২০২০ তারিখে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রজব এরদোগান ইস্তাম্বুলের ঐতিহ্যপূর্ণ আয়া সোফিয়া মিউজিয়ামকে মসজিদ ঘোষনা করলেন। ইস্তাম্বুল শহরটি তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রায় দুহাজার বছর ধরে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সেতুবন্ধন করে চলেছে। বিশ্বরাজনীতিতে ধারাবাহিক ভাবে যে শহরগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে ইস্তাম্বুল তাদের মধ্যে থাকবে। আয়া সোফিয়া স্থাপত্যটি শহরটির জন্মসময়ের কিছুদিন পর থেকেই ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক। এই লেখায় আমরা অল্প পরিসরে আয়া সোফিয়ার গত দুহাজার বছরের ইতিহাস ফিরে দেখব এবং তুরস্কের বর্তমান রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তটি সেই প্রেক্ষিতে বিচার করার চেষ্টা করব।
ইউরেশিয়ার ম্যাপের দিকে তাকালে দেখা যাবে বসফরাস প্রণালী নামে একটা ক্ষীণ জলধারা ইউরোপকে এশিয়া মহাদেশের থেকে আলাদা করেছে। ইস্তাম্বুল শহরের অবস্থান এই বসফরাস প্রণালীর বামদিকে ইউরোপের মাটিতে। খ্রীষ্টজন্মের আগে এই শহরের নাম ছিল বাইজান্টিয়াম। গ্রীকদের একটি শাখা এখানে থাকত। যিশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর সাথে সাথেই যে খ্রীষ্টধর্মের ব্যাপক প্রসার হয়নি একথা মোটামুটি সবাই জানে। যিশুর মৃত্যুর সময় রোমান সাম্রাজ্য পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিস্তৃত সাম্রাজ্য। তার পরের অন্তত তিনশো বছর সেরকমই ছিল। রোমানরা মূর্তিপুজো করত। খ্রীষ্টানদের সে সময় অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে লুকিয়ে ধর্মাচরণ করতে হয়েছে। বিশাল রোমান সাম্রাজ্য শাসনের সুবিধার জন্য একসময় একজনের জায়্গায় দুজন সম্রাট (অগাস্টাস) নিয়োগ করা হয়। দুইজনের হাতেই পূর্ণ ক্ষমতা। এই দুজনের নিচে থাকবে দুইজন সিজার - যাদের সহকারী সম্রাট বলা যায়। চারজন শাসক নিয়ে তৈরি এই ব্যব্স্থাটি টেট্রার্কি নামে পরিচিত। বর্তমান বুলগেরিয়া এবং গ্রীসের পূর্বদিকের অংশ নিয়ে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য তৈরি হল। এর মধ্যে তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডন এবং মিশরের উত্তরপূর্বের কিছু অংশ পড়ছে। আধুনিক পশ্চিম ইউরোপ এবং ভূমধ্যসাগরতীরবর্তী উত্তর আফ্রিকা পড়ল পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের ভাগে। কনস্টানটাইনের বাবা কনস্ট্যানটিয়াস টেট্রার্কি ব্যবস্থার প্রথম সিজার নিযুক্ত হলেন। ছেলে কনস্টানটাইন দায়িত্ব পাওয়ার পর বাইজান্টাইম নামে বসফরাস প্রণালীর উপর অবস্থিত শহরকে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন (৩২৪ খ্রীষ্টাব্দ)। নতুন রাজধানীর নাম হল কনস্ট্যান্টিনোপল। তিনদিক জলে ঘেরা এই শহরের প্রাকৃতিক সুরক্ষাবেষ্টনী মজবুত। যারা যারা এই শহরে রাজত্ব করেছে তারা এর ওপরেও দুর্গ বানিয়েছে, উঁচু দেওয়াল তুলেছে - সেসব ভাঙা দেওয়াল আজও দেখা যায় ইস্তাম্বুল শহরে গেলে।
সে সময়ে সংখ্যালঘু খ্রীষ্টানরা হামেশাই সংখ্যাগুরু মূর্তিপূজকদের হাতে অত্যাচারিত হত। কনস্টানটাইন নিজে প্রথম জীবনে মূর্তিপূজক ছিলেন। কিন্তু মা হেলেনা ছিলেন খ্রীষ্টান। মায়ের ধর্ম সম্ভব্ত কনস্টানটাইনকে প্রভাবিত করে। তিনি সংখ্যালঘু নিপীড়ন বন্ধ করেন। সব ধর্মের মানুষ নিজের পছন্দমত উপাসনা করার অধিকার পায়। সংখ্যাগুরুরা যে সমস্ত চার্চ জবরদখল করেছিল সেগুলো খ্রীষ্টানদের ফেরত দেওয়া হয়। মন্দিরগুলো থেকে প্রচুর সোনাদানা অধিগ্রহণ করে অর্থনৈতিক সংস্কার হয়। চল্লিশ বছর বয়েসে কনস্টানটাইন নিজেও খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তবে খ্রীষ্টান হওয়ার পরেও তিনি মূর্তিপুজো করেছেন এমন বিবরণ আছে। সেযুগের নিরিখে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই অবশ্য। ভেনাসের কাল্ট আইসিসে, আইসিসের কাল্ট মাতা মেরিতে হামেশাই মিশে গেছে।
আয়া সোফিয়া প্রথম তৈরি হয় কনস্টানটাইনের ছেলে দ্বিতীয় কনস্টানটাইনের সময়ে। কিছুদিন পরেই চার্চের আর্চবিশপের সাথে সেই সময়ে যিনি অগাস্টাস ছিলেন তার মনোমালিন্য হয়। সেই সংক্রান্ত দাঙ্গায় চার্চটি পুড়ে যায়। তারপর আবার একবার তৈরি করা হয় এবং আবার পুড়ে যায়। এখন আয়া সোফিয়ার যে বাড়িটা দেখা যায় সেটা সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সময়ে বানানো (৫৩২ খ্রীষ্টাব্দ)। মধ্যযুগের অন্যতম সেরা স্থাপত্য বলে বিবেচিত হয় আয়া সোফিয়া। ৫৩২-১০৫৪ খ্রীষ্টাব্দ আয়া সোফিয়া ছিল বাইজান্টাইন খ্রীষ্টান চার্চ, ১০৫৪-১২০৪ খ্রীষ্টাব্দ গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ, ১২০৪-১২৬১ খ্রীষ্টাব্দ রোমান ক্যাথলিক চার্চ, ১২৬১-১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দ আবারও গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ, ১৪৫৩-১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দ অটোমান মসজিদ। এই হাজার বছরের ইতিহাস ঘেঁটে আমি লেখাটাকে ভারাক্রান্ত করব না। আমরা শুধু আয়া সোফিয়া যে সময় এবং যে প্রশাসনের আমলে হাতবদল হয়েছে সেই সময় ও প্রশাসনের পরিচয়গুলো সংক্ষেপে দেখে নেব। এই সময় স্মারকগুলো শুধু আয়া সোফিয়া বা ইস্তাম্বুলে নয়, সারা পৃথিবীর ইতিহাসেই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো ছাড়া আমি আরও একটি সময়কালের উল্লেখ করব। সেটা হল ৭৩০-৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দ। আয়া সোফিয়ার প্রধান সম্পদ তার ভিতরের দেওয়ালের অসামান্য মোজাইকগুলো। ৭৩০-৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দ এই মোজাইকগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য।
৭২৬ খ্রীষ্টাব্দে এজিয়ান সাগরের থেরা দ্বীপে (আজকের সান্তোরিনি) একটা আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠে। সেসময়ের বাইজান্টাইন সম্রাট তৃতীয় লিও প্রাচ্যে অনেকগুলো দিন কাটিয়েছিলেন। ইসলাম ধর্ম তখন বয়সে নবীন। প্রাচ্যে তারা ক্রমশই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। মুসলিমদের সাথে প্রাচ্য-্প্রতীচ্যের সীমানায় বসে থাকা কনস্টান্টিনোপলের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান হবে এমনটাই স্বাভাবিক। লিওর মনে হল ঈশ্বর রুষ্ট হয়েছেন তার প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে বলে। আয়া সোফিয়ায় যিশুর যত ছবি ও মূর্তি ছিল সব সে সময় নষ্ট করে ফেলা হল। কয়েক প্রজন্ম পরে ঈশ্বরের প্রতিকৃতি আঁকার ব্যাপারে বাইজান্টাইন রাজাদের মত বদলায়। আয়া সোফিয়া আবার ভরে ওঠে।
এবার ১০৫৪ নিয়ে বলা যাক। পূর্ব ও পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের যোগসূত্র অনেকদিন আগেই শিথিল হয়েছিল। রোমের চার্চ এবং গ্রীক নিয়ন্ত্রিত কনস্টান্টিনোপলের চার্চের পরিচালন পদ্ধতিতেও অনেক তফাৎ তৈরি হয়ে গেছিল। ক্রমশঃ তিক্ততা বাড়ছিল। একসময় ইতালির গ্রীক চার্চগুলোকে বলা হল যদি তারা ল্যাটিন (রোমান) পদ্ধতি মেনে চার্চ না চালাতে পারে তাহলে চার্চ বন্ধ করে দিতে হবে। প্রত্যুত্তরে কনস্টান্টিনোপলের ল্যাটিন চার্চগুলোর ওপরেও একই নির্দেশ জারী হল। শেষ পর্যন্ত ১০৫৪ সালে পূর্ব ও পশ্চিম আলাদা হয়ে গেল। পশ্চিম হল রোমান ক্যাথলিক। পূর্ব হল গ্রীক অর্থোডক্স। আয়া সোফিয়ার পরিচালক একই থাকল, নাম বদলালো শুধু।
দুই চার্চ আলাদা হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ল্যাটিন চার্চের নেতৃত্বে একের পর এক ক্রুসেড শুরু হয়। প্রথম ক্রুসেড ১০৯৬ খ্রীষ্টাব্দে। উদ্দেশ্য ইসলামিক শাসন থেকে পবিত্র ভূমি অর্থাৎ ইজরায়েল উদ্ধার করা। আসলে ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে ওঠা ইসলামিক শাসকদের সাথে ক্ষমতার লড়াই। প্রাচ্য সেই সময়ে সম্পদ, সংস্কৃতি, সামরিক ক্ষমতা সবেতেই এগিয়ে আছে। প্রথম ক্রুসেড শুরু হল যখন বাইজান্টাইন সম্রাট প্রতিবেশী সেলজুকদের সাথে লড়াই করার জন্য রোম থেকে সাহায্য চাইলেন। রোমান চার্চ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধর্মযুদ্ধের ডাক দিল। ছয়খানি ক্রুসেডের বর্ণনা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমরা শুধুই চতুর্থ ক্রুসেডের দিকে চোখ রাখব যখ্ন আয়া সোফিয়া আরেকবার হাতবদল হবে। ১২০৩ খ্রীষ্টাব্দের কথা। বাইজান্টাইন মুকুট কে পরবে তাই নিয়ে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চলছে। চতুর্থ ক্রুসেডের কর্তাব্যাক্তিদের টাকার দরকার পড়েছিল। বাইজান্টাইন সিংহাসনের দাবীদার অ্যালেক্সিওস অর্থ এবং সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন। বিনিময়ে তাঁর কাকাকে হঠিয়ে তাঁকে রাজা বানাতে হবে। ক্রুসেডাররা প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই তৎপরতা দেখালেন। অ্যালেক্সিওস সম্রাট হলেন বটে কিন্তু শহরে রায়ট লেগে গেল। ১২০৪-এর এপ্রিলে ক্রুসেডারা কনস্টান্টিনোপল দখল করল। প্রচুর লুঠপাঠ, খুন এবং ধর্ষণ হল। শহরের হিপোড্রোমে চারটি প্রমাণ মাপের ব্রোঞ্জের ঘোড়ার মূর্তি ছিল। আয়া সোফিয়ার মত এই ঘোড়ার মূর্তিও ছিল কনস্টান্টিনোপলের বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক। ক্রুসেডাররা সেই মূর্তি খুলে নিয়ে গেল ইতালিতে। এখনও সে মূর্তি দেখা যায় সেন্ট মার্ক ব্যাসিলিকাতে। আয়া সোফিয়ায় ক্রুসেডার প্রথম বল্ডউইনের রাজ্যাভিষেক হল। আয়া সোফিয়া তার পরিচয় পরিবর্তন করে হল রোমান ক্যাথলিক চার্চ।
১২৬১ খ্রীষ্টাব্দে রোমান দখল থেকে কনস্টান্টিনোপল আবার বাইজান্টাইন আধ্যিপত্যে এল। আয়া সোফিয়া আরও একবার গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ। তবে বাইজান্টাইনদের সময় শেষ হয়ে এসেছিল। সেলজুকদের পর তুরস্কের আনাতোলিয়ায় অটোমান নামে একদল নতুন যোদ্ধার কথা শোনা যেতে লাগল। এরা এক তুর্কি নেতা ওসমানের অনুগামী। একশো বছরের মধ্যেই অটোমানরা এশিয়া মাইনরের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা হয়ে উঠল। স্বাভাবিক ভাবেই নজর পড়ল সেই সময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী শহরটির দিকে। অটোমানদের কামানের ব্যবহার জানা ছিল। তা সত্ত্বেও ১৪২২-এর যুদ্ধের বিবরণে পাওয়া যাচ্ছে কনস্টান্টিনোপলের দেওয়াল এতই পোক্ত ছিল যে কামানেও তা ধ্বসিয়ে দেওয়া যায়নি। তবে অটোমানরা সামরিক ক্ষমতা ও সংখ্যায় অনেক এগিয়ে ছিল। ১৪৫৩ সালে দ্বিতীয় মাহমুদের নেতৃত্বে অটোমান সেনারা কনস্টান্টিনোপল দখল করল। তিনদিন ধরে লুঠপাঠ চলল। নিষ্ঠুরতার মাপকাঠিতে ক্রুসেডার খ্রীষ্টান ও অটোমান মুসলমানদের আলাদা করা যাবে না। আয়া সোফিয়া হাতবদল হয়ে এবারে হল মসজিদ। এখন আয়া সোফিয়ায় যে মীনারগুলো দেখা যায় সেগুলো এই সময়ে তৈরি হয়েছে। মক্কার দিকনির্দেশ করা মাহরাবও বলা বাহুল্য মুসলিম অধিগ্রহণের পরেই যোগ করা হয়েছে।
এবার চারশো বছর পেরিয়ে চলে আসা যাক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯১৪-১৭ খ্রীষ্টাব্দে। অটোমান সাম্রাজ্য হাত মিলিয়েছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, বুলগেরিয়ার সাথে। বিপরীতে মিত্রশক্তি। ইস্তাম্বুল এবং আনাতোলিয়া (বর্তমান এশিয়ান তুরস্ক) মিলিয়ে সেই সময় তিরিশ লক্ষ আর্মেনিয়ান ছিল। তারা ধর্মে ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট ও অ্যাপোস্টলিক। রাষ্ট্রধর্মের অনুগামী না হওয়ার কারণে তারা খুব একটা সুখে ছিল না। বিশ্বযুদ্ধের সময় তাদের রাষ্ট্রানুমোদিত অপসারণ শুরু হল। দলে দলে আর্মেনিয়ানকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল সিরিয়ার মরুভূমির দিকে। অনাহার, খুন এবং ধর্ষণে পনেরো লাখ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। যুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্য ভাগাভাগি শুরু হল। মুস্তাফা কামাল নামে এক তরুণ নেতা এইসময় নজর কাড়লেন। কামাল স্বাধীন তুরস্ক গড়ার দিকে মন দিলেন - যার প্রধান উদ্দেশ্য হবে তুরস্কের মাটিতে তুর্কি জাতির স্বার্থরক্ষা করা। ১৯২৩ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। ইস্তাম্বুল থেকে রাজধানী উঠে গেল আনাতোলিয়ার শহর আঙ্কারায়। গ্রীস ও তুরস্কের জন বিনিময় চুক্তির ফলে প্রায় বারো লাখ গ্রীক অর্থোডক্স এশিয়া মাইনর থেকে চলে এল গ্রীসে, চার লাখ মুসলিম গ্রীস থেকে এল তুরস্কে। যেসব গ্রীক অর্থোডক্স তুরস্কে থেকে গেল তাদের বেশির ভাগই রইল ইস্তাম্বুলে - প্রায় দুলাখ। জন বিনিময়ের পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তুরস্ক কোন রাষ্ট্রধর্ম বেছে নিল না, সেকুলার রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হল।
মুস্তাফা কামাল তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আধুনিক তুরস্কের রূপকার। তাঁকে উপাধি দেওয়া হল - আতাতুর্ক - তুরস্কের পিতা। অটোমান আমলে তিনরকমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল - ১। মাদ্রাসা, যেখানে আরবী ও কোরান শিক্ষা হত, ২। ইদাদি ও সুলতানি - তানজিমৎ নামে একটা সংস্কারপন্থী আন্দোলন হয়েছিল উনবিংশ শতকে - তাদের স্কুল, ৩। আধুনিক স্কুল। আতাতুর্ক সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মিনিস্ট্রি অফ ন্যশনাল এডুকেশনের আওতায় এনে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকিকরণ করলেন। সমস্ত স্কুল এক পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হল। ধর্মীয় স্কুল বন্ধ হল না, কিন্তু তা এল উচ্চশিক্ষার আওতায়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে তার অস্তিত্ব রইল না। শরীয়া কোর্ট বন্ধ হল। বেশ বড়মাপের ভাষা সংস্কার হল। অটোমান আমলে আরবী অক্ষর ব্যবহার হত, আতাতুর্ক ল্যাটিন অক্ষরে তুর্কি লেখার প্রচলন করলেন। সেই সাথে তুরস্কে যেসব মানুষ আছে যারা জাতিগত ভাবে তুর্কি নয় তাদের ওপর তুর্কি ভাষায় কথা বলার জন্য চাপ সৃষ্টি হল। তুরস্কে যেহেতু নানা জাতির লোক দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে বহু জায়্গার নাম ছিল আর্মেনিয়ান, গ্রীক, বুলগেরিয়ান, কুর্দিশ বা আরবী ভাষায়। সেসব বদলে তুর্কি নাম রাখা হল। সামাজিক স্তরে ছেলেমেয়েদের মেলামেশা বাড়াতে উৎসাহ দেওয়া হল। ১৯৩০ সালে স্থানীয় নির্বাচনের জন্য এবং ১৯৩৪ এ জাতীয় নির্বাচনের জন্য মেয়েরা ভোটাধিকার পেল। প্রসঙ্গত প্রতিবেশী গ্রীসে মেয়েদের সার্বিক ভোটাধিকার এসেছে অনেক পরে ১৯৫২তে।
এই লেখা যদিও আতাতুর্ককে নিয়ে নয়, তাও তাঁর সম্পর্কে এটুকু লিখতেই হল কারণ এবার আবার আমরা আয়া সোফিয়ার হস্তান্তরে ফিরে আসব। আতাতুর্ক ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ওপর ভর দিয়ে আধুনিক তুরস্ক গড়তে চেয়েছিলেন। তাঁর মতাদর্শের সাথে তাঁর জীবৎকালেই দলের লোকেদের দ্বিমত ছিল। ব্যবহারিক জীবনে ধর্মকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া, প্রতিটি নাগরিককে জোর করে তুর্কি ভাষা শিখতে বাধ্য করা, ভাষা সংস্কার - এসবই কারোর কাছে আদরণীয়, কারোর কাছে সমালোচনার যোগ্য হতে পারে। ১৯৩৫এ আয়া সোফিয়াকে নিয়ে আতাতুর্ক যা করলেন সে সম্পর্কেও হয়ত এমন দ্বিমত থাকবে। আয়া সোফিয়াকে তিনি মসজিদ থেকে মিউজিয়াম বানিয়ে দিলেন। খ্রীষ্টান ও ইসলাম দুই ধর্মের স্মারকই জায়গা পেল এই মিউজিয়ামে। অটোমান শাসনকালে যিশুর জীবনকাহিনী আঁকা ছবিগুলো ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। তাদের আবার পুনরুদ্ধার হল।
আতাতুর্কের মৃত্যুর পরে তাঁর অনেক সংস্কারই বদলানো হয়েছে। যেমন ধরা যাক ধর্মীয় স্কুল আবার ফিরে এসেছে মাধ্যমিক স্তরে। কিন্তু তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচিতিতে অন্তত খাতায় কলমে আঁচড় পড়েনি। ১০ই জুলাই, ২০২০ প্রেসিডেন্ট রজব এরদোগান ঘোষণা করেছেন আয়া সোফিয়া আবার মসজিদে রূপান্তরিত হবে। তুরস্ক এখনও সেকুলার, কোনও রাষ্ট্রধর্ম নেই, কিন্তু মিউজিয়ামের মসজিদে রূপান্তর ইঙ্গিত দিচ্ছে কামাল পাশা যে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কথা ভেবেছিলেন সেই ভাবনার সমর্থনে এবং রূপায়ণে এখন লোক কম। গত একশো বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে আশা করা গেছিল মানুষের দৈব নির্ভরতা কিছুটা কমবে। রাষ্ট্রের ওপর ধর্মের প্রভাবও লোপ পাবে ধীরে ধীরে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হতে দেখা যাচ্ছে না। রজব এরদোগান নিজেকে কনজারভেটিভ ডেমোক্রাট বলেন। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে ইস্তাম্বুলের একটা নিম্নবিত্ত পাড়ায়। যে ধর্মীয় স্কুল কামাল পাশা বন্ধ করেছিলেন, এবং পরবর্তী কালে যা আবার ফিরে এসেছিল, সেরকমই একটি ধর্মীয় স্কুলে এরদোগান মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা করেছেন। স্কুল শেষ করার পর এরদোগান পড়তে চান আঙ্কারা ইউনিভার্সিটির পলিটিকাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে। দেড়শো বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠান মক্তব -ই -মুলকিয়ে নামে বিখ্যাত এবং তুরস্কের সমাজবিজ্ঞানের সবচেয়ে ভালো স্কুল। কিন্তু মক্তব -ই -মুলকিয়ে ধর্মীয় স্কুলের ছাত্রদের সুযোগ দেয় না। রজব তখন অন্য একটি স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। ১৯৯৪ সালে এরদোগান ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তাকে মেয়র পদ থেকে বহিস্কৃত করা হয় এবং চারমাসের জেল হয়। মজার কথা হল জিয়া গোকাইপ নামে যে কবির কবিতা পাঠ করে এরদোগান জেলে গেলেন তিনি তুর্কি জাতীয়তাবাদের জনক, কামাল আতাতুর্কের অন্যতম অনুপ্রেরণা। গোকাইপ সুফি মতাদর্শের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। অটোমান ও ইসলামিক প্রভাব থেকে বেরিয়ে তুরস্কের তুর্কিকরণ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর জাতীয় সংহতির চিন্তায় তুরস্কে বসবাসকারী অন্য জাতিভুক্ত মানুষদের প্রতি খুব একটা সহানুভুতি পাওয়া যায় না। বহুত্ববাদের প্রতি এই অবহেলা আমরা আতাতুর্কের সংস্কারেও দেখেছি। আবার এটাও সত্যি ধর্মনিরপেক্ষতার যে নজির আতাতুর্ক রেখেছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। ইস্তাম্বুলের ইতিহাসে আমরা দেখেছি যখনই যে গোষ্ঠী ইস্তাম্বুল দখল করেছে তারা আয়া সোফিয়াকে লুঠের মালের মত ব্যবহার করেছে। আয়া সোফিয়ার কথা বারবার আলাদা করে উল্লেখ করছি কারণ দেড় হাজার বছর ধরে এটি ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য। ইস্তাম্বুল দখল এবং আয়া সোফিয়া দখল সমার্থক। আতাতুর্কই প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি রাষ্ট্রধর্মকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখলেন এবং তার প্রতিফলন ঘটল আয়া সোফিয়াতেও। ২০২০তে ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে আয়া সোফিয়ার বিচ্যুতি তাই আশঙ্কাজনক। এবার কি তবে রাষ্ট্রধর্ম আয়া সোফিয়ার অনুসারী হবে?
সাধারণ মানুষের মনে একটা ধারনা আছে যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মানেই সেখানে ইসলামিক শাসন চলে। ধারনাটা আদপেই ঠিক নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিম ইন্দোনেশিয়ায় থাকে। সংবিধান অনুযায়ী দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ। সেখানে সব ধর্মের মানুষেরই ধর্মাচারণের স্বাধীনতা আছে। আজারইবাইজান, কাজাখ্স্তান ইত্যাদি সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলো, ইউরোপে কসোভো, আলবেনিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, আফ্রিকায় চাদ, মালি, নাইজার প্রভৃতি দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নয়। কিন্তু তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব এর চেয়ে বেশি, কারণ ঐতিহাসিক ভাবে ধর্মীয় রাজনীতিতে ইস্তাম্বুল যেভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে তেমনটা অন্য দেশগুলোতে দেখা যায় না। তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষতা বাকি পৃথিবীর মুসলিম সংখ্যালঘু দেশগুলোর প্রতি যে সহিষ্ণুতার বার্তা দেয় তা এই অশান্ত সময়ে রক্ষা করা একান্ত জরুরী। সারা পৃথিবী জুড়েই উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দা দূর করার চটজলদি সমাধান খুঁজে না পেয়ে রাষ্ট্রনায়কেরা ছেলেভুলানো তোষণের রাজনীতির হাত ধরে নিজেদের রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজছেন। এরদোগান নিজেও রূপ বদলেছেন। প্রথম জীবনে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য বহিষ্কৃত হলেও পরে তিনি রাজনৈতিক ভাবে অনেকটাই পরিণত হয়েছিলেন। লিবারাল গ্রুপের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্যই সম্ভবত মেপে কথা বলতেন। ২০০২ সালে এরদোগানের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন - "homosexuals must be legally protected within the framework of their rights and freedoms'। ২০১৭ তে দেখা যাচ্ছে তিনি আর LGBT গ্রুপের অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রয়োজন বোধ করছেন না। বলছেন LGBT গ্রুপের ক্ষমতায়ণ ""against the values of our nation"। মাত্র পনেরো বছরের মধ্যে বহুত্ববাদের গুরুত্ব কমছে। ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব অনেক দিন ধরেই কমছিল। আয়া সোফিয়ার মসজিদীকরণ সেই ভাবনায় সীলমোহর দিল। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কি এমন ঘটছে যার জন্য মানুষ আবার মধ্যযুগে ফিরে যেতে চাইছে? সাম্য, উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি যে ঝোঁক বিংশ শতকের আধুনিক রাষ্ট্রগঠনে দেখা যাচ্ছিল তার থেকে এত তাড়াতাড়ি মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইছে কেন? আধুনিক রাষ্ট্রনির্মানের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ অনুপাত কী হওয়া উচিৎ? রাষ্ট্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে আলাদা করে দেওয়ার গুরুত্ব আধুনিক রাষ্ট্রগুলো বুঝেছে। সুফলও পেয়েছে। কিন্তু বহুত্ববাদে আঘাত না দিয়ে কিভাবে ব্যবহারিক জীবনে ধর্ম বর্জনের চর্চা চলবে সেটা এখনও আয়ত্ত্ব করা যায়নি। আবার সাংস্কৃতিক অভিন্নতা ও জাতীয় গর্ব একটা দেশকে ধরে রাখার জন্য কার্যকরী। অনেক রাষ্ট্র সেই মডেলে চলে অন্তত সাময়িক সাফল্য পেয়েছে। অথচ সেখানেও বহুত্ববাদকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা হামেশাই দেখা যায়। নির্ভেজাল বহুত্ববাদই যে সবার চেয়ে ভালো এমন প্রমাণও নেই। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য এক আইনের পথে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জাতীয়তাবাদ ও বহুত্ববাদের এই দ্বন্দ এই মূহুর্তে আরোই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কারণ উদ্বাস্তু ও অভিবাসন সমস্যা সারা পৃথিবীতেই প্রকট। জাতীয়তাবাদের খেলোয়াড়রা সব সমস্যার জন্য বহুত্ববাদীদের দায়ী করছেন। বহুত্ববাদীরা বহুর অধিকারের জন্য লড়ে যাচ্ছেন বটে কিন্তু তাঁরা ক্রমশই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন এবং জনতা তাঁদের এলিট রাজনীতির প্রতিনিধি মনে করছে। আবার আমরা যখন দূর থেকে দেখার চেষ্টা করছি তখন দেখছি দক্ষিণপন্থী নেতা উদ্ধৃত করছেন জাতীয়তাবাদীকে, জাতীয়তাবাদী পথ দেখাচ্ছেন ধর্মনিরপেক্ষকে। বোঝাই যাচ্ছে রাষ্ট্রনির্মাণে এর প্রতিটি উপাদানই ব্যবহার হয়েছে। অনুপাতের তারতম্যে কাউকে লিবারাল, কাউকে কনজারভেটিভ মনে হচ্ছে। সমস্যা হল এর মধ্যে কোন অনুপাতটি জনহিতকর তা নিয়েও কোন ঐক্যমত্যে আসা যাচ্ছে না। এই গোলকধাঁধার থেকে উদ্ধার পেতে যে দুর্লভ প্রজ্ঞার প্রয়োজন তার সন্ধান কোথায় মিলবে জানা নেই। যদিও গ্রীকভাষায় সোফিয়া শব্দের অর্থ প্রজ্ঞা এবং আয়া সোফিয়া হল সেই জায়গা যেখানে পবিত্র প্রজ্ঞার অধিষ্ঠান হয়েছে, তবু দেখাই যাচ্ছে অন্য আরও অনেক কিছুর মত এই ধারনাটাও গত দেড় হাজার বছরের একটা মস্ত ধোঁকা।
ভালো লেখা।
মাঝে মাঝে মনে হয় রাষ্ট্রনায়করা বড্ড বেশি ইতিহাস পড়ে ফেলেছেন। আর তাঁদের রোল মডেলরাও সেই মধ্যযুগের ঐতিহাসিক চরিত্ররা। কাজেই ওই বর্বর শাস্তির প্রথা ইত্যাদি যে ফিরে আসছে না তাতেই বোধহয় খুশী থাকার কথা আমাদের!
ভাল লেখা, প্রাবন্ধিককে ধন্যবাদ ।
এই প্রসঙ্গে ২০১৮-র এই প্রতিবেদনটি প্রণিধানযোগ্য :
https://www.theguardian.com/news/2018/aug/27/religion-why-is-faith-growing-and-what-happens-next
অবশ্য এখন (করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর) পরিসংখ্যানগুলো কতটা প্রযোজ্য তা বলা শক্ত
লেখাটি তথ্যসমৃৃৃদ্ধ ও সময়োপযোগী৷ তথ্যসূত্রের অভাবে প্রামাণ্যতা হারিয়েছে৷ ইতিহাসের জটিল গতিপথের বর্ণনা কিঞ্চিত রসসমৃদ্ধ হলে পাঠ আনন্দময় হত
উগ্র জাতীয়তাবাদ ক্রমশই বিস্তার লাভ করছে। তথ্যবহুল একটি লেখা, পড়ে ভাল লাগল।
"The Indonesian constitution declared in Chapter XI that
(1) The State shall be based upon the belief in the One and Only God."
Never undermine strength of Islam and our basic tenet of TAWHID in the Holy Quran, TAWHID signifying oneness of Allah or the God Almighty. Yes, Indonesia is not strictly religious like Afghanistan, Pakistan, Maldives or Bangladesh. But gradually it will be an Islamic state too. Martyrdom of souls like Imam Samudra in Bali bomb blast will not be futile...Inshallah!
আল্লাহ আমাদের কে হিংসার কবল থেকে রক্ষা করো,, এবং সব সময় মাওলা তুমার গুলামি করার তৌফিক দিও,, হালাল পথে চলার তৌফিক দিও,, হারাম থেকে আমাদের কে দূরে রাখিও,, মানুষকে ভালো উপদেশ দেওয়া তৌফিক দিও,, যে সময় যে অবস্থায় থাকি মাওলা তুমি ধৈর্য দরার তৌফিক দিও,, মানুষের সাথে ভালো আচরণ করার তৌফিক দিও,, বাদ কাজ ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে আমাদের কে বিরত রাখিও,, আল্লাহ তুমি আমার আশাগুলো পূরণ করিও,, (আমিন)
মুস্তাফিজুর রহমান আমার কাজিন (ফুপাতো ভাই) আর আমি ওর মামাতো ভাই। ঢাকায় আমরা এক মেসবাড়িতেই ভাড়া থাকি। দু’জনেই পড়া শেষ করে কাজ খুঁজছি আর একটা পিসি দু’জনেই চালাই। কিন্ত আপনাদের এই হিন্দুত্ববাদী ‘গুরুচন্ডালী’-তে ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে এত অপপ্রচার চলে কেন? আগেও বোধ করি একবার কেউ লিখেছিল এখানে যে পাকিস্থানের সংবিধান সেক্যুলার। কখনো না। পাকিস্থান ঈমানদার ইসলামী রাষ্ট্র। তাঁদের রাষ্ট্রের নামই ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র।’ বাংলাদেশেও ইনশাল্লাহ্ সংবিধানে ইসলামই স্টেট রিলিজিয়ন। সেক্যুলারিজম সবলের মতবাদ হতে পারে না। ওটা হিন্দু-খ্রিষ্টান-ইহুদি-বৌদ্ধদেরই মানায়। ইসলাম তার সবল তরবারীতে ‘গাজওয়া হিন্দ’ বা হিন্দুস্থান, ইসরাইল, আমেরিকা সহ গোটা পশ্চিমা বিশ্বকে একসময় অবশ্যই পদানত করতে পারবে যেমন আমরা বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ কাফির, প্রতিমা পূজারী, শিরক ও বিদাতকারীকে তাড়িয়েছি। এরডোগান হাগিয়া সোফিয়ায় ইসলামকে আবার প্রতিষ্ঠা করলেন। আল্লাহ রাব্বুল আল’আমীন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস কবুল করুন। আমাদের দেশে এখন হাসিনার তাগুদ (সেক্যুলার) সরকার চলছে। একটা না একটা সময় এই জালেম শাহীর পতন হবেই। নারায়ে তকবীর- আল্লাহু আকবর।
কেউ-কে বলি: আপনারা হিন্দুত্ববাদীরা হাজার বছরের প্রতিবেশী মুসলিমের মুখের জবান কিছু বোঝেন না কেন? অনুবাদ করে দিচ্ছি: মাওলা (প্রভু) তোমার দাসত্ব করার তৌফিক (আশীষ) দিও, হালাল (বৈধ) পথে চলার তৌফিক দিও, হারাম (অন্যায়) থেকে আমাদের দূরে রাখিও...বাদ (মন্দ) কাজ থেকে আমাদেরকে বিরত রাখিও...এবার বোঝা গেল? যত সব হিন্দুত্ববাদীর দল!
মুস্তাফিজুর অবশ্য আমার দু’বছরের বড়। আগে ও বছর খানেক একটা অফিসে কাজ করেওছে। তারপর আর একটা ডিপ্লোমা করলো। এখন আবার কাজ খুঁজছে। যাহোক, আপনারা ইসলামী রাষ্ট্রগুলো নিয়ে মন গড়া অপপ্রচার করবেন না।
রিজওয়ানুল আপনি আমায় ভুল বুঝছেন , আমরা এখানে যারা রেগুলার লেখালেখি করি আমরা বিশেষ কোনো সম্প্রদায় বা মতবাদ এর বিরুদ্ধে নোই
যদিও মৌলবাদী ধ্বংসাত্মক চিন্তাভাবনাকে এখানে প্রশ্রয় দেওয়া হয়না , আর দক্ষিণপন্থী মতবাদ যতই জনস্বার্থের পরিপন্থী হোকনা কেন , এই প্লাটফর্ম এ সবসময় তা পরিত্যাজ্য
বামপন্থী চিন্তাধারার যুক্তিবাদ , তা সে যতই প্রাচীন বা অসার বা জনস্বার্থের সঙ্গে বৈপরীত্য পোষণ করুক না কেন , এই পরিসরে তার অবাধ প্রসার এ আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
আপনি আপনার নিজস্ব চিন্তাধারা রাখতেই পারেন তবে তা য্যানো অক্ষম মৌলবাদী যুক্তির অশ্লীল দম্ভের পরিচয় না রাখে এই আশা রাখি
আচ্ছা
আমি একটা পোস্ট করেছিলাম এই টৈ তে , সেটা আর দেখতে পাচ্ছিনা , কি হলো ? আমাকে কি আবার পোস্ট করতে হবে ?
কেউ জানলে প্লিস একটু বলবেন