এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কাফিরনামা...(তিসরা কিস্তি)

    রাণা আলম লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ জুন ২০১৭ | ১০৩৯ বার পঠিত
  • কদিন আগে খবরের কাগজে দেখলুম মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভাতে জনৈক ছাত্রনেতা জানিয়েছেন যে কলেজ স্কোয়ারে মিটিং মিছিল হলে তার ক্লাস করতে এবং হয়ত পড়াশুনো করতেও হেব্বি অসুবিধে হচ্ছে, অতএব ওখানে যেন মিটিং মিছিল করাটা বন্ধ করা হয়।

    আমি একটু আধটু ছাত্র রাজনীতি করেছি। আমাদের সময় থেকেই এখন অব্দি ছাত্রনেতারা ক্লাস করেন অ্যামন অপবাদ শুনিনি। অবশ্যি, রাজনৈতিক দলগুলির রসিকতাবোধ বরাবরই বেশ উচ্চমানের,নইলে রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয় কি করে।‘কাফিরনামা’ একটা সিরিয়াস লেখা হবার কথা ছিল,কিন্তু আমার স্বভাবজাত বাজে বকা ছাড়া গেলনা,তাই প্রতি কিস্তিতেই গুচ্ছের বাজে কথা ঢুকে পড়ছে,সিপিএম এ য্যামন বেনোজল ঢুকেছিল।

    বেনোজল বলে মনে পড়লো, বছর খানেক আগে, জনৈক ‘সহি’পন্থী আমায় হেসেই বলেছিলেন,
    “নামাজ পড়েন না, রোজা রাখেন না। আবার ইফতারেও দিব্যি খেতে বসেন, বিজয়ার মিষ্টি খেতেও হিন্দুদের বাড়ি যান। আপনি ভাই মুসলমানেদের মধ্যে পাক্কা বেনোজল”।

    বোঝাবে কে যে যদ্দিন ইফতারে হালিম আর সিমাই হবে তদ্দিন ইফতারে না বসাটা চরম ব্লাসফেমি। খোদাতলার এতটা বিরুদ্ধে আমি কখনই যেতে পারবোনা। এবং পুজোর সময় দশমীর মধ্যে একদিন অম্লানদের বাড়িতে আমার জন্য খাসির মাংস রান্না হয়। সেইটে না খেলে আমার তো নরকেও স্থান হবেনা। এতবড় মহাপাতক কি আমি হতে পারি। আর আমার বিরুদ্ধেই যত কথা? কোরবাণির সময় গুচ্ছের সংখ্যাগুরু মহাপাতক এসে ‘ভাই, কোরবাণিতে খাওয়াবি না?’ বলে গরু আর খাসিটা প্রায় শেষ করে দিয়ে যায়, তার বেলা?
    কিন্তু আমার সহি ভাই বেরাদর রা না চাইলেও যুগধর্মের চাপে আমি সেই বেনোজল হয়েই রয়ে যাচ্ছি।

    ফেবুতে এসে মুসলিমদের একটি প্রজাতির সাথে আমার পরিচিতি হয়। এরা বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত। প্রচন্ডরকম আরএসএস বিরোধী। যখন বানরসেনাদের বিরুদ্ধে লিখতাম, এনারা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের বন্যা বইয়ে দিতেন।সমস্যাটা শুরু হল যখন এনারা আবিষ্কার করলেন যে ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজম এর বিরুদ্ধেও আমি লিখে থাকি। অকথ্য গালাগাল, ব্যক্তি আক্রমণ কিছুই বাদ যায় নি। খুঁজেপেতে দেখেছিলুম যে এরা অর্গানাইজড। মূলত শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকেন। ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে যে এরা খুব ক্ষতিকারক ভাইরাস।

    অবশ্যি, এই প্রজাতিদের সংখ্যাগুরুর মধ্যেও দেখা যায় প্রবলভাবে। তারা ইস্লামিক ফান্ডামেন্টালিজম এর বিরুদ্ধে সোচ্চার কিন্তু আরএসএস তাদের কাছে একটি উপকারী সংগঠন মাত্র।

    জেনারেল বিপিন রাওয়াত কে অধ্যাপক পার্থ চ্যাটার্জি জালিয়ানওয়ালাবাগের কুখ্যাত জেনারেল ডায়ারের সাথে তুলনা করেছেন বলে বানর সন্তানদের বিস্তর গোঁসা হতে দেখছি।‘জাস্টিসিয়া’ ভাস্কর্যটি যখন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আবার পুনঃস্থাপিত হল তখনও এভাবেই কিছু ছাগ সন্তানদের গোঁসা হতে দেখেছিলাম।সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বিপিন রাওয়াত জানিয়েছেন যে এ বিষয়ে তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেবেন না। তার মতে মানুষই শ্রেষ্ঠ বিচারক। এবং একটি বাক্য যোগ করেছেন যেটি কোট করছি- “সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তই সঠিক বলে গণ্য হবে।”(দৈনিক এই সময়। ৯ই জুন, ২০১৭)

    শেষের বাক্যটি ভাবাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠই কি তাহলে শেষকথা?

    বাংলাদেশে হেফাজত দেশ থেকে সমস্তরকম মূর্তি অপসারণের দাবী তুলেছে। আশংকার বিষয় হল হয়ত দেখা যাবে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই তাইই চান। তা চাইলেই কি সেটা বৈধ হয়ে দাঁড়াবে?

    আরেকটা বিষয় হল এই যে সংখ্যাগরিষ্ঠের চাওয়াটাই হয়ত আপাত বৈধতা পায় এবং স্বাভাবিক বলে গণ্য হয়।
    আমার শহর বহরমপুরে মোহন মোড়ে একটা হনুমান মন্দির গজিয়ে উঠেছে। এবং সেটা রাস্তা দখল করে স্থায়ী কাঠামো গড়েই। এই শহরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক দার্শনিক রেজাউল করিম (কথিত আছে যে গার্লস কলেজে সরস্বতী পূজোর পর অনুষ্ঠিত ব্রাম্ভণ ভোজনে এনাকে সর্বাগ্রে বসানো হত) এর মূর্তিটা প্রায় ঢাকা পড়ে গেছে মন্দিরের আড়ালে। পৌরসভার হেলদোল নেই। সব্বাই এটাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিচ্ছে। জাস্ট ভাবছিলাম ওখানে একটা মসজিদ গড়ে উঠলে কি রিঅ্যাকশন হত?

    সংখ্যালঘুকে কি তাহলে সংখ্যাগুরুর স্বার্থ মেনে চলতে হয়? প্রশ্নটা গোলমেলে। আমার শহরেই থাকেন জিনাত রেহেনা ইসলাম। কবি। পেশায় শিক্ষিকা। ঘোর নাস্তিক। কিন্তু তিনি চাইলেই তো আর হচ্ছেনা। তিনিও মাঝেমধ্যে ভুলে যান যে তার একটি আরবি নাম আছে। তাই তিনি খোদ বহরমপুরেই সতীমার গলিতে ফ্ল্যাট কিনতে পান না। স্থানীয় বিধায়কের কাছে গেলে তিনি জানান যে ওখানে জাগ্রত মন্দির আছে, তাই কোনো মুসলমান কে ফ্ল্যাট বিক্রি করা যাবেনা।

    এ প্রসঙ্গে মনে পড়লো, মুসলমানেরও পরিচয়সূচক ছাপ্পা থাকে। বহু জায়গায় শুনেছি, ‘তুই মুসলমান, কিন্তু তোকে তো আমাদের মতই মনে হয়’।

    মুসলমানেরা তাহলে ক্যামন হয়? মুসলমান মানেই কি জোব্বা, মাথায় টুপি আর দাড়ি? ঈদের বিজ্ঞাপনে বিপণীগুলি যে কুর্তা-পাজামা আর বোরখাপরা মুসলিম দম্পতির ছবি দিয়ে টাইপকাস্ট করে যায়, তার সাথে কতটা মিল আছে বাংলার মুসলমানেদের?

    বাংলার মুসলমান মানেই কি তালিবানি ফতোয়াবাজে বিশ্বাসী ধর্মান্ধ একটি প্রজাতি? তারা কি সকাল বিকেল গোস্ত-রুটি খায়? চারটে করে বিবি পোষে এবং গুচ্ছের বাচ্চা পয়দা করে?
    আমার পরম সুহৃদ অম্লান জানিয়েছিলেন যে সংখ্যাগরুর একটা অংশ মুসলিমদের সম্পর্কে ঘৃণা পোষণ করে। সে ঘৃণার কারণ বা যথার্থতা নিয়েও তারাও ওয়াকিবহাল নয় হয়ত কিন্তু তাতে ঘৃণার ভাগটা কম পড়েনা।

    আমার প্রথম চাকরি একটি বহুজাতিক সংস্থায়। সেখানে আমার এক সহকর্মী কথায় কথায় একদিন বললেন,
    “তোদের বাড়িতে কি রোজই বিরিয়ানী মাংস হয়?”
    বাংলার মুসলমানও ডাল-ভাত খায়। দুদিন পরপর বিরিয়ানী খেলে তাকেও হজমের অসুধ খেতে হয়।স্বভাবতই সে মঙ্গল গ্রহ থেকে আসেনি, এইটাই অনেকে বোঝেন না বা বুঝে উঠতে চান না।

    একটা কথা বরাবরই শুনে আসছি যে মুসলমানেরা নাকি গরু ছাগলের মতন বাচ্চা বিয়োয়।গুজরাত গণহত্যার পর রিফিউজি ক্যাম্প গুলোকে বাচ্চা বিয়োনোর কারখানা বলেছিলেন এক ৫৬ ইঞ্চি ছাতির নেতা। আরেক ধর্মীয় নেত্রী তো কুকুরের সাথে তুলনা করেছিলেন।

    ২০১১ এর সেন্সাস অনুযায়ী মুসলিমদের জন্মহার ৪.৯% কমেছে যেটা ভারতের ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবথেকে বেশি (http://indianexpress.com/article/opinion/columns/myth-of-muslim-growth/)।সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের মুসলিমদের একটা বড় অংশই অশিক্ষা আর দারিদ্র্যের মধ্যে ডুবে আছে। পরের কোনো কিস্তিতে এ সংক্রান্ত তথ্য দেবার ইচ্ছে রইলো।পরিবার পরিকল্পনা না থাকার কারণ কি ধর্ম নাকি দারিদ্র্য-অশিক্ষা এবং সচেতনতার অভাব?

    আদ্যন্ত চাষীবাড়ির সন্তান আমার আব্বারা পাঁচ ভাইবোন। আব্বা লেখাপড়া শিখেছেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আমরা দুই ভাই। আমার দু নম্বর চাকরি’তে এক সহকর্মী ছিলেন ভজন রজক। নদীয়ার এক গ্রামে বাড়ি। তারা পাঁচ ভাইবোন। ভজন লড়াই করে উঠে এসে আজ প্রতিষ্ঠিত। তার কিন্তু একটাই সন্তান।

    এখনকার সময়ে কটা শিক্ষিত সচেতন মুসলিম পরিবারে তিন-চারটে সন্তান দেখা যায়? তাহলে দারিদ্র্য-অশিক্ষা জনিত অসচেতনতার কুফলকে ধর্মের ট্যাগে দাগিয়ে দেওয়ার রাজনীতিটা কার স্বার্থে করা হয়?
    কোনো সভ্যশিক্ষিত দেশেই তিন তালাক বা বহুবিবাহের মতন প্রথা থাকা উচিত নয়।আর সিলভার লাইনিং টা হচ্ছে যে এর বিরুদ্ধে মুসলিমদের মধ্যে থেকেই আওয়াজটা উঠছে।

    সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে লিখবো, আগেই কয়েছিলাম। কিছুদিন আগের কথা, জনৈক গোমাতার সন্তান দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে মমতাজ বেগম বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ তিনি নাকি খালি মুসলমানেদেরই দ্যাখেন।তাই বাংলার সব মুসলমান তাকেই ভোট দ্যায়। এর আগে বলা হত বাংলার মুসলমানেরা খালি সিপিএম কে ভোট দ্যায়। তারও আগে মুসলমানেরা শুধু কংগ্রেস কেই ভোট দিত।
    অথবা অধিকাংশ মুসলমান মিলে যেহেতু এককাট্টা হয়ে ভোট দ্যায়, তাই তারা তথাকথিত ভোটব্যাঙ্ক। সহজ সমীকরণ। অংক শেষ।

    তাই কি? আমার বাড়ি মুর্শিদাবাদ। বিদ্বেষের বিষ ছড়ানোর অন্যতম কারিগর শ্রী রন্তিদেব ধারাবাহিক কলামে যে জেলার মুসলমানেরা হিন্দুদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার নামিয়ে মোগলিস্তান গড়ার চেষ্টায় রত আছে বলে প্রচার করছিলেন এককালে সেই জেলার লোক।

    মুর্শিদাবাদে ৬৭% মুসলিম। এখানে অ্যাদ্দিন লড়াইটা হত সিপিএম কংগ্রেসের মধ্যে। এবং সেটা হাড্ডাহাড্ডি। এখন মাথা গলিয়েছে তৃণমূল।মুসলিম ভোট যদি একচেটিয়া হয়ে একটি দলই পেত, তাহলে বাকি দলগুলি লড়াইতেই আসতো না। শেষ বিধানসভা ভোটেও সিপিএম,কংগ্রেস, তৃণমূল তিনটি দলই আসন পেয়েছে (ঘোড়া কেনাবেচা বাদে, অবশ্যি ঘোড়ারাও অ্যাতো নিল্লর্জভাবে বিকোতো কিনা সন্দেহ)।
    প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি সবাই যদি মুসলিম ভোট পেয়ে থাকে তাহলে ‘মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক’ কথাটা আসে কোত্থেকে?

    মুসলিমরা মূলতঃ বিজেপিকে ভোট দেয়না বলেই কি এই ভোটব্যাঙ্কের ধারণার উৎপত্তি? জামাত বা মুসলিম লীগের মতই বিজেপি একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে এনডোর্স করে। সেই ধর্মের ভিত্তিতে তারা বিভেদ আর বিদ্বেষের বিষ ছড়ায়।জামাত কে যে যুক্তিতে ভোট দেওয়া উচিত নয়, সেই একই যুক্তিতে কোনো শিক্ষিত সচেতন মানুষেরই বিজেপিকে ভোট দেওয়া উচিত নয়।

    আরেকটা প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে অমুক ইমাম বা তমুক পীরজাদা বাংলার মুসলিম ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন।হামেশাই দেখা যায় যে অমুক ইমাম বা তমুক পীরজাদা রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীর পাশে বসে বাণী দিচ্ছেন যে এই পলিটিক্যাল খচ্চরটাই বাংলার মুসলমানদের ভরসা এবং বাংলার মুসলমানেদের একেই ভোট দেওয়া উচিত।

    বাস্তবে এনাদের ভোটের চালচিত্রে কোনো প্রভাব নেই। কাজের সুবাদে খুব প্রান্তিক গ্রামে গিয়েও দেখেছি অশিক্ষিত দরিদ্র মুসলমান হাতে বা কাস্তেতে বা ঘাসফুলে ভোট দ্যায়, দলের পক্ষ নিয়ে জ্ঞাতিগুষ্ঠির সাথে মারপিট করে জেলে যায় কিন্তু অমুক ইমাম বা তমুক পীরজাদার কথায় নাচেনা।

    এও শোনা যায় যে মুসলমানেরা নাকি ধর্ম দেখে ভোট দ্যায়। তথাকথিত মুসলিম ব্রাদারহুডের নামে। অ্যামনটা দাবী করছিনা যে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় সুড়সুড়িটা ম্যাটার করেনা। নিশ্চয়ই করে। কয়েকটা লোকসভা আগে মুর্শিদাবাদেই বাম ক্যান্ডিডেট মইনুল হাসানের লেখা বই এর একটি নির্দিষ্ট পাতা লিফলেট আকারে বিলি করেছিল বিরোধীদল। মইনুল হাসান কে ইসলাম বিরোধী প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছিল। এবং তার প্রভাবও ভোটের বাক্সে পড়েছিল।

    কিন্তু এটা সামগ্রিক উদাহরণ নয়। আংশিক মাত্র। ৬৭% মুসলমানের বাস জঙ্গীপুর লোকসভাতে জেতেন বামুন সন্তান অভিজিৎ মুখার্জি।সেখানে মুসলিম দলগুলি সরাসরি প্রার্থী দেওয়া সত্ত্বেও।

    এবার মুর্শিদাবাদ আর মালদার পাঁচটা লোকসভা আসনের ভোটের একটু তত্ত্বতালাশ করবো। এই পাঁচটি আসনেই মুসলিম ধর্মীয় দলগুলি প্রার্থী দিয়েছিল।এই জেলাদুটি বেছে নেবার কারণও আছে। কারণ আরএসএস ধারাবাহিকভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে যে এই জেলাদুটিতে যেহেতু সংখ্যাগুরুরাই মুসলমান, অতএব তারা পাকিস্তানপন্থী।

    মুর্শিদাবাদ জেলাতে লোকসভা আসন তিনটে- বহরমপুর, জঙ্গীপুর এবং মুর্শিদাবাদ। ৬৭% পপুলেশন মুসলমান। বহরমপুরে বিজয়ী প্রার্থী অধীর চৌধুরী। জামাত এ শেরাতুল মুস্তাকিম আর ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ এবং মুসলিম ঘেঁষা এসডিপিআই, তিনটে দল মিলে মোট ভোট পেয়েছে ২০৮৩৩। আর চতুর্থ স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী একাই পেয়েছেন ৮১৬৫৬ টি ভোট।

    জঙ্গীপুর লোকসভাতে বিজয়ী প্রার্থী অভিজিত মুখার্জি।মুসলিম ঘেঁষা এসডিপিআই, ডব্লিউপিআই আর জামাত এ শেরাতুল মুস্তাকিম, তিনটে দল মিলে মোট ভোট পেয়েছেন ২৯০৫১। আর চতুর্থ স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৯৬৭৫১ টি ভোট।

    মুর্শিদাবাদ লোকসভাতে জয়ী প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান।মুসলিম ঘেঁষা এসডিপিআই,ডব্লিউপিআই,ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ আর এআইইউডিএফ, চারটে দল মিলে মোট ভোট পেয়েছে ২৯১৭১। আর চতুর্থ স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ১০১০৬৯ টি ভোট।

    ৬৭% মুসলমানের জেলার মুসলমানেরা সরাসরি ধর্ম-যুক্ত দলগুলিকে মোট ভোট দিয়েছে ৭৯০৫৫ টি। আর ৩২% হিন্দু অধ্যুষিত এই জেলাতে বিজেপি ভোট পেয়েছে ২৭৯৪৭৬ টি, প্রায় সাড়ে-তিনগুণ।
    এরপরেও শুনতে হবে শুধু মুসলমানেরাই ধর্ম দেখে ভোট দ্যায় আর খালি মুসলিম ভোটব্যাঙ্কই হয়?
    মালদা’তে আসি। লোকসভা আসন দুটো। মালদা উত্তর আর মালদা দক্ষিণ।

    মালদা উত্তরে জিতেছেন মৌসম নূর। সেখানে মুসলিম ঘেঁষা ডব্লিউপিআই আর এআইইউডিএফ মিলে ভোট পেয়েছে ১১৭৭৮ টি। চতুর্থ স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ১৭৯০০০ টি ভোট।
    মালদা দক্ষিণে জিতেছেন আবু হাসেম চৌধুরী।মুসলিম ঘেঁষা দল এআইইউডিএফ, এসডিপিআই, জামাত এ শেরাতুল মুস্তাকিম আর ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ মিলে ভোট পেয়েছে ৪০৮১৮টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ২১৬১৮১টি।

    মালদা তে সবকটি মুসলিম ঘেঁষা দলগুলির মোট প্রাপ্ত ভোট ৫২৫৯৬টি। আর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি পেয়েছে ৩৯৫১৮১ টি।প্রায় সাড়ে-সাত গুণ বেশি।

    ধর্মের সুড়সুড়িতে খালি মুসলমানেরাই ভোট দেয়না। কিন্তু অপবাদটা শুধু মুসলমানেদেরই জোটে ক্যানো?

    কিন্তু এটাই কি একমাত্র ব্যখ্যা? না আরও ব্যখ্যা আছে?

    গত কয়েকটি ভোটে বিজেপির ভোট বাড়ছে। আচমকা কিন্তু বিজেপির ভোটার রা জন্ম নেয় নি। এদের অধিকাংশই অন্য দলের ভোটার ছিলেন। এদের অনেকেই বহু আগে থেকেই ভিতরে ভিতরে বিজেপি মাইন্ডেড ছিলেন। কিন্তু বিজেপি ভোটে জেতার মতন অবস্থায় ছিলনা বলে এরা অন্য কাউকে ভোট দিতেন।এখন বিজেপি জেতার জায়গায়, তাই বিজেপিকে প্রকাশ্যেই ভোট দিচ্ছেন।

    তাহলে কি মুসলিম ভোটার দেরও একই পরিণতি হবে? মুসলিম ধর্মীয় দলগুলো যেভাবে শক্তিসঞ্চয় করছে তাতে এই আশংকার যথেষ্ট কারণ থাকছে।

    এই প্রবল মেরুকরণের হাওয়ায় জামাত আর আরএসএস দাঙ্গার উস্কানি ছড়াচ্ছে গোটা বাংলায়। আগুন লাগলে যাদের লাভ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।

    (তিসরা কিস্তি এখানে শেষ।পরের পর্বে সংখ্যালঘু তোষণ নিয়ে লেখার ইচ্ছে রইলো।)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ জুন ২০১৭ | ১০৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৪:৫৮60572
  • বাঃ। খুবি ভালো লাগলো। একেবারে সোজা সাপটা কথা। এবং সহজ বাচনে।

    কিছু কিছু মনে পড়ছে ভেগলি - সবটাই স্মৃতি নির্ভর। আর এস পি'র ত্রিদিব চৌধুরী । মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ থেকে নাগাড়ে এম পি হয়ে এসেছিলেন। কোনো দলের কোনো মুসলিম ক্যান্ডিডেট ওনার সাথে টক্কর নিতে পারে নি। এমন কি খিদিরপুরে - যেখানে উর্দুভাষী মুসলমানের ঘেটো সেখানেও (ফরোয়ার্ড ব্লকের ?) কলিমুদ্দিন শামসকে হারিয়ে ছিলো (কংগ্রেসের?)রাম পিয়ারি রাম। ঐ সত্তরের শেষ দিকে। না, না , বাহাত্তরের ছাপ্পা ভোটে নয়। তার পরে।

    আরেকটা কথা, রাণা জানবেন ভালো। এদানী কাগজে পড়ি বিভিন্ন যায়গায় তৃণ আর বিজেপির মারপিট। খুনোখুনীও হয়। দুদলের লোকের মধ্যেই দেখি মুসলমান নাম। এটার কারন কি?
  • h | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৫:৫৪60573
  • বীরভুমে এটা কমন। অনেক মুসলমন গ্রামেই বিজেপি শক্তিশালী। কারণ টা আলাদা কিসু না, ক্ষমতা প্রতিপত্তি বাড়ানোর সুজোগ কোথাও তৃণমুলের মস্তনি এ বিরুদ্ধে আর কাউকে না পেয়ে এমারজেন্ট শক্তি হিসেবে নিজেই কে নেওয়া। ঈলামবাজারেই এটা হয়ে থাকে। আর্মিঙ্গ ও হয়েছে। just like hindu s politics is a career for career for some muslims
  • h | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৫:৫৫60574
  • চমত্কার ক্লিয়ার লেখা।
  • সিকি | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৬:৫৩60575
  • রাণা, কী আর বলব ভাই। ভালো থেকো।
  • রাণা আলম | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৮:৩৮60567
  • অসাধারণ। ফেসবুকে সরাসরি পোষ্ট হ'লে খুব ভাল হত।
  • প্রতিভা | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৯:৩৫60568
  • নিবিড় বিশ্লেষণ। তীব্রতা আর শ্লেষে ভরা। জবাব হবে না এ লেখার।
  • amit | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৯:৪২60569
  • আপনার লেখা গুলো এক সাথে হাসায় আর ভাবায়। এই জন্যই এতো পড়তে ভালো লাগে, কিন্তু ধর্ম অন্ধদের কাছে আপনি অত্যন্ত বিপজ্জনক লোক। আপনি লোকেদের ভাবাতে চান, তাদের আসল বিপদ সেখানেই। ভাবতে শিখলেই খেলা শেষ।

    অনেক ভালো হোক আপনার।
  • | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৯:৪৭60570
  • তীব্র তীক্ষ্ণ। চমৎকার
  • Niladri Chakraborty | ***:*** | ১০ জুন ২০১৭ ০৯:৪৯60571
  • চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।
  • শিবাংশু | ***:*** | ১১ জুন ২০১৭ ০৭:০২60576
  • স্পষ্ট, বাস্তব আর গ্রহণযোগ্য বিশ্লেষণ। সবাই জানে এসব। তবুও কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়....
  • রৌহিন | ***:*** | ১১ জুন ২০১৭ ০৭:৫০60577
  • রাণা অনেকদিন বাদে লিখলে
  • pi | ***:*** | ১২ জুন ২০১৭ ০৪:০২60578
  • রৌহিন, রাণার অগের কিস্তিগুলো তালে মিস করে গেছ মনে হয়। দেখো।
  • পৃথা | ***:*** | ১২ জুন ২০১৭ ১০:৪৯60579
  • কি যে ভাল লেখা! কিন্তু এসব বুঝবে কে? দিন দিন যেদিকে জল গড়াচ্ছে খুব কঠিন সময় আসবে বলে মনে হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন